যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ৪০

0
870

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ৪০
.
ধোঁয়া উঠা কফির মগে কিছুক্ষণ পর পর চুমুক দিচ্ছেন রেয়ান। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আমি। রাত তখন ১২টা। বেশি রাত না হলেও ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা আমার। আমাকে ঝিমাতে দেখে কফির মগে একবার চুমুক দিয়ে রেয়ান বললেন,
— “ঘুমকাতুরে মরুভূমি, কাল রাতে ঘুমাও নি?”

প্রশ্নটা শুনে রাগ হলো। অবুঝের মতো বার বার একই প্রশ্ন করেন কেন উনি? কটমট কণ্ঠে বললাম,
— “আমার এই অবস্থা আপনার জন্যই হয়েছে। ভুলে গেছেন? কাল রাতে নিজে তো আরাম করে ঘুমিয়েছেন আমার কোলে।”
— “তাই নাকি?”

বলেই আবারো চুমুক দিলেন মগে। এক নিশ্বাসে পুরোটা কফি শেষ করে মগ রেখে দিলেন টেবিলে। অত:পর হাত টেনে ধরলেন আমার। রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। নিজে বসলেন আমার পাশে। পরপরই আমার কোলে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,
— “কালকের মতো আজকেও ঘুমাবো তোমার কোলে। ঘুম পারিয়ে দাও। কুইক!”

নিঃসঙ্কোচ আবেদন। রেগে বললাম,
— “আপনি কি বাচ্চা নাকি যে আপনাকে ঘুম পারিয়ে দিতে হবে? নিজে নিজে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আর আমাকে আমার রুমে যেতে দিন।”

ভ্রু কুঁচকে তার প্রশ্ন,
— “এটা কি তোমার রুম না?”
— “না। আমার রুম আপনার এক ঘর পরেরটা।”

রেয়ানের ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। আমার চুল টেনে ধরে বললেন,
— “আমি তোমার কে?”

আশ্চর্য! উনি জানেন না উনি আমার কে? উনার শক্ত বাঁধন থেকে নিজের চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
— “ছাড়ুন, ব্যথা পাচ্ছি।”
— “উহু! উত্তর দাও, ছেড়ে দেবো।”

আমি হতাশ ভঙ্গিতে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললাম,
— “আপনি আমার বিয়ে করা ভাই।”

সঙ্গে সঙ্গে আমার চুল আরো শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন উনি,
— “কি বললে?”

তীব্র ধমকে চোখ কুঁচকে ফেললাম। তার দিকে তাকিয়ে প্রথমেই উনার রেগে যাওয়া চেহারা ভেসে উঠল সামনে। রাগে নাক লাল হয়ে গেছে তার। চোখ তীক্ষ্ণ করে রেখেছেন। একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
— “আমার বর হন।”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তবুও তাকিয়ে রইলেন রেয়ান। চুলের বাঁধন একটু হালকা করে গম্ভীর গলায় বললেন,
— “তাহলে এ রুমটা কার?”
— “আপনার।”
— “এই আমিটা কার?”
— “আমার।”

কথাটা বলেই হকচকিয়ে গেলাম। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে কথাটা। প্রবল অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে ফেললাম আমি। রেয়ান মুচকি হাসলেন। আমার এক হাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে বললেন,
— “আমি যেহেতু তোমার তাহলে এ রুমটাও তোমার, তাই না?”

জবাব দিলাম না। উনি আবারো হাসলেন। উঠে বসলেন হঠাৎ। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,
— “তোমাকে এখন মারাত্তক সুন্দর লাগছে, জানো? নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে বড্ড ভুল করছো মরুভূমি। আমার যে ভুল কিছু করতে ইচ্ছে করছে। এই ভুল কিছুটা করার আগেই চলে যাও রুম থেকে। পরে শত গালি দিলেও ভুল সুধরাতে পারবে না। এন্ড ইউ নো ওয়াট, একবার ভুল করলে সে ভুল আমি বারবার করি।”

চোখ বড় বড় করে তাকালাম রেয়ানের দিকে। সে দিব্যি হাসছেন। আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে। অতিরিক্ত লজ্জায় নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। অথচ আমাকে জ্বালাতে পেরে সে হাসছেন!

