তুমি শুধু আমার – পর্ব ২৬

0
395

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২৬

ছাদ থেকে নেমে তিনজনই হলরুমে চলে আছে।আকাশ রনি নরমাল থাকলেই মেঘ কে ভিষন চিন্তিত লাগছে।মেঘের মাথায় বার বার শুধু এক কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শফিক জানলো কি করে যে বৃষ্টি আর নীলা বাসায় ছিলো।

রাতের বেলা বাসার দিকে মেঘ সব কিছু ঠিকঠাক করে কাউকে কিছু না বলে অফিসে চলে যায়।সেই সময় রনি মেঘ কে অফিসে দেখে অনেক টাই অবাক হয়।মেঘ তার কেবিনে গেলে রনিও দ্রুত মেঘের কেবিনে চলে যায়।

রনি;;স্যার আপনি এতো রাতে অফিসে কোন সমস্যা হয়েছে কি??

মেঘ;;আচ্ছা রনি তুমি একটা কাজ করো।আমার বাড়ির যতো গুলা ক্যামেরা ফুটেজ আছে তারতারি নিয়ে এসো।রনি দৌড়ে সেই গুলো এনে দিলে মেঘ তা এক এক করে চেক করতে থাকে।কিন্তুু ফলাফল শূন্য। সব কিছুই যেনো নরমাল।মেঘ আর কিছু না বলে অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে বাড়ি চলে যায়।গাড়ি থেকে নেমে মেঘ তারাতারি করে নিজের রুমে চলে যায়।রুমে ঢুকেই দেখে বৃষ্টি ঘুমাচ্ছে।মেঘ সব কিছু মাথা থেকে ছেড়ে মুচকি হেসে বৃষ্টির পাশে বসে কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে আর কিছু না ভেবে মেঘ তার বুকে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।



সকালে মেঘ ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বৃষ্টিকে রেডি করিয়ে হলরুমে চলে আসে। খাবার টেবিলে সবাই বসে কথা বলছে।তাদের কথার মাঝে এলিনা বলে উঠে।

এলিনা;;আচ্ছা দাদু ভাই অনেক তো হলো দুইজনের ভালোবাসা।এইবার না হয় দুইজনের বিয়ে করিয়ে দেই।

মেঘ;;কার কথা বলছো দাদি?

বৃষ্টি;;তুমি বুঝতে পারছো না? নীলা আর আকাশ ভাইয়ার কথা বলছে।বৃষ্টি নীলা কে আস্তে করে ধাক্কা মারে।হঠ্যাৎ করেই বৃষ্টির চোখ মুখ খিচে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দ্রুত উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় তার পিছনে নীলাও চলে যায়।নীলা গিয়ে দেখে বৃষ্টি বমি করছে।বৃষ্টি চোখে মুখে পানি দিয়ে ভালো করে মুখ মুছে নীলা বৃষ্টিকে ধরে আবার টেবিলে এনে বসিয়ে দেয়।

কহিনুর;;কিরে বৃষ্টি এইভাবে চলে গেলি কেনো।শরীর খারাপ করেছে না কি।

বৃষ্টি;;হ্যাঁ মা, একটু শরীর খারাপ লাগছে আর যা খাচ্ছি তাই বমি করে ফেলে দিচ্ছি।মেঘ সব কিছু শুনে আকাশকে বলে??

মেঘ;;আকাশ তুই অফিসে চলে যায় আমি তোর বউমনিকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।আর একমূহত দেরি না করে বৃষ্টিকে নিয়ে হস্পিটালে চলে যায়।গাড়ি থেকে নেমে মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনে চলে যায়…

ডক্টর;;ম্যামের নয় মাসে তো পরেই গেছে কিছু দিন আগেই।এখন শুধু ডেলিভারির সময় হয়ে এলো বলে।

ডেলিভারির কথা শুনে বৃষ্টি কিছুটা ভয় পেয়ে মেঘের হাত শক্ত করে চেপে ধরে।মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করে।

মেঘ;;হুমমম

ডক্টর;;এখন শুধু সব কিছুই যেনো ভালোই ভালোই কেটে গেলেই হলো।

বৃষ্টির সাথে কেবিনে বসে আছে মেঘ।ডক্টরের কেবিনে বসে থাকা অবস্থায় রনির কল আছে।মেঘ বৃষ্টিকে কেবিনে রেখে বাহিরে বের হয়ে কলটা রিসিভ করে।

মেঘ;;হ্যালো

রনি;;স্যার আপনি কোথায়।কাইন্টরা তো সব চলে এসেছে আর আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

মেঘ;;আমি বৃষ্টিকে নিয়ে একটু হস্পিটালে এসেছি।আমি এখনি চলে আসবো।

রনি;;ম্যামের কিছু হয়নি তো?

মেঘ;;না, কিছু হয়নি।বলেই কল টা কেটে দেয়।বাকি সব চেকাপ করার শেষ বৃষ্টিকে নিয়ে বের হয়ে পরে।মেঘ গাড়ি অনেকটাই শান্ত ভাবে চালাতে আর বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে সব কিছু ঠিক আছে তো।মেঘ মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে।বাসায় এসে পরে তারা।বাড়িতে ঢুকেই কহিনুর সামনে আসে।

কহিনুর,কি বলেছে ডক্টর।
—-মেঘ,ডক্টর ৩দিনের সময় দিয়েছে এরপরেই বৃষ্টির ডেলিভারির ডেট।এই কয়েক টা দিন বৃষ্টিকে আরও কেয়ার ফুল থাকতে বলেছে ডক্টর। একদম বেড রেস্ট দিয়েছে ডক্টর।আচ্ছা আম্মু আমি আসি বৃষ্টির খেয়াল রেখো।মেঘ বৃষ্টির কপালে চুমু দিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে যায়।



এইভাবেই যেনো সবাই দিনটা পার করছে।বিকেল দিকে নীলা হাতে করে জুস নিয়ে আসে বৃষ্টির দিকে জুস টা বাড়িয়ে দেয়।বৃষ্টি জুস টা হাতে নিয়ে একমিনিটেই শেষ করে ফেলে।
বৃষ্টি,নীলা শোন আমাকে একটু বাহিরে নিয়ে যাবি, আমার না এইখানে ভালো লাগছে না।
—-নীলা আচ্ছা চলো, বৃষ্টিকে সোফা থেকে যেই না তুলতে যাবি তখনি বাহির থেকে কিছু গুলি শব্দ শুনেই দুইজনেই চমকে যায়।ভয়ে বৃষ্টি নীলার হাত টা শক্ত করে ধরে রাখে।

শরীরের সমস্তশক্তি দিয়ে বাড়ির দরজায় লাথি মারে সাথে সাথে দরজাটা খুলে যায়।তাদের সামনে কিছু কাল পোশাক পরা গার্ড দাড়িয়ে আছে আর তাদের মাঝ খান থেকে হাসতে হাসতে শফিক বের হয়ে আছে।নীলা যেনো শফিক কে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়।
নীলা,আপনি এইখানে কেনো আর কি চাই আপনার?নীলার চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে কহিনুর আর এলিনাও চলে আসে।

এলিনা;;এই কে তোমরা আর এইভাবে আমাদের বাসায় আসার সাহস কি করে হলো গার্ড গার্ড বলেই চিৎকার করতে লাগলো।
—নীলা আমি বলছি আপনি এইমূহন্তে এইখান থেকে চলে যাবেন আর না হলে আমি জিজুকে কল করবো।

কহিনুর ভয়ে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে।

শফিক;;ও হো বেবি রিলেক্স আমি তোমার কাছে আসিনি। আমি তো এসেছি মেঘের প্রান ভোমড়ার কাছে যাকে দিয়ে আমি মেঘ কে কাবু করতে পারবো।এই বলেই শফিক বৃষ্টির দিকে আসতে গেলে নীলা সামনে এসে দাড়ায়।
নীলা,আপনি এইটা ঠিক করছেন না জিজু জানতে পারলে আপনাকে মেরে ফেলবে।
শফিক,মেঘ সেই জানার সুযোগ টাও আমি দিবো না বলেই নীলা কে থাক্কা মারে। সাথে সাথে নীলা নিচে পরে টেবিলে কোনে কপাল লেগে নীলার কপাল টা কেটে যায় আর শফিক বৃষ্টির হাত ধরে টেনে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসে।বৃষ্টি শফিকের হাত থেকে ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তুু কিছুতেই পারছে না ।শফিক কোন মতে বৃষ্টিকে গাড়িতে বসিয়ে চলে যায়।



অবশেষ মেঘ অফিসে গিয়ে বড় কাচের ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে হাতে গরম কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।কিছুখন আগে কাইন্টদের সাথে সব কিছু ঠিক করে পেপার সাইন করে দেয় আর কিছু ফালই সামনে এলোমেলো ভাবে পরে আছে।ঘন্টা খানিক চলে যায় মেঘ তার কাছে ডুবে আছে।কিছুতেই যেনো তার সময় যাচ্ছে না।হাজার করলেও তার কাজ শেষ হবে না।তখনি তার পাশে থাকা ফোন টা বেজে ওঠে, কাজেই ব্যস্তায় মেঘ ফোনের নাম্বার না দেখেই কল টা রিসিভ করে।

মেঘ;;হ্যালো

শফিক;;হ্যালো মেঘ?কেমন আছিস তুই?যানিস মেঘ অনেক দিন পর তোর এই ভরাট কণ্ঠস্বর টা শোনার সৌভাগ্য হলো।
—কন্ঠ চিনতে যেনো একমিনিট ও দেরি হলো না মেঘের যে এই কে?

মেঘ;;যাহহ, যার জন্য এতোদিন ফাদ পাতলাম সে দেখি নিজের ইচ্ছেতে ধরা দিয়েছে।

শফিক;;কিন্তুু সেই বাদে তো আমি পরবো না পরবি তো তুই?

মেঘ,শফিকের কথা শুনে কপাল কুচকায়।

মেঘ;;সোজাসপটায় কথা বল!

শফিক;;তুই কি ভেবেছিলি তোর উপর আমি নজর রাখি না। আজকে যে তুই অফিসে এসে আমার অনেক বড় উপকার করলি।আচ্ছা তুই একবার ভাব তো আমি যদি বৃষ্টিকে কিডনাপ করি তো…শফিক এই কথা বলা মাএই মেঘ সাথে সাথেই রেগে যায়।

মেঘ;;শফিক আমাকে চিনিস না তুই।বৃষ্টির শরীরে একটা আচড় অব্দি এলে তোকে আমি এমন মৃত্যু দেবো যে তোকে দেখেই মৃত্যু পর্যন্ত ভয় পেয়ে যাবে।

শফিক;;কে কাকে মারে দেখা যাক আর কি হয়।

মেঘ এক আছাড়ে হাতে থাকা ফোন টা ভেঙে ফেলে।তার মাথায় কিচ্ছু কাজ করছে না।আর কিছু না ভেবে মেঘ অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে যায়।মেঘ গাড়ি থেকে নেমেই দেখে সব গার্ডরা নিচে পরে আছে বাসার মেইনদরজা খোলা।মেঘের বুক টা মোচড় দিয়ে উঠে।তারাতারি করে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে নীলা পাশে তার দাদি আর কহিনুর বসে আছে । মেঘ দৌড়ে গিয়ে নীলার কাছে যায়। মেঘ তারাতারি করে বাড়ির ফোন থেকে আকাশ কে ফোন করে।একসময় আকাশ ফোন রিসিভ করে।

আকাশ;;হ্যালো

মেঘ;;আকাশ তুই তারাতারি বাসায় চলে আয়।নীলার অবস্থা ভালো না আর বৃষ্টিকেও পাচ্ছি না।আকাশ যেনো মেঘের কথা সব কিছু ছেড়ে হাওয়ার বেগে গাড়ি চালিয়ে বাসায় সামনে আসে।গাড়ি থেকে নেমেই দেখে সব কিছু এলোমেলো হয়ে আছে বাহিরে গার্ডগুলাও সব মরে পরে আছে।আকাশ দৌড়ে হলরুমে গিয়ে দেখে নীলা রক্তাক্ত ভাবে সোফায় শুয়ে আছে।

আকাশ;;নীলা, এই নীলা কথা বলো।প্লিজ নীলা কথা বলো।আর এই দিকে মেঘ তারাতারি করে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে নীলার মুখে ছিটিয়ে দিয়া মাএই নীলা হুস ফিরে আসে।নীলা পিটপিট চোখে তাকাতেই সমানে আকাশ কে দেখতে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

—-নীলা বাঁচাতে পারিনি জিজু।এই লোকটার হাত থেকে বৃষ্টিকে রক্ষা করতে পারিনি।এই লোক টা বৃষ্টিকে জোর করে নিয়ে গেছে।

আকাশ;;কে এসেছিলো আর বউমনি কে কারা নিয়ে গেছে।আকাশের কথা শুনে নীলা প্রথম থেকে সব কিছু বলে।সব কিছু শুনে যেনো আকাশ প্রচুর রেগে যায়।

মেঘ;;আকাশ তুই ওদের সাথেই থাক।আমি বৃষ্টিকে নিয়ে আসবো।
—আকাশ কিন্তুু তুই একা কিভাবে আর বউমনির অবস্থা ভালো না।
মেঘ,আমার কিছুই হবে আমি তোকে ফোন করে সব কিছু জানিয়ে দেবো তোরা সবাই সাবধানে থাকিস।মেঘ তারাতারি বের হয়ে গাড়িতে বসে এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর আরেক হাত মুখের কাছে নিয়ে রেখেছে।হার্টবিট বেরে গিয়েছে তার চিন্তায় আর রাগে।




#চলবে~~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here