আরশিযুগল প্রেম # লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা #পর্ব – ৫৪

0
924

# আরশিযুগল প্রেম
# লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা
#পর্ব – ৫৪

পশ্চিম আকাশে লালাভ বর্ণের ছড়াছড়ি। দীর্ঘ প্রহর কাটিয়ে বিশ্রামের আয়োজন করছে উত্তপ্ত সূর্য। শুভ্রতা আধোমুখে বসে আছে সোফায়। সারাপথ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাড়ি দিলেও ক্লান্তিতে হাত-পা ঝিমঝিম করছে তার। এই দৌড় পাল্লার বাস জার্নিতে মাথার ভেতরটা কেমন হেলেদুলে উঠছে। মাঝেমাঝেই মনে হচ্ছে বাসের পাটাতনের মতো ঘরের মেঝেটাও বুঝি দুলছে। শুভ্রতার বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মাথার কাপড়টা আরেকটু টেনে নিয়ে ক্লান্ত চোখ তুলে তাকাল,

—-” তা তোমরা কয় ভাইবোন গো বউ?”

শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো। পাশে বসে থাকা মেজো ভাবির দাদীটাকে এই নিয়ে তিনবার নিজের ভাই-বোনের সংখ্যা জানিয়েছে শুভ্রতা। কিন্তু, কোনো এক অদ্ভুত কারণে বৃদ্ধা তা মনে রাখতে পারছেন না। হয়তো, মনে রাখার চেষ্টাই করছেন না। শুভ্রতা নম্র গলায় বলল,

—-” দুই ভাইবোন।”

বৃদ্ধা হতাশ গলায় বললেন,

—-” ওহ আইচ্ছা।”

বৃদ্ধার মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে শুভ্রতারা দুই ভাইবোন ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে গলার স্বর খানিকটা নিচে নামিয়ে বলে উঠলেন বৃদ্ধা,

—-” তুমি নাকি রিমুর দেবরের লাইগা মরতে গেছিলা? পোলা কি বিয়া করতে চায় নাই প্রথমে? পোয়াতি নাকি গো তুমি? পোয়াতি হইয়া থাকলে তো বিয়া না করতে চাওয়ারই কথা। শহরের মাইয়ারা তো এইরম বেলেহাজ কাজকামই করে। তোমাগো মধ্যেও এমন কিছু হইছে নাকি গো?”

বৃদ্ধার চকচকে চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়েই একরাশ বিতৃষ্ণা খেলে গেলো শুভ্রতার মনে। কেউ তার সম্পর্কে এতোটা নিচু ধারণা পোষণ করে ভাবতেই গা গুলিয়ে এলো। এই ‘মানুষ’ নামক প্রাণীগুলো সময়ের সিঁড়ি বেয়ে যতই সভ্য হয়ে যাক না কেন তাদের মনটা আগের মতোই জংলী আর বর্বর। শুভ্রতা ভেবে পায় না শুভ্রতার আত্মহননের প্রচেষ্টার কথাটা এই অপরিচিত বৃদ্ধার কান পর্যন্ত পৌঁছালো কিভাবে? আর মেজো ভাবিই বা জানলো কিভাবে? সাদাফ যেমন মানুষ সে কখনোই এমন একটা বিষয় পরিবারের সদস্যদের মাঝে বলে বেড়াবে না। তাছাড়া, সাদাফ বলার মতো কথায় যেখানে বলে না সেখানে এমন একটা অপ্রীতিকর কথা যে কাউকে বলবে না, তা শুভ্রতার জানা। শুভ্রতার ঝিম ধরা মাথাটা ধীরে ধীরে ভোঁতা ব্যাথায় ক্লান্ত হয়ে উঠলো। বৃদ্ধার প্রশ্নবাণে অসহায় চাতক পাখির মতো এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। সংসার, সমাজ নামক বিষয়গুলো অত্যন্ত তিক্ত আর মূল্যহীন বলে বোধ হতে লাগল। শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে শান্ত ভঙ্গিতে শ্বাস নেয়। সাথে সাথেই শুভ্রতার মনের আরশিতে সাদাফের স্নিগ্ধ চেহারা ভেসে উঠে। সেদিন রাতে সাদাফের বলা কথাগুলো হঠাৎই ভীষণ অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়। সত্যিই তো, মানুষকে বাকশক্তি দেওয়া হয়েছেই বলার জন্য। তারা বলবে এটাই স্বাভাবিক। শুভ্রতা এমন একটা ভুল করার পর তার দিকে আঙ্গুল তোলাটাই স্বাভাবিক বরং না তোলাটাই অস্বাভাবিক। শুভ্রতার উচিত স্বাভাবিক বিষয়কে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া। এসব নিয়ে অযথা উত্তেজিত হওয়াটাই বোকামো। শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে চোখ মেলে তাকালো। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে ছোট্ট করে উত্তর দিলো,

