ভুল -পর্ব ৬

0
202

#ভুল ৬ষ্ঠ পর্ব
#jannat_Nur

আমিরুল ইসলাম ভয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে সত্যি কি সে হুমায়রার জালে ফেঁসে গেল। এখন কি হুমায়রাকে তার বিয়ে করতে হবে? সে ভাবছিল জীবনে আর কখনো বিয়ে করবে না। একবার ভালোবেসে যে ধোঁকা খেয়েছে সেই ধোঁকা দুবার খেতে চায়না। সুফিয়াকে অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সেই মানুষটাই যখন তাকে ধোঁকা দিয়েছে আর কারো প্রতি তার বিশ্বাস নেই। নারী জাতিকে সে এখন আর বিশ্বাস করে না। সেটা আবার অপমানিত হলো নারীরা ধোঁবাজ, হুমায়রা সেটা দ্বিতীয়বার প্রমাণ করে দিলো। মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমিরুল ইসলামের। তার মান সম্মান মনে হয় এবার শেষ হবে! নিউ জার্সি শহরে সে সবার কাছে সম্মানিত, সবাই এক নামে চেনে। এখন যদি হুমায়রা তার নামে ধর্ষণের অভিযোগ করে তাহলে কি হবে। এগুলোই ভাবতেই তার চোখের কোনে পানি হাত দিয়ে মুছে অতীতে চলে গেলো।
মনে মনে বলছে সুফিয়া তুমি কেন আমার সাথে এমন প্রতারণা করলে আমাকে ঠকালে! আমার জীবনটা এমন হয়ে গেলো শুধু তোমার কারণে। আমার ছেলেটার জন্য চিন্তা হচ্ছে আমি যদি আইন আদালতে ফেঁসে যাই! তাহলে আমার ছেলেটাকে কে দেখবে। এদেশে আমার আপন বলতে কেউ নেই, হুমায়রা যখন ষড়যন্ত্র করেছে সে আমাকে সহজে ছাড়বে না। আমিরুল ইসলামের ভাবনার মাঝে তখনই দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো, সারলি বাইডেন এসেছে।

মিস্টার আমিরুল ইসলাম আপনি খুব অস্থির হয়ে ফোন করলেন, তাই আমি তাড়াতাড়ি চলে আসছি। আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী লাগবে যদি আমার কারণে আপনার ক্ষতি হয়। আমি জানতাম হুমায়রা অনেক ভালো মেয়ে আমার সাথে কখনো সে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি।

আপনি তাকে কত বছর ধরে চিনেন মিস সারলি?

আমি তাকে দুই বছর যাবত চিনি, আমরা একটা ভ্রমণে গিয়েছিলাম সেখানে আমার হুমায়রা সাথে পরিচয়। সে আমার ফোন নাম্বার নেয় আমরা ফোনে কথা বলতে বলতে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই! আমাকে বলেছিল তার লাইফে অনেক কষ্ট, একটা ছেলে তাকে ভালোবেসে পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসে। তারপর বিয়ে করে, বিয়ের পর অনেক অত্যাচার করে! সহ্য করতে না পেয়ে ডিভোর্স নিয়েছে। হুমায়রার জীবনের কষ্টের কাহিনী শুনে মায়া হয় আমার তার প্রতি, তাকে আমি সবসময় ভালো মনে করছি! কিন্তু আপনি যা বলছেন এটা সে কিভাবে করবে।

আমি সত্যি বলছি মিস সারলি, আমি তার দিকে কখনোই খারাপ নজরে তাকাইনি। আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলেকে সে মায়ের আদর মমতা দিয়ে মানুষ করবে। এমন একজন দক্ষ আয়ার প্রয়োজন ছিল! আপনার মা আমার ছেলেকে পরম আদর যত্নে মানুষ করেছে আপনার মায়ের মত আরেকজন আয়া আমার ছেলের জন্য চেয়েছিলাম। হুমায়রার ব্যবহার দেখে ভাবছিলাম যে না সেও ভালো কিন্তু সে এত বড় ষড়যন্ত্র করবে আমি এটা ভাবতে পারিনি।

কি করেছে আমাকে বলুন তো শুনি।

রাতে আমি বাড়ি ফেরার পর দেখি সে অনেক সাজগোজ করে আছে। ভাবলাম হয়তো কোন পার্টিতে যাবে তাই এত সাজগোজ করেছে, কিন্তু সে আমার কাছে এসে বসে আমাকে তার প্রতি আকর্ষিত করতে চায়। আমি তার কাছে জানতে চাই কি হয়েছে আপনি এমন করছেন কেন? এত সাজগোজ করে কোথায় যাচ্ছেন, কোন পার্টিতে।

সে বলে না, আমি কোন পার্টিতে যাচ্ছি না আপনি আমার স্পেশাল মানুষ আপনার জন্যই আজকে আমার এত সাজসজ্জা। এতদিন ধরে আপনার বাসায় আছি আপনি তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না। কেন আমি কি দেখতে সুন্দর না?

