#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৬+27+28+29+30
.
রাত বারোটা পনেরো বাজে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখনও থামার নামও নিচ্ছেনা। রিখিয়া রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। তুর্বী রুমে বসে ল্যাপটপে নেক্সট প্রজেক্টের কাজ করছে। রিখিয়া চুপচাপ বসে বসে ভাবছে বিহানের কথা। বিহানকে জড়িয়ে ধরা, ওর সাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত, সবটা। আচ্ছা বিহানের ‘ছেড়ে দেবো’ কথাটা শুনে এরকম অনুভূতি কেন হয়েছিল ওর? সত্যিই কী তাহলে প্রেম নামক অনুভূতি গ্রাস করে ফেলেছে ওকে? ভালোবেসে ফেলেছে ও বিহান নামক পুরুষটিকে?
অনেকটা সময় পরেও রিখিয়া যখন ভেতরে এলো না তখন তুর্বী ল্যাপটপটা বন্ধ করে কিচেনে গিয়ে কফি বানালো। দুটো মগে কফি ঢেলে নিয়ে চলে এলো ব্যালকনিতে। রিখিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
” কী ভাবছিস?”
রিখিয়া কফির মগ হাতে নিয়ে না বোধক মাথা নাড়ল। তুর্বী মগে ফুঁ দিতে দিতে বলল,
” আজ ভিজে বাড়ি ফিরলি যে? কোথায় ছিলি?”
” বিহানের সাথে রেস্টুরেন্টে গেছিলাম।”
” আচ্ছা? আমি বলি এবার আর ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে না খেলে বিয়েটা করেই ফেলো।”
” থামতো। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছিস তুই। আর তাছাড়াও এখন আমি বিয়েটিয়ে করতে পারব না। আমার লাইফ এ সবকিছু এত নরমালি হবেনা। আমি বিয়ে করে নিলে আমার বাবা-মাকে দেখবে কে?”
তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
” কেন? তুই দেখবি। এখন যেভাবে দেখিস। বিয়ে করতে বলেছি, নিজেকে কারো কাছে বেঁচে দিতে বলিনি।”
রিখিয়া একটু হেসে বলল,
” আচ্ছা ক-জন ছেলে বিয়ের পর তার বউকে চাকরি করতে দেয়? আর দিলেও সেই চাকরির টাকায় বাপের বাড়ির মানুষের দেখাশোনা করতে কজনকে দেয়?”
” আজব তো! তোর টাকা তুই কাকে দিবি সেটা ডিসাইড করে দেবে অন্যকেউ? তোর মনে হয়না এটা একটা জঘন্যতম রুলস?”
” মনে হওয়া দিয়ে কী কিছু হয়? সমাজ এটাই মানে।”
তুর্বী হালকা করে মুখটা বাঁকিয়ে বলল,
” গো টু হেল উইথ ইউর সমাজ।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে হেসে বলল,
” তুমি সবসময় এতো চিল মুডে থাকো কীকরে?”
” কারণ আমি তোর মত ওসব মানুষের কথা ভেবে ভেবে দিন পার করিনা যাদের কাজই হচ্ছে নিজের ঘর চঙ্গে তুলে পরের ঘর নিয়ে তদারকি করা। কার মেয়ে ভেগে গেছে, কার ছেলেকে পুলিশে নিয়েছে, কার ডিবোর্স হয়েছে, কার বাচ্চা হয়না ইত্যাদি, বেসিক্যালি পরের বাড়িতে কী হচ্ছে তা নিয়ে যারা সারাদিন নিজেদেরর ঐ ইউসলেস লম্বা নাকটা গলাতে আসে তাদের কথা ভেবে আমি আমার নিজের খুশি, আনন্দ, কমফোর্ট জোন নষ্ট করিনা। আই থিংক কারোরই করা উচিৎ না।”
” সবাই তোমার মতো করে ভাবতে পারেনা। বেশিরভাগ মানুষই লোকের কথাকে ভয় পায়।”
” জানি।”
রিখিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে লম্বা একটা শ্বাস ফেল
” তোমার কী খবর বলো? বসের সাথে প্রেম কেমন চলছে?”
তুর্বী একটু হেসে গা দুলিয়ে বলল,
” নট ব্যাড। ইউ নো ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আ’ম ইনজয়িং ইট।”
” তাই?”
