#ভুল শেষ পর্ব
#jannat_Nur
পানির ঝাপটা পেয়ে রফিক মিয়া জ্ঞান ফিরে আসলো। এসআই সুমন আহমেদ তার সামনে চেয়ার টেনে বসলেন, রফিক মিয়াকে বললেন চাচাজি সত্যি কথা বলে দেন আপনার অনেক বয়স হয়েছে! আমার লাঠির পিটানো আর সহ্য করতে পারবেন না। একবার জ্ঞান হারিয়েছেন আরেকবার জ্ঞান হারালে কোমায় চলে যাবেন। আমি দশ বছর যাবত চাকরি করতেছি অনেক মানুষকে দেখেছি, কে অপরাধী আর কে নিরপরাধী সেটা আমি জানি। আপনি সিরাত সাহেবের মায়ের সাথে যা করেছেন সেটা কিন্তু মিথ্যা নয়, আপনার বন্ধু ফজল উদ্দিন কোর্টে সাক্ষী দিবে আপনি শুধু একা দেখেছিলেন সিরাতের মায়ের রুম থেকে কেউ বের হয়েছে! আর কিন্তু কেউ দেখেনি, কারণ আপনি ষড়যন্ত্রকারী প্ল্যানটা ছিল আপনার তাই শুধু আপনি দেখেছেন। অন্য কেউ যদি দেখতো তাহলে না হয় আপনি কিছুটা ছাড় পেতেন। সুমন আহমেদের কথা শুনে রফিক মিয়া চুপ করে আছেন। এসআই সুমন আহমেদ কনস্টেবলকে বললেন, তেল মাখানো লাঠিটা নিয়ে আসো সেটার ঘা খেলে গড়গড় করে কথা বের করবে। সুমন আহমেদের এই হুমকি শুনে রফিক মিয়া বললেন হ্যাঁ ফজল উদ্দীন যা বলেছে সব সত্যি ছিল। আমি চক্রান্ত করেছিলাম সুফিয়া বেগমের নামে, তাকে আমার খুব পছন্দ ছিল কিন্তু পাইনি বলেই আমার মনে রাগ চলে আসে। সেই রাগ থেকে তার সংসারটা তছনছ করে দিয়েছি, আমি অপরাধী আমি পাপী আমাকে জেল দেন ফাঁসি দেন যা ইচ্ছা দেন।
এসআই সুমন আহমেদ রফিক মিয়ার স্বীকারোক্তি ডায়েরিতে নোট করে নিলেন। তারপর বললেন আপনার শাস্তি আদালত দিবে আমার আর কিছু করার নেই। স্বীকার করানোর দায়িত্ব ছিল স্বীকার করিয়েছি। আগে যদি স্বীকার করতেন আপনার গায়ে হাত তোলা লাগতো না! বয়সে মুরুব্বি হাত তুলতে খারাপ লাগে, কিন্তু কি করবো বলেন পেশাদারিত্বের জন্য এটুকু করতেই হয়, নাহলে তো আপনাদের মত মানুষরা মুখ খুলে না।
সুফিয়া বেগমের অবস্থা দিনদিন উন্নতি হতে চলছে সে এখন অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে। ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে, আমেরিকা যাবো সিরাতের কাছে যাবো এগুলো বলছেন না। এর মধ্যে তুলি ঢাকায় আসলো সুফিয়া বেগমের সাথে দেখা করতে! তুলি আরো আগে আসতো দেখা করার জন্য কিন্তু অনেক অসুস্থ থাকার কারণে এতদিন আসতে পারেননি। সিরাত তার মাকে পেয়ে তুলিকে ফোন করে বলেছিল, তুলি বলেছে তা টাইফয়েড জ্বর হয়েছে খুব অসুস্থ! সুস্থ হলেই সে ঢাকা আসবে। কিছুক্ষণ আগে তুলি হসপিটালে আসছে, অবাক করা কান্ড সবাইকে দেখে না চিনলেও তুলিকে দেখে সুফিয়া বেগম বললেন, আমার সিরাত কোথায় তুমি তো জানো তুমি তাকে কোলে রাখতে। আমার সিরাত কি এখনো আমেরিকায়?
