#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৯
–হেই মিস আপনি এখানে। আপনার সাথে আবার দেখা হবে আমি ভাবতে পারি নাই।
চেনা গলার স্বর পেয়ে আমি আর জাকিয়া ২ জনেই ঘুরে তাকাই। তারপর দেখি সেদিনের মেহেদী নামের ছেলেটা। আমি মুখে হাসি এনে বললাম আপনি?
হ্যাঁ আমি এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম আপনাকে দেখে থেমে গেলাম।আপনার সাথে দেখা হবে আনার আমি তো ভাবতে পারছি না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।সেদিন সাহায্য না করলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। তা এখানে কি করছেন আপনি?
শপিং করতে এসেছি। আর একজন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি৷ তখনই জাকিয়া বলে ভাবি তুমি চেনো তাকে৷ জাকিয়া এতোখন হা করে তাকিয়ে ছিল।কারণ তার ক্রাস তার সামনে সে ভাবতে পারছে না।
আমি বললাম হ্যাঁ চিনি বলতে একদিনের পরিচয়। উনার একটা ইন্টারভিউ ছিল রিক্সা পাচ্ছিল না আমি সেদিন সাহায্য করেছিলাম তাই আর কি। জাকিয়া আমার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললেন ইন্টারভিউ মানে? উনি কিসের ইন্টারভিউ দিবেন। উনি তো নিজেই খান গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিক।
আমি জাকিয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম মানে। উনি তো সেদিন বললেন উনার ইন্টারভিউ আছে তাই আমি তাকে সাহায্য করেছি।আর তুমি তাকে ক ভাবে চেনো জাকিয়া।
আরে তাকে তো প্রায় টিভিতে দেখাই ভাবি সাক্ষাৎকারে। বেশ সফল বিজনেসম্যান। আমি অবাক হয়ে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছি।
মেহেদী মাথা চুলকিয়ে বলে আসলে ইয়ে মানে।আমি এবার রেগে যায় তার কথায়। একে তো মিথ্যা বলেছে আবার ইয়ে ইয়ে করছে 😡।
রাখেন আপনার ইয়ে ফিয়ে। মিথ্যা কেনো বলেছেন সেটা বলুন আগে😡।
দেখুন মিস। তখন আমি বলি মিস নয় মিসেস চৌধুরী। তানজিলা রহমান চৌধুরী আমার কথা শুনে মেহেদী ব্যথাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। তারপর বলল সরি মিসেস চৌধুরী আসলে সেদিন আমার খুব জরুরি একটা মিটিং ছিল।গাড়িটাও মাঝ পরে নষ্ট হয়ে যায় হঠাৎ করে। কেউ সাহায্য করছিল।তাই আমি আপনাকে মিথ্যা বলি সরি প্লিজ।
মেহেদী এমন একটা অসহায় ফেস করে সরি বলছে যে দেখতে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছিল। তাই আমি হেসে দিই বলি ইটস ওকে। জাকিয়া শুধু আমাদের ককথোপকথন শুনছিল দাঁড়িয়ে।আর মুগ্ধ হয়ে মেহেদী কে দেখছে।
এর মধ্যে তাসু আপু চলে আসে৷ এসে বলে তোমরা ভেতরে যাওনি এখানে কি করছো।জাকিয়া বলে তোর জন্য তো অপেক্ষা করছিলাম।এতো দেরি হয়।
সরি রে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো তাসু আপু বলে।আমি মেহেদী সাহেব কে বলি। আচ্ছা ভালো থাকবেন আমরা যাই। তখন মেহেদী সাহেব বলে। পরিচয় তো দিয়ে যান আপনাদের।তখনই জাকিয়া নেচে উঠে বলে।
আমি জাকিয়া চৌধুরী, এটা আমার বোন তাসনিম সুলতানা চৌধুরী। আর এনি আমার এক মাত্র ভাবি তনয় চৌধুরীর ওয়াইফ তানজিলা রহমান চৌধুরী।
তখন মেহেদী সাহেব বলে আপনি তনয়ের ওয়াইফ। ওমাই গড।তবে তনয় খুব লাকি আপনার মতো একটা মিস্টি মেয়ে কে বউ হিসেবে পেয়ে।
আপনি এক সৌজন্যর হাসি দিলাম কিন্তু মনে বিষাদের চাপ। আমি তো তনয়ের বউ কথাটা মাত্র কিছুদিনের জন্য আছে আর তারপর.. 😔।
আমি মেহেদী সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসছিলাম তখনই জাকিয়া বলে ভাবি এক মিনিট। আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি প্লিজ।জাকিয়া এমন একটা কথা বলবে আমরা কেউ ভাবি নাই। তাসু আপু বলে তুই পাগল হয়েছিস। এমন নির্লজ্জের মতো রাস্তা ঘাটে নাম্বার চেয়ে বেড়াস ছি ছি।
তখন মেহেদী বলে অবশ্যই কোনো সমস্যা নেই তুলে নিন।তাই বলে নাম্বার দিয়ে চলে গেলো আমরা ভেতরে চলে আসলাম। জাকিয়া মনে মনে খুব খুশি আজ।
________________________
রাতে বসে পড়ছিলাম। তনয় এখনো আসেনি।এমন সময় রাত্রি আসে ঘরে।এসে বলে আসব তানু।
আমি হেসে বলি হ্যাঁ এসো না।বলার কি আছে। রাত্রি এসে বলে তাও একটা ম্যানার্সের ব্যাপার আছে না। তা পড়ছিলে বুঝি?
