তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১৭

0
463

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৭

যেদিন কাকিমা মা-রা যায়।সেদিন রাতে চাচার সাথে কাকিমার কিছু নিয়ে অনেক তর্ক হয়।একসময় কাকা কাকিকে থাপ্পড় মারে।কাকি টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে যায়।সবটাই হয়েছিলো আমার চোখের সামনে।আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি।কারণ দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো।আমি সব জানালা থেকে দেখেছি।আর যখন ভোররাতে ভোরের চিৎকার আমার কানে পৌছাল, তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। সেদিন আমার ভেতরের জানোয়ারটা মরে গিয়ে বেঁচে উঠেছিলো ভোরের প্রেমিক।আমি বাবা চাচাকে হুমকি দিয়েছিলাম সব কিছু ভোরকে বলে দিবো।তাই বাবা আমাকে জোর করে ঘরে বন্দী করে রাখে।অবাক হচ্ছেন তাই-না। এত বড় ছেলেকে বাবা কি করে আঁটকে রাখলো।আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিলো ওই তিনদিন। যেদিন ভোরের ওই অবস্থা হয় সেদিন আমি জানালা ভেঙে বাহিরে বেরিয়ে আসি।আর আপনাকে দরজা ভাঙতে সাহায্য করি।এবার বলবেন নিশ্চয়ই কেন আমি তখন ভোরকে কোলে তুলে নিয়েও কেন ইলমার কথায় ওকে ছেড়ে দিলাম।আমি যদি সেদিন ভোরকে ছেড়ে না দিতাম। তাহলে হয়তো আপনি আর ভোর দু’জনেই ওই বাড়িতে বন্দী হতেন।ভোরকে সেদিন মেরে ফেলা খুব সহজ ছিলো।আর আপনাকে ভোরের খুনি করা আমার বাবা-র বা-হাতের কাজ ছিলো।তাই আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।আপনারা চলে যেতেই আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো।আমি চেয়েও ভোরকে আগলে রাখতে পারিনি।তাই কষ্টে নেশা করেছিলাম।এতটা নেশা করেছিলাম যে উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি আমার ছিলো না।আর যখন নিজের হুঁশে এলাম তখন জানালাম ভোর আর আমার নেই। সে চিরদিনের জন্য আপনার হয়ে গেছে। আপনিই বলুন নিজের তিলতিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসা যদি চোখের পলকে শেষ হয়ে যায়।কার মাথা ঠিক থাকবে।আর তাঁর সাথে ছিলো ওই বাড়ির প্রতিটা মানুষের কথার বিষ।যা হৃদয়কে এফোড় ওফোড় করে দেয়।তাই তো সেদিন ভোরকে নোংরা কথা গুলো বলেছিলাম।অবশ্য তখনো আমি নিজের হুঁশে ছিলাম না। সর্দ ভালোবাসা হারানোর প্রেমিক আমি।কি করে নিজেকে স্থীর করি।তাই সেদিনও নেশা করেছিলাম ।আর রইলো বাকি ইলমার কথা।ইলমা তাঁর মায়ের সাথে প্ল্যান করে আমায় নেশার ঔষধ খাওয়ায়।আর একটু বেশি পাওয়ারফুল নেশা ছিলো।ভেবেছিলো আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করবে।কিন্তু ওদের উদ্দেশ্যে ছিলো কিছু ছবি তোলা যা আমার পরিবারকে দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করা।কিন্তু আমি সেদিন নেশার ঘোরে ওকে নষ্ট করে ছিলাম।যতোই হোক আমি তো পুরুষ। কোন নারী যদি নিজেকে নিজের ইচ্ছেয় কোন পুরুষের কাছে সপে দেয়,কোন পুরুষের সাধ্য আছে সেই নারীকে উপেক্ষা করা।তাই আমিও পারিনি।হয়তো পারতাম যদি নেশাগ্রস্থ না হতাম তাহলে।তারপর ওরা পুলিশের ভয় দেখালে বাবা বাধ্য হলো ইলমার সাথে আমার বিয়ে দিতে।আর ভাগ্যক্রোমে এটা সেদিনই ঘটে যেদিন ভোরকে মা আমাদের সম্পর্কের জন্য মারধর করে।গল্পটা কেমন সিনেমার মতো শোনা গেলো তাই না।আর সব কিছু শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য।আরো একটু বাকি আছে।আর সেটা হলো,আমার ফুসফুসের ক্যান্সার।আমার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন অতিরিক্ত নেশার জন্য এমনটা হয়েছে। আমার ভোর জানে, আমার এতো অসুস্থতার কথা আমি জানি না।কিন্তু ওরা এটা জানে না।ওরা জানার আগেই আমি এটা জেনে গেছি।ভাগ্য দেখেছেন আমার।এটাকেই ভাগ্য বলে।আমি আমার অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি। এটা আমার পাওয়ার ছিলো।তুমি সেই শাস্তি অবশ্যই পাবে যে অন্যায় তুমি করেছো।আমি পাচ্ছি আমার অন্যায়ের শাস্তি। আমার বাবা-মাও পাবে।ভালো থাকবেন, ভোরকে দেখে রাখবেন।ওকে উপর থেকে কখনো বিচার করবেন না।কারণ ও এমনই একটা মেয়ে। কি করতে চায় কি করবে তা ও নিজেও জানে না।কোন কিছু নিয়ে ওকে ভুল বোঝার আগে একবার ওই বিষয়টা নিয়ে ওর সাথে কথা বলবেন।তাহলে কখনো ভুল হবে না।আর কাল রাতে যা হয়েছে তাঁর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আসি ভালো থাকবেন।সব শেষে একটাই কথা আমি ভালো নই খুব খারাপ। কথা গুলো বলে এক মিনিট দাঁড়ালো না আফিম চলে গেলো নিজ গন্তব্য ।

