#ভুল ৪র্থ পর্ব
#jannat_Nur
সিরাত এত পরিমাণে কান্না করছিল আমিরুল ইসলাম তাকে সামলাতে পারছে না। ছেলেকে নিয়ে এসে কি ভুল করল এটাই ভাবতেছে আমিরুল ইসলাম। আপাতত দু-তিন বছর তার ভাইয়ের বউদের কাছে সিরাতকে রেখে আসা উচিত ছিল এমনটাই বসে বসে ভাবছিল আমিরুল। তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো, দরজা খুলে দেখে তার বন্ধু সাবের আহমেদ বয়স্ক একজন মহিলাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবের আহমেদ মহিলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আমিরুলকে।
বলেছিলি না সিরাতের জন্য একজন আয়া দেখে আনতে, এই আন্টিকে নিয়ে আসলাম! আন্টিটা অনেক যত্ন সহকারে বাচ্চা লালন পালন করে।
আমিরুল ইসলাম মহিলা দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলেন বয়স হবে ৫০ এর উপরে এই মহিলা কি ঠিকমতো বাচ্চা সামলাতে পারবে! আমিরুল ইসলামের তাকানো দেখে মহিলাটি বলল….
I[ understand you may think I’m old and I can’t handle your son well don’t worry I’ll do my duty properly My name is Lily Biden May I meet you]
বুঝেছি তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি বুড়ো হয়ে গেছি, আমি তোমার ছেলেকে ভালোভাবে সামলাতে পারব না, ভেবো না আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব। আমরা কি পরিচিত হতে পারি? আমার নাম লিলি বাইডেন।
আমিনুল ইসলাম মহিলার কথা শুনে সন্তুষ্ট হলেন! মহিলার কথায় তার দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে। আমিরুল ইসলামকে মুগ্ধ করেছে লিলি বাইডেনের ব্যবহার। লিলি বাইডেনের সাথে পরিচিত হয়ে সিরাতকে তার কোলে তুলে দিলেন আমিরুল ইসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিরাতের কান্না থেমে গেল পরম যত্নে সিরাতকে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন আয়া। এই তিন দিনে বাবা হয়ে যা করতে পারেনি আমিরুল ইসলাম, তা এই মহিলা কিছুক্ষণের মধ্যে করে ফেললেন। আমিরুল ইসলাম বুঝতে পারলো মেয়েরা হলো মায়ের জাত তাদের বয়স যতই হোক তাদের ভিতরে মায়ের মমতাটা সবসময় অটুট থাকে! যা দিয়ে তারা বাচ্চাদের বশ করতে পারে। পুরুষ মানুষ চাইলেও তা পারে না সে যত চেষ্টাই করুক।
সময় চলতে থাকলো সময়ের গতিতে, আমিরুল ইসলাম ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার বিজনেস নিয়ে। সিরাতের দেখাশোনা ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে লিলি বাইডেন। এদিকে সুফিয়া বেগম পাগল প্রায় হয়ে এয়ারপোর্টের চারদিকে ঘোরাঘুরি করে আর সবাইকে অনুরোধ করে তাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে। এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি আর বাচ্চা ছেলে দেখলে তাদেরকে কোলে নিতে চাওয়া এভাবেই কাটছিল সুফিয়া বেগমের জীবন। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেয়ে কোনো রকম জীবনটা বাঁচিয়ে রাখে সে। মানুষের চোখে সে পাগল হলেও তার মাথার ভিতর একটাই ভাবনা সে যেভাবেই হোক আমেরিকায় যাবে, তার ছেলেকে নিয়ে আসবে।
