এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ১

0
1109

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনীঃ আলো ইসলাম
#সূচনা_পর্ব

তানু বসার ঘরে গিয়ে নাস্তা গুলো দিয়ে আয়তো মা তোর বাবা আর মেজো চাচু কে। পরন্ত বিকেলে আমার মনের অব্যক্ত কথা গুলো ডায়েরির পাতা জুড়ে প্রকাশ করতে ছিলাম তখন রান্না ঘর থেকে মা হাক ছেড়ে বললেন কথাটা।

আমি তানজিলা রহমান। আমরা তিন বোন। আমি বাড়ির মেজো মেয়ে৷ বড় বোনের নাম তুরিন রহমান। ছোট বোনের নাম তন্নি রহমান। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং তার একটা মিষ্টি মেয়ে ও আছে ৪ বছরের। নাম ও রেখেছে মিষ্টি। আর তন্নি এবার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে ।

আমি উড়না টা ভালো ভাবে মাথায় টেনে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে নাস্তার ট্রে নিয়ে বসার ঘরে গেলাম।গিয়ে দেখি বাবা বই পড়ছেন আর মেজো চাচু ও দাদি গল্প করছে কি নিয়ে যেনো একটা। আমার বাবা বই পড়তে বেশ ভালবাসেন। তিনি ধার্মিক প্রকৃতির মানুষ। তাই আমাদের বাড়িতে আর যাই হোক নামাজ সবার জন্য বাধ্যগত। আমার খুব ভালো লাগে বিষয় টা।তবে আমার বাবা মনে করেন মেয়েদের বেশি পড়াশুনা করতে নেই। তাই আমাদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিলেন। তারপর আর কলেজের গন্ডিতে পা রাখা হয়নি।

আমি নাস্তা রেখে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম তখন ও বাবা ডেকে উঠলেন মা তানু আমি মৃদু হাসি দিয়ে বাবার দিকে তাকাইলাম। বাবা একটু হাসি টেনে বললেন কাল তোমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে বিকেলে।আগে থেকে জানাই দিলাম নিজেকে তৈরি রেখো। আমি মলিন একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম আমার ঘরে। তারপর আবার ডায়েরির পাতায় আমার অবেদনময় সকল কথা প্রকাশ করতে লাগলাম।

আমাদের বাড়িটা একতালা বিশিষ্ট বাড়ি।আমার বাবা ওরা তিন ভাই ২ বোন।আমরা সবাই এক সাথে থাকি তবে সবাই যে যার মতো কাজ করে৷ আমরা মধ্যবিত্তদের মধ্যে পরি। তবে সমাজে বেশ নাম ডাক আমাদের৷ আমার বাবা আমাদের জমি জায়গা আর পুকুর আছে দেখা শুনা করে। আর ছোট চাচ্চু সে ব্যবসা করে তার মতো বেশ উন্নত করেছে। আর মেজো চাচ্চু সে সরকারি কর্মকর্তা।

আমার চাচাতো ভাই-বোন আছে মোটে পাঁচ জন। ছোট চাচ্চুর এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের নাম অনন্যা আর ছেলের না সায়ন। অনন্যা ক্লাস টেন ও পড়ে আর সায়ন চতুর্থ শ্রেণিতে।মেজো চাচ্চুর দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম নাবিলা আর ছোট মেয়ের নাম নুসরাত আর ছেলের নাম নাহিদ৷ নাবিলা ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে আর নুসরাত দশম শ্রেণিতে আর নাহিদ আমার ৫ম শ্রেনীতে৷ আর আমার ছোট বোন এবার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।
আমার চাচ্চু রা আমার বাবার মতো না৷ তারা চাই তাদের মেয়ে পড়াশুনা করুক এতে যে যার মত গ্রহণ করে চলে কেউ কিছু বলার নাই। শুধু আমার বাবাই চায় না মেয়েরা বেশি দূর পড়াশুনা করুক তাই এই নিয়ে বেশ ঝামেলা হয় মাঝে মাঝে তবে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে নাই চাচ্চুদের উপর। তাই এখন আর কিছু বলে না বাবা এই নিয়ে। তবে চাচ্চু বলেছিল আমার দশম শ্রেণি পাশ করার পর পড়ানোর জন্য কিন্তু আমার বাবার এক কথা সে তার মেয়েদের বেশি পড়াশুনা করাতে চাইনা।

