#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৮
রাত ১টা প্রায় ছুই ছুই ঘড়ির কাটা।তনয় সেই যে বের হয়ে গেছে এখনো আসে নাই চিন্তা হচ্ছে খুব।আমি বসে বসে ঢুলছি। আজ ঘুম ও যেনো জেকে বসেছে আমার মাঝে। এর মধ্যে দরজা খোলার শব্দে আমি তাকিয়ে দেখি তনয় এসেছে। কেমন দুলে দুলে চলছে। চুল চোখ মুখ কেমন উষ্কখুষ্ক হয়ে। দেখে কেমন লাগছে একটা তাকে।
আমি বোঝার চেষ্টা করছি তনয়কে এর মধ্যে সে বিসানার কাছে এসে পড়ে যেতে নেয় আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে ধরে ফেলি তাকে।শরীর দিয়ে কেমন একটা বাজে গন্ধ আসছে৷ ভালো করে গন্ধটা কিসের বোঝার চেষ্টা করলাম।তারপর আমি চমকে উঠলাম। তনয় ড্রিংক করেছে। আমার বিশ্বাস এ হচ্ছে না।আমি কখনো ড্রিংক করতে দেখি নাই তনয়কে।
আমি তাকে ধরে বিসানায় শুয়ে দিলাম সাথে সাথে আমার হাত ধরে তনয় টান দেয়। আমি সামলাতে না পেরে তার উপর পড়ে যায়। তনয় কেমন নেশাময় দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উঠার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু সফল হতে পারলাম না।তনয় আমাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন।
তারপর আমাকে ঘুরিয়ে নিচে ফেলে সে উপরে উঠে আমার চুল গুলো কানের পাশে গুজে দেয়। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
কেনো বোঝো না আমায় তানু। কেনো দূরে যেতে চাও আমায় ছেড়ে। আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না। কেনো বুঝো না। তাই বলে আমার ঘাড়ে সে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
আমি বুঝতে পারছি সে নেশায় আছে তাই কি করছে তার কোন জ্ঞ্যান নাই।আমি তনয়কে সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না আরো শক্ত করে ধরেছে সে আমায়।তারপর বলে একদম নড়াচড়া করবে না তানু পাখি৷ আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চায়। একটা শান্তির ঘুম দিতে চায়। ছেড়ে দিলে তুমি চলে যাবে আমি জানি।
আমি শুধু চুপচাপ তার কথা গুলো শ্রবণ করে চলেছি আর বোঝার চেষ্টা করছি তনয় এমন কেনো করছে।মানুষ তো নেশার ঘোরে সব সত্যি বলে শুনেছি তাহলে আমার জন্য তনয়ের মাঝে যে আবেগ সে গুলো কি। নাহ এ হতে পারে না। সেতো রাত্রি আপুকে ভালবাসে আমাকে না। আমি আবার উঠার চেষ্টা করলাম এবার তনয় যা করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তনয় আমার ঠোঁট জোড়া তার ঠোঁটে আবদ্ধ করে নেয়।আমি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে তনয়ের শার্টের পেছন দিক খামছে ধরি। কেমন ভালবাসার আবেশে যেনো হারিয়ে যাচ্ছি আমি। তারপর তনয় আমার উড়নাটা ছুড়ে ফেলে দেয় নিচে। আমি চমকে উঠি আর অবাক হয়ে ভাবতে থাকি কি করতে চায়ছে তনয়।
তনয় আমার ঘাড় গলায় চুম্বন করতে থাকে অনবরত। যা উপেক্ষা করা আমার সাধ্য নাই। তনয়ের নেশাময় ভালবাসাকে আজ আমি উপেক্ষা করতে পারব না জানি। তাই আমি ও হাল ছেড়ে দিয়ে তার সাথ দিলাম৷ তারপর আমরা হারিয়ে গেলাম ভালবাসার অতল গভীরে। রাতের গভীরতার সাথে বেড়ে চলেছে আমাদের ভালবাসার গভীরতা।
_______________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি তনয়ের বুকে পায়। তনয়ের উনমুক্ত দেহে আমি পরম আবেশে শুয়ে আছি। নিজেকে আজ কেমন পরিপূর্ণ লাগছে। কিন্তু আমাদের অনিশ্চিত জিবনের কি হবে এবার জানা নেই।
তনয়ের ঘুম ভেঙে যাওয়াতে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। উড়না টা কোনো রকম জড়িয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।জানি না তনয় এখন কি ভাবে রিয়াক্ট করবে এটা নিয়ে।
