যখন_দুজনে_একা ৫৩ পর্ব

0
727

#যখন_দুজনে_একা

৫৩ পর্ব

মাহি হসপিটালে ফিরে আসতেই নিঝুম বলল,
: রুবা ঠিক আছে ?
: মাহি খুব সুন্দর করে হাসলো , ঠিক আছে !
: আমি টেনশন করছিলাম , হঠাৎ যেভাবে দৌড়ে গেলি।
: স্যার রা আসছে ?
: হুম আসছে যা ভেতরে চলে যা।
মাহি চলে গেল ওর খালু যেখানে আছে সেখানে। মাহির খুব রিল্যাক্স লাগছে। ভালো ই হলো নিঝুমের ব্যাপার টা রুবার সামনে চলে আসছে। রুবা বুঝতে পেরেছে ব্যাপার টা । রুবার কাছে তার গোপন বলে কিছু নেই আর । সম্পর্কে গোপনীয়তা ব্যাপার টা থাকলে , আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকতে হয়।
মনে মনে রুবাকে থেঙ্কস দিল মাহি, তাকে বোঝার জন্য । আজ তুমি যদি বুঝতে না চাইতে তাহলে সত্যি আমার চেয়ে বেশি অসুখী কেউ হতো না রুবা ।
ওটিতে ঢুকার আগে মাহি মোবাইল হাতে নিয়ে রুবার মেসেজ দেখলো। এত সুন্দর একটা মেসেজ দিয়েছে । তোমাকে সুখের বৃষ্টিতে ভেজাব বলেই রুবা কত অপেক্ষা আমার !
মাহি কিছু লেখার আগেই তার মোবাইল অফ হয়ে গেল। সীম চেন্জ করে পুরোনো মোবাইল টা অন করতেই নিঝুম আর তার ছবি গুলো তার সামনে , ওয়ালপেপার চেন্জ করলো ।
রুবাকে কল দিচ্ছে, ওপাশে দুইবার রিং হতেই রুবা রিসিভ করলো,
: হ্যালো !
: কি করছিলে রুবা ?
: কিছুই না শুয়ে আছি !
: শরীর খারাপ নাকি মন ?
: কোনটাই না ঘুম পাচ্ছে খুব!
: তাহলে ঘুমিয়ে যাও , সারারাত আকাশ আর তোমার চোখ দুটোই ঝড়েছে !
: হাসছে রুবা!
: আকাশের বৃষ্টিতে সমস্যা নেই আমার কিন্তু আমার বউ এর চোখের পানিতে আমার অনেক কষ্ট ঠিক আছে, আর যেন না ঝড়ে এক ফোঁটা ।
: আর ঝড়বে না যাও।
: প্রমিজ রুবা
: প্রমিজ।
: আমি এখন ওটিতে ঢুকে যাব ফোন অফ থাকবে। তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট তুমি খালামনি, রিয়া আপু এবং অবশ্যই নিঝুমের সঙ্গে কথা বলবে। এবং নিঝুমের সঙ্গে আগে যেভাবে নরমাল কথা বলতে ঠিক সেভাবেই। প্লিজ রুবা আমার কথা টা শুনো আমি বলব পরে কেন নরমাল থাকতে বলছি।
: ঠিক আছে , আমি ফোন দিব।
: লাভ ইউ রুবা , রাখছি।

অপারেশন শুরুর আগে ওর খালামনি, রিয়া, নিঝুম রা খুব কান্নাকাটি করছিল।
: নিঝুম তুই অন্তত নিজেকে সামলা, মাহি বলল !
নিঝুম মাহির হাত ধরলো শক্ত করে ! মাহি খেয়াল রাখিস।
মাহি নিঝুমের সঙ্গে দুষ্টুমি করে বলল, তুই স্যারদের হাত গুলো ও একটু ধরবি নিঝুম, কারণ অপারেশন টা স্যার রাই করবে আমি না ! বলে মাহি হাসছে।
নিঝুম মাহির দিকে তাকিয়ে বলল, এই পরিস্থিতিতে এরকম ফাজলামি করতে একমাত্র তুই ই পারিস মাহি !
:রাগ করছিস কেন , তোর মুড ভালো করার জন্য বলেছি।
: নিঝুম ও হাসছে!
: ঢুকলাম তুই আমার মোবাইল টা রাখ ,চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখ, না হলে নিজের কাছে রাখিস।
মাহি ঢুকে গেল ওটিতে।

