#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৮
-“রনিত ভেতরে আসতে আসতে বলে উঠে কে বলেছে তাসু বিয়ে করবে না৷ সবাই দরজার দিকে তাকাই রনিতের কথা শুনে৷ দেখে রনিত আর তার বাবা মা সাথে। রনিতকে দেখে তাসু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুখে হাসি নিয়ে আসে”।
-” আরমান চৌধুরী রনিতকে দেখে বলে তোমরা? আসো ভেতরে আসো। রনিতের বাবা মাকেও বসতে বলে। তানু তার ফুফা ফুফিকে দেখে দৌড়ে যায় তাদের কাছে৷ তনয় বলে তানু আস্তে এই ভাবে ছুটছো কেনো। তানু ফুফুর পাশে গিয়ে মুখ গোমড়া করে তনয়ের কথায় আর সবাই হাসে তাদের কান্ড দেখে”।
-“তানুর ফুফু তানুকে জড়িয়ে ধরে বলে কেমন আছিস মা। তোকে নিয়ে কত চিন্তায় ছিলাম আমরা জানিস না। এতো স্বার্থপর কি করে হয়েছিল তুই। আমাদের চিন্তায় ফেলতে খুব ভালো লেগেছিল বুঝি”।
– তানু কান ধরে কিউট ফেস করে বলে সরি ফুফি ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না। রাগ করো না প্লিজ। তারপর দুজন হেসে আবাএ জড়িয়ে ধরে।
-“অনিক রনিতকে বলে ভাইয়া তোমরা হঠাৎ। বিয়ের কথা বলতে এসেছো বুঝি। কিন্তু কনে তো না বলে দিয়েছে তাহলে কার সাথে বিয়ে করবে আবার। তাসুর দিকে তাকিয়ে টিক্কারি মেরে বলে কথাটা।
-“তাসু এবার কটমটে চোখ করে তাকায় অনিকের দিকে আর অনিক দাত বের করে একটা হাসি দেয় যা দেখে তাসুর আরো রাগ বেড়ে যায়।
–” রনিত বলে চিন্তা নেই অনিক তোমার বোন বিয়ে না করলে আর কি করার বলো। আমার জন্য অনেক সুন্দরী মেয়ে অপেক্ষা করছে তাদের মধ্যে নাহয় একজনকে বাকিটা বলার আগেই তাসু বলে খুব সখ না অন্য কাউকে বিয়ে করার। আমি করবো বিয়ে আর তারপর বুঝাবো মিস্টার ডাক্তার। রনিত সহ উপস্থিত সবাই হেসে উঠে জোরে তাসু বুঝতে পারে যখন কি বলে ফেলেছে সবার সামনে লজ্জায় আর কারো দিকে তাকায় না। মাথা নিচু করে নিজেকে নিজে বকা দিচ্ছে। সব সময় উল্টো পালটা কথা একটু দেখে শুনে কথা বলবি তো গাধি নিজেকে বলে তাসু।
-“তানু আর জাকিয়া বিষয়টা লক্ষ্য করে তাসুর পাশে গিয়ে দুজন একসাথে বলে ধরা পড়ে গেলে তো এবার। কি যে বিয়ে পাগলী তুমি ননদী সবার সামনে তাই বলে এমন করে কপাল চাপড়ানো ভাব করে বলে তানু। তাসু তখন অসহায় ফেস করে বলে ভাবি প্লিজ তুমি আবার পিছে লেগো না। আমি বেশ বিয়ে করতামই না তোমার ভাইকে হু৷ কিন্তু কাল রাতে এইটুক বলেই তাসু মুখ চেপে ধরে কি বলতে যাচ্ছিল সত্যি পাগল হয়ে গেছি মনে মনে বলে তাসু।
– সরু চোখে এবার তাকায় তানু আর জাকিয়া তাসুর দিকে৷ তারপর সন্ধিহান দৃষ্টি নিয়ে জাকিয়া বলে কাল রাতে কি আপু তানুও ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। তাসু তো পড়েছে মহাবিপদে৷ কি বলবে এবার৷ তাসু এবার অল্প হাসার চেষ্টা করে বলে কই কিছুই না। কি আবার কাল রাতে। কি বলছো সব তাই বলে ওদের পাশ থেকে সরে যায়। আর ওরা দুজন সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে থাকে তাসুর দিকে।
— আরমান চৌধুরী বলে তাসু যখন রাজি তাহলে আর কি আমরা বিয়ের দিন ঠিক করি। আর মেহেদী যেহেতু জাকিয়াকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আমাদের তাতেও কোনো আপত্তি নেই। দুই বিয়ে তাহলে একসাথে দিলে কেমন হয় ভাবি সহেলা খানকে বলেন। তারপর সবাই মতামত দেয় একদিনে ২ বিয়ে হবে। সবার মুখে ফুটে উঠে উজ্জ্বল হাসি🥰।
__________________________
–মেহেদী বলে আমি জাকিয়ার সাথে একটু আলাদা করে কথা বলতে চায়। কথা জাকিয়ার কানে যেতেই চমকে উঠে জাকিয়া। খুব লজ্জা সাথে ভীষণ রকম অস্বস্তি লাগছে তার মেহেদীর সামনে যেতে।
