তুমি শুধু আমার – পর্ব ২৭

0
607

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২৭

মেঘ হাওয়ার বেগে গাড়ি চালাচ্ছে।মেঘ চলে যাওয়ার কারনে আকাশের অনেক টেনসনে পরে যায়।বার বার আকাশ মেঘ কে ফোন করে কিন্তুু মেঘ ফোন কেটে দেয়।তৃতীয় বার যখন ফোন করে তখন মেঘ ফোন রিসিভ করে কথা বলে।

মেঘ;;দেখ এখন ইমোশনাল হওয়ার টাইম নেই।তুই নীলা কে নিয়ে দ্রুত হস্পিটালে নিয়ে যা আমি এইদিক টা সামলে নিবো।দাদি আর আম্মু দুইজন কে সাথে….

তার মাঝেই মেঘের আবার ফোন বেজে উঠে হাতে নিয়ে দেখে একটা অাননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।মেঘ কল টা রিসিভ করে।ফোন কানে দিতেই ওপাশ কে শফিকের অট্টহাসি,শফিকের হাসি শুনেই পুরো মুখমণ্ডল লালচে বর্ণ ধারন করে মেঘের।

শফিক;;কিরে ভয় পেয়ে গেলি নাকি।জানিস তো মেঘ ভিষন আফসোস হচ্ছে।

মেঘ;;হুমমম ঠিক বলেছিস অনেক বেশিই।

শফিক;;নিজের উপর তাই তো?

মেঘ;;হুম

শফিক;;আমি সেইদিন তোকে অনেক বলেছি যে আমাকে তোর সাথে বিজন্যাসের পার্ট নার বানিয়ে নিতে। কিন্তুু তুই কি করলি আমাকে সবার সামনে অপমান করলি।

মেঘ;;জানিস তো শফিক আমার না অনেক আফসোস হচ্ছে প্রচন্ড রকমের আফসোস হচ্ছে তোর উপর আর তোর কপালের উপর।

শফিক যেনো মেঘের কথা কিছুই না বুঝেই কপাল কুচকায়।

মেঘ;;শোন শফিক আমি জানি যে তুই আমার বাসায় গিয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে এসেছিস। আর বৃষ্টি তোর কাছেই আছে।

শফিক;;হ্যাঁ, তোর প্রান ভোমরা আমার কাছেই আছে।

মেঘ;;দেখ শফিক তোর শক্রতা আমার সাথে।আমার বউ বার আমার পরিবারের সাথে না।যদি তুই মানুষের বাচ্চা হয়ে থাকিস তাহলে বৃষ্টির কোন ক্ষতি করবি না।আর যদি তুই কাপুরুষ হয়ে থাকিস তাহলে বাকিদের ক্ষতি করবি।

শফিক;;এইইই মেঘ,মুখ সামলে কথা বলবি।আর তুই কি বললি আমি কাপুরুষ।এতোটাও ভীতু নই আমি।আমার টার্গেটাই তুই কিছু সময়ের জন্য বুঝে গেছিস।আর তুই চিন্তা করিস না আমি যদি একজন কে মারি তাহলে সাথে সাথে বাকি সব গুলাও মারা যাবে।শুধু তোকে আমার কাছে আনার জন্য তোর দূর্বল জায়গায় আঘাত করা।।

মেঘ কথা বলতে বলতে তাকিয়ে দেখে আকাশ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।মেঘ আকাশ কে দেখা মাএই দ্রুত ইশারা করে তার কাছে আসতে।

মেঘ;;জানিস তো শফিক দূর্বল জায়গাই যখন শক্ত হয়ে যায় তখন তার পরিমান কতো টা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।

শফিক;;হাহাহাহাহাহা,,মেঘ তুই আমাকে হাসালি।আমি চাইলে তোর বিরাট মাপের একটা ক্ষতি করে দিতে পারি।

মেঘ;;তুই একটা কাজ কর।তুই না হাতে চুড়ি আর শরীরের শাড়ি পরে বসে থাক।তোকে না বেশ মানাবে।

