#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_২৬(শেষ)
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা
৩১.
বিয়ে বাড়িতে হৈ-হোল্লুড়, আকস্মিক চেঁচামেচি না থাকলে ঠিক জমে না। তখন বিয়ে নামক ব্যাপারটি সারাদিন নীল আকাশে উড়ে সাঁঝের আঁধারে নীড়ে ফেরা ক্লান্ত-শ্রান্ত পাখিদের মতো হয়ে যায়।
গতকাল গভীর রাতে গুরুতরভাবে পারিবারিক কিছু একটা সংঘটিত হয়েছে এটা সবাই বেশ বুঝতে পারছে। স্বল্প নিকট আত্নীয়দের মধ্যে তা নিয়ে অনুমানের তোড়জোড় প্রতিযোগিতা চলছে। আমাকে দেখে ভ্রুজোড়া মাঝখান হ্রস্বীভূত করে তাকাচ্ছে যেন আমাকে অবলোকন করেই মূল কাহিনী বের করে ফেলবে।
আমি তা হতে দেইনি। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাদের সম্মুখে হেলেদুলে চক্কর কাটছি। আমার অভিব্যক্তিতে বোঝার কোনো সাধ্য নেই, আমাকে দ্বারা আরম্ভ গলাবাজি কার উপর ঝড় বইয়ে দিয়ে প্রান্তিক বিন্দুতে পদাঙ্ক ফেলেছে।
গতকাল ফাহাদের পরিবার নিজ বাড়িতেই গা ঢাকা দেওয়ার পর প্রিয়লের পরিবার গমগম করে ওঠে। প্রিয়লের দুই চাচা-চাচী, সব ভাইবোন, মানসুরা খালা ও বিহান ভাইয়া সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসা হয়। সবাই সবকিছু জানে না। তবে মূল কথা বুঝেছে, তা হলো আমাকে অতি শীঘ্রই প্রিয়লের ভাইবোনদের ভাবি বানানো হবে।
প্রিয়লের বড় চাচা আব্বুকে উদ্দেশ্যে করে বলেন,
“এক কাজ করলে কেমন হয় ভাই?”
“কি ভাই?”
“ফায়াজের বিয়ের দিন প্রিয়ল আর ফাবলীহারও বিয়ে পড়িয়ে দেই। পরে তো আয়োজন করেই আবার বিয়ে হবেই। এখন দুই পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়েটা পড়িয়ে রাখলে কেমন হয়?”
আব্বু তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন না।
“আপনি নাহয় আপনার কাছের আত্নীয়-স্বজন যারা আছে তাদের খবর দিন। কমিউনিটি সেন্টারে যেহেতু বিয়ে হবে, দুজনেরটাই হোক।”
আব্বু তখন ইতস্তত করে বলে,
“আত্নীয়-স্বজনকে হুট করে ডাকলে তো তারা ব্যাপারটা ঠিক বুঝবে না। এর থেকে ভালো পারিবারিকভাবে আপনাদের নিয়েই পড়িয়ে রাখি।”
আমার মনটা তখন নেচে ওঠে। এই ধরণের বিবাহে সাধারণত দুইবার বিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু আমার হবে তিনবার। প্রিয় মানুষটির সঙ্গে তিনবার বিয়ে, হুররে!
উত্তেজিত হয়ে তুশিরা আর চাঁদনীকে সব জানিয়েছে। বেচারা বান্ধবী আমার, তাদের কতো শখ ছিল আমার বিয়ের বড় বড় পিসের রোস্ট খাবে। কপালে জুটলো না।
হু হতাশ করে প্রিয়লকে খোঁজে চলছি। নিশ্চয়ই কোথাও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
হঠাৎ আম্মু আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। মুখ হাসি হাসি।
আমাকে দেখে অধরের হাসির রেখা আরও বিস্তৃত করে বললো,
“আজকে আমার অনেক আনন্দ লাগছেরে।”
মায়ের মুখের নিখাদ হাসি নীরিক্ষা হতে আমার ঠোঁটও প্রশস্ত লাভ করলো।
আম্মু বলতে লাগলেন,
“মা-বাবা সবসময় ভয়ে থাকে তার কন্যা সন্তানকে যোগ্য মানুষের হাতে তুলে দিতে পারবে কি-না। এই চিন্তা মেয়ে ছোট থাকতেই চিন্তনে খেলে যায়।”
আমি খানিক বিরক্ত প্রকাশ করে বললাম,
“উফ মা। এসব আধ্যাত্মিক কথাবার্তা বললে এখন আমার রাগ উঠবে।”
আম্মু হেসে দিলে বললেন,
“আবরেশামের পরিবার অনেক ভালো বলে এই সমন্ধে রাজি হয়েছি। ছেলেটাও অনেক বুঝদার, বিচারবুদ্ধিযুক্ত।”
আমি কোমরে হাত দিয়ে জিগ্যেস করলাম,
“সেজন্য মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছো? মানে তার জায়গায় অন্য কেউ হলেও ধরে দিয়ে দিতে?”
