#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৫
— অনিক তনয়কে বলে ভাইয়া আমি পুলিশকে কল করি। তারপর ওরাই এদের শাস্তি দিবে। আর আমার মাকে তোমরা কি করবা জানি না। এতে আমাদের কিছু বলার নাই। তবে আমরা লজ্জিত মায়ের এমন কাজের জন্য। ক্ষমা করে দিও। জাকিয়া ও কেঁদে বলে। ভাইয়া মা এমন কাজ করেছে আমাদের বলার কোনো মুখ নাই তারপরও বলছি ক্ষমা করে দিও আমাদের।
— তনয় বলে এই সব কি বলছিস তোরা। তোদের কোনো দোষ নেই তাহলে তোরা কেন ক্ষমা চাচ্ছিস। তখনই পায়েল চৌধুরী আর রাত্রি এক সাথে এসে তনয়ের সামনে হাত জোড় করে বলে আমাদের মাফ করে দাও। ভুল করে ফেলেছি আমরা৷ এমন আর কখনো করব না।
— রাত্রি বলে আমি আজই চলে যাব এখান থেকে আর কখনো তোমাদের সামনে আসব না। দয়া করে পুলিশে দিওনা।
— আমি তোমাদের কাউকে পুলিশে দেব না। তবে মাফ কখনো করতে পারবো না। ছোটমা তোমার থেকে এমন সত্যি আশা করি নাই। তাও তুমি তো আমার মায়ের মতো তাই তোমাকে মাফ করে দিচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে এমন কিছু করার চেষ্টাও করো না তনয় বলে।
–পায়েল চৌধুরী কেদে বলে। আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ বাবা আমি আর কখনো কোনো খারাপ কাজ করব না। তানুকে বলে আমাকে মাফ করে দে মা। আমি ভুল করেছি।
— আরে আরে কি করছো ছোটমা উঠো। ভুল তো মানুষ মাত্র হয়। আর আমি কিছু মনে করেনি। আমরা সবাই এক সাথে ভালো থাকতে চাই। তুমি আর ওই সব মনে রেখো না তো। তাই বলে জড়িয়ে ধরে তাকে।
— রাত্রি চলে যায় তনয়ের বাড়ি থেকে।
— কোথাই ছিলিস তুই এতদিন তানু রনিত বলে। রনিতের কথায় সবাই বলে হ্যাঁ কোথায় ছিলিস তুই তানু এতদিন বল।
— তানু তখন সব খুলে বলে সবাইকে। সজিয়া এবার আড়ে আড়ে রহিতের দিকে তাকাচ্ছে। আজ তো সজিয়া গিয়েছে। রহিতও রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে সজিয়ার দিকে। এতদিন ধরে সজিয়া তাকে মিথ্যা বলে এসেছে ভাবতে অবাক লাগছে রহিতের।
— অনিক বলে ভাবি শুনলাম আমি নাকি চাচ্চু হবো সত্যি। তানু এবার লজ্জা পায় অনিকের কথা শুনে।
– জাকিয়া বলে আমার কি যে খুশি লাগছে তোমাকে বুঝাতে পারব না ভাবি। উফফ আমি ফুপি হবো ছোট ছোট পা নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেরাবে বেবি। জাকিয়ার কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।
— তানুর শাশুড়ী এসে বলে এতদিন যা করেছিস মেনে নিয়েছি কিন্তু এখন আর কোনো কথা শুনব না।আর না কোনো অনিয়ম মানবো না। আমার দাদুভাই আসছে বলে কথা। তাকে সুস্থ ভাবে চাই হু বলে দিলাম। তানু শাশুড়ী মায়ের এমন বাচ্চামু কথা শুনে হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
— নাবু, নুসু, অনু, নাহিদ, তন্নি, সায়ন সবাই এসে তানুকে ঘিরে ধরে তাদের যত জমানো কথা শুরু করে।
— তনয় তাসুর কাছে গিয়ে বলে আমাকে মাফ করে দে বোন। আমার ভুলের জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস এখনো পাচ্ছিস। তাসু এবার কোতুহল নিয়ে তনয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তনয় হাল্কা হেসে বলে আমি সব জানি পাগলী। তুই আর রনিত দুজন দু’জনকে খুব ভালবাসিস। আমি পিকনিকের দিনই সব দেখেছি। আমার রনিতকে বেশ পছন্দ তাই তোদের বিয়ে দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। তাসু শুধু হা করে শুনছে সব।
– তানু বলে সব দোষ আমার। আমি যদি রাত্রির কথায় এমন না করতাম তাহলে তোমাদের এতো কষ্ট পেতে হতো না। মাফ করে দাও তাসু আপু।
