মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২৬

0
239

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৬

ছায়ামূর্তিটি আর কারো না স্বয়ং সীমান্তর।
পাঁচদিন পর নেশায় বুদ হয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে সে।
মেঘলা আপাদস্তক এ সীমান্তকে দেখলো।ঘৃণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে কষে কয়েকটা চড় দিতে।
পাশে থাকা মেয়েটাকে খুব অশ্লিল্লভাবে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা জামা কাপড় যেনো না পারতে পরে আছে।বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা ভালো মেয়ে না।
মেঘলাকে ওরা দেখার আগেই ও সাবিবার ঘরে চলে গেল।আর কিছুক্ষণ ওইখানে দাড়িয়ে থাকলে হয়তো কিছু করে বসতো।
বেডরুমের দরজাটা সীমান্ত একটু জোরেই লাগিয়েছে।এই রুমে বসেও স্পষ্ট শুনতে পেলো মেঘলা।
বালিশে মাথা চাপা দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো?আর কি বা করবে?ওর জীবনটা পুরোপুরি শেষ।রুদ্রর কথা খুব মনে পড়ছে।ওর কথা শুনলে আজ এইদিন আসত না আমার জীবনে।কোনোভাবে যদি একবার ওর সাথে কথা বলতে পারতাম!!সব মিটিয়ে নিতে পারতাম।আমাকে ঠিক এইখান থেকে নিয়ে যেতে পারতো।রুদ্রর নামটা নিলেও যেনো একটা আশার আলো দেখতে পায়।কিন্তু সেটা সাময়িক।কারণ মেঘলা এখন ভালো করেই জানে ওর জীবন থেকে সব হারিয়ে গেছে সব…..রুদ্রও……

সাবিবার আজ সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো।পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘলা এখনো ঘুমাচ্ছে।মেঘলার মুখ পানে তাকিয়ে ওর খুব মায়া হচ্ছে।নিষ্পাপ বাচ্চা একটা মেয়ে কত কি সহ্য করছে।এরমধ্যেও আমার দিকে কত খেয়াল রেখেছে।মেয়েটা হটাৎ করেই বড় হয়ে গেল।
সাবিবার শরীরটা আজ অনেক ভালো লাগছে।তাই আজ আর মেঘলাকে কিছু করতে দিবে না।মেঘলার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে পড়লো।যাতে মেঘলা টের না পায়।ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের কাজ করবে।

রুম থেকে বের হতেই প্রচন্ড এক ধাক্কা খেল।সীমান্তর ঘরটা ভিতর থেকে লক করা।তবে কি কালরাতে অমানুষটা ফিরেছে??কখন ফিরলো??মেঘলা কি জানে??আমাকে ডাকেনি কেনো??রাতে ফিরে মেঘলার উপর অত্যাচার করেনি তো??একগাদা প্রশ্ন মনের মধ্যে নিয়ে রান্নাঘরে ডুকলো সাবিবা।যা আছে তাই দিয়েই নাস্তা তৈরি করতে লাগলো।

মেঘলার ঘুম যখন ভেঙেছে তখন বাইরে পরিষ্কার আলো ফুটে উঠেছে।আড়মোড়া ভেঙ্গে দেখে আপু নেই।বোধ হয় আজ আগেই উঠেছে,ওয়াশরুমে হবে হয়তো।আপু বের হলে আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তাটা বানাবো।মেঘলা কাল রাতের কথা ভুলেই গেছে।তাই আপনমনেই আজ কি কি করবে ভাবছে।অনেকক্ষণ বসে থেকেও যখন সাবিবার বের হওয়ার নাম নেই তখন ও উঠে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিতেই বুঝলো ভিতরে কেউ নেই।হয়তো ড্রয়িং রুমে আছে।তাই ও দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।

ড্রয়িং রুমে সাবিবাকে না পেয়ে রান্না গেলো।সাবিনা কাজ করছে।তাই দেখে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
আপু তুমি রান্নাঘরে কি করো??তোমার শরীর ভালো না….
রাখ তো তুই আমার শরীর…আমি একদম ঠিক আছি।
কিন্তু আপু….
ছাড় আমার কথা..অমানুষটা কাল রাতে ফিরেছে দেখেছিস??
দেখেছি।
তাহলে ডাকিসনি কেনো??
ডেকে কি হবে বল??অমানুষ কি আর মানুষ হবে।ছাড়ও তো…..

