আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- এক্সট্রা পার্ট (২৮)

0
944

# আরশিযুগল প্রেম❤
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤
# পর্ব- এক্সট্রা পার্ট (২৮)

________________

বসার ঘরে বসে আছেন রাদিবা আহমেদ। তারপাশেই বসে আছেন শাহিনুজ্জামান সাহেব ও হাজী আনিমুল হক। দরজার পাশে হাত মুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শফিক আর শুভ্রব। সামনের সোফায় বসে আছেন দু’জন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। বসার ঘরের পরিবেশটা বেশ থমথমে। গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছে। আর সেই গুরুগম্ভীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো এ বাড়িরই মেয়ে, শুভ্রতা।

—-” আপনি আমার নিমন্ত্রণ রক্ষা করে এ পর্যন্ত এসেছেন বলে ধন্যবাদ, ওবায়দুল্লাহ সাহেব।”

ওবায়দুল্লাহ সাহেব মৃদু হেসে বললেন,

—-” এভাবে বলবেন না। আপনি আমার বাবার মতো। আপনার পরিবারের মেয়েকে পুত্রবধূ করে পাওয়াটা আমি সৌভাগ্য বলেই মনে করি। তাছাড়া, শুভ্রতাকে আমি দেখেছি। ভীষণ লক্ষ্মী মেয়ে সে। আপনি একদম চিন্তা করবেন না চাচা। আপনি হজ্জ থেকে ফিরে আসুন। তারপর দিনক্ষণ দেখে না’হয় চারহাত এক করা যাবে। মাত্র তো চারটা মাস। শুভ্রতাও যখন চারমাস পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাইছে তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। চারমাস অপেক্ষা করলে আমার ছেলের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে না।”

আনিমুল হক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। হাসিমুখে বললেন,

—-” নাতনীটা আমার খুব আদরের ওবায়দুল্লাহ সাহেব। আমার বংশে একটা মাত্র জান্নাত সে। সেই জান্নাতের চোখের পানিটা সহ্য হয় না। মেয়েটা যখন কেঁদেকেটে কিছুদিন সময় চাইলো তখন আর মানা করতে পারি নি। আদরের মেয়ে তো…আমাদের সংস্পর্শহারা হওয়ার কথা চিন্তা করতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনারা যে আমাদের সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ।”

ওবায়দুল্লাহ সাহেব অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলেন। বিনীত গলায় বললেন,

—-” বারবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমাদের লজ্জায় ফেলবেন না চাচা। হজ্জের মতো একটা পবিত্র কাজের পর বিয়ে হওয়াটাই মঙ্গলময়। আপনি যেহেতু কথা দিয়েছেন বিয়েটা হবে, সেখানে আর কি-ই বা বলার আছে? তাছাড়া, বিয়ের আয়োজন করার জন্য আমাদের দু’পক্ষেরই কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। ফারদিনের কলেজেও নাকি একটু ঝামেলা চলছে। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে বিয়ের জন্য ওটাই হবে পার্ফেক্ট সময়।”

রাদিবা আহমেদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। শশুড়ের প্রতি শ্রদ্ধাহীন মনোভাবের জন্য খানিকটা গুটিয়ে গেলেন। অপরাধী দৃষ্টিতে শশুড়ের দিকে একপলক তাকিয়েই মাথা নিচু করে বসে রইলেন।

শুভ্রতা বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যায়। ততক্ষণে মাগরিবের আযান পড়ে গিয়েছে। চারপাশে ঝাপসা অন্ধকার আর আমের মুকুলের তীব্র গন্ধ। শুভ্রতা বাসায় পৌঁছোতেই বাঁকা চোখ তাকালো শুভ্রব। কান থেকে ফোন নামিয়ে বললো,

—-” কই ছিলি সারাদিন? ফ্রেন্ডদের সাথে তো ছিলি না।”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। হঠাৎ করে কোনো কথা খুঁজে পেলো না সে। ভাইয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে খানিকটা মিঁইয়ে গেলো সে। তারপর হঠাৎই রাগী সিংহীর মতো বলে উঠলো,

—-” আমি যে বান্ধবীদের সাথে ছিলাম না এটা তুই কিভাবে জানলি ভাইয়া? আমার বান্ধবীদের সাথে তোর কিসের যোগাযোগ? কাহিনি কি বল তো? ছোট বোনের বান্ধবীর সাথে প্রেম করিস আবার কথা?”