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলি। তখন রাত্রি বলে। তানু তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে আর শুনাতে এসেছি।আসলে তনয় তোমাকে বলতে পারছে না কথা গুলো তাই আমাকে বলতে হচ্ছে। কিছু মনে করো প্লিজ।
রাত্রি কথা শুনে আমার বুকে ধক করে উঠে। কি এমন কথা যে তনয় আমাকে বলতে পারছে না তাই রাত্রি কে পাঠিয়েছে৷ আমি বললাম হ্যাঁ বলো না কি বলবে। তখন রাত্রি আমার সামনে কিছু ছবি ধরে যা দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। আমার বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
রাত্রি তনয়কে জড়িয়ে ধরে আর তনয় রাত্রিকে৷ আমার চোখ দুটি ছলছল করে উঠে।মাথাটা কেমন ঘুরছিল।এটা হওয়ার ছিল তাও এতো কষ্ট হচ্ছে কেন আমার।
রাত্রি বলে এবার একটা রেকর্ড শুনাই তোমায়। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম হ্যাঁ শুনাও। তারপর আমার হাতে একটা টেপরেকর্ড ধরিয়ে দেয়।সেখানে স্পষ্ট তনয়ের গলার স্বর আসছে আর তনয় বলছে
— তানু তোমাকে সামনে থেকে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই এইভাবে বলতে বাধ্য হলাম। তোমাকে আমি কোনো দিন মানতে পারব না। আমি রাত্রিকে ভালবাসি অনেক । তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে। তাই প্লিজ তুমি আমার মাঝে থেকে চলে যাও।
আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না।ঢপ করে বসে পড়লাম মেঝেতে। রাত্রি তখন নেকামি ভাব নিয়ে বলে। জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি করবে বলো জোর করে কি আর ভালবাসা হয়৷ আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসি। তাই আমাদের আলাদা থাকা সম্ভব না।তুমি প্লিজ চলে যাও আমাদের মাঝে থেকে।
নিজের বোন মনে করে আমাকে এই দয়াটা করো তানু।কি করবে না দয়া আমাকে।
আমি ছলছল নয়নে রাত্রির দিকে তাকিয়ে। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না আমার। আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম চিন্তা করো না আপু আমি চলে যাব তোমাদের মাঝ থেকে। আর কখনো আসবো না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।।
— রাত্রি বলে ভেবে চিন্তে কাজ করো কেমন আসি৷ তাই বলে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায়।
আমি এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা উড়ে গেছে। আমি একদম নিঃস্ব আজ । আর কিছু ভাবতে পারছিলাম মাথা চেপে ওই খানেই বসে থাকলাম।
______________________
এইদিকে তনয় খুশি মনে বাড়ি ফিরছে। আজ সে রাত্রিকে সব বলে দিতে পেরেছে একটা চিন্তা মুক্ত। এখন তানুকে মনের কথা গুলো জানানো বাকি।।
তনয় ভেবেই নিয়েছে কাল তানুকে প্রপোজ করবে৷ তাই সে আজ একটা রেস্টুরেন্টে বুক করে এসেছে।সাথে অন্তর ও ছিল। আরো অন্তর এর জন্য তনয় সহজে বুঝতে পেরেছে তানুকে সে ভালবেসে ফেলেছে।
তনয় ঘরে এসে দেখে তানু কেমন অগোছালো ভাবে মেঝেতে বসে আছে । তানুকে দেখেই তনয়ের বুকে কেমন ধক করে উঠে…………
চলবে…..
( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)