ভুল -পর্ব ৭

0
278

#ভুল ৭ম পর্ব
#jannat_Nur

আমিরুল ইসলামকে আই সি ইউ তে রাখা হলো তার অবস্থা খুব গুরুতর। হসপিটালে হুমায়রা গিয়েছিল যখন জানতে পারে আমিরুল ইসলামের অবস্থা খুব গুরুতর! সে সেখান থেকে বাসায় চলে আসে। বাসায় কিছু ক্যাশ টাকা ছিল সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যায় তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে। হুমায়রা অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে তার কারণে আমিরুল ইসলামের এই দশা হয়েছে সেটা সাবের আহমেদ জানে। এ কারণে ভয়টা আরো বেশি পাচ্ছে হুমায়রা। সে বলেছিল থানা পুলিশ করবে আমিরুল ইসলাম তাকে রেপ করেছে! প্রকৃতপক্ষে তো আমিরুল ইসলাম হুমায়রার সাথে শারীরিক কোন সম্পর্ক করেননি। ছবিগুলো দিয়ে যদি প্রমাণ করে তার সাথে সে রাত কাটিয়েছে মেডিকেল পরীক্ষাতে ধরা পড়ে যাবে হুমায়রা সব মিথ্যা বলছে। আমিরুল ইসলাম এর অবস্থা খারাপ দেখে সে তার বয়ফ্রেন্ড এডামকে কল করে এডাম তখন তাকে বলে বাসায় যা কিছু আছে তাই নিয়ে তুমি চলে আসো। এডামের কথা মত টাকাগুলো নিয়ে সে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সারলি হসপিটালে ছিল তাকে হুমায়রা বলে এসেছিল আমি বাসায় যাচ্ছি সিরাতকে নিয়ে হসপিটালে আসবো। অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরও যখন হুমায়রা হসপিটালে আসেনি সারলি তখন হুমায়রাকে কল দিল! ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল। সারলির সন্দেহ হলো তখন সে সাবের আহমেদকে বলল আপনি এখানে থাকেন আমি বাসায় যাই, হুমায়রা বলেছিল সিরাতকে নিয়ে এখানে আসবে প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেল এখনও কেন আসছে না। সারলি বাসায় এসে দেখে সিরাত বসে কান্না করছে, তাকে জিজ্ঞেস করল তোমার আন্টি কোথায়?

আন্টি তো অনেকক্ষণ আগে আসছিল এসে বাসা থেকে কি যেন নিয়ে চলে গেল, আমি বলছিলাম আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও পাপার কাছে। কিন্তু সে আমাকে রেখে চলে গেল! আমার খুব ভয় লাগছে একা একা।

সারলি সিরাতকে আদর করে বলল ভয় পেয়ো না বাবু আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাব। কান্না করো না তোমার পাপার কিছু হবে না, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেন তোমার পাপাকে ভালো করে দেন।

