মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৮
দরফড়িয়ে খাটে বসলো রুদ্র।প্রচন্ড পিপাসা পাচ্ছে।এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্নও হয়!!এখনো ওর সমস্ত শরীর কাপছে।সারা গা ঘামে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা।নিশ্বাস নিতে পারছে না ঠিক মত।এক গ্লাস পানি না খেলেই না।অন্ধকারে হাতড়ে খাটের পাশের টেবিল থেকে গ্লাস নিতে চাইলো।কিন্তু তখনই টেবিল থেকে কিছু একটা মাটিতে পড়ে গেল।এবার রুদ্র সোজা হয়ে বসে আগে বার কয়েক নিশ্বাস নিল আবার ফোঁস করে ছেড়ে দিল।তারপর উঠে দাড়িয়ে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট অন করে খাটে বসতেই তার গায়ের কাপন আবার বেড়ে গেল।মেঘলার দেওয়া ঘড়িটা মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে একদম ঘুরিয়ে গেছে।দ্রুত সে কাচের টুকরো গুলো তুলতে লাগলো।মেঘলাকে নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলো এক্ষুনি আর এখনই ঘড়িটা ভেঙে গেলো?হঠাৎই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো রুদ্রর।মেঘলা ঠিক আছে তো??আমি রাগ করে ওর খোঁজ নিচ্ছি না।ঐদিকে একা একা কি করছে কে। জানে।না কালই কথা বলতে হবে ওর সাথে।খুব আনচান লাগছে।এইরকম স্বপ্নের কি মানে??স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় বলে নিজেকে বুঝাতে লাগলো।এরই মাঝে ফজরের আযান শুনে আরও চমকে উঠলো।মেঘলা ঠিক আছে তো???না না বসে না থেকে নামাজটা পড়ে নেই।যা হবে আল্লাহ ভরসা।
মেঘলা…..মেঘলা…….
উফফ সারাদিন এত ডাকো কেনো আম্মু??
রুদ্র ফোন করছে।কথা বল।
মেঘলা গদগদ হয়ে ফোনের ধরতে যাবে তখনই সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল।না ঐদিনের ঘটনার পর ওর সাথে কথা বলা যায় না।ঐরকম ব্যবহার এর পর ওর সাথে কথা..না তা হয় না।
কিরে ফোন নে..
না আম্মু ওর সাথে আমি কথা বলবো না বলে দেও।বলেই মেঘলা নিজের রুমে গিয়ে গেট লক করে বসে রইল।
পিছন থেকে মমতা হাসান মেঘলাকে হতাশ হয়ে আবার ফোনটা কানে নিলেন।
ওপাশ থেকে রুদ্র সবই শুনলো।খুব রাগ করেছে।ফিরে এসে বুঝিয়ে বলতে হবে।
রুদ্র বাবা শুনছো!
জি আণ্টি।
মেঘলা তো কথা না বলে চলে গেল।
জি আণ্টি সবই শুনলাম।
তোমার উপর ক্ষেপেছে কেনো?বেশি বকাঝকা করছো নাকি??
ওই আরকি আণ্টি।
ঠিক হয়ে যাবে এমনি এমনি।
জি আণ্টি।
তোমার আম্মু কেমন আছে??
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে আণ্টি।
কবে ফিরছ?
এইদিকে কিছু কাজ আছে ঐগুলো মিটে গেলেই চলে আসবো।
আচ্ছা সাবধানে থাইকো।
জি আণ্টি।এখন রাখছি!
