শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ৮

0
288

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
পর্ব ঃ ৮

সেই মেয়েটি আবার রুমে ঢুকলো।
— চলো বউমণি,যে বাড়িতে কিছুদিন পর আসবে সে বাড়ি একটু ঘুরে দেখে যাবে না?চলো..
— আচ্ছা তুমি কে গো?(তুশি)
— আমি মিখি,আবির ভাইয়ার ছোট বোন।আমরা এক ভাই এক বোন।
— আমি তুশি/তিশু সবই বলতে পারো কারণ দুইটা নামেই সবাই ডাকে। নবু আপা আদর করে তিশু বলে। আমি নবু আপার ছোট বোন।
— সে তোমায় দেখেই বুঝেছি।আচ্ছা চলো এখন।
আমি আর তুশি মেয়েটার পিছুপিছু চললাম।ওহ মেয়েটার নাম মিখি বলল তো।
পুরো বাড়ি ঘুরে দেখানোর পর মিখি বলল
— এসো এবার ভাইয়ার ঘর দেখবে এসো।ভাইয়া যদি জানে আমি তোমাকে তার ঘর দেখিয়েছি তাহলে ওখান থেকেই পারলে ধরে মারবে।দেখলে না চাবি আম্মার কাছে ছিল।
— কেন?
— দেখেই বুঝতে পারবে এসো ভেতরে এসো।
ভেতরে গিয়ে মিখি ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিলো।
আমি ঘরের চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলাম।তিশু এখনো অবাক চোখে ঘরটা দেখছে।ঘরে একটা খাট, পাশে একটা পড়ার টেবিল চেয়ার,পায়ের সাইডে একটা বড় আলমারি আর ছোট খাটো কিছু জিনিস।তবে দেখার বিষয় হচ্ছে উনি আমার ছবি আর লাল,নীল,সবুজ,গোলাপি,কমলা রঙের চিরকুট সুতোয় আটকে রেখেছেন।উনি আমার ছবি এভাবে তুললেন কখন আর কিভাবে!!
— দেখেছো বউমণি?দেখে অবাক লাগছে না?
— হ্যাঁ, ভাবছি উনি এরকম কখন করলেন!
— বউমণি তুমি চাইলে কিন্তু চিরকুটগুলো পড়ে দেখতে পারো।আমাদের কারোও দেখার অধিকার নেই।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম।ছবি আর চিরকুটে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি।

–“মাথায় ওরনা দেওয়ার পরও যখন সামনের পিচ্চি চুলগুলো যখন উড়ে তোমার চোখে মুখে আচরে পড়ছিল আর তুমি সেগুলো বারবার কানে গুজে নিচ্ছিলে, তখন আমার হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছিল।”

— “আচ্ছা আমি যে তোমায় লুকিয়ে লুকিয়ে এত দেখি তোমার কি রাগ হয় না!!”

— “আমার না খুব ইচ্ছে করে ভোরের আলোয় তোমার ঘুমে ডুবে থাকা মুখখানা দেখার,ঘুমালে নাকি নারীকে একটু বেশিই সুন্দর লাগে!!”

— “এতদিন বৃষ্টিকে ভালো লাগতো,যেদিন তোমায় বৃষ্টিতে দেখলাম চোখ মুখ গাল বেয়ে পানি পড়ছিল সেদিন থেকে আমার স্বাদ পালটে গেছে,শুধু বৃষ্টি আর ভাল লাগে না,তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়।।”

— “কান্নামাখা চোখে সেদিন তোমায় দেখে বুকের মধ্যে উথাল-পাতাল শুরু হয়ে গিয়েছিল,সেদিন বুঝলাম প্রিয় মানুষটির চোখের পানি সহ্য করা যায় না।”

–“** নবনীতা **
আহ্ কি দারুণ নাম,এই নামটি আমার হৃদয় হরণের দায়ে দায়ী থাকবে।”

— “ভালোবাসি নবনীতা!! ”

–“আমি যদি একদিন হঠাৎ করে সামনে এসে বলি যে তোমায় ভালোবাসি, তবে কি তুমি আমায় গ্রহণ করবে?”