তার এই প্রশ্নের জবাবে আমি তাকে বলি আপনি সুন্দর হন আর যাই হন সেটা অন্যের চোখে হতে পারেন! আমার চোখে শুধু আপনি আমার ছেলের আয়া হিসেবে এই বাড়িতে আছেন। আর কিছু ভাবিনি আপনাকে নিয়ে, আর ভাবতে চাইও না। এটা বলে আমি তাকে ডিনার রেডি করতে বলি, সে ডিনার রেডি হতে চলে যায়। আমাকে ডিনার রেডি করে দিয়ে সে আমার ছেলের রুমে আসে, সিরাতকে ঘুম পাড়াতে আমি খাবার খাওয়ার পর আমার মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছিল, ব্যালকনিতে চেয়ারে এসে বসি। আমার চোখ দুটো লেগে আসে তখন অনুভব করি আমার হাত কেউ স্পর্শ করেছে। চেয়ে দেখি হুমায়রা দাঁড়িয়ে আমাকে বলতেছে আপনি এখানে কেন রুমে গিয়ে ঘুমান। আমি বললাম খাবার খাওয়ার পর আমার মাথাটা এমন ঘুরাচ্ছে শরীর ঝিমঝিম করছে! উঠে রুমে যাওয়ার মত শক্তি পাচ্ছি না। হুমায়রা আমাকে বলল ঠিক আছে আমি আপনাকে হেল্প করি। এটা বলে সে আমার হাত ধরে আমার রুমে নিয়ে আসলো, বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে আমার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায়। আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে যখন আমার ছেলে সিরাত ডাক দেয় তখন দেখি হুমায়রা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আমিতো অবাক হয়ে যাই, হুমায়রাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলি আপনি এখানে কেন। হুমায়রা বলে আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে আসছি আর তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছি। এটা একদম মিথ্যা কথা আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে আসেনি আর তার সাথে কিছু করিনি।

সারলি বলল হুমায়রা বাসায় আসুক তার সাথে আমি কথা বলি আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আপনারা কে সত্যি আর কে মিথ্যা বলছেন সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তায় জানে। হুমায়রা আসুক তার সামনাসামনি কথা হোক তখনি বুঝতে পারবো।

সারলি বাইডেন হুমায়রার জন্য অপেক্ষা করে থাকলো! ঘন্টা খানেক পথ হুমায়রা সিরাতকে নিয়ে বাসায় ফিরছে, সারলিকে দেখে হুমায়রা কান্না করে দিলো।

তোকে কান্না করতে হবে না, কি হয়েছে ঘটনা বল। মিস্টার আমিরুল বললেন, তুই নাকি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বিয়ে করতে চাচ্ছিস? যদি এটা করে থাকিস প্লিজ এটা করিস না। লোকটা কিন্তু অনেক ভালো ছেলেটাকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছে, তার স্ত্রী তাকে ঠকিয়েছে। মা অসুস্থ হবার পর তোকে এনে দিলাম, এখন তুই যদি তার সাথে এরকম করিস সেটার দায় কিন্তু আমাদের উপরেও পড়বে।

হুমায়রা অবাক হওয়ার ভান করে বলল, তুই কি বলছিস আমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দেবো?
আমার ইজ্জত নিয়ে আমি মিথ্যা বলব এটা তুই ভাবতে পারলি। তার রুমে আমি ছিলাম কিনা তাকে জিজ্ঞেস কর, সকালে সে উঠে আমাকে তার পাশে পেয়েছে কিনা। একটা মেয়ে কখনো জোর করে একটা পুরুষের রুমে থাকতে পারবে না, সে যদি আমাকে না রাখতে চাইতো আমি কি তার রুমে থাকতে পারতাম।