মেঘের মুখে এমন কথা শুনেই ফোনের ওপাশ থেকে শফিক চিল্লিয়ে উঠে রাগে।

মেঘ;;রিলেক্স, আগে তো আমার কথা শোন।তোকে কেনো আমি শাড়ি আর চুড়ি পরতে বলেছি।তুই যে একটা কাপুরুষ।তাই তো তুই আমাকে আঘাত করার জন্য বৃষ্টিকে ব্যবহার করেছিস।আবার তাকে ক্ষতি করার হুমকি দিস।

শফিক;;এই হুমকি টা যদি সত্যিতে পরিনত হয় তখন কি হবে একবারও কি ভেবে দেখেছিস তুই।

মেঘ;;আমি জানি তুই কিছুই করতে পারবি না।আর নিজের মরণ কে এইভাবে নিজে ডেকে আনিস না।

শফিক;;তাই!তাহলে দেখা যাক কি হয়।

মেঘ সাথে সাথে কলটা কেটে দেয় কারন শফিকের কথা তার আর সহ্য হচ্ছে না।তার মাথা শুধু একটাই চিন্তা যেভাবেই হক বৃষ্টিকে বাঁচাতে হবে।তবে শফিক সাথে এতোক্ষন কথা বলে মেঘ একটা বুন্ধিমানের মতো কাজ করেছে।তার কারন হলো আকাশ কে দিয়ে শফিকের লোকশন ট্রেক করে ফেলেছে।আর এই সুযোগে মেঘ বুঝে যাবে যে শফিক কোথায় লুকিয়ে আছে।এরপর মেঘ আকাশ কে হস্পিটাল থেকে নীলা কে বাড়িতে দিয়ে সেই ঠিকানায় আসতে বলে।

শরীর থাকে কালো জ্যাকেট টা গাড়িতে ছুরে ফেলে সার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে মেঘ গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে।এখন কেউ যদি মেঘ কে দেখে তাহলে মনে হবে তার মাথায় কেউ জ্বলন্ত কয়লা রেখে দিয়েছে এমন ভাবে রেগে আছে মেঘ।



অন্য দিকে যেনো বৃষ্টির দম বন্ধ হয়েছে আসছে।অনেক অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে।অন্ধকার একটা রুমে বৃষ্টিকে আটকে রেখেছে।বৃষ্টি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।মাথার পাশ দিয়ে যেনো ঘাম বেয়ে পড়ছে।বৃষ্টির যেনো কিছুই ভালো লাগছে না।একটা চেয়ারে বসে আছে।চোখে পাতা পিটপিট করে খুলে দেখে একটা ধুলোযুক্ত অন্ধকার রুমে আটকে আছে।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সাভাবিক ভাবেই বসে আছে কোন রকমের হাত পা বাধা নেই।তার মাথার ঠিক উপরে লাল বাতি জ্বলছে।বৃষ্টির পরিস্থিতা বুঝতে পারে।সে এখন কি অবস্থায় আছে।বৃষ্টি সব কিছু ভুলে নিজের একটা হাত প্রথমেই তার পেটে রাখে আর অন্য হাত দিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছতে থাকে আর ভারি ভারি দম ছাড়তে থাকে।নিজে কে সাভাবিক করার জন্য এক হাত পেটে দিয়ে চেয়ার থেকে আস্তে করে উঠে দাড়ায়।বৃষ্টি ধীরে পায়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়।

বৃষ্টি;;কেউ কি আছেন আমার কথা কি শুনতে পারচ্ছেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ কেউ থাকলে একটু সাড়া দিন।

বেশ কয়েক বার ডাকার কারনে কারও সাড়াশব্দ পায় না। আজ যেনো মেঘ কে ছাড়া নিজেকে অনেক টাই অসহায় মনে করছে বৃষ্টি।খুব মনে পরছে মেঘেকে।এইভাবে আর দাড়িয়ে না থাকতে পেরে বৃষ্টি সেই আগেই চেয়ার টায় গিয়ে বসে, মেঘের কথা মনে করে কান্না করতে থাকে।

