#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৬
–সজিয়া আর রহিত বসে আছে একটা খোলা জায়গায়। এতখন সজিয়া অনেক ভাবে বুঝিয়েছে রহিতকে কিন্তু সে বুঝতে নারাজ। রহিতের এক কথা এতদিন ধরে তাকে সজিয়া মিথ্যা বলেছে মানতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে সাথে খুব খারাপ লাগছে।
-সজিয়া এখন আপাতত চুপ করে আছে৷ অনেক ভাবে যখন বুঝিয়েও রহিত বুঝেনাই তখন আর কিছু বলার নাই। কিন্তু রহিত বুঝতে পেরেছে সজিয়া বাধ্য হয়ে বলেনি তাকে। তাও একটু মজা নেওয়ার জন্য এমন রাগীভাব নিয়ে আছে। এর মাঝেই কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ কানে আসে রহিতের। রহিত চমকে উঠে সজিয়ার দিকে ফিরে দেখে সজিয়া কান্না করছে৷ এমন করবে সজিয়া ভাবতে পারেনি রহিত। এখন তার খারাপই লাগছে। বেশি হয়ে গেছে অভিনয়টা৷
— রহিত সজিয়াকে এক হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলে। আমি তো জাস্ট মজা করছিলা সজু। প্লিজ কান্না করো না। আমার ভুল হয়ে গেছে৷ এই দেখো কান ধরছি। তাও সজিয়া নাক টেনে চলেছে৷
– আমার প্রথমে সত্যি খারাপ লেগেছিল জানো। তুমি সব জানার পরও কিছু বলো নাই আমাদের। কত চিন্তায় ছিলাম আমরা তুমি তো দেখেছো বলো। তাই প্রথম একটু রাগ হয়েছিল রহিত বলে।
— আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তানু আমাকে বারন করেছিল৷ আমি তানুকে কথা দিয়েছিলাম তাহলে সেই কথা কি করে না রাখি বলো। আমার তো খুব খারাপ লাগতো বারবার তোমায় মিথ্যা বলতে তাও বলতে হতো আমাকে। তাই বলে আবার কেঁদে দেয় সজিয়া৷ রহিত এবার দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সজিয়াকে তারপর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে যা হওয়ার হয়েছে সব ভুল যেতে। সজিয়া এবার একটু হাসি এনে মুখে রহিতকে জড়িয়ে ধরে।
____________________________________
–রনিত কাল রাত থেকে তাসুকে ফোন করে চলেছে কিন্তু ততবারই ফোন অফ বলছে৷ রনিত জানে তাসু ইচ্ছে করেই ফোন বন্ধ রেখেছে রনিতের সাথে কথা বলতে চাইনা তাই৷ কিন্তু রনিত সেও বসে থাকার পাত্র না। যে করে হোক তাসুর সকল রাগ অভিমান ভাঙ্গতে হবে তাকে। তাই সে সকাল সকাল রেডি হচ্ছে তাসুর কলেজে যাবে সামনে থেকে কথা বলবে তাই।
— তানুর বাবারা সবাই চলে গেছে সকাল হতেই৷ তানু এতখন সবার সাথে নিচেই ছিল কিন্তু এখন সে ঘরে এসে দেখে তনয় কি জেনো করছে ঘরে। তানু এগিয়ে এসে বলে কি করছেন আপনি সব জিনিস গুছিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। তনয় তানুকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তানুকে পেছনে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে তানুর ঘাড়ে থুতনি রাখে তনয়ের এতে যেনো তানু জমে যায়। তাও নিজেকে শক্ত করে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
– তনয় বলে আমরা নিচের ঘরে শিফট করব। এই সময়ে তোমার উপর নিচ করা ঠিক হবে না। আমি আমার বেবিকে নিয়ে কোন রিক্স রাখতে চায়না। আমি মায়ের সাথে কথা বলেছি মা বলেছে আমাদের নিচের ঘরে যেতে। তাই বলে তানুকে ছেড়ে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।
– কিন্তু আমার তো সবে ৩ মাস এখনই এমন করার কোন মানে নেই। তাছাড়া আমার সমস্যা হবে না।
– তনয় তানুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার কাজ করতে করতে বলে আমি তোমার সমস্যার কথা বলিনি আমার বেবির সমস্যা কথা বলেছি। তানু এবার গাল ফুলিয়ে অন্যদিক ঘুরে থাকে। আর মনে মনে বলে এখন তো আমার চিন্তা হবেই না জানি তো। বেবিকে সবাই ভালবাসে আমাকে না। তাই বলে মন খারাপ করে তানু তখনই তনয় বলে তানু পাখি শেষে কিনা তুমি আমার বেবিকে নিয়েও হিংসা করছো। এমনটা আশা করি নাই তোমার থেকে। কেমন হিংসুটে তুমি তানু পাখি।
– তানু তনয়ের কথায় চমকে উঠে ভাবে মনের কথা তাও শুনতে পেলো কি করে। তানু কিছু না বলে ছোট ছোট চোখ করে তনয়ের দিকে তাকাই। তনয় এবার তানুকে ধরে বিসানায় বসিয়ে দিয়ে তারপর তানুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে৷ এমন কাজে তানু প্রথমে হকচকিয়ে যায়। তারপর নিজেকে সামলে তনয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তনয় তানুর এক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে। আমরা যদি না ভাবি আমাদের সন্তানের কথা তাহলে কে ভাববে বলো। সেতো আমাদের দুজনের সন্তান। ওতো আমার প্রাণ আর তুমি আমাএ দেহ। দেহ ছাড়া প্রানের কোনো অস্তিত্ব আছে বলো। তাই আমি দুজনকেই ভালবাসি। তোমরা দুজনই আমার জিবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তানু পাখি তাই বলে তানুর হাতে ঠোঁট ছুয়ে দেয় তনয়। তানু এবার কেপে উঠে।
