তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ৮

0
466

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam

দায়ানের কথা শুনে সোহা কতক্ষন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রয়।তারপর বলে,,,আপনি কি আমার সুনাম করলেন না বদনাম?

তুমি এখনো বুঝোনি আমি কি করেছি? থাক বুঝতে হবে না তোমার অবুঝ বালিকা।এক কাজ করো, সুনাম করছি নাকি বদনাম করছি জানতে চাইছো না? এই দুইটা থেকে তুমি যেইটা হলে হেপি হবা,সেইটাই ভেবে নেও।বলেই কফির মগে আবার চুমুক বসায়।

সোহা মাথা চুলকে ভাবতে থাকে।

দায়ান কফির মগে লাস্ট চুমুকটা বসিয়ে দেয়।কফি শেষ করে মগটা টেবিলের উপর রেখে দেয়।কফিতো ভালোই বানাও।”টেস্টিং গুড”।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,শুনুন না!

দায়ান সোহার দিকে চোখ খুলে তাকায়।

সোহা দায়ান কে দেখে আঁ’তকে উঠে। দায়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মনে হয় মাথা ব্যাথাটা আরো বেড়েছে।মাথা দিয়ে এখনো টপটপ করে পানি পরতেছে।

দায়ান সোহা কিছু বলেনা দেখে আবার চোখ ব’ন্ধ করে নেয়।

সোহা কি করবে ভেবে পায় না। মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে লোকটা।এই লোকটার কষ্ট সোহার সহ্যই হয় না।

সোহা সোফা থেকে উঠে দাড়ায়। আগে মাথাটা মুছে দিতে হবে।কিন্তু তাওয়াল তো দায়ানের পিঠের নিচে।কিভাবে নিবে? কোনো কিছু আর না ভেবে নিজের ওড়না দিয়েই মাথা মুছতে থাকে।খুব য’ত্ন সহকারে মাথার চুল গুলো মুছে দেয়।

দায়ানের মাথা ব্যাথাটা অনেক বেড়েছে। চোখ মেলে তাকাতে পারতেছেনা।সোহা যে মাথা মুছে দিতেছে বুঝতে পারতেছে।ওড়না থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রা’ণ এসে নাকে লাগছে। কতোদিন পর কেউ য’ত্ন সহকারে মাথা মুছে দিতেছে দায়ানের। দায়ান চোখ ব’ন্ধ করে বিষয়টা উপভোগ করতে থাকে।

সোহা দায়ানের মাথা মুছে ওড়না টা আবার ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।মাথা ব্যাথাটা সাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিছু করতে হবে।লোকটার কষ্ট একদম সহ্য হচ্ছে না।কান্না পাচ্ছে।

শুনছেন? মলমটা কোথায়?

দায়ান কিছু বলছেনা।তার বলতেই ইচ্ছে করতেছে না।তাই চুপ করেই থাকে।

সোহা দায়ানের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে, নিজেই খুজতে থাকে।আলমারি,ওয়া’ড্রপ সব জায়গায় খুজতে থাকে।সোহার হাটার তালে তালে তার পায়ের নুপুর রিমিকি ঝিমিকি শব্দ তুলে বাজতে থাকে।যা দায়ানের কানে এসে লাগে।

অনেক খুঁজাখুঁজির পর বেড সাইড টেবিলের উপর গিয়ে দেখতে পায়।ওখানেই রাখা আছে।মনেহয় প্রায়ই লোকটার মাথা ব্যাথা করে।এসব ভাবার এখন সময় নেই।তাড়াতাড়ি করে দায়ানের কাছে আসে।

দায়ান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে।সোহা দায়ানের পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর হাতে মলম নিয়ে কপালে লাগিয়ে দেয়। খুব যত্ন সহকারে কপাল মাসাজ করতে থাকে।

দায়ান মাথা তুলে সোহার দিকে একবার তাকায়।তারপর আবার চোখ ব’ন্ধ করে নেয়।

সোহা কতোক্ষন দায়ানের কপালে মাসাজ করে,তারপর আস্তে আস্তে চুলে হাত দেয়।চুল গুলো ধীরে ধীরে টেনে দিতে থাকে।

