এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ৫

0
388

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৫

তানুর বিদায়ের সময় সবাই কান্না শুরু করে দিয়েছে। আর তানু সেতো প্রথম থেকেই কান্না করেই যাচ্ছে।ছোট কাকি খুব করে চেষ্টা করছে সামলানোর কিন্তু পারছে না।

তানুর মা তো কান্না করতে করতে অবস্থা খুব খারাপ করে ফেলেছে।তিনি যে মেয়েকে খুব ভালবাসে। তানুর বাবা ও নিজেকে খুব করে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু সেও যেনো আজ পারছে না চোখের পানি ধরে রাখতে। হাজার হলেও মেয়েদের যে বেশি ভালবাসে যতই নিয়মের বেড়াজালে রাখুক তাদের ভালো তো কম বাসে না।

নাবু,নুসু,অনু,নাহিদ, সায়ন,তন্নি,তারিন আপু,হাবিবা হাফসা ও আরু সহ সবাই কান্না করে চলেছে। অরিন আপুর মেয়ে মিস্টি সেও বুঝে গেছে হয়ত বিদায় পর্ব চলছে তাই সেও কান্না করছে তাদের সাথে। নাবুর কান্না দেখে অনিক নাবুর পাশে গিয়ে আলতো স্বরে বলে, এই যে মিস সুন্দরী এতো কান্না করা লাগবে না আপনাকেও খুব তাড়াতাড়ি বোনের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি ওয়েট। এই কথা বলে নাবুর হাতে গেটের টাকা দিয়ে আর এক মুহুর্ত সে না দাড়িয়ে চলে যাই আর বেচারা নাবু কি বলে গেলো তাই অবাক হয়ে ভাবছে যার ফলে তার কান্না ও থেমে গেছে।

আর একদিকে তাসু আপু আড়ে আড়ে দেখছে রনিত ভাইয়াকে। রনিত ভাইয়া ও সেম কাজ করছে। যখনি দুজনের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে তারা অপ্রস্তুত হয়ে উঠছে। সব কিছু শেষ করে তনয়রা বেড়িয়ে পড়ে তানুকে নিয়ে।তানুর খুব ক্লান্ত লাগছে একে তো বিয়ের এতো ঝামেলা তার উপর কান্না করেছে অনেক । গাড়িতে বসে সে মাথা এলিয়ে দিল সিটে।তনয় একবার তানুর দিকে তাকিয়ে সামনে চোখ দিল। তনয়দের গাড়ি এসে থামলো তনয়ের বাড়ির সামনে। তারপর সবাই নেমে পড়লো গাড়ি থেকে তানু তো হা করে দেখছে বাড়িটা।এতো বড় আর সুন্দর বাড়িটা। সব কিছু সাদা দিয়ে করা অনেক সুন্দর লাগছে।তখন তনয় তানুকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বললো।

তানুরা বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে একজন মহিলা বলে উঠলেন কেমন আছিস মা।আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো। আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি কে এনি।তখনি তাসু আপু বললেন ভাবি এটা আমার মা মানে তোমার একমাত্র শাশুড়ী মা।পাশের মহিলাটা কে দেখিয়ে বললেন এটা অনিক আর জাকিয়ার মা মানে আমার চাচি শাশুড়ী । তবে তিনি বেশ সৌখিন। সাজগোজে একদম পার্ফেক্ট যা দেখে বুঝলাম ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক জরজেট শাড়ি।
তনয় এর মা মানে আমার শাশুড়ীমা দেখতে সুন্দর সাথে গোছানো সাজসজ্জা তার। দেখেই মনে হয় একজন মহীয়সী নারী।

আমার শাশুড়ীমা এর নাম রেহেনা পারভিন আর চাচি শাশুড়ীমা মানে তনয়ের চাচির নাম পায়েল চৌধুরী।