কখনো কারো উপর দেখে বিচার করবেন না।আজ এই কথাটার মানে হয়তো ধূসর বুঝতে পারলো। সত্যি কখনো কারো উপরের রূপ দেখে বিচার করবেন না।কথায় আছে কেউ যদি ভুল করে।তাহলে তাঁকে সেই ভুলের জন্য কখনো কথা শোনাবেন না।কারণ হয়তো সে সেই ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা পেয়ে গেছে সে। আর আপনি তাঁকে সেই ভুলের জন্য খোঁটা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোষী হয়ে গেলেন।ধূসর আর এক সেকেন্ডও সেখান বসলো না।নিজের ঘরের দিকে চললো।সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ভোর।তখনই ধূসর ভোরের হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলো।ভোর অবাক হওয়ার চাইতে লজ্জা পেলো বেশি।কারণ পরিবারের সবাই তাঁদের দেখছিলো।বিষয়টা খুব লজ্জাজনক। ঘরে আসতেই ভোর ধূসরের থেকে হাত সরিয়ে নিলো।

কি সমস্যা এমন করছেন কেন?

সরি ভোর

কিসের জন্য

কালকের ব্যবহারের জন্য

আমি ভুলে গেছি

এতো সহজেই

হুম,কারণ কোন পুরুষ নিজের স্ত্রীকে ওভাবে দেখতে চাইবে না।আপনার এমন ব্যবহার স্বাভাবিক ছিলো।তাই রাগ করার কোন মানে হয় না।

সত্যি আপনি সবার থেকে আলাদা।

কিছু বললেন

না,চলুন সবাই অপেক্ষা করছে।

হুম চলুন
—————-

অন্ধকারে তলিয়ে আছে ঘরটা।কিছু ঘুমন্ত মানুষের ভারি নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে ঘরময়।ওয়াশরুম থেকে ভেসে আসছে পানি পড়ার শব্দ।হঠাৎ পানি পড়ার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক কালো অবয়। আস্তে আস্তে সে ভোরের পাশে গিয়ে বসলো।অন্ধকারে ভোরের মুখ স্পষ্ট নয়,তবুও চাঁদের আলোয় ভালোই দেখা যাচ্ছে। দুই পাশে হাতটি রেখে ভোরের মুখের উপর মুখটি নিলো লোকটা।যতোই সে ভোরের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। যতোই যেন নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তাঁর ।বুকের ধুকপুকটা বেড়ে গেছে কয়েক গুন।কাউকে খুব কাছ থেকে অনুভব করা বড্ড কষ্টের। বুকের বামপাশে হঠাৎ বেড়ে ওঠলো ব্যথা।কি অসয্য সেই ব্যথা।না যায় কাউকে বলা,না যায় কাউকে দেখানো।এই ব্যথার কোন ঔষধ কেন বের হয়নি পৃথিবীতে। বের হয়েছে তো ভালোবাসা। হ্যা ভালোবাসা। সেই রোগের ঔষধ ভালোবাসা। কিন্তু এই যে একটু দূরে ঘুমিয়ে থাকা এই রমনী কি দেবে সেই ভালোবাসা। হয়তো হ্যা নয়তো না।কিন্তু এই মুহূর্তে খুব লোভ হচ্ছে এই বুকে বেড়ে ওঠা ধুকপুককে শান্ত করতে।কিন্তু কিভাবে। না আর পারছে না।এভাবে নিজের ভালোবাসার থেকে পালিয়ে থাকা কখনোই সম্ভব নয়।তাই এক নয়নে চেয়ে রইলো প্রান প্রিয় ভালোবাসার পাণে।

চোখেমুখে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়তেই ঘুম ছুটে গেলো ভোরের।ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা কালো অবয়। যে কিনা তাঁর দুই হাতের মাঝে তাঁকে আঁটকে রেখেছে।কি হতে পারে ভাবতেই এক চিৎকার দিলো ভোর।ভোরের হঠাৎ এমন চিৎকারে ভয় পেলো ধূসর। কোন রকমে ভোরের মুখ চেপে ধরলো।

এই আস্তে চিৎকার করুন।আপনার জন্য দেখছি নিজের বাড়িতে চোর বলে পিটান খেতে হবে।

ধূসরের হাতটা সরিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে রইলো ভোর।
আপনি, আপনি এখানে কি করছেন।আর এভাবে কি দেখছিলেন।আমাকে মেরে ফেলার বুদ্ধি আঁটছিলেন। আল্লাহ আমি জেগে না উঠলে আমার কি হতো?