শফিক বৃষ্টিকে ধরে এনেছে একটা আধ ভাঙা বাড়িতে।তবে সেই বাড়িটা বেশ পুরানো।চারপাশে ঘনো জঙ্গের মতো।নিজে অনেক টাই খুশি যেনো একটার পর একটা মদ যেনো ঢকঢক করে খেয়েই যাচ্ছে।আর বৃষ্টিকে রেখেছে পাশের একটা অন্ধকার রুমে।

মেঘ শফিকের সেই পুরানো আধ ভাঙা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায়।গাড়ি থেকে নেমেই মেঘ কিছুটা কপাল কুচকায়।বাড়িটা দেখতে বেশ ভুতুরের বাড়ির মতো লাগছে।বাড়ির বাহিরে আর ভিতরে অনেক গুলো গার্ড দাড়িয়ে আছে।সেই সময় আকাশ এসে পৌছে যায়।গাড়ি থেকে নেমেই আকাশ মেঘের সামনে এসে দাড়ায়।আকাশ মেঘ কে কিছু না বলেই সামনে থাকা দুই গার্ড কে সুট করে দেয়।সাথে সাথে গার্ড দুইটো নিচে পরে যায়।আকাশের গান সাইলেন্ট করা ছিলো তাই ভিতরে গার্ডরা গুলির শব্দ শুনতে পারিনি।মেঘ সেই সুযোগে গাড়িতে গিয়ে বসে।গাড়িটাকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে নেয়।পিছিয়ে নিয়ে আবার হাওয়ার বেগে গাড়ি স্টার্টআপ দিয়ে সামনে দিকে ছুটতে লাগে।গাড়ি এতোই জোরে সামনে যায় যে বাড়ির মেইনগেইট টা ভেঙ্গে চৌচির করে মেঘ ভিতরে ঢুকে।আর এই দিকে আকাশ দুইহাতে দুইটো গান নিয়ে সুট করতে করতে ভিতরে ঢুকে।গেইট আর আস্তো রাখেনি।গগন এক বিকট শব্দে যেনো শফিকের হুস ফিরে আসে।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে যতো গুলো গার্ড ছিলো সব কয়টাকে গুলি করে মেরে ফেলে।মেঘের গুলির শব্দ এতো জোরে হয় যে বৃষ্টির কান অব্দি পৌছে যায়।কিন্তুু বৃষ্টি কিছু না বুঝেই নিজের আশেপাশে তাকাতাকি করে।মেঘ আকাশ বাড়ির ভিতরেই ঢুকে দেখে শফিকের আরও চেলাটেলাও ছিলো।মেঘ আর আকাশ কিছু না ভেবে রিভালবার বের করে সব কয়টা তাদের দেহে ঢুকিয়ে দেয়।আকাশ মেঘের সাথে আসার আগে হাতে করে একটা লম্বা লোহার দন্ড নিয়ে এসে মেঘের হাতে দিয়ে আকাশ শফিকের দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে সেইখান থেকে বের হয়ে যায়।শফিক যেনো মেঘ কে দেখে একটা শান্ত চাহনি দেয়।

মেঘ;;কিরে কি ভেবে ছিলি,তোকে আমি খুজে পাবো না।আমার বৃষ্টি কোথায়।

শফিক;;আরে মেঘ তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো,তোর প্রান ভোমরা ঠিক আছে।

মেঘ;;দেখ শফিক আমি নিজেকে অনেকটাই সংযত রেখেছি বলেই তুই এখন নিশ্বাস নিতে পারচ্ছিস।আর আমি চাইনা যে সেই আগের রুপে মেঘ ফিরে আসি।তাহলে হয়তো তোর জন্য বেশি একটা সুবিধা হবে না।নিজের মন ফ্রেশ রেখে যদি ডিল টা করতে তাহলে হয়তো আমি মেনে নিতাম কিন্তুু তুই আমার কলিজাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিস।আমি শেষ বারের মতো বলছি শফিক আমার বৃষ্টি কোথায়।তা না হলে তুই এই সুন্দর পৃথিবীর আলো আর দ্বিতৃীয় বারে মতো আর দেখতে পারবি না সেই সুযোগটাই আমি আর দেবো না।

শফিক;;আরে মিষ্টার মেঘ আহমেদ চৌধুরী রিলেক্স,সুস্থই আছে তোর অনাগতো সন্তানের মা।শোন তোর বউয়ের কিছুই হয়নি একদম ভালো।এখনো মরে নি…….