মেঘলার কথা শেষ হবার আগেই সীমান্ত বেরিয়ে এলো।
সাবিবা সেদিকে একঝলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।তখনই মেইন গেট খুলার শব্দ পেলো।গেটের দিকে তাকিয়ে সাবিবা চমকে উঠলো।ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না ও শক নাকি স্বাভাবিক।
সীমান্ত কাউকে কিছু না বলে মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
সাবিবা থম মেরে দাড়িয়ে আছে।
কিন্তু মেঘলার কোনো ভাবান্তর হলো না।স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সীমান্ত ফিরে এলো।
এইবার সাবিবা নড়ে চড়ে দাড়ালো।মেঘলার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,
মেঘলা তুই এইসব দেখেও চুপ করেছিলি সারারাত??কি করে??বাইরের একটা খারাপ মেয়ে নিয়ে সারারাত রাত কাটালো আর তুই…..
আপু প্লিজ চুপ থাকো।
না আমি চুপ থাকবো না।জানোয়ারটাকে আজ জবাব দিতেই হবে।
সাবিবা ছুটে গিয়ে পিছন থেকে সীমান্তর হাত টেনে ধরে থামিয়ে দিয়ে ধার করিয়ে দিল।
সীমান্তর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
সাবিবা হুংকার দিয়ে বলল,মেয়েটা কে??বাড়ির ভিতর আটকে রেখে চলে গেলি আর আজকে মেয়ে নিয়ে ফিরে..ছি:
………..
এতদিন ফুর্তি করে মন ভরলো না??একদম বাড়িতে নিয়ে চলে এলি?
…….
জবাব দে…
…..

আপু ছাড়ো তো।
কেনো ছাড়বো??একে জবাব দিতে হবে।
তোমার কথা সে শুনছে না।বলেই মেঘলা হাতে থাকা লেবু পানিটা সীমান্তর দিকে এগিয়ে দিল।
সীমান্তও বিনা বাক্য ব্যয়ে খেয়ে নিল।
সাবিবা আবার যখনই কিছু বলতে নিল মেঘলা থামিয়ে বললো,
আপু ছেড়ে দেও।এইটা আমাদের নিয়তি।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু না আপু।আর কিছু বলতে হবে না।চলতো অনেক কাজ আছে।
সীমান্ত পিটপিট করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাবিবা তাজ্জব বনে গেলো।এইভাবে ছেড়ে দিলে তো রোজই এমন করবে।এইসব কি সহ্য করা যায় নাকি??
মেঘলা তুই ঠিক আছিস??
আপু আমি ঠিক আছি।উনার যা ইচ্ছে হয় উনি করুক।আমি বা তুমি বাঁধা দিবো না এমনকি কিছু বলবোও না।বলেই সীমান্তর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো।
সাবিবা এখনো একইভাবে দাড়িয়ে আছে।
আর সীমান্ত!!মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে নিজের রুমের দিকে যেতে নিয়েও আবার পিছন ফিরলো।একটু এগিয়ে সাবিবার একদম কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
কি যেনো বলতে সুইটহার্ট!
হটাৎ গলার আওয়াজ পেয়ে সাবিবা কিছুটা চমকে গিয়ে সরে দাঁড়ালো।
হুমম মনে পড়েছে,বাচ্চা মেয়ে বলতে।দেখো এই বাচ্চা মেয়েও নিজের ভালো বুঝে।কি সুন্দর আমার রাস্তায় বাঁধা না দিয়ে সরে গেলো।শেখো কিছু এই বাচ্চা মেয়েটার থেকে।
সাবিবার চোখ মুখ কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে প্রচন্ড রাগে।
নিজের ভালোটা একটু তো বুঝো জামেমানে।বলেই বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসতে হাসতে চলে গেল।

এ যেনো আরেক নতুন জীবনের শুরু হলো।গত কয়েক মাসে কত রকম নতুন নতুন জীবনের সূচনা হলো মেঘলার জীবনে।কি অদ্ভুদ সব ঘটছে ওর সাথে।যাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করে ঘর ছাড়লো সেই আজ তাকে চিনে না।ওর জায়গা ওর স্বামীর সাথে না হয়ে হয়েছে সতীনের সাথে।তবে সম্পর্ক সূত্রে সতীন হলেও সে এখন মেঘলার পৃথিবী।মা,বাবা,বোন,বন্ধু সবকিছু এই একটা মানুষ,সাবিবা আপু।
আর স্বামী??সে তো পরনারীতে আসক্ত।ড্রিংকস করে নেশায় বুদ হয়ে প্রায় রাতেই নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে ডুকে বাসায়।আবার সকাল হলেই মেয়েরা চলে যায়।তারপর সীমান্তও বাইরে থেকে দরজা আটকে ওদের দুইজনকে বন্দী করে চলে যায়।
ওরা দুবোন সবই দেখে কিন্তু কিছু বলে না।
এইভাবেই যতদিন থাকা যায়।হয়তো ভালো দিন কখনো আসবে।এইটুকু আশা বুকে নিয়েই বেচেঁ আছে সাবিবা আর মেঘলা।

চলবে……………..

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here