#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৭,১৮
তুরা আপন মনে খেয়েই চলেছে। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“তুই বল না এবার। আমার তো অনেক চিন্তা হচ্ছে তুরা।”
তুরা কিছুটা দম নিয়ে উত্তর দিল
” এটা ঠিক যে তুর্জের আগে তিনটা বিয়ে হয়েছে আর প্রতিবারেই গর্ভবতীকালীন সময়ে তুর্জের আগের স্ত্রীদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সবাই বিষয়টা অভিশপ্ত বললেও আমার কাছে মোটেও অভিশপ্ত মনে হচ্ছে না। এর পেছনে কোনো না কোনো রহস্য তো আছেই। আর তুর্জ সবসময় অসহায় মেয়েদের ধরে এনেই বা কেন বিয়ে করছে। তিনটা বিয়ের বিষয় গোপন করেছে আর কাউকে বুঝতেও দেয় নি। তারা বিয়ের ব্যপারটা এমন ভাবে এগিয়েছে যে খুঁজ খবর নেওয়ার সময় দেন নি। তবে এটা খুঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রথম স্ত্রী এর মৃত্যুর পর হুট করে তুর্জদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো হয়ে যায়। এটা কী করে সম্ভব? তুর্জ তো কোনো ব্যবস্যা করে না। চাকুরির টাকায় এত বড়লোক একবারে হওয়া অনেক কঠিন ব্যপার। তার উপর প্রথম বউ এর আর্থিক অবস্থা এত ভালো ছিল না। আমার কাছে ব্যপারটা খুব সহজ দেখা গেলেও বেশ ঘাপলা লাগছে। এর পিছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে।
“কী কারণ থাকতে পারে বল?”
“এখন তো কিছু বলতে পারছি না। তবে ধীরে ধীরে জেনে যাব। তোকে শুধু আমার কথা মতো কাজ করতে হবে।”
“সব করতে রাজি।”
“তুর্জ কোথায় কী রাখে সব খুঁজ নিবি। আর বাড়ির প্রতিটা লকারের চাবি তুই বুদ্ধি করে এ সবানে ছাপ দিয়ে নিবি।সাবধানে নিবি যাতে কেউ টের না পায়। আমি বাইরে থেকে চাবি বানিয়ে নিব। তারপর সুযোগ মতো সব কাজ করব।পারবি না?”
“হ্যাঁ পারব। এ আর কষ্ট কী।
এর মধ্যে মা দরজা নক করল আমি দরজা খুলে দিলাম ।তুরাকে মা অন্য রুম দেখিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বলল। তুরাও ঐ রুমে চলে গেল। রাতে তুর্জ আসার পর তুর্জ, আমি, তুরা, আম্মু, নানীমা মিলে খেতে বসলাম। মা সবার সামনে বলল
“নিরা তোমার তো দুই মাস চলতেছে মনে হয়। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। কালকে প্রস্তুত থেক। তুর্জ বিকেল দিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে কারণ ঐ ডাক্তার সন্ধ্যায় বসে।”
আমি মাথা নেড়ে বললাম
“আচ্ছা মা।”
রাতে ঘুমাতে আসলাম। তুর্জ ঘুমিয়ে পড়ল। আমিও ঘুমানোর চেষ্টা করতে নিলাম। হঠাৎ মনে হলো কোনো একটা আওয়াজ আমার কানে আসলো। সরাসরি জানালা দিয়ে একটা আলো আসলো। আর আমি তাকিয়ে একটা বিভৎস বাচ্চার মুখ দেখে চিল্লানি দিয়ে উঠলাম। তুরা আমার রুমে দৌড়ে আসলো। আম্মু ও আসলো। তুর্জ ঘুম থেকে উঠল।সবাই বলতে লাগল কী হয়েছে? আমি ভয়ে ভয়ে বললাম-
“জানালা দিয়ে কী জানি দেখলাম।”
আম্মু স্বান্তনার সুরে বলল
“ও কিছু না। ঘুমিয়ে পড়ো। হয়তো দুঃস্বপ্ন দেখেছ।
পাশাপাশি তুরাও একটু স্বাত্ত্বণা দিয়ে চলে গেল। তুর্জকে ঝাপটে ধরে কোনোরকমে রাতটা পার করলাম।
সকালটা শুরু হলো স্নিগ্ধ সজীবতায়। রাতের ভয়টা কিছুটা কেটে গেছে। শরীরটা এখন ভালো ও লাগছে। এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম সেটাও ভাবতে লাগলাম। এর মধ্যে তুরা এসে বলে উঠল
” রাতে কি সত্যিই এমন কিছু দেখেছিলি নাকি দুঃস্বপ্ন?”