আম্মু আমার গালে মৃদুভাবে থাপ্পড় মেরে বললো,
“সবসময় তোর উল্টাপাল্টা কথা। তুমি কলেজে গিয়ে পড়াশোনার বদলে বিয়েশাদি করে এসেছো বলে এখনই বিয়ে দিতে হবে। অন্যথায়, আমি তো তাদের অপেক্ষা করতে বলতাম। আর শোন।”
“বলো।”
“বিয়ে হবে বলে যে পড়াশোনা বাক্স বন্দি করে সংসার করবে এমন নয়। তারা এখনই বউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে না।”
আমি মাথা ঝুঁকিয়ে বললাম,
“জি, মা জননী।”
তখন চিলের মতো চিৎকার শুনে আম্মুর পিছনে মুখ বাড়িয়ে তাকালাম। তুশিরা আর চাঁদনী দৌঁড়ে আসছে। এসেই আমাকে ঝাঁপিয়ে ধরলো। আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে উভয়ের দিকে চেয়ে রইলাম।
“তোরা এখানে!”
তুশিরা বললো,
“আন্টির থেকে ঠিকানা নিয়েছি।”
“কিন্তু তুই কিভাবে এলি?”
চাঁদনী তখন বললো,
“সেতির মারে কইলাম আমার লগে হোস্টেলে দুইদিন থাকবো। জোলাপাতি খেলুম। দিয়া দিলো। তখন আমরা বস্তা বাইন্ধা বরিশাল দৌঁড়।”
আম্মু তাদের দেখে বললেন,
“তোমরা কথা বলো। আমি আসি।”
আম্মু যেতেই চাঁদনী লাফিয়ে ওঠলো,
“দোস্ত তোর আবার বিয়া! এই এদ্দুরা জীবনে আর কয়বার বিয়া করবি।”
“ভাবি..”
ফাতিন ভাইয়া এসে দ্বিধা নিয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি প্রশ্নবোধক চেহারা নিয়ে তাকালে গলা নামিয়ে বললো,
“ভাইয়া ছাঁদে অপেক্ষা করছে।”
বলেই চলে গেলো।
ফাতিনের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদনী চোখজোড়াও হেঁটে চলছে। আমী তার মাথায় চাপড় মেরে তার চোখ যথাস্থানে স্থাপন করলাম।
চাঁদনী মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
“থ্যাংয়্যু দোস্ত, থ্যাংয়্যু সো মাচ।”
আমি সন্দেহ নিয়ে তার দিকে তাকালাম। মাথা নষ্ট হয়ে গেলো নাকি।
চাঁদনী হঠাৎ করে অঙ্গভঙ্গি বদলে ফেললো। চুলগুলো একপাশে ঠেলে দিয়ে বললো,
“ফাবলীহা বেইব, ইউ ক্যান গু টু ইউর হাজব্যান্ড। তোমহার জন্য অহপেক্ষা কড়ছে। আহমি বরং, তোমহার দেবরের একঠু ঠেইক কেয়ার করি।”
বলেই সে ফাতিন যেই পথে গেলো সেই পথে হাঁটা দিলো।
আবার ফিরে এসে ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
এটা তোর আসল দেবর তো?
আমি চোখ টিপে বললাম,
একদম খাঁটি।
চাঁদনীর খুশি দেখে কে!
আমি ছাদের অভিমুখে চললাম। ছাদে প্রিয়ল ব্যতীত কেউ নেই। আমাকে দেখতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে। উল্লাসিত গলায় বলে ওঠে,
“ফাইনালি! উই আর গুয়িং টু গেট মেরিড!”
প্রিয়লের উচ্ছাস দেখে আমি হেসে ওঠলাম। সে আমার কোমরে হাত রেখে কাপল ডান্স দিতে লাগলো,
“Can I go where you go?
Can we always be this close, forever and ever? And take me out and take me home
You’re my, my, my, lover.”
(সমাপ্ত)