আমার শাশুড়ীমা আমার কাছে এসে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে বললেন মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর দেখতে তুই৷ চোখ জুড়িয়ে যায়। তুই কিন্তু আমার আর এক মেয়ে তাই আমাকে মা বলে ডাকবি বলে দিলাম।আমি উনার কথা শুনে হেসে মাথা নাড়ালাম। তখনি আরমান চৌধুরী মানে আমার শ্বশুর মশাই বললেন হ্যাঁ ওতো তোমার একার এ মেয়ে আমার তো কেউ না।তাই বলে গাল ফুলিয়ে থাকলেন আমি হেসে তাদের সালাম করলাম তার বললাম আমি আপনাদের দু’জন এর মেয়ে। সবাই হেসে উঠলো।তবে মিসেস পায়েল চৌধুরী মানে তনয়ের চাচি যে খুব একটা খুশি না এটা খুব ভালো বুঝতে পারলাম।। তনয় অনেক আগেই ঘরে ভলে গেছে ফ্রেস হতে। আমাকে জাকিয়া বললো চলো ভাবি ঘরে দিয়ে আসি তোমায় ফ্রেস হবে।এই ভাবে আর কতখন থাকবে৷। আমার শাশুড়ীমা ও বললেন হ্যাঁ যা যা। অনেক ধকল গেছে তোর উপর একটু বিশ্রাম নে।

__________________

জাকিয়া আমাকে উপরে একটা ঘরের দরজার সামনে এনে দাড় করিয়ে বললো এটা তোমার ঘর আজ থেকে ভাইয়া থাকে এই ঘরে যাও ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে নাও পরে আবার তোমাকে সাজিয়ে দেবো বাসর ঘরের জন্য। তাই বলে মুচকি হাসি দিল সে আমি লজ্জাতে নিচে তাকালাম।তারপর জাকিয়া চলে গেলো।আমি দর‍জার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি যাব কি যাব না।অনেক ভয় কাজ করছে।তখনি তনয় ভেতর থেকে বলে উঠলো ওইখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আসো।আমি তার কথাই চমকে উঠলাম।
তারপর ভেতরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে বসে পড়লাম অনেক ক্লান্ত লাগছে।

এখন রাত ১০ টা বাজে আমাকে তাসু আপু আর জাকিয়া সাজিয়ে দিচ্ছে আর অনিক ভাইয়া ওদের এটা সেটা বলে রাগিয়ে দিচ্ছে আমি শুধু মুচকি হাসছি তাদের কান্ড দেখে।সাজ শেষ করে আমাকে ১২ টার দিকে তনয়ের ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো জাকিয়া আর তাসু আপু।সাথে এটাও বলে গেছে সকালে সব শুনবে তারা কি হয়েছে আমি তো তাদের কথায় লাল,নীল, বেগুনী হয়ে যাচ্ছি লজ্জায় 😇।

আমি বসে আছি একা এখনো তনয় আসেনি। অনেক ভয় লাগছে সাথে একরাশ ভালো লাগাও।ভাবতেই অবাক লাগছে কাল পর্যন্ত আমি অবিবাহিত ছিলাম আর আজ একটা দিনের ব্যবধানে আমি বিবাহিত একজনের স্ত্রী। কত দায়িত্ব আমার এই সংসারে। তবে এই বাড়ির সবাই যে অনেক ভালো এটা মন খুলে বলতে পারি কত সহজে আমাকে আপন করে নিয়েছে তারা।এর মর্যাদা আমি রাখতে পারবো তো এই সকল কথা ভাবতে ছিলাম এমন সময়ে দরজা খোলার শব্দ কানে আসলো আমি নড়েচড়ে বসলাম।সাথে ভয়টা ও অনেক বেড়ে গেছে।

তনয় এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমি বেশ উপলব্ধি করতে পারছি।আমি খাট থেকে নেমে তাকে সালাম করতে যাব তখনি তনয় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে থাক এই সব লাগবে। আমি এই সব নিয়ম মানি না তুমি ও মেনো না।আমি কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছি তার দিকে।তারপর সে বললো যাও ফ্রেস হয়ে এসো সাথে অজু করেও এসো নামাজ পড়বো।আজ তো আমাদের জীবনের পবিত্র রাত একটা।। আমি মাথা ঝাকিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।