রুবা শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে মাহির কথা। কতটা কষ্ট বুকে পুষে সে রুবাকে বিয়ে করেছিল সেদিন। নিঝুম আপুকে ও হয়তো অনেক ভালোবাসতো । নিজের দুঃখ, কষ্টের ভীড়ে একবার মাহির কেউ থাকতে পারে মনেই হয়নি তার ! কি আশ্চর্য,
একবার ও মাহিকে প্রশ্ন করার কথা মনেই হয়নি তার ! নিঝুম আপুর কত কষ্ট হয় ওদের দুজনকে দেখলে !
রুবার চোখ ভিজে উঠছে। চোখ তাড়াতাড়ি মুছে ফেলল, মাহিকে সে প্রমিজ করেছে সে আর কাঁদবে না । মাহি তার জন্য যে কষ্ট সহ্য করেছে , আজ থেকে বিনিময়ে সে মাহিকে ভালোবাসা দিয়েই ভরে দিবে ।
তার ছোট ছোট সব কিছু মাহি খেয়াল রাখে । একটু কষ্ট পেলেই অস্থির হয়ে উঠে। কত সুন্দর সুন্দর জিনিস দিয়ে সারপ্রাইজ দেয়।
আচ্ছা মাহিকে কিছু দিয়ে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হবে?
কি দেয়া যায় চিন্তা করছে রুবা !
ঘড়ি, পারফিউম, সানগ্লাস ? এসব তো ওর অনেক আছে ! আংটি ? হাস্যকর হবে !
এমন কিছু যা দেখে মাহি চমকে যাবে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে!
রুবা চিন্তা করছে । নিজের উপর রাগ লাগছে ওর । এতদিন মানুষটার সঙ্গে থেকেও ওর ভালো লাগাটা জানতে পারলো না ! ব‌উ রা হাজব্যান্ড এর সব জানে ভালো লাগা , খারাপ লাগা!
মাহি খেতে কি পছন্দ করে সেটাই তো এতদিনে জানা হলো না ওর!
ঠিক আছে আজ সে ওর জন্য রান্না করবে ! রাতে দুজন একসঙ্গে বসে খাবে।
মা কে ফোন দিতে হবে মাহির পছন্দ জানার জন্য !
সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে ফরিদা বুয়া ! এত বছর ধরে এ বাড়িতে রান্না করে , বুয়া ঠিক ই জানবে।
রুবা বিছানা থেকে উঠে দৌড় দিল রান্না ঘরে র দিকে !
আজ মাহির জন্য সে সারপ্রাইজ কিছু রান্না করবে।
রান্না ঘরে গিয়ে বুয়াকে ধরলো রুবা !
: ভাইজান সব খায় তয় ভাবি কম খায় , এই ধরেন এক চামচ ভাত একটু মাছ , সামান্য সবজি !
: বুয়া আমি তোমার কাছে কতটুকু খায় জানতে চাই নাই কি সবচেয়ে বেশি আনন্দ নিয়ে খায় সেটা বলো ?
: ভাবি আনন্দ নিয়ে তো খাইতে দেখি নাই ! সব সময় বসছে আর খায়া উইঠা চ‌ইলা গেছে !
: বুয়া তুমি আমার কথাই বুঝো নাই !
: বললাম পছন্দ করে কি খেতে ?
: ও কাচ্চি বিরিয়ানী ভাবি ভাইজান পছন্দ করে , কিন্তু আমি রানতে পারি না আম্মা পারে !
: আমি ও তো পারি না বুয়া ! এখন কি করি বলো তো ?
: মোবাইল দেইখা রান্ধেন ভাবি হিসাব সুজা !
: এইটা ভালো বলেছো !
রুবা মাহির জন্য কাচ্চি বিরিয়ানী আয়োজন করতে পুরো বাসায় হুলুস্থুল ফেলে দিল । এমনকি শ্বাশুড়ি কে দুই বার সিঙ্গাপুরে ফোন দিয়েও ফেলেছে।
এত আগ্রহ নিয়ে সে আগে কখনো রান্না করেনি!
আজ মাহি সারপ্রাইজ হবে।
ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হবে আজ , ভেবেই রুবা দারুন এক্সাইটেড ফীল করছে।