– তনয় বলে অবশ্যই কথা বলবি। তারপর জাকিয়াকে বলে উপর থেকে ঘুরে আই তোরা যা। জাকিয়া আর কি বলবে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে হাটা ধরে। মেহেদী ও যায় সাথে। এইদিকে রনিত বলে তাহলে আমরা বিয়ের একটা ডেট ফিক্সড করি আংকেল। আরমান চৌধুরী তারপর একটু ভেবে এক মাস পর তাদের বিয়ের ডেট করে। সবাই কোনো দ্বিমত ছাড়াই মেনে নেয়। তাসুর রনিতের দিকে তাকাই তখনই রনিত একটা হাসি উপহার দেয় তাসুকে। তাসুও একই কাজ করে।
— তানু বলে কি মজা দুই বিয়ে একসাথে হবে। আমি তো অনেক আনন্দ করবো। তখনই তনয় বলে একদম না। কোনো লাফালাফি হবে না এই সময়ে। বিয়ে ওদের হচ্ছে তোমার না এতো লাফানোর কিছু নেই। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করো বিয়েই যেতে দেব না ঘর বন্দি করে রাখবো বুঝেছো। তানু এবার কাদো কাদো মুখ করে তার শাশুড়ীমা কে বলে দেখেছো মা তোমার ছেলে কত বাজে আমায় শুধু বকে। আমাকে নাকি বিয়েই যেতে দিবে না তাই বলে বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দেয়।
-” তানুর কাজে তনয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। মনে মনে ভাবে এই মেয়ে কি দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে নাকি। তানুর শাশুড়ী এসে তানুকে জড়িয়ে ধরে বলে একদম বকবি না আমার মেয়েকে বলে রাখছি। কাদে না মা তুই থাকবি বিয়েতে আর অনেক মজা করবি আমি বলছি। তানু বলে সত্যি তো রেহেনা পারভিন মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে। তানু হেসে উঠে তনয়কে একটা ভেংচি কাটে। তাতে তনত মুখ চেপে হাসে”৷
– জাকিয়া আর মেহেদী ছাদে এসে একপাশে দাড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতা ভেঙে মেহেদী বলে রেগে আছো আমার উপর জাকিয়া। জাকিয়া এবার মেহেদীর মুখের দিকে তাকায় তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে না। মেহেদী আবার বলে তাহলে কষ্ট পেয়েছো? জাকিয়া এবার কিছু বলে না চুপ করে থাকে।
– মেহেদী বলে সরি আসলে সেদিন আমিও তোমায় কিছু বলতাম। তোমার সাথে কথা বলা চলাফেরা করতে করতে কখন যে তোমায় ভালবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। তুমিও যে আমাকে পছন্দ করতে আমি বুঝতে পারতাম কিন্তু কিছু বলতাম না। আমি ভেবেছিলাম তোমায় একদিন হঠাৎ প্রপোজ করে সারপ্রাইজ দেব কিন্তু সেদিন তুমি আমার আগে তোমার মনের কথা জানিয়ে দাও। সেদিন আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যায়। আমি যে কত খুশি হয়েছিলাম তোমাকে বোঝাতে পারব না জাকিয়া। কিন্তু তাও আমি গম্ভীর ভাব নিয়ে ছিলাম তোমাকে আজকের দিনের সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য। এতো দিন কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি যদি কোনো রাগ বা অভিমান থাকে তাহলে রেখো না প্লিজ।
— জাকিয়া এবার ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মেহেদীকে। মেহেদী তো অবাক হয়ে যায় জাকিয়ার কাজে তারপর মৃদু হেসে সেও জড়িয়ে ধরে জাকিয়াকে৷ আসলে ভালবাসা গুলো এমনই হয়৷ প্রিয় মানুষটার সাথে মান-অভিমান যায় হোক না কেনো। সব শেষে জড়িয়ে ধরাতে একটা প্রশান্তি বয়ে যায় দুজনের মাঝে৷ অনেক সুখ শান্তি যেনো সেখানেই থেকে।
