এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ১৪

0
486

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৪

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখি চাচি শাশুড়ী বসে আছেন।আমি নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। কারণ আমাকে এখন যে অনেক কথা শুনতে হবে বেশ জানি।

আমি নিচে যেতেই পায়েল চৌধুরী আমাকে দেখি বলে উঠলো আসলেন নবাবের মেয়ে।বলি সারাদিন যে টইটই করে বেড়াও সংসার বলে যে একটা জিনিস আছে সে খেয়াল আছে তোমার। যত দোষ আপুই এর মাথায় তুলে রেখেছে। বাড়িতে যে গুরুজনেরা আচগে তাদের একটু সেবা করা লাগে না।

আমি মাথা নিচু করে সব শুনে চলেছি তারপর বললাম কি করছে বলো না আমায় আমি করে দিচ্ছি।

এখন তো বলে বলে সব করাতে হবে তোমায়। মা বাবা কিছু শিখায় নাই নাকি 😏। যাও আমার জন্য ভালো করে এক কাপ আদা চা করে নিয়ে আসবে। ভালো হয় যেন মাথায় থাকে।

আমি মাথা নেড়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় তনয় আমাকে ডেকে উঠলেন।

তানু ঘরে আসো একটু কাজ আছে। আর হ্যাঁ ছোট মা আমি বরং সার্ভেন্ট কে বলে দিচ্ছি তোমাকে ভালো করে আদা চা করে দেওয়ার জন্য কেমন।

তনয়ের কথায় আর কিছু বলার সাহস পেলেন না পায়েল চৌধুরী।

আমি উপরে চলে গেলাম।তারপর বললাম কি কাজের জন্য ডাকলেন বলেন। একটু পর তো অন্তর ভাইয়ার বাড়ি যেতে হবে তার জন্য রেডি হতে হবে অনেক কাজ৷

তনয় বলল তুমি ছোটমার কথায় কিছু মনে করো না।সে এমনই৷ তবে ভালো কিন্তু। তোমার সাথে এমন করে কেনো জানি।

তনয় মনে মনে ঠিকি উপলব্ধি করতে পারছে কেন এমন ব্যবহার করে তানুর সাথে পায়েল চৌধুরী।

আমি বললাম না না কি মনে করব। তিনি আমার গুরুজন। আমার ভালোর জন্য বলেন সব।আপনি এই নিয়ে চিন্তা করবেন না।

আচ্ছা যাও সব শেষ করে রেডি হও তাড়াতাড়ি আমাদের ওই বাড়ি যেতে হবে তো। আর তাসু জাকিয়াকে ও বলে দাও তাড়াতাড়ি রেডি হতে।ওদের তো আবার সারাদিন লাগে আটা ময়দা মাখতে।

এমন সময় তাসু আপু আর জাকিয়া হাজির হয়৷ জাকিয়া বলে ভাইয়া তুই এমন কথা বলতে পারলি। আমরা আটা ময়দা মাখি 😠।

তাসু আপু বলে। এখন বলবে এমন। আমরা তো পর হয়ে গেছি কিনা। বউ পেয়ে ভাইয়া তো আমাদের ভুলেই গেছে হু।

আমি ওদের কথা শুনে শুধু হাসছি। তখন তনয় বলে,

থাক আর ড্রামা করতে হবে না। তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নে। নাহলে রেখে চলে যাব।

আমরা মনে হয় বাংলাদেশের রাস্তা চিনি না।বাচ্চামনে হয় আমাদের রেখের দেখার ভয় দেখাবে আর ভয় পেয়ে যাব জাকিয়া বলে।

ওরে আমার বড় মানুষ রে ঠিক আছে সাথে নেব না। যা তোরা একা কেমন পারিস।

জাকিয়া বলে আরে মজা করছিলাম তো।।আমরা এই যাব আর আসবো। চল তাসু আপু। তাই বলে ওরা চলে যায়।

আমি হাসতে হাসতে শেষ ওদের কান্ড দেখে।তারপর আমি ও গেলাম রেডি হতে।

________________________

আমরা মেহুর ঘরে মেহুর কাছে বসে আসি।এসেছি কিছুখন আগে।এসেই উপরে চলে আসছি মেহুর কাছে।বেচারা একা একা বেশ বোর হচ্ছিল বুঝতে পারছি। অন্তর ভাইয়া তো রিসিপশনের কাজে ব্যস্ত।

তনয় এসেও কাজে লেগে পরেছে। অন্তর ভাইয়ার একটা বোন থাকলে ভালো হতো মেহু তার সাথে একটু সময় কাটাতে পারত অন্তত।

আমি মেহুকে কানের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম।বাসর কেমন হলো তোদের।একটু গল্প শুনি।ভাইয়া কেমন ভালবাসছে মেহু লজ্জাতে নুয়ে গেলো।

এতো লজ্জা পেলে হবে না তো। আমাদের ও তো জানতে হবে নাকি।বলো মেহু। তাসু আপুর কথায় আরো লজ্জা পেলো বেচারি।আমরা শুধু মুখ টিপে হাসছি।

তারপর মেহু বলে তানু দিন দিন কি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস তুই। আগে তো এমন ছিলিস না।