তনয় তানুকে ওই ভাবে দেখে খুব অবাক হয় সাথে চমকে যায় বেশ।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার নগ্ন শরীর। তনয় মাথা চেপে ধরে বোঝার চেষ্টা করছে রাতে কি হয়েছে। ড্রিংক করার ফলে মাথা ব্যথা করছে প্রচুর তার উপর এতো চিন্তা করাতে তনয়ের মাথা যেনো ফেটে যাচ্ছে।।
আমি ফ্রেস হয়ে এসে কাজা নামাজ পড়ে বাইরে চলে গেলাম। তনয়ের সাথে একটা কথা ও বলিনি।তনয় শুধু তানুর দিকে লক্ষ্য করেছিল।তানু কথা না বলায় আরো চিন্তিত হয়ে পড়ল সে তাহলে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে। তানু কি এর জন্য রাগ করে আছে। মাফ করবে তো আমাকে যদি কোনো ভুল হয়ে যায় আমার তাহলে। কেনো যে ড্রিংক করতে গেলাম এই সকল কথা ভেবে চলেছে তনয়।তারপর উঠে সেও চলে যায় ফ্রেস হতে।
আমি নিচে এসে দেখি জাকিয়া আর তাসু আপু বসে কি নিয়ে আলাপ করছে। সচারাচর তারা এতো সকালে উঠে না আজ দেখে বেশ অবাক এ হলাম। আমি যেতেই জাকিয়া লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছে এসে চুলে হাত দিয়ে বলে তোমার চুল ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে।তুমি কি শাওয়ার নিয়েছো।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে যায় তার কথায়৷ এই মেয়ের সব দিকে গভীর দৃষ্টি। তাসু আপু মুখ চেপে হেসে চলেছে। আমি লজ্জাতে নিচে তাকিয়ে আছি।জাকিয়া আবার বলে কি ব্যাপার ভাবি বলো তো কাহিনী কি হুম? 🤔
তাসু আপু বলে তুই ছোট মানুষ বুঝবি না রে জাকির জর্দা 😁। এইটা ভালবাসা বৃষ্টিতে ভেজার প্রকাশ। আমি আরো লজ্জা পেয়ে যায় আপুর কথায়। রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো তখন তাসু আপু বলে পালাচ্ছো কথায় হুম।
আমরা আজ শপিংয়ে যাব তুমি ও যাবে সাথে। আমি বললাম আমার তো আজ অনেক জরুরি ক্লাস আছে।জাকিয়া বলে ভাবি তোমার ক্লাস শেষে যাব। আমরা ও কলেজ শেষ করে ওইদিক দিয়ে শপিং করে আসব।তোমাকে সাথে নিয়ে নেব আমরা।অপেক্ষা করো। আমি বললাম আচ্ছা। তারপর চলে গেলাম নাস্তা করতে।
আমি রেডি হচ্ছি কোচিং যাওয়ার জন্য। তনয় ও অফিস যাবে তাই রেডি হচ্ছে।কিন্তু আমাকে সে অনুসরণ করছে বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি লজ্জায় ঠিক ভাবে তার দিকে তাকাতে পারছি না।রাতের কথা মনে হলে।কেমন লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে আমার গাল দুটো। আর তনয় সে তানুর গলায় ঘাড়ে লালচে দাগ দেখে বুঝে যায় রাতে কি হয়েছে।
আমি সব কিছু গুছিয়ে বের হয়ে আসছিলাম।এমন সময় তনয় আমার হাত ধরে। আমি প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেনো তানু।কাল রাতের জন্য সরি। আমি জানি না কিভাবে কি হলো। নেশার মধ্যে কি করেছি জানি না।মাফ করে দাও প্লিজ।আমি জানতাম এমন কথার সম্মুখীন হতে হবে আমাকে।তাই আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম। তনয় আমাকে ভালবাসে কাছে টানে নাই সেটা আমি আগেই জানতাম।
আমি বললাম যা হয়েছে ভুলে যান তনয়। আমি ও ভুলে গেছি।ওইটা একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। শুধু এইটুক জেনে রাখুন কাল রাতে আপনার ভালবাসা উপেক্ষা করা আমার সাধ্যে ছিল না তাই আমি উপেক্ষা করতে পারি নাই। আর কিছু না বলে চলে আসি আমি।তনয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও বের হয়ে যায়।
________________________
আমরা ক্লাসে বসে।সজিয়ার মন খারাপ কেনো জানি।কোনো কথা বলছে না সে।আমি এতো বকবক করছি আর সে হু হা করছে এই যা। তারপর আমি বললাম কি হয়েছে তোর এমন চুপচাপ হয়ে কেন।
সজিয়া বলে তানু একটা কথা বলব তোকে।কিছু মনে করিস না প্লিজ।আমি বললাম মার খাওয়ার সখ হয়েছে আপনার। আমার সাথে ফর্মালিটি করছেন তাই।
সজিয়া আমার হাত ধরে বলে।তোর ভাই রহিত আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি অবাক হলাম।তার কথায়। আমি চোখ দুটি ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।সজিয়া একটা ঢোক গিলে বলে আগে আমার সব কথা শুন।