সন্ধ্যার পর তার কাচ্চি বিরিয়ানী তৈরি হয়ে গেল ।
খেতে কেমন হয়েছে বুঝতে পারছে না পাতিল সীল করে রেখেছে সে , মাহি আসলেই খোলা হবে ।
রুবা যদিও জানে না কখন আসবে মাহি !
আজ তো আসবেই , রুবার মন বলছে আজ মাহি যত রাতই হোক আসবে।
আর যদি না আসে , সে নিজেই হসপিটালে চলে যাবে ওয়েটিং রুমে মাহির পাশে সারারাত বসে থাকবে। গল্প করে রাত পার হয়ে যাবে।
আজ খুব আয়োজন করে রেডি হচ্ছে সে। মাহির জন্য ও ড্রেস রেডি করে রাখলো ।
অনেকক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করলো । ডীপ ব্লু কালারের নতুন একটা সেলোয়ার কামিজ বের করলো পড়ার জন্য।
হঠাৎ তার ইচ্ছা চেন্জ হয়ে গেল । এই ড্রেস তার পছন্দ হচ্ছে না ! সে আজ খুব অন্যরকম সাজতে চাইছে। নতুন আরও দুইটা ড্রেস সে নামালো।

নিঝুমের আব্বু র অপারেশন বিকালে শেষ হয়েছে। পোস্ট অপারেটিভ এ নিয়ে আসার পর‌ থেকে মাহি উনার পাশে র‌ইল।
নিঝুম একবার এসে দেখে গেল । রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে,
মাহিকে ডেকে নিঝুম বাহিরে নিয়ে গেল।
: মাহি আজ তো পোস্ট অপারেটিভ এ রাখবে আব্বু কে তুই বাসায় যা। সাজ্জাদ ভাই থাকবে বলছে।
: তুই ও আজ বাসায় যাবি !
: আমার সমস্যা হচ্ছে না মাহি !
: সমস্যার কথা বলি নাই , আজ একটু রেস্ট নে ।
: দেখি ! বলে নিঝুম চলে গেল !

মাহি রুবাকে কল করার জন্য মোবাইল বের করলো রিয়া এসে ডেকে নিয়ে গেল ওকে আবার ।
: মাহি আমি থাকব এখানে আজ !
: তুমি যদি আপু সাজ্জাদ ভাইকে কম্পানি দেয়ার জন্য থাকতে চাও থাকতে পারো । এখানে তোমার আর কোন কাজ নেই ।
: মাহি অলটাইম দুষ্টুমি করতেই হবে তোর তাই না !
মাহি হাসছে।‌
: ভুল কিছু বলছি ?
: থাপ্পড় খাবি মাহি ভাগ এখান থেকে ।
: আচ্ছা আপু একটা কথা বলো তো তোমরা সবাই এত মন খারাপ করে আছো কেন এখনো ? অপারেশন ঠিক ভাবে হয়েছে! খালু এখন সব দিক দিয়ে ঠিক আছে । প্লিজ মন ভালো করো আপু।
মাহি রিয়ার হাত ধরলো !
: তুই এখন বাসায় যা মাহি !
: কি ব্যাপার বলো তো , তোমরা সবাই আমাকে এখান থেকে ভাগিয়ে দিতে চাইছো কেন ?
: তুই গত দুই রাত ধরে এখানে , ঘুম নাই রেস্ট নাই তারচেয়েও বড় কথা রুবা বাসায় একা । খালাম্মা খালু কেউ নেই বাসায়!
: তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসি বাসায় চলো ?
: আমাদের গাড়ি আসবে , তুই যা বাসায় !
: আমি নামিয়ে দিব আপু !
: ঠিক আছে।
: তুই সব সময় এমন‌ই থাকিস মাহি !
: কেমন , ফাজিল টাইপ ?
: না ভালো কেয়ারিং টাইপ !
অনেক রাত হয়ে গেছে চলো খালামনির ও রেস্ট দরকার । সেই সকাল থেকে বসে আছে ।