হুমায়রা কোথায় যাবে আর তার ফোন বন্ধ কেন এটাই সারলি বুঝতে পারতেছে না। আমিরুল ইসলামের রুমে গিয়ে দেখতে পেল আলমারি খোলা, তাহলে কি হুমায়রা পালিয়েছে! ভাবনায় পড়ে গেল সারলি বাইডেন। সিরাতকে নিয়ে হসপিটালে আসলো সারলি। ডাক্তার বলছে আমিরুল ইসলাম এর অবস্থা আজকে কিছু বলা যাবে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি তার জ্ঞান ফিরে তাহলে ভালো না হলে সমস্যা হবে। সাবের আহমেদ তার স্ত্রীকে কল করে হসপিটালে আসতে বললেন, আমেরিকায় তো আমিরুল ইসলামের আপন কেউ নাই তাকে তার বন্ধুর পাশে থাকতে হবে। সাবের আহমেদ এর স্ত্রী এবং সাবের আহমেদ আমিরুল ইসলামের সঙ্গে থাকেন। সারলি রাতে সিরাতকে নিয়ে তার বাসায় চলে যায়। রাত তিনটার দিকে আমিরুল ইসলামের জ্ঞান ফিরে, বন্ধুর জ্ঞান ফেরা দেখে সাবের আহমেদ কান্না করে দেয়! সে ভাবছিল আমিরুল ইসলাম মনে হয় কোমায় চলে গেছে। হুমায়রা মেয়েটা মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায়, সহ্য করতে না পেরে আমিরুলের এই অবস্থা এটা বুঝতে পারলো সাবের আহমেদ। সারলি বাইডেন তাকে বলে গিয়েছে বাসা থেকে মনে হয় হুনায়রা কিছু নিয়ে পালিয়েছে। যাই হোক আমিরুল ইসলাম সুস্থ হলে সে বিষয়ে থানায় জানানো যাবে, এমনটাই ভেবে রাখল সাবের আহমেদ। তিন দিন হসপিটালে থাকার পর আমিরুল ইসলাম কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে যাচ্ছে সাবের আহমেদ। ডাক্তার বললেন আর দুইদিন থেকে যেতে, ঠিক মতন এখনো হাঁটাচলা করতে পারেন না আমিরুল ইসলাম। সাবের আহমেদ ডাক্তারকে বলছে আমার বাসায় নিয়ে ঠিকমতো সেবাযত্ন করবো, সে ঠিক হয়ে যাবে। বন্ধুকে তার বাসায় নিয়ে গেল সাবের আহমেদ।
সাবের আহমেদ এর বাসায় তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে আছে, সিরাতকে সারলির বাসা থেকে তাদের বাসায় নিয়ে আসা হলো। তারপর সাবের আহমেদ আমিরুল ইসলামের বাসায় গিয়ে দেখে আলমারি খোলা টাকাগুলো নিয়ে পালিয়েছে। আমিরুল ইসলামের আলমারিতে ৩০ হাজার ডলার ছিল। সাবের আহমেদ বন্ধুকে বললেন, তার ডলার গুলো নেই, সেটা শোনার পর আমিরুল ইসলাম বললেন, সুস্থ হবার পর থানায় গিয়ে এই মেয়ের নামে অভিযোগ করব। এই মেয়ে আমার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে তাই আমি থানায় অভিযোগ করে রাখবো। আমিরুল ইসলাম বন্ধুর বাসায় থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে ভাই-বোনদের কাছে এবং মায়ের কাছে কল দিয়ে কথা বলল সে অসুস্থ। ছেলের চিন্তায় আমিরুল ইসলামের মা অস্থির হয়ে গেছে! তার মা বলতেছে আমি যদি সুস্থ থাকতাম এখনই তোর কাছে চলে আসতাম, তোকে এখনি দেখতে ইচ্ছা করতেছে। আমিরুল ইসলাম তার ছোট ভাই সাব্বিরকে বললেন, তাদের গ্রামের কাউকে কাজের জন্য আমেরিকায় নিয়ে আসতে! পাসপোর্ট ভিসা করার জন্য সব খরচ সে দেবে। এখন আর সে আমেরিকার মানুষকে বিশ্বাস করে রাখবেন না! নিজের দেশের মানুষকে সিরাতের জন্য নিয়ে আসার জন্য। সাব্বির বলল আমি দেখি কেউ যেতে রাজি হয় কিনা, আর তুমি তো অসুস্থ তুমি না হয় বাংলাদেশে চলে আসো! এখানে এসে ব্যবসা করবে।

আমিরুল ইসলাম বললেন না আমি বাংলাদেশ যাবনা তুই একজনকে নিয়ে চলে আস তোদের দুজনের পাসপোর্ট ভিসা রেডি করতে শুরু করে দে! আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

