তুমি শুধু আমার – পর্ব ২৮(শেষ)

0
678

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২৮(শেষ পর্ব)

দুইদিন পর হস্পিটাল থেকে বৃষ্টিকে বাসায় নিয়ে আসে।গাড়ি থেকে নেমেই সবাই হলরুমে ঢুকেই অবাক।বাড়ির পরিবেশ পাল্টে গেছে।পুরো বাড়ি বিভিন্ন রকমের চারপাশে ফুল দিয়ে সাজানো আর তার মাঝখানে বড় করে লিখা(welcome little prince)এলিনা কহিনুর রায়হান বাড়ির সব সার্ভেন্টরা সবাই অনেক খুশি।

রায়হান;;কই আমার নানা ভাই?

বৃষ্টি;;এই যে বাবা।নীলা কে ইশারা করতেই বেবিটা কে কোলে দেয়।সবাই চোখে যেনো আনন্দের পানি।

মেঘ;;বৃষ্টি চলো। তোমার শরীর এখনো দূর্বল।মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।রুমে গিয়ে দুইজনেই আরেক দফা অবাক হয়ে যায়।তাদের ঘরটাও খুব সুন্দর করে সাজানো।বৃষ্টিকে বিছানায় বসিয়ে মেঘ বড় থাইগ্লাস টা খুলে দিতেই বৃষ্টির মুখে মিষ্টি রোদের আলো আসে পরে।মেঘ থাইগ্লাসের সাথে দাড়িয়ে তার প্রিয়শীর দিকে তাকিয়ে আছে।

বৃষ্টি;;কি দেখাচ্ছো এমন করে।

মেঘ;;আমার জানপাখি কে?

বৃষ্টি আস্তে করে উঠে মেঘের কাছে যায়।মেঘের পায়ে উপর নিজের পা রেখে নিজের দুইহাত মেঘের কাদে রেখে দেয়।বৃষ্টি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।হঠ্যৎ কি মনে করে যেনো মেঘের ঠোট নিজের ঠোটের মাঝে দখল করে নেয়।অচমকা এমন হওয়াতে মেঘ অবাক হয়ে যায়।কিছুক্ষন পরে বৃষ্টি মেঘ কে ছেড়ে দেয়।

মেঘ;;এই তুমি কি করলে??

বৃষ্টি;;কেনো?কি করলাম?কিছুই করিনি।

মেঘ;;তাই?

বৃষ্টি;;হুমমম

মেঘ;;ভালোবাসি!

বৃষ্টি;;ভালোবাসি!অনেক ভালোবাসি।

রাতে সবাই হলরুমে খাবার টেবিলে বসে আছে।সবাই সবার মতো কথা বলছে আর ডিনার করছে।

এলিনা;;দাদু ভাই কিছু কথা ছিলো?

মেঘ;;হুমম দাদি বলো?

এলিনা;;আমি ভাবছি আকাশ আর নীলা বিয়ে,,,

আকাশ;;দাদি আমি রাজি?

সবাই যেনো আকাশ কথা শুনে হেসে দেয়।




৩ মাস পর,,,,

আজ আকাশ আর নীলার গায়ের হলুদ।সবাই অনেক মজা করছে।পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে।নীলা কে হলুদ লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে।হাত ভড়তি চুড়ি চোখে কাজল আর ঠোটে হালকা লিপস্টিক।এতেই যেনো নীলা কে দারুন লাগছে।

বৃষ্টি;;আরে বাহ্!আমার বেষ্টুকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।আজ ভাইয়া তোকে দেখলে আর সে তার চোখ ফিরাতেই পারবে না।

নীলা;;তাই না কি?তোকেও তো কম সুন্দর লাগছে না। তোকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে না যে তুই একবাচ্চার মা।

মেঘ;;বৃষ্টি,বৃষ্টি,বৃষ্টিইই,

বৃষ্টি;;আরে কি হয়েছে এতো চিৎকার করছো কে,,,কি ব্যাপার রুম তো ফাকাঁ ডাকলো কোথা থেকে।তখনি মেঘ পিছন থেকে বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে।বৃষ্টি মেঘের হাতের পরশ পেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

মেঘ;;এইটা কি হলো?

বৃষ্টি;;কি হলো!

মেঘ;;তুমি চিৎকার করলে না কেনো।ভয় লাগেনি। যদি অন্য কেউ হতো?

