এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২৯

0
265

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৯

-“রহিত ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সজিয়ার অনেক গুলো মিসড কল। এত বার কল করা দেখে রহিত একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারপর ফোন করে সজিয়াকে। সজিয়া বসে কান্না করতে ছিল ফোন বাজতে শুনেই তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে ফোন টা হাতে নেয়। স্কিনে রহিতের নাম দেখে মুখে একটু হাসি ফুটে তার।

— সজিয়া ফোন রিসিভ করেই রহিতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে ঝামেলা হয়ে গেছে রহিত। আমাদের কোচিং এর রিক স্যার আজ সকালে তার মাকে নিয়ে এসেছে আমার সাথে তার বিয়ের কথা বলতে। বাবা মনে হয় রাজি হয়ে যাবে। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। রহিত সকাল সকাল এমন একটা খারাপ কথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রহিত বেশ ঘাবড়ে যায় সজিয়ার কথায়। কি করবে সে এখন ভাবতে থাকে।

— এর মাঝেই সজিয়া কেঁদে উঠে বলে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না রহিত। প্লিজ কিছু একটা করো। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না৷ রহিত কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ অনেক কষ্টে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বলে সে কেঁদো না সজু আমি দেখছি কি করা যায়। আমার থেকে তোমাকে আলাদা হতে হবে না আমি কথা দিচ্ছি তোমায়। প্লিজ তুমি এই ভাবে কেঁদো না। আমার খুব খারাপ লাগে তোমার কান্না দেখলে। সজিয়া এবার কান্না থামায় কিন্তু এখনো নাক টেনে চলেছে। তারপর রহিত ফোন রেখে দেয়।

— ” কেটে যায় আরো দুইদিন। রহিত অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রিককে সে সব বলবে তার সাথে সজিয়ার রিলেশনের কথা। তাই সজিয়ার সাথে রহিতও আসে আজ কোচিং-এ। সজিয়া খুব ভয়ে ভয়ে আছে৷ যদি রিক স্যার না মানে। উল্টো ঝামেলা করে৷ বাবাকে সব বলে দেয় তাহলে। রহিত সজিয়ার হাত ধরে আশ্বাস দেয় কিছু হবে না সজিয়া একটু হাসার চেষ্টা করে এবার।

— সজিয়া রিককের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর উঁকি দিয়ে দেখে রিক ভেতরে আছে নাকি। তখনই রিক বলে এভাবে উঁকি দিয়ে কি দেখছো৷ কিছু বলবে কি ভেতরে আসো। রিকের কথা শুনে সজিয়া চমকে উঠে তারপর আস্তে আস্তে ভেতরে যায় সাথে রাত রহিতও যায়। রাত রহিতেকে দেখে রিক একটু ভ্রু কুচকে তাকাই তারপর বলে এটা কে রহিতকে উদ্দেশ্য করে। সজিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে স্যার ওর নাম রহিত আমার বিএফ। কথাটা বলে সজিয়া মাথা নিচু করে ফেলে।

— রিক কথাটা শুনা মাত্র চমকে উঠে সাথে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করে। সজিয়াকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল রিকের। কিন্তু সজিয়ার বিএফ আছে তার জানা ছিল না। ভুল টা তারই আগে খোজ নেওয়া উচিত ছিল এই ভাবে বিয়ের কথা বলা ঠিক হয়নি এই সব ভাবতে ছিল রিক মনে মনে। রহিত বলে দয়া করে আমাদের মাঝে আসবেন না আপনি। আমরা দুজন দু’জনকে খুব ভালবাসি। আপনি এই বিয়ে বাদ দিয়ে দিন প্লিজ। রিক কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে সরি আসলে আমি জানতাম না। আমার জন্য অযথা তোমাদের ঝামেলা হলো। আমি বলে দেব তোমার বাবাকে এই বিয়ে হবে না তুমি চিন্তা করো না। সজিয়ার মুখে এবার হাসি ফুটে সাথে রহিতেরও।

— রহিত আর সজিয়া দুজন চলে আসে রিকের কেবিন থেকে। ওরা চলে আসতেই রিক ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। এই প্রথম কাউকে দেখে রিকের ভালো লাগে আর সেও অন্য কারো মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে রিকের। তাও কিছু করার নাই ভুল তো তারই ওদের তো না। মাথা চেপে বসে থাকে রিক কিছুক্ষণ তারপর চলে যায় ক্লাস নিতে। তার মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে আজ।।
_________________________________