সোহার তুলতুলে নরম হাতের সেবায় সব ব্যাথা যেমন ভেনিশ হতে থাকে দায়ানের।দায়ান চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে থাকে সোহার ছোয়া।

সোহা দায়ানের চুল নিয়ে যেমন খেলতেছে।কি সুন্দর চুল।সিল্কি ঘণ, আহা আমারিতো কি ভালো লাগতেছে চুল টেনে দিতে। বলতে ইচ্ছা করতেছে,,” শুনুন আজ থেকে আপনার মাথার চুল টেনে দেওয়ার আর মাসাজ করে দেওয়ার দায়িত্ব টা আমায় দিবেন?”

আজ থেকে না হয় এই দায়িত্ব টা আমি নিলাম।

দায়ান সোহার হাতের ছোয়ায় অন্য রকম একটা সুখ অনুভব করছে।ইচ্ছে করতেছে সারাক্ষণ যেনো সোহা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

মনে মনে আওড়ায় দায়ান” ম’ন্দ লাগছেনা।”

হঠাৎ ই দায়ানের কিছু মনে পরে যায়।তার মা ও তো এভাবে দায়ানের মাথা ব্যাথা দূর করে দিতো।মাথা মুছে দিতো।মাথা ব্যাথা হলেই মায়ের কাছে ছুটে যেতো।গিয়ে সোজা মায়ের কোলে শুয়ে পরতো।মায়ের মন বুঝে যেতো ছেলে কি চায়।খুব ভালোবাসা দিয়ে দায়ানের সব কষ্ট ব্যাথা নিমিশেই দূর করে দিতো। আর বলতো,,,
আমি না থাকলে কি হবে বাপ তোর? কে মাথা টিপে দিবে?

দায়ান মায়ের কোল থেকে ওঠে লাফ দিয়ে বিছানায় বসতো।আর বলতো এসব যদি তুমি আরেকবার বলো মা তাহলে আমি যেদিকে দু- চোখ যায় চলে যাবো।

দায়ানের মা তখন বলতো, আহারে বাপ আমার রাগ করে না।আমি থাকবো না তো কি হবে? তোর জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবো।সে দেখিস আমার মতোই তোকে সেবা করবে।সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে।আমরা না এনে দিতে পারলেও সে ঠিক তোর কাছে কোনো না কোনো ভাবে আসবে।বলেই কপালে চুমু একে দিতো।

দায়ানের অতীত মনে হতেই চোখের কোণ জলে ভরে উঠলো।চোখ মেলে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।

সোহা দায়ান এরকম ভাবে উঠে দাঁড়ানোতে ভয় পেয়ে যায়।অনুমতি না নিয়ে ছোঁয়ায় এই লোক আবার চ’ড় মে/রে দিবে নাতো?।আমার ই কি দোষ? এই লোকটার কষ্ট পাওয়া দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না।

এদিক ঐদিক তাকিয়ে দায়ান চোখের পানি আড়াল করে।সোহাকে বলে তুমি এখন যাও। আমি কিছুক্ষন একা থাকতে চাই।

সোহা মাথা নাড়িয়ে যাওয়ার পথ ধরে।

দায়ান অন্যদিকে তাকিয়েই আবার সোহা কে ডাকে।

শুনো।

সোহা ঘুরে দায়ানের দিকে তাকায়।

থ্যাংক্স!