মাহির গাড়ি দূরে পার্ক করা ছিল। গাড়ি আনতে গিয়ে সে বৃষ্টিতে ভিজে গেল । আকাশ ভেঙ্গে পড়া এই বৃষ্টি দেখলে রুবার কথা খুব মনে পড়ে । রুবা এরকম বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে।
আজ বাসায় গিয়ে রুবাকে নিয়ে ভিজলে দারুন হবে । সারপ্রাইজ হয়ে যাবে !
রুবা আসছি তোমাকে আজ বৃষ্টিতে ভিজাব আর একটু অপেক্ষা করো।
মাহি তার খালামনি , রিয়া আর নিঝুম দের তাদের বাসায় নামিয়ে দেয়ার জন্য র‌ওনা হলো।
মাহি ভিজে গেছে দেখে ওর খালামনি আর রিয়া খুব আফসোস করছে।
নিঝুম চুপ করে আছে।
নামিয়ে দিয়ে চলে আসার সময় রিয়া আর খালামনি বিদায় নেয়ার পরও নিঝুম মাহির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে সে মাহির সঙ্গে কথা বলতে চায়। এটা ওর পুরোনো অভ্যাস। অন্য রা চলে গেলে কিছুক্ষণ কথা বলবে তারপর যাবে।
: কিছু বলবি তুই নিঝুম?
: থেঙ্কস মাহি !
: থেঙ্কস এর কি হলো ?
: তুই গত দুইদিন যা করেছিস তার জন্য থেঙ্কস বললেও কম বলা হবে !
: তাহলে বলিস না , যা বললে পার্ফেক্ট হবে সেটা বল ?
: কি শুনতে চাস মাহি ?
: বলছিস তো তুই নিঝুম আমি কিভাবে জানব কোন টা পার্ফেক্ট বলা হবে?
: তোর সঙ্গে কথার মারপ্যাঁচে কোন দিন পারব না মাহি !
: আমি প্যাচ কষলাম কোথায় আবার ?
: যা বাসায় যা রুবা অপেক্ষা করছে তোর জন্য।
: শোন থেঙ্কস বলার কি হলো বুঝলাম না , তোরা প্রতিটা মানুষ থেঙ্কস বলা শুরু করেছিস যেন আমি বাহিরে র কেউ তোদের আপন কেউ না !
: অবশ্যই তোর চেয়ে আপন কাউকে এখনও বানাতে পারিনি !
: তাড়াতাড়ি বানিয়ে ফেল কাউকে , হাসলো মাহি!
যাই রে ভিজে কাপড়ে অস্বস্তি লাগছে খুব ।
: হুম যা বৃষ্টি পড়ছে সাবধানে ড্রাইভ করিস ।
মাহি গাড়ি স্টার্ট দিল। নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে মাহি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল গেট দিয়ে ।

মাহি প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে বাসার দিকে ফিরে আসছে। গত দুই রাত তন্দ্রা র মত এসেছে কিন্তু ঘুমায় নি।
গোসল, ডিনার তারপর একটা লম্বা ঘুম হবে আজ। কালকে শুক্রবার চিন্তা করলেই কি শান্তি শান্তি লাগছে ওর।
মোবাইল এ রিং হচ্ছে।
নিঝুমের ফোন দেখে অবাক হলো কি ব্যাপার কোন সমস্যা হলো নাকি খালুর? মাহি গাড়ি সাইড করলো।
: হ্যাঁ নিঝুম বল !
: তোর মোবাইল তো আমার কাছে দিয়েছিলি তোর ও মনে নেই আমিও ভুলে গেছি !
: ও আচ্ছা সমস্যা নেই রাখ তোর কাছে, চার্জ দিয়ে রাখিস কালকে হসপিটালে নিয়ে আসিস ।
: আর আপু তোর গাড়িতে হসপিটালে র কিছু কাগজ , রিপোর্ট এর ফাইল ফেলে গেছে ড্রাইভার কে পাঠাব কালকে ,কষ্ট করে দিয়ে দিস !
: ঠিক আছে।
: রাখলাম মাহি বাসায় যা তুই।
ফোন রেখে মাহি গাড়ি আবার স্টার্ট দিল। আজ তার মনটা খুব ভালো লাগছে নিঝুমের ব্যাপার টা রুবাকে বুঝিয়ে বলতে পেরেছে। এটা যে কত বড় বোঝার মত তার বুকে চেপে ছিল একমাত্র সেই জানে।
মনে মনে বলল রুবা আমাকে বোঝার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি বলেই সম্ভব হলো, তোমার জায়গায় আর কেউ হলে না জানি কি হতো ?
বাসায় ঢুকেই আজ সোজা উপরে উঠে এল মাহি , নো সিগারেট । উপরে আজ শুনশান নিরবতা, অন্ধকার ! মা বাবা নেই এমনিতেই বাসা খালি । হাত ধুয়ে চোখে মুখে পানি দিল।
সবাই ঘুমিয়ে গেছে ?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বারটা বাজে । খুব বেশি রাত না এই বাসার জন্য !

মাহি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে এলো ! দরজায় টোকা দিল , কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই।
ঘুমিয়ে গেছে রুবা ?
মাহি দরজার হ্যান্ডেলে চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল। আলো আধারিতে ঘরটা একটা মায়া মায়া পরিবেশ হয়ে আছে।
ঘরে ঢুকে মাহি পুরো ভাষাহীন হয়ে গেল !
রুবা নয় তার থেকে কিছুটা দূরে যেন কোন এক দেবী প্রতিমা দাঁড়িয়ে আছে।
মাহি চোখ ফিরাতে পারছে না । রুবা তার কিনে দেয়া ডীপ পিঙ্ক বেনারসী শাড়ি পড়েছে ,মায়ের দেয়া সব গয়না, টিকলি পড়েছে, খোঁপায় ফুলের মালা পেঁচিয়েছে । এত সুন্দর লাগছে রুবাকে মাহি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না !
রুবাকে এই রূপে, এভাবে, এই মুহূর্তে দেখবে সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
মাহির সারা গায়ে যেন একটা বরফ ছুটে বেড়াচ্ছে। তার ভেতর থেকে দুই দিনের সকল ক্লান্তি, সকল কষ্ট হারিয়ে যাচ্ছে এক অজানা , অদেখা আনন্দে। সে ভাবছে,
এসব কি সত্যি ঘটছে নাকি সে স্বপ্ন দেখছে ! রুবা কি সত্যি সত্যি এভাবে নতুন ব‌উ এর মত সেজে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ! নাকি সব তার কল্পনায় ?
তার কল্পনাও তো এত সুন্দর হয়ে উঠেনি কখনো !
মাহি কতক্ষণ এভাবে রুবার দিকে তাকিয়ে ছিল তার মনে নেই।
রুবা হাসি মুখে ওর কাছে এসে দাঁড়ালো ! মাহি শুধু চেয়ে চেয়ে রুবাকে দেখছে !
তার শরীরে নড়াচড়া করার শক্তিও যেন হারিয়ে গেছে।
রুবা ই প্রথম ওর কানের কাছে এসে বলল,
: কি ডাক্তার সাহেব সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো?
: মাহি হাসলো শুধু!
: কিছু বলছো না যে ? কোন গান কিংবা কবিতা‌ আজ শোনাবে না ?
: রুবা তুমি এভাবে ব‌উ সেজে বসে আছো আমাকে সামলাতে পারবে তো ?
: মানে ?
: মানে পরে বুঝিয়ে বলছি আগে তোমাকে দেখি ভালো করে । মাহি রুবার হাত ধরলো।
আজ তো সর্বনাশ হয়ে যাবে রুবা!
: সর্বনাশ কেন ?
” জনম সফল হবে বধুয়ার ঘরে আজ
সরমের আড়ালে তে দেখা যাবে ফুলো সাজ”
: গান থাক এখন , আরো সারপ্রাইজ আছে আগে চলো ডাইনিং এ, রুবা মাহির হাত ধরে টানতে টানতে বলল!
: মাহি ওকে আটকালো , কিছু রান্না করেছো, খেতে হবে ?
: হুম ওখানেও সারপ্রাইজ আছে চলো জলদি !
: রুবা রুবা এক সেকেন্ড দাঁড়াও শোন আমার কথা, আমি এমন কোন ভোজন রসিক মানুষ না এই মুহূর্তে আমি খেতে চলে যাব ?
তুমি যাই রান্না করো না কেন, এই পৃথিবীর কোন কিছুই আমাকে এই ঘর থেকে এখন বের করতে পারবে না ! মাহি রুবাকে বুকে টেনে নিল।
: রুবা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, আমি অনেক কষ্ট করে সারাদিন খেটেখুটে রান্না করেছিলাম তার কি হবে ?
রুবার কানের কাছে এসে মাহি বলল, আর আমি কত মাসের পর মাস ,রাতে পর রাত অপেক্ষা করেছিলাম তার কি হবে রুবা?
রুবা মুখ নামিয়ে বলল, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি ?