— দেখতে দেখতে পার হয়ে যায় বেশ অনেক দিন। আজ রনিত আর তাসু, মেহেদী আর জাকিয়ার গায়ে হলুদ। সবাই খুব ব্যস্ত সাথে অনেক আনন্দে আছে। তানু তো একপাশে বসে বসে বোর হচ্ছে তনয় তাকে লাফালাফি করতে একদম বারন করে দিয়েছে। তাই মুখ গোমড়া করে বসে আছে তানু৷ সবাই কত মজা করছে আর সে চুপচাপ বসে তাই ভালো লাগে নাকি।

— তাসু আর জাকিয়ার বিয়ে একটা অডিটোরিয়াম এ হবে ঠিক করেছে। সাথে বর আর কনে পক্ষ একসাথে এখানে থেকে বিয়ে শেষ করে তারা যাবে। তাই পুরো অডিটোরিয়াম তাড়া ভাড়া করেছে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত।

— মেহু তানুর অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে তারপর বলে বিরক্ত লাগছে বুঝি এই ভাবে বসে থাকতে। কি আর করবি বল তনয় ভাইয়া তোর আর বেবির কথা ভেবেই তোকে এই ভাবে রেখেছে রাগ করিস না। যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যায় তখন কি হবে তাই সাবধানে থাক তুই। সবাই মজা করছে তুই না হয় দেখ সমস্যা কি। হলুদের সময় তোকেও নেওয়া হবে হলুদ দিতে চিন্তা করিস না।তানু মেহুর কথা শুনে একটা ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে৷। দেখাছাড়া তার কিছু করার নাই এখন কি আর করবে দেখুক বসে বসে সবার তামাশা 😒।

– মেহু আর অন্তর এসেছে সন্ধ্যার পর সাথে তাদের পিচ্চি ছেলে অমিত ও। তার এখন এক মাস বয়স চলছে। তানু অমিতকে রাখে মেহু তাসু আর জাকিয়ার কাছে যায়৷

— তাসু আর জাকিয়াকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কাচা হলুদ শাড়ী সাথে ফুলের গহনা। হালকা মেকাপ দুজনের একই রকম সব কিছু সাজও । ভীষণ মিস্টি লাগছে দেখতে দুজনকে।। এর মধ্যে সজিয়া আসে তাসু আর জাকিয়ার কাছে। একবারে রেডি হয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। বিয়ের এই ক’দিন এখানে থাকবে তানুর নির্দেশ।

— সেদিন রিককে সব বলার পর। রিক সজিয়ার বাবাকে বারন করে দেয়।। কারণ জানতে চাইলে বলে সময় হলে তিনি জানতে পারবেন তাকে যেনো কিছু জিজ্ঞেস না করে তাই বলে চলে এসেছিল রিক সজিয়ার বাড়ি থেকে। তারপর রিক আর কোচিং-এ যায়নি। সজিয়া জানে এটা তার জন্য হয়েছে কিন্তু কি করবে।সে তো রহিতকে ভালবাসে। তাই আর সেদিক বেশি মাথা ঘামাই নি।

— সজিয়া এসে বলে বাবা তোমাদের দুজনকে একদম পরী মনে হচ্ছে। আসমান থেকে দুই হলুদ পরী যেনো টুপ করে নেমে এসেছে। সজিয়ার কথায় দুজনেই হাসে সাথে মেহু আর কিছু মেয়ে আছে তাসুর আর জাকিয়ার বন্ধু তারা। সবাই হেসে দেয়। মেহু বলে ইসস এখন যদি রনিত আর মেহেদী ভাইয়া দেখতো তাহলে বিয়ের আগেই বউ তুলে নিয়ে যেত তারা। তাদের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে তাসু জাকিয়া লজ্জায় লাল নীল হয়ে উঠে।