—-” জ্বি না। তেমন কোনো ব্যাপার না। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে তো তাই একটু বেশিই আহ্লাদী হয়েছি। মায়ের সাথে অভিমান করেই এমনটা করে ফেলেছিলাম।”

বৃদ্ধার কৌতূহলী দৃষ্টি আরো খানিকটা জ্বলে উঠলো। গদগদ গলায় আরো কিছু প্রশ্ন ছুঁড়বে তার আগেই কোথা থেকে বছর চারেকের বাচ্চা মেয়ে দোঁড়ে এসে দাঁড়াল শুভ্রতার পাশে। কিছুক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে শুভ্রতার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। শুভ্রতা কিছু বলছে না দেখে সাহস করে আরো একটু সরে দাঁড়ালো বাচ্চাটি। শুভ্রতার ডান গালে হাত বুলিয়ে বলল,

—-” তুমি বউ?”

শুভ্রতা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়লো। বাচ্চাটা এক পলক তাকিয়ে থেকে নিজেও হাসলো। শুভ্রতার হাসিটা তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বাচ্চাটি শুভ্রতার হাতের চুড়িগুলো নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে বলল,

—-” যে চাচ্চুটা ঢাকায় থাকে তুমি ওই চাচ্চুটার বউ?”

শুভ্রতা হেসে ফেলে বলল,

—-” হ্যাঁ। আমি ওই চাচ্চুটার বউ। তুমি কে?”

বাচ্চাটা চোখ পিটপিট করে তাকাল। খানিকক্ষণ কিছু একটা চিন্তা করে বলল,

—-” আমি মেঘ।”

কথাটি বলে বাইরের দিকে হাতের ইশারা করে বলল,

—-” ওইদিকে আমাদের বাসা। আমাদের বাসায়ও একটা বউ আছে। তুমি যাবে?”

—-” আচ্ছা, যাবো।”

মেঘ মিষ্টি হাসলো। শুভ্রতার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,

—-” তোমার গায়ে কি মিষ্টি গন্ধ! এটা কি বউ বউ গন্ধ? বউরা গায়ে কি মাখে? আমিও মাখবো।”

শুভ্রতা খিলখিল করে হেসে উঠলো। নববধূদের শব্দ করে হাসতে নেই বলে নিজেকে খুব দ্রুতই সামলে নিলো শুভ্রতা। আদুরে গলায় বলল,

—-” বউ বউ গন্ধ পেতে হলে তো মেঘমণিকে বউ হতে হবে। বউ না হলে বউ বউ গন্ধ পাওয়া যায় না। মেঘমণি কি বউ হবে?”

মেঘ কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ঠোঁট উল্টালো। বলল,

—-” কিন্তু আমার তো বরই নেই!”

শুভ্রতা হাসলো। হঠাৎ করেই খেয়াল করলো ঝিম ধরা ভোঁতা মাথা ব্যাথাটা তেমন একটা জ্বালাতন করছে না আর বরং বেশ হালকা লাগছে। নাহ্, যৌথ পরিবারটা খুব একটা মন্দ নয়।

ঘড়িতে দশটা বাজে। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সাদাফ। ঘুমু ঘুমু ঝাপসা চোখেই বিছানার বামপাশটাই হাতড়িয়ে কিছু একটা খুঁজছে সে। পাশে কেউ নেই বোধগম্য হতেই সচেতন চোখে তাকালো সাদাফ। কপাল কুঁচকে চারপাশটা দেখে নিয়ে উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে বিছানা ছেড়ে দরজার বাইরে উঁকি দিলো। বিকেলে বাড়ি ফিরে কোনোরকম শাওয়ার নিয়েই ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল সাদাফ। এতো লম্বা সময় ঘুমিয়েছে ভেবে নিজেই বেশ অবাক হলো সাদাফ। পৃথাকে হেলেদুলে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখেই ডেকে উঠলো সে। পৃথা অলস ভঙ্গিতে সাদাফের সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদাফ মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,

—-” তোর ছোট ভাবি কই রে? ঘরে তো নেই।”

পৃথা অদ্ভুত ভঙ্গিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থেকে আবারও রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিলো। পৃথার এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হলো সাদাফ। বিস্মিত গলায় বলল,

—-” আরে? তোকে কিছু জিগ্যেস করছি আমি। তোর ছোট ভাবি কই?”