“সত্যিই দেখেছিরে।”
“আমার সাথেও এমন ঘটেছে তবে আমি ঐ চেহারায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে দিয়েছিলাম। তারপর মনে হলোমকেউ একজন মাথায় হালকা আঘাত করল। কিছু একটার গন্ধ পেলাম আর তীব্র ঘুম হলো আমার। সত্যিই কী এ বাড়ি অভিশপ্ত কি’না বুঝতেছি না।
আমি তুরাকে চেঁপে ধরলাম। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম
“তাহলে কী ঐ মহিলার কথা ঠিক?”
“জানি না রে আমি মঙ্গলবার চলে যাব। বিষয়টা নিয়ে আরও ভাববো। তুই একটু সাবধানে থাকিস।”
“নাহ তুরা যাস না তুই। তুই গেলে আরও অসহায় লাগবে।”
“আরে বোকা মেয়ে আমি এক মাস পর আবার আসব। এর মধ্যে ফোনে যোগাযোগ হবে।”
সারাদিন টা কেমন যেন ছন্নছাড়া করে পার করলাম। বুকে হালকা ব্যথাও হচ্ছে। সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে ডুবতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। অফিস থেকে তুর্জ চলে আসলো। তুর্জ আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার সব চেক করে বলল সবকিছু ঠিক আছে। এক মাস পর যেন আবার যাই।
ডাক্তার দেখানো শেষে তুর্জকে নিয়ে বাসায় আসলাম। এদিকে তুরা মোট পাঁচদিন থেকে চলে গেল। তুরা যাওয়ার পর অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় গুলো আরও বেশি ঘটতে লাগল।ঐ চেহারাটা বারবার ভেসে আসত। কেন এমন হত বুঝতাম না। মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম আমি। আমার কাছে এবার বিশ্বাস হতে লাগল এটা একটা অভিশপ্ত বাড়ি। না হয় এমন কাহিনি কেন ঘটবে? কেনই বা এত অভিশপ্ত কাহিনির সম্মুখীন আমি হব?
সেদিন রুমে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। খেয়াল করলাম সেই বিভৎস চেহারার বাচ্চাটা আমার বুকের উপর ভর দিয়ে বসল। আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। দম ও বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। অসাড় হয়ে যাওয়া হাত দুটোতে কোনোরকম শক্তি সন্চয় করে বাচ্চাটাকল ঢিল মারলাম মেঝে বরাবর। ঢিল মারার সাথে সাথে বাচ্চাটার থেকে রক্ত বের হতে লাগল।
ভয়ে জোরে জোরে আম্মুকে ডাক দিতে লাগলাম। আম্মু সাথে সাথে আমার রুমে আসলো।
“কী হয়েছে এমন করছো যে?”