তুর্বী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“লোকটা যখন হাতে হাত রাখে, হঠাৎ করেই কাছে টেনে নেয়, কপালের চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়, একটু রোমান্টিক্যালি কথা বলে।অন্যরকম লাগে। সাচ আ গুড ফিলিং।”
রিখিয়া গালে হাত দিয়ে বলল,
” এতোই যখন গুড ফিলিং আসে তখন সিরিয়াস হয়ে যাও। খারাপ কী? সৌহার্দ্য ছেলেটা ভালো তো?”
” আরে দূর! আমার দ্বারা ওসব বিয়ে-টিয়ে হবেনা। এমনিই ভালো আছি।”
রিখিয়া একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি দেখায় মনোযোগ দিল। তুর্বীও চুপ করে বসে আছে আর সৌহার্দ্যর কথাগুলো ভাবছে। ইদানিং ওর অজান্তেই সৌহার্দ্য নামটা জেকে বসে ওর মস্তিষ্কে।
____________
সৌহার্দ্য বড় সোফায় বিছানার মত করে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে, আর বিহান ফ্লোরে বসে কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে। সৌহার্দ্য ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” সারাদিন এসব গেমস-টেমস না খেলে একটু কাজ করলেও তো হয় না কী?”
” দেখ ব্রো, আমি একা মানুষ। পেন্টিং করে যা পাই তাতে করে আমার আর আমার থাকা খাওয়া আর গার্লফ্রেন্ডদের টুকিটাকি খরচ চলে যায়।”
সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখনও গার্লফ্রেন্ডস্?”
বিহান হালকা হেসে বলল,
” আগের কথা বলছিলাম।”
” সেটা হলেই ভালো।”
বিহান গেমস খেলায় মনোযোগ দিয়ে বলল,
” ইদানিং এখানেই বেশি থাকিস কেন বলতো? আগেতো এতো বেশি আসতি না?”
সৌহার্দ্যও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল,
” দুটো কারণ আছে। প্রথম কারণ বাবা এখানে নেই তাই তোর কাছে এলে ঝামেলা করারও কেউ নেই, আর দ্বিতীয় কারণ এখন তো আর তোর সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে বাড়িতে আসিস না তাই।”
বিহান হেসে দিয়ে বলল,
” আচ্ছা? তো বস তোমার সেই বিখ্যাত প্রেম কেমন চলছে?”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে নিয়ে বলল,
” এটাকে প্রেম বলে?”
বিহান ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” তো কী বলে?”
” ভালো প্রশ্ন। কী বলে এটাকে?”
বিহান এবার ফোনটা রেখে বলল,
” ভালোবাসিস তুর্বীকে?
সৌহার্দ্য ভাবুক হয়ে বলল,
” হয়তো। শুরু থেকেই ওর প্রতি একটু একটু করে দূর্বল হয়েতো পরছিলাম। এন্ড এই সো কলড রিলেশনে যাওয়ার পর ওর সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর পর, ওর এতো কাছে থাকার পর বুঝতে পারছি যে আই লাভ হার। ভালোবাসি ওকে। এখন থেকে না। সেইদিন রাত থেকে যেদিন আমি S.R. হয়ে একরাত ওকে আমার কাছে আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু বুঝতে এতোটা সময় লেগে গেল এই আর কী।”
বিহান কিছু না বলে হাসল। সৌহার্দ্য গালে হাত রেখে বলল,
” রিখিয়ার সাথে তোয চক্করটা কী বলতো? তোকে দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। ভালোবাসিস?”
বিহান একটু লাজুক টাইপ হাসি দিয়ে বলল,
” জানিনা, কিন্তু সত্যি বলতে মেয়েটা ভালো। অন্য সবার মতো না।”
সৌহার্দ্য অনেকটা অবাক হয়ে বলল,
” এই প্রথম তোর মুখে কোন মেয়ের প্রশংসা শুনলাম। ইটস্ গ্রেট!”
