হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব- ১৪

0
441

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৪

ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ আমি কথা বলার জন্য এতটা প্রস্তুত ছিলাম না। গলাটায় বেশ জড়তা আসতে শুরু করল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম

“হ্যালো”

ও পাশ থেকে উনিও সুমধুর কন্ঠে বলল

“হ্যালো, কেমন আছেন?”
হ্যাঁ ভালো আছি? আপনি?”
“আমিও ভালো আছি। কী করতেছেন?”
“এই তো বেস্টির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আপনি?”
“অফিসের কাজ করছিলাম।”
“অহ! আপনি কিসে চাকুরি করেন সেটা কিন্তু জানতে পারলাম না।”
“না জেনেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন?”
“মা বাবা ঠিক করেছে যেহুত ভালো জায়গায় করেছে।”
“বুঝা যাচ্ছে মা বাবার অনেক বাধ্য মেয়ে।”
“তা একটু বলা যায়। ”
“আমি মাল্টিন্যাশনাল একটা কোম্পানিতে চাকুরি করি।ভেবেছিলাম আপনাকে কল দিব কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। আপনার কল এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যদিও এগারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম যদি না দিতেন তাহলে আমিই কল দিতাম। এর মধ্যে আপনি দিয়ে ফেললেন।”
“ইশ! আগে কল দিয়ে মনে হয় ভুল করে ফেললাম।”
“আরে ভুল করবেন কেন? আপনি কল দিয়েছেন বরং আমার সুবিধা হয়েছে। আপনি কল না দিলে হয়তো এতগুলো কথা বলতে পারতাম না। ঐরকম কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে অভ্যস্ত না তো তাই।”
“আরে আমি তো মজা করে বলেছি। যাইহোক রাতে খেয়েছেন?”
“নাহ এখনও খাই নি। আপনি খেয়েছেন?”
“হ্যাঁ খেয়েছি। অনেক রাত তো হলো খেয়ে নিন।”
“হুম খাব।”
“আচ্ছা শুনেন মা বলছিল কালকে এগারোটায় আপনাকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে বিয়ের শপিং করার জন্য। আপনি একটু প্রস্তুত রাখবেন নিজেকে।”

কালকে উনি আমাকে নিতে আসবে এটা শুনেই মনটা আনচান করতে লাগল। তর সইল না। দ্রূত উানাকে জিজ্ঞেস করলাম
” আপনি আসবেন নিতে?”
“আমার হবু বউকে নিতে কি তাহলে অন্য কেউ আসবে?”

উনার কথা শুনে আবেগে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। এক উত্তাল মাতাল ভালোবাসার ঢেউ মনে বইতে লাগল।আমি চুপ হয়ে মৃদু কন্ঠে উনাকে বললাম

” আচ্ছা আমি প্রস্তুত রাখব নিজেকে। তবে একটা আবদার ছিল।”
“বলেন কি আবদার ?”
“আমি আমার সাথে আমার বেস্টিকে নিয়ে যেতে চাই যদি কিছু মনে না করেন।”
“আরে এটা তো ভালো কথা। কিছু মনে করব কেন? আপনি আর আপনার বেস্টি নাম কী যেন?”
“তুরা।”
” হ্যাঁ তুরা দুজনেই একসাথে এগারোটায় তৈরী হয়ে থাকবেন।আমি নিতে আসব। আচ্ছা এখন রাখছি। অনেক কাজ গুছাতে হবে। আপনি মনে করে খেয়ে ঘুৃমাবেন। কাল দেখা হবে৷ ভালো থাকবেন সে পর্যন্ত। ”

এ বলে উনি ফোন রেখে দিলেন। উনি ফোন কাটার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে।চাঁদের আলো আমার মুখে এসে পড়েছে। আমি চাঁদটাকে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে বন্দি করে রাখলাম। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার ও আনমনা হয়ে গেলাম। মুহুর্তের মধ্যে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেলাম। তুরার ধাক্কায় আমার স্বপ্নের ঘোর কাটল, তুরা ধাক্কা দিয়ে বলল

“কী রে নিরু এত আনমনা হয়ে যাচ্ছিস কেন? এত ভালোবাসায় ডুবে থাকলে হবে?”
“কী যে বলিস না তুরা।”
“তা তুর্জ কী বলল?”
“তুর্জ বলেছে কালকে তোকে নিয়ে যেন প্রস্তুত থাকি আমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাবে।”