তুলিকে চিনতে পারছে এটাই বড় কথা, তাহলে সুফিয়া বেগম ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তুলি এত বছর পর সুফিয়া বেগমকে দেখে খুশিতে কান্না করে দিলেন। সুফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আপা আপনি বেঁচে আছেন এটাই আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। আপনার সাথে যে আর কখনো দেখা হবে এটা ভাবিনি, আপনার সিরাত এখন বড় হয়ে গিয়েছে আগের মত ছোট নেই! এখন তাকে কোলে নেওয়া সম্ভব নয়।
তুলির কথা শুনে সুফিয়া বেগম বললেন সত্যি আমার সিরাত বড় হয়ে গিয়েছে? কিন্তু এই কয়েকদিনে কিভাবে বড় হলো। তার বাবা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেল এই কিছুদিন আগে, তুমি মিথ্যা বলছো না তো? অন্যজনকে আমার সিরাত বলবে না।
আচ্ছা আপা আপনাকে একটা কথা বলি যখন সিরাতের তিন বছর বয়স তখন কত সাল ছিল ২০০১ সাল। আপনি বলেছিলেন আমার ছেলের তিন বছর পূর্ণ হলো, মনে আছে আপনার?
হ্যাঁ আমার মনে আছে আমার ছেলের তিন বছর হয়েছে মনে থাকবেনা, এইতো কয়েকদিন আগের কথা।
না গো আপা কয়েকদিন আগের কথা না, তখন ছিল ২০০১ সাল আর এখন ২০২২ সাল অনেক দিনের কথা।
শুনে সুফিয়া বেগম অবাক হয়ে গেল, কি বলছো এখন ২০২২ সাল, এত বছর আমি কোথায় ছিলাম, কিভাবে ছিলাম? আমার তো মনে হচ্ছে এই কয়েকদিন আগে আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে।
তখন সিরাত এগিয়ে এসে বলল আম্মু তোমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গিয়েছিল, তাই তোমার এই ২১ বছরের মধ্যে কি হয়েছে না হয়েছে মনে নেই। তুমি ২০০১ সালেই পড়ে আছো।
সিরাত ঠিক বলছে আপা, সিরাতকে নিয়ে আমিরুল ভাই আমেরিকা চলে যাবার পর তুমি পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজতে থাকো সিরাতকে। ঢাকা এয়ারপোর্টে চলে যাও সেখানে কিছুদিন থাকার পর একজন লোক তোমাকে ময়মনসিংহে মানসিক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায়, এতটা বছর সেখানে ছিল।
কি বলছো তোমরা আমার কিছু মনে থাকবে না! তাহলে আমার ছেলে কোথায়? আমার ছেলে কত বড় হয়েছে।
আপা তোমার ছেলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! যে তোমাকে অনেক চেষ্টা করে খুঁজে বের করেছে, এবং এই ছয় মাস ধরে হসপিটালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়ে তোমাকে সুস্থ করে তুলছে।
সিরাতের দিকে তাকিয়ে সুফিয়া বেগম বললেন, আমার ছেলে এত বড় হয়েছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না, এতোটুকু ছোট ছিল।
আম্মু তুমি যদি বিশ্বাস করতে না পারো এই দেখো দেয়ালে ক্যালেন্ডার ২০২২ সাল ২১ বছরে তোমার ছেলে বয়স এখন ২৪ বছর. চব্বিশ বছরের ছেলে কি এত বড় হবে না।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিরাতের চেহারা তোমার চেহারা দেখো কত মিল, সে তোমার ছেলে আমিরুল ভাই তাকে নিয়ে আমেরিকা থেকে এক বছর আগে দেশে ফিরেছে।
সুফিয়া বেগম সিরাত এর কাছে এগিয়ে গিয়ে তার গালে স্পর্শ করে বলছে আমার ছেলেটা এত বড় হয়েছে! বলতে বলতে কান্না করে দিলেন। সিরাত তার মাকে জড়িয়ে ধরছে, সুফিয়া বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করলেন। অবন্তী আর তুলির তাদের মা ছেলের মিলন দেখে খুশিতে চোখে পানি এসে গেল।
