শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ১৮

0
269

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
#পর্ব ঃ ১৮

— সত্যি!!!
— তুই কিছু জানিস না এ ব্যাপারে? ওরা হঠাৎ এটা কেন বলছে? তুই বুঝতে পারছিস চারপাশে কত কথা শুরু হয়ে যাবে?(মা)
— মা ওরা যদি সত্যিই তিশুকে চায় তাহলে তো ভালই।আর আমি তো এমনিতেও বিয়েটা করতে চাইছিলাম না।ভালোই হলো।
— আপা কি বলছিস এটা?
— তুই চুপ থাক।
— তোর বাবা তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে নবু।এত এত আয়োজন বিয়ের।আর এখন ওরা বলছে তুশিকে চাচ্ছে।বিকেলে তো দুজন বের হয়েছিলি,সব তো ঠিকঠাকই ছিল হঠাৎ আবার কি হলো বল তো?
— মা যা হওয়ার হয়ে গেছে।তুমিও চিন্তা কর না,আর বাবাকেও চিন্তা করতে নিষেধ করো।
— নবু,তোর বিয়ে ভেঙেছে।বুঝতে পারছিস কিছু?
— মা,ওরা আমার বোনকে পছন্দ করেছে তুমি বুঝতে পেরেছো?কত্তো বড় বাড়ি,ছেলে ভাল,বাড়ির সবাই কত ভাল।তোমার মেয়ের কপাল কি দেখেছো?
— আমার বড় মেয়ের বিয়ে ভেঙে ছোট মেয়ের সংসার জুড়লে কি আনন্দ হওয়ার কথা?আমার দুইটা মেয়ে,দুজনই সমান।আমি চাই আমার দুই মেয়েই ভাল থাকুক।কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো যে তোকে রেখে তুশিকে বউ করতে চাইছে?
— মা এসব বাদ দাও,যেটা ভালো হবে সেটাই হচ্ছে।
— সবকিছু এত সহজ না নবু,বড় হয়েছিস সব বুঝতে পারছিস নিশ্চয়ই।
— মা আমি আপাতত আমার বোনের কথা ভাবছি আর কিছু না।
— বাহিরে সবাই নানানরকম কথার সৃষ্টি করবে নবু।
— মা অনেক তো বাহিরের মানুষের কথা তো অনেক শুনেছো,এখন না হয় কানে তুলো দিয়ে রাখো।যাও বাহিরে গিয়ে কে মেহেদি পড়াবে রেডি হতে বলো।আমি তিশুকে শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে আসছি।
— আচ্ছা ঠিক আছে।

মা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই দেখি তুশি আবার ছোট বাচ্চাদের মত কান্না করছে। আবার কি হলো মেয়েটা,কেমন কথায় কথায় কান্না করছে আজকে!
— তুই আবার কান্না করছিস কেন তিশু?
–……….
— শোন এরকম কথায় কথায় কান্না করবি না,এরকম কান্না করলে আমি কিন্তু এখনি রুম থেকে বের হয়ে চলে যাব। তারপর যত ইচ্ছে কান্না করবি।
— তুই তোর ভাগ্যের জিনিস আমাকে দিয়ে দিচ্ছিস আপা!
— কিন্তু সেটা আমার ভালবাসা না।আমি তোর মত গাধা না যে আমার ভালোবাসার মানুষকে অন্য কাউকে হতে দেব বা বলব সে তোকে ভীষণ ভালোবাসে, তুই বিয়েটা করে নে,অনেক ভালোবাসে তোকে…..
— আপা তুই কিন্তু আমাকে পঁচাচ্ছিস!
— মিথ্যা বলছি নাকি?
— তুই যে নিহান ভাইয়াকে ভালবাসিস এটা কি আমি বাসায় বলব?
— তুই এবার আমার হাতে মার খাবি তিশু…!
— এবার আমি সত্যি বললে মার কেন খাব?
— তুই বেশি বুঝিস।আমি নিহান স্যারকে কেন ভালবাসতে যাব?কিছু কিছু মানুষের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হলেও স্থায়ী হয় না যেমন আমার।
— তোর এত জটিল কথা আমি বুঝি না আপা।
— তোর বুঝতে হবে না।অনেক কথা হয়েছে এখন রেডি হবি চল।মেহেদি পড়তে হবে না?
— তুই পড়বি না শাড়ি?
— তোকে আগে রেডি করে দেই তো তারপর দেখছি।