আমি পুতুলটাকে ঈশারা করে বললাম
” এই যে দেখুন আম্মু পুতুল থেকে রক্ত বের হচ্ছে।”
আম্মু আমার হাতের ঈশারা বরাবর তাকিয়ে বলল
“কোথায় বউ মা আমি তো কিছু দেখছি না।”
আম্মুকে বারবার দেখানোর চেষ্টা করলাম আম্মু একই কথা বলল। এক পর্যায়ে আম্মু আমাকে নিয়ে নানীমার ঘরে গেল।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল নানীমার সাথে যেন শুয়ে থাকি। ভয়ে অবস্থা এতই খারাপ যে কোনো রকম কথা না বলে আমি নানীমার সাথে শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ ।
খানিকক্ষণ পর সাহস করে আমার রুমে গেলাম কিছুটা বিস্মিত হলাম। কারণ কোনো বাচ্চায় সেখানে ছিল না রক্তও না। তুরাকে কল দিয়ে সবটা বলার পর তুরার অভিব্যক্তি ছিল
“চিন্তা করিস না আমি কিছুদিনের মধ্যে আবার আসব। তুই সাবধানে থাক একটু৷ ঐ বাড়িতে কিছু তো একটা রহস্য আছে।”
আমি নীরবে ফোনটা কেটে বসে বসে ভাবতে লাগলাম কী হচ্ছে আমার সাথে আর কেনই বা হচ্ছে এমন। এর শুরু কোথায় ছিল আর শেষটায় বা কোথায়?
দেখতে দেখতে এক মাস কাটল। এক মাস পর তুরা আবার আসলো। তুরা আসার পর অদ্ভুত কাহিনিগুলো ঘটা একদম বন্ধ হয়ে গেল। তুরা এসেছে দুইদিন হলো এর মধ্যে কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটল না। এর কারণটা মিলাতে পারছিলাম না।তুরাকে বলার পর তুরাও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারল না।
তুরার মন মানছিল না যে এটা অভিশপ্ত বাড়ি। তবে আমার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য তুরার একটু বিশ্বাস হলেও একদিনের একটা ঘটনায় সে বিশ্বাসটা ভেঙ্গে যায়।
তুরা সেদিন আম্মুর রুমে গিয়ে আম্মুর সাথে গল্প করতেছিল।আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তুরার ফোনটা হাত থেকে নীচে পড়ে যায়। তুরা ফোনটা তুলে আম্মুর রুম থেকে কথা শেষ করে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আম্মু বাজার করতে বের হলে তুরা আমাকে নিয়ে আম্মুর রুমে গিয়ে খাটের নীচে থেকে একটা পুতুল বের। পুতুলটা একদম বিভৎস ছেড়া। আমি কিছুটা অবাক হলাম পুতুলটা দেখে। মনের মধ্যে ভাবনা আসার আগেই তুরা বলে উঠল
“এ বিভৎস পুতুল তোর শ্বাশুড়ির খাটের তলায় কেন?”
তুরার কথা পুতুলটাকে আরও ভালো করে দেখলাম। পুতুল টা দেখে আমার একদম চিনতে ভুল হয় নি। এ পুতুলটাকেই তো আমি দেখতাম বারবার। আর ভাবতাম কোনো অভিশপ্ত বাচ্চা। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল। তুরাকে বলে উঠলাম।
“এটাই তো সেই পুতুলটা।”
তোরা আমার কথা শুনে পুতুলটা ভালো করে দেখে বলল
“এই দেখ এ পুতুলটাকে আমি ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলাম সে দাগটা এখানে আছে। তাহলে ঐদিন আমিও এ পুতুলটাই দেখেছিলাম। এটা কোনো ভৌতিক কাহিনি না তোকে ভয় দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে বড়ো কোনো রহস্য রয়েছে। তুই এখন স্বাভাবিক ভাবে থাক আমি বিষয়টা দেখছি।”
সেদিনের পর থেকে আমার ও একটু সন্দেহ আসলো মনে।আমিও বুঝতে পারলছিলাম না আমাকে ভয় দেখিয়ে আম্মুর কী লাভ? সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যেতে লাগল। আমার শূন্য মাথায় এত চাপ যেন নিতে পারছিল না। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তুরা আমাকে ইশারা দিয়ে বলল
“তুই নানীমার সাথে কথা বল আমি একটু ঐ কর্ণারের রুমে যাই ঐটা স্টোর রুম ঐখানে কিছু তো অবশ্যই পাব।”
আমি তুরার কথা শুনে নানীমার রুমে গিয়ে নানীমাকে বিভিন্ন কথায় ব্যস্ত রাখলাম। আধা ঘন্টা পর তুরাও নানীমার রুমে আসলো। নানীমাকে মৃদু গলায় রসিক করে বলল
“আরে নানীমা এবার তো নাতিন বউকে ছাড়ুন। ও একটু বিশ্রাম নিক। আন্টিও এখন আসলো না”
নানীমা হাসতে হাসতে বলল
” হ্যাঁ নিয়ে যাও তোমার বান্ধবীকে। আর তোমার আন্টির আসতে একটু দেড়ি হবে। নিরার ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে আসবে তো তাই।”
তুরা আর কথা বাড়াল না বিদায় সূচক বার্তা দিয়ে বলল
“আচ্ছা নানীমা গেলাম।”
বলেই তুরা আর আমি নানীমার রুম থেকে বের হলাম। রুম থেকে বের হওয়ার পর আমি কিছু বলতে নিলে তুরা হাত চেপে ইশারা দিল রুমে গিয়ে সব কথা হবে। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। সরাসরি রুমে চলে আসলাম। রুমে আসার পর তুরা দরজা লক করে আমাকে বলল
“এই দেখ দুইটা গর্ভপাতের কাগজ পেয়েছি। আর দুইটাই তুর্জের আগের স্ত্রীদের। ”
তার মানে তুর্জের বউ ছিল সেটা ভালোভাবে নিশ্চিত হলাম।ভেতরটা কষ্টে কাপঁতেছিল। আরও অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস শুনতে হবে বুঝতেই পারছিলাম। কারণ তুরার অভ্যাস আছে এরকম কাহিনি ঘেটে বের করার। আমার মুখ ভার দেখে তুরা ঠোঁট গুলো মৃদু প্রশস্ত করে বলল
“তুই এভাবে মন খারাপ করে থাকলে কিন্তু কিছুই বলব না।”
তুরার কথায় মুখে জোর করে হাসি এনে বললাম
“আরে মন খারাপ করি নি বল।”
তুরা আমার হাতটা ধরে হালকা ভরসা দিল। তারপর বলল
“গর্ভপাতের কাগজটা দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চার পাঁচ মাসের সময় লিঙ্গ পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে এখানে বাচ্চার লিঙ্গ কী ছিল সেটা বুঝতে পারছি না। কারণ দুইটাতে নাইন লেখা। এদিকে আমার যাওয়ার সময়ও হয়ে গিয়েছে।পরপর দুইবার আসলাম তোর এখানে। বারবার আসলেও ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। আর তুই যে সাবানে চাবির ছাপ দিয়েছিস আগেরবার, তা দিয়ে চাবিগুলো বানিয়ে এনেছি। তুই এটা রেখে দে কখনও কাজে লাগলে আমি বলব। আপাতত কালকে চলে যাব।”
আমি তুরাকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাবতে লাগলাম সে চলে গেলে আমি কতটা একা হয়ে যাব। তাই কাঁদতে কাঁদতে বললাম
“এখনি যাস না। খুব গোলমেলে আর ভয় লাগছে । নিজেকে স্থির রাখতে পারব না। কী হচ্ছে কিছুই বুঝছি না।”
তোরা অসহায় গলায় জাবাব দিল
“দেখ নিরা তোর দুলাভাই ডিটেকটিভ এর কাজ পছন্দ করে না বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন যদি শুনে আমি এসব করছি রাগ করে বসবে। তার উপর আমার যাওয়ার তারিখ চলে এসেছে। আমি কাগজ গুলো সাথে নিয়ে যাব। ফোনে তো আমাদের কথা হবেই। তোকে মনে সাহস রাখতে হবে।আমার ফ্লাইট আর পনেরদিন পর। বিদেশ গেলেও তোর সাথে মেসেন্জারে যোগাযোগ হবে। আমার কথা মতো শুধু কাজ করবি আর কিছু না। ”
” আমি সব করব। তবে তুই আমার পাশে থাকিস।”
তোরা আমাকে শক্ত করে ধরল। অনেকটা ভরসা দিয়ে বলল
“সেটা নিয়ে ভাবিস না। আমি তোর পাশেই আছি আর সবসময় থাকব।”
এর মধ্যে আম্মু বাজার থেকে এসে আমাকে বলল
“নিরা সন্ধ্যায় তৈরী থেক। একমাস তো হয়ে গেল। ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে এসেছি। তুর্জ নিয়ে যাবে সন্ধ্যায়।”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো জবাব দিলাম
“আচ্ছা আম্মু।”
সন্ধ্যায় তুর্জ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার সবকিছু দেখে আগেরবারের মতোই বলল সব ঠিক আছে।বসায় চলে আসার জন্য রওনা দিলাম। মাঝপথে আইসক্রিম দেখে চেয়ে রইলাম। তুর্জ আমার চাহুনি দেখে বলল
“আইসক্রিম খেতে মন চাচ্ছে বুঝি?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম
“নাহ মানে?”