বিহান আবারও হাসলো। সৌহার্দ্য মনের কোথাও একটা স্বস্তি পেলো। ওর মনে হচ্ছে একমাত্র রিখিয়াই পারবে বিহানকে বদলা, ওর ভূল ধারণাগুলো ভেঙ্গে দিতে, ওর মনের শূন্যস্হান পূরণ করতে। সৌহার্দ্য বলল,
” এক কাজ করি? ওদের দুজনকেই কাল লাঞ্চে ডেকে নেই। তোরও তুরের সাথে আলাপ হয়ে যাবে আর আমিও রিখিয়ার সাথে একটু ভালোভাবে আলাপ সেড়ে নেব।”
” এজ ইউর উইশ ব্রো।”
_____________
তুর্বী অফিসে এসে সৌহার্দ্যর কথামত সোজা ওর কেবিনে গিয়েই ঢুকলো। কেবিনে ঢুকে কাউকে দেখতে না পেয়ে তুর্বী ভ্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হঠাৎ করেই ওর হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে এলো কেউ একজন। তুর্বী একটু হকচকিয়ে গিয়েছে তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। তুর্বী চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” এটা করে কী বিশেষ বিনোদন পাও বলবে?”
সৌহার্দ্য হেসে বলল,
” কিছুক্ষণের জন্যে হলেও তোমার ঐ হকচকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পাই। ইউ নো খুব দুর্লভ জিনিস এটা।”
” মজা নেওয়া শেষ? এবার ছাড়ো।”
” এমন উদ্ভট কেনো তুমি? গার্লফ্রেন্ডরা বয়ফ্রেন্ডদের কাছাকাছি থাকতে কত কী করে। আর তুমি পালাই পালাই কর কেন?”
” আমরা ওসব ন্যাকা টাইপ বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড নই। ইউ নো দ্যাট।”
” ইয়া বাট এক্সপিরিয়েন্স নিতে হলে। একটু আধটু প্রেম প্রেম ভাব মনে আনতে হয় না কী?”
তুর্বী এবার সৌহার্দ্যর দুই কাধে হাত রেখে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
” আচ্ছা? তাই? প্রেম প্রেম ভাবটা কীকরে আনে?”
সৌহার্দ্য নিজের মুখটা একটু এগিয়ে এনে বলল?
” শিখিয়ে দেব?”
তুর্বী সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” কটা প্রেম করেছ এর আগে?”
সৌহার্দ্য হেসে দিয়ে বলল,
” যদি বলি দশ বারোটা? তুমি কী জেলাস হবে?”
তুর্বী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
” জেলাস হব কেন? আপনি একশটা প্রেম করুন আমার কী? আমার যেই এক্সপিরিয়েন্স চাই সেটা পেলেই হলো। বাকি সব জাহান্নামে যাক।”
সৌহার্দ্য কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। মেয়ৃটাকে কীকরে বোঝাবে ওর অনুভূতিটা? যত দিন যাচ্ছে তুর্বীর এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটা যে ওকে আরও কষ্ট দিচ্ছে। তুর্বী সৌহার্দ্যর নাকে আঙ্গুল দিয়ে হালকা একটা ঘষা দিয়ে বলল,
” অনেক হয়েছে। এটা কাজের জায়গা। কাজ করাই বেটার।”
” হুম।”
বলে সৌহার্দ্য চুপচাপ নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। তুর্বীও বসে সৌহার্দ্যর সাথে ডিজাইন, প্লান সব নিয়ে ডিসকাস করে লাঞ্চ করে একবারই নিজের ডেস্কে এসে বসল। পাশের ডেস্কের একজন মেয়ে ওপর একটি মেয়েকে বলল,
” দেখ নতুন ইয়াং হ্যান্ডসাম বস আসার সাথে সাথেই কেমন হাতে করে নিয়েছে। এরা পারেও ছলেবলে ছেলেদের বস করে নিতে।”
ওপর মেয়েটা বলল,
” হ্যাঁ সেটাই। স্যারের কেবিনে ঢুকলে তো বেড়ই হতে চায়না। তারপর মাঝেমাঝে এক গাড়িতে আসা যাওয়া করে। দেখিসনা আজকাল কী সুন্দর ভালো ভালো প্রজেক্টে কাজ পাচ্ছে। এমনি এমনি নাকি?”