সারলি ভাবছে এটাও তো ঠিক, একটা পুরুষ না চাইলে একটা মেয়ে কখনো তার সাথে জোর করে কিছু করতে পারবে না। তাহলে কি আমিরুল ইসলাম হুমায়রার সাথে অন্যায় করেছে। আমিরুল ইসলাম বারবার বলছে সে কিছু জানে না আর হুমায়রা বলছে সে তাকে তার রুমে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করেছে! এখন তাকে বিয়ে করতে হবে।

এটা সম্ভব নয়, আমার জীবন থাকতে এই মেয়েকে বিয়ে করব না। এমন একটা প্রতারক মেয়েকে আমি কখনো বিয়ে করতে পারি না। এই মেয়ে তুমি কি চাও বলো, কত টাকা চাও আমি দিয়ে দেবো।

আমিরুল ইসলামের কথায় হুমায়রা বলল, আপনি কি ভাবছেন আমি টাকার লোভে আপনার সাথে এমন করেছি? আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্রথম দিন থেকে আপনাকে পছন্দ করি, আমাকে আপনার বিয়ে করতে হবে! বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিবেন, আমি আর কিছু চাই না।

আমিরুল ইসলাম সাবের আহমেদকে ফোন করে আসতে বললেন। সাবের আহমেদ এসে সবকিছু শুনে আমিরুল ইসলামকে বললেন, তোর তো বিয়ে করার দরকার সিরাতের জন্য! কতদিন আয়া রেখে ছেলের দেখাশোনা করাবি, বিয়ে করে ফেল।

আমিরুল ইসলাম বন্ধুর কথাই রেগে গেলেন,

তুই কি বলতেছিস যে মেয়ে আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছে তাকে বিয়ে করতে? সে অনেক কিছুই করতে পারবে, এই মেয়ে ডেঞ্জারাস।

আরে বন্ধু রাগ করছিস কেন তোকে পাওয়ার জন্য হয়তো এমন করেছে বিয়ে করে ফেল! আর এখন যদি সে থানা পুলিশ করতে চায় তোর জেল হয়ে যাবে। যদি প্রমাণিত হয় তুই তাকে রেপ করেছিস জানিস তো এ দেশের আইন কানুন। যদি একবার প্রমাণিত হয়ে যায় তুই রেপিস্ট, কতদিনের জেল হবে তুই জানিস? জেল হয়তো ফাঁসি হতে পারে। তোর ছেলের কি হবে চিন্তা করে দেখ একবার! ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হুমায়রাকে বিয়ে কর।

আমিরুল ইসলাম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল! ঠিকই তো বলেছে তার বন্ধু। হুমায়রা যদি আইন আদালত করে তাহলে তখন তার জেল হলে ছেলে সিরাতের কি হবে। কে দেখবে তার ছেলেকে এই ভাবনাতে সে অস্থির হয়ে ছটফট করতে থাকলেন। তার এই অবস্থা দেখে সাবের আহমেদ বললেন, তোর কি হয়েছে এত ভেঙে পরিস না তোর বিয়ে করতে প্রবলেম কি? হুমায়রা যখন তোকে পছন্দ করে তোর ছেলেকে মায়ের মত দেখে, বিয়ে করে ফেল। চিনচিন করে ব্যথা শুরু হচ্ছে আমিরুল ইসলামের বুকে! বুকে চেপে ধরে পানির গ্লাস দেখিয়ে দিল সে পানি খাবে। সাবের আহমেদ পানি আনার সাথে সাথে আমিরুল ইসলাম ফ্লোরের লুটিয়ে পড়লো। তার কোন হুশ নেই সাবের আমাদের বুঝতে বাকি রইল না বেশি দুশ্চিন্তায় আমিরুল ইসলামের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে হয়তো। তৎক্ষণা হসপিটালে ফোন দিলেন এম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য। সারলি আর হুমায়রা অন্য রুমে ছিল শুনতে পেয়ে তারা দুজন দৌড়ে আসলো আমিরুল ইসলাম এর কাছে। ৫ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে পড়েছে। সবাই আমিরুল ইসলামকে ধরাধরি করে তুলে দিলো এম্বুলেন্সে। পাশে সিটি হসপিটাল সেখানে থাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ডাক্তার বলল আমিরুল ইসলাম বেশি চিন্তার কারনে হার্ট অ্যাটাক করেছে।

চলবে….

https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/682350203486755/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here