#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৮
যখন দম আঁটকে যাওয়ার মতো কষ্ট হবে।বুঝে নিও সুখ খুব নিকটে।কথাটা বলেই আনতা বেগম ভোরের পাশে বসলেন।মানুষটার মাঝে ভোর তাঁর মায়ের ছায়া খুঁজে পায়।কেন জানি মানুষটার গায়ে মা মা গন্ধ। হয়তো তাঁর মায়ের মতো তাঁকে আগলে রাখছে তাই। দুপুরে কি সুন্দর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।এখন আবার বাটিতে তেল নিয়ে এসেছে তাঁর মাথায় দেওয়ার জন্য। তাঁর মা-ও তো এমন যত্ন করেই তাঁকে মানুষ করেছিলো।আর আজ পাঁচ দিন হতে চললো সে ভোরের সাথে নেই।হঠাৎ বুকটা কেমন করে উঠলো।মা হারানোর ব্যথাটা এখনো বুকে আছে।যাঁর নেই সে জানে কি নেই।একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিলো আনতা বেগমের কোলে।আনতা বেগমও মমতায় জড়িয়ে নিলো ভোরকে।ভোর ঘুমের দেশে পা বাড়ালো।খুব শান্তির ঘুম। দিনের আলো ফুরিয়ে যখন আকাশে সন্ধ্যা নেমে এলো তখন ভোর চোখ খুলে তাকালো।চোখ খুলে দেখতে পেলে আনতা বেগমের কোলে সে এখনো।তাহলে কি সে ঘুমিয়ে যাওয়ার পরেও আনতা বেগম ঘরে যাননি।আচ্ছা এই পরিবারের সবাই কেন তাঁকে এতো ভালোবাসে।তাঁকে যেদিন এই বাড়ি থেকে দেখতে গেলো।সেদিন মাত্র কিছু মানুষ গিয়েছিলো।এই বাড়ির ছোট ছেলে, মেজ বউ, বৃষ্টি আর সফিক ইসলাম। প্রথম দেখাতেই তাঁদের ভোরকে পছন্দ হয়েছিলো।তারপর ধূসর গিয়েছিলো।কিন্তু ধূসর কবে গিয়েছে তা ভোর জানে না।তারপরই তো সব পাকা হলো।কিন্তু মা কেন এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলো।সে কি বুঝতে পেরেছিলো তাঁর সময় শেষ।নাকি অন্য কোন কারণ। মাথাটা ভনভন করতে রইলো।ছোট্ট এই মস্তিষ্ক এতো কিছু নিতে পারছে না।তাই সে আস্তে আস্তে আনতা বেগমের কোল থেকে উঠে দাঁড়ালো। মানুষটা হেলান দিয়ে কেমন ভাবে ঘুমিয়ে আছে।ইসস তাঁর জন্য সে কতটা কষ্ট পেয়েছে। ভাবলেই খুব খারাপ লাগছে ভোরের।তখনই ধূসর বললো।
এতো চিন্তা করতে হবে না।মায়ের এসবে অভ্যাস আছে।তিনি প্রায় আমাদের জন্য এমন ভাবে ঘুমিয়ে পড়ে।কখনো অপেক্ষা করে।কখনো অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করতে করতে।তা কখন আপনার ঘুম ভাঙলো।
মাত্র
যাক অন্ততপক্ষে আপনি একটু ঘুমালেন।
কেন আমি ঘুমাইনা বুঝি।
না সেটা বলিনি
তা কি বললেন
ও– কথাটা ধূসর পুরো করতে পারেনি এর আগেই ভোরের ফোন বেজে উঠলো।ভোর সেদিকে তাকিয়ে ফোনের কাছে এগিয়ে গেলো।একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। সেটা দেখে ধূসরের দিকে এক পলক চেয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
হ্যালো।
আমি নিচে বাগানে দাঁড়িয়ে আছি এখনি আয়।আর না এলে কি করতে পারি তা তুই ভালোই বুঝতে পারছিস।আমি চাই না এই বাড়ির কেউ তোকে খারাপ ভাবুক।তাই যা বলছি তাই কর।
ভোর কিছু বলার আগেই আফিম ফোনটা কেটে দিলো।ধূসরের দিকে তাকাতেই ধূসর বললো।
কোন সমস্যা
না
কে ফোন দিয়েছে?