শুভ্রতার এমন কথায় বোকা বনে গেলো শুভ্রব। ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা বলবে তার আগেই দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে দরজা দিলো শুভ্রতা। শুভ্রব কিছুক্ষণ বোনের দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। শুভ্রতার চাল-চলন খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না তার। শুভ্রতা কি প্রেম করছে? কোনো বাজে ছেলের সাথে জড়িয়ে পড়ছে না তো মেয়েটা? শুভ্রব নিজে ছেলে। ছেলেরা কতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে, সে সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে তার। তাছাড়া, শুভ্রতার যে বিয়ে ঠিক। শুভ্রব দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ছাঁদের ফ্লোরে পা রাখলো। ছাঁদের পাশের আম গাছটায় ফুল মুড়িয়ে গুঁটি ধরেছে। চারপাশের বাতাসটা আমের নব গুটির গন্ধে মউ মউ করছে। কচি আমের মিষ্টি গন্ধটাও আজ সহ্য হচ্ছে না শুভ্রবের। মনের মধ্যে ভয়ানক কিছু চলছে। ভয়ানক কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছে সে। উলোটপালোট ভয়ানক এক ঝড়!

____________________

ফ্রেশ হয়ে, শাড়ি ছেঁড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে শুভ্রতা। নাকের ছোট্ট নাকফুলটা বাল্বের আলোয় ঝলঝল করছে। এই নাকফুলটা কখনো খুলবে না শুভ্রতা। কখনোই না। শুভ্রতা শহরের আধুনিক মেয়ে। গ্রামের নানি-চাচিদের ‘নাকফুল’ বিষয়ক কুসংস্কারগুলো মানার কথা নয় তার। তবুও কোনো জানি এই নাকফুলের প্রতিই তীব্র এক টান অনুভব করছে আজ। স্বামী সোহাগী মেয়েদের মতো নাকফুলটাকে আগলে রেখে লজ্জা লুকোতে ইচ্ছে করছে। শুভ্রতা আয়নার দিকে দু’চোখ মেলে তাকালো। নিজের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নিচু করলো। মনে পড়ে গেলো সাদাফের বলা কথা…..

বাসায় ফেরার আগমুহূর্তে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলো শুভ্রতা। ঠিক তখনই তার পেছনে এসে দাঁড়ালো সাদাফ। আয়নার ভেতর দিয়ে শুভ্রতার চোখের দিকে দৃষ্টি রাখলো সে। চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো,

—-” সেদিন তোমার বলা ‘আরশিযুগল প্রেম’ টা ভুল ছিলো শুভ্রতা। এই কাঁচের আরশিতে নয় দুটো মানুষের মনের আরশিতে যখন প্রেম হয় সেটাই আরশিযুগল প্রেম। তোমার মনের আরশিটা শুধুই আমিময় শুভ্রা। সেই আরশি থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তোমার নেই। সেই আরশি সময়ে অসময়ে তোমায় জ্বালাতন করবে। চোখদুটো বোজার সাথে সাথে আস্ত এই আমিকে তোমার সামনে নিয়ে দাঁড় করাবে। এটাই প্রেম শুভ্রা….এটাই আরশিযুগল প্রেম! তোমার মনের আরশিটা আমার আরশিতে বাঁধা পড়েছে শুভ্রা। ভয়ানক প্রেমে মত্ত হয়েছে দু’জন…. ভয়ানক!!!”

শুভ্রতার ভাবনার মাঝেই টোকা পড়লো দরজায়। শুভ্রতা তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলে দিতেই গম্ভীর চোখে তাকালেন রাদিবা আহমেদ। মেয়েটাকে আজ বাড়াবাড়ি রকম সুন্দর লাগছে। হঠাৎ করেই মেয়ের এমন বাড়াবাড়ি সৌন্দর্যটা রাদিবা আহমেদের খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না। জীবনের দুটো পর্যায়ে মেয়েদের বাড়াবাড়ি রকম সুন্দর লাগে। প্রথমত, কিশোরী থেকে যৌবনে পদার্পনের সময়। দ্বিতীয়ত, বিয়ের পর। শুভ্রতার বর্তমান অবস্থা এই দুটোর একটির পর্যায়েও পড়ছে না। তাহলে হুট করে তার এই সৌন্দর্যের কারণ কি? রাদিবা আহমেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরই আবিষ্কার করলেন মেয়েটা আজ নাকফুল পড়েছে। শুধু নাকফুল নয় হাতে মোটা দুটো বালাও পড়েছে। বালা দুটো রাদিবার শাশুড়ির। রাদিবা আহমেদ বিস্ময় নিয়ে বললেন,