ব্যাস এইটুকু কথা বলার সৌভাগ্য হয়।সাথে সাথে মেঘ হিংস্র গর্জন দিয়ে তেড়ে এসে শফিকের বুক বরাবর শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে একটা লাথি মারে।এক লাথি তে শফির ছিটকে দুরে পরে।মেঘ গিয়ে শফিক কের সার্টের কলার টেনে দাড় করিয়ে নাক বরাবার এক ঘুশি মারে সাথে সাথে শফিকের নাক থেকে অঝরে রক্ত পরতে থাকে।মেঘ নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে আকাশের দেয়া লোহা টা শফিকে বুকের মাঝখানে ঢুকিয়ে দেয়। লোহাটা শফিকে বুক দিয়ে ঢুকে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়।সঙ্গে সঙ্গে শফিক নিচে লুটিয়ে পরে।মেঘ তাকিয়ে দেখে এখন শফিকে শ্বাস চলছে।মেঘ যেনো মুহুতের মাঝে আরও হিংস্র রুপ দারন করে। মেঘ শফিকের বুক থেকে লোহা টা তুলা মাএই গরগর করে রক্ত ঝরতে থাকে।মেঘ আর এক মূহুত দেরি না কে লোহা টা শফিকে গলার শ্বাস নালীর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।সাথে সাথে শফিক সেই খানেই মারা যায়।মেঘ যেনো কোন ভাবেই শান্ত হতে পারছেনা।তার মনে পরে যায় যে শফিক তার নোংরা হাত দিয়ে বৃষ্টির হাত ধরেছে।মেঘ রাগের মাথায় চারিপাশে তাকিয়ে দেখছে সামনে একটা দাড়ানো ছুরি পেয়ে যায় তা দিয়ে শফিকের বুকে বার বার আঘাত করতে থাকে হাতের রগ গুলো কেটে দেয়, তাতেও যেনো কিছুতেই মেঘের রাগ কমছে না।নিজের হাতের গান দিয়ে শফিকের বুকে সব কয়টা ঢুকিয়ে দেয়।শফিকের বুক ঝাঝড়া হয়ে যায়।গান টা ফেলে ছুড়িটা নিয়ে শফিকের চেহারায় এলোপাথারি আঘাত করতে থাকে।এইসব করা পর যেনো মেঘ অনেক টাই শান্ত হয়ে যায়।তার মাঝে আকাশ রনি কে আর কিছু গার্ডের নিয়ে ভিতরে ঢুকে।ভিতরে ঢুকেই দেখে মেঘ দাড়িয়ে আছে আর শফিক নিচে পরে আছে।অনেক বাজে ভাবে শফিক কে মারা হয়েছে।চেহারা টা ও তেমন বুঝা যাচ্ছে না।রনি এমন একটা পরিস্থিতির মাঝে এসে পরেছে যে তার রিতিমতো শরীর কাপাঁকাপি শুরু করে দেয়।

আকাশ;;মেঘ বউমনি।আকাশের কথা শুনে যেনো আর একমুহুত দেরি না করে বৃষ্টিকে খুজতে লাগে।মেঘ যেনো তার বৃষ্টির কে খুজে পায় না।সব রুমে খুজেই যাচ্ছে কিন্তুু কিছুতেই যেনো বৃষ্টিকে খুজে পাচ্ছে না।
আর এই দিকে বৃষ্টির অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে।হালকা হালকা ব্যাথা অনুভব করছে।নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে বৃষ্টি দরজার সামনে দাড়ায়। কেউ কি আছেন প্লিজ দরজা টা খুলে দিন আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।
ওইদিকে মেঘ বৃষ্টিকে না পেয়ে যেনো তার বুকটা মোচর দিয়ে উঠে।বৃষ্টির কিছু হয়নি তো।মেঘ বৃষ্টিকে না পেয়ে নিচে চলে আসে।আকাশ মেঘের কাদের হাত রেখে বলে।