— ” আমার পড়াশোনা শেষ হলেই আমি বাড়িতে বলে দিব তোমাকে চাই,আমি আমার নবনীকে চাই”

— “ইদানীং তোমাকে শাড়িতে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে”

— ” আমি যে প্রায় প্রতিদিন তোমার বাড়ির সামনে তোমাকে একটা দেখতে যাতায়াত করি তুমি কি খেয়াল কর নবনী”

এরকম অনেকগুলো চিরকুট আমি পড়ে ফেললাম।উনি আমার অগোচরে এতটা খেয়াল করেছেন আমাকে।কেউ এভাবেও লিখতে পারে ভেবেই অবাক হচ্ছি।
–আপা বাড়ি যাবি না?সন্ধ্যা হয়ে গেল চল(তুশি)
— হ্যাঁ হ্যাঁ চল।মিখি আমরা তাহলে আসছি কেমন?
— তুমি কিন্তু চাইলেই আমাদের বাড়ি মাঝেমাঝে আসতে পারো।সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।আজকের মতো আসছি।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো।আমি আর তুশি ওজু করে নামাজে গিয়ে দাড়ালাম।
নামাজ শেষ করে বসে আছি দুবোন।
— চিরকুট গুলোতে কি লেখা ছিল রে আপা?
— যা লেখা ছিল ছিল তোর এত জানতে হবে কেন?
— আবির জি দিলকি আন্দার ঘুচ গায়া কিয়া?
— তুশি,আমি কিন্তু মাকে ডাকব এখন,মার খাবি বলে দিলাম।
— ডাক না ডাক, আমিও মাকে বলব দেখ মা, ও বাড়ি থেকে আসার পর তোমার মেয়ে তার হবু বরের প্রেমে পড়ে গেছে।
— তুশি এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মার খাবি বলে দিলাম।যা তো যা, তুই তোর রুমে যা।
— এটাই এখন আমার ঘর,তুই শশুড়বাড়ি চলে যা।
হঠাৎ মা চলে এলো ঘরে।এসে বিছানায় বসলেন।
— এসেই দুজন কি নিয়ে কথা বলছিস?আচ্ছা নবু ও বাড়ির সবাই কেমন রে?
— প্রথম দিনে যতটুকু মনে হলো মানুষগুলো ভালোই।
— মা জানো,যাওয়ার পর থেকে তো সবাই আপাকে নিয়েই মেতে ছিল,সবাই এত্ত ভালো!
— ভালো হলেই ভাল।আচ্ছা তোরা থাক,তিশু পড়তে বস মা।
— ঠিক আছে।