আদালত রফিক মিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে এবং ফজল উদ্দিনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু ফজল উদ্দিন গুরুতর অসুস্থ থাকার কারণে তাকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। সিরাত তাকে চিকিৎসা করার জন্য এক লাখ আশি হাজার টাকা দিয়েছে। চিকিৎসা করে সুস্থ হবার পর ফজল উদ্দিন তার শাস্তি ভোগ করবে।
হসপিটালে আরো একমাস থাকার পর সুফিয়া বেগম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন, তাকে সিরাতের উত্তরার ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হলো। আমিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমকে নিয়ে তার বাসায় যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু সিরাতের এক কথা তার মাকে নিয়ে সে ওই বাসায় কখনো যাবে না। আমিরুল ইসলাম সুফিয়ার কাছে অনুরোধ করেছিলেন তার সঙ্গে আসতে, সুফিয়া বলে দিয়েছে আমার ছেলে যা বলবে তাই হবে। জীবনের বেশিরভাগ সময় আপনাকে ছাড়া কাটিয়েছি এখন আপনাকে ছাড়া থাকতে কোন অসুবিধা হবে না। বিয়ের পর থেকে ব্যবসার কাজে আপনি বিদেশ থাকতেন, তবু কিছু বলতাম না। আপনার বাড়িতে চাকরানীর মত কাজ করতাম তারপর কি করলেন ভাইবোনের কথা শুনে মিথ্যা অপবাদে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। অন্তত আমার ছেলেটাকে আমার সঙ্গে দিয়ে দিতে পারতেন, তাকে নিয়ে আপনি চলে গেলেন। আপনাকে আমি এত সহজে কিভাবে ক্ষমা করব? আপনাকে ক্ষমা করলে পৃথিবীর অসংখ্য অপরাধী স্বামীকে ক্ষমা করা হবে, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। আমিরুল ইসলাম তার জীবনে আর কখনো সুখে থাকতে পারবেনা। স্ত্রীর সন্তানকে হারিয়ে বাকিটা জীবন তার কষ্টে কেটে যাবে।
সবকিছু ঠিকঠাক এখন অবন্তী চাচ্ছে বাসায় চলে আসবে। অবন্তী তার মামিকে বলল, মামি এখন তো আপনি সুস্থ আছেন আমি বাসায় চলে যাই! সামনে বছর পরীক্ষা দিতে হবে। এ বছর তো পরীক্ষা দিলাম না।
কিন্তু তুমি চলে গেলে আমার ভালো লাগবে না! বইপত্র এখানে নিয়ে আসো পরীক্ষার সময় যেয়ে পরীক্ষা দিও। তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগবে না সিরাত সারাদিন অফিসে থাকে, আমি একা একা কিভাবে থাকবো।
সিরাত ভাইয়াকে বিয়ে দিয়ে দেন বউ আসলে তার সাথে গল্প গুজব করে দিন চলে যাবে।
ছেলের বউ কি আর সবার কপালে ভালো জুটে।
আপনি ভালো আপনার ছেলের বউ ভালোই হবে।
তোমার প্রবলেম কি তুমি কেন চলে যেতে চাচ্ছ? দরকার হয় তোমাকে আমার ছেলের বউ করে রাখবো।
সুফিয়া বেগমের কথা শুনে অবন্তী বলল, আপনি চাইলে তো হবে না আপনার ছেলে মতামত লাগবে! সে আমাকে কাজিন ছাড়া আর কিছুই ভাবে না।
আমি বললে সে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে।
না মামি, আপনি তাকে কিছুই বলবেন না। অবন্তী মনে মনে ভাবছে আমি তাকে পছন্দ করলে কি হবে সে আমাকে পছন্দ করে না। করলে এতদিন আমি বুঝতে পারতাম।
বিকালে সিরাত বাসায় ফিরলে অবন্তী বলল আমি চলে যেতে চাই, এবার পরীক্ষা দেইনি সামনে বছর পরীক্ষা দিতে হবে। আর কয়েক মাস আছে, ভালো করে পড়বো।