— তানুর খুব ভালো লাগছে এখন। এমন সুখের দিন আসবে সে কখনো ভাবেনি। এত ভালো স্বামী শ্বশুর বাড়ি সত্যি অনেক ভাগ্য নিয়ে আসছে সে দুনিয়াতে। ভেবেই একটা হাসি উপহার দেয়।
___________________________________
–রনিত তাসুর ইউনিভার্সিটির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভেতরে চলে আসে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে তাসু সাথে তার বন্ধুরা বসে আছে একটা গাছের নিচে। সবাই হাসাহাসি করছে৷ তাসু ও তাদের সাথে কিন্তু মন খারাপ করে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
— রনিত তাসুকে দেখে সেদিকে হাটা দেয় এমন সময় একটা ছেলে এসে তাসুর হাত চেপে ধরে আর সেটা দেখে রনিত থেমে যায় আর রাগে ফেটে পড়ে।
— তাসু প্রথমে চমকে গেলেও পরে হেসে উঠে ছেলেটাকে দেখে তারপর বলে আরে রাহুল তুই। কোথায় ছিলিস তুই এতদিন। না বলে কয়ে উধাও হয়ে কোথায় গিয়েছিলি শুনি।
— রনিত তাসুদের কোনো কথা শুনতে পায়না কিন্তু তাসুকে ওই ছেলের সাথে হেসে কথা বলতে দেখে রাগে তার শরীর কাপতে থাকে। একে তো ফোন বন্ধ রেখেছে কোনো কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। এখানে এসে আবার ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলা হচ্ছে। রনিত আর তাসুর সামনে না গিয়ে বের হয়ে যায় ইউনিভার্সিটি থেকে।
— রাহুল বলে। আর বলিস না খুব ঝামেলায় ছিলাম। বাবার অফিসে যাওয়া লাগছিল কিছু দিন তাই ইউনিভার্সিটি আসতে পারি নাই। এতো ব্যস্ত ছিলাম তোদের খবর ও নিতে পারি নাই। তা কি খবর তোর বল। আর জিজুর খবর কি।
– তাসুর এবার মন খারাপ হয়ে যায়। তাই দেখে রাহুল বলে সব ঠিক আছে তো তাসু। এমন মন মরা হয়ে ক্যান তুই তো এমন থাকার মেয়ে না। আমাদ্রর লেডি ডনকে কে ছ্যাঁকা দিল শুনি তাই বলে রসিকতা করতে লাগে রাহুল।
– আসুন রাহুলের পরিচয় দিই। এই সুন্দর যুবকের নাম রাহুল তাসুর ক্লাসমেট আর খুব ভালো বন্ধু তারা। অনেক দিনের বন্ধুত্ব তাদের। এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড যাকে বলে।
– তাসু রাহুল কথা বলে ক্লাসে চলে যায় ক্লাসের সময় হওয়াতে।
— জাকিয়া সেদিন কফিশপ থেকে আসার পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। সেদিনের পর মেহেদীর সাথে জাকিয়ার কথা হয়নি আর। জাকিয়া অবশ্য ফোন দিয়েছিল কিন্তু মেহেদীর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। জাকিয়া মনে মনে ভাবে মনের কথাটা প্রকাশ না করলে ভালো হতো। অন্তত বন্ধু হয়ে তাও পাশে থাকতে পারত আজ মেহেদীর। কিন্তু সেটাও হারিয়ে ফেলল জাকিয়া আজ।। ভেবেই ফুপিয়ে উঠে জাকিয়া। এমন সময় তানু আসে ঘরে জাকিয়ার। তানু জাকিয়ার দিকটা এসে পর্যন্ত লক্ষ্য করেছে। তাই সে এসেছে জাকিয়ার সাথে কথা বলতে।
— তানুকে দেখেই জাকিয়া চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু তানুর চোখকে তাও ফাকি দিতে পারেনি সে। তানু এসেই জাকিয়া কে প্রশ্ন করে। কি হয়েছে তার।
– জাকিয়া বলে কি হবে কিছু না। এমনি ভালো লাগছে না। কিন্তু তানু তো তানু সে মানতে নারাজ। তাই জাকিয়া বাধ্য হয়ে মেহেদীর সব কথা বলে। তানু শুনে একটু খারাপই লাগে।। তারপর জাকিয়ার হাত ধরে বলে তোমার ভালবাসা যদি সত্যি হয় দেখো তুমি ঠিক তাকে পাবে। একটু সময় দাও। আমি আর তোমার ভাইয়া কথা বলব দরকার হয় মেহেদীর সাথে।
– জাকিয়া বলে না ভাবি জোর করে কিছু হয়না। তাই আমি ও চাইনা মেহেদী ইচ্ছের বাইরে কিছু করুক। তাই তাকে তার মতো থাকতে দিতে চায়৷ সব ভালবাসা যে পূর্নতা পায় এমন তো না। আমার টাও তার মধ্যে একটা ভেবে নেব। যদি মেহেদী আমাকে কখনো ভালবাসে তাহলে সে আসবে না হলে না আমি আর ভালবাসার দাবি নিয়ে তার সামনে যাব না। তানু বুঝতে পারছে জাকিয়ার মনের অবস্থা তাই সে আর কিছু না বলে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে আসে।
— রাতে তাসু ঘুমিয়ে আছে কিন্তু তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় তাকে জানান দিচ্ছে তাকে কেউ ঘুমের মধ্যে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু কে। তাসু ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করে আর সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে…………
চলবে……
ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।