আফিম ভাইয়া।
কি বললো।
বাগানে দাঁড়িয়ে আছে
আমাদের বাগানে
হুম
যান দেখা করে আসুন।
না
কেন,ভয় পাচ্ছেন।চলুন আমিও সাথে যাই।
দরকার পরবে না।
পারবেন তো
হুম পারবো
আচ্ছা
তারপর ভোর বাগানের দিকে রওনা হলো।বাগানে আসতে তাঁর কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। কারণ এই বাড়ির এখনো কিছু ভালো করে চেনে না সে।তাই তাঁর আসতে একটু দেরি হলো।সে বাগানের পাশে শিউলি গাছের তলায় আসতেই কেউ তাঁর হাত টেনে একটু গাছের আড়ালে নিয়ে গেলো।ভোর একটু চমকে উঠলেও নিজেকে সামলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আফিমের দিকে ছুঁড়ে দিলো প্রশ্ন।
কি সমস্যা এখানে কেন এসেছেন।
তুই কেমন আছিস সেটা দেখতে
আচ্ছা, তা কি দেখছেন
ভালোই আছিস সেটাই দেখছি
হ্যা ভালো আছি।খুব ভালো আছি।আর কিছু বলবেন।
ভালোবাসি
ভালোবাসি কথাটা যেন হৃদয়ের খুব গভীরে গিয়ে ঠেকলো।কিন্তু সেটা বেশি সময় ক্ষনস্থায়ী হলো না মন গহীনে।মনটা ছুঁড়ে দিলো সেই ভালোবাসার ধ্বনি।বারকয়েক বলে উঠলো।সে-ও একজন অপরাধী। সে-ও একজন বিশ্বাসঘাতক। তাই ভোর তাচ্ছিল্য করে বললো।
তাই বুঝি।তা কবে থেকে, তোমার বাবা-মা জানে।
তিরস্কার করছিস।
কাকে তোমাকে।একদম না।বিশ্বাস করো।কাউকে কীভাবে তিরস্কার করতে হয় আমি একটুও জানি না।আমায় একটু শিখিয়ে দিও তো?
ভোর
আর কিছু বলবে
একটু জড়িয়ে ধরবি
সরি মিস্টার আফিম আমার স্ত্রী কাউকে জড়িয়ে ধরুক এটা আমি চাই না।সে আপনাদের বাড়ির মেয়ে হলেও এখন আমার স্ত্রী।তাই আমি চাই না সে তাঁর প্রক্তন প্রেমিককে জড়িয়ে নিজের হাতকে অপবিত্র করুক।আর আমি কারো মতো উদার নই। যে কেউ এসেই আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে আমি ঢেং ঢেং করে বলবো।হ্যা ধরো জড়িয়ে। আমি খুবই দুঃখিত আপনার এই কথাটা না রাখতে পারার জন্য।
ভোর এবং আফিম ধূসরের এহেন কথায় একটু আশ্চর্য হলো।সব থেকে বেশি ভোর।লোকটা কি সহজে বলে দিলো আমার স্ত্রী। এ-তো সহজে ভোর কি তাঁকে স্বামী বলতে পারবে।না কখনোই না।হয়তো ধূসর কখনো কাউকে ভালোবাসেনি তাই ভোরকে মেনে নিতে তাঁর বাঁধা নেই। কিন্তু সে তো বেসেছিলো ভালো।খুব গভীর ভাবে ভালোবেসেছিলো।কিন্তু এখানে ধূসর এসে ভালোই করেছে। কারণ, না হলে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভবনা ছিলো।আফিমকে সে এক পলকও বিশ্বাস করতে পারে না।তাই সে আফিমের উদ্দেশ্যে বললো।
শুনে নিয়েছেন ধূসরের বক্তব্য। সে চায় না তাঁর স্ত্রী তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে জড়িয়ে ধরুক।তাই ভালো চাইলে এখান থেকে চলে যান।না হলে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার বাপের বাড়ির লোক।
খুব অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলো আফিম।এ কোন ভোরকে সে দেখছে।কয়েক ঘন্টায় কোন ভোরের জন্ম হয়েছে। নতুন করে নতুন ভোরের বুঝি সত্যি সূচনা হয়েই গেলো।ভাঙা হৃদয়টাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো আফিম।আর সেদিকেই চেয়ে রইলো ভোর।আজ নিজেকে খুব হাল্কা লাগছে।সত্যি যে অন্যায় করে যে সয় দু’জনেই সমান অপরাধী। কিন্তু না আর সইবে না সে কোন অন্যায়।
—————–