তিশুকে রেডি করে দিচ্ছি,তখন বাজে আটটা।বাহিরে আঙ্কেলের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।আর শুনতে পাচ্ছি না,হয়তো আমার মনের ভুল।
তিশুকে সাজানো প্রায় শেষ। এমন সময় দরজার ওখানে চির পরিচিত ডাক শুনে ঘুরে তাকালাম।
— মানি…….
— নীরু!তুমি এখানে?
নীরু ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়া কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছি না আমি।দিনে কতশত বার যে এই মেয়েটাকে আমার মনে পড়ে!
— কার সাথে এসেছো নীরু?
— দাদু নিয়ে এসেছে।
— তুমি তোমার মানিকে মিস করছিলে?
— হ্যাঁ অনেক।মানি তো পচা হয়ে যাচ্ছে আমাকে ভুলে থাকে।
— তোমার মানি তোমাকে খুব ভালোবাসে নীরু।
— তাহলে একবারও আমাকে ফোন কেন দাও নি?
— তুমি আমাকে এখন আর একটুও আদর করো না,ভালোওবাসো না।
— তুমি ভালোবাসলেই হবে।আচ্ছা দেখো তো মণিকে কেমন লাগছে?
— বউ বউ লাগছে হিহি..!
— নতুন বউ তো এটা।
— তুমি সাজবে না?
— হ্যাঁ সাজবো তো।তুমি আমাকে দেখে বলবে তো যে আমাকে বউ বউ লাগছে কি না?
— হ্যাঁ বলব।
— আচ্ছা,তুমি এখানে বসো তাহলে।

আমি নীরুকে বিছানায় বসিয়ে তুশির সাজটা কমপ্লিট করে নিজে শাড়ি পড়ি।
— আচ্ছা আপা,নীরুর প্রতি তোর ভালবাসা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে দেখছি।
— হ্যাঁ কারণ ও যে আমার রক্ত।
— মানে?
আমি তিশুকে সব লুকানো কথাগুলো বলে দিলাম। কারণ ওর ও জানা প্রয়োজন নীরু আমাদের বোনের মেয়ে।আমার কথা শুনে তিশু গিয়ে নীরুর পাশে বসে এক পলকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
— মণি?
–………
— কি হয়েছে মণি?
— কিছু না মা।চলো আমরা বাহিরে যাই মেহেদি পড়তে হবে না?
— হ্যাঁ আমি পড়ব তো তোমাদের সাথে।

দুই বোন নুরীর দুই হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেলাম।বাহিরে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমাদের ভেতরের পরিবেশ যতটা শান্ত ছিল বাহিরের পরিবেশ ঠিক ততটাই অশান্ত।
বাহিরে সবার মুখে নানারকম কথা।
আমরা বাহিরে আসতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।হয়তো সবাই এটা দেখেই অবাক যে আমার সাথে যার বিয়ের কথা ছিল,তার এখন আমার ছোট বোনের সাথে বিয়ে।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।আমার বিয়ে ভেঙে গেছে,সেই বিয়ে আমার বোনের সাথে।আমি আবার শাড়ি পড়ে সেজে বোনের সাথেই আসছি মেহেদি পড়তে এটা আসলেই আশ্চর্যজনক বিষয় সবার কাছে।
মেহেদির অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল,কিন্তু সবার আশ্চর্য হওয়া শেষ হলো না।