ও আচ্ছা তাহলে যাও এই বছর পরীক্ষা দিতে পারলে না আম্মুকে দেখাশোনা করলে, তোমার কতটা ক্ষতি হয়ে গেল।
অবন্তী আস্তে করে বলল ক্ষতি হলে হতো, আমি চেয়েছিলাম তোমার ভালোবাসা কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই আর এখানে থাকবো না।
কবে যাবে আমি তোমাকে দিয়ে আসব।
আমাকে দিয়ে আসতে হবে না, আমি একাই চলে যেতে পারবো। এটা বলে অবন্তী সিরাতের রুম থেকে বের হয়ে আসলো। পরের দিন যখন সিরাত অফিসে গেল অবন্তী চলে আসলো তার বাসায়। চলে আসার আগে একটা চিরকুট সিরাতের রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রেখে আসলো। চিরকুটটা সিরাতের আগে সিরাতের মা দেখছে, চিরকুটটা পড়লেন সুফিয়া বেগম। তারপর সেখানেই রেখে দিলেন। সিরাত বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে যখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসলো, চিরকুটটা তার সামনে পড়
পরলো। খুলে দেখলো সেখানে লেখা,
আমি চলে গেলাম যদি কোন ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি আমার বাবার কারণে তোমার মায়ের জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে, আমি অপরাধীর মেয়ে! সে হিসেবে আমি অপরাধী, তাই আমি চাইলেও তোমার ভালোবাসা পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারবো না। মনে মনে তোমাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম, চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসবে। বাট তোমার মধ্যে আমার জন্য কোন অনুভূতি দেখতে পারিনি। কিভাবে দেখব তোমার চোখে তো আমি অপরাধীর মেয়ে, তাই আমাকে হয়তো তোমার ভালোবাসা সম্ভব না। আমারও ইচ্ছা করছিল না তোমাদের ছেড়ে চলে আসি, কিন্তু এভাবে আর কতদিন থাকবো! তাই চলে আসলাম।
চিরকুট পড়ে সিরাত তার মাকে ডাকছে, আম্মু কোথায় তুমি অবন্তী কখন চলে গিয়েছে? আমাকে তো কিছু বলে গেল না।
তোকে আর কি বলে যাবে, কাল সন্ধ্যার আগে যখন তোকে বলেছে তুই তাকে যাবার অনুমতি দিয়েছিস।
আমি তাকে অনুমতি দিয়েছি সে এক্সাম দিবে সেটা বলল, আমাদের জন্য তার লেখাপড়া ক্ষতি করতে পারেনা। এক বছর লস গেল, এটা ভেবে আমি বললাম কবে যাবে। সে আমাকে কিছু বলেনি, হুট করে চলে যাবে সেটা তো বুঝতে পারিনি। অবন্তী একটা চিরকুট রেখে গিয়েছে সেটা পড়লাম।
আমিও পড়েছি, মেয়েটা তোকে ভালোবাসে, আর যখন বলেছিল সে চলে যাবে তুই তাকে মানা করতে পারতি, বলতে পারতি তাকে মিস করবি। কিছুই বলিস নাই, সে তো ভেবে নিয়েছে তাকে তুই রফিক মিয়ার মেয়ে হিসেবে অবজ্ঞা করে যাচ্ছিস। তার বাবা যাই অপরাধ করুক অবন্তী কিন্তু অনেক নরম মনের মানুষ। মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে, আমি চাই তুই তার কাছে যা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আস আমার কাছে। আমি তোকে আর অবন্তীকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে চাই! কাল সকালে তুই নবীনগর যাবি আর অবন্তীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবি, আমি তোদের বিয়ে দেব।
আম্মু আমি এখনই যাচ্ছি সকাল হতে অনেক সময়।
কি বলছিস তুই এখনই যাবি, অনেক রাত হয়ে যাবে।
হোক অনেক রাত অসুবিধা নেই, বাসে করে যেতে পারবো।