” সবই বুঝি এসব হচ্ছে বসদের পটিয়ে প্রমোসনের ধান্দা।”
তুর্বী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। এগুলো নিয়ে অফিসে প্রায়ই কানাঘুষা হয়। তুর্বী শুনেও না শোনার ভান করে। যেহেতু ওকে সরাসরি এসে কিছু বলেনা তাই ও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা। আর এসব কথা শুনলে ওর হাসি ছাড়া কিছুই আসেনা। তুর্বী উঠে গিয়ে জল খেয়ে আসার সময়ই ঐ মেয়েটা বলল,
” আজ এতো তাড়াতাড়ি স্যার ছেড়ে দিল?”
ওপরজন বলল,
” ভালোই তো বসকে পটিয়েছো। নেক্সট কোন প্রজেক্টটা হাতাচ্ছো শুনি?”
তুর্বী এবার ছোট্ট শ্বাস ফেলল। সরাসরি যখন ওকে বলে ফেলেছে। আরতো ও চুপ করে থাকবে না। তাই একটা চেয়ার টেনে আয়েশ করে বসল ওদের দুজনের সামনে। তুর্বীকে এভাবে বসতে দেখে দুজনেই একে ওপরের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। তুর্বী বলল,
” আচ্ছা? সৌহার্দ্য স্যারকে দেখেছ? কত হ্যান্ডসাম, টল, ড্যাসিং?”
মেয়েটি ভ্রু কুচকে বলল,
” হ্যাঁ তো?”
” এরকম একজনকে পটাতে গেলে যোগ্যতা লাগে। তোমাদের খুশির জন্যে মেনে নিলাম আমি সৌহার্দ্য স্যারকে পটিয়ে প্রজেক্ট নেই। কারণ আমার সেই যোগ্যতা আছে। তো বেসিক্যালি আমি আমার যোগ্যতা দিয়েই কাজটা করেছি। কিন্তু এখন যি তোমাদের খুব বেশি জ্বলে তো ট্রায় করে দেখতে পারো স্যারকে পটাতে পারো কি-না। যদিও মনে হয় না পটবে। আমি আছি তো।”
কথাটা বলে চোখ টিপ মারল তুর্বী। ওপর মেয়েটা তুতলিয়ে বলল,
” আমাদের দরকার নেই এসবের।”
তুর্বী হেসে বলল,
” গুড! তাহলে তো হয়েই গেল। তোমাদের তো তাহলে আমাকে নিয়ে প্রবলেম থাকারই কথা না। বাই দা ওয়ে। খেটে খেটে কাজ কর। দেখ প্রমশন পাও কি-না। আমার মত তো আর স্যারকে পটাতে পারবেনা। কাজই ভরসা।”
কথাটা বলে সুর দিয়ে ‘তুঝে মিরচি লাগি তো ম্যা কেয়া কারু’ লাইনটা গাইতে গাইতে নিজের ডেস্কে চলে গেল।
#চলবে…
[ অনেকদিন পরেই গল্প দিলাম। আসলে হঠাৎ আব্বু অসুস্থ হয়ে পরে আর হসপিটালাইসড করতে হয়। ফোনের কাছে আসার সময়, ইচ্ছে কোনটাই ছিলোনা। আজও লিখতাম না আপনাদের অনেকের অনুরোধে লিখলাম। আর যারা মেসেজে কমেন্টে আব্বুর অবস্থা জানতে চেয়েছেন আমি রিপ্লে দিতে পারিনি অনেক কে। আলহামদুলিল্লাহ্ আব্বু এখন একটু ভালো। দোয়া করবেন সবাই। রি-চেইক করিনি, ভুলগুলো বুজে নেবেন। ]#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৭
.
তুর্বী আর রিখিয়া একটা রেস্টুরেন্টে চুপচাপ বসে আছে। তুর্বী তখন থেকে পা দুলিয়েই যাচ্ছে। রিখিয়া ওর পায়ে একটা পাড়া দিল। তুর্বী ‘আউচ’ শব্দ করে উঠল। বলল,
” এভাবে পা দোলাচ্ছো কেন? ভদ্র মেয়ের মত চুপচাপ বসা যায় না?”
তুর্বী মুখ একটু ফুলিয়ে বলল,
” তাই বলে এইভাবে পাড়া মারবি?”
” ওরা এখনও আসছেনা কেন?”
