#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৩
আজ মেহুর বিয়ে। সবাই অনেক ব্যস্ত চারিদিকে। আমরা নাস্তা করে মেহুর ঘরে বসে গল্প করছি। একটু পরে পার্লার থেকে মানুষ আসবে মেহুকে সাজাতে। সেই সাথে সবাই সাজবে পার্লারে বায়না ধরেছে স।সবাইকে তো এক সাথে সাজানো সম্ভব না। তাই আমি ঠিক করেছি আমি আমি আর মেহু জাকিয়া থাকব।আর তাসু আপু নাবু নুসু সজিয়া অনু তারা পার্লারে যাবে সাজার জন্য। কিন্তু এখন কথা হলো নিয়ে যাবে কে।একা এতো গুলো মেয়ে একসাথে বের হতে দিবে না কেউ। তখনি আমার রহিত ভাইয়ার কথা মনে পড়ল।
আমি রহিত ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বললাম অদ্ভুত বিষয় ভাইয়া বলার সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো । যাকে বলে বলে একটা কাজ করাতে হয় আর সে এক কথায় রাজি 🙄। অবশ্য কে কে যাবে সেটা আগে জিজ্ঞেস করেছিল। তবে যাই হোক যেতে চেয়েছে এটাই অনেক। তারপর ওরা সবাই বের হয়ে গেলো পার্লারের উদ্দেশ্য। রনিত ভাইয়ার গাড়ি নিয়ে গেছে রহিত। সবাই যে যার মতো বসে গেছে বেচারা সজিয়া শুধু পড়ে আছে এখন।রহিতের পাশের সিটে বসা ছাড়া তার উপায় নেই।রহিত তো বড্ড খুশি এতে। সজিয়া উপায় অন্তর না পেয়ে সামনে বসতে বাধ্য হলো।কেমন অস্বস্তি লাগছে তার রহিতের সাথে বসতে।তাই সে বসে ২ হাত মুচরামুচরি করছে।রহিত দেখছে আর হাসছে ঠোঁট চেপে। আর বাকিগুলা তো পেছনে গল্প করতে ব্যস্ত সামনে কি হচ্ছে তা দেখার সময় তাদের নেই।
মেহুকে সাজানো শেষ করে বসে আছি আমি আর জাকিয়া । কিছুখন পর তাসু আপুরা চলে আসলো।সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে। পরীর মতো লাগছে ( তাই বলে আবার পরীমনি ভাববেন না আপনারা) আমি দেখেই বলে উঠলাম বাহ তোমাদের তো সেই লাগছে। তখন তাসু আপু নাবু নুসু অনু এক সাথে বলে উঠলো তোমাকেও সেই লাগবে।কি সুন্দর শাড়ীটা। কি দিয়েছে গো তাসু আপু বলল।আমি লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিলাম।এতে যা বুঝার তা বুঝে গেলো তারা।তারপর বলে উঠলো অইহই বুঝছি ভাইয়া এতো সুন্দর চয়েস আর রোমান্টিক আগে জানতাম না তো। তখনি মা।মেজো কাকি ছোট কাকি তন্নি আর বড় আপু তারিন আসলো ঘরে।আমি আপুকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। পাশে থেকে মিস্টি আমার শাড়ি টেনে ধরল আমি নিচে দেখি মিস্টি দাঁড়িয়ে তাকে কোলে নিলাম তারপর মিস্টি বলে তুমি আমায় ভুলে গেতো খালামনি। তোমাল সাথে কতা নেই যাও। আমি হেসে বললাম আমার মিস্টিমা কে কি আমি ভুলতে পারি। আমার তো সব সময় মনে পড়ে। এতো এতো মনে পড়ে।সত্যি বলতো তুমি মনে পলে আমায়।আমি হ্যাঁ বলে মাথা দুলালাম। এর মধ্যে কানে আসলো বর আসছে।আমার বুক ধক করে উঠলো তনয় এসেছে এই ভেবে।মেহুর অবস্থা ও এক । তার মন খারাপ চলে যাবে বাবা মা ছেড়ে। বর এসেছে শুনে সবাই এক লাফে বের হয়ে যাই ঘর থেকে।কারণ আবার গেটে তারা মারামারি করবে। আমি ছোট কাকিকে মেহুর কাছে বসিয়ে চলে গেলাম।সেখানে।কারণ আমি থাকব এবার গেটে।আমার বিয়েতে মিস করেছি এবার শোধ নেব 😁।
গেটে চলছে প্রায় সমান সমান যুদ্ধ। আমি তনয়ের সাথে অনিক নাবু । এসে দেখি জাকিয়া আর তাসু ওই দলে চলে গেছে। আয়হায় মায়া গুলা কি পল্টিবাজ।একটা টাকাও দিব না হু। তাসু আপু ঝগড়া করে রনিত ভাইয়ার সাথে। এক প্রকার যুদ্ধ শেষ করে মিটমাট হলো ২৫ হাজার টাকা দিবে তারা। তখন অনিক বলে ভাবি তুমি এমন কি করে করতে পারো এটা না তোমার ভাই প্লাস দেবরের বিয়ে।আমি একটা ভেংচি কেটে বলি আগে টাকা পরে দেবর।আমার কথাই সবাই হেসে উঠে। তনয় বলে ঠিক আছে আমি ও দেখব। অনিক বলে মিস বানু সরি নাবু আমি আপনাকে দেখে নেব।নাবু একটা ভেংচি কাটে । রনিতা ভাইয়া ইশারা করে বলে তাসু আপুকে পরে দেখে নেব।আপু ও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে চলে যায়।