কচু হতো আপনার। যে চিৎকার দিয়েছেন। তাতে দেখা যেত আমারি হার্টঅ্যাটাক হয়ে যেত।

একদম ফালতু কথা বলবেন না।এতো রাতে আমার কাছে আসার কি মানে?

আরে একটা কথা ছিলো।

কি কথা।আর সেটা কাল সকালে বলা যেত না।আরেকটু হলে তো আমার প্রান আত্মা বেরিয়ে যেত।

হুঁশ, চুপ এসব বলতে নেই।কিছু কথা বলার জন্য নিদিষ্ট সময় আছে।সেই সময়ের কথা সময়ে না বললে সুন্দর হয় না।

এই এতো রাতে কি কথা।

ওদিকে তাকান।বাহিরে জানালার দিকে ইশারা করলো ধূসর। ভোর তাকিয়ে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না।

ওদিকে কি,কোন ভূত টূত দেখেছেন নাকি?নাকি কোন পরি?

আরে ভালো করে দেখুন

আবারও ভোর তাকালো কিন্তু তেমন কিছুই দেখতে পেলো না।কই কিছুই তো দেখছি না।

সত্যি কিছু দেখতে পারছেন না।

সত্যি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

একটু ভালো করে দেখুন

আরে এখন কি চশমা লাগিয়ে দেখবো।

আসলে আপনার চোখ নেই।

একদম ফালতু কথা বলবেন না। আল্লাহ আমাকে এতো সুন্দর দু’টো চোখ দিয়েছে আর আপনি বলছেন আমার চোখ নেই।

আছে তো চোখ? শুধু বাস্তব পৃথিবী দেখার।ভালোবাসার পৃথিবী দেখার জন্য নেই।

সেটা আবার কোন চোখ।আলাদা লাগাতে হয় বুঝি।কোন অপারেশন টপারেশন করতে হয় নাকি।যদি অপারেশন করতে হয়, আমি ভাই এসবের মধ্যে নাই।

দূর

কি হলো

এই এতো সুন্দর চাঁদনী রাত আপনার চোখে পড়ছে না।

না পড়ার কি আছে।আকাশে চাঁদ থাকলে তো চাঁদনী রাত হবেই।এখানে নতুন করে দেখার কি আছে।

আল্লাহ সহায় হও।এই অবুঝকে যেন বোঝাতে পারি।

আরে এখানে না বোঝার কি আছে।

চলুন না আমরা ঘুরে আসি।

কোথায়

ছাঁদে

অসম্ভব, আপনার মাথাটা পুরোপুরি গেছে। কিন্তু এটা বাড়ির কেউ জানে না।আমাকে কাল সকালে জানাতে হবে।সাথে ভালো কোন ডাক্তারের সাথে কথাও বলতে হবে।

চলুন না,একটু চাঁদের আলো গায়ে মাখি।

এই চাঁদের আলো কি বৃষ্টির পানি যে গায়ে মাখবেন।নাকি শিশির বিন্দু। সরুন তো আমি ঘুমাব।

চলুন না প্লিজ

বাদ দিন না প্লিজ

একটু বুঝুন

আপনি আমায় বুঝুন

শুনুন না

দয়া করে এসব ছেড়ে দিন না।

বেশি হচ্ছে কিন্তু

অনেক হচ্ছে কিন্তু

প্লিজ

দয়া করুন আমাকে

যাবেন না তো?

না

ঠিক আছে, কথাটা বলেই ধূসর ভোরকে কোলে তুলে নিলো।আচমকা এমন ঘটনায় ভোর যেন কিছু বলার মতো খুঁজেই পেলো না।আর ধূসর সে মনের আনন্দে ভোরকে কোলে তুলে নিয়েই ছাঁদের উদ্দেশ্য রওনা হলো।

ছাঁদের এক কোণে একটা দোলনা।সেখানেই ভোরকে বসিয়ে দিলো ধূসর ।ঘর থেকে যতটা না রাতের পৃথিবী সুন্দর লাগছিলো।বাহিরে থেকে তাঁর হাজার গুন সুন্দর লাগছে।কিছুক্ষণ পর পর মৃদু বাতাস শরীরে কাটা দিচ্ছে। ধূসর ভোরকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো।এতটা কাছে যে,দু’জনই দু’জনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ভোর ধূসরের বুকে লেপ্টে আছে।ধূসরের হৃদয়ের আওয়াজ যেন কিছু একটা বলছে।সেই আওয়াজ যেন কয়েক মুহূর্তে ভোরকে শীতল করে তুললো।বাহিরের এই অস্বাভাবিক পরিবেশ, ধূসরের এই বুকের হৃদয়ের ধুকপুক। এভাবে ধূসরের আগলে রাখা।নেশা ভরা চোখ ধূসরের চেয়ে থাকা।আর সয্য হলো না ভোরের।তাই ভোর ধূসরের বুকে সেন্স হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here