হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-১৯

0
444

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৯

এসব দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও দুটা মাস।
আজকে বেশ আনমনা হয়ে বসে আছি। হিসাবের খাতায় হিসাব মিলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে তুরার কল বেজে উঠল। তুরা কল দিয়ে যা বলল তা শুনে আমার হাঁত পা কাঁপতে লাগল। মনের ভেতরটা ভয়ে কুকরে যেতে লাগল।নিমিষেই বিশ্বাসের চাঁদরটা সরে গেল। মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষ গুলোকে চেনা শুরু করলাম। মানুষ এত বড়ো প্রতরণা আর নাটক করতে পারে তা যেন ভাবতে পারছিলাম না। মনের গহীনে একটা বড়ো ধাক্কা লাগল। এখান থেকে কীভাবে বের হব সেটাও একটা বড় বিষয় ছিল। এমন একটা জালে ফেঁসে যাব কে জানত। এত বড়ো নোংরা খেলার গুটি হব সেটাই বা কে জানত

কারণ তুরা বলল

“আমি বিদেশে আসার আগের পনেরদিন তোর ব্যাপার টা নিয়ে ভেবে সব ঠিক করে রেখে এসেছিলাম। জানতে পারি তোকে যে ডাক্তার দেখানো হয় উনি করোনিক ভিলাস সেমপ্লিং টেস্ট করে।”

এরকম টেস্টের নাম জীবনেও শুনিনি। তাই অবাক হয়ে তুরাকে জিজ্ঞেস করলাম

“এটা কিসের টেস্ট তুরা? এ টেস্টের নাম আগে কখনও শুনি নি।”
“এটা হলো এমন একটা টেস্ট যে টেস্ট চার, পাঁচ মাসের গর্ভ অবস্থায় করলে বুঝা যায় যে বাচ্চাটা ছেলে নাকি মেয়ে। আর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ টেস্ট করানো হয়। তারপর মেয়ে বাচ্চা শনাক্ত হলে যারা প্রথম বাচ্চা মেয়ে চায় না তাদেরটা গর্ভপাত করে ফেলে দেওয়া হয়। এই যে আমরা নাইন লিখা নিয়ে একটা কনফিউশানে ছিলাম না? ঐ নাইন লিখাটারও কারণ উদঘাটন করতে পেরেছি।”

আমি অস্থির হয়ে বললাম-

“কীভাবে?”

তু রা আমাকে স্বা ত্ত্বণা দিয়ে বলল-

“আরে অস্থিরতা কমা আগে।”

আমি নিজেকে স্থির করলাম কিছুটা। দুজনেই চুপ এখন। নীবতা ভেঙে তুরাকে বললাম

“এবার বল।”

“শুন প্রথমেই আমার সন্দেহ হয়েছিল এটা ভেবে যে তোকে আশে পাশের ডাক্তার রেখে কেন এত দূরে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে। তোকে যে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে এর আগের দুইটা রিপোর্ট ও ঐ ডাক্তারের ছিল। তাই ডাক্তারের ব্যপারে গভীর ভাবে খুঁজ নিলাম জানতে পারলাম যারা মেয়ে বাচ্চা চায় না তারা এ টেস্ট করে শনাক্ত করে যে, বাচ্চা ছেলে হবে নাকি মেয়ে। যদি মেয়ে হয় তাহলে সেটা গর্ভপাতের মাধ্যমে নষ্ট করে ফেলে। আর এ কাজটা করা একদম বেআইনি তাই এ কাজটা করা হয় একদম গোপনে।

আমার প্রমাণের দরকার ছিল তাই আমার পরিচিত এক ভাইয়াকে পাঠলাম ঐ ডাক্তারের কাছে উনার স্ত্রী এর সদ্য পাঁচ মাসে পড়েছিল। উনি ভাবিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল

“আপনি কী ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এটা বলতে পারবেন?আমার প্রথম বাচ্চা ছেলে হোক এটা চাই। মেয়ে বাচ্চা আমি চাই না। যা টাকা লাগে দিব আমি। আমাকে একটু সাহায্য করুন।”