” দুই ভাই-ই লেট লতিফ।”
রিখিয়া কপাল কুচকে তাকাল তুর্বীর দিকে। আর তুর্বীতো নিজের ধ্যানে আছে। আসলে আজ ওদের চারজনেরই লাঞ্চ করার কথা একসাথে। ওরা এসে বসে থাকলেও সৌহার্দ্য আর বিহান কেউই আসেনি। এরমধ্যেই রিখিয়ার দেখল বিহান আর সৌহার্দ্য আসছে। রিখিয়া বলল,
” ঐতো এসে গেছে।”
তুর্বী মাথা তুলে তাকাল ওদের দিকে। সৌহার্দ্য আর বিহান এসে ওদের বিপরীতে বসল। তুর্বী বলল,
” এতো লেট করে আসে কেউ? কতক্ষণ যাবত বসে আছি ইয়ার।”
বিহান বলল,
” সরি মিস জ্যামে পরে গেছিলাম।”
সৌহার্দ্য বলল,
” অনেকক্ষণ ওয়েট করছ তাইনা?”
তুর্বী রাগী কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ অনেকক্ষণ?”
রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
” মিথ্যে কেন বলছ তুর? খুব বেশিক্ষণ হয়নি আমরা এসছি।”
সৌহার্দ্য আর বিহান হেসে দিল ওদের কথায়। বিহানের তুর্বীর চঞ্চলতার কথা শুনতে ভালোই লাগে। এই নিয়ে দুবার দেখেও নিল। এরপর খাবার ওর্ডার করে ওরা একে ওপরের সাথে কুশল বিনিময় করতে লাগল। যেহেতু বিহান আর রিখিয়ার অনেক স্বভাব আচরণই একরকম। তাই ওদের মধ্যে ভাবটাও তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। ওরা নিজেদের মত কথা বলছে, হাসাহাসি করছে এদিকে সৌহার্দ্য আর রিখিয়া বোকার মত ওদের তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে বিহার আর তুর্বী তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য আর রিখিয়া চুপচাপ বসে আছে। তুর্বী বলল,
” কী হল? তোমরা চুপচাপ বসে আছো কেন?”
সৌহার্দ্য লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” তোদের শেষ?”
রিখিয়ার দৃষ্টিও এখন বোকা বোকা। তুর্বী আর বিহান একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ফিক আওয়াজ করে হেসে দিল। সৌহার্দ্য আর রিখিয়াও হেসে দিল। তুর্বী বলল,
” সৌহার্দ্য, তোমার এই ভাই কিন্তু একদম সলিড। মানে এরসাথে আড্ডা দিয়ে মজা পাওয়া যায়। ওপরদিকে তুমি? এক নম্বরের একটা গোমড়া মুখো। শেখো নিজের ভাইয়ের থেকে কিছু।”
সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বলল,
” এর থেকে?”
রিখিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” না ভাইয়া! আপনি যেমন আছেন একদম পার্ফেক্ট আছেন। এদের মত লেজ ছাড়া বাদর হওয়ার দরকার নেই।”
বিহান আর তুর্বী একসঙ্গে বলে উঠল,
” আমরা লেজ ছাড়া বাদর?”
সৌহার্দ্য ঠোঁট চেপে হাসলো। আর রিখিয়া একটু বিরক্তি নিয়েই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। দুটো এতো চঞ্চল কেন? আবার এটা ভেবেও মনে মনে হাসল যে এইজন্যই তো দুজনই ওর এত প্রিয়।এভাবে কিছুক্ষণ খুনশুটির পর ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেড় হয়ে একটা পার্কে গেলো। ওখানে সৌহার্দ্য-তুর্বী, বিহান-রিখিয়া আলাদা আলাদা হয়ে হাটছে। সৌহার্দ্য আজ তুর্বীকেই দেখছে। একটা সাদা লং শার্ট আর কালো জিন্স, পিঠের মাঝামাঝি ছুই ছুই লেয়ার কাট দেওয়া খোলা চুল যা বাতাসে হালকা উড়ছে। মেয়েটার এটিটিউটের সাথে সাথে রূপেরও প্রেমে পরছে আস্তে আস্তে। এখন ও ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে যে তুর্বীকে ছাড়া ওর জীবন অসম্পূর্ণ। এই মেয়েকে ওর জীবনে প্রয়োজন। হঠাৎই হাত তুর্বীর হাত ধরে আটকে নিল সৌহার্দ্য। তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল ‘কী?’। সৌহার্দ্য তুর্বীর একটু কাছে গিয়ে ওর কপালের চুল সরাতে সরাতে বলল,
” তোমাকে দেখতে দাও একটু।”
তুর্বী সৌহার্দ্যর চোখে চোখ রাখল। সৌহার্দ্যর দৃষ্টি গভীর। একটু বেশিই গভীর। তুর্বীরও একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সৌহার্দ্যর ওমন দৃষ্টি গ্রাস করতে চাইছে ওকে। কিন্তু ওর চঞ্চল মন সেই অনুভূতিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” এভাবে দেখার কী আছে? আর দেখতে পাফেন না?”
