তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ৭

0
480

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

দরজার অপর পাশের ব্যক্তি’টার মুখই দেখা যাচ্ছে না,বড় একটা বক্স এর কারণে। সোহা উঁ’কি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে।কিন্তু ব্যর্থ হয়।

ম্যাম একটু সাইড দিবেন প্লিজ? না মানে দরজার পাশেই বক্স টা রাখতাম।ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।

আমনে কি’ডা? আর এইহানে কিয়ের লিগা এই জাদুর বাক্স টাক্স লইয়া আইছেন?

সোহার এরকম ভাষা শুনে লোকটা থতমত খেয়ে যায়।
তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,আসলে ম্যাম এটা আপনার পার্সেল। যদি অনুমতি দেন তাহলে রাখি? রেখে কথা বলি?
সোহা লোকটার আগা গো’রা স’ন্দেহের দৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে এক পাশে সাইড হয়ে দাঁ’ড়ায়।

লোকটা বাক্সটা রেখে এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ম্যাম এইটা আপনার পার্সেল।আর এইখানে আপনার একটা সিগনেচার লাগবে।একটা খাতা আর কলম সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে।

আমার পার্সেল? আমিতো কোনো কিছু অর্ডার দেইনি। সত্যি করে বলেনতো আপনি কোনো চোর ননতো? নাকি মেয়ে’ধ’রা? ব্রু নাচিয়ে লোকটার কাছে জানতে চায়।

লোকটা কিছু বলতে মুখ খুলবে,,,,তার আগেই আবার বলে উঠে,,এক মিনিট। আপনি নিশ্চয়ই সব খোঁজ খবর নিয়ে এসেছেন তাইনা? এই সময় আমি একা বাড়িতে থাকি।কেউ নেই সেই সুযোগে আপনি আমায় কিড’ন্যাপ করবেন।তারপর আমার জামাইর কাছ থেকে টাকা হাতা’বেন তাইনা?

লোকটার এবার মুখের চেহারা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

ম্যাম আপনি আমায় ভুল ভাবছেন।তেমন কিছুই না এটা মিষ্টার শেখ অর্ডার করেছেন।এবং বাড়ির ঠিকানা দিয়ে পার্সেল করতে বলেছেন।আপনি মিসেস শেখ না?

সোহা ছোটো করে বলে হুু।

তাহলে বিশ্বাস না হলে স্যার কে ফোন দিয়ে কনফার্ম হয়ে নেন।তাও গ’ণ ধো’লা’ই খাওয়ার ব্যবস্থা করিয়েন না।

কই থেকে ফোন করবে দায়ানের নাম্বার সোহার কাছে থাকলে তো।তাই আর কথা বাড়ালোনা।চুপচাপ কাগজে সাইন করে দিয়ে দিলো।

লোকটা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁ’চল। একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।

সোহা বক্সটার দিকে তাকিয়ে টেনে টুনে ড্রয়িং রুমের সোফার পাশে রাখলো। নিজে সোফায় বসে ভাবতে লাগলো কি আছে এই বক্সে? দায়ান কি পাঠালো?

এটার মধ্যে বো’মা টো’মা পাঠায়নিতো দায়ান আবার? এমনিতেই সোহাকে পছন্দ করে না। এখন তো বাড়িতে কেউ নেই।এটা ফেটে ম/রে গেলে। কিভাবে ম/রলো কেউ বুঝতেই পারবেনা।দায়ানের জন্য সুবিধা হবে।বলবে আমি বাড়িতে ছিলাম না।আগুন লেগে পু*ড়ে মা/রা গেছে।মোবাইলে অনেক নিউজ দেখেছে।জামাইর বউ পছন্দ না হলে মে/রে ফেলে।

অনেক ভাবনা চি’ন্তা করেও কিছুই লাভ হলো না।মনটা আঁকু’পাঁকু করতেছে খুলে দেখার জন্য ভিতরে কি আছে।
বু’কে থু’থু দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বক্স টা খুলতে লাগলো।

বক্স খুলে দেখে রঙ,বেরঙের ওড়নায় ভরপুর বক্সের ভিতর।সোহার হাত আপনা আপনিই মাথায় চলে গেলো।এসব কি করেছে লোকটা? পুরু দোকান উঠিয়ে এনেছে।

—————————-
দায়ান অফিসে নিজের ক্যাবিনে বসে মিটিং এর জন্য ফাইল তৈরি করতে ছিলো।হঠাৎই মনে পরে গেলো,আজ ড্রাইভার কে গ্রামে সোহার বাড়িতে পাঠানোর কথা।কাগজপত্র আনানোর জন্য। এতো ঝামেলার মধ্যে ভুলেই গেছে।
পড়াচোর মেয়েটা তো জীবনে ও মনে হয় দায়ান কে মনে করে দিতোনা। দায়ান ভুলে গেলেই যেনো বেঁ’চে যায়।
দায়ান ড্রাইভার কে ডেকে পাঠায়।