ঠিক আছে।
আস্সালামুআলাইকুম।
ওয়ালাইকুমসসালাম।
আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করেছে আবার এতদিন পর আমার খোঁজ নিচ্ছে।ও আমার কেমন বেস্টফ্রেন্ড!সীমান্ত ঠিকই বলে ও যদি আমার বেস্টফ্রেন্ডই হবে তবে কেনো সবসময় আমার সাথে ওমন করে??সবসময় সবকিছুতেই আমাকে শাসন করে,রাগ দেখায়,কারো মিশতে দেয় না।সত্যিই যদি বেস্টফ্রেন্ড হতো তাহলে কখনোই এমন করতো না।আমিই ওকে আমার বেস্টফ্রেন্ড ভাবি কিন্তু ও আমাকে ভাবে না।আমি আর কখনোই ওকে আমার কোনো কথাই ওকে বলবো না।আর সীমান্তও বারণ করেছে রুদ্রকে কিছু বলতে।রুদ্র আমার ভালো চায় না।তাই ওমন ব্যবহার করে।সীমান্ত না থাকলে তো আমি বুঝতেই পারতাম না।সারাজীবন ওকে বিশ্বাস করে ঠকতাম।এই জন্যই আমি কারো সাথে মিশলে রুদ্র ওভাররিয়াক্ট করে,কারণ কেউ যদি আমাকে ওর আসল রূপ বুঝিয়ে দেয়।মানুষ এমন করে কি করে।আমিতো ওকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম আর ও আমার সাথে এমনটা করতো!!ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে মেঘলার আর রুদ্র কি করে পারে??না ওকে আর কোনো সুযোগই দিবো না।মেঘলা আর রুদ্র নামের দিক থেকে যেমনি বিপরীতমুখী তেমনি মানুষ হিসেবেও।ওরা কেউ কারো ভরসার জায়গা নিতেই পারে না।
আজ রবিবার।টানা দুইদিন পর সীমান্তর সাথে মেঘলার দেখা হলো।আজও সেই পুকুর পাড়ে বসলো।মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে।কারণ সেদিন বিকেলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার তাই মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।সীমান্ত ও পাশে বসে আছে এইটা ভাবতেও লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে।সীমান্ত আচমকাই মেঘলার একটা হাত চেপে ধরলো।সীমান্তর ছোঁয়া পেতেই কেপে উঠলো মেঘলা।মাথাটা আরও একটু নিচু করে নিল।
জানো মেঘলা আমার খুব ইচ্ছে হয় সারাক্ষণ তোমার সাথেই কথা বলি।
আমাদের তো কথা হচ্ছেই।(মাথা না তুলেই নিচু গলায় বললো)
হয়তো কিন্তু প্রতিদিন হয় না।এই দেখো আজ দুইদিন পর দেখা হল।তুমি জানো আমার কি কষ্ট হয়!তোমার কোনো ধারণা আছে?তোমার সাথে এই দুই দিন কথা পর্যন্ত বলতে পারি নি।সারাক্ষণ ছটফট করতাম কখন তোমার সাথে দেখা হবে কথা হবে।
মেঘলা এইবার মাথা তুলে সীমান্তর দিকে তাকালো।কিছু বলল না।ওর শুনতেই ভালো লাগছে।
ঐভাবে তাকিয়ে আছ কেনো?আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না??হবে কিভাবে তুমিতো একটুও বুঝো না আমাকে।
এত ভালোবাসো আমাকে!!
অনেক ভালোবাসি।তোমার ভাবনার বাইরে।
মেঘলা স্মিত হেসে মাথা নিচু করে নিল।
তোমার ইচ্ছে হয় না আমার সাথে কথা বলতে??
হয় তো!খুব ইচ্ছে হয়।
তাহলে তুমি কেনো এখনো একটা ফোন নিচ্ছো না??
আব্বু তো বলছে কলেজে ভর্তির পর কিনে দিবে।
সেতো অনেক দেরি।এখনো তোমার রেজাল্টই বের হল না।আর ভর্তিতো আরও পরে।
কিন্তু…
কি কিন্তু?
আব্বুকে বললে তো দিবে না।আর রুদ্রটাও নেই।ওকে বলে কিছু একটা ম্যানেজ করা যেত।
এই রুদ্র করা বন্ধ হবে কবে তোমার?ছেলেটা তোমার ভালো চায় না,তুমি কেনো বুঝ না?
ও তো আমার বেস্টফ্রেন্ড।
তুমি এত অবুঝ কেনো?তুমি ভাবলেই হবে?ওর ও তো ভাবতে হবে।
রুদ্রও ভাবে….
আমি না বুঝে বলি না কিছু।
ওকে আর বলবো ভাবলাম।রাগ করো না।
রাগ করবো না,তবে এক শর্তে…
শর্ত!
হুম।
কি শর্ত?
তুমি আজকেই তোমার আব্বুকে বলবে তোমার ফোন লাগবে।এসএসসি দিয়েছো,কয়দিন পর কলেজে ভর্তি হবে যথেষ্ট বড় হয়েছো।
আব্বু যদি রাজি না হয়?