খাবার টেবিলটা এই মুহূর্তে মাছের বাজার মনে হচ্ছে ধূসরের কাছে।কারণ সবাই খাওয়ার থেকে বেশি গল্প করছে।ষোল সতেরো ঘন্টায় সে যে এই বাড়ির পর হয়ে গেছে সেটা সে ভালোই বুঝলো।আজ খাবার টেবিলে ভোরের পছন্দের সব খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। আর সেটাই সবাই বাহ বাহ বলে খাচ্ছে। অথচ সে যে এগুলো খায় না তা যেন তাঁর মা ভুলেই গেছে। ইসস কেন যে বিয়ে করতে গেলাম কে জানে?আর তারি মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রামের যাওয়ার প্ল্যান। আর সেটা আগামীকাল সকালেই। অনেক চেষ্টা করেও আটকানো গেলো না।সবাই যাবে সাথে তাকে-ও যেতে হবে।সে না করেও পারেনি কারণ সফিক ইসলামের চোখ গরম সে বরাবরই ভয় পায়। তাই তাঁকে রাজি হতে হয়েছে। কিন্তু সব শেষে একটাই কথা ভোর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।ভোর যখন পারবে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।তখন কেন জানি ধূসরের খুব খারাপ লাগছিলো।তাই সে বাগানে চলে আসে। আর ওই মুহূর্তেই শুনতে পায় আফিমের বলা কথাটা।কথাটা শুনেই মাথায় যেন কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে এমনটাই মনে হয়েছে। কিন্তু সব সময় মাথা গরম করে কিছু করা সম্ভব নয়।তাই নরম সুরে গরম কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছে। তখন ভোর ধূসরের কথায় সুর মেলালেও আফিম চলে যেতেই কথা শুনিয়েছে।কেন এসেছেন। কি দরকার। আমি ছোট নই ইত্যাদি। কিন্তু ধূসর তো একটা কথাই বলেছে।আমি ছোটবেলা থেকে খুব হিংসুটে। আমার জিনিস আমি কাউকে দিতে পছন্দ করিনা।সেখানে কিনা বেটা আমার বউকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার কথা বলছে।শালা আমি তো এখনো হাতটাও ধরলাম না আর তুই সরাসরি জড়িয়ে। ভোর কথাটা শুনে নিরর্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ছোট্ট বিষয়টা কতোটা কঠিন ভাবে নিলো ধূসর।
কিরে খাচ্ছিস না কেন?
খাচ্ছি মা
কোথায় খাচ্ছিস,খাবার তো শুধু নাড়িয়ে চারিয়ে কি যেন ভাবছিস।
আরে মা তোমার ছেলে আজকের প্ল্যান করছে মনে মনে।(মেঘ)
কিসের প্ল্যান করছে
আরে বাসর ঘরে কি করবে তাঁর।
কথাটা শুনে ভোর আর ধূসরের হেঁচকি উঠে গেলো।সফিক ইসলাম তাড়াতাড়ি খাবার ছেড়ে উঠে পরলেন।সাথে তাঁর ভাইকেও টেনে নিয়ে গেলেন।বেচারা মেঘের কথাটা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সাথে এনজয়ও করছিলো।মাঝখান থেকে তাঁর ভাই ব্যগরা দিলো।ধূর্ত কোন দুঃখে যে এই মানুষটা তাঁর ভাই হয়েছিল আল্লাহ জানে।তারপর তাঁরা চলে যেতেই বিচ্ছুর দল হৈচৈ করতে রইলো।বেচারী ভোর আর ধূসরের তো দম আঁটকে যাওয়ার যোগার এদের কথা শুনে।আনতা বেগম আর সাফিয়া বেগম চেয়েও ওদের থামাতে পারছে না। আবার তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছে সুইটি।মানুষটা যে এক ছেলে এক মেয়ের মা তা তিনি মাঝে মাঝেই ভুলে যায়।কিন্তু ভোর নিজেকে সামলে খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালো। ভোর উঠে দাঁড়াতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো।ভোর কাউকে কিছু না বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো।একটু আগে যেখানে আনন্দ উপচে পড়ছিলো সেখানে খুব নিরবতা।কেউ কিছু না বুঝলেও ধূসর খুব ভালো করেই সবটা বুঝলো।তাই সেও আর কোন কথা না বলে উপরে চলে গেলো।আর মেঘ বোকার মতো বসে নিজের ভুলের জন্য আফসোস করতে রইলো।ইসস তাঁর কথাটা বলা উচিৎ হয়নি।তাই সেও আর কিছু খেলো না।একটু সময়ের মধ্যে সব কিছু কেমন শান্ত হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো।আনতা বেগম আর সাফিয়া বেগম রইলেন।আনতা বেগম কেঁদে দিলেন।
দেখলেন মা মেয়েটা না খেয়েই চলে গেলো।
কাঁদিস না।সবে তো বিয়ে হলো।আমার নাতির উপর আমার ভরসা আছে সব ঠিক করে দিবে ও।
আমার যে ওর কষ্ট সয্য হচ্ছে না।
গ্রামের বাড়ি না যাওয়া অবধি সব সয্য করতেই হবে বুঝলে। যা-ও এক প্লেট খাবার নিয়ে ওদের ঘরে যাও।দু’জনকে নিজের হাতে খাইয়ে তারপর এসো।আমি জানি না হলে তোমার শান্তি হবে না।
কিন্তু মা
যা বললাম তাই করো।
চলবে,,
আজ কিছু বলবো না।