এভাবেই তিন বছর কেটে গেল, আমিরুল ইসলাম পণ করেছে সে বাংলাদেশের ফিরবেন না। আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। ভাইবোনদের মায়ের সাথে ফোনে কথা হয়, তার মা অনেক বার বলছে বাংলাদেশে আসতে সে আসেনি। এখন সিরাতের বয়স ৬ বছর তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে! স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করে লিলি বাইডেন। পরম মমতায় মায়ের স্নেহ দিয়ে সিরাতকে বড় করে তুলছে লিলি বাইডেন। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে লিলি বাইডেন, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার দুজন ছেলে মেয়ে ছিল তারা এসে নিয়ে যায় তাদের মাকে। আবার দুশ্চিন্তা গ্রাস করে আমিরুল ইসলামকে ছেলেকে দেখাশোনা করার মত নির্ভরযোগ্য মানুষ পাওয়া মুস্কিল। লিলি বাইডেন যেভাবে সিরাতকে আগলে রেখেছিল সেভাবে আগলে রাখার মত বিশ্বাসযোগ্য মানুষ কোথায় পাবে। লিলি বাইডেনের কাছে হেল্প চাইলো আমিরুল ইসলাম, তার বাসায় গিয়ে বলল আন্টি আপনার সাথে চেনা চেনা ভালো কেউ থাকে তাহলে তাকে আমার ছেলের জন্য এনে দেন। লিলি বাইডেন এর মেয়ে তার মাকে বলল, তার একজন বান্ধবী আছে পাকিস্তানি সেও আয়ার কাজ করে তাকে বলে দেখতে পারে। আমিরুল ইসলাম লিলি বাইডেনের মেয়েকে তার ফোন নাম্বার দিয়ে আসে যোগাযোগ করার জন্য। পরের দিন লিনি বাইডেনের মেয়ে সারলি বাইডেন তার ফ্রেন্ড হুমায়রাকে নিয়ে আমিরুল ইসলামের ফ্ল্যাটে আসে।
আমিরুল ইসলাম বলেছিল সন্ধ্যা সময় আসলে তাদের দেখা হবে। সারলি বাইডেন সে কথা মত হুমায়রাকে নিয়ে সন্ধ্যা সময় আসে আমিরুল ইসলামের ফ্ল্যাটে। হুমায়রাকে দেখে আমিরুল ইসলামের কিছুটা অপছন্দ হয়। কারণ হুমাইরা দেখতে সুন্দরী এবং ইয়াং। এমন একটা মেয়েকে একা বাসায় রাখতে নিজের কাছে সংকোচ বোধ হচ্ছে! বাট সিরাতের জন্য তো রাখতে হবে। লিলি বাইডেন অনেক বিশস্ত ছিল তার মেয়ে যখন বলছে হুমায়রাও ভালো হতে পারে। এটা ভেবে আমিরুল ইসলাম হুমায়রাকে রাখবেন বলে মনস্থির করলেন। হুমায়রার সাথে টুকটাক পরিচয় হলো আমিরুল ইসলামের। হুমায়রা বাংলা বলতে পারে অনেকটা, সে তার জীবনের কিছু দুঃখজনক ঘটনা বললেন আমিরুল ইসলামের সাথে।
পাকিস্তানের পেশোয়ারের মেয়ে আমি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। তারপর আমার ফেসবুকে রিলেশন হয় আমেরিকার নিউ জার্সি শহরেরই পাকিস্তানি বংশদ্ভূত রিদওয়ান রনির সাথে। তার প্রেমের টানে আমি আমেরিকায় চলে আসি, এবং আমরা বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছরের পর থেকে বুঝতে পারি রিদওয়ান রনি বদলে যেতে থাকে, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। ভালবাসার মানুষ যখন বদলে যায় তখন তার সাথে সংসার করা যায় না।
ভালোবাসার মানুষ যখন বদলে যায় তখন তার সাথে সংসার করা যায় না, এই কথাটা আমিরুল ইসলামের বুকের ভেতর লাগলো। সে তো কত ভালোবেসে সুফিয়াকে বিয়ে করেছিল, সে কি করলো তাকে ধোকা দিয়ে পর পুরুষের সাথে রাত কাটালো! তাইতো তার সাথে সংসার করতে পারলো না সে। এটা ভাবতে ভাবতে আমিরুলের চোখের কোনে পানি চলে আসলো।
হুমায়রা সেটা খেয়াল করে বললেন আপনার কি কোন অতীত মনে করিয়ে দিলাম? তাহলে আমি আই এম স্যরি।
আরে না না, কোন অতীত মনে হয়নি! আপনি বলতে থাকুন, আপনার কথা শুনে কষ্ট লাগলো তাই এমনটা হয়েছে।
হুমায়রা আবার বলতে শুরু করল, আমি আমার দেশ ছেড়ে বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে তার কাছে চলে আসি। তার বদলে যাওয়া, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা সেটা আমার সহ্য হয়নি! সে আমার গায়ে হাত তুলতো মারধর করতো। তাই আমাদের ডিভোর্স হয়।
আপনি কি আর পাকিস্তান ফিরে যেতে চাননি?
না আমি আর কিভাবে দেশে ফিরে যাব, বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে চলে আসছি এখন যদি স্বামী ভালো হতো তাকে নিয়ে যেতাম সেটা অন্য কথা ছিল, তাই আর যাওয়া হয়নি।
আমিরুল ইসলাম ভাবছেন এ দুনিয়ায় অনেকেরই অনেক কষ্ট আছে সবার কষ্টই বুকে চাপা দেওয়া। হুমায়রা কথাবার্তা ব্যবহার সবকিছুই ভালো ছিল! আমিরুল ইসলাম প্রথম কিছুটা চিন্তাই ছিল এখন সে ভাবছে না মেয়েটা তো ভালোই তাকে নিয়ে শুধু শুধু চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু আমিরুল ইসলাম সবসময় মেয়েদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। সে এটাই ভাবে যাকে এত ভালবেসে বিয়ে করে এত বছর সংসার করার পরেও তার সাথে প্রতারণা করেছে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না এ জীবনে। কিন্তু হুমায়রার প্ল্যান ছিল অন্য কিছু। যখন প্রথম সে আমিরুল ইসলামের বাসাতে আসে তখনই তার মনে হয় আমিরুল ইসলামকে সে যদি হাত করতে পারে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবে। কারণ আমিরুল ইসলামের ফ্যামিলিতে আর কেউ নেই, শুধু একটি মাত্র সন্তান। সিরাতকে সে অনেক ভালোবাসা দেখায় আমিরুল ইসলামের সামনে। প্রকৃতপক্ষে হুমায়রা ভালো মেয়ে না। যে ঘটনা আমিরুল ইসলামের কাছে সে বলছিল সেটা আংশিক সত্য আর বেশিরভাগ বানোয়াট। হুমায়রা পাকিস্তান থেকে আমেরিকাতে চলে আসে কোটিপতি হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। রিদওয়ান রনি নামে কোন ছেলের সাথে তার প্রেম ভালোবাসাটা বিয়ে হয়নি। সে তার এক বন্ধুর সাথে মা-বাবাকে না জানিয়ে আমেরিকাতে চলে আসে, সেই বন্ধুর সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তারপর আমেরিকা এসে এদেশের এক সিটিজেনকে বিয়ে করে তার টাকা পয়সা সব কিছু নিজের নামে করে নিয়ে সেই লোককে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে ডিভোর্স নিয়ে নেয়। তার নেশাই হল পুরুষ মানুষদেরকে আসক্ত করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সে কারণেই আয়ার কাজটা বেছে নিয়েছে। যখন তার বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারে আমিরুল ইসলামের বাসায় তার মা আগে আয়ার কাজ করতো এখন তার মা করতে পারবেনা! আমিরুল ইসলাম সম্পর্কে জেনে শুনে হুমাইরা তার বাসায় যেতে রাজি হয়। এবং আমিরুল ইসলাম ইম্প্রেস করতে সুন্দর করে মনগড়া কাহিনী বলে। আর লিলি বাইডেনের মেয়েও জানতো না হুমায়রা বাজে স্বভাবের মানুষ। এক জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সারলি বাইডেনের সাথে হুমায়রার পরিচয় হয়, সেখান থেকে হুমায়রা সারলির সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে।
প্রায় এক বছর ধরে হুমায়রা আমিরুল ইসলামের বাসায় আছে,কখনো আমিরুল ইসলামের সাথে তেমন বেশি কথাবার্তা বলতে পারেনি। আমিরুল ইসলাম সবসময় হুমায়রাকে এড়িয়ে চলে, দরকার ব্যাতিত হুমায়রার সাথে কথা বলে না। হুমায়রা তার প্ল্যান সাকসেসফুল না করতে পেরে তার বয়ফ্রেন্ড এডামকে বললেন আমি তো পারতেছি না এই লোকটাকে হাতের মুঠোয় নিতে! আমার কোন প্ল্যান কাজে লাগছে না, একে বশ করতে পারছি না। তুমি একটা প্ল্যান করো যেন এই লোকটাকে ঘায়েল করতে পারি।
এডাম হুমায়রাকে বলল তার সাথে পার্কে দেখা করতে! হুমায়রা সিরাতকে ছাড়া যেতে পারবে না তাই সিরাতকে সাথে নিয়ে পার্কে গেল এডামের সাথে দেখা করতে। এডাম হুমায়রাকে বলল, সোজা পথে যখন মিস্টার পথে আসছে না, তার জন্য তো বাঁকা পথ বেছে নিতেই হয়। হুমায়রা জানতে চাইলো কি করতে হবে তাড়াতাড়ি বল, আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না। সিরাতের বয়স সাত বছর সিরাত তাদের সব কথায় বুঝতে পারবে। সিরাতকে দেখে এখন এডাম বলল তুমি এই বাচ্চাকে সাথে নিয়ে আসছ কেন এ সব শুনে তার বাবাকে বলে দেবে। হুমায়রা সিরাতকে বলল সিরাত বাবা তুমি ওখানে গিয়ে বস দেখো বাচ্চারা খেলা করছে তাদের সাথে একটু খেলা করো, আমরা একটু পার্সোনাল কথা বলব। সিরাত হুমায়রার কথা মত দুইটা বাচ্চা বসে ছিল তাদের কাছে গেল। আর এই ফাঁকে এডাম হুমায়রাকে প্ল্যান মোতাবেক কাজ করার জন্য বলে দিল, হুমায়রা বলল ঠিক আছে আমি তাই করবো। এডাম হুমাইরার হাতে নেশা জাতীয় একটা মেডিসিন দিয়ে বলল, এটা ঠিক ভাবে খাইয়ে দিও তারপরে কাজ হয়ে যাবে। তুমি যা করতে চাও তাই করতে পারবে, ঠিক আছে তাহলে আমি এখন যাচ্ছি বলে হুমায়রার কাছ থেকে এডাম বিদায় নিল।
চলবে….