আমাদের মাঝে মাঝে কথা হতো বন্ধুর মতো। তোকে বলা হয়নি। সরি রে। তোর ভাইয়া যে আমাকে পছন্দ করে এটা আগে থেকে জানতাম আমি কিন্তু আমি তেমন ভাবে ভেবে দেখি নাই।কিন্তু আমার যে তাকে ভালো লাগে না তা নয় তাই বলে মাথা নিচু করে ফেলে সজিয়া।
আমি বললাম তাহলে সমস্যা কি তুইও যখন ভাইয়াকে পছন্দ করিস হ্যাঁ বলে দে।
সজিয়া বলে খুব ভয় হয়রে। যদি আবার ঠকে যায়।আমি চমকে উঠে বলি আবার ঠকে যায় মানে। সজিয়া বলে আমি এর আগে একজন কে ভালবাসতাম। অনেক ভালবাসতাম।কিন্তু সে আমাকে ঠকিয়েছে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে সে।তাই বলে সজিয়া কেদে দেয়। আমি ওর হাত ধরে বলি সবাই যদি এক হতো তাহলে পৃথিবীতে ভালবাসা বলে কিছু থাকত না। আর আমার ভাইয়ারা এমন নয়।তুই ভরসা করতে পারিস।সজিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে সত্যি বলছিস। আমি ইশারায় হ্যাঁ বললাম।তারপর ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
______________________
এইদিকে রাত্রি এসেছে তনয়ের অফিসে। রাত্রিকে দেখে তনয় বলে উঠে তুমি এখানে। রাত্রি গিয়ে তনয়কে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। তনয় রাত্রিকে ছাড়িয়ে বলে এটা অফিস রাত্রি।কেনো এসেছো সেটা বলো। রাত্রি তখন নেকা কান্না নিয়ে বলে। তনয় তুমি কি আমাকে আর ভালবাসো না। সব সময় দূরে দূরে থাকো কেনো তুমি।
আচ্ছা তনয় তুমি কি কোনো ভাবে তানুকে ভালবেসে ফেলেছো।
তনর রাত্রির দিকে কিছু খন তাকিয়ে থেকে বলে স্বাভাবিক নয় কি রাত্রি এটা।রাত্রি এমন উত্তর আসা করেনি তনয়ের থেকে তাও সে জানত এমন কিছু হবে।তাই সে আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল।
এবার কান্না ভাব নিয়ে বলে।তাহলে আমাদের ভালবাসার কি হবে তনয়। তুমি যে আমাকে ভালোবাসতে সেটা। আমি ও যে তোমাকে অনেক ভালবাসি তার কি হবে তনয়।
তাহলে ছেড়ে গিয়েছিলে কেনো সেদিন।কোথায় ছিল তোমার ভালবাসা সেদিন।তুমি জানতে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকা আমার সম্ভব না তাও চলে গিয়েছিলে।একবার ও ভেবে দেখনি আমার কথা। তাহলে আজ কেনো আসছো ফিরে। আর কোন ভালবাসার কথা বলছ যেটা আমার আর তানুর বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে।আমরা একটা পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ এখন। আর সব থেকে বড় কথা আমি সত্যি তানুকে ভালবেসে ফেলেছি রাত্রি।তাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না এখন।প্লিজ তুমি তোমার মতো করে জীবন গুছিয়ে নাও।আমি আর তানুকে কষ্ট দিতে চায়না।খুব তাড়াতাড়ি আমার মনের কথা বলে দেব তানুকে আমি।
তখনই রাত্রি ছুটে গিয়ে তনয়কে জড়িয়ে ধরে মিথ্যে কান্না করে বলে। আমি যে তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না তনয়।আমি যে তোমাকে ভালবাসি অনেক। প্লিজ আমাকে দূরে ঠেলে দিও না। এমন সময় আড়াল থেকে ছবি তুলে নেয় একজন তনয় আর রাত্রি একসাথে।
তনয় রাত্রিকে ছাড়িয়ে বলে আমার পক্ষে আর সম্ভব না কিছু রাত্রি আমাকে ক্ষমা করো তাই বলে তনয় বের হয়ে যায় কেবিন থেকে।
রাত্রি চোখ মুছে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে আমার কাজ শেষ এবার সঠিক জায়গা মতো দেখানোর পালা।তাই বলে সেও চলে যায়।
আমরা শপিংমলে দাঁড়িয়ে আছি।তাসু আপু এখনো আসেনি তাই। আই আর জাকিয়া অপেক্ষা করছি আর গল্প করছি।এমন সময় পেছন থেকে একজন বললেন হেই মিস আপনি এখানে। আপনার সাথে আবার দেখা হবে ভাবতে পারিনি…………
চলবে………..
(আজকের পর্ব লিখতে গিয়ে আমার এ খুব লজ্জা করছিল ইসস 🙈। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন আজকের পার্ট টা। রিচেক হয়নি।ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)