পৃথা হাঁটতে হাঁটতেই নিরস গলায় উত্তর দিলো,

—-” আমার মন ভালো নেই। এখন উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না।”

সাদাফ বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকালো। এই মেয়েটাকে এই মুহুর্তে ধরে আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে তার। এতো লম্বা একটা লাইন বলে ফেলতে পারলো অথচ ‘শুভ্রতা কোথায়?’ এই ছোট্ট প্রশ্নের ছোট্ট উত্তরটা দিতে পারলো না? আর মন খারাপ? কিসের মন খারাপ? বাচ্চা একটা মেয়ের আবার মন খারাপ কিসের? ওর এইটুকুন একটা মন খারাপই বা হবে কেন? সাদাফ আবার নিজের ঘরে ফিরলো । ফ্রেশ হয়ে শুভ্রতাকে খুঁজতে যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বেশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগল। সাদাফের মেঝো ভাবিটা ভীষণ লাগাম ছাড়া মহিলা। সাদাফকে রান্না ঘরের দিকে যেতে দেখলেই অদ্ভুত কোনো কথা বলে ফেলতে পারেন এই মহিলা। এগুলোকে দেবর-ভাবির সাধারণ মজা বলা হলেও সাদাফের এসব মজা ফজা একদমই পছন্দ নয়। বড় ভাইয়ের বউ মানে শুধুই বড় ভাইয়ের বউ সেখানে আবার দেবর-ভাবি নামক সখ্যতা কিসের? সাদাফ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে উঠে দাঁড়ালো। সারাবাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজনের মাঝে শুভ্রতা একা একা কি করছে কে জানে? সাদাফ নিজেই আত্মীয় স্বজনের ভীড়-বাট্টা পছন্দ করে না সেখানে শুভ্রতার জন্য পুরো ব্যাপারটাই যে একটা আতঙ্ক তা সাদাফের জানা। আর জানা বলেই মনের মাঝে কেমন খচখচ ভাব । বাড়ি ভরা মানুষের মাঝে শুভ্রতাকে কে, কখন, কি বলে ফেলবে কে জানে? শুভ্রতা যেমন ধারার মেয়ে কিছু না বলতে পেরে নির্ঘাত কেঁদে কেটে চোখ ফুলাবে। সাদাফ দীর্ঘশ্বাস গোপন করে শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। খাবার ঘরের দিকে যেতেই থমকে দাঁড়ালো সে। শুভ্রতা হাসিমুখে খাবার পরিবেশন করছে। সাহেরা বেগমকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। সাহেরা বেগম সাদাফকে দেখতে পেয়েই খেতে ডাকলেন। সাদাফ চেয়ার টেনে বসে আড়চোখে শুভ্রতার দিকে তাকালো। সাহেরা বেগম তার প্লেটে খাবার তুলে দিতেই সাদাফের জানতে ইচ্ছে করলো, ‘শুভ্রতা খেয়েছে?’ কিন্তু জিগ্যেস করা হলো না। এতোগুলো মানুষের মাঝে বউকে খাবার কথা জিগ্যেস করা চলে না। সাদাফ চোখ তুলে একবার শুভ্রতাকে দেখে নিয়ে খাওয়ায় মন দিলো। অল্প একটু খেয়েই চেয়ার ছেড়ে ওঠে গেলো। ঘড়িতে এগারোটা বাজার পরও যখন শুভ্রতার দেখা মিলল না তখন বাধ্য হয়েই রান্না ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো সাদাফ। সাহেরা বেগম তখন টেবিল গুছাচ্ছিলেন। শুভ্রতাও শাশুড়ী মা কে টুকটাক সাহায্য করছিলো। সাদাফ টেবিলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে হালকা কাশলো। সাহেরা বেগম মুখ তুলে তাকালেন। কপাল কুঁচকে বললেন,

—-” কি রে? কিছু বলবি?”

মায়ের প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সাদাফ। স্থিরচিত্ত সাদাফের হঠাৎই নিজেকে ভীষণ বোকা বলে বোধ হতে লাগল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেও কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে কেশে গলা পরিষ্কার করলো সাদাফ। গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে বলল,

—-” পানি…. পানি খেতে এসেছিলাম।”

সাহেরা বেগম সন্দিহান চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সাদাফ এক ঢোক পানি খেয়েই জায়গা ত্যাগ করলো। মায়ের সামনে এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকারে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। উফ! কেমন বোকামোটাই না করে ফেলল সে। ঘরে বসে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে কি শুভ্রতা আসতো না? ঘড়ির কাটা যখন সাড়ে এগারোর ঘরে পৌঁছালো তখন শুভ্রতা ঘরে এলো। শুভ্রতা ঘরে এসেই মাথার কাপড় ফেলল। চুলগুলো খুলে দিয়ে ক্লান্ত হাসলো। সাদাফ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো। সেভাবে বসে থেকেই শুভ্রতার দিকে নির্ণিমেষ তাকিয়ে রইলো সে। সাদাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো শুভ্রতা,

—-” কি দেখছো তখন থেকে?”