তাহলে রাগ করে থাকবে।কারো সাথে কথা বলবে না।দরকার পড়লে ভাংচুর করবে ঘরের জিনিসপত্র।কিন্তু না খেয়ে থাকবে না বা নিজের কোনো ক্ষতি করবে না।তোমার কষ্ট আমার সহ্য হবে না।বুঝছো?
আমি পারবো না এইসব করতে।
কেনো?
আব্বু আম্মু অনেক কষ্ট পাবে?
সব ঠিক হয়ে যাবে কষ্ট পাওয়ার তো কিছু নেই।
তবুও…
আমার জন্য এইটুকু পারবে না!
হুম!(উদাস গলায় বললো)
বুঝেছি তুমি চাচ্ছো না।থাক তোমাকে বলতে হবে না।
আরে না না আমি পারবো।
সত্যি!
হুম,তিন সত্যি।
তাহলে হাসো।
মেঘলা হাসলো।সে হাসিতে জোর ছিল না।থাকবে কি করে সে তো কখনো মা বাবার সাথে এমন করার কথা ভাবতেও পারে না।
মেয়েটার কি কিছু হয়েছে মমতা?
কি হবে?
না কিছু দিন ধরে দেখছি কেমন যেন অন্যমনস্ক থাকে।খাওয়া পড়ারও ঠিক নেই।
হ্যা,ঠিক বলেছো।এইটা আমিও খেয়াল করেছি।কিছুক্ষণ আগে দেখলাম সারা ঘরময় পায়চারি করছে।মনে হয় কিছু ভাবছে।
আমি বলার পর তোমার খেয়াল হলো?তুমি না মেয়ের মা।আমি সারাদিন বাসায় থাকি না তাও আমার চোখে পড়লো আর তুমি সারাদিন বাসায় থেকেও খেয়াল রাখতে পারো না?সারাদিন কি করো বাসায়?
এই আমার কি কম কাজ থাকে সংসারে!তোমার সংসারে কাজ করবো নাকি তোমার মেয়েকে সামলাবে আমি?
তোমার সাথে চিৎকার চেচামেচি কারার সময় এখন না।
তাহলে তুমি কেনো বলছো?
আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।কিন্তু মেয়েটার কি হয়েছে জানতে তো হবে?
তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ কেন??এই বয়সে এমন হয়ই।তাছাড়া পরীক্ষা শেষ সব বন্ধুবান্ধব এদিক সেদিক বেড়াতে যাচ্ছে,রুদ্রটাও নেই একলা পরে গেছে মেয়েটা।
স্ত্রীর যুক্তি মনে ধরলো মুবিন হাসানের।তাই আর সে বিষয়ে তর্ক করলেন না।
ঠিক বলেছো মমতা।মেয়েটা একলা পড়ে গেছে।
একটা কাজ করলে কেমন হয়…
কি কাজ?
মেঘলাকে আমরা কোথাও একটা ঘুরে আসি!
কথাটা বলনি।কিন্তু আমার এখন যা অবস্থা চলতেছে সবাই তো জানো।এই অবস্থায় দূরে কোথাও নিয়েও যেতে পারবো না।
কলেজের স্যালারি মাস দুয়েক পরতো পাবেই সেটা নিয়ে ভেবো না।আমার কিছু টাকা আছে ঐদিয়ে কাছে কোথাও থেকে ঘুরে আসলে মেয়েটার ভালো লাগবে আবার তোমারও একটু ক্লান্তি কমবে।
তোমার কয়টা জমানো টাকা আর একটা টিউশন ওই এখন ভরসা।ঘুরাঘুরি করে টাকা নষ্ট করা যাবে না।
আহা এত ভেবো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাই যেনো হয়।
তাই হবে।এই শুক্রবারই চলো ঘুরে আসি ভালো লাগবে।
ঠিক আছে।কিন্তু যাবেটা কোথায়?
ওইটা মেঘলাকে জিজ্ঞেস করে ঠিক করবে।মেয়েটা জানেও না তার বাবার এখন কি অবস্থা যাচ্ছে।
থাক না মমতা।মেয়েটা ছোট ওর এইসব জানা লাগবে না।কয়েকমাসেরই তো ব্যাপার।
আচ্ছা বললাম না।এখন টেবিলে যাও খাবার বাড়ছি।
তুমি যাও আমি আসছি।
চলবে……….
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)