_________________

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই আবদ্ধ নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করে। কাল রাতে ছাদ থেকে এসে যখন দীঘিকে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আবদ্ধ, তখন নিজের অপরাধ বোধের কারণে দীঘির পাশে বিছানায় ঘুমাতে পারে নি সে। সারারাত রুমে পায়চারি করেছে। দীঘিকে বলা তার আজকের কথাগুলো বিবেক,বুদ্ধী সবটা দিয়ে বিচার করেছে। নিজের ভুলও বুঝতে পেরেছে আবদ্ধ। শেষে ঘুম চলে আসায় সোফায় এসে ঘুমিয়েছে আবদ্ধ। ঘুম ভাঙ্গতেই প্রথমে এ ঘটনা গুলো মনে ছিল না তার। নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করে চমকে গিয়েছিল সে। পরে আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যায় আবদ্ধর। সোফায় শুয়ে ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে তার। ঘাড়ে এক হাত রেখে উঠে বসে আবদ্ধ। বিছানায় চোখ যেতেই দীঘিকে দেখতে পায় না। রুমের আশেপাশে তাকিয়ে বারান্দায় উঁকি দিয়ে দীঘিকে খোঁজার চেষ্টার মাঝেই খট করে একটা শব্দ এলো কানে। ওয়াশরুমে দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে দীঘি। তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে আবদ্ধর দিকে চোখ যেতেই প্রায় সাথে সাথে আবারো চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। বারান্দায় চলে যায়।এতে আবদ্ধের অপরাধবোধ যেন আরো বেড়ে যায়। নিজের কাজের জন্য সে অনুতপ্ত। চাইলে বারবার ক্ষমা চাইবে দীঘির কাছে। কিন্তু দীঘির এই ইগনোর জিনিসটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না আবদ্ধ। দ্রুত পায়ে চলে যায় দীঘির কাছে বারান্দায়। দীঘির ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে করুণ স্বরে বলে,

— “সরি দীঘি।”

হঠাৎ আবদ্ধের কণ্ঠ শুনে চমকে যায় দীঘি। তবে তা প্রকাশ করে না। আগের মতো নিশ্চুপ থাকে। আবদ্ধ এবার অধৈর্য হয়ে উঠে। দীঘিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ব্যগ্র কণ্ঠে বলে,
— “আই এম রেইলি রেইলি সরি দীঘু। প্লীজ ক্ষমা করো আমায়। আমি আমার আচরণের জন্য অনুতপ্ত। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল দীঘির গালে। এক ঝটকায় আবদ্ধকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেললো সে। আবদ্ধ আগের চেয়েও দ্বিগুণ করুণ কণ্ঠে বলল,
— “আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না দীঘু? আমি সত্যি অনুতপ্ত আমার কাজে,আচরণে। আর কখনো এমন হবে না বিশ্বাস করো।”

এক হাতে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে দীঘি। আবদ্ধর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
— “বিশ্বাস তো ভেঙ্গে ফেলেছেন আপনি। কিভাবে বিশ্বাস করবো?”

কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে দীঘির। লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে আবারো বলল,
— “জানেন আবদ্ধ? যখন আমি প্রেগ্ন্যাসির কথা জেনেছিলাম, কতটা খুশি হয়েছিলাম? ভেবেছিলাম আমার প্রেগ্ন্যাসির কথা শুনে আপনি অনেক খুশি হবেন। সিনেমার নায়কেরা যেমন নায়িকার প্রেগ্ন্যাসির কথা শুনে নায়িকাকে কোলে তুলে সারা ঘরময় ঘুড়ে বেড়ায়? আপনিও ঠিক তেমন করবেন। অথচ আমার সব আশায় পানি ঢেলে দিলেন আপনি। আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমিই যে সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি আবদ্ধ।”

শেষের কথাটুকু বলার সময় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলো দীঘি। আবদ্ধ নির্বাক চেয়ে রইলো। এসব কথায় তার অপরাধবোধ যেন আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। দীঘি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে আবার বলল,
— “একটা অনুরোধ রাখবেন আবদ্ধ? পারলে আমার সামনে কম আসার চেষ্টা করবেন। আপনাকে দেখলে আমার কষ্ট হয়।”

অশ্রু সিক্ত নয়নে রুম ত্যাগ করলো দীঘি। আবদ্ধের বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

__________________

চলবে…
(ছোট হওয়ার জন্য সরি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here