সকালে একটা রিকশা নিয়ে অফিসে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি আমার টেবিলে ফাইল দিয়ে ভর্তি। নিহান স্যার এখনও আসেন নি অফিসে।আমি বসে বসে ফাইলগুলো চেক করছিলাম।
কিছুক্ষণ পর নিহান স্যার এসে নিজের কেবিনে ঢুকলেন।প্রায় আধাঘন্টা পর আমার ডাক পড়লো।
— মে আই কাম ইন স্যার?
— ইয়েস কাম নি।
— স্যার আমায় ডেকেছিলেন।
— যে কাজ করছিলেন ওটা বাদ দিন,এখন এই ফাইলটা চেক করে আমার কাছে নিয়ে আসুন।বিকেলে আমাদের একটা প্রজেক্ট ডিল করার কথা আছে।পছন্দ হলে কাজটা হবে,একটু প্লিজ ভালো করে চেক করে নিয়ে আসবেন, কোটি টাকার কাজ এটা।
— অবশ্যই স্যার,আমি এখনি দেখে দিচ্ছি আপনি চিন্তা করবেন না কাজটা আমরাই পাব।
— বলছেন?
— হ্যাঁ স্যার বলছি,আমার কথা মিলিয়ে নিবেন।
— আপনার কথা যদি সত্যি হয়,আমরা যদি কাজটা পেয়ে যাই তাহলে আরও দুই প্লেট ফুসকা আপনার জন্য বরাদ্দ রইলো।
— ঠিক আছে স্যার।
ফাইলটা নিয়ে আমি বের হয়ে নিজের জায়গায় চলে এলাম।এসে মন দিয়ে চেক করছি,কিছুক্ষণ পর নিহান স্যার এসে আমার টেবিলে আরেকটা ফাইল রাখলেন।
আমি তাকিয়ে দেখি উনার হাতে দুইটা কফি মগ।
— এই ফাইলটাও চেক করবেন,এটাও কাজে লাগতে পারে।
— জ্বী স্যার আমাকে একটু সময় দেন,আমি দেখে দিচ্ছি।
— দুপুর পর্যন্ত আপনার সময়।
— এত সময় ও লাগার কথা না।
— এই নিন কাজ করুন আর কফি খান।কফি বানাতে গিয়ে ভাবলাম আপনার জন্যও এক কাপ নিয়ে আসি।
— স্যার আপনি আবার আমার জন্য আনতে গেলেন কেন?
— ওই যে বললাম,আমার জন্যই বানাচ্ছিলাম,তাই ভাবলাম…
— ধন্যবাদ স্যার।
ছুটি কাটিয়ে আসার পর মনে হচ্ছে নিহান স্যার একটু বেশিই পরিবর্তন করেছেন নিজের।আগে কত ছোট খাটো বিষয়ে রেগে যেতেন,এক কথা দুবার বলতে পছন্দ করতেন না অথচ আজ কত ভাল করে কথা বলছে।আমার এখান থেকে উনি সব ইমপ্লয়ির কাছে গিয়ে কাজ দেখছেন আর কথা বলছেন।

দুপুরে স্যারের সাথে বের হতে হলো, অফিসে আসার কথা ছিল ক্লায়েন্ট এর কিন্তু তারা ক্যাফেতে ডেকেছে।তাই স্যার, রাসেল ভাইয়া আর আমি যাচ্ছি।স্যার আর রাসেল ভাইয়া সামনে বসে আছে,আমি পিছনে বসে ফোন ঘাটাঘাটি করছিলাম।এমন সময় স্যারের গলা শুনে স্যারের দিকে তাকিয়ে বলি-
— কিছু বললেন স্যার?
— এখনও কিছু বলি নাই,বলার জন্য ডাকলাম।কিছু করছিলেন?
— না স্যার বলুন।
— আপনার তো অফিস থেকে ফোন পাওয়ার কথা,মিটিং সেরে আসার সময় আপনি আমার সাথে শপে যাবেন।
— স্যার মাস শেষ হতে তো এখনো দুইদিন বাকি।আগামী মাসে দেওয়ার কথা তো।
— যখন দেই,দেওয়া তো লাগবেই,আজকে যেতে কি আপনার কোন সমস্যা?
— না না স্যার,কোন সমস্যা নেই।।

কিছুক্ষণ পর আমরা ক্যাফেতে পৌছে গেলাম।আগে থেকেই ক্লায়েন্ট অপেক্ষা করছিল।
— আসসালামু আলাইকুম। স্যরি মি.রাজ অনেক দেরি করিয়ে ফেললাম।(নিহান স্যার)
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কি যে বলেন না নিহান সাহেব।আসুন বসুন।

উনাদের মধ্যে প্রজেক্ট নিয়ে কথা শুরু হয়ে গেল।আমি শুধু মনে মনে বলছি আল্লাহ দুই প্লেট ফুসকা যেন মিস না যায়,একটু দেখো প্লিজ..

চলবে…….

গল্পের পজেটিভ,নেগেটিভ কমেন্ট চাই।মানে কারও কি খারাপ লাগছে?
মাঝে বানান ভুল যাচ্ছে আমি রিচেক দেওয়ার সময় পাচ্ছি না।
কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here