ব্যাস সৌহার্দ্যর মুডের বারোটা বেজে গেল। ও তুর্বীর দিকে হতাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
” কিছুনা চলো।”
যাওয়ার সময় আইসক্রিম খাওয়ার কথা উঠতে বিহান বলল ও নিয়ে আসছে। তখন তুর্বীও যেতে চাইল ওর সাথে। তাই বিহান আর তুর্বী গেল আইসক্রিম আনতে। সৌহার্দ্য আর রিখিয়া বসল বেঞ্চে। বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব ছিল। নিরবতা ভেঙ্গে সৌহার্দ্য বলল,
” তুর্বীর সাথে তোমার ছোটবেলার আলাপ?”
রিখিয়া মুচকি হেসে বলল,
” না তো। এই শহরে এসেই আলাপ হয়েছে দুজনের।”
আবারও কিছুক্ষণ চুপ রইল দুজনে। এরপর রিখিয় বলল,
” তুর্বী কিন্তু একটু বেশি চঞ্চল। ওকে জোর করে কিছু করানো যায় না। ও ওর ইচ্ছেতে চলে। তাই ওকে কিন্তু ওর মত করেই সামলাতে হবে। এমনও মুহূর্ত আসতে পারে যে আপনি অধৈর্য হয়ে উঠলেন। কিন্তু তখন রেগে গেলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।”
” কথাটা মাথায় থাকবে।”
বলে মুচকি হাসল সৌহার্দ্য। এদিকে আইসক্রিম হাতে নিয়ে সাইড দিয়ে হাটতে হাটতে বিহান বলল,
” তোমাদের দুজনের বন্ধুত্ব আমায় অবাক করে জানো? ওমন শান্ত, স্হির একটা মেয়ের বান্ধবী এমন হয়?”
তুর্বী হেসে বলল,
” তোমার আর সৌহার্দ্যরও তো তাই।”
” তা ঠিক। কিন্তু আমরা ভাই। ছোট থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি। কিন্তু তোমরা তো তা নও।”
তুর্বী একইভাবে হাসল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” রিখিয়াকে ভালোবাসো?”
কথাটা শুনে থ মেরে দাঁড়িয়ে গেল বিহান। রিখায়াকে ভালোবাসার কথাতো ও স্বপ্নেও ভাবেনি। আর তুর্বীর দ্বারা এই প্রশ্নটা স্বাভাবিক সেটাও জানে ও। কিন্তু ‘রিখিয়াকে ভালোবাসো?’ বাক্যটা সোজা ওর হৃদপিণ্ডে গিয়ে লাগল। এমন মনে হল যেন ওর হৃদয়, মনও ওকে একই প্রশ্ন করল একইসঙ্গে। কিন্তু তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তরে শুধু লাজুক টাইপ একটা হাসি দিল। যেটা দেখে তুর্বীও হেসে দিল।
____________
দেখতে দেখতে বেশ অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। এরমধ্যে রিখিয়া আর বিহানের মধ্যে বন্ডিংটা দৃঢ় হয়ে উঠছে আরও। ওপরদিকে সৌহার্দ্য তুর্বীর প্রতি দিন দিন চরমভাবে দুর্বল হয়ে পরছে। এমন মনে হয় যেন তুর্বীকে ছাড়া ও বাঁচবেই না। তুর্বী ছাড়া সবটাই ওর কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে একটাই তুর্বীর কাছে এখনও এটা একটা এক্সপিরিমেন্টই। কিন্তু সৌহার্দ্য এখন তুর্বীকে চায়, ভালোবেসে চায়, লোক দেখানো এক্সপিরিমেন্টাল সম্পর্ক আর চাইছেনা ও। ও চায় অন্যরা যেভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসে সেভাবেই তুর্বীকে ভালোবাসতে। কিন্তু সেরকম কোন মুহূর্ত এলেই তুর্বী এড়িয়ে যায়। প্রতি মুহূর্তে বোঝা যায় যে এই সম্পর্কটা ওর কাছে কতটা অবহেলার। শুরুতে ধৈর্য্য ধরে সৌহার্দ্য ব্যাপারটা মানিয়ে নিচ্ছিল ঠিকই কিন্তু আর পারছেনা। ওর মনে হত একসময় না একসময় তুর্বী বুঝবে। তুর্বীও ভালোবাসবে ওকে। কিন্তু এতোগুলো দিন কেটে যাওয়ার পরেও তুর্বীর মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অনুভূতির ইঙ্গিতও পায়নি ও। যেটা এখন আর সৌহার্দ্যর সহ্য হচ্ছেনা। সমস্ত ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পাগল পাগল লাগে ওর নিজেকে।