আকাশ;;তুই চিন্তা করিস আমরা বউমনি কে পেয়ে যাবো বলে মেঘ আকাশ দুইজনেই খুজতে থাকে।
—-মেঘ আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে বৃষ্টিইইইইই বলে চিৎকার করতে থাকে।বৃষ্টির কানে মেঘের কন্ঠ শুনতে পেরে জোরে জোরে দরজায় হাত দিয়ে বারি দিকে থাকে আর মেঘ বলে ডাকতে থাকে।বৃষ্টির ডাক শুনে মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না যে বৃষ্টি পাশের রুমেই আছে।তারা দুইজন আর দেরি না করে এইরুমটার সামনে গিয়ে দাড়ায়।আকাশ নিজের শক্তি দিয়ে রুমের দরজা টা ভেঙে ফেলে।তারা রুমে ঢুকে দেখে বৃষ্টির অবস্থা খুব খারাপ।মেঘ দৌড়ে গিয়ে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে।আর এই দিকে বৃষ্টি মেঘ কে কাছে পেয়ে কান্না করতে থাকে।মেঘ বৃষ্টিকে ছেড়ে সারা মুখে চুমু খেতে থাকে।বৃষ্টি আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে অন্তর -আন্তা ছেরে চিৎকার করে উঠে।বৃষ্টির এমন চিৎকার করাতে আকাশ মেঘ দুইজনেই বেশ অবাক হয়ে যায়।মেঘ তো অনেক টাই হাইপার হয়ে গেছে।কিন্তুু এইদিকে বৃষ্টির অবস্থা নাজেহাল।বৃষ্টির তার এক হাত কোমড়ের পাশে রেখে ব্যাথায় অনেকটাই কুকড়ে উঠে।

আকাশ;;মেঘ, মেঘ বউমনির লেবার পেইন উঠেছে তারাতারি করে হস্পিটালে নিতে হবে।আমি গাড়ি বের করছি তুই বউমনি কে নিয়ে তারাতারি চলে আয় বলেই আকাশ দৌড়ে গাড়ির সামনে গিয়ে,গাড়িতে বসে পরে।

মেঘ আর দেরি না করে বৃষ্টিকে পাজাকোলে তুলে তারাতারি করে গাড়িতে নিয়ে বসায় আর নিজেও বৃষ্টির পাশে গিয়ে বসে।আকাশ দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয়।বৃষ্টি মেঘের একহাত ধরে রেখেছে আর আরেক হাত পেটে।বৃষ্টি বারবার চোখ দুটো বুঝে আসছে।

মেঘ;;জানপাখি প্লিজ একটু ধৈর্য্য ধরো কিছু হবে না তোমার।আকাশ তারাতারি গাড়ি চালা।
—বৃষ্টি আর সহ্য করতে না পেরে এইবার যেনো কেঁদে দেয়।বৃষ্টির কাছে এমন মনে হচ্ছে তার যেনো সব ছিড়ে যাচ্ছে।আর থাকতে না পেরে বৃষ্টি আরেক দফা চিৎকার করে উঠে।যেই মেঘ বৃষ্টিকে একটা বাচ্চা মতো কেয়ার করতো আর আজ সেই বৃষ্টি ব্যাথায় এতোটা কাতরাচ্ছে।মেঘ যেনো বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে কোন মতে সামলে নেই।তার মনে যে কতো উথাল পাতাল বয়ে যাচ্ছে একমাএ মেঘেই জানে।

মেঘ;;তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?