হ্যাঁ এখন কত কি হবো।
সত্যি কথা বললে এমন এ হয়৷

আমার কথা শুনে মেহু সহ সবাই হেসে দেয়।তারপর মেহুকে রেডি করার জন্য পার্লার থেকে মানুষ আসে। আমরা বাইরে গেলাম।বাইরের দিকটা দেখার জন্য।

সন্ধ্যার সময় সব কিছু শেষ করে মেহুরা চলে গেলো মেহুর বাড়ি। বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি যাওয়া এটা নিয়ম। বিশেষ করে গ্রামের এই গুলো বেশি হয়। তাই অন্তর ভাইয়া আর মেহুকে তারা নিয়ে গেছে।

আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি কিছুখন আগে। পড়ার জন্য একটু ও মন নেই।তাও পড়তে হবে ক’দিন পর পরিক্ষা। তাছাড়া তনয় আসার পথে বলে দিয়েছে বাড়ি গিয়েই পড়তে হবে।

আমি ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলাম।কিছুখন পর তনয়্ব ফ্রেস হয়ে বসলেন আমার সামনে।

চুলের পানি গুলো ভালো করে না মোছার ফলে সব গুলো বিন্দু বিন্দু শিশির কণার মতো হয়ে আছে।কপালের দিকের চুল গুলো কপালের সাথে লেপ্টে আছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তনয়কে।

তনয় বিষয়টা লক্ষ্য করতে পেরে বলে উঠলো। ওমন ভাবে কি দেখছ। এর আগে দেখো নি আমায়।যদি না দেখে থাকো পড়া শেষ করে ১ ঘন্টা সময় দেব না হয় দেখার জন্য তখন ভালো করে দেখে নিও এখন পড়ো।শেষের কথা টা একটা ধমকের স্বরে বললেন।

আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম তার কথায়৷ তারপর সাথে সাথে চোখ নামাই নিলাম।
এরপর পড়াই মনোযোগ দিলাম।

রাত ১ টা বাজবে প্রায়। পড়তে আর ইচ্ছে করছে না৷ ঘুম ও পাচ্ছে।কিন্তু তনয়কে বলতে পারছি না।

তনয় বিষয়টা লক্ষ্য করে বলে উঠলো আর পড়তে হবে না আজ।যাও ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে উঠে আবার পড়বে৷।

এই কথার আশাই ছিলাম। তনয়ের বলতে দেরি আমার বই গুছিয়ে বিসানায় যেতে দেরি হয় নাই।

তনয় অবাক হয়ে তানুর কাজ দেখছে তারপর আপন মনে হেসে উঠে।

———————

সময় আর নদীর স্রোত কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না তারা তাদের আপন পথে বহমান সর্বদা । তাদের সাথেই বরং পাল্লা দিয়ে চলতে হয় আমাদের।

দেখতে দেখতে কেটে গেছে বেশ কিছু মাস। আমি ইন্টার প্রথম বর্ষ শেষ করে ২য় বর্ষে উঠেছি।

আর কয় মাস পর ফাইনাল পরিক্ষা আমাদের।সজিয়া আর রহিতের প্রেম সে ভাবে না হলেও কথা হয় রহিত সাহস করে বলে উঠতে পারেনি এখনো মনে কথা সজিয়াকে।

তাসু আপু আর রনিত ভাইয়া ২জনের প্রেম আগের থেকে আরো গাঢ় হয়ে উঠেছে। দু’জন দু’জনকে ছাড়া চলতে পারে না।

অনিক ভাইয়া নাবুকে মনের কথা জানিয়ে দেয় কিছু দিন পরে প্রথমে নাবু রাজি নাহলেও পরে রাজি হয়ে যায় অনিক ভাইয়ার জন্য।

সব মিলিয়ে বেশ চলছে সব কিছু। আমার তনয়ের সম্পর্ক আগের মতো আছে। কিন্তু তনয় আগের থেকে বেশি কেয়ার করে আমাকে।সব রকম সাপোর্ট আগেও ছিল এখনো আরো বেশি করে।

মাঝে মাঝে তনয়ের কিছু কাজ আমাকে খুব করে ভাবাই। মনে হয় তনয় আমাকে মেনে নিয়েছে।আবার কখনো মনে হয়। না শুধু দায়িত্ব তাই এমন করে।

মোটামোটি শীতকাল শুরু হয়েছে। অনেক দিন সবাই এক সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না। মেহুর বিয়ের পর আর যাওয়া হয়ে উঠেনি গ্রামে।

নুসু নাবু অনু তন্নি এসে বেড়াই গেছে মাঝে একদিন। আজ আমরা পিকনিক করব ঠিক করেছি।

আইডিয়া টা আমার আর তাসু আপু জাকিয়ার। এরা তনয়কে বললে তনয় রাজি হয়ে যায়।।

আজ আবার সবাই এক সাথে হয়েছি আমরা। নাবু,নুসু,অনু,তন্নি,রনিত ভাইয়া,রহিত ভাইয়া,অন্তর ভাইয়া আর মেহু।

আপনাদের তো বলাই হয়নি মেহু ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাই তাকে খুব সাবধানে রাখা হয় এখন। অন্তর ভাইয়া তো চোখে হারায় তাকে সব সময়।।। ওদের ভালবাসা দেখলে প্রাণটস জুড়িয়ে যাই।

আমার আর তনয়ের সম্পর্ক ঠিক থাকলে এত দিনে আমাদেরও একটা বাবু থাকত নিশ্চয়।

এই সকল কথা ভাবতে ছিলাম এমন সময় জাকিয়া বলে ভাবি কি ভাবছো এতো চলো ওইদিকে। ভাইয়ারা রান্না করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা দেখবে চলো।

আজ পিকনিকের সকল কাজ ছেলেরা করবে বলে ঠিক করেছে।আর মেয়ে শুধু মজা করবে।

তাই অন্তর ভাইয়া, তনয়,রহিত, বাবা ( শ্বশুর) ছোট চাচু ( তনয়ের ছোট চাচু)অনিক ভাইয়া সবাই রান্না করছে। আমি আর জাকিয়া গেলাম সেদিকে।

তাসু আপু আর রনিত ভাইয়া আপাতত নিখোজ তারা। দুই পায়রা মিলে যে প্রেম মেলা জমিয়েছে বেশ বুঝতে পারছি।তাই আর তাদের কোনো রকম ডিস্টার্ব করলাম না।

আমি রান্নার কাছে গিয়ে দেখি তনয় গোস রান্না করছে৷ বাকি রা কেউ বসে কেউ সব এগিয়ে দিচ্ছে। বাবা আর চাচু একটু দূরে বসে আগুন থেকে। বয়স্ক মানুষ আগুনের তাপে সমস্যা হতে পারে ভেবে তনয় তাদের দূরে পাঠিয়েছে।

আমরা যেতেই তনয় আমাকে ইশারা করে ডাকে।বেচারার অবস্থা করুণ।ফর্সা শরীরে আগুনের উত্তাপে লাল টকটকে হয়ে গেছে।আর ঘাম চুয়ে পড়ছে শরীর থেকে।

আমি তনয়ের কাছে যেতেই তনয় আমার উড়নার এক অংশ ধরে মুখের সব ঘাম মুছে নিল।আমি তো চরম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।তনয় এমন একটা কাজ করবে আমার কল্পনার বাইর ছিল ভাবনা।

তখনই অনিক বলে।ভাইয়া কেন ছোট ভাই গুলাকে এতো লজ্জায় ফেলছিস।আজ একটা বউ নেই বলে ঘাম বের হয়ে আবার ভেতরে চলে যায় 😒।

তখনই নাবু নুসু রা এসে হাজির হয়।নাবু করুণ চোখে অনিকের দিকে তাকাই।

তনয় বলে আগে বড় হয়ে নে ব্যাটা।তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করবি এখন কাজ কর মন দিয়ে। এর মধ্যে সজিয়া এসে উপস্থিত হয়।।কিছু কাজ থাকায় ও পরে আসবে বলে জানিয়েছিল।

সজিয়াকে দেখে আমি ওর কাছে চলে গেলাম।ও না আসলে আমি হয়ত লজ্জায় ওই খানে থেকে এক ধাপ ও আসতে পারতাম না।

রান্নার সকল কাজ শেষ করে এখন সবাই বসে আছে। এখন আমরা একটা খেলা খেলব তারপর খাওয়া দাওয়া করব ঠিক করেছি।

সবাই বসে আছে এক সাথে আর ভাবছে কি খেলা যায়।তখন আমি বলে উঠলাম আমরা সবাই কানামাছি খেলব।সবাই সাথে সাথে ইয়ে বলে লাফিয়ে উঠে।

প্রথমে বাবার চোখ বেধে দেওয়া হয়।তারপর সবাই লুকিয়ে পড়ে। বাবা খুজতে খুজতে মা কে গিয়ে ধরে ফেলে।এরপর মা এর চোখ বেধে দিই।

একে একে সবাই শেষ করে আসে তনয়ের পালা।তনয়কে চোখ বেধে দেয় অন্তর ভাইয়া।তারপর সবাই লুকিয়ে পড়ে। তনয় সবাইকে খুজে চলেছে এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে তনয়কে জড়িয়ে ধরে উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয়ে যায়।

আমি দাঁড়িয়ে দেখে চলেছি শুধু ভীষণ রাগ লাগছে সাথে অনেক কষ্ট হচ্ছে।কে এই মেয়ে এসে তনয়কে জড়িয়ে ধরলো।

তনয়ের পক্ষের সবাই মেয়েটা চিনে বেশ বুঝতে পারলাম।।তারা বেশ অবাক হয়েছে এটাও বুঝতে পারছি।

তনয় চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে যা দেখে তাতে সে৷ ভীষণ রকমের অবাক হয়ে যায়।এমনটা হবে সে কখনো কল্পনা করেনি।তব্ব তনয় যেনো খুশি হতে গিয়েও খুশি হতে পারল না কোন এক কারণে…………………….

চলবে……

( রিচেক হয়নি। ভুলক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here