ডাক্তার মহিলা আমার ভাইকে আস্তে করে বলল

“এত জোরে জোরে বলছেন কেন? কেউ জানলে সমস্যা।আমি এখানে এসব কাজ করি না। আমার একটা নিজস্ব মেটারনিটি ক্লিনিক আছে কালকে সকালে আপনার স্ত্রী কে নিয়ে ঐখানে আসবেন। আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি।”

এ বলে মহিলাটা ঠিকানা দিল। আমার ভাই ঠিকানাটা নিয়ে পরদিন ঐ ক্লিনিকে গেল। সেখানে যাওয়ার পর ভাবির টেস্ট করল এবং ভাবীর রিপোর্টে সিক্স লিখে দিল। ভাইয়া সিক্স লিখা দেখে জিজ্ঞেস করল

“এটা কী? এটা দিয়ে কী বুঝাচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝছি না, আমার ছেলে হবে নাকি মেয়ে?”

সাথে সাথে উনি হেসে জবাব দিলেন

“শুনুন সিক্স টা দেখতে ইংরেজি কোন অক্ষরের মত সেটা আগে বলুন।”

আমার ভাই ভেবে উত্তর দিল

“বি অক্ষরের মত।”
“বি মানে বয়। আপনার ছেলে সন্তান হবে। যান এবার মিষ্টি খান গিয়ে বাসায়।”

ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে এসে আমাকে পুরো ঘটনা বলল। আমি তখন তুর্জের আগের স্ত্রী দের রিপোর্ট দেখে ভেবে দেখলাম নাইন অক্ষরটা ইংরেজি জি অক্ষরের মতো। তার অর্থ দাঁড়ায় জি মানে গার্ল। মানে মেয়ে বাচ্চা।

আমি বিস্মিত হয়ে তুরাকে জিজ্ঞেস করলাম-

“কিন্তু এ ছেলে বাচ্চা আর মেয়ে বাচ্চা দিয়ে কী হবে?”

” তুই কী বোকা নাকি নিরা? তুর্জ আর তুর্জের মা চায় তাদের প্রথম সন্তান ছেলে হোক যার কারণে এসব টেস্ট করাচ্ছে। যদি শনাক্ত করতে পারে যে বাচ্চাটা মেয়ে বাচ্চা, তাহলে গর্ভপাত করিয়ে ফেলে। তবে এখানেও একটা কিন্তু থাকে।

আমি অবাক হয়ে বললাম

“কী কিন্তু থাকে?”

“কিন্তু টা হচ্ছে গর্ভপাত করালে সব স্ত্রী দের মরার কথা না।আমার কাছে মনে হচ্ছে তোকে যেভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে সেভাবে ভয় দেখিয়ে আগেই সবাইকে হতাশ করে ফেলে।প্রথম স্ত্রী এর মৃত্যু গর্ভপাতের এর কারণেই হয়। আর শুনেছি দ্বিতীয় স্ত্রী এর মৃত্যু এক্সিডেন্টে হয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে ওরাই এক্সিডেন্টটা করিয়েছে।”

আমি তুরাকে থামিয়ে বেশ রাগ গলায় বললাম-

“আর যাই করুক ওরা মানুষ মারতে পারে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না তুরা।”

“পুরো ঘটনা আর প্রমাণ দেখলে তোরও একই কথা মনে হবে।”

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম-

“বল কি?”