ড্রাইভার আসলে সব বুঝিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে,আবার নিজের কাজে মন দেয়।

———————————–
সোহা পুরু ড্রইং রুম ছড়িয়ে ফেলেছে ওড়না দিয়ে। পুরো একশোটা ওড়না।আল্লাহ মাথা ঘুরাইতেছে এগুলা দেখে।
লোকটার টাকা মনে হয় বেশি হইছে।এমন কাজ কেউ করে? এতো ওড়না দেখে সোহার ওড়না পরা থেকেই মন উঠে যাইতেছে।

হাঠাৎই কালকের ছাদের কথাটা মনে হলো,দায়ান বলেছিলো রুমে যাও তোমায় আরো একশোটা ওড়না এনে দিবো।

এই পা/গল লোক দেখি বলছে বলে,মুখের ভাষা সত্যি করার জন্য সত্যি সত্যিই ওড়না এনে হাজির করছে।

এসব দেখে দায়ানের উপর যা রাগ ছিলো গ’লে গেলো।আমার কথা ভেবে লোকটা এই পা/গলামো করেছে।ভাবতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠে।

লোকটাকে যতো বারই খারাপ ভাবতে চাই। ততোবারই প্রমাণ করে দেয় লোকটা এতোটাও খারাপ না।মনটা ভালোই।

এখন থেকে লোকটাকে একটু বেশি বেশি য’ত্ন করতে হবে।সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সোহা তর জামাইর মন জয় করার মিশন এখন থেকেই শুরু।

” মিশন জামাইর মন জয় ”

—————————–

রাতে না খাওয়ায় সকালে নিজের শরীর টা নিয়ে উঠে দাঁড়ানো ও দায় হয়ে দাড়িয়েছে নোহার।একেইতো কাল সারাদিন কাজ করেছে।তার উপর তেমন কিছু খাওয়া ও পরেনি।

অনেক কষ্টে শরীর টা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এখন আবার কিছু খেয়ে কাজে লেগে পরতে হবে।নয়তো আজ হয়তে মা- ছেলে মিলে মেরেই ফেলবে নোহাকে।

রান্না ঘরে একটা বয়ামে মুড়ি রাখা ছিল।খিদের তাড়নায় মুড়িই তাড়াতাড়ি নামিয়ে খেতে শুরু করে। শুকনো মুড়ি গলায় গিয়ে আটকে যায়।খুক খুক করে কেশে উঠে। তাড়াতাড়ি পানি ঢালতে গিয়ে স্টিলের গ্লাস মেঝেতে পরে যায়।মেঝেতে পরে ঝন ঝন শব্দ করে গড়িয়ে পরে। নোহা আঁ’তকে উঠে। ভয়ে ভয়ে রান্না ঘরের বাইরে তাকায়। কেউ জেগে গেছে কিনা।

বাইরে কাউকে না দেখতে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে। গ্লাস টা উঠিয়ে আবার ধুয়ে পানি ভরে খেয়ে নেয়।

একটু সময় নিয়ে রান্নার কাজে লেগে পরে।তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করতে হবে। নয়তো ঠিক টাইমে খাবার না পেলে আবার শাশুড়ী তুল’কালাম বাঁ’ধাবেন।

রান্না শেষ করে আবার কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। এক গাদা কাপড় বাথরুমে জমিয়ে রেখেছেন। একদিন পর পরই কাপড় ধুতে দেন।ধুয়া কাপড় ই আবার ধুতে দেন।

মানুষের যখন দেয়ালে একেবারে পিঠ ঠেকে যায়, তখন সে ঘুরে দাড়ানোর একটা শেষ চেষ্টা করে। সব সময় নিচ জায়গা দিয়েই পানি যায়।নোহা এদের সব অত্যা’চার মুখ বোজে মেনে নেয় দেখে এরা আরো পেয়ে বসে।আর কতো দিন? সময় মানুষের আওতায় থাকেনা।একদিন সময়ের চাকা ঘুরে নোহার ও সময় আসবে।শুধু সেই দিনটার অপেক্ষা।
—————————–

বিকেলের মধ্যেই সোহার সকল কাগজপত্র ড্রাইভার নিয়ে আসে,সোহার গ্রাম থেকে। সব কিছু দায়ানের কাছে বুঝিয়ে দেয়।

দায়ানের আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যেই সকল কাজ শেষ।তেমন কোনো কাজ ছিলোনা শুধু একটা মিটিং ছিলো।
আর অফিসের ঝামেলাটা নিয়ে তদ’ন্ত চলছে।
রুশ এখনো এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না।দায়ানই জানায়নি।এতোদিন অন্য একটা প্রজে’ক্ট এর দায়িত্বে ছিলো রুশ।তাই এ বিষয়ে কোনো টেনশনে ফেলে দিতে চায় নি।