সকাল হতে না হতেই সারা পাড়া রটিয়ে গেল নবনীতার শ্বশুড়বাড়ির লোক নবনীতাকে রেখে তুশিকে পছন্দ করেছে বিয়ের আগের দিন রাতে।বাড়ির আশেপাশের মানুষগুলো যেন আমাদের বাড়ি। কানাঘুষা শুধু একই কথা শোনা যাচ্ছে।আমিও মা বাবাকে বলে দিয়েছি আমি যেহেতু এসব নিয়ে কিছু ভাবছি না তারাও যেন কারও কথা না কানে নেয়।কারণ মানুষ কথার আঘাতে খু/ন করে ফেলতে পারে।এটা আসলে আমার থেকে ভাল কেউ জানে কি না জানি না।
বিয়ে বাড়ির কাজ চলছে কিন্তু কেমন যেন প্রকৃত আমেজটা নেই সবার মাঝে।আমাকেই গিয়ে সবাইকে উচ্ছ্বসিত করতে হচ্ছে।
নীরু রাতে বাসায় যায় নি।আঙ্কেল চলে গিয়েছিলেন।
আঙ্কেল হয়তো বাসায় গিয়ে নিহান স্যারকে জানিয়েছে সবকিছু,রাতে দেখলাম অনেকবার ফোন দিয়েছিলেন।আমি আর কলব্যাক করার কথা ভাবি নি।সেদিনের কথা মনে পড়লে আমার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।কি বাজে ব্যবহার টাই না করেছে আমার সাথে!!
এত এত কথার মাঝে প্রায় দুপুর হতে চলল,বড় বোন হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আমার।
আমি নীরুকে নিয়ে বাহিরে একটু দাঁড়িয়ে আছি,এমন সময় মা ডাকলো।মার পিছে পিছে ঘরে গেলাম।
— একটা কথা ছিল নবু।
— হ্যাঁ মা বলো।
— নিজের হবু বর,শ্বশুড়বাড়ি তো বোনকে দিয়ে দিলি…
— মা আর একবার ও এই কথা শুনতে চাই না তোমার মুখে।
— আচ্ছা শোন যা বলতে চাচ্ছি…
— হ্যাঁ বলো,তুশির জন্য কোন গহনা বানানো হয় নি,ওরা নিজের থেকে যা দিবে ঠিক আছে কিন্তু আমরা যদি একেবারেই কিছু না দেই তাহলে কেমন হয়?
— গহনা তো অনেক দেখালে সেদিন।
— ওগুলো তোর জন্য রেখেছিলাম।
— এখন যেহেতু তিশুর বিয়ে, তুমি ওকে সব দিয়ে দিবে।
— ওত দিতে হবে না,আমি তোকে দেখাচ্ছি।
— মা ওখানে যে রিং ছিল ওটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল,ওটা শুধু আমাকে দাও।বাকি সবগুলো তুশিকে দিও।
— সেটা কি করে হয় নবু?
— কেন হয় না?ও আমার বোন না?
— তোর জন্য পরে কি করব!!
— আমার কিছু লাগবে না।
— তুই বললে তো হবে না রে মা,পাড়া প্রতিবেশী, শ্বশুড়বাড়ির লোকজন এগুলো নিয়ে কথা বলে।আমি যা ভাল বুঝব,করছি।তুই এখন যা।
— হুম।

ঘর থেকে বের হতেই খেয়াল করি গেইটে নিহান স্যার।আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।নীরু গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।নিহান স্যার নীরুকে হাত ধরে নিয়ে আমার সামনে আসলেন।কিছু বলবেন তখনি মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম বাবা।কেমন আছো?তোমাদের তো গতকাল থেকে এখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
— আসলে আন্টি অফিসে কাজের অনেক প্রেশার।দেখাশোনা করে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।

মা আর উনি কথা বলছেন,আমি পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।উনাকে দেখতেই ইচ্ছে করছে না আমার বদমাইশ লোক একটা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here