বৃষ্টি;;মে,মেঘ আ,আমি আর স,সহ্য করতে পা,পারচ্ছিনা, ভিষন ব্যাথা করছে।

মেঘ;;আর একটু সহ্য করো। আমরা চলে এসেছি।

আকাশ যেনো আর কিছু না ভেবে হাওয়ার বেগে গাড়ি চালাচ্ছে।পনেরো মিনিট পরো তাদের গাড়ি হস্পিটালে এসে থামে।গাড়ি থেকে নেমেই আকাশ নীলা কে দেখে।আকাশ নীলাকে আগেই ফোন করে বলে দেয়।বৃষ্টিকে দেখে নীলা দৌড়ে যায়।আকাশ দৌড়ে ডক্টরের কেবিনে চলে যায়।

নীলা;;জিজু কি করে হলো এইসব।বৃষ্টির তো ডেলিভারির সময় আরও দুইদিন পর তাহলে এইভাবে ব্যাথা উঠার কারন কি?

মেঘ;;নীলা আগে পরে ব্যাথা উঠার কারন হতেই পারে।এইটা কোন সমস্যা না।
—নীলা;;কিন্তুু বৃষ্টি কিভাবে যাবে।মেঘ নীলার দিকে তাকিয়ে গাড়ির দরজা পুরো খুলে বৃষ্টিকে পাজাকোলে তুলে তারাতারি করে হস্পিটালে নিয়ে যায় তার সাথে নীলাও চলে যায়।

হস্পিটালে মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে ঢুকা মাএই ডক্টর আর নার্স এসে হাজির হয়।ওয়াডবয় একটা বেড আনা মাএই মেঘ বৃষ্টিকে সেই বেডে শুইয়ে দেয়।বৃষ্টি মেঘের হাত খুব শক্ত করে ধরে রাখে।নার্স আর কিছু ওয়াডবয় মিলে বৃষ্টিকে নিয়ে যায়।রুমে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টির ওয়াটার ব্রেক করে ফেলে।ব্যাথা যেনো আরও তীব্রতর হয়ে গেছে।সেই রুমে বৃষ্টিকে নিজের পোশাক ছেড়ে তারা তাদের হস্পিটালের পোশাক পরিয়ে দেয়।বৃষ্টির চুল গুলো গুটিয়ে একটা ব্লু কালারের হেয়ারে বেধে রাখা হয়।বৃষ্টি কে এখন OT তে নেয়া হয়েছে।ব্যাথায় যেনো বৃষ্টি ছটপট করছে।তার মনে হচ্ছে এখনি যে মারা যাবে।

ডক্টর বৃষ্টিকে দেখেই বুঝতে পারলো যে তার নরমাল ডেলিভারি হবে কোন রকমের সিজার করতে হবে না।OT এর বাহিরে নীলা আকাশ মেঘ তিনজনেই দাড়িয়ে আছে আর আল্লাহ কে শরন করছে।আকাশ বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে বৃষ্টিকে তারা হস্পিটালে নিয়ে এসেছে আর তারা যেনো চিন্তা না করে।তারা আসতে চাইলে আকাশ মানা করে দেয়।চারপাশেই যেনো পরিবেশটা শান্ত।তিনজনেই চোখে মুখে চিন্তার ছাপ বুঝা যাচ্ছে।এতো শান্ত পরিবেশের মাঝে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।বৃষ্টির শরীরে আর এক বিন্দু শক্তি নেই তার চোখ যেনো নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে।OT থেকে একজন নার্স বের হয়ে আসে কোলে তার একটা ফুটফুটে বাচ্চা।নার্স এসে মেঘের সামনে দাড়ায়।

নার্স;;স্যার আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।ম্যামের ছেলে সন্তান হয়েছে।মেঘের কানে যেনো কিছুই ঢুকছে না সে এক দৃষ্টিতে তার বাচ্চার দিকে তাকিয়ে আছে।নার্স বাচ্চা টা কে মেঘের কোলে দেয়।মেঘ তার সন্তান কে কোলে নিলে আনন্দে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে।হঠ্যাৎ করেই বৃষ্টির কথা মনে পরে মেঘের।

মেঘ;;আ,আমার বৃ,বৃষ্টি কেমন আছে।

নার্স মুচকি হেসে, ম্যাম একদম সুস্থ আছে।কিছুখন পরেই ম্যামকে আমরা কেবিনে দিয়ে দেবো বলেই নার্স সেইখান থেকে চলে যায়।