– তাসু তানুকে জড়িয়ে ধরে বলে। তুমি কোনো ভুল করোনি ভাবি। তোমার জায়গায় আমি থাকলে এমনটাই করতাম। সব আমার ভাগ্যে ছিল তাই এমন হয়েছে। তবে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। আর ভালো আছি কারো জন্য কষ্ট হয়না আমার।রনিতের দিকে তাকিয়ে বলে কথাটা।
— রনিত করুণ চাহনি নিয়ে কথা গুলো শুনছিল। তাসু কতটা কষ্ট থেকে কথা গুলো বলছে রনিত বেশ বুঝতে পারছে। তাসুর সাথে কথা বলা খুব জরুরি রনিতের। তাই যেভাবে হোক কথা বলতেই হবে। এই সব কথা মনে মনে ভাবতে ছিল রনিত।
— তানু এবার ওর মেজো চাচ্চুর কাছে গিয়ে বলে। চাচু আমি একটা কথা বলতে চায় তোমায়। বলো আমার কথা রাখবে তুমি।
— তনয়ের মেজো চাচ্চু বলে তুই বলবি আর আমি রাখবো না তা কখনো হয় বল কি কথা।
— তানু হেসে বলে অনিক আর নাবু দুজন দু’জনকে ভালবাসে। তুমি নাকি নাবুর জন্য পাত্র দেখেছো। দেখো চাচ্চু নাবুর অন্য কোথায় বিয়ে দিলে ও কখনো সুখ শান্তি পাবে না মন থেকে। হয়ত তোমাদের মুখের উপর কিছু বলার সাহস ওর নেই। কিন্তু জিবন্ত লাশ হয়ে থাকবে সেটা তোমার ভালো লাগবে বলো৷
— তানুর কথায় সবাই অবাক হয়ে অনিক আর নাবুর দিকে তাকাচ্ছে৷ নাবু তো ভয়ে জড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে নুসুর হাত খামছে ধরে। অনিকও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
— তানুর মেজো চাচ্চু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে বড় ভাইয়া যদি রাজি থাকে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই৷ সবার মুখে তখন একটু হাসির রেশ দেখা যায় কিন্তু তানুর বাবা কি বলে এবার সেটাই দেখার বিষয়।
— তানুর শ্বশুর বলে দেখো আমাদের বাড়ির ছেলেদের তো তোমরা জানোই নতুন করে কিছু বলার নেই। তাও তোমাদের মেয়ে তোমরা যা বলবে তাই হবে। তবে আমাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই।
– তানুর বাবা বলে ঠিক আছে কারো যখন কোনো আপত্তি নেই তাহলে ওদের বিয়েটা হবে। কিন্তু অনিক আগে নিজ পায়ে দাড়িয়ে তারপর। ওর তো পড়াশুনা এখনো বাকি আছে।
— সবাই এবার আনন্দে নেচে উঠে ছোটরা। নাবুও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এতো সহজে সব হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। নাবু অনিকের দিকে তাকাই তখনই অনিক নাবুকে চোখ মেরে দেই। আর নাবু লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
—————————-
— রনিত বলে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে আমাদের যেতে হবে আর আংকেল ( তনয়ের বাবাকে বলে) কাল আমার মা বাবা আসবে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।
— তনয় বলে না আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তুমি তাদের নিয়ে আসতে পারো কাল। তখনই তাসু বলে উঠে কিন্তু আমার আপত্তি আছে। আমি এই বিয়ে করব না। আর আমাকে কেউ জোর করবে না দয়া করে। যদি বিয়ে দিতেই হয় তবে তোমরা অন্য পাত্র দেখতে পারো আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।
— রনিত এবার তাসুর দিকে করূণ ভাবে তাকাই। কিন্তু তাসু চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর বলে আমি আমার কথা বলে দিয়েছি এতে কেউ আমাকে আর জোর করবে না আশা করি তাই বলে নিজের ঘরে চলে যায়।
— তনয় রনিতের কাছে গিয়ে বলে আমার বোন খুব জেদি আর অভিমানী। এবার কি করবে তুমি ভেবে দেখো। তোমার মনে হয় বিয়ে নেই কপালে। রসিকতা করে বলে তনয় কথাটা। কিন্তু রনিত তো চিন্তায় শেষ। কি করে মানাবে তার লেডি ডনকে। ভেবেই মাথায় হাত তার।