বৃষ্টি;;কার এমন সাহস আছে যে আমাকে ধরবে।যেই আমাকে দরবে তাকে সোজা উপরে পাঠিয়ে দেবে আমার বর বুঝলে মিষ্টার।
তাদের কথার মাঝে কেউ কান্না করে উঠে।দুইজনেই সেই দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

সোনিয়া;;স্যার ম্যাম,দাদি আম্মা আপনাদের নিচে যেতে বলেছে।
সবাই হলরুমে চলে আসে।সবাই খুব খুশি নীলা কে বৃষ্টি নিয়ে এসে আকাশের পাশে বসিয়ে দেয়।এলিনা প্রথমে হলুদ ছোয়ালে তারপর একে একে সবাই দুইজন কে হলুদ ছোয়ায়।এইভাবেই সবার অানন্দে রাত টুকু পার করে।



পরের দিন আকাশ আর নীলার বিয়ে হলো।নীলা কে আকাশের রুমে বসানো হয়েছে আর বৃষ্টির দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে।মেঘ আর আকাশ কথা বলতে বলতে নিজের রুমে সামনে এসে দাড়ায়।

আকাশ;;বউমনি তুমি এইভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো।

মেঘ;;বৃষ্টি কি হচ্ছে! তুমি এইখানে কেনো?

বৃষ্টি;;ও হো আমি এইখানে দাড়িয়ে আছি এই কারনে আমাকে টাকা না দিলে আমি ভাইয়াকে ভিতরে ঢুকতে দিবো না।

আকাশ;;বউমনি কেনো ইজ্জতের ফালুদা করছো।ভাই তুই তো কিছু বল।

মেঘ;;বৃষ্টি আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিবো।আকাশ কে ভিতরে যেতে দেও।

বৃষ্টি;;না,টাকা না দিলে ভিতরে ঢুকতে দিবো না।

আকাশ অসহায় মুখ করে বৃষ্টিকে টাকা দিয়ে দেয়।
—বৃষ্টি যাও যাও।আর তোমাকে বাধাঁ দিবো না।
মেঘ বৃষ্টি দুইজনেই তাদের রুমে চলে আসে আর আকাশ তার রুমে গিয়ে নীলার পাশে গিয়ে বসে।
আকাশ;;আচ্ছা ভুতনী তুমি কি সত্যি মানুষ?
নীলা তারাতারি করে আকাশের দিকে রাগি চোখে তাকায়।
নীলা;;কি বললে আবার বলো তো?
আকাশ, কেনো ভু,,,,বাকি কথা আর বলার সুযোগ হলো না।আকাশ শুধু রসোগোল্লা মতো চোখ দুটো বড় বড় করে আছে।কিছুক্ষন পরেই নীলা আকাশ কে ছেড়ে দেয়।আকাশ কে এইভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভিষন লজ্জা পায়।সেই রাতেই আকাশ নীলা একে অপরের হয়ে রইল।তাদের ও ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো🥰

৮বছর পর,,,,

বৃষ্টি;;তিয়াশ দাড়া বলছি…

তিয়াশ;;হাহ্ পারলে ধরো আমাকে…

মেঘ গিয়ে তিয়াশ কে ধরলো….তিয়াশ মেঘ আর বৃষ্টির ছেলে…বয়স ৭ বছর।

তিয়াশ;;পাপা ছাড়ো আমাকে?

মেঘ;;তুমি তোমার মাম্মা কে জ্বালাও কেনো?

আকাশ;;তিশা সোনা কাঁদে না…

কে শোনে কার কথা….তিশা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করেই চলছে।তিশা নীলা আর আকাশের মেয়ে।বয়স ৫ বছর।

তিয়াশ;;চাচ্চু ও কাঁদে কেনো??

নীলা;;মার খাবে বলে…

ব্যাস নীলার কথা শুনে তিশা থেমে গেলো।নীলা কে খুব ভয় পায়।

বিকেল দিকে সবাই বাগানে বসে আছে। আর তার একপাশে তিয়াশ আর তিশা দুইজন মিলে খেলা করছে।তিয়াশের একটা খেলনা ধরে তিশা খেলছে তা দেখে তিয়াশ তিশাকে ধমক দেয়।

তিশা;;তুমি ধমক দিলে কেনো??তুমি ভালো না।আমি আর তোমার সাথে খেলবো না।তোমার থেকে তো সাগর অনেক ভালো।

ব্যাস তিশার মুখে অন্য ছেলের নাম নেয়াতে তিয়াশ রেগে বোম হয়ে যায়।

তিয়াশ;;তুমি শুধু আমার সাথেই খেলবে।অন্যকারে নাম নিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।তিশা কান্না করতে করতে বৃষ্টির সামনে গিয়ে দাড়ায়।

বৃষ্টি;;কি হয়েছে তিশা।তুমি কান্না করছো কেনো?