“প্রথম স্ত্রী এর মৃত্যু হয়েছে গর্ভপাতের সময়। তবে প্রথম স্ত্রী এর নামে জীবন বীমা করা ছিল আর তার মৃত্যুর পর তারা মোটা অঙ্কের টাকা পায়। যেহুত তুর্জ তার স্ত্রী দের সাথে ভালো ব্যবহার করত তাই মেয়ে পক্ষের পরিবারের কেউ কোনো অভিযোগ করতে পারে নি। আমার যা মনে হয় সেটা তোকে খুলে বলি তাহলে,,

তুর্জের কাজ হচ্ছে অসহায় মেয়েগুলোকে খুঁজে বিয়ে করা।আর বিয়ের ব্যপারটা সে আর তার মা এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় কেউ তুর্জের পরিবারের খুঁজ নেওয়ার সুযোগ তেমন পায় না। তার উপর প্রথম স্ত্রী এর নামে জীবন বীমা করে। তাকে জোর পূর্বক গর্ভপাত করানো হয়। আর এর আগের সময়টাতে তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে হতাশ করে দেওয়া হয়। যার কারণে এরকম গর্ভপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে তুর্জের প্রথম স্ত্রী এর ক্ষেত্রে ও তাই হয়।বলা যায় পরোক্ষভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।মফলে তার প্রথম স্ত্রী এর মৃত্যু ঘটে। আর তারা জীবন বীমার সত্তর লাখ টাকা পায়। সে কারণে প্রথম স্ত্রী এর মৃত্যুর পর তুর্জের পরিবারের আর্থিক অবস্থা হুট করে ভালো হয়ে যায়।

তারপর শুরু হয় তুর্জদের নতুন খেলা। দ্বিতীয় বউ এর নামে একটা ছোট খাট বীমা করে কারণ জানে বারবার জীবন বীমা করলে ধরা খাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। আর দ্বিতীয় বউকে এক্সিডেন্টের নাটক করে মেরে ফেলে। এর পিছনেও একটা পরোক্ষ কারণ হল দ্বিতীয় স্ত্রী এর পেটে মেয়ে বাচ্চা ছিল। তারা চাইত তুর্জের প্রথম বাচ্চা ছেলে হোক।বলা যায় মানসিক বিকার গ্রস্ত মানুষ ওরা।

তৃতীয় জনকে কিভাবে মেরেছে সেটা ধোঁয়াশায় আছে।বাড়িটাকে অভিশপ্ত প্রমাণ করে যাতে আশেপাশের কেউ তাদের সন্দেহ করতে না পারে। ঐ যে তোর গুষ্টিতে কার কয় সন্তান কে বড় কে ছোট কেন জিজ্ঞাস করেছিল জানিস?

আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
“কেন?”
” তাদের হয়তো ধারণা ছিল তোর আত্নীয়দের সবার যদি প্রথম বাচ্চা ছেলে হয় তাহলে তোরও হওয়ার সম্ভবনা বেশি।আর খেয়াল করে দেখ তোদের আত্নীয়দের সবার প্রথম বাচ্চা ছেলে।তার উপর অসহায় মেয়ে বিয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে সেসব মেয়েদের বিয়ের ব্যপারে পরিবাররা চিন্তিত থাকে বেশি আর তখন তুর্জের মতো এমন ছেলে পেলে যে কেউ তেমন খুঁজ না নিয়েই বিয়ে দিয়ে দিবে। যেমনটা তোর বাবা,মা ও করেছে।”

এখন তোর ও পাঁচমাস হবে কিছুদিনের মধ্যে আমার তো মনে হয় তোর সাথে এমন কিছু ঘটতে পারে। আমাকে একটু সবসময় খুঁজ খবর দিস। বাকি ব্যবস্থা আমি করতেছি। হাতে সবটা প্রমাণ আসুক।

তুরার কথাগুলো কোনো অযৌক্তিক কথা ছিল না। সবকিছু শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। ধুম করে কেঁদে ফেললাম। তুরা আমার কান্না শুনে বলল

“নিরা এখন ভেঙ্গে পড়ার সময় না। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে তাই বলে নিজেকে এভাবে ভেঙ্গে মুচড়ে দিলে হবে বল?নিজের ধৈর্য বাড়া। আল্লাহকে ডাক। অবশ্যই আমরা সঠিক পথ পাব যেটা আমাদের জীবনের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর।”