তুরা অপরাধীর মতো দু হাত উপরে তুলে বলল

“তোদের মধ্যে আমি নাই।”

আমি তুরার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বললাম

“তুই না গেলে বড্ড অসহায় আর ভয় লাগবে। তুই সাথে না গেলে আমি যাব না।”

কথাটা বলেই মন খারাপ করে নীচের দিকে তাকালাম। আমার অবস্থা দেখে তুরা আমার দিকে তাকিয়ে একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল

“আমাকে বডিগার্ড হিসেবে নিতে চাচ্ছিস তাই না? আচ্ছা যাব।”

আমি তুরাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম কিছুক্ষণ তারপর হালকা গলায় বললাম

“আচ্ছা এবার খেতে চল।”

তারপর দুজন খাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুলাম। তুরা ঘুমিয়ে গেলেও আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। কারণ সবকিছু আমার কাছে স্বপ্ন মনে হতে লাগল। আমার চোখের পাতা বন্ধ করলেই উনার ছবি ভেসে আসছিল।তবুও জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। একটা সময় ঘুমিয়েও গেলেও সকাল ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ছোটবেলায় ঈদের আগের দিন আমার এমন হত আর আজকে ঈদ ছাড়াই এমন হলো। তবে আজকের খুশিটা ঠিক ছোটবেলার ঈদের দিনের খুশিটার মতো। আমার সাথে তুরাপ উঠে গিয়ে বলল

“কী রে সারারাত ঘুমাতে পারিস নি তাই না? আমার বিয়ের সময়েও আমার এমন হয়েছিল। ব্যপার না ঠিক হয়ে যাবে।”

ঘুম থেকে উঠেই চুপ করে আনমনা হয়ে বসে রইলাম আর বারবার ঘঁড়ির কাঁটা দেখতে লাগলাম আর ভাবতে লগলাম কখন যে এগারোটা বাজবে আর তুর্জ আসবে আমাকে নিতে। আজকে যেন ঘঁড়ির কাঁটাটা নড়ছেই না। অপেক্ষার প্রতিটা সেকেন্ড যেন একেকটা ঘন্টার মত মনে হলো। আর শুধু বুকে ধুকবুক করতে লাগল। নাস্তা খেতে নিয়েও যেন গলা দিয়ে নামছিল না। কী যে এক অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার ভাষা নেই।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কেটে এগারোটা বাজল। আমি এর মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেলাম যাওয়ার জন্য। আর তুরাও নিজেকে তৈরী করে নিল। এগারোটা দশে ফোনে কল বাজল। খেয়াল করে দেখলাম তুর্জ কল দিয়েছে। তুর্জের কল টা ধরে বললাম

“হ্যালো।”

ওপাশ থেকে আমার স্বপ্নের পুরুষ বলল

“তৈরী হয়েছেন তো?আমি আপনার বাসার নীচে চলে এসেছি।”
“তাহলে বাসায় আসুন।”
“বিয়ের আগে যাওয়া ঠিক হবে না। আপনি চলে আসুন নীচে। আর শুনুন একটা আবদার ছিল।”

আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম আবদারের কথা শুনে। জানিনা কী আবদার করে বসে আর আমি যদি সেটা রাখতে না পারি, তাই ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“কী আবদার বলুন? রাখার চেষ্টা করব।”
“একটু কাজল পড়ে আসবেন।”

উনার আবদারের কথা শুনে আমি খুশিতে ভেতরে ভেতরে নাচতে লাগলাম। উনাকে খুশি মনে জাবাব দিলাম

“আমি এক্ষুনি কাজল পড়ে আসছি।”

তারপর চোখে মনমতো গাঢ় করে কাজল দিয়ে তুরাকে নিয়ে নীচে গিয়েই দেখলাম তুর্জ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তুর্জের কাছে যেতেই তুর্জ বলল

‘গাড়িতে বসুন দুজন।”
আমি গাড়ির পিছনে বসতে নিলে তুরা আমাকে আটকে দিয়ে বলল

“আরে নিরা কী করছিস?”

আমি অবাক হয়ে তোরার দিকে তাকিয়ে বললাম

“কেন কী হয়েছে?”