তিশা;;তিয়াশ ভাইয়া আমাকে বকেছে।সেই সময় তিয়াশ সবার সামনে আসে।

বৃষ্টি;;তিয়াশ তুমি কি তিশা কে বকেছো।

তিয়াশ;;হ্যাঁ বকেছি।বকবো না তো কি করবো।আমার সাথে খেলার করে আর অন্য ছেলের নাম মুখে আনে।সেই জন্যই ওকে বকেছি কথা টা বলেই তিশার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

বৃষ্টি;;তি,তিয়া,তিয়াশ বাবা আমার কথা শুনো।যাহ্ বাবা ছেলেটা হয়েছে ঠিক মত কথায় কথায় রাগ করে।

মেঘ;;দেখতে হবে না ছেলেটা কার?মেঘ আহমেদ চৌধুরীর ছেলে।

বৃষ্টি;;হ্যাঁ অনেক হয়েছে আরও ছেলে কে আদর দিয়ে বাদর বানাও।বাবা যেমন ছেলেটাও হয়েছে তেমন।

এইভাবেই যেনো সময়টা যেতে থাকে।চৌধুরী বাড়িটা যেনো হাসি খুশিতে ভরে থাকে।

,,,দেখতে দেখতে আর ১৫ বছর পর,,,,

তিয়াশের এখন ২৩ বছর আর তিশার ২১,,,দেখতে দেখতেই তিশা তিয়াশ অনেক টাই বড় হয়ে গেছে।সকালের ব্রেকফাস্ট করেই তিশা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে চলে যায়।কলেজে পৌছে তিশা তার বান্ধীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে সেই সময় কোথা থেকে একটা ছেলে এসে তিশার সাথে কথা বলছে।সেই কলেজেই তিয়াশ তার বন্ধু লিমনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো,,,হঠ্যৎ করেই লিমনের চোখ পরে তিশার দিকে আর সে দেখে যে তিশা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

লিমন;;তিয়াশ ওই দেখ তোর তিশা..

তিয়াশ লিমনের কথা শুনে তাকিয়ে দেখলো তিশা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।তা দেখে যেনো তিয়াশের মাথা গরম হয়ে গেলো।তিয়াশের চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে গিয়েছে।আর সহ্য করতে না পেরে তিয়াশ গিয়ে তিশার সামনে দাড়ায়।তিয়াশ কে এইভাবে দেখে তিশা যেনো ভয়ে কাপাঁকাপি শুরু করে দিলো।

তিশা;;আ,আমি আ আসলে,,,

তিয়াশ আর এক মূহুর্ত দেরি না করে তিশার হাত ধরলো।

ছেলেটি;;কি করছেন আপনি?

তিয়াশ;;ছেলেটির দিকে তাকিয়ে।তুই মরার জন্য তৈরি থাক।

তিয়াশ আর দেরি না কে তিশা কে গাড়িতে বসিয়ে ওদের বাংলোতে চলে এলো।তিশার হাত ধরে উপরের রুমে নিয়ে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।

তিশা;;তি, তিয়া,তিয়াশ আমার ক,কথা উমমমমম…

তিয়াশ তিশার ঠোটঁ দখল করে নিলো।তিশা ছুটার জন্য হাত পা ছুড়ছে।তিয়াশ তিশার হাত চেপে ধরে।কিছুক্ষন পরেই তিয়াশ তিশাকে ছেড়ে দেয়। তিশা কাঁদছে।

তিয়াশ;;ohhh come on jan,,, এতোদিন তোমাকে আমি কিছুই বলিনি।তোমার পিছনে ঘুরেছি।তুমি পাওা দেওনি।তিয়াশ আহমেদ চৌধুরী যে তার ভালোবাসার মানুষ টা কে আগলে রাখতে জানে।আমি ছাড়া তুমি আর কারোর না।ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।তুমি আর অন্য কারও না #তুমি শুধু আমার💖

–(সমাপ্ত)–

(দেখতে দেখতে গল্পটা শেষ হয়ে গেলো। জানি না কেমন লেগেছে বা আমি সবার মন মতো গল্পটাকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কিনা কমেন্ট করে জানাবেন।সবাই ভালো থাকবে আবার কোন এক সময় নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো। আল্লাহ হাফেজ🥰)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here