তুই আমার অঙ্গারাম্লজান – পর্ব ২

0
361

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_২
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

২.
কলিংবেল বাজানোর কয়েক সেকেন্ড পরেই দরজায় শব্দ হলো। ভিতর থেকে কেউ ইমাজিন ড্রাগনের বিলিভার গানের সুর আঙ্গুলের মাধ্যমে কাঠের দরজায় তুলছে। কে হতে পারে? অবশ্যই আমার জন্মদাতা পিতা। কোমড়ের নাট-বল্টু ক্ষয় করে পাঁচ তলার সিঁড়ি ভেঙে উঠে কারোরই এই নাটক সুমধুর লাগবে না। আমার বাপের দরজা খোলারও কোনো হেলদুল নেই। সুতরাং, মন চাইছে দুই সিঁড়ির রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে টপ করে নিচে পড়ে যাই। আমার বাপ থাকুক তাহার বিবির সঙ্গে।
লাফ দেব দেব করছি, এমন সময় দরজা খুলে গেলো। আম্মু চওড়া গলায় আব্বুকে ধমকে ওঠলো,
“সুখে থাকতে ভাল্লাগে না তোমার! তুমি তো কলিংবেল টিপে এক সেকেন্ডও সহ্য করতে পারো না। নিজের সময় ষোলো থেকে একেবারে বত্রিশ আনা বুঝো।”
আমি ঘরে প্রবেশ করে বললাম,
“থাক থাক, বুড়ো মানুষ। চোখে দেখে না, কানে শুনে না। মাফ করে দাও।”
আব্বু বিড়ালের মতো গুটি গুটি পায়ে সোফায় গিয়ে বসলেন।
আমিও ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসলাম।
“তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
আব্বুর কথা শুনে ভ্রু তুলে তাকালাম,
“ওহ, টাকা দিবে নাকি? ওই পাওনা টাকাটা, যেটা আমার ঘুমের মাঝে চুরি করে তুমি তোমার টয়লেট মেরামত করেছো? যার ফলে বাড়িওয়ালির কৃপায় এই বাড়িতে আরও দীর্ঘদিন ঠাই পেয়েছো?”
আম্মু সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় চাটি মেরে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“হয়েছিস তো ঠিক বাপটার মতো। একটা কথাও মুখ থেকে পড়ে না।”
অবসন্নতা কাটিয়ে অবাক চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। কথা মুখ থেকে পড়ে না বুঝলাম, কিন্তু পড়লে কিভাবে পড়ে? কোথায় পড়ে, কেন পড়ে? মাটিতে পড়লে তো কচ্ছপের মতো কান ঘষা মেরে মেরে শুনতে হবে। উপরে পড়লে বান্দরবানের বানরের মতো শূণ্যে ডিগবাজী দিয়ে শুনতে হবে। আম্মু কী টেলিপ্যাথিকে নির্দেশ করেছে? চেনা চেনা লাগে, তবুও অজানা। মনে মনে কথা, তবুও বুঝো না।
আম্মুকে প্রশ্ন করে রহস্য উদ্ঘাটনের পূর্বেই আব্বু বললো,
“তোমার মোজাম্মিল চাচ্চু কালকে আসবেন। তাই আজকে বাজার করতে যেতে হবে। তুমি লিস্ট করবে বলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
আমি সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুচকালাম। জিগ্যেস করলাম,
“মোজাম্মিল চাচ্চা? একা আসবেন?”
“না, তোমার চাচী আর ফাহাদ আসতে পারে। ফ্যামিলি ছাড়া একা আসবেন কেন? কয়েকদিন থাকবে তারা।”
আমার মাথার উপর দিয়ে কাক কা কা করে উড়ে গেলো। কানটা ব্যথা করছে। কানের ভিতর আলতোভাবে আঙুল ঢুকিয়ে দেখলাম, নাহ ময়লা নেই। একদম ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
কান ব্যথা হওয়া আমার মেজাজ খারাপের প্রথম লক্ষণ। দ্বিতীয় লক্ষণ প্রচন্ড মাথা ব্যথা। তৃতীয় লক্ষণ খানাপিনা বিসর্জন দিয়ে হয়তো সন্ন্যাসী নতুবা বাপের অন্ন ধ্বংস করে ভোজনরসিক হওয়া। চতুর্থ লক্ষণ হলো বাঙালি খালাম্মা-খালুদের বৈশিষ্ট্য বাংলা গালি অর্জনপ্রাপ্তি প্রকাশবোধ। যদিও গালি আমি একান্তভাবে মনে মনে দেই, ভদ্র মেয়ে সেটা আমার সর্বজনীন লক্ষণ যে তাই।
ওহ হ্যাঁ, মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণ হলো ফাহাদ। মোজাম্মিল চাচ্চা না চ্যাচ্চা আমার বাপধনের অতি আদরের বন্ধু। এবং এই বন্ধুর তিনটে ছাগলছানার বড় ভাই ও দশ বছরের ছোট বোনের মধ্যে বেটে-খাটো, ভেটকি মারা ছাগলটি হলো ফাহাদ। তার গলায় আমাকে ঝুলিয়ে আর আমার কোলে তাকে বসিয়ে আমার আব্বাজান আমাদের কাপল পিক তুলতে চান। অর্থাৎ আমাদের বিবাহ সম্পন্ন করতে চান। এই খবর আমার সামনে আম্মু-আব্বু ভুলেও কখনো তুলেনি। কিন্তু আমার একটা বিশেষ গুণ আছে। ঘুমের ঘোরে অনেক অজানা রহস্য উদ্ধার করা। আমি ঘুমিয়ে থাকলে আশেপাশের মানুষ তাদের কুকীর্তি, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিকল্পনা-সিদ্ধান্ত আলোচনা করে বেড়ায়। আধো ঘুমের মধ্যে আমি খানিক শুনতে পাই। এরপর ঘণটাময় মরার ঘুমের অভিনয় করে চ্যাগাইয়া থাকলেই সব স্পষ্ট শ্রবণ করি। এটা আমার দোষ? অবশ্যই না। এটা আমার গুণ। মানুষ আমার ভান করা ঘুমকে মরার ঘুম ভেবে কানের কাছে রসের আলাপ ছাড়ে, এটা তাদের বোকামি। ফাহাদ সম্পর্কিত তথ্য আমি এভাবেই সংগ্রহ করেছি। এই ছেলের সঙ্গে আমার এখনও সাক্ষাৎ হয়নি। সাক্ষাৎ হলে জনমের শিক্ষা দিয়ে দেব। তার জন্য তুশিরার সঙ্গে বিস্তর পরিকল্পনা প্রয়োজন।

পাশে দেখি আম্মু-আব্বু তুমুল উৎসাহে ফাহাদের গলা দিয়ে কি এবং কয়টা মুরগি ভরবে তা লিস্ট করছে। আর আমি লিস্ট করছি কয়টা হাড্ডি তার বিশেষ জায়গা দিয়ে বিশেষভাবে ভরা যায়, যাতে সারাজীবন ফাকাদের ফাবলীহা নামটি মনে থাকে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here