“আরে তুই আর তুর্জ সামনে বস আমি পেছনে বসছি।একসাথে বসলে একটু গল্প করতে পারবি।”

তুরার কথা শুনে তুর্জ আর আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর তুর্জ সামনে বসে আমাকে তার পাশে বসার জায়গা করে দিল। তুর্জের পাশে বসতে গিয়েও আমার বুক আর পা কাঁপছিল খুব। অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে তুর্জের পাশে বসলাম। গাড়িটা গন্তব্যের দিকে চলতে লাগল। মাঝপথে তুর্জ যখন বলল আপনার চোখ দুটো অনেক সুন্দর লাগছে, আমি তো লজ্জা আর খুশিতে স্তবির হয়ে গিয়েছিলাম। আপরদিকে গাড়ি চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছাল। তুর্জ আগে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামতে বলল। আমিও নামলাম তারপর তুরাকে নিয়ে শপিং করতে লাগলাম। কিন্তু আমার চোখ শুধু কালো শাড়ির দিকেই যাচ্ছিল। তুরা আমাকে কালোর শাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কানে কানে বলল

“তোর যদি কালো শাড়িটা পছন্দ হয়, নিয়ে নে। বিয়েতে লাল পরিস আর ঐ বাড়িতে গিয়ে কালো পড়িস।”

“তুই কী পাগল হয়ে গিয়েছিস। আমি বিয়ের পর ওদের বাড়িতে কালো শাড়ি পরব? আমি এমনেই কালো ওদের বাড়িতে কালো শাড়ি পরলে মানুষ তো ভূত বলবে।”

তুরা হালকা চিমটি কেটে বলল

“তাহলে শুধু শুধু কালো শাড়ির দিকে তাকাচ্ছিস কেন?”

আমি ফিসফিস করে জবাব দিলাম

“কালো শাড়িটা পছন্দ হয়েছিল তাই তাকাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাকে পরলে পেত্নী লাগবে তাই সাহস করে কিনতে পারছি না। আর আসছি তুর্জের সাথে ও যা কিনে তাই নিব।”

এর মধ্যেই তুর্জ আমাকে ডেকে বলল

“আপনি একটু এদিকে আসবেন?”

তুর্জের কথাটা মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে তুরা বলল

“আরে ভাইয়া এখন ও আপনিতে পড়ে আছেন। দুইদিন পর আপনার বউ হবে তুমি করে বলেন।”

তুরার কথায় তুর্জ বেশ লজ্জা পেয়ে বলল

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করেই বলব। নিরা একটু এদিকে আসবে?”

আমি স্মিত গলায় উত্তর দিলাম

“হ্যাঁ আসছি।”

আস্তে পায়ে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনার কাছে যেতেই উনি আমাকে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল

“এটা কেমন?”
“অনেক সুন্দর।”
“এটা নিব?”
“হ্যাঁ নিন।”

অতঃপর শাড়ি গয়না সব কি’না শেষ হলো। গাড়িতে উঠলাম পুনরায়। গাড়িতে চলতে চলতে অবশেষে বাসায় পৌঁছাল।গাড়ি থেকে নেমে তুর্জকে বিদায় দিয়ে যখন বাসায় প্রবেশ করব ঠিক তখনেই তুর্জ আমার হাতটা ধরে টান দিল। আমি বিস্মিত হয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে বললাম

“কিছু বলবেন?”

তুর্জ গাড়ি থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল

“এ কালো শাড়িটাতে তোমাকে বেশ মানাবে।”

বিস্মিত সুরে জিজ্ঞেস করলাম

” এটা তো আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল আপনি বুঝলেন কি করে?”

“চোখ দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম। এবার সাবধানে বাড়ি যাও।”

তুর্জ আমাকে কালো শাড়ি দিয়েছে এটা যে কত ভালো লেগেছে বুঝানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তুরা আমার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল

“আল্লাহ্ তোর মনমতো কাউকে জুটিয়ে দিয়েছে। অনেক ভালো থাকবি দেখিস।”

আমি শুধু সৃষ্টিকর্তাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলাম৷ তুর্জের মতো কেউ আমায় এত ভালোবাসবে বা এত যত্ন করবে কখনও কল্পনাও করিনি৷ সত্যি বলতে সৃষ্টিকর্তা আমাকে উপঢৌকন সহ তুর্জকে উপহার স্বরুপ দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here