শুক্রবার তাই আজ ছুটির দিক। তুর্বী কানে হেডফোন গুজে একমনে S.R. এর ‘প্রভাতের আলো’ শো শুনছে। ইদানীং শুনতে ভালোই লাগে ওর। কিন্তু শুরু থেকে সৌহার্দ্যর সাথে S.R. এর কন্ঠের অনেকটা মিল পায় ও। হুবহু মিল পায়নি তাই কো-ইন্সিডেন্স ভেবে পাত্তা দেয় নি।
এদিকে রিখিয়া ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল বাড়ি থেকে ফোন এসছে। এমন সময় হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে অবাক হল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওর মা কেঁদে দিয়ে বলল যে ওর বাবার শরীরটা ভালো নেই। ওকে যেতে বলছে। ওকে দেখতে চাইছে ওর বাবা। কথাটা শুনে রিখিয়া কী করবে বুঝতে পারছেনা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল ও আজকেই
আসছে। ফোন রেখে রুমে এসে কেঁদে দিল ও। ওর পৃথিবীতে বাবা মাই তো আছে। বাবার অসুস্থ আর ও এতো দূরে। রিখিয়ার কান্নার আওয়াজে তুর্বী দ্রুত বেডরুমে এল। এভাবে কাঁদতে দেখে বলল,
” কী হয়েছে রিখু! কাঁদছিস কেন?”
রিখিয়া তুর্বীকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্না করল। এরপর সবটাই খুলে বলল। সবটা শুনে তুর্বী বলল ওকে বিকেলের ট্রেনে তুলে দেবে। নিজেই সব প্যাকিং করে দিল। আর বারবার তুর্বীকে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
___________
রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে বিহান, রিখিয়া, সৌহার্দ্য আর তুর্বী। রিখিয়াকে ট্রেনে তুলে দিতেই এসছে ওরা। রিখিয়ার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন চলে এল। বিহান রিখিয়ার দুই কাঁধে হাত রেখে বলল,
” একদম চিন্তা করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। সাবধানে যাও। আর নিজের খেয়াল রেখো।”
রিখিয়া মাথা নাড়ল। তুর্বী এসে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। দুজনের চোখেই পানি চিকচিক করছে। রিখিয়াকে ট্রেনে তুলে দেওয়ার পর। রিখায়া বিহান আর তুর্বীর দিকে তাকাল। কয়েকটা দিন তুর্বীকে দেখতে পাবেনা ভাবলেই কষ্ট হয় ওর, বিহানের জন্যেও কী হচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। তুর্বী ছলছলে চোখে তাকিয়ে রইল যাওয়ার দিকে। বিহান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” তোরা আয়। আমি গাড়িতেই আছি।”
বলে চলে গেল। সৌহার্দ্য তুর্বীকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
” মন খারাপ করোনা, চলে আসবে ও তাড়াতাড়ি।”
তুর্বী এমনিতে মাথা নেড়ে নিজেকে সামলালেও মন ভালো নেই ওর। রিখিয়া যে ওর অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। কয়েকটা দিন ওকে ছাড়া থাকতে হবে ভাবলেই কান্না পাচ্ছে ওর। কিন্তু কিছু করার নেই না চাইতেও অনেক সময় আপনজনের থেকে দূরে থাকতে হয়।
#চলবে…#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৮
.