আমি দেখতে উজ্জ্বল ফরসা উচ্চতা ৫,৪ গায়ে হালকা এক দেখায় যে কেউ পছন্দ করবে এতে সন্দেহ নেই।যাই হোক এবার মুল কথাই আসি। আমি ঘরের আসার সাথে দেখু অনু,নুসু,নাবু ( আদর করে সবাই এই নামে ডাকে) এসে হাজির তারা খুব খুশি আমাকে দেখতে আসবে তাই শুনে।বিয়ে নিয়ে খুব উত্তেজনা তাদের মাঝে। কে কি করবে এই নিয়ে এখনই তাদের আলোচনা শুরু আমি শুধু বিরক্ত মনোভাব নিয়ে তাদের কথা শুনে চলেছি। এক সময় অনু বলে উঠলো আপু দুলাভাই কেমন হবে দেখতে বলতো। আমি ওর কথা শুনে বেশ অনেক টা অবাক। কেমন হবে আমি কি করে বলবো।নাবু বললো আমি জানি বেশ হ্যান্ডসাম হবে আমাদের জিজু। শুনেছি তারা নাকি অনেক বড় ঘরের মানুষ আবার খুব শিক্ষিত৷ আচ্ছা আপু তোকে পছন্দ করবে তো মানে তোর তো পড়াশোনা কম এতো শিক্ষিত ঘর তাই বললাম আর কি৷

আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সত্যিই ভাবতে লাগলাম আমাকে কি তাড়া পছন্দ করবে৷ এতো শিক্ষিত ছেলে নিশ্চয় দশম শ্রেণী পাশ ছাত্রিকে বিয়ে করবে না৷ এমন সময় সায়ন এসে বললো তানু আপু তোকে বড়মা ডাকে বসার ঘরে।আমরা সবাই তার দিকে তাকাইলাম তারপর আমি বললাম তুই যা আমি আসছি৷ আমরা সবাই ঘর থেকে বের হয়ে বসার ঘরে গেলাম বিকাল হওয়াতে সবাই আছে ছোট চাচ্চু বাদে। সে ব্যবসার কাজে প্রায় সময় বাইরে থাকে। আমাদের সংসারে দাদি আছে। দাদা অনেক আগে মারা গেছে।
আমি গিয়ে দাড়ালাম তখনি দাদি বললো আই আমার পাশে বস। কাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে তাই আমরা আলোচনা করছি তুই কিন্তু শাড়ি পরবি সাথে এই গহনা কিছু গহনা হাতে ধরাই দিয়ে বললেন কথা গুলো আমাকে। আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালাম। আমার ভালো লাগছে না এদের এত আদিখ্যেতা। বাবা বললেন কাল নিজ হাতে কিছু রান্না করো তাদের জন্য। তোমার হাতে রান্না এমনি অনেক সুন্দর হয় আমি চাই তুমি তাদের জন্য কিছু স্পেশাল রান্না করে খাওয়াও। আমি সেখান থেকে কথা শেষ করে আমার ঘরে চলে আসলাম। এসেই বিসানার উপর শাড়ি গহনা গুলা রেখে দিলাম। মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে শুনার পরে থেকে।

আমি অনেক চঞ্চল আর দুস্টু স্বভাবের। সবার সাথে বেশ হাসি মজা করে কাটিয়ে দিই। এদের ছাড়া আমাকে কখনো থাকতে হবে ভাবলেই কান্না গুলো দলা পেকে আসছে। যদি বিয়ে টা এখনো পাকাপক্ত হয়নি তাও যেনো মন খারাপরা অনবরত এসে কড়া নারছে৷ এর মধ্যে সন্ধ্যার আজান পড়ে গেলো আমি অজু করে নামাজ শেষ করে রান্না ঘরে পা বাড়ালাম।চা নিয়ে বসার ঘরে বাবা আর মেজো চাচু কে দিয়ে আবার রান্না ঘরে আসলাম মা চাচিদের সাহায্য করতে। যদি সব কাজ তারাই করে। আমার পরিবারে সবাই ভালো আর মিশুক। সবাই এক সাথে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে আমার খুব ভালো লাগে। ছোট কাকি আমার বন্ধুর মতো। আমি সব কথা মন খুলে ছোট কাকিকে বলতে পারি………

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here