যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ১৫

0
625

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১৫
.
রাত থেকেই সবাই মিলে প্লেন করেছেন আজকে ঘুড়তে বের হবেন। তাও দু’তিন দিনের জন্য। হিমানী আর শ্রেয়ারাও যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে। সকাল থেকে সবাই যার যার মতো রেডি হয়ে বসে আছে বেতের সোফাটায়। এখন শুধু যাওয়ার অপেক্ষা। আর প্রতিবারের মতো আমিই সেই এক মাত্র ব্যক্তি, যেকিনা এখনো রেডি হয়েও হতে পারে নি। ছোট্ট সাদা কানের রিংটা খুঁজেই পাচ্ছি না আমি। আমার এই হারানোর অভ্যাসটার জন্য কোন দিন যে মানুষ আমাকে নোবেল পুরষ্কার ছুড়ে মারে..! এক রকম বিরক্ত হয়েই কানের রিং খোঁজা বাদ দিয়ে আমি ছুটলাম সবার কাছে। আমাকে পেয়ে সবাই প্রথমে একদফা বকা শোনালেন আমাকে। পরপরই সবাই বের হলেন বাড়ি থেকে। আর আমাদের ঘুড়তে যাওয়ার গন্তব্যটা হলো কাপ্তাই। কাপ্তাই লেক বা হৃদ!

আংকেলের বাড়ির সরু রাস্তাটা দিয়ে আমরা এখন মেন রোডের দিকে যাচ্ছি। সবাই আগে আগে হাঁটছে আর আমরা সব কাজিন পেছন পেছন। আমাদের সবার শেষেই মুখে হাসি ফুটিয়ে গল্প করতে করতে আসছে দুই ভাই রেয়ান আর আবদ্ধ। কোনো এক বিষয়ে বেশ হাসাহাসি করছে তারা। তাদের হাসির আওয়াজ প্রবল ভাবে শুনতে পারছি আমি। আমার পাশে হাঁটছে দীঘি। সেও হয়তো তাদের হাসির আওয়াজ শুনছে ঠিক আমার মতো। তবে দু’জনের মাঝে বিন্দু মাত্র কথা হয়নি এখনো। নিরবতা ভেঙ্গে দীঘিই আগে বলল,

— “কেমন আছো?”
— “আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?”
— “আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তবে তুমি আমাকে ‘তুমি’ করে বলতে পারো। যেহেতু তুমি আমার বয়সে বড়।”

আমি হেসে বললাম,

— “হ্যাঁ, কিন্তু সম্পর্কে তো ছোট তাই না? তবুও চেষ্টা করবো।”

তখনই পাশ থেকে ইয়াসিন ভাইয়া বলে উঠলেন,

— “সম্পর্কেও বড় হয়ে যাবি তুই। যদি রেয়ান ভাইকে বিয়ে করিস।”

চোখ পাকিয়ে তাকালাম ইয়াসিন ভাইয়ার দিকে। সে হাসছে। মারাত্তক অসহ্য হাসি। তার কান জোড়ে টেনে আমি ফিসফিসিয়ে বললাম,

— “এসব কারণেই তোর কপালে জীবনে মেয়ে জুটবে না।”

সে এটেটিউট দেখিয়ে কলার ঠিক করতে করতে বলল,
— “শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।”
— “তার মানে তুই গরু? মাথা মোটা গর্দভ?”

ইয়াসিন ভাইয়া মুখটা একটুখানি করে বললেন,

— “তুই সবসময় এমন পঁচাস কেন আমাকে মীরু? বড় ভাই হিসেবে সামান্যতম রেস্পেক্টও তো করতে পারিস।”

মেহেরুন বলে উঠল,

— “তোর মতো ছেলেকে রেস্পেক্ট করা ভেতর থেকে আসে না।”

ইয়াসিন ভাইয়া চটে গিয়ে সবুজ ভাইয়াকে বললেন,

— “আপনার জীবন শেষ সবুজ ভাইয়া। এই ডাইনী আপনার জীবন তামা তামা, ছিড়াফাটা করে ফেলবে।”