গাড়ির চাবি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে।বাড়ি গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে।আর কফি খেতে হবে।

আজ বাড়িতে এসে নিজে চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকলো না।কলিং বেল বাজালো।
কলিং বেল বাজাতে দেরি,দরজা খুলতে দেরি হয়নি সোহার।
এতো তাড়াতাড়ি দরজা খোলায় দায়ান কিছুটা ভ’রকে গেলো। মনে হয় দায়ানের বে’ল বাজানোর অপেক্ষাতেই ছিলো দরজা খোলার জন্য।

সত্যিই তাই গাড়ির আওয়াজ শুনে বারান্দায় গিয়ে ছিলো সোহা।দেখার জন্য কে এসেছে। যখন দেখলো দায়ান, তখন দরজার পাশে এসে দাড়িয়ে ছিলো। দরজা খোলার জন্য।

দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে, সোহার হাতে তার কাগজপত্র গুলো এগিয়ে দেয়।আর বলে কাল রেডি থেকো ভার্সিটি তে নিয়ে যাবো।বলেই হাঁ’টা দেয়।

আর একটা কথা এক কাপ কফি দিতে পারবে?

দায়ানের কন্ঠ টা কেমন শোনায়।

সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।দেখেই বুঝতে পারে খুব ক্লা’ন্ত। ঘামে শার্ট ভিজে আছে।চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে।হয়তো মাথা ব্যা’থা করছে।

আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি। আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হন।

দায়ান রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নেয় ঝটপট।

সোহা কফি নিয়ে,,রুমের দরজায় নক করে।মাত্রই দায়ান শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।পরনে একটা টাওজার,,গায়ে তোয়াল জড়ানো।চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। এই প্রথম দায়ান কে এই অবস্থায় দেখলো।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে ঐখান থেকেই কি কফি দিবা? ভিতরে নিয়ে এসো।বলেই সোফায় মাথা হেলিয়ে চোখ ব’ন্ধ করে।
সোহা এগিয়ে গিয়ে কফি বাড়িয়ে দেয়।
দায়ান হাত বাড়িয়ে কাপটা নিয়ে চুমুক বসায়।আর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,ওড়না গুলো পেয়েছো?

হুু।পাইছি।বলছি যে আপনি কি আমায় দোকান দিয়ে দিবেন?ওড়না বেচার জন্য।

দায়ান ব্রু কো’চকে তাকায় সোহার দিকে।

না মানে এতো গুলা ওড়না তো তাই ভাবলাম।হয়তো আমায় ওড়নার দোকাব দিয়ে দিবেন বেচার জন্য।

দায়ান সোহার কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারেনা।

না দোকান না দিয়ে দিলে থাক।একটা সেলাই মেশিন এনে দিয়েন তাহলেই হবে।এতোগুলো ওড়নাতো আর পরে শেষ করতে পারবোনা।আর ফেলেও দেয়া যাবে না।তাই ভাবতেছি,,,জোড়া লাগিয়ে শাড়ির কাজ সেরে ফেলবো।আপনার ও টাকা বেঁচে যাবে।বুদ্ধি টা ভালো না? জানতে চায় সোহা।

সোহার কথা শুনে দায়ান বড় সরো এক ভি’ষম খেয়ে কাশতে থাকে।নাক মুখে সমানে কফি ঢুকে গেছে।

নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে,,,ওয়াও কি বু’দ্ধি তোমার! আই এম ইমপ্রেস। আমার কতো গুলো টাকা বেঁচে যাবে। আমিতো ক’ল্পনা ও করতে পারতেছিনা।

সোহা খুশিতে গদ’গদ হয়ে দায়ানের পাশে সোফায় বসে।তাই না আমিও জানি আমার অনেক বু’দ্ধি। কিন্তু কেউ ক’দর ই করলোনা। ভালো বু’দ্ধিমান মানুষের আজকাল দা’ম ই পাওয়া যায় না বুঝলেন?

হ্যা,, তাইতো।তুমিতো আমাদের দেশের অ’মূল্য স’ম্পদ। তোমাকে দেশের আর দেশের লোকের সামনে তুলে ধরতে হবে।যেনো তুমি তোমার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারো।চি’ন্তা করোনা।আমি তোমায় সাহায্য করবো।যেনো তুমি নিজের প্রতিভা প্রকাশ করে দেশ ও দেশের বাইরেও নাম করতে পারো।গি’নে’জ বুকে যেনো তোমার নাম ওঠে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল দায়ান।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here