#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৯
কোথায় যাচ্ছেন এসব নিয়ে।
ঘুমাতে
নিজের ঘর আমাকে দিয়ে আপনি কোথায় ঘুমাতে যাচ্ছেন।
মেঘের ঘরে।
আমাকে খারাপ না বানালে নয়।
আপনি ভুল ভাবছেন
আমি ভুল ভাবছি না। আপনি এখন মেঘ ভাইয়ার ঘরে ঘুমাতে গেলে আন্টি যেনে যাবে।আর আন্টি আমাদের যখন খাইয়ে গেলো মনে নেই কি বলে গেলো।আমাকে আর আপনাকে সব কিছু মানিয়ে নিতে বললো।তাহলে আপনি মেঘ ভাইয়ার ঘরে কেন ঘুমাতে যাচ্ছেন।আপনার বিছানাটা যথেষ্ট বড়।এখানে আমাদের দুজনে খুব সুন্দর ভাবে ঘুমাতে পারব।
আপনি বুঝতে পারছেন না বেপারটা।
আপনি বুঝিয়ে বলছেন না।তাই হয়তো আমি বুঝতে পারছি না।
দেখুন আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না।
কেন?
সেটা আমি বলতে পারবো না।
আরে কেন বলতে পারবে না।সেটা তো বলুন।
দেখেন ভোর ছেলেরা পুরো পৃথিবীর কাছে শক্ত হলেও।তাঁরা একটি মেয়ের কাছে সব সময় দুর্বল।তাই আমি চাই না আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে।আপনিই না তখন বললেন–পুরুষ কুকুরের থেকেও খারাপ। আমি কিন্তু সেই পুরুষদের মাঝেই পরি।কথাটা আপনি আফিমকে বললেও কথাটা আপনি পুরুষদের বলেছেন। কথায় আছে আগুন আর মোম কখনো এক জায়গায় রাখতে নেই।কারণ আগুনের স্পর্শে মোমকে গলতেই হবে।আমি চাই না আমার স্পর্শে আপনি গলুন।নিজের ইচ্ছেয় যেদিন আপনি আমার কাছে ধরা দিবেন সেদিনই আমি আমার হৃদয়ের ভালোবাসায় জড়িয়ে নিবো।এখনো যে আপনি আমার হৃদয়ে নেই এমনটা নয়।সব কিছুর যেমন একটা সময় আছে, তেমন সব ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে একটা দিক আছে।আর আমি পুরুষ আপনার পাশে ঘুমালে আমার পুরুত্ব জেগে উঠতে সময় না নিতেও পারে।তাই আমি চাই না আমার ছোট্ট ভুলের জন্য আপনার সাথে আমার যে সম্পর্কটা আছে সেটা নষ্ট হোক।হ্যা আপনি এটা বলতেই পারেন নিজের উপর আপনার কোন কন্ট্রোল নেই।নিজের পাশের বালিশে যদি কোন রমনী থাকে।আর সে যদি হয় নিজ স্ত্রী তাহলে সেই পুরুষ কখনোই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।আমি নিজেকে আপনারা আব্বা বা আফিমের খাতায় নাম লেখাতে চাই না।আমি খারাপ হতে রাজি কিন্তু সেই পুরুষ হতে চাই না।যে পুরুষ আপনার চোখে ঘৃণার দৃষ্টিতে আছে।আমায় মাফ করবেন।আমি নিজের উপরে এতটাও কন্ট্রোল রাখতে চাই না নিজের স্ত্রীকে ছোঁয়ার জন্য।আপনি আমার জন্য হালাল।সেই হালাল স্ত্রীকে ছুঁতে মন চাইলে যদি আমায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে হয়।তাঁর থেকে ভালো আমার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকা।আর মেঘের ঘরে গেলে যদি আপনার সমস্যা হয়।তাহলে না-হয় আমি বেলকনিতে ঘুমালাম।আমি চাই না আমার জন্য আপনাকে কেউ ভুল বুঝুক।আর কাল সকালেই আমাদের বেরোতে হবে।তাই এখন ঘুমানোই ভালো।কথা গুলো একদমে বলে ধূসর বেলকনিতে চলে গেলো।আর ভোর অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো।মানুষটা কত সহজে কত কঠিন বিষয়টা বুঝিয়ে গেলো।এই মানুষটা কি সত্যি সবার থেকে আলাদা।না না আফিম ভাইও তো নিজেকে সবার থেকে নিজেকে আলাদ বুঝিয়েছিলো।কিন্তু সেও তো নিজের আসল রূপ দেখিয়েই দিলো।হয়ত ধূসরও তেমন ভাবেই উপস্থাপন করছে।এক মানুষের কত রূপ তা ভোর কখনোই জানতো না যদি না সে তাঁর আব্বু বা আফিমকে না দেখতো।কত কষ্ট কত ব্যথা অনাদর পেয়েছিলো তাঁর মা।অবহেলা অপমান পেতে পেতে তাঁর মা হয়ে উঠেছিলো একটি শক্ত দেয়াল।যে দেয়ালে আঘাত করে একদিন আমার পরিবারও ব্যথা পেত।কিন্তু ধূসর? প্রশ্নটা থেকেই যায়।মন বলে এক কথা মুখ বলে আরেক।কার কথা শোনা উচিত তা ভোর জানে না।তাই সে বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিলো।পাঁচ মিনিট দশ মিনিট।এভাবে ঘন্টাও কেটে গেলো।কিন্তু ভোরের চোখে ঘুম এলো না।আজ তাঁর মায়ের হাতটা খুব প্রয়োজন ছিলো।কিন্তু সেটা চাইলেও কখনো সে আর পাবে না।চোখটা ভিজে এলো জলে।দিক শূন্য অনুভূতির কি নাম দেওয়া যায়।কিভাবে কাটাবে সে তাঁর এই মা বিহীন জীবন।ছোট্ট বেলা থেকে তো মা ছাড়া আর কাউকেই পাশে পায়নি। একটু হোঁচট খেলেও মা হাত ধরে তুলে না দেওয়া অবধি উঠে দাঁড়ায়নি। আর এখন পুরো জীবনটা কীভাবে মা ছাড়া হাঁটবে। এসব ভাবছিলো ভোর।তখনই মনে হলো কেউ তাঁর মাথায় বালিশ সরিয়ে নিজের হাত দিচ্ছে। হঠাৎই মায়ের কথা মনে পড়লো।মা বলে ফিরতেই দেখতে পেলেন আনতা বেগমকে।হয়তো এতো রাতে আনতা বেগমকে ভোর আশা করেনি তাই সে একটু আশ্চর্য হলো।কিন্তু সেই আশ্চর্যকে দূরে সরিয়ে আনতা বেগম বললেন।
হাতটা প্রচুর ব্যথা করছিলো।কেউ টিপে দিলে আরাম লাগত।তখন মনে পড়লো তুমি তোমার মায়ের হাতের উপর ঘুমাতে। তাই চলে এলাম।তোমার ঘুমও হবে আর আমার ব্যথাও কমবে।কি বলো।ভোর,চোখের জল মুছে মাথা তুলে আনতা বেগমের হাত টিপতে শুরু করলো।আনতা বেগম কিছু বললেন না।সে-ও ভোরের ভালোবাসা উপভোগ করতে রইলেন।
————–
মাতাল অবস্থায় সদর দরজায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে আফিম প্রায় এক ঘন্টা।তাঁকে কেউ চেয়েও পারেনি সরাতে।সে ওখানে শুয়েই বলে যাচ্ছে। এখানে আমার ভোরের চোখের জল পড়েছে। এই বাড়িতে আমার ভোরের দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে আছে।প্রতিটা দেয়াল বলে দিচ্ছে আমার ভোর কতটা কষ্টে ছিলো এই বাড়িতে।আজ আমারও এই বাড়িতে দম আঁটকে আসছে।এই বাড়িতে আমার ভোরের চিৎকার রেকর্ড হয়ে আছে।প্রতিটা ইট গুনে রেখেছে ভোর আর তাঁর মায়ের চোখের জল।তোমাদের সবাইকে তাঁর হিসেব দিতে হবে।যদি পুলিশ এসে কখনো আমায় জিজ্ঞেস করে সব থেকে বেশি কার দোষ? আমি বলে দিবো।এই বাড়ির মেজ ছেলে সব থেকে বড় অপরাধী। তাঁর মা কুহেলি বেগম,আমার বাবা সফিউল মোর্সেদ,আমার মা আফিয়া,আমার ফুপি কহিনূর। দাদা ঠিক করেছেন। তিনি জানতেন তাঁর অনুপস্থিতিতে তোমরা এমনটাই করবে।তাই তো বাড়ির সম্পদ সব ভোর আর তাঁর মায়ের নামে লিখে গেছেন।আমি ভোরকে বলে দিবো।সেদিন রাতে চাচা মেজ চাচির গায়ে হাত তুলেছিলো।সম্পদের জন্য নিজের গায়ের জোর দেখিয়েছিলেন।সব বলে দিবো।সব শুনে ঠিক ভোর আমার জীবনে ফিরে আসবে।ঠিক ফিরবে।তারপর আফিম তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।সবাই ধরাধরি করে আফিমকে ঘরে নিয়ে গেলো।আর সবার মুখে পড়লো দুশ্চিন্তার ছাপ।সত্যি যদি আফিম ভোরকে সব বলে দেয় তাহলে কি হবে।আগে ভোর একা ছিলো ভয় কম ছিলো।কিন্তু এখন ভোরের সাথে সফিক ইসলাম যুক্তি হয়েছে। এই পরিবারটা কেন এতো সাপোর্ট করছে ভোরকে।যেচেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো।মেয়ে পছন্দ করলো।এতো বদনাম করার পরেও ছেলের সাথে ভোরের বিয়ে দিলো।সব কিছুই ধোঁয়াশা।
চলবে,,,
একজন বললেন গল্প যেন বেশি বড় না হয়।আবার অনেকেই বলছে গল্প যে তাড়াতাড়ি শেষ না করি।কার কথা শোনা উচিত। আর আমি অকারণে কখনো গল্প বড় করিনা।এটা তাঁরা যানে যাঁরা আমার লেখা গল্প এর আগে পড়েছে। বরাবরই আমি গল্প অল্প সময়ে শেষ করেছি বলে সবার থেকে বেশি কথা শুনেছি।আর আমি টেনেহিঁচড়ে গল্প বড় করতে পারি না।কাহিনী যতদূর যাবে গল্প ততো বড় হবে।কাহিনী শেষ গল্পের সমাপ্তি ঘটবে।আর সবাই ঘটনা মূলক কমেন্ট করছেন না।কিছু কিছু মানুষ করছে আর বাকি সবাই নাইস নেক্সট এগুলোই লিখছে।যাইহোক যাঁদের ইচ্ছে করছে না গল্প নিয়ে নিজেদের ছোট্ট অনুভূতি প্রকাশ করতে তাহলে থাক।আর যাঁরা করছেন তাঁদের ধন্যবাদ।