—-” হঠাৎ নাকফুল পড়েছিস যে? এর আগে তো জোড় করেও পড়ানো যায় নি তোকে।”

শুভ্রতা মৃদু হাসলো। দরজা ছেড়ে দাঁড়িয়ে মাকে ভেতরে আসতে বললো। বিছানায় ছড়িয়ে রাখা শাড়িটা ভাঁজ করতে করতে বললো,

—-” আজ তো নববর্ষ মা। তাই একটু বাঙালি বধূ সাজার শখ হয়েছিলো। দেখো, হাতে মেহেদী আর পায়ে আলতাও পড়েছি। নাকফুলটায় আমায় সুন্দর লাগছে না মা? সেদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তিনশো টাকা দিয়ে কিনে এনেছি।”

রাদিবা জবাব দিলেন না। মেয়ের হাতের দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন,

—-” এতো মোটা বালা পড়েছিস অসুবিধা লাগছে না?”

শুভ্রতা হাসলো। মায়ের পাশে বসে বললো,

—-” লাগছে। ভীষণ অসুবিধা লাগছে।”

—-” তাহলে পড়ে আছিস কেন? খুলে রাখলেই পাড়িস।”

—-” অসুবিধা লাগার সাথে সাথে ভালোও লাগছে। তাই আর খুলতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া, এসব পড়ে পড়ে অভ্যাস করতে হবে না? তুমিই তো বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছো। আজ বাদে কাল বিয়ে হয়ে গেলে পড়তে হবে না? তাই আগে থেকেই অভ্যাস করছি।”

রাদিবা আহমেদ হঠাৎ করেই কোনো কথা বললেন না। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে মেয়েকে পর্যবক্ষণ করলেন উনি। বিয়ে নিয়ে শুভ্রতার হঠাৎ এমন পজিটিভ চিন্তাটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে রাদিবার। রাদিবা আহমেদ খানিক ভাবলেন। ফারদিনের সাথে তার বিয়ের ব্যাপারটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। আনিমুল সাহেব যেখানে নিজে থেকেই শুভ্রতাকে জানাতে বারণ করেছেন সেখানে কি দরকার কথা বাড়ানোর? রাদিবা হঠাৎ করেই গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

—-” সারাদিন কোথায় ছিলে?”

শুভ্রতা চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকাল। খানিক চুপ থেকে নিজের উত্তরটা গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিজ থেকেই কথা বললেন রাদিবা আহমেদ,

—-” তুমি এখন বাচ্চা নও। এতো বড় মেয়ে হয়ে সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানোর মানেটা কি? দাদু যে এসব পছন্দ করেন না, জানো না?”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে বসে রইলো। রাদিবা আহমেদ উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

—-” ফ্রেশ হয়ে দাদুর রুমে যাও। আর কখনো যেন এমন উড়নচণ্ডী স্বভাব না দেখি। এখন বিয়ের যোগ্য হয়েছো….কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের বাড়ির মেয়ে উশৃংখল।”

শুভ্রতা কোনো জবাব দিলো না। মা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে।

#চলবে,

[ অসম্ভব রকম কষ্টে দিন যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কিছুই লিখতে পারছি না। মাথাভর্তি বস্তাপচা আইডিয়া আর গল্প নিয়ে বসে আছি। কলম নিয়ে বসলে আর কিছু বের হয় না। কোনো অনুপ্রেরণা পাচ্ছি না। শুনেছিলাম বিখ্যাত লেখকদের ‘রাইটার্স ব্লক’ নামক সমস্যাটা হয়। তাহলে, আমার মতো ক্ষুদ্র বালিকার কাছে তার কি চায়? বিখ্যাত টিখ্যাত হয়ে যাচ্ছি নাকি আবার?🙄🙄

বিঃদ্রঃ রাইটার্স ব্লকটা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আমায়। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here