–অনেক রাত হওয়ার জন্য তানুর বাবারা আজ এখানে থেকে যাবে। কাল সকালে তারা রওনা দেবে। আর রনিত রহিত বের হয়ে পড়ে সাথে সজিয়া ও যায়। তারা সজিয়াকে তাদের বাসায় রেখে আসবে তাই।। তনয় বাড়ির আসার পর থেকে তানুর সাথে কথা বলেনি। তানু বেশ বুঝতে পারে তনয় তার উপর রেগে আছে। রাগাটা স্বাভাবিক তার জন্য। তানুর বেশি বোঝার জন্য আজ সবাই এতো কষ্ট পাচ্ছে। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানু। তনয় কোনো কিছু না বলে সোজা ঘরে চলে আসে। তাই দেখে তানুও চলে আসে তনয়ের পিছে পিছে।
—————————
—তনয় রুমে এসে টাওয়াল নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়। তানু এসে তনয় ওয়াসরুমে চলে গেছে তাই তনয়ের আসার অপেক্ষা করতে থাকে।
— তনয় বের হয়ে তানুর সাথে কোনো কথা না বলে সোজা বারান্দায় চলে যায়। তানু একটু হতাশ হয় তাতে। তারপর তানুও তনয়ের পেছন পেছন বারান্দায় গিয়ে দেখে তনয় দুই হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে। তানু এবার সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তনয়কে।
-তারপর বলে………
— আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে আমি তখন কি করব সত্যি বুঝতে পারছিলাম না। ওইসব দেখে আর কথা গুলো শুনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। তাই আমি বাধ্য হয়ে চলে যায়। আমাকে ক্ষমা করে দিন তনয় প্লিজ। তানু এবার তনয়ে সামনে দাঁড়ায় গিয়ে। তনয় সেই এক ভাবেই দাড়িয়ে আছে৷ তানু এবার তনয় এক হাত টেনে নিয়ে তার পেটের উপর রাখে সাথে সাথে তনয়ের শরীরে যেনো এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় ।
— তনয় এবার তানুর মুখের দিকে তাকাই। তানু ছলছল চোখে বলে দেখুন এখানে আমাদের সন্তান আছে সে কিন্তু সব দেখছে হু। আর সেও বলছে তার বাবা যেনো তার মা কে মাফ করে দেয়৷ আপনি কি তার কথাও শুনবেন না। তনয় এবার ফিক করে হেসে দেয় তানুর বাচ্চামু কথা শুনে। তা দেখে তানু যেনো প্রাণ ফিরে পায় এমন ভাব।
– তনয় বলে আমি ও বলব আমার বেবিকে। তার মা যে তার বাবাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তার বেলায় কি হবে শুনি। তাই বলে তানুর সামনে হাটু গেড়ে বসে তানুর পেটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বলে শুনছিস পিচ্চি তুই৷ তোর মা খুব বাজে তোর বাবাকে শুধু কষ্ট দেয় তুই আসলে তারপর আমরা এক সাথে শাস্তি দেব ঠিক আছে বাবা । তনয়ের এমন কান্ডে তানু হাসতে লাগে।
— তনয় উঠে তানুকে জড়িয়ে ধরে বলে। জানো কত কষ্ট পেয়েছিলাম আমি তোমার চলে যাওয়ার পর। কত রাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি। অনেক বড় শাস্তি দিয়ে ফেলেছো আমাকে তানু পাখি এবার তোমার পালা। এখন আমি তোমাকে ভালবাসা দিয়ে শাস্তি দেব যাকে বলে রোমান্টিক অত্যাচার। সো রেডি মিসেস চৌধুরী। প্রথম বার আমি মাতাল ছিলাম তাই কিছুই অনুভব করতে পারিনি কিন্তু এবার আমি সজ্ঞানে থেকে আমার সকল ভালবাসা দিয়ে তোমাকে আপন করে নেব।
— তনয়ের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে তানু লজ্জায় তনয়ের বুকে আরো মিশে যায়৷ তনয় মুচকি হেসে তানুকে কোলে নিয়ে ঘরে এসে বিসানায় শুয়ে দেয়৷ তানু লজ্জাতে চোখ বন্ধ করে আছে। তনয় তানুর দিকে তাকিয়ে বলে আমার দিকে তাকাও তানু পাখি। তানু মাথা নাড়িয়ে না বলে। তনয় আবার বলে কিন্তু কাজ হয় না। তাই তনয় বলে ঠিক আছে তাহলে আমি আমার কাজ শুধু করি তাই বলে তানুর উড়না টেনে ফেলে দেয় আর তখনই তানু চোখ বড় বড় করে তাকাই তনয়ের দিকে। তনয় তা দেখে জোরে হেসে দিয়।তারপর তানুর ঠোঁটে ঠোঁট আবদ্ধ করে দেয়। তারপর তারা চলে যায় গভীর ভালবাসার রাজ্যে ( এরা থাক ওরে মতো আমরা আর না ভাবি ওরে কথা। আমার আবার লজ্জা করে খুব 🙈🙈🙈)…………
চলবে…
ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।