রাত সাড়ে এগারোটা অবন্তী তার রুমে শুয়ে সিরাতের কথাই ভাবছিল, চোখটা ভিজে আসলো। কেন এই ছেলেটার প্রতি এত মায়া হয় সে তো আমাকে ভালোবাসে না এমনটা ভেবে সে কান্না করে দিল। তখনই শুনতে পারলো সিরাতে গলার আওয়াজ! অবন্তী ভাবলো সে ভুল শুনতে পাচ্ছে সিরাতকে নিয়ে এতক্ষন ভাবনায় ডুবেছিল তাই হয়তো এমন হচ্ছে। অবন্তীকে অবাক করে দিয়ে সিরাত তার রুমের ভিতর প্রবেশ করছে। অবন্তী ভাবতে পারছে না এত রাতে সিরাত তার কাছে এসেছে।
অবন্তী তুমি আমাকে কেন না বলে চলে আসলে, আর কি বলেছ তোমার বাবা অপরাধী সে কারণে আমি তোমাকে অপরাধী ভাবি? তাই তোমাকে ভালবাসতে পারব না। এটা তোমার ভুল ধারণা।
ভুল ধারণা না, সত্যি সেটাই ভাবো! কাল যখন বললাম চলে আসব তোমার ভিতরে কোন রিঅ্যাকশন দেখলাম না, ভালোবাসলে তোমার আচরণ দেখে বুঝতে পারতাম।
আমি ভয়ে তোমাকে আমার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করিনি, তুমি আমার মায়ের জন্য এতকিছু করলে এখন যদি তোমাকে আমি বলতাম ভালোবাসি! যেও না তুমি, যদি এটা ভাবতে তার মায়ের জন্য এত কিছু করলাম আর এখন সেই সুযোগে আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিচ্ছে।
তুমি কি না কি ভেবেছ, আমি তোমার প্রেমে প্রথম থেকেই পড়ে আছি। আর এখন আমি এটা ভাববো তুমি আসলেই একটা নিষ্ঠুর মানুষ।
সিরাত আর কিছু না বলে অবন্তীকে জড়িয়ে ধরল। লাইফে ফাস্ট কোন পুরুষ মানুষের স্পর্শ পেয়ে অবন্তী কেঁপে উঠেছে। সিরাতকে ছাড়াতে চেষ্টা করল কিন্তু সিরাত তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। অবন্তীর লজ্জা লাগছে আর বলছে আম্মু এসে দেখে ফেলবে।
দেখলে দেখুন ছাড়বো না, আমার হবু বউকে আমি জড়িয়ে ধরেছি, আম্মু বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে আমাদের বিয়ে দেবে।
অবন্তীর মা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতেছে সিরাত তুমি কি করতেছ? ছাড়ো। তোমাদের এখনো বিয়ে হয়নি বিয়ের আগে এটা কিন্তু ঠিক না।
সিরাত অবন্তীকে ছেড়ে দিলো, তারপর বলল আমি অবন্তীকে আমার সঙ্গে কালকে নিয়ে যাব। ফুপি তুমি কি বল?
আমার কিছু বলার নেই, তোমার মা আমার মেয়েকে তার ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছে এটা আমার ভাগ্য। আমার স্বামী তার সাথে যা অন্যায় করেছে এ লজ্জায় আমি মুখ দেখাতে পারব না। আর আমার মেয়েকে সে আপন করে নিয়েছে তার মন অনেক ভালো। আমরা তার সাথে কত অন্যায় আচরণ করেছি। আমি শুধু দোয়া করব তুমি আর অবন্তী সুফিয়া ভাবীকে নিয়ে ভালো থাকো। পারলে তোমার বাবাকে ক্ষমা করে তাকেও তোমাদের সঙ্গে রেখো।
সিরাত তার বাবার কথা শুনে কিছু না বলে অবন্তীকে বলল চলো ছাদে যাব। দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসো, আজকে তুমি আর আমি গল্প করব সারারাত। সিরাত ছাদে গিয়ে দোলনায় বসেছে, কিছুক্ষণ পর অবন্তী কফি নিয়ে সেখানে আসলো। দুজনে বসে কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। সিরাত অবন্তীকে বলল আমার কাঁধে মাথা রাখো, আমার ইচ্ছা ছিল গভীর রাতে আমার ভালোবাসার মানুষ কাঁধে মাথা রেখে গল্প করবে। অবন্তী সিরাতের কাঁধে মাথা রাখলো, সিরাত তার একটা হাত অবন্তীর পিঠের উপর দিয়ে জড়িয়ে ধরলো, শুরু হলো দুজনের ভালো থাকার ভালবাসার গল্প।
#সমাপ্ত