এ কথায় দীঘি শব্দ করে হেসে উঠল। আমাদের মুখেও লেগে আছে আনন্দের হাসি।

_________________

মেন রোডের কাছে আসতেই দু’টো জীপগাড়ি দেখতে পেলাম আমরা। একটাতে চাচ্চুরা যাবেন আর অন্যটায় আমরা। আমরা যে জীপগাড়িতে বসেছি সেখানে শ্রেয়ার একজন ফুফাতো ভাই মাংখাই বসে আছে ড্রাইভিং সীটে। তার পাশেই বসে তার বন্ধু। চাচ্চুদের গাড়িতেও মাংখাইয়ের আরো দুজন বন্ধু যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে। ওরা মূলত আমাদের গাইড হিসেবেই যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে। শুনেছি, রাঙামাটি থেকে সাজেক পর্যন্ত প্রায় কম-বেশি সব জায়গাই তাদের চেনা পরিচিত। তাছাড়া আর্মিদের সাথেও বেশ সখ্যতা আছে তাদের। সেই সুবিধার্থে কাপ্তাই যাওয়ার পারমিশনটাও সহজে পেয়ে গেছি আমরা।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। শ্রেয়া, হীমানী, মেহেরুন আর সবুজ ভাইয়া বসে আছেন একপাশে। অন্যপাশে বসে আছেন ইয়াসিন ভাইয়া, আবদ্ধ আর দীঘি। এবং দু’পাশের দুই সীটেরই একদম মাঝে বসে আছি আমি আর রেয়ান। সবার মাঝে বসে যেন আনন্দটা আরো বেড়ে গেছে আমার। সবার দিকেই খেয়াল করতে পারছি আমি। তাদের আনন্দ দেখছি, হাসছি! তবে সামনে তাকাতেই মুখটা চুপসে গেলো আমার। প্রথম সীটে বসেও হিমানী মেয়েটা কেমন হেসে হেসে কথা বলছে রেয়ানের সাথে। আমার মুখোমুখি বসা উনিও মুচকি হেসে উত্তর দিচ্ছেন। ইসস! দুজনের কি হাসি! দেখেই গাটা জ্বলে যাচ্ছে আমার। কিন্তু এসব কেন হচ্ছে তা জানি না আমি। জানতেও ইচ্ছে করছে না। শুধু ওই মেয়েটাকে যদি একটু কথা শুনিতে দিতে পারতাম। যেমন- অসভ্য, নির্লজ্জ এই আরকি। এ ছাড়া আর পারিই কি আমি? শুধু মুখ গোমড়া করে বসে আছি মাত্র। তার একটু পরেই ফোনে টুংটাং শব্দ বেজে উঠল। আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ওপেন করতেই দেখলাম সেখানে লিখা- “মিস, মন খারাপ?”

‘মিস’ শব্দটা দেখে বুঝতে পারলাম এটা কার মেসেজ হতে পারে। কিন্তু উনি তো আমার সামনেই বসা। এভাবে মেসেজ দেওয়ার কি আছে? সামনা সামনিই তো বলতে পারতেন? মুখ তুলে সামবে তাকালাম আমি। উনি ফোন হাতে নিয়েই বসে। দৃষ্টি ফোনেই। আশেপাশে তাকাচ্ছেন না। মুখের ভাব গতি দেখেও কিছু বুঝতে পারছি না আমি। তাই সিওর হওয়ার জন্য মেসেজ দিলাম,

— “আপনি রেয়ান ভাই?”
— “হু! মন খারাপ কেন?”

এবার ভ্রুটা কুঁচকে গেলো আমার। উনি রেয়ান! সামনে থেকেও কেউ এসএমএস দেয়? তারওপর আমার নাম্বার কোই পেলেন সে? ইয়াসিন ভাইয়া দিয়েছে? আবারও টাইপ করলাম আমি,

— “নাম্বার কোথায় পেলেন?”
— “তোমার না জানলেও হবে। যা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও!”

আমি ঘাড়ত্যাড়ামি করে লিখলাম,

— “দিবো না।”

লিখেই উনার দিকে তাকালাম উনার রিয়েক্সন দেখার জন্য। কিন্তু কোনো প্রকার রিয়েক্সন দেখালেন না উনি। উল্টো ফোন অফ করে প্যান্টের পকেটে রেখে দিলেন। মেতে উঠলেন সবুজ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে। আমার দিকে একবার তাকালেনও না। এত এটেটিউট যে উনি কোথায় পান!

এদিকে কথা বলার ফাঁকে ইয়াসিন ভাইয়া মাংখাইকে জিজ্ঞেস করলেন,

— “আমরা কোন রিসোর্টে যাচ্ছি মাংখাই?”

মাংখাই নম্র ভাবে চাকমা, বাংলা মিক্স করে বলল,

— “আমোরা বড়্গাঙ রিসোর্টে যায়াচ্ছি।”

ইয়াসিন ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন,
— “এটা আবার কোথায়?”

তখনই রেয়ান ধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

— “রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের মগবান ইউনিয়িনের মোরঘোনা এলাকায় অবস্থিত এটা। বেশ নাম করা।”

এবার আবদ্ধ বলল,

— “আমরা যে রিসোর্টে আগের বার গিয়েছিলাম ওইটা না ভাই?”

রেয়ান ছোট্ট করে জবাব দিলেন,

— “হু।”

কথাটা শুনে দীঘি আবদ্ধকে বলল,
— “আপনি আগেও কাপ্তাই গিয়েছিলেন? আমাকে তো বলেন নি।”
— “তুমি ছিলে নাকি তখন?”

দীঘি মন খারাপ করে বলল,

— “তাই বলে বলবেন না? আমি না আপনার বউ। বউকে সব কিছু বলতে হয়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব!”

আবদ্ধ সরু চোখে দীঘির দিকে তাকালো। দীঘি আবারো কিছু বলতে নিলে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— “আর একটা ওয়ার্ড তো তোমাকে কাপ্তাই পানিতে ফেলে দিয়ে আসব। চুপচাপ থাকো।”

দীঘি আদুরে গলায় বলল,

— “আপনার কাঁধে মাথা রাখি?”

আবদ্ধ উত্তর দিলো না। এটাকেই সম্মতি মনে করে দীঘি কাঁধে মাথা রাখতে গিয়েও রাখলো না। কারণ আশেপাশে অনেক মানুষ। শুধু আবদ্ধের বাহু জড়িয়ে ধরে রইলো সে। আবদ্ধও কিছু বলল না।

___________________

চলবে…
(রি-চেক জিনিসটা একদমই করতে ভালো লাগে না আমার। বার বার বলতেও কেমন জানি লাগে। ভুলগুলো একটু কষ্ট করে বুঝে নিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here