তুরার কথা শুনে নিজের মধ্যে একটু শক্তি সঞ্চয় হলো।সত্যিই তো নিজেকে শক্ত করতে হবে। তা না হলে তুর্জ আর তুর্জের মা বারবার বিভিন্ন মেয়েকে ঠকাবে। অসহায়ত্বটাকে দুর্বলতা ভেবে ঘায়েল করবে। নিজের জীবনের সবটা দিয়ে হলেও এর শেষটা দেখে ছাড়ব। নিজেকে শক্ত করে তোরাকে বলিষ্ঠ গলায় জাবাব দিলাম-

” তুই যা বলবি তাই হবে।আমাকে কি করতে হবে বলিস।”
“শুন তোকে কবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলত?”
“বলেছিল দেড় মাস পর যেন যাই। মানে আর পনেরদিন পর ডাক্তার দেখানোর তারিখ।”
“তাহলে তোর শ্বাশুড়ি নিশ্চিত প্রতিবারের মতো এবারও নিজে গিয়ে সিরিয়াল দিয়ে আসবে।”
” হ্যাঁ তাই করবে মনে হয়।”
“তাহলে একটা কাজ করবি যখন বাসা পুরো খালি থাকে।ঐ যে চাবি বানিয়ে দিয়েছিলাম ঐটা কি তোর সাথে আছে?”
“হ্যাঁ আমি যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছিলাম।”
“ঐ চাবিটা দিয়ে তোর শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে লকার খুলে দেখবি কোন কাগজ পত্র আছে কি না। ঠিক আছে?”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তুরার সাথে কথা শেষ করার পর একবার এসব ভেবে হতাশ হচ্ছিলাম আবার নিজেকে শক্ত করছিলাম । সত্যি বলতে কী…

“মানুষ আর অমানুষ গুলারে চেনা যায় না। কারণ তাদের দেখতে একই রকম লাগে”

এত সুন্দর সম্পর্কের ও যে একটা ঘৃনিত অংশ আছে সেটা তুর্জ আর তুর্জের মাকে না দেখলে জানতাম না। ঠিক এ মুহুর্তে কেউ একজন মনে হয় ঐ পুতুলটা আমার উপর আবার ছুরে মারল। আমি ভয় পেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে পুতুলটাকে ধরে ফেললাম। খেয়াল করলাম পলিথিনের মধ্যে লাল রঙ কেউ গুলিয়ে পুতুলের পেটে বেঁধে রেখেছে। তার মানে ঐদিনেও এরকম রঙ বাঁধা ছিল আর আমি পুতুলটাকে নীচে ঢিল মারতেই ঐ রঙ এর পলিথিনটা ফেটে রঙ বের হচ্ছিল আর আমি রক্ত ভেবে চিল্লানি দিয়েছিলাম। কতটা হিংস্রভাবে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে ভাবতেও ঘৃনা লাগছে। আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু এসে বলল

“কী হয়েছে বউমা।”

আম্মু আমার হাতে পুতুলটা দেখে অবাক হয়েও নিজেকে সামলে নিল। সামলে নিয়ে পুনরায় বলল-

“কী হয়েছে বউ মা। এমন করছো কেন??”

“দেখুন আম্মু কে জানি আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এমন পুতুল ছুরে মেরেছে। পেটে আবার রঙও বেঁধে দিয়েছে।”

তবে বুঝতে পারলাম ঐ মহিলা অনেক বড় অভিনেত্রী । ঐ মহিলা জাবাবে বলল-

“আমি তো তোমার হাতে কিছুই দেখিছি না। কী বলছো এগুলা?”

বুঝতে পারলাম উনি এ নাটকেই বহাল রাখবে নিজেকে।আমি পুতুলটা হাত থেকে ফেলে নানীমার রুমে চলে গেলাম।একটু নজর আম্মুর দিকে রাখলাম।খেয়াল করলাম খানিকক্ষণ পর আম্মু পুতুলটা নিয়ে চলে গেল। বুঝতে আর বাকি রইল না কত বড়ো নাটক উনি করতে পারে। তুরা না থাকলে আমি এগুলো বের করতে পারতাম না।তুরার কথা মনে হতেই চাবির কথা মনে হল। দৌড়ে আমার রুমে গেলাম।যে জায়গায় চাবি রেখেছিলাম খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু চাবিটা ঐখানে পেলাম না। বেশ চিন্তা হলো এটা ভেবে চাবিগুলো গেল কোথায়? কিন্তু আমি আমার ব্যাগেই চাবিগুলো রেখেছিলাম। সাথে সাথে তুরাকে কল সবটা বললাম। তুরা আমার কথা শুনে চমকে গিয়ে বলল-

“অন্য কোথাও রেখেছিস কি না দেখ। মনে হয় অন্য কোথাও রেখেছিস।”
“নাহ তোরা আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঐখানেই রেখেছিলাম। কিন্তু পাচ্ছি না কেন?কে নিল চাবি?”
” শুন নিরা আমার মনে হয় ওরা হয়তো জানতে পেরে গিয়েছে তুই সবটা জেনে গিয়েছিস। চাবিটা ওরাই সরিয়েছে আর তোকে বুঝতে দেয় নি। তুই ও একদম স্বাভাবিক ভাবে থাক। যাতে ওরা এটা ভাবতে না পারে যে চাবিটা তুই বানিয়েছিস।ওরা আরও শক্তিশালী পরিকল্পনা করবে। তোকে আরও সাবধান থাকতে হবে। নিজের সবটা দিয়ে লড়াই করতে হবে।মপনের দিন পর ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার কী বলে আমাকে সবটা বলিস। ঠিক আছে।”
আমি অসহায় গলায় তোরাকে জাবাব দিলাম-
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

কলটা কেটে দিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রনার মধ্যে পনেরদিন পার করলাম। পনের দিন পর তুর্জ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার আমাকে দেখে বলল
“রোগীর একটু সমস্যা আছে একটা টেস্ট করাতে হবে।”

তুর্জ জাবাব দিল-

“যা টেস্ট করানোর দরকার করুন আপনি। টাকা যা লাগে আমি দিব।”

এটা বলার পর ডাক্তার মহিলাটা আমাকে টেস্ট করাতে নিয়ে গেল। আমার বেশ ভয় লাগছিল টেস্ট করতে। কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না। তাই অনেক সাহস করেই টেস্ট টা করলাম। কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট দিল। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমাকে চেম্বার থেকে বের করে বাইরে বসিয়ে তুর্জ একা ডাক্তারের সাথে কথা বলল। কথা শেষে আমাকে আবার নিয়ে গেল চেম্বারে। তারপর ডাক্তার মহিলাটা আমাকে বলল

“আপনার একটু সমস্যা আছে পনের দিন পর আসবেন আবার।”

আমি আর তুর্জ ডাক্তারকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরলাম।এক ফাঁকে আমার রিপোর্টটা ছবি তুলে তুরাকে পাঠালাম।তুরা আমার রিপোর্ট দেখে বলল

“তোর মেয়ে বাচ্চা হবে। দেখ নাইন লিখা।আমার যতদূর মনে হয় পনেরদিন পর তোকে গর্ভপাত করাতে নিয়ে যাবে। এর মধ্যে তুই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করবি না। ওদেরকে হাতে নাতে হাসপাতালে ধরতে হবে।আমি আমার আগের অফিসের সাথে কথা বলে রেখেছি। তারা বাকি কাজ করবে। তোর একটা কাজেই আমার সাথে যোগাযোগ বহাল রাখা।

তুরার কথা শুনে মনে মনে বেশ ভয় পেলেও নিজেকে নিজে স্বাত্ত্বণা দিয়ে শক্ত করতে লাগলাম। সত্যিই তো এ লড়াইয়ে আমাকে জিততে হবে, না হয় অনেক মেয়ের প্রাণ যাবে। নিজেকে সামলে নিয়ে এক রক্তিম আলোর জন্য দিন গুণতে লাগলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here