: সে আমি জানি না এখন এই রুম থেকে বের হ‌ওয়া যাবে না !
: দশ মিনিটের জন্য চলো প্লিজ!
: দশ সেকেন্ডের জন্যেও না !
মাহি পিছন ফিরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চশমা ,ঘড়ি খুলে টেবিলে র উপর রাখলো, ভেজা শার্ট টা খুলে ফেলল!
: তুমি কি সত্যি সত্যি খেতে যাবে না , খেয়ে এসেছো ?
: মাহি মাথা নেড়ে না করলো !
: তাহলে এরকম পাগলামী করছো কেন , চলো তো!
: রুবা একটা কথা বলো তো, তুমি যে এত সুন্দর করে সেজেছো কতক্ষণ সময় লাগলো সাজতে ?
: আধ ঘন্টা লেগেছে, শাড়ি পড়তেই বেশি সময় লেগেছে !
কেন এই প্রশ্ন করছো কেন , আমাকে ভালো লাগছে না ?
: না খুব সুন্দর লাগছে জানতে চাইলাম এই জন্য যে আমি এখন তোমার এই সাজ সব খুলে ফেলব এবং তুমি একটু পর আবার এভাবে সাজবে আমি তখন তোমাকে দেখব এখন এই সাজ দেখার সময় নেই বলেই মাহি রুবার কাছে এসে খোঁপা র ফুল টান দিয়ে খুলে ফেলল!
: অনেক খুঁজে এই ফুল গুলো কিনে এনেছে কুদরত ভাই !
: আমি দেখলাম তো , পরে আবার দেখব!
: এটা তোমার দাদীর টিকলি থাক না মাথায়!
: আবার পড়িয়ে দিব রুবা !
: মাহি রুবার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে তার মায়ের দেয়া ভারি গলার হারটা খুলে নিল !
রুবা চোখ বন্ধ করে আছে। ওর শরীর কাঁপা শুরু হয়ে গেছে!
শাড়ি টা খুলে নেয়ার পর রুবা শুধু ফিসফিস করে বলল , এসির টেম্পারেচার টা বাড়িয়ে দেই আমার শীত লাগছে গা কাঁপছে মাহি প্লিজ।
: চিন্তা করো না রুবা আজ আমিই তোমার চাদর হয়ে যাব!
: আলোটা নিভিয়ে দেই !
: বলেছিলাম না আমি অন্ধের মত তোমার হাত ধরে থাকব , রুবা তুমি আমাকে আলোর পৃথিবী দেখাবে ! আলো নিভে গেলে সেই পৃথিবী দেখা অপূর্ণ থেকে যাবে!
: ইস তুমি আমার কোন কথা শুনছো না মাহি !
: রুবার ফর্সা পায়ের আঙ্গুলে চুমু দিতে দিতে মাহি বলল, আমি আজ তোমার কোন কথাই শুনব না, তুমিও বা এত কথা বলছো কেন রুবা ?
রুবার নগ্ন পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে মাহি বলল, রিয়াদ ভাইয়ের বাসায় সুরাইয়া ম্যাম কে তুমি যে কথা গুলো বলেছো আমি সেদিন সব শুনেছি , রুবা তুমি আমার কথা মন দিয়ে শুনে রাখো আমি তোমাকে এত তাড়াতাড়ি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না । আমাদের বেবীর সঙ্গে ও না।
তুমি আগামী অনেক দিন আমার আর শুধুই আমার একার ।
: রুবা লজ্জায় মুখ বালিশে লুকিয়ে ফেলল। মাহি আজ তার ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে বানভাসি উত্তাল নদীর মত রুবাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাহির কাছে আজ পৃথিবীটা স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে এ এক এমন সুন্দর স্বপ্ন , যেখানে সে রুবার পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি শরীরের মাঝে নিজেকে বাতাসে উড়ে যাওয়া এক পাখির পালকের মত অনুভব করছে। আজ সে রুবার পায়ের আঙ্গুল থেকে চোখ পুরো রুবাতে তার অধিকারের মোহর জুড়ে দিচ্ছে !