বিয়ের সকল কার্যক্রম শেষ। এখন বিদায়।তনয় বলেছে সে আমাকে নিয়ে যাবে।আমি বলেছি থাকব আরো ২ দিন কিন্তু তার কথা অনেক ফাকি হয়েছে পড়াশোনা আর না।সামনে এক্সাম। সত্যিই সামনে এক্সাম আছে ফাইনাল তাই আর বেশি জোর করলাম না।তাসু জাকিয়া আমি সজিয়া সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি। মেহু সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে আমি তনয়ের সাথে গেলাম সাথে জাকিয়া আছে। আমরা যেহেতু বাড়তি মানুষ তাই একটু গাড়ির সংকট দেখা গেলো। এতোদুরের পথা গাদাগাদি করে যাওয়া যাবে না।তাই ঠিক করা হলো তাসু আপু আর সজিয়া রনিত ভাইয়ার গাড়িতে যাবে।সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে।তাই আর বেশি কিছু না ভেবে সবাই সবার মতো চলে গেলো। তাসু আপু খুব খুশি রনিতের সাথে এতো পথ একসাথে যাবে তাই রনিতা ভাইয়ার ও সেম। আর এইদিকে সজিয়া না চাইতে বেচারাকে ঘুরে ফিরে রহিতের পাশে বসতে হচ্ছে তবে রহিতকে যে তার ভালো লাগে না তা নয় লজ্জা আর একটা অস্বস্তি কাজ করছে তার তাই।। রনিত ভাইয়া ড্রাইভিং করছে পাশে তাসু আপু। পেছনে রহিত আর সজিয়া।গাড়ি চলতে শুরু করল আপন গতিতে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে রনিতা ভাইয়া আপুর হাত নিজের হাতের মুঠোই আবদ্ধ করে নেয়। অন্ধকার এর জন্য কেউ কিছু বুঝতে পারে না।
আমাদের গাড়িতে আমি সামনে আছি তনয়ের সাথে পেছনে জাকিয়া আর অনিক ভাইয়া। তনয় গাড়ি চালাচ্ছে আর আড় চোখে তানুকে দেখছে।খুব সুন্দর লাগছে তানুকে কালো শাড়ীতে ফর্সা গায়ে বেশ ফুটে উঠেছে রংটা। আমি বুঝতে পারছি তনয় আমার দিকে তাকাচ্ছে তাই কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। আমি বাইরে মুখ করে বসলাম। অনিক আর জাকিয়া ঘুমে ঢুলছে সারাদিন অনেক দৌড়ঝাপ হয়েছে সবার। আমি ও ক্লান্ত খুব তাই গাড়ির কাচে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম তনয় সেটা দেখে আমাকে তার দিকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিল আমি ও কিছু না বলে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
___________________
১২ টা কাছাকাছি আমরা অন্তর ভাইয়ার বাড়ি এসে নামলাম। আর দফা হৈ চৈ পরে গেলো নতুন বউ বরন করে ঘরে তোলা নিয়ে। তারপর আমরা মেহুকে অন্তর ভাইয়ার রুমে বসিয়ে বাইরে চলে আসব এমন সময় মেহু আমার হাত চেপে ধরে আমি তাকে ইশারা করে আস্বস্ত করি।বেচারা অনেক ভয় পেয়ে আছে। নতুন জায়গা নতুন মানুষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। রনিত ভাইয়া তাসু আপুদের নামিয়ে চলে গেছে। অন্তর ভাইয়া ভেতরে আসতে বলেছিল কিন্তু অনেক রাত হওয়ায় তারা চলে যায়। কাল রিসিপশনে
আসবে বলে।
আমরা বাসর ঘরের গেট ধরে দাড়িয়ে আছি। আমাদের সাথে তনয় আর অনিক ভাইয়া ও আছে। অন্তর ভাইয়া এসেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এমন টা আশা করেনি সে।তখন অন্তর ভাইয়া বলে তনয় তোর থেকে এমনটা আশা করেনি আমি।দেখ তোর বেলাই কিন্তু কোনো ঝামেলা করিনি আমি। আমার বেলায় কেন এমন করছিস ভাই। তনয় একটা ভাব নিয়ে বলে সেটা তোর ব্যাপার ছিল।এখন আমাদের টাকা দে তারপর বউয়ের কাছে যা নাহলে বাইরে থাক সারা রাত। আমরা এখানেই আছি সমস্যা নেই৷ রনিত ভাইয়া একটা অসহায় ফেস করে বলে কত দেওয়া লাগবে। আমি তখন বললাম বেশি না ২০ দিলে হবে । আমার কথা শুনে অন্তর ভাইয়া বলে এই ব্যাপার আগে বলবা না। ২০ টাকার জন্য তোমরা দারোয়ান হয়েছো আমি আরো বেশি এই নাও ৫০ টাকা দিলাম।আমরা তো পুরাই শকড বলে কি।তখনি জাকিয়া তাসু আপু চিল্লিয়ে বলে ২০ টাকা নয় ২০ হাজার দাও। আর আমাদের দারোয়ান বলা তার জন্য আরো ৫ হাজার।অনিক ভাইয়া বলে একদম ঠিক।
ভাইয়া তো এবার ছেড়ে দে মা কেদে বাচি অবস্থা। আগের টাই তো ভালো ছিল ভাই আবার ৫ ক্যান। আম বললাম ওইটা আমাদের টিপস দাও তাড়াতাড়ি খুব ঘুম পাই। ভাইয়া আর কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে ভেতরে গেলো।আমরা চলে আসলাম।আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। কাল সকাল সকাল আবার আসতে হবে রিসিপশন আছে তাই। আমি আর তনয় ঘরে এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়লাম তারপর ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। তনয়ের আজ খুব শান্তি লাগছে কারণ আজ পাশে তানু শুয়ে আছে তাই।আজ সে শান্তির ঘুম দিবে তাই তানুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো সে………..
চলবে…………
( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন )