ধূসর প্রেমের অনুভূতি – পর্ব ৪৫

0
192

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪৫
.
.
(৮০)
লোহার চেয়ারে হাত পা অবস্থায় বিয়ের সাজে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে সামিরা৷ অদ্ভুত মহোনীয় এক দৃষ্টিতে সামিরার দিকে তাকিয়ে আছে আগন্তক ৷ আগন্তক সামিরার চোখে মুখে পানির ছিটে মারতে ধীরে ধীরে সামিরার জ্ঞান ফিরে আসতে থাকে৷ সামিরা পিট পিট করে চোখের পাতা মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের অবস্থান কোথায় আছে সেটা বুঝতে না পেরে সামিরা হাইপার হয়ে ওঠে৷ নিজেকে বাধন মুক্ত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ তখনি আগন্তক বলে ওঠে,” কেমন আছো সামিরা?”

সামিরা কারোর গলা শুনে সামনে দৃষ্টি স্থির করতে চমকে ওঠে সামিরা৷

” সূ,,সূর্য!”

” ইয়েস ইট’স মি সূর্য৷” বলে বাঁকা হাসলো সূর্য৷

” তু,,তুমি বেঁচে আছো? কিন্তু মারু যে….” বাকিটা বলার পূর্বে সূর্য বলে ওঠে ,” মারু আমাকে মারার চেষ্টা করেছিলো আর সফল ও হয়ে যেতো যদি না আরু আমাকে বাঁচাতো৷ তোমার ষরযন্ত্রে মারু আমাকে সেদিন পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছিলো কিন্তু সৌভাগ্যবসত সেদিন আরুও সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে নেয় মারুর আড়ালে৷”

” তার মানে তুমি আড়ালে থেকে আরুকে সাহায্য করতে?”

” একদম ঠিক ধরেছো সামিরা৷ আমি সেই আগন্তক যে আরুর প্রত্যেকটা পদক্ষেপে ওকে সাহায্য করে গেছে৷”

সামিরা এবার দাঁত কিড়মিড় করতে করতে সূর্যকে বলে উঠলো,” আজ আমার বিয়ে ছিলো সূর্য৷ আমাকে এখানে কেন তুলে আনলে? আমাকে চৌধুরী ম্যানশনে এখনি যেতে হবে৷ আজ আমার আর শ্রাবণের বিয়ে৷”

” বিয়ে! হা হা হা” সূর্য সামিরার কথা শুনে গা কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো৷ সামিরা বুঝতে পারছে সূর্য তাকেই তাচ্ছিল্য করে এভাবে হাসছে৷ সামিরার রাগ যেন রকেটের স্পিডে বাড়তে লাগলো৷ সূর্য কোন রকম তার হাসি থামিয়ে বলতে লাগলো,” বিয়ে! বিয়ে করবে সামিরা কিন্তু কাকে? একজন বিবাহিত পুরুষকে? যে কিনা কিছুক্ষণ আগে তিনবার কবুল পড়ে নুপূরকে বিয়ে করেছে৷”

” কিহ! কি সব আজে বাজে কথা বলছো সূর্য? ভালো হবে না বলে দিচ্ছি৷ আমাকে এই মুহূর্তে ছেড়ে দেও নাহলে অনেক গুলো বছর পূর্বে যে কাজ সম্পূর্ন হয়নি সেকাজ আমি নিজের হাতে সম্পূর্ন করবো সূর্য৷”

” রেইলি সামিরা? ওহ গড আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম৷ কে বাঁচাবে আমাকে? হা হা হা… ইউ নো ওয়াট সামিরা তোমার জন্য বিশেষ একটা সারপ্রাইজ আমি এরেন্জ করেছি যাস্ট সি দ্যাট৷” সূর্য তার ফোন বের করে সামিরার সামনে শ্রাবণ-নুপূর, মেঘ-ফারহা, অর্নিল-ফারিহা সম্পূর্ন বিয়ের ভিডিওটা প্লে করে দেয়৷ সামিরা স্তব্ধ হয়ে যায় ভিডিওটা দেখে, সামিরার বুঝতে বাকি নেই এই সব কার প্লান? এতো বছরের প্লান এক মুহূর্তে নষ্ট করে দিলো আরু৷ সেটা দেখে সামিরার রাগে চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করলো৷

সূর্য সামিরার ফেস দেখে মুচকি হেসে আবার বলে,” সামিরা তুমি কি জানো তুমি এই মুহূর্তে চৌধুরী ম্যানশনে আছো৷ ”

সামিরা অবাক হয়ে সূর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,” অসম্ভব৷ আমি চৌধুরী ম্যানশনের প্রত্যেকটা কোন চিনি এটা চৌধুরী ম্যানশন হতেই পারে না৷”

” উফফ সামিরা তুমি তো দেখছি দিনকে দিন গাধা স্যরি গাধীর মতো কথা বলছো৷ ভালো করে চারিদিক তাকিয়ে দেখো এটা বেসমেন্ট ৷ ”

সামিরা সত্যি চারিদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখে সূর্যের কথাই সত্যি৷ সামিরা চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ , প্রচন্ড রাগ উঠছে নিজের উপর, সে সময় যদি রিভালবার নেওয়ার জন্য রুমের দিকে না যেত তাহলে এই সূর্য তাকে কিডন্যাপ করতে পারতো না৷ এখন শ্রাবণও বিয়ে করে নিলো৷ চৌধুরী পরিবারে ঢোকার শেষ ট্রাম কার্ডটাও হাত ছাড়া হয়ে গেল৷ ভাবতেই সামিরার রাগে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো৷

_______________

খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ করে গেস্টরা বিদেয় নিয়ে অনেক আগেই চলে গেছে৷ মেঘের মম মেহরীমা চৌধুরী এখনো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে৷ সামিরা যে এমন কিছু করবে এটা মেহরীমা বা অন্য কেউ ভাবতেও পারেনি৷ শ্রাবণ বিয়ে হওয়ার পর থেকে একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে৷ চুপটি করে ছাঁদের কানির্শে দাড়িয়ে আছে শ্রাবণ৷ এক আকাশ অভিযোগ নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কাঁধে হঠাৎ কারোর হাতের ছোঁয়া পেতে শ্রাবণ পেছনে না মুড়ে বলে উঠলো,” আমি একটু একা থাকতে চাই মেঘ৷”

মেঘ মুচকি হেসে শ্রাবণের পাশে দাড়িয়ে বলে,” আমি জানি ভাইয়া তোর মনে এখন কি চলছে৷ তবে এখন আমি যা বলবো সেটা শোনার পর হয়তো তোর মনে যে আকাশ সমান অভিযোগ জমা হয়েছে সেটা হয়তো নিমিশে হারিয়ে যাবে৷”

শ্রাবণ এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বলে উঠলো,” কি কথা বলার কথা বলছিস মেঘ?”

” তাহলে ধৈর্য ধরে সবটা শুনতে হবে তোকে আর হা কথার মাঝে কোন কথা বলবি না৷”

মেঘ শ্রাবণের কাছে আশার পূর্বে ফারহা সামিরার আসল রুপটার সম্পর্কে মেঘকে জানিয়ে দেয়৷ আর মেঘ তার ভাইয়ের দুঃখ কষ্ট দুর করার জন্যই সামিরার সব সত্যটা জানাতে ছাঁদে আশা মেঘের; শ্রাবণ মেঘের কথায় সায় জানায়৷ মেঘ এবার শুরু থেকে সবটা বলতে লাগলো৷ এক এক করে সব ঘটনা শ্রাবণ জানতে পেরে তার নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে৷ তবে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় সামিরার সাথে বিয়েটা না হওয়ায়৷ নুপূরকে এক প্রকার সামিরার উপর জেদ করে বিয়ে করে৷ বিয়ে করার পর নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে অনুসূচনা হচ্ছিলো ৷ মেঘ তার ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে বলতে লাগলো,” ভাই যা হবার তা হয়ে গেছে এখন তুমি নুপূরকে নিয়ে নতুন ভাবে শুরু করো৷ হয়তো তোমার কাছে খুব একটা সহজ হবে না তবে কঠিনও হবে না৷ ভাইয়া নুপূর মেয়েটা এতিম ওকে কখনো কষ্ট দিও না৷ ভুলে যাবে না সামিরা নয় নুপূর আজ থেকে তোমার জীবন সঙ্গিনী৷ ”

শ্রাবণ মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,” থ্যাঙ্কিউ মেঘ থ্যাঙ্কিউ আজ আমাকে বড় একটা করতে যাওয়া ভুলের হাত থেকে বাঁচিয়েছিস৷ ”

” উফফ ভাই এখন আবার চুমু খাস না প্লিজ৷ ”

শ্রাবণ মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মারতে নিলে মেঘ হাত দিয়ে নিজেকে প্রটেক্ট করে ৷

” মেঘের বাচ্চা আজ আমার হাত থেকে তোকে কে বাঁচাবে আমিও দেখবো৷”

মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে শ্রাবণকে বলতে লাগলো৷

” ভাই আমার বউয়ের এখনো বাচ্চা হয়নি৷ আর না সে প্রসেসিং স্টাট করেছি ৷ তাই প্লিজ মেঘের বাচ্চা বলিস না৷ তুই যেহেতু আমার বড় ভাই তাই তোকেই আগে বাচ্চার বাবা হতে হবে৷ ”

“তবে ফাজিল৷ বড় ভাইয়ের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানিস না৷ দেখাচ্ছি মজা৷” শ্রাবণ মেঘকে ধরতে গেলে মেঘ দৌড়ে নিচে চলে আসে৷ এদিকে পুরোপুরি বিপদ কাটে নি বিধায় ফারহা ফারিহাকে তার শশুড় বাড়ি যেতে দেয়নি৷ অর্নিলের বাবা প্রথমে এই বিষয়টা মানতে নারাজ হলেও ফায়েজ খান তাকে বুঝিয়ে বলায় তিনি রাজি হন৷ তিনটে রুমে সুগন্ধি মোম আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ তিনটে রুম একই রকমে সাজিয়েছে আদিল রাফি রোজা ৷

(৮১)
ফারহা আর ফারিহার সামনে পুতুলের মতো বসে আছে নুপূর৷ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায় নুপূর এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি৷ ফারহা ফারিহা দুজনে নুপূরকে ফলো করছে৷ ফারহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুপূরকে বলতে লাগলো,” নুপূর আজ তোমার আর শ্রাবণ ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো? শোন নুপূর যা হবার তা হয়েছে এখন তুমি চৌধুরী পরিবারের বড় বউ৷ শ্রাবণ ভাইয়ের স্ত্রী এটা ভুলে যাবে না৷ ”

নুপূর এবার বলে উঠলো,” আপু উনি কি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে কখনো মেনে নিবে? উনি তো সামিরাকে ভালোবাসে৷”

” আমি জানি ভাইয়া তোমাকে মেনে নিবে৷ তবে চিন্তা করো না শ্রাবণ ভাইয়া অন্তত তোমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না৷”

ফারহা ফারিহার আর নুপূরের কথার মাঝে আদিল রাফি রোজা এসে হাজির হয়৷ অর্নিল কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না৷ কাজ আছে বলে বেড়িয়ে যায়৷ এদিকে রাত বাড়ার সাথে সাথে আদিল রাফি রোজা ফারহা ফারিহা আর নুপূর কে নিয়ে যার যার রুমে নিয়ে যায়৷ ফারহা তার নিজের রুমে ঢুকে আদিল রাফিকে বলে,” তনু কোথায়?”

” তনুপু কে তার রুমে বন্ধি করে রেখেছি৷ এন্ড ডোন্ট ওয়ারি পেছনের ব্যালকনি থেকেও পালাতে পারবে না কারণ ব্যালকনির নিচে চারটে কুকুরকে পাহাড়ায় দাড় করিয়ে রেখেছি৷ ”

” বাহ! আমার ভাইদের মাথায় তো বেশ বুদ্ধি খুলেছে৷ বুঝেছি আলফা আর রোজার কারণে এটা হয়েছে তাই না পিচ্চি আর ছোটু?”

ফারহার কথা শুনে রোজা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল৷ আর আদিল রাফি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,” ইয়ে মানে দি একটা কথা বলার ছিলো৷”

” আমি জানি তুই কি বলতে চাস ছোটু৷ চিন্তা নেই দু’একদিন পর আমি রোজার মমের সাথে তোদের বিয়ে নিয়ে কথা বলবো৷”

ফারহার কথা শুনে রাফি বলে ওঠে ,” দেখেছো দি এই জন্য তোমাকে আমি এত্তো ভালোবাসি৷ না বলতেই সবটা কি ভাবে বুঝে যাও৷”

” হয়েছে এখন তোরা এখানে কি করছিস? শ্রাবণ ভাই মেঘ আর অর্নিলের কাছ থেকে তোদের পাওনা টাকা না নিয়ে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?”

ফারহার কথা শুনে আদিল রাফি না দাড়িয়ে ছুট লাগায় প্রথমে শ্রাবণকে ধরবে বলে৷ শ্রাবণ মেঘ ড্রইংরুমে বসে ছিলো সেসময় অর্নিল এসে উপস্তিত হয় হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে৷ আদিল রাফি রোজা এসে দাড়ায় তিন মূর্তি মানের সামনে৷ মেঘ ভ্রু কুচকে রোজা রাফির আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,” কি বেপার শালাবাবুরা আপনারা এখানে এখনো ঘুমায়ও নি?”

” কি করে ঘুমাবো জিজু? যতোক্ষণ না আমাদের প্রাপ্য হিসেব টা না পাই৷ ”

আদিলের কথা শেষ হতে রোজা বলে ওঠে, দেখুন জিজু’স এন্ড ভাইয়া অনেক কষ্ট করে আপনাদের রুম সাজিয়েছি৷ এখন আমাদের পাওনাটা ঝটপট দিয়ে দিন৷ বেশি না শ্রাবণ ভাই পঞ্চাশ হাজার , মেঘ জিজু পঞ্চাশ হাজার , আর অর্নিল জিজু পঞ্চাশ হাজার৷ কারণ কম বেশি নিলে আপনাদের খারাপ লাগতে পারে তাই সবাই একি এমাউন্ট দিবেন৷”

রোজার কথা শুনে শ্রাবণ মেঘ অর্নিল দাড়িয়ে পড়ে৷ অর্ণিল বুকে হাত ভাজ করে বলে,” কিহ! পঞ্চাশ হাজার টাকা? এতো টাকা কেন দিবো? সামান্য রুম ডেকোরেট করতে এতো টাকা দাবি করছো?”

শ্রাবণ মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,” আরে তোমরা হলে বাচ্চা ছেলে মেয়ে৷ তোমাদের হাতে এতো গুলো টাকা দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে বলো? তার চেয়ে বরং টাকা গুলো আমাদের কাছে জমা থাক তোমরা নাহয় অল্প অল্প করে আমাদের কাছ থেকে নিও৷”

রাফি এবার শ্রাবণের ভাষায় বলে উঠলো,” ঠিক আছে ভাইয়া টাকা গুলো নাহয় আপনাদের কাছে থাক আর আমাদের বোনেরা আমাদের কাছে৷ মাঝে মাঝে না হয় আপনারা আমাদের বাসায় গিয়ে আপুদের সাথে দেখা করে আসবেন৷”

রাফির কথা শুনে শ্রাবণ মেঘ অর্নিল একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে বললো,” আরেহ শালাবাবু দেখছি রেগে যাচ্ছো৷ আমি কি তা বলেছি? আচ্ছা তাহলে কাল সকালে তোমাদের টাকা গুলো দিয়ে দিবো এখন রুমে যাচ্ছি ৷”

মেঘ কথা গুলো বলে যেতে নিলে আদিল বলে ওঠে,” জিজু কোথায় যাচ্ছেন? আপুর কাছে? ”

” হ্যাঁ কেন?”

” কারণ আপনারা তো এখন আপুদের কাছে যেতে পারবেন না৷ কারণ তিনটে রুম লক করে চাবি নিয়ে এসেছি৷ এই দেখুন৷”

আদিলের কথা শুনে শ্রাবণ মেঘ অর্নিলের মাথায় হাত৷ এরা ভালো করেই বুঝতে পারলো পিচ্চি বাহিনী টাকা না নিয়ে ওদের রুমে যেতে দিবে না৷ শ্রাবন অর্নিল ঝামেলা না করে তাদের ক্রেডিট কার্ডটা আদিলের হাতে দিয়ে দেয়৷ আদিল পার্সওয়াড জেনে নিয়ে কার্ড টা নিজের কাছে রেখে শ্রাবণ আর অর্নিলকে রুমের চাবি দিয়ে দেয়৷ তারা দু’জনে তাদের রুমে চলে যায়৷ এদিকে মেঘকে টাকা বা কার্ড দিতে না দেখে রোজা বলল,” মেঘ জিজু আপনি কি রুমে যেতে চান না?”

” কেন ?”

” এই যে বাকি দু’জনের মতো আপনি টাকা বা কার্ড দিলেন না৷”

মেঘ কিছু একটা ভেবে রোজাকে বলল,” আচ্ছা তোমরা ঠিক কতো টাকার কথা বললে যেন?”

” পঞ্চাশ হাজার৷”

” পঞ্চাশ আর হাজার তাই তো?”

” হ্যাঁ তাই৷”

” ওকে টাকাটা আমি দিচ্ছি কিন্তু চাবিটা আমাকে আগেই দিতে হবে৷”

” নো জিজু তা হবে না৷ হতে পারে আপনি এক হাতে টাকা দিবেন৷ আর অন্য হাতে চাবি নিবেন৷”

মেঘ রাজি হয়ে গেল৷ পাঞ্জাবির পকেট দিয়ে ওয়ালেট বের করে টাকা নিয়ে রোজার দিকে এগিয়ে দিল৷ রোজা খুশি মনে রুমের চাবিটা মেঘের হাতে দিয়ে টাকাটা নিয়ে নেয়৷ রোজা টাকার ভাজ মেলে ধরে হতভম্ব হয়ে যায় কারণ মেঘ তাকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট আর হাজার টাকার একটা নোট দিয়েছে৷ রাফি রেগে মেঘকে বলতে লাগলো,” জিজু এটা কিন্তু চিটিং হচ্ছে৷”

” কোন চিটিং হচ্ছে না শালাবাবু৷ তোমরাই বলেছো তোমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে৷ আর আমি পঞ্চাশ হাজার টাকাই দিয়েছি৷” মেঘ পঞ্চাশ টাকার আর হাজার টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো , দেখো এই হলো পঞ্চাশ আর এই হলো হাজার তাহলে তো হয়ে গেলো পঞ্চাশ হাজার৷” টাকা গুলো রোজার হাতে গুজে দিয়ে মেঘ শিশ বাজাতে বাজাতে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো৷ আর এদিকে আদিল রাফি রোজা অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মেঘের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল৷

(৮২)
রুমের সামনে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ভয়ে বিছানার ছাদর খামচে ধরে নুপূর৷ শ্রাবণ দরজার লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করেই বেডের উপর বধু সাজে নুপূরের দিকে চোখ পড়লো৷ মিষ্টি রঙের লেহেঙ্গায় নুপূরকে যেন আরো বেশি মিষ্টি দেখতে লাগছে৷ নুপূরকে দেখতে দেখতে সামিরার মুখটা চোখের সামনে ভেষে উঠতেই শ্রাবণ…..
.
.
.
#চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here