সকাল আট’টা বাজে। গ্রামের খোলামেলা পরিবেশের কারণে এতো সকালেও রোদ এসে চারপাশে জ্বলজ্বল করছে। চারটা রুমের, বহু পুরোনো দাগ পরা একতলা একটা দালান ঘরেই থাকে রিখিয়ারা। তবে ছোট বাড়িগুলো সুন্দর। আলো, বাতাসে মুখরীত হয়ে থাকে, খুলে নিশ্বাস নেওয়া যায়। আর বড় বাড়িতে এত শান্তিতে থাকা যায় না। কেমন যেন প্রকৃতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। মনে হয় কোন এক কৃত্রিম জগতের কৃত্রিমতায় প্রকৃতিকে হারিয়ে ফেলেছি।
রিখিয়া গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে ওর বাবা রেজাউল ইসলামের দিকে। বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন উনি। মাঝেমাঝে কাশছেন। শরীর খুব বেশি ভালো নেই তার। কিন্তু আপাতত রিখিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। কারণ কাল ওর আসার খবর পেয়ে আজ সকালেই ওর ভাই রায়হান চলে এসছে। এসছে সেটা বিরক্তির কারণ না। বিরক্তির কারণটা হল রায়হান ওদের ওখানকার এম.পির ছেলে শাফিনের সাথে রিখিয়ার বিয়ের কথা বলতেই এসছে। কিন্তু শাফিনকে মোটেও পছন্দ না রিখিয়ার। এমন না যে ছেলেটা খারাপ। এমনিতে কোন খারাপ ট্রাক রেকর্ড নেই। কিন্তু পাঁচ বছর যাবত রিখিয়ার পেছনে পরে আছে। রিখিয়া এতোবার না করার পরেও শাফিন শোনেনি। ওর একটাই কথা ‘প্রেম করতে না চাইলে করোনা, কিন্তু বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? এমনতো না যে তোমার বিয়ের বয়স হয়নি? বিয়ে যখন করবেই তো আমায় করো।’ কিন্তু রিখিয়াতো বিয়ে করবেনা। ও জানে ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর ভাই বাবা-মার দিকে ফিরেও তাকাবেনা। এখনই তাকায়না। ওনাদের এভাবে একা ফেলে স্বার্থপরের মত বিয়ে করে ফেলতে পারবেনা। যদিও শাফিন রিখিয়ার বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণটা জানেনা। কিন্তু হঠাৎ ওর ভাইর ওর বিয়ে নিয়ে মাথা কেন ঘামাচ্ছে বুঝতে পারছেনা। রিখিয়া বলল,
” ভাইয়া, আমি আগেও বলেছি যে আমি বিয়ে করব না।”
রায়হান এর একটু রাগ হল। এই মেয়ের এত কথা শুনতে ভালোই লাগেনা ওর। তবে এখন ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটাকে সামলে নিতে হবে। তাই মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,
” দেখেছ বাবা? কী বোকার মত কথা বলে? আরে বাবা এতো বড় ঘর থেকে সম্বন্ধ রোজ রোজ আসেনা। আমাদের মত পরিবারে তো নাই। এটাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে! এরকম বোকামোর মানে হয়?”
” হ্যাঁ সেই, চালাক তো তুমি। যে কি-না বিয়ের পরপরই আলাদা হয়ে গেলে তো গেলে, একটাবার বাবা-মা বেঁচে আছে না মরে গেছে জানার প্রয়োজন মনে করো না।”
” দেখ বেশি বলছিস তুই এখন। মেয়ে হয়ে জন্মেছিস বিয়ে না করে বাঁচতে পারবি?”
রিখিয়া একটু হেসে বলল,
” সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি তোমার বউ বাচ্চা সামলাও। আর আমাকে নিয়ে হঠাৎ এতো ভাবছো কেন বলোতো? নিজের স্বার্থ ছাড়াতো তুমি কিছুই করোনