#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮
প্রতিদিন খালা দুধ দিয়ে যেত আর আমি দুধ না খেয়ে ফেলে দিতাম আর নিলয়কে খালার সাথে নোংরা ভাবে আবিষ্কার করতাম। কেটে গেল পনেরদিন। আমার সহ্যের সীমা চলে গিয়েছিল। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। এ অসহ যন্ত্রণা আমাকে চরমভাবে গ্রাম করতে লাগল। বিষাদময় অধ্যায়টা যেন আমাকে আরও বিষাক্ত করে দিল। তাই একদিন নিলয় আর খালাকে হাতেনাতে রুমের মধ্যে ধরে ফেলি। তারা আমাকে এভাবে দেখে বেশ চমকে গেল। কারণ তারা তো ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে গিয়েছি। কিন্তু তারা তো এটা জানত না যে আমি দুধটা না খেয়ে ফেলে দিতাম। খালা বিস্মিত গলায় বলল
“তুমি এখানে?”
জবাবে খালাকে বললাম
“কেন কী ভেবেছিলেন? আমি ঘুমিয়ে আছি। আর আপনারা নোংরা কাজ করছেন সেটা আমি কখনও টের পাব না। আমার ভাবতেও ঘৃনা লাগছে যে আপনি নিজের বোনের ছেলের সাথে এমন করছেন। নিলয় তো রিহ্যাবে গিয়েছিল তাহলে এখানে আসলো কীভাবে? সারাদিন আমাকে মা, মা ডেকে রাতে আমার স্বামীর সাথেই নষ্টামি করতেছেন ছিঃ। এত বড় মুখোশধারী আপনি? আপনাকে নিজের মায়ের মতো মনে করতাম। লজ্জা করল না হাঁটুর বয়সী ছেলের সাথে এমন কাজ করতে। আদৌ কী আপনারা খালা ভাগ্নে নাকি অন্যকিছু?”
আমার কথাগুলো শুনে নিলয় তেড়ে আসতে নিল আমার দিকে। নিলয়ের সেই চিরাচায়িত রুপটা আবারও ফুটে উঠল। আমার বুঝতে আর বাকি রইল না কয়েকদিন আগে যা ঘটেছিল সেটা নিলয়ের অভিনয় ছিল। আর এ অভিনয়টাও করেছিল নিজের স্বার্থের জন্য। নিলয় যখন তেড়ে এসে আমাকে মারতে নিল, শয়তান মহিলাটা নিলয়কে আটকে দিয়ে বলল
” মারতে যাইস না। অনেক কষ্ট করে এ কয়দিনে খানাপিনা দিয়া নাদুসনুদুস বানাইছি যাতে করে ভালো উপার্জন করতে পারি। তুই এখন মাইরা চেহারা নষ্ট করিস না।”
মহিলার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
” আমাকে আদর যত্ন করার পেছনেও কারণ আছে তবে সেটা কী কারণ? আর ভালো উপার্জন হবে মানে কী?আপনি কে? তাহলে আপনি কি নিলয়ের খালা না?”
মহিলা বিদঘুটে হাসি দিয়ে উত্তর দিল
“আমি নারী ব্যবসায়ী। নিলয় আমার উপযুক্ত অংশীদার । নিলয়ের কাজেই হচ্ছে মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তুলে আনা। আর আমার কাজ হচ্ছে মেয়েদের দিয়ে উপার্জন করা। তুই কী ভেবেছিলে নিলয় তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তোকে সন্দেহ করে কারও সাথে কথা বলতে দেয় না। তাহলে বলব ভুল ভেবেছিস। নিলয় তোর সাথে এমন নাটক করত যাতে করে তুই কারও সাথে যোগাযোগ করতে না পারিস। কিন্তু নিলয়ের সাথে কথা ছিল তোর সাথে ছয় মাস থেকে তোকে আমার হাতে তুলে দেবে। তাই ছয় মাস পরে তোকে আমার বাসায় নিয়ে আসে। তোকে দেখেই নিলয়ের উপর রাগ হয়েছিল। কারণ নিলয় তোর এমন হাল করেছিল যে তোকে বেঁচার মতো অবস্থা ছিল না। আর তখন যদি তোকে এসব বলতাম তুই কখনো নিজে থেকে সব করতে চাইতি না। খাওয়া দাওয়া না করে আরও শুকাইতি। তাই এ নাটক করে তোরে নাদুসনুদুস বানিয়ে নিয়েছি। এক খদ্দের তোকে পছন্দ করেছে সে বিদেশ থেকে আসবে আরও একমাস পর, তাই তোকে এতদিন পুষে রাখতেছি। আমার কথা মতো কাজ করলে মজাও পাবি টাকাও পাবি। আমার কথার বাইরে গেলেই একদম হাড়গুড় ভেঙ্গে দেবো”
মহিলার কথা শুনে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম
“আমি তো আপনার মেয়ের মতো আমাকে যা ইচ্ছা করুন তবে শরীরের ব্যবস্যায় নামাবেন না। আমি এসব পারব না।”
কিন্তু শয়তান মহিলাটা হাসতে হাসতে জবাব দিল
“তোর মতো কত মেয়েই আমার কাছে একেই কথা বলেছে হিসাব নেই। তাদের যখন ব্যবস্যায় নামিয়েছি তারাও এখন দিব্যি রোজগার করছে। একবার নেমে গেলে দেখবি মজা আর মজা। টাকা আর টাকা।”
এসব কথা শুনার পর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার মতো রুচি জাগল না। বুঝে গিয়েছিলাম হাজার কাঁদলেও মহিলা আমার কথা শুনবে না। চুপ করে আমার রুমে চলে আসলাম।কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিল। একটা মায়ের বয়সী মহিলা যে কি’না মা, মা করত সে মহিলার এত নোংরা রুপ হতে পারে ভাবনার বাইরে ছিল। মানুষের মুখের আড়ালে যে এত মুখোশ থাকে সেটা চেনা বড় দায়।
“পৃথিবীটা কত বৈচিত্র্যময়। এখানে শত শত মুখোশের আড়ালে মানুষবেশে শত শত অমানুষের বাস।”
সেদিন রাতটা আমার কাঁদতে কাঁদতে গেল। সকালে উঠেই খালা খাবার এনে বলল
“আরও এক মাস কষ্ট করে তোকে পুষতে হবে। নাহয় পাঁচ লাখ টাকা হাতছাড়া হবে। এই নে এ খাবার গুলো গিল।”
এ বলে খাবার গুলো ফিকা মেরে বিছানার উপর রেখে গেল।আমিও গপগপ করে খাবারগুলো খেয়ে নিলাম। সেদিন খেতে পারলেও পরে আর খাবার গলা দিয়ে নামে নি। সারাদিন শুধু চিন্তা করতাম কীভাবে এখান থেকে বের হব। কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। দুই একবার পালাতে নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। একমাস পর খেয়াল করলাম একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে মহিলার সাথে কী কথা যেন বলছে। মহিলা লোকটাকে আমার ঘরে নিয়ে এসে বলল
“এই যে আপনার মাল। আপনি যখন খুশি নিয়ে যেতে পারেন। টাকা দিলে এখনেই নিয়ে যেতে পারবেন। তবে দামটা একটু বেশি আগেই বলেছি।”
খেয়াল করলাম লোকটা আমার দিকে নোংরা নজরে তাকাচ্ছে। একজন বাবার বয়সী লোকের এরকম লোভী চাহুনির সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না। লোকটার চাহুনি দেখে লোকটার প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে গেল। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে কতক্ষণ দেখে বলল
“আমি মাল আজকেই নিতে চাই। কত টাকা দিব বলেন?”
“এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিলেও কম হবে। তবে পাঁচ লাখে কথা হয়েছে তাই আর বাড়ালাম না।”
“এজন্যই তো আপনাকে আমি এত পছন্দ করি।”
এ বলে বিদঘুটে হাসি দিয়ে লোকটা টাকার চেকে স্বাক্ষর করে মহিলার হাতে দিল। আর মহিলাটা বাবু আপনি সত্যিই লক্ষী এ বলে চেঁচাতে লাগল। তারপর লোকটা আর শয়তান মহিলাটা রুম থেকে বের হয়ে গেল। আর নিলয় আমাকে ধরে বলল
“চল তোকে দিয়ে আসি। আর কাজ সুন্দর করে করবি। কোনো অভিযোগ আসলে খবর আছে।”
আমি নিলয়ের পায়ে ধরে বললাম
“আমার সাথে এমন করো না। আমি তো তোমার স্ত্রী । কাজী এসে আমাদের বিয়ে পড়িয়েছে। তুমি আমাকে মারো, কাটো যা ইচ্ছা করো তু্বুও আমাকে এভাবে অন্যের হাতে নষ্ট হতে দিও না। নিজের বউকে এভাবে অসম্মান করো না।”
আমার একথা শুনে নিলয় আমার চুলগুলো ধরে বলল
” তোকে পুষে আমার কী লাভ বল? তোকে বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছি। আর বাকি রইল বিয়ের কথা। যে কাজীর কথা বললি সে কাজীও আমার দলের লোক। আমার কাজেই মেয়েদের তুলে এনে এভাবে জোর করে বিয়ে করে ফাঁসিয়ে দেওয়া। তোর মতো আরও ত্রিশ, চল্লিশটা মেয়েকে বিয়ে করেছি তাদের জন্য মায়া হয় নি আর তুই আসছিস ন্যাকা কান্না নিয়ে। একদম যদি কেঁদেছিস তোকে শেষ করে দিব। লোকটার সাথে যাবি, যা করতে বলে করবি। যদি কোনো ঝামেলা করেছিস তোকে ঐখানেই পচিয়ে মারব।”
কথাটা বলেই নিলয় হাত টেনে আমাকে নিতে চাইল। কিন্তু আমি মেঝেতে শক্ত করে চেপে রইলাম। নিলয় ও আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিতে পারছিল না। আমার সাথে জোর খাটিয়ে না পেরে নিলয় শয়তান মহিলাকে ডাক দিল। শয়তান মহিলা এসে বলল
“এ মেয়ের সাথে পারছিস না কেমন পুরুষ হয়েছিস।”
এ বলে শয়তান মহিলাও আমাকে টানতে লাগল। কিন্তু আমি মেঝেতে শক্ত করে চেপে শুয়ে রইলাম। কেউ টেনেও পারছিল না। শয়তান মহিলাটা বলে উঠল
“ঐ রুম থেকে সিরিন্জ নিয়া আয়। এ মাইয়ারে ইনজেকশন না দিলে, নেয়া যাবে না। খাওয়ায়ে দাওয়ায়ে এ মাইয়ার শক্তি বাড়াইয়া দিছি।”
নিলয় মুখোশধারী মহিলার কথা শুনে পাশের রুম থেকে ইনজেকশন আনতে গেল। আর এদিকে মহিলাটা আমার চুল ধরে টানতে লাগল। মহিলাটা অসভ্য ভাষায় গালি দিতে লাগল। সবসময় জানতাম মহিলারা মায়ের জাত হয়। আর সে মায়ের জাত ও এতটা নীচু হয় টাকার জন্য সে মহিলাকে না দেখে বুঝতাম না। অতঃপর নিলয় ইনজেকশন এনে বলল
” ইনজেকশন এনেছি।”
মহিলাটা আমার চুল টানতে টানতে বলল-
“মাইয়ার হাতটা ঠিক করে ধর। আমি ইনজেকশন দিচ্ছি।”
তারপর দুজন মিলে আমাকে জোর করে ধরে ইনজেকশনটা দিল। ইনজেকশনটা দেওয়ার পর শরীরের সব শক্তি যেন নিমেষে চলে যেতে লাগল।মাথাটা চক্কর দিতে লাগল। তারপর কী হল বুঝতে পারি নি।