সাদাফ জবাব দিলো না। আগের মতোই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” কি হলো? কথা বলছ না কেন? কি দেখছো এভাবে?”

সাদাফ উঠে দাঁড়াল। হঠাৎই শুভ্রতাকে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। সাদাফের আকস্মিক আক্রমনে হতভম্ব হয়ে গেল শুভ্রতা। অবাক চোখে সাদাফের চোখের দিকে তাকালো। সাদাফ গাঢ় গলায় বলল,

—-” এতোক্ষনে ঘরে আসার সময় হলো? তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এলমোস্ট বুড়ো হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আর নতুন বউয়ের এতো কিসের কাজ? তোমাকে কে কাজ করতে দিয়েছে শুনি?”

শুভ্রতা হেসে বলল,

—–” কেউ কাজ করতে দেয় নি আমায়। নিজে নিজেই করেছি। সন্ধ্যা থেকে বসে ছিলাম…। ”

সাদাফ নরম গলায় বলল,

—-” এতো লম্বা জার্নি করার পর ওদের সাথে তাল মেলাতে চাইছো, শরীর খারাপ লাগছে না? তুমি তো এমনিতেই বাস জার্নি করতে পারো না। আমার সাথে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলেই পারতে।”

—–” নতুন বউ এসেই ঘরে দোর দিয়ে ঘুমুচ্ছে, ব্যাপারটা কেমন না?”

সাদাফ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। দু’হাতে শুভ্রতার কোমর জড়িয়ে ধরতেই ককিয়ে উঠে বলল,

—-” আস্তে ধরো, ব্যাথা পাই।”

সাদাফ কপাল কুঁচকালো। শুভ্রতার কোমরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দুর্বোধ্য হাসলো। হাতের বাঁধন নরম করে বলল,

—-” ধরার আগেই রেস্ট্রিকশন!”

—-” উহুম। রেস্ট্রিকশন নয় সতর্ক বার্তা। সত্যিই ব্যথা পাচ্ছি। তারওপর তুমি যেভাবে ধরো! হাত এতো শক্ত কেন?”

সাদাফ হাসলো। হঠাৎই খানিক ভাবুক হয়ে বলল,

—-” আচ্ছা? এতোগুলো আত্মীয় স্বজনের মাঝে হাসিমুখে কাজ করছিলে অস্বস্তি লাগছিলো না তোমার?”

কথাটা শেষ করে শুভ্রতাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সাদাফ। শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

—-” সত্য বলব?”

শুভ্রতার চুলে মুখ ডুবিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,

—-” অবশ্যই।”

—-” ভীষণ অস্বস্তি লাগছিলো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হচ্ছিল সব ছেড়েছুড়ে দৌঁড়ে পালাই। কিন্তু চেষ্টা না করেই রণক্ষেত্র থেকে পালানোটা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমার উচিত ওদের সাথে একটু টাইম স্পেন্ড করা। জীবনের সবকিছু যে আমাদের পছন্দ অনুযায়ী হবে তা তো নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপছন্দের জিনিসকে পছন্দের বানিয়েও নিতে হয়।”

সাদাফ মুখ তুলে তাকাল। শুভ্রতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলল,

—-” বাহ্ দ্বিতীয় বার বিয়ে করেই খুব বুদ্ধিমতি হয়ে গেছো দেখছি। মনে হচ্ছে, আমার থেকে ভিটামিন পেয়েছো। চলো আবারও দিই ভিটামিন।”

শুভ্রতা লাল হলো। দুর্বল হাতে সাদাফকে ঠেলে দিয়ে বলল,

—-” লাগবে না। ভিটামিন টিটামিনের দরকার নেই আমার।”

সাদাফ শুভ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দুর্বোধ্য হাসলো। সাদাফের ঘন পল্লবে ঘেরা চোখদুটোতে তাকাতেই ঘোর লেগে গেল শুভ্রতার। অত্যন্ত করুণ গলায় বলল,

—-” তোমার সামনে দাঁড়ালেই কেন দমবন্ধ হয়ে আসে আমার? তোমার চোখের দিকে তাকালেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না।”

সাদাফ নিচু হয়ে শুভ্রতার গালে ঠোঁট ছোঁয়াল। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

—-” তুমি আমার আরশিতে বদ্ধ, শুভ্রা। আমার প্রেমে ভীষণভাবে আসক্ত! ”

#চলবে….

(ঘুমু ঘুমু চোখে লিখেছি। প্রচুর ভুল আছে হয়ত। ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here