— এর মধ্যে মেহেদী আর রনিতের গাড়ি প্রবেশ করে অডিটোরিয়াম এর গেট দিয়ে। সবাই হৈহৈ করে উঠে তাদের আসাতে। তাসু আর জাকিয়া দুজনেই নড়েচড়ে বসে। মেহেদী আর রনিত দুজন একই পাঞ্জাবি পড়েছে। আসলে তারা সবাই বিয়ের শপিং এক সাথে করেছে তাই সেম জিনিস নিয়েছে তারা।এক সাথে বিয়ে হচ্ছে যেহেতু তাই সব একই নিয়েছ্ব তারা। দুজন কে অনেক সুন্দর লাগছে হলুদ পাঞ্জাবিতে।

— তনয়, রহিত, অন্তর, অনিক তারাও পরেছে পাঞ্জাবি। সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে। ওইদিকে মেহু সজিয়া,নুসু,নাবু,অনু,তন্নি, শাড়ী পড়েছে। সবাই অনেক সুন্দর লাগছে। আর তানু সেও হলুদ শাড়ী পড়েছে তবে সবার থেকে আলাদা তনয় নিয়ে এসেছে।

— তনয় তানুর পাশে গিয়ে বসে বলে খারাপ লাগছে নাকি।শরীর ঠিক আছে তোমার দেখি তাই বলে গলা কপালে হাত ছুয়ায় তনয়। আর তানু চুপচাপ বসে আছে কিছু বলছে না। তনয় বলে কি হলো কথা বলছো না কেনো।

__ তানু 😒😒😒😒

— তনয় বুঝতে পারে তানু কেনো এমন মুখ করে রেখেছে৷ তাই এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে রাগ হচ্ছে বুঝি আমার উপর। আমি তোমাকে আর আমাএ বেবিকে নিয়ে কোনো রকম রিক্স নিতে চায়না তানু তাই আমাকে একটু কঠোর হতে হচ্ছে। কিছু করার নেই । তুমি এতো ভীড়ের মাঝে লাফালাফি করতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যায় তখন। তানু বুঝতে পারে আসলেই যদি এমন কিছু হয় তাহলে তো সে শেষ হয়ে যাবে যদি বাচ্চার কিছু হয়। সবাই কত আনন্দে আছে বাচ্চাকে নিয়ে। তাই তানুর আর মন খারাপ করে না থেকে এবার হাসি নিয়ে আসে মুখে তা দেখে তনয়ও হাসে। অবশেষে তার মহারানী বুঝেছেন।

— মেহেদীকে জাকিয়ার পাশে আর তাসুকে রনিতের পাশে বসানো হয়। দুজন লজ্জায় কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।কিন্তু মেহেদী আর রনিত ঠিকই তাসু আর জাকিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনকে অপরুপ সুন্দরী লাগছে। রনিত তাসুর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে আজ তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে সাথে লজ্জা রাঙা দুটো গাল আহ মনে হচ্ছে টপ করে গিলে ফেলি। রনিতের কথায় তাসু আরো লজ্জায় কুকড়ে উঠে। জাকিয়ায় ও সেম অবস্থা। মেহেদীর লাগাম ছাড়া কথাতে দুজন লজ্জায় শেষ।

— শুরু হয় হলুদ ছোয়ানো পর্ব। সবাই একে একে এসে তাদের হলুদ ছুয়ে দেয় তার সবাই সবাইকে দেয়। অনিক নাবুকে হলুদ দিয়ে ভুত বানাই দেয় নাবু ও সেম। রহিত আর সজিয়া দুজন দুজনকে হলুদ দেয়। তানু বসে বসে সবার কান্ড দেখছে আর হাসছে৷ এর মধ্যে তনয় হাজির হয় একটা হলুদের বাটি হাতে নিয়ে। তা দেখে তানু ভ্রু কুচকে তাকাই তনয়ের দিকে। তনয় বলে সবাই হলুদ খেলছে আর আমার তানু পাখি হলুদ ছুবে না তা কখনো হয়। আমি তোমায় হলুদ দেব তাই হলুদ নিয়ে তানুর গালে ছোয়ায় তানু আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে তা দেখে তনয় হেসে দেয়। তানু ও তনয়কে হলুদ ছোয়ায় তারপর শেষ হয় হলুদ পর্ব। এর নাচ গানের অনুষ্ঠান হবে। সবাই জোড়া জোড়া নাচ করবে বলে ঠিক করা হয়েছে………..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here