: রুবা তোমার দেয়া সারপ্রাইজ আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সারপ্রাইজ ছিল । থেঙ্কস রুবা !
আমার জীবনটাকে এত সুন্দর বানানোর জন্য ! আমাকে এত দামি উপহার দেয়ার জন্য !
এখন চলো তোমাকে আমি আবার সাজিয়ে দিব উঠো !
: থাক আর সাজাতে হবে না ! আমি একটা ছবিও তুলি নাই সাজার পর। তোমার সঙ্গে সেলফি তুলব বলে !
: কি সর্বনাশ সেলফি না তুললে আজকাল মানুষ পাগল বলে জানো রুবা!
তুমি এখন যেভাবে আমার বুকে শুয়ে আছো রুবা এভাবেই তুলি একটা সেলফি কি বলো ?
: না …বলে চিৎকার দিয়ে রুবা চাদরে মুখ ঢেকে ফেলল।
তাহলে উঠো আমার ক্ষুধা লেগেছে কি সারপ্রাইজ রান্না করেছো চলো সেটাও দেখি!
: আর খাওয়া ,তোমার খেতে হবে না থাক ! কত কষ্ট করে আমি তোমার জন্য কাচ্চি রান্না করেছিলাম।
: এখন খেতে চাচ্ছি কিন্তু তুমি ই তো নিয়ে যাচ্ছো না ! সকাল থেকে সত্যি কিছু ই খাইনি !
: আমি ভেবেছিলাম ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করব ! তারপর দুজন ছবি তুলব তোমার জন্য ব‌উ এর মত সেজে ছিলাম তাই ।
: সেজেছিলে বলেই দেখো কি হয়ে গেল মাহি হো হো করে হাসছে!
রুবার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
আচ্ছা ঠিক আছে এখন উঠো কাপড় পড়ো এই শাড়িই পড়ো , আমি হেল্প করছি ! আমি আমার রুবাকে সাজিয়ে দিব আজ!
মাহি রুবাকে আবার নতুন করে শাড়ি, গয়না পড়িয়ে দিল , খোঁপায় ফুল লাগিয়ে দিল।
নিজে গেঞ্জি বের করে পড়লো !
: এদিকে এসো রুবা সেলফি তুলি তোমার ফোন টা দাও !
দুজনে সেলফি তুলে ডাইনিং এর দিকে এগিয়ে গেল !
আচ্ছা কি ব্যাপার রুবা, আজ এত বড় ঘটনা ঘটে গেল তোমার বুয়ারা তোমাকে ডাকাডাকি করতে এলো না যে !
: ওদের আমি আগেই বলেছিলাম তোমরা কাজ শেষে ঘুমাতে চলে যাও আমি তোমার খাবার বেড়ে দিব!
: ওরা যেতে চাচ্ছিল না , মা ফোন দিয়ে বলেছে , তুমি বাসায় না থাকলে আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকতে। অনেক জোর করে পাঠিয়েছি ঘুমাতে ।‌
: আচ্ছা সব তোমার প্ল্যানিং , গুড !
মাহি হাসছে রুবার দিকে তাকিয়ে !

কিচেনে এক করুন পরিস্থিতি তৈরি হলো,
রুবার সারপ্রাইজ কাচ্চি র চাল গলে জাও হয়ে গেছে সেটা দেখে রুবা কাঁদছে, মাহি ওকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিচ্ছে বারবার ।
: রুবা কখনো কখনো লিকুইড কাচ্চি বিরিয়ানী খাওয়া যায় প্লিজ কেঁদো না ! তুমি তো ফাস্ট টাইম বানিয়েছো।
: আমি তো ঠিক ঠিক ফলো করেছিলাম রেসিপি তাও কেন এমন হলো ?
: আমি এটাই খাব সোনা , কান্না বন্ধ করো এবার ।
মাহি মনে মনে হাসছে !
: কোন দরকার নেই এই ফালতু জিনিস খাওয়ার! আমি আসলে কিছুই পারি না , একটা গুড ফর নাথিং ‌।
: ফ্লেভার দারুন হয়েছে এতেই চলবে সোনা !
রুবা চোখের পানি মুছছে আর মাহি ঠোঁট টিপে হাসছে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here