তারপর আমরা একসাথে নামাজ শেষ করলাম। তনয় আমাকে নিয়ে এসে খাটিয়ে বসিয়ে দিল তারপর আমার হাতে একটা বক্স দিয়ে বললো এটা তোমার। আজ নাকি বউকে কিছু গিফট দিতে হয় বন্ধুরা বলেছিল তাই নিয়ে আসলাম। আমার অনেক ভালো লাগছিল।স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার এটা আমার।অনুভূতি টা প্রকাশ করার মতো না।

তারপর তনয় আমাকে বললেন তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই তানু। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি আমার পরিবারের কথা মতো। মন থেকে কিন্তু বিয়ে আমি করতে চাইনি কিন্তু মা বাবার জন্য বাধ্য হয়ে করা লেগেছে।জানি তোমার কোনো দোষ নেই আবার আমার ও কোনো দোষ নেই।কথা টা শুনার পর আমার যেনো আমার শরীর কেমন অসার হয়ে আসছিল আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
তারপর তনয় আবার বলে উঠলো আমি একজন কে ভালবাসতাম কিন্তু সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু পারিনি তাকে ভুলতে আর হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব ও না।তাই আমি তোমার সব রকম দায়িত্ব পালন করবো এতে কোনো কমতি আমি রাখবো না।শুধু স্বামীর যে দায়িত্ব ওইটা পালন করতে পারবো না।আমার সময় লাগবে তানু।আমি শুধু তার কথা শুনে চলেছি আর আমার চোখ দিয়ে পড়ছে অশ্রুজল।

আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে পারি কিন্তু। বাইরে সবার কাছে আমরা খুব ভালো স্বামী স্ত্রী হয়ে থাকবো। আর এই ঘরে খুব ভালো বন্ধু । হবে আমার বন্ধু তানু কথা টা বললেন তনয় আমি চোখের পানি টা মুছে মুখে একটু হাসি আনার চেষ্টা করলাম।।তারপর বললাম কেনো পারব না।আমার গলা ধরে আসছিল। কথারা যেনো কোথাই গিয়ে ঘাপটি মেরেছে তাও আমি অনেক কষ্টে বললাম কথা টা।তখন তনয় ও হেসে বললো তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু তাই বলে হাত এগিয়ে দিল। আমি তার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে তার দিকে তাকাইলাম।হাসলে কত সুন্দর লাগে মানুষটা কে।তারপর তনয় আমাকে ইশারা করে হাত রাখতে বললেন।আমি ও হাত দিলাম।

এরপর আমাকে বললেন শুয়ে পড়ার জন্য এখন আমি দ্বিধায় পড়ে গেছি আমি ঘুমাবো কোথাই তিনি তো আমাকে বন্ধু মনে করেন পাশে নিশ্চয় ঘুমাতে দিবে না।তনয়ের রুমট অনেক বড় আর অনেক সুন্দর । বেশ গোছানো ঘর।ঘরে একটা সোফা আছে যেখানে রাত অনন্ত পার করা যাবে।আমি বালিশ নিয়ে সোফার দিকে পা বাড়ালাম তখন তনয় বললো কোথায় যাচ্ছো আমি থমকে দাঁড়ালাম।তারপর মিনমিনে কন্ঠে বললাম সোফায় ঘুমাতে।তনয় বললো তুমি বিসানার ঘুমাতে পারো সমস্যা নেই।অনেক বড় আছে বেড টা সমস্যা হবে না আমার।। আমি এই পাশে আর তুমি ওই পাশে।আমি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই বিসানায় পিঠ ঠেকাতেই ঘুমিয়ে পড়লাম………

চলবে……
( রিচেক হয়নি।ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here