শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ৬

0
324

#শুভ্রতায়_নবনীতা
পর্ব ঃ৬
#নবনীতা_নীরু

রাতে পড়া শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমোতে গেলাম।তুশি ও আমাকে বলল আপা আজকে কেন জানি না ভাল লাগছে না তুই কেন বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি?
— কেন রাজি হবো না? আমার জন্য বাবা মাকে বাঁচাতে পেরেছে।ওই টাকাটা যদি তখন না পাওয়া যেত তাহলে একটু ভাব তো আমাদের কি হতো?
— তাই বলে এমন একটা শর্ত দিবে?টাকা দিয়েছে ধার হিসেবে,টাকাই নিবে।তোকে কেন তার ছেলের বউ করতে হবে?
— এটা তো আমি বলতে পারব না রে বোন,এটা তো মাতব্বর চাচা বলতে পারবে।
— হয়তো তোকে অনেকদিন ধরেই পছন্দ করে রেখেছে,তাই সুযোগটা হাত ছাড়া করে নি।
— কি জানি!
— তুই কালকে থেকে মুখ ঢেকে বোরখা পড়ে বের হবি।
— আমি বোরখা পড়ে বের হই না তো কিভাবে বের হই?
— ওহ ভুলেই গেছি।আচ্ছা আপা তুই যদি এখানে বিয়ে করে নিস তাহলে তোর শশুড়বাড়ির সবাই নীরুর সাথে যোগাযোগ রাখতে দিবে তো?
— এখনও এক বছর সময় হাতে আছে তুশি, তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি সবকিছু ঠিক করে নেব,আর নীরু ও তখন বুঝতে শিখবে।
— আচ্ছা আপা,অন্য একটা মেয়ে হুবহু তোর মত দেখতে কিভাবে হতে পারে বলতো? একমাত্র জমজ ভাইবোনের চেহারায় মিল টা থাকতে পারে।

— শুনেছি পৃথিবীতে সাতজনকে একরকম দেখতে তাহলে এটা সত্যি!
— আমি না বুঝতে পারছি না,একটু মিল থাকতে পারে তাই বলে পুরোটা!!
— তা তো আমি ও ভাবি।
— আর ওই আবিরকে আমার দুলাভাই বলতে হবে?ওকে দেখলেই তো আমার ভয় লাগে।
— এবার একটু ঘুম দে তো তুশি।এতকিছু এখন ভাবলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
তুশি আচ্ছা বলে পাশ ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।আমার কেমন যেন ঘুম আসছে না। রাতে যদি ঘুম ন হয় তাহলে তো অফিসে গিয়ে ঝিমোতে হবে।
আমিও ঘুমোনোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি।মাঝরাতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি।
সকালে উঠে নামাজ শেষ করে রান্না করতে গেলাম।রান্না চাপিয়ে দিলা চুলোতে।মা এসে বললেন, আমি তোকে পরিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব করতে নিষেধ করি নি?তুই আবার আমার কথা অবাধ্য হয়েছিস কেন?
— মা তোমার শরীরটা ভাল না, তুমি একটু রেস্ট নাও,ভাল হলে পরে তুমি কাজ করো।
— কালকে শুধু একটু খারাপ লাগছিল এখন ঠিক আছি।তুই যা পড়তে বস।
— রান্নাটা সেরেই যাই।
— আবার?
— মা এত পড়তে ভাল লাগে না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে এলাম। আমাকে বিড়বিড় করে কিছু বলা দেখে আবার জিজ্ঞেস করলো কি বলছিস রে?
— তোমার মা তোমাকে মানুষ করতে পারে নি,
— তবে রে…..
আমি দৌঁড়ে আমার রুমে চলে আসি।
মাঝে কিছুদিন কেটে গেছে আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি কারণ আমার পরিক্ষা শুরু হয়ে গেছে।আজকে শেষদিন পরিক্ষার।বাহিরে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আমার সামনে মাইক্রো এসে থামলো,একদম নতুন একটা গাড়ি।গাড়ির কাচ নামিয়ে নীরু আমাকে ডাকলো।
— মানি…..
— তুমি এখানে কি করছো?
— বাবা বলেছে আজকে আমরা তিনজন ঘুরতে যাব।
— বাবা বলেছে?
— না না আমি বাবাকে রাজি করিয়েছি।তুমি তো অনেকদিন আমাদের বাসায় যাও নি,খুব মিস করছিলাম।তাই বাবাকে বলে রাজি করিয়েছি।সেদিন একটু স্যারের সাথে কেমন করে যেন কথা বলা হয়ে গিয়েছিল।আমি কি করব,এক্সাম দিয়ে আবার অফিস করা যায় নাকি।অফিসে নিজের মন মত কিছু করতে পারি না সবসময় যেন চোখে চোখে রাখেন উনি আমায়।আমি কাজ ঠিকমতো করলেই তো হলো,কাজের বাহিরে আমি কি করব না করব এটা দেখা তার দেখার বিষয় না।
নীরু আমাকে ডেকে গাড়িতে উঠতে বলল।আমিও গিয়ে পিছনের সিটে বসলাম।সামনে থেকে নিহান স্যার বলে উঠলেন — নীরু আমি তোমাদের ড্রাইভার নাকি?তুমি ও সামনে এসো আর তোমার মানিকেও সামনে এসে বসতে বলো।
— নীরু তুমি তোমার বাবাকে বলে দাও একাই সামনে থাকতে।আমরা পিছনেই ঠিক আছি।
— নীরু আমি কিন্তু গাড়ি স্টার্ট দিব না বলে দিলাম।(স্যার)
— উফফ তোমরা নিজেরাই কথা বলে যাচ্ছো আর শুধু শুধু আমাকে মাঝখানে টানছো।চলো তো মানি তুমি সামনের সিটেই বসবে আমাকে তোমার কোলে নিয়ে বসাবে।
অতঃপর এত জোড়াজুড়িতে সামনেই বসতে হলো।প্রথম প্রথম ভালোই ভেবেছিলাম, আমি কি জানতাম নাকি উনি এত কড়া মেজাজের!অফিসে আঙ্কেল থাকলেই ভাল হতো।এই লোকটা সারাদিন আমাকে খাটিয়ে মারে।এইতো সেদিন সাইফ ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলছিলাম ওমনি বেল বাজিয়ে কেবিনে ডেকে পাঠিয়ে ফাইল চেক করতে বসিয়ে দিলেন।আবার এখন তো তাকে আমার নিজেরই কফি বানিয়ে দিতে হয়।পিএ এর সাথে সাথে যেন রাধুনীও হয়ে গেছি।
সেদিন রেস্টুরেন্টে মিটিং ছিল,পুরোদিন আমাকে এটা ওটার জন্য ঘুরিয়েছেন শুধু।যেটার কোন প্রয়োজনই নেই তার জন্য ও আমাকে চাপে রাখেন।কেন যে এতটাকা স্যালারি দেখে লোভে পড়ে এক বছরের এগ্রিমেন্টে সাইন করেছিলাম আল্লাহ জানে।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল,সামনে তাকিয়ে দেখি কি সুন্দর একটা জায়গা।ইশ এত সুন্দর জায়গা দেখে ছবি ওঠার লোভ সামলাবো কি করে?নীরু তো আমার ছবি ও তুলে দিতে পারবে না।সেলফি আর কত গুলো তুলবো!!থাক এই জামাকাপড়ে আর ছবি না ক্লিক করি,একদিন আমি আর তুশি আসব।দুজনই সেম কালার শাড়ি পড়ে ফটোশ্যুট করব।
— গাড়িতেই কি বসে থাকবেন??
— গাড়িতে বসে থাকব কেন?আপনি অনুমতি দিলেই আমরা নামতে পারি।আপনার অনুমতি লাগবে স্যার।
— নামুন।
আমরা গিয়ে একটা ছাউনির নিচে বসলাম।জায়গাটা আসলেই ভীষণ সুন্দর।চারপাশে বড় বড় বোনের ছোপ।মাঝে মাঝে রঙিন ছাউনি,পাশে একটা বড় পুকুরের মত,পানির ওপর উচু করে রেস্টুরেন্ট রয়েছে।নীরু ও মনে হয় নতুন এসেছে এখানে,চারপাশটা মোহময় চোখে তাকিয়ে দেখছে।স্যারের একটা ফোন আসায় উনি উঠে একটু দূরে গেলেন।
— নীরু! তুমি ও কি এখানে প্রথম এসেছো?
— না মানি,আমি আর বাবা প্রায়ই এখানে আসি।এটা নাকি বাবা আর মার খুব পছন্দের জায়গা।
— ওহ আচ্ছা।কিছু খাবে না?
— হ্যাঁ আমি পাস্তা খাব।
— আবার পাস্তা?আজকে পাস্তা বাদ দে না মা।চল আজকে ফুসকা খাই।
— ফুসকা আনহায়জেনিক তুমি জানো না?
— তোমার বাবা বলেছে তাই না?
— হ্যা।
— মাঝেমাঝে টেস্ট করে দেখতে হয়।আমি তো কত খাই,আমার কিছু হয় না।তুমি খাবে আজকে আমার সাথে?
— বাবা বকবে মানি!!
— আমি দেখে নিব,তুমি খাবে কি না বল?
— খুব টেস্টি?
— অনেক।তুমি যখন টক মিশিয়ে ফুসকাটা মুখে নিবে না?তখন মনে হবে পৃথিবীর সেরা খাবার ফুসকা।
— সত্যি?আমার পাস্তার থেকেও ভাল খেতে?
— হ্যাঁ, তবে আর বলছি কি।খাবে নাকি?
— হ্যাঁ মানি খাব,তোমার কথা শুনে আমার তো খুব খেতে ইচ্ছে করছে।
— চলো তাহলে হয়ে যাক!
— হয়ে যাক!!
— মামা দুইটা ফুল প্লেট ফু…….
— কি অর্ডার দিচ্ছেন?(নিহান স্যার)
এই যাহ,স্যার চলে এলো?এবার কি ফুসকা খাওয়া হবে?
— স্যার এখানে কি শুধু বসে থাকার জন্য নিয়ে এসেছেন?আমাদের কিছু খাওয়াবেন না?
— এতটুকু জ্ঞান আমার আছে মিস নবনীতা।
মামা তিনটা চিকেন স্টু দিবেন তো।
আমি আর নীরু উনার কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকিয়ে বলি,
— কিহ! চিকেন স্টু?
— কেন আর কি খাবেন?
— বাবা ফুসকা খাব।
— না না এখানকার ফুসকা ভাল না।
— আমি আজকে ফুসকাই খাব।অন্যকিছু খাব না, খাব না, খাব না।
— মাম,এরকম করে না।তুমি জানো ফুসকার মধ্যে ইয়া বড় বড় পোকা থাকে।
— মোটেও না,ফুসকার মধ্যে এসব কিছুই থাকে না।তোমার বাবা মিথ্যে কথা বলছে নীরু।
কথাটি বলতে উনি আমার দিকে তাকালেন।কিন্তু কিছু না বলে অবাক করিয়ে দিয়ে তিন প্লেট ফুসকার অর্ডার দিলো।ফুসকা তো খাব আমি আর নীরু,তাহলে তিন প্লেট কেন?তার মানে স্যার ও খাবে?থাক বাবা আর কিছু বলব না যদি আবার আমাদের খাওয়া ও বন্ধ হয়ে যায়!
মিনিট পাঁচেক পর টেবিলে চলে এলো তিন প্লেট ফুসকা।এক পাশে সাজানো ফুসকা আর একপাশে রাখা আছে টক। ইশ এসব দেখলেই মুখে পানি চলে আসে।
ফুসকা আসার সাথে সাথে একটায় টক দিলে আস্ত মুখে পুড়ে নিলাম,টকের স্বাদ পেতেই সাথে সাথে চোখ বন্ধ হয়ে গেল।এখন আমার মনে হচ্ছে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সেরা খাবার ফুসকা।আরেকটা খাব তখনি দেখি নীরু আর স্যার দুজনই তাকিয়ে আছে,লজ্জা পেয়ে গেলাম।খাওয়ার সময় এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে নাকি!
— কি হয়েছে নীরু?
— আমি এত বড় ফুসকা কিভাবে মুখে নেব মানি?
— তুমি এক কাজ কর ফুসকাটা ভেঙে অর্ধেক করে টকে ভিজিয়ে খেয়ে নাও।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
নীরু খাওয়া শুরু করলো,সাথে আমিও।খেতে খেতে প্লেটটা কখন যে ফাঁকা হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি।এখানকার ফুসকা একটু বেশিই টেস্টি।স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম স্যার আরেক প্লেট দিতে বলেন না প্লিজ।স্যার ও আরেক প্লেট এর অর্ডার দিয়ে দিলেন।অতঃপর ফুসকা খেয়ে মনে প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছি।

চলবে…..
নেক্সট,নেক্সট কমেন্ট না করে বড় বড় সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন সবাই।কমেন্ট পড়তে ভালো লাগে🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here