তুর্জ গাড়ি থেকে নেমে বলল
“তুমি বসো আমি আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসছি।”
এ বলে তুর্জ গাড়ি থেকে নেমে আইসক্রিমের দোকানের দিকে এগুতে লাগল। দুটো কোণ আইসক্রিম কিনে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
“এই নাও এবার মন ভরে খাও।”
আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“দুইটা আনার কী দরকার ছিল?”
তুর্জ হাসতে হাসতে ভালোবাসার সুরে বলল
“আমি জানি তোমার খেতে ইচ্ছা করছে। তোমার চোখ দেখেই মনে হচ্ছে। নাও তো ধরো। এবার আয়েশ করে খাও।না খেতে পারলে তো আমি আছিই বোকা মেয়ে।”
আমি তুর্জের হাত থেকে আইসক্রিম নিতে নিতে ভাবলাম তুর্জের মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। বলার আগেই সব বুঝে ফেলে। তুর্জ আমাকে ঠকাতে পারে বিশ্বাসেই হচ্ছে না। এসব ভেবে আনমনা হয়ে গেলাম। তুর্জ আমাকে আনমনা হতে দেখে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল
“কী হয়েছে খাচ্ছ না যে?”
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় আসলাম। বাসায় আসার পর তুরা ডাক্তারের ঠিকানাটা নিয়ে নিল।
পরদিন তুরা চলে যাওয়ার পর মনটা বেশ বিষন্ন হয়ে গেল।সেই সাথে আরও বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ঘটতে লাগল।মনে মনে ভীষণ ভেঙ্গে পড়ছিলাম। তবে তুরা কল দিয়ে সাহস জুগাত। সবসময় একটা অশান্তিতে ভুগতাম।
কেটে গেল কিছুদিন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম। এর মধ্যে পুনরায় ঐ মহিলাকে পেলাম। মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম
“এর আগে কী তুর্জের কোনো স্ত্রী এর সাথে আপনার কথা হয়েছে? প্রেগন্যান্ট এর সময় কী কোনো ঘটনা ঘটেছে কি’না বলেছে?”
মহিলা একটু আস্তে করে বলল
“প্রথম দুই বউ এর সাথে কথা হয় নি। তারা ঠিক করে বরান্দায় আসত না। কথা বলতে চাইলেও বলত না। তোমার আগে যে বউ ছিল সে বলেছিল এ বাড়িতে নাকি বিভিন্ন ভৌতিক বিষয় ঘটত।”
মহিলার কথাটা শুনে মনে হলো আমিই প্রথম না,তারমানে এর আগের বউদের সাথেও এমন ঘটেছে। মনে মনে হতাশ হতে লাগলাম। আমার ভরসার জায়গা ছিল তুরা তাই আমি তুরাকে কল দিয়ে সব বলতাম।
কাউকে বিশ্বাস করতে পারতাম না। মা ফোন দিলেও তেমন কিছু বলতাম না কারণ চিন্তা করবে বেশি।