প্রায় ১৫ দিন বন্ধুর বাসায় থাকার পর আমিরুল ইসলাম ছেলেকে নিয়ে নিজের বাসায় আসলো। আর অপেক্ষা করে থাকলো বাংলাদেশ থেকে কাউকে নিয়ে সাব্বির আসবে। প্রায় দুই মাস পর পাসপোর্ট ভিসা রেডি করে সাব্বির তাদের দূর সম্পর্কের বোনের মেয়েকে নিয়ে আমেরিকাতে আসলো। আর এর মধ্যে হুমায়রার ছবি দিয়ে নিউ জার্সি আবাসিক এলাকার থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। তাকে এখনো পুলিশ খুঁজে পাইনি, হুনায়রা আত্মগোপন করেছে! পুলিশ বলছে তাকে তারা খুঁজে বের করবে। আমিরুল ইসলাম কিছুটা হাক ছেড়ে বাঁচল নিজের দেশের মানুষকে পেয়ে। সাব্বির যাকে নিয়ে আসছে সেই মেয়ের বয়স ১৪ বছর, নাম দীপা! সম্পর্কে তাদের ভাগ্নি হয়, দীপা রান্নাবান্না পারে, এখন আর কোন টেনশন থাকলো না আমিরুল ইসলামের। সাব্বির তার ভাইকে বলল মা তোমাকে দেখার জন্য খুব কান্নাকাটি করে তুমি একবার বাংলাদেশের যাও সিরাতকে নিয়ে ঘুরে আসো। কেন তুমি যাচ্ছ না?
ওই অসৎ মহিলার জন্য তুমি নিজের দেশ ত্যাগ করে ফেললে।

আসলে কি জানিস আমি যদি সেখানে যাই আমার সুফিয়ার কথা মনে পড়বে, সে যত বড়ই ধোঁকায় দিয়ে থাকুক আমিতো তাকে ভালোবেসেছিলাম! তার স্মৃতিগুলো আমাকে কষ্ট দিবে। তাই আমি যেতে চাচ্ছি না, আর আমি চাই না সিরাত তার সম্পর্কে জানতে পারুক। সিরাতকে নিয়ে বাংলাদেশ গেছি শুনে যদি সুফিয়া এসে ঝামেলা করে।

ভাইয়া তুমি শুধু শুধু এত টেনশন করতেছ, ওই মহিলার খবর এলাকার কেউ জানে না! তার কোন খোঁজ খবর নেই, সে সিরাতের ধারে কাছেও আসবে না। তুমি তার জন্য নিজের মা ভাইবোনকে দেখতে যাবে না? প্লিজ প্লিজ ভাইয়া তুমি একবার বাংলাদেশে আসো।

ঠিক আছে আমি সামনের বছর সিরাতকে নিয়ে বাংলাদেশে যাব মায়ের সাথে দেখা করতে।

সামনের বছর যাবে বললেও আমিরুল ইসলাম যায়নি! আরো দুই বছর কেটে গেছে, এখন সিরাতের বয়স এগারো বছর। আমিরুল ইসলামের মা খুব অসুস্থ তাই তাকে দেখতে যাবে, আর দীপাও তার পরিবারের মানুষের জন্য কান্নাকাটি করছিল।

সুফিয়া বেগম এয়ারপোর্টের আশেপাশে সবসময় ঘোরাঘুরি করতেন ছেলের কাছে যাবে এই ভাবনায়। তাকে দেখে এখন চেনাই যাবে না একটা সময় সে অনেক সুন্দরীছিল। চুলগুলো এলোমেলো জটা হয়ে গিয়েছে! ফর্সা মুখটা কালচে রং ধারণ করেছে। দিন দিন তার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হচ্ছে এখন মানুষের সামনে পাগলামি শুরু করে দেয়। মানুষের বাচ্চা ছেলেদের দেখলে কেড়ে নিতে চায় তার সিরাত ভেবে। এমন করে একদিন এক লোকের বাচ্চা দেখে কোলে নেওয়ার জন্য সে দৌড় দিয়ে যেতে চায়! তখনই একটা মাইক্রোবাসে এসে তাকে চাপা দেয় সাথে সাথে লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। লোকজন ধরাধরি করে হসপিটালে নিয়ে যায়, ডাক্তার দেখে বলে পা ভেঙে গেছে। তারপর তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা করার পর তাকে ছেড়ে দেয়, তার আপন বলতে কেউ নেই কে তাকে নিয়ে আসবে। আবার তার আস্তানা হয় এয়ারপোর্টের পাশে। দিনদিন তার অবস্থা আরো শোচনীয় হতে থাকে, খাবারের অভাব ওষুধপত্রের অভাবে মৃত প্রায় সুফিয়া বেগমকে নিয়ে যায় একজন স্বেচ্ছাসেবক। স্বেচ্ছাসেবক নিজাম উদ্দীন নিজ উদ্যোগে ময়মনসিংহে মানসিক রোগীদের জন্য একটা ক্লিনিক দিয়েছে! সেখানে সুফিয়া বেগমকে নিয়ে আসে সে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here