—-মেঘ যেনো খুশিতে আন্তহারা।সে বাবা হয়েছে।আকাশ যেনো অবাক হয়ে মেঘ কে এই প্রথম দেখছে।মেঘের পাশে গিয়ে দাড়ায়।মেঘ বাচ্চা টাকে নীলার কোলে দিয়ে আকাশ কে জড়িয়ে ধরে।

মেঘ;;আ,আকাশ,আকাশ আ,আমি বাবা হয়েছি আর তুই চাচ্চু।তিনজনের মাঝে যেনো হাসির বন্যা বয়ে গেলো।আকাশ তো আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেয়।এইদিকে এই খবর শুনে যে তারা যেনো অনেক খুশি।

বৃষ্টিকে কেবিনে দেয়া হয়।মেঘ প্রথমে বৃষ্টির কাছে যায়।কেবিনে ঢুকেই দেখে বৃষ্টি শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে।মেঘ আস্তে করে বৃষ্টির সামনে বসে তার কপালে চুমু একে দেয়।বৃষ্টি তার কপালে মেঘের পরশ পেয়ে পিটপিট করে তাকায়।মেঘ যেনো তার জানপাখির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

বৃষ্টি;;মেঘ তুমি খুশি হওনি।

মেঘ;;হুমমম

মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতেই যেনো তার চোখে কোনে পানি চলে আসে।বৃষ্টি যেনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মেঘ আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।

মেঘ;;বৃষ্টি আজকে আমি অনেক খুশি।আমার অন্ধকার জীবন টা তুমি আলো দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছো।আজকে যেনো নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।মেঘ বৃষ্টিকে ছেড়ে তার দিকে তাকায়।

বৃষ্টি মেঘের চোখে তাকিয়ে দেখে তার চোখের জল যেনো মুক্তোর ন্যায়ের মতো ছলছল করছে আর মুখে যেনো তার হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।তখন আকাশ নীলা বাচ্চা কে নিয়ে কেবিনে ঢুকে।বৃষ্টি যেনো তাকে দেখা মাএই নিজে উঠার চেষ্টা করছে।মেঘ তা দেখে আস্তে করে বৃষ্টি কে ধরে তার পিঠে বালিশ দিয়ে বসিয়ে দেয়।বৃষ্টি তার হাত বারিয়ে দিলে নীলা বাচ্চা টা কে কোলে দেয়।বৃষ্টি কোলে নিতেই যেনো তার চোখ দিয়ে একফোটা জল গরিয়ে পরে।আসলেই নবজাতক সুন্দর।দুধে আলতা গায়ের রং।দেখতে বেশ গোলুমোলু।তার থাই আর হাত পা আর গালগুলাও বেশ মোটাসোটা।ঠোটঁ গুলো গাঢ় গোলাপি আর নাক যেনো বুচো।চুল গুলো ব্রাউন কালার সব মিলিয়ে যেনো বৃষ্টির কাছে মেঘের মতো লাগছে।

আকাশ তো খুব খুশি আর তার পাশাপাশি নীলাও।

ডক্টর আরও দুইদিন বৃষ্টিকে থাকতে বলেছে।কারন বৃষ্টির শরীর অনেক টাই দূর্বল।সবাই তো বাচ্চা পেয়ে ভিষন খুশি।তাদের খুশির মাঝেই বাচ্চা কান্না করে উঠে তারমানে তার খিদে লেগেছে।নীলা একটা বাটিতে করে দুধ এনে তাকে খাওয়াতে থাকে।আর এইদিকে বৃষ্টির কেয়ার মেঘ নিজেই করে।বৃষ্টি মেঘের বুকে মাথা রেখে নীলার কোলে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকে।আকাশ আর নীলা তো বাচ্চা নিয়ে কারাকারি শুরু করে দেয়।তা দেখে মেঘ বৃষ্টি দুইজনেই হেসে দেয়।এই গোটা পৃথিবীর সব থেকে সুখময় মূহর্ত যেনো এইটাই।শুরু হলো আজ থেকে মেঘ-বৃষ্টির জীবনের আরেক ধাপ।



চলবে~~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here