সোহা অবাক হয়।কিন্তু প্রকাশ করে না। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

দায়ান সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে।
ঘুড়ে দাড়িয়ে বারান্দার দিকে হাটা দেয়।

—————————————–
চারদিকে কোলাহল সবাই যে যার কাজে ব্য’স্ত। দায়ান সেই সন্ধ্যায় যে বারান্দায় এসেছে আর যায় নি বারান্দা থেকে। সময়ের পালাক্র’মে দিন রাতের আধারে তলিয়ে গেছে।মানুষ তবুও থেমে নেই।নিজ নিজ কর্ম ব্য’স্ততা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা।এগিয়ে যায়। এই যে দিন রাতের আধারে ঢেকে আছে,তাও মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেছে।

দায়ান এক মনে অন্ধ’কার আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তারা নেই আজ আকাশে।

রাত ১০ টা বাজতে চললো। সোহা রান্না করে কখনই নিজের রুমে বসে বসে মোবাইল এ কতোক্ষন ফানি ভিডিও দেখেছে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা প্রায় বাজে।তাই উঠে দাঁড়িয়ে দায়ানের রুমের দিকে হাটা দেয়।খাবার খেতে ডাকার জন্য। দায়ানের রুমের সামনে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁ’কি দেয়। কিন্তু দায়ানকে দেখতে পায় না।তাই দরজায় টুকা দেয়।

দরজায় টুকার আ’ঘা’তে দায়ানের ধ্যা’ন ভাঙে।

সোহা আবার ডাকে ” শুনছেন? খাবেন চলুন।
দায়ান বারান্দা থেকে বের হয়ে আসে। সোহার দিকে একবার তাকিয়ে,কোনো কথা না বলে ডাইনিং এ যেতে থাকে। যাওয়ার আগে আবার দাড়িয়ে বলে যায়,,,,
নেক্সট টাইম আমায় একদম শুনছেন বলে ডাকবেনা।”

সোহা দায়ান কে মুখ বা’কায়। তো কি বলে ডাকবো,, ওগো?

খাবার টেবিলে কারো আর কোনো কথা হয়নি।যে যার মতো খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সকাল সকাল সোহা রান্না করে ফেলে।দু’জন ই তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নেয়।
————————————–

দায়ান রেডি হয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে।সোহার এখনো আসার খবর নাই।কি করছেটা কি এই মেয়ে? এতো টাইম লাগে রেডি হতে।আমার আবার অফিসে যেতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই বির’ক্ত মুখ নিয়ে আবার বাড়ির গেটের দিকে তাকায়। তখনই চোখ একজায়গায় গিয়ে থমকে যায়। সোহা বের হয়ে আসছে।পরনে তার নীল কালার লম্বা হাতার গাউন। কালো হিজাব,হাতে মেচিং কালো রেশমি চুড়ি। এক কথায় চোখ ধা’ধা’নো সুন্দর লাগছে।দায়ান কিছু সময়ের জন্য থমকে গেছে।চোখ সোহাতে আটকে যায়।
সোহা দায়ানের সামনে এসে তু’ড়ি বাজায়।
দায়ানের ধ্যা’ন ভা’ঙে।নিজেকে অন্যদিকে তাকিয়ে স্বা’ভাবিক করে নেয়।

দায়ান ও আজ ব্লু শার্ট ও কালো জি’ন্স পড়েছে। এই মেয়ের পোশাক নিজের সাথে মিলে গেলো কি করে? তাই ভাবছে দায়ান।

দায়ানতো আর জানেনা সবই সোহার কার’সাজি। দায়ানের রুমে উঁ’কি দিয়ে দেখে নিয়েছে দায়ান আজ কি রং এর পোশাক পরে।
দায়ানের পোশাকের রং দেখে,তারপর গিয়ে নিজে পোশাক পড়েছে।তাইতো এতো দেড়ি হয়েছে। হিহিহি
সোহারে তর যে কি বু’দ্ধি । নিজের মাথায় নিজেই চুমু।এমনিতে তো দিতে পারবনা তাই মনে মনে দিয়েই চালিয়ে দিলাম।

দায়ানকে জিজ্ঞেস করে আমাকে কেমন লাগছে? অনেক সুন্দর লাগছে তাইনা? আমি জানি আমি সুন্দর সবাই তাই বলে।আপনি একটু প্রশংসা করুন না। বলুন আমায় কেমন লাগছে?

“কাজের মেয়ে সকিনার মতো।”
বলেই দায়ান গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here