– তাসু এসে এবার বলে আপনাদের যদি প্রেমালাপ শেষ হয়ে থাকে তাহলে নিচে চলুন দয়া করে সবাই আপনাদের জন অপেক্ষা করছে। তাসুর কথা শুনে দুজন দুইদিকে ছিটকে সরে যায়। মেহেদী অন্য দিকে ঘুরে তাকাই আর জাকিয়া ছুটে নিচে চলে আসে৷ আর তাসু সেও হাসতে হাসতে চলে আসে।
___________________________________
“সজিয়ার বাড়ির কলিং বেল এক ধেয়ে বেজেই চলেছে । সজিয়া ঘরে বসে পড়তে ছিল সকালের দিকে তারপর সে কোচিংএ বের হবে। বিরক্ত নিয়ে সজিয়া পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায় দরজা খুলতে । দরজা খুলতে খুলতে বলে দরজা ভেঙে ফেলবেন নাকি ভাব কি হ্যাঁ। এই কে রে বলেই সামনের মানুষটা কে দেখে সজিয়ার ভয়ে জান শুকায় যায়। তার সামনে সয়ং রিক দাঁড়িয়ে আছে৷ সাথে একজন বৃদ্ধ মহিলাও আছে। সজিয়া আর কিছু না বলে সরে এসে বলে ভেতরে আসুন। তখনই সজিয়ার মা বলে কে আসলো রে সজু । সজিয়া বলে মা আমাদের কোচিং-এর স্যার তারপর সজিয়া রিকদের বলে বসার জন্য “।
— সজিয়ার বাবা ঘরে ছিলেন সজিয়ার কথা শুনে বের হয়ে আসেন সজিয়ার মা ও বসার ঘরে আসেন৷ সজিয়া বুঝতে পারে না হঠাৎ এদের আসার কারণ কি।রিক সজিয়ার বাবাকে দেখেই সালাম দেয় সাথে সজিয়ার মাকেও। রিক তার সাথে যে বয়স্ক ব্যক্তি তার সাথে পরিচয় করাই দেয় সবাইকে। বয়স্ক মহিলাটি হলো রিকের মা। রিকের বাবা নেই মা আর রিক দুজনের পরিবার।
– সজিয়ার বাবা বলেন তা তোমাদের আসার কারণ তো বুঝলাম না বাবা। তখনই রিকের মা বলে ভাই সাহেব আমরা আপনার মেয়ের জন্য এসেছি। কথা শুনে চমকে উঠে সজিয়া। কপালে পড়ে চিন্তার ভাজ। সজিয়ার বাবা বলে মানে বুঝলাম না যদি বুঝাই বলতেন। রিকের মা এবার হেসে বলে আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ে সজিয়ার বিয়ে দিতে চায় যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে তো। সজিয়া এই ভয়টাই পেতে ছিল এতক্ষণ। সজিয়ার জেনো গলা শুকিয়ে যায় কথাটা শুনে। তার বাবা কি বলে তাই শুনার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে৷
— সজিয়ার বাবা বলে দেখুন মেয়ের বিয়ে আমরা তো দেব।কিন্তু আপনাদের সম্পর্কে তো তেমন কিছু জানি। আমার একমাত্র মেয়ে সজিয়া। আমরা দেখেশুনে তার বিয়েটা দিতে চায়। রিকের মা বলে সেতো অবশ্যই ভাই সাহেব আপনি আমাদের খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমার ছেলে কোচিং-এ শিক্ষকতা করে পাশাপাশি আমাদের একটা ব্যবস্থাও আছে। যদি আপনার মেয়েকে দেন তো নিজের মেয়ের মতো করে রাখতাম আর খুব সুখে থাকবে আপনাদের মেয়ে এইটুক বলতে পারি। এখন আপনাদের যা মনে হয় করুন। সজিয়া আর এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে চলে যায়। সবাই সজিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকায়। রিক মনে মনে একটু হাসে সজিয়া হয়ত লজ্জা পেয়েছে এই ভেবে।উপস্থিত সবাই এটাই ভেব সজিয়া লজ্জা পেয়েছে।
_ তারপর রিকরা নানা রকম কথাবার্তা বলার পর সজিয়ার বাবা তাদের জানায় যে একটু ভেবে তাদের জানাবে তারা। রিক আর রিকের মা চলে যায় সজিয়ার বাড়ি থেকে।
– এইদিকে সজিয়া ঘরে এসে একের পর এক লাগাতার ফোন দিয়ে চলেছে রহিতকে।কিন্তু রহিত ফোন তুলে না। আসলে রহিত ফোন সাইলেন্ট করা আছে তাই সে বুঝতে পারছে না। সজিয়া রহিতকে না পেয়ে ফোনে রাগে তার ফোনটা বিসানার উপর ছুড়ে মেরে কান্না করতে থাকে। কি হবে তাদের পরিনতি এটা ভেবে………
চলবে….
ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।