শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ৯

0
367

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
#পর্ব ঃ ৯

আমি আর রাসেল ভাইয়া পাশের টেবিলে বসে কথা বলছিলাম।
— আপু আজকের কাজটা আমরা পাবো তো?যদি না পাই কি যে হবে।
— ভাইয়া ভয় দেখাবেন না।..আমার তো দুই প্লেট ফুসকা আটকে আছে..(শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বললাম)
— দেখা যাক কি হয় আল্লাহ আল্লাহ করে কাজটা যেন আমরাই পেয়ে যাই।
আমরা বসে আল্লাহকে স্মরণ করছি।এমন সময় খেয়াল করলাম যারা ডেকেছিলেন তারা বের হয়ে গেলেন।কি হলো কিছুই তো খেয়াল করলাম না।স্যার চুপ করে বসে আছে ওখানেই তার মানে কি কাজ আমরা পেলাম না?আমি আর রাসেল ভাইয়া স্যারের দিকে এগোলাম।
— স্যার?
–হুম
— কি হয়েছে স্যার?
— কি আর হবে?
— মানে স্যার?আমরা কাজটা পাই নি?
— কাজ তো পেয়েছি কিন্তু এখন যে অফিসের সবাইকে খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে।বসে বসে এটাই ভাবছি যে কোথায় যাওয়া যায়!
— কি বললেন স্যার?তার মানে আমরা কাজটা পেয়ে গেছি?
— হ্যাঁ পেলাম তো।
— কংগ্রাচুলেশনস স্যার(রাসেল)
— থ্যাংক ইউ মি. রাসেল।
— স্যার কংগ্রাচুলেশনস।
— হুম,আপনি আমায় সাহায্য না করলে কাজটা পেতাম না।তাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
— এটা আমার দায়িত্ব স্যার।
— মি. রাসেল আপনি অফিসে গিয়ে সবাইকে রেডি থাকতে বলবেন আজকে আমরা সবাই ঘুরতে যাব।
— ওকে স্যার,আমি আসছি তাহলে।
— জ্বী আসুন।

— তো চলুন, ফোন নিবেন না?(স্যার)
— স্যার আজকে তো আমার ঈদ!
— কিভাবে?
— এই যে আজকে এত বড় একটা কাজ পেয়ে গেলাম,ফোন আবার দুই প্লেট ফুসকা।
— ঠিক আছে চলুন।
— স্যার অফিসের সবাইকে যেহেতু নিয়ে যাবেন,নুরীকেও নিয়ে যাই আমরা।
— ঠিক আছে চলুন এবার।

আমরা চলে গেলাম ফোনের দোকানে।স্যার নিজের পছন্দ মত একটা ফোন গিফট করলেন।ফোনটা আসলেই ভীষণ সুন্দর।
— পছন্দ হয়েছে?
— ভীষণ…
— সত্যি?
— হুম,স্যার আপনি বাহিরে একটু দাঁড়াবেন?আমি সামনের দোকানটা থেকে শাড়ি কিনব দুইটা,একটা আমার জন্য আরেকটা বোনের জন্য।আমরা সেদিন যেখানে গিয়েছিলাম ওখানে আমরা দুজন শাড়ি পড়ে যাব।
— আমি আপনার সাথে দোকানে গেলে অসুবিধা হবে?
— কি যে বলেন না স্যার,আমি ভাবলাম আপনার সমস্যা হবে তাই…..
— অনেক ভাবা হয়েছে এখন চলুন।
ফোনের দোকান থেকে বের হয়ে সামনে শাড়ির দোকানে চলে গেলাম।আমার আর তিশুর জন্য আকাশি রঙের শাড়ি আর আম্মুর জন্য একটা শাড়ি নিলাম।কিন্তু শাড়িগুলোর দাম স্যার আমাকে কোন ভাবেই দিতে দিলেন না।আমরা বেরিয়ে যাব এমন সময় স্যার পিছন থেকে ডাকলেন।
— নবনীতা?
— জ্বী স্যার?
— এই শাড়িটা সুন্দর না?
— হ্যাঁ সুন্দর।এটাও নিয়ে নিন।আমার আর নীরুর সাথে যেদিন বের হবেন সেদিন এটা পড়বেন।

কথাটা শুনেই স্যারের দিকে তাকালাম,উনার সাথে আর নীরুর আবার বের হওয়ার চান্স আছে নাকি!
স্যার আমার তাকানোকে গুরুত্ব না দিয়ে শাড়িটা কিনে আমার হাতে দিয়ে বলল চলুন,নীরু রেডি হয়ে বসে আছে।
স্যারের পিছু পিছু আমি ও বের হয়ে চলে এলাম।বাড়ি থেকে নীরুকে নিয়ে অফিসের দিকে চললাম।
অফিসের সামনে গিয়ে দেখি অফিসের গাড়িতে সবাই রেডি বের হওয়ার জন্য।পিকনিকে যাওয়ার মত সবাই রওয়ানা দিলাম।এরকম আনন্দ কখনো হয় নি।
আজকের জায়গাটা নতুন জায়গা,ভীষণ সুন্দর জায়গাটা।এত সুন্দর সুন্দর জায়গার খোঁজ স্যার পায় কোথা থেকে!!সবগুলো জায়গায় কি উনি আগে উনার ওয়াইফকে নিয়ে আসতেন?তাহলে তো উনি খুবই ভাগ্যবতী ছিলেন।

আমি আর নীরু গিয়ে একটা টেবিলে বসলাম।নিহান স্যার অন্যদের সাথে গিয়ে বসলেন।
— মানি? আজকে আমরা কি খাব?
— চটপটি খাবে?
— আচ্ছা।
— ফুসকা, চটপটি দুটোই নেই কি বল?
— আচ্ছা নাও।
ফুসকা আর চটপটি দুটোরই অর্ডার দিলাম,কিছুক্ষণের মধ্যে চলেও এলো।আমি আর নীরু মনের সুখে খেলাম।
সবাই ঘুরাফেরা,খাওয়া দাওয়া করে যে যার বাড়ি ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে অনেক ক্লান্ত লাগছিল তাই মাকে ডাকতে নিষেধ করে বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে যাই।

প্রতিদিন অফিস আর বাড়ি এভাবেই চলতে থাকে আমার দিন।তবে যত বেশি দিন চলে যাচ্ছে আমি নিহান স্যারের অন্য একটা রুপ দেখতে পাচ্ছি।

নিহান স্যার ধীরে ধীরে অতি নরম স্বভাবের মানুষ হয়ে গেছেন।আগের মত আর কারও সাথে গরম গরম কথা বলেন না,সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলেন।
যেকোন কিছু করতে গেলে উনি আমার মতামতটা আগে শুনেন,তারপর উনার যেটা ভাল মনে হয় সেটা করেন।মাঝে মাঝে কাজ করার সময় অনুভব করি স্যার এক নজরে আমাকে দেখছেন অথচ তাকালেই দেখি উনি কাজে ব্যস্ত।হয়তো এটা আমার মনের ভুল।
নীরু ও আমাকে দিনের পর দিন ভালোবেসেই যাচ্ছে।
স্যারের উপহার দেওয়া শাড়িটি আজ ও আমার পড়া হয় নি। তিশু একদিন শাড়িটা দেখে পড়তে চেয়েছিলো কিন্তু তখন আমি হিংসুটের মত আচরণ করেছিলাম।আমার সবকিছুই তো আমার বোন আর আমার পরিবারের জন্য,তবুও কেন এত পছন্দ করা শাড়িটি আমি তুশিকে দিতে পারি নি!কেন মনে হচ্ছিলো এটার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারব না?তাহলে কি আমি নিহান স্যারকে……
না না না এ আমি কি সব ভাবছি, উনি আমার অফিসের বস,উনি ম্যারিড,বাচ্চা আছে আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে,যার সাথে বিয়ে হবে সে আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি তাকে কিভাবে ঠকাবো!
অফিসে বসে আছি, প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু স্যার এখনও আসছে না।স্যার তো এত দেরি করে না!স্যারের কিছু হলো না তো আবার!স্যারকে কি একটা কল দেওয়া উচিৎ? উনি তো অফিসের বস প্রতিদিন নাও আসতে পারে।
কিন্তু উনি তো না বলে অফিস বাদ দেয় না।একটা কল দিয়েই ফেলি,যা হবে পরে দেখা যাবে।
রিং বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।বারবার কল দিয়েই যাচ্ছি।এক পর্যায়ে ফোন রিসিভ হলো।
— আসসালামু আলাইকুম স্যার।আজকে আসবেন না?
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। না নবনী আমি আজকে আসতে পারব না।(খুব ভারি কন্ঠে)
— স্যার কন্ঠ এমন লাগছে কেন অসুস্থ নাকি?
— জ্বর এসেছে,ঠিক হয়ে যাবে।
— বাসায় কেউ নেই?একটু জলপট্টি করে নেন,দেখবেন একটু ভালো লাগবে।
–………
— স্যার?
নাহ ওপাশ থেকে আর কোন সাড়াশব্দ আসছে না।আমার এত কেন চিন্তা হচ্ছে স্যারের জন্য?স্যার ঠিক আছে তো!আমার কি বাসায় গিয়ে দেখা উচিৎ? হ্যাঁ তাই করি কারণ স্যারের রুমে তো কেউ যায় না তেমন বেচারা অসুস্থ হয়ে গেলোই নাকি!
অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা স্যারের বাড়ি চলে এলাম।বাড়িতে ঢুকে জানতে পারলাম স্যার নিজের রুমেই আছেন।আমি আর একমুহূর্ত দেরি না করে স্যারের রুমে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি স্যার মাথা খাট থেকে মেঝের দিকে দিয়ে শুয়ে আছেন।আমি এগিয়ে গেলাম ওদিকে।
— স্যার?
——
— স্যার?
——
আমি এবার গিয়ে স্যারে কপালে হাত দিয়ে চমকে গেলাম স্যারের গায়ে তো ভীষণ জ্বর।উনি কি সেন্সলেস হয়ে গেছেন? আমি দৌড়ে বাহিরে এসে সবাইকে ডাকলাম।একজন ডাক্তারকে কল দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার চলে এলো।স্যারের চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল।
— এই ওষুধগুলো এনে খাবার খাওয়ার পর খাইয়ে দিবেন।রাত পর্যন্ত দেখুন কি হয়,যদি ঠিক না হয় তাহলে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন।আর সবসময় উনার সাথে একজন অবশ্যই থাকবেন।আমি তাহলে এখন আসছি।
— জ্বী।
কাজের লোকগুলোর মধ্যে একজন বলল আপনিই থাকেন স্যারের কাছে,বড় স্যার তো নীরু মামুনিকে নিয়ে স্কুলে গেছে আসলে পাঠিয়ে দিব।আমি উনাকে কিছু খাবার দিয়ে যেতে বললে উনি কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার দিয়ে গেলেন।আমি ওয়াশরুম থেকে বালতিতে করে পানি এনে উনার মাথায় দিতে শুরু করলাম। খেয়াল করলাম উনি শীতে কাপছেন।আমি পানি দেওয়া শেষ করে তোয়ালে দিয়ে মাথাটা মুছে দিলাম।উনার শরীরটা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারলে বেটার হতো কিন্তু আমি তো এটা করতে পারব না তাই দুজন পুরুষ মানুষ লাগবে।বাড়িতে কাজ করা দুই চাচাকে ডেকে কাজটা করিয়ে নিলাম।উনারা চলে গেলে আমি স্যার ধরে বসানোর চেষ্টা করলাম।চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই উনি আমার হাতটা উনার দুইহাতের মধ্যে নিলেন।
— প্লিজ রনিতা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। রনিতা,রনিতা তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।(স্যার এই কথাগুলো বলেই যাচ্ছিলেন)
অতঃপর বুঝলাম স্যার এখনো উনার উয়াইফকে অসম্ভব ভালোবাসেন।

চলবে……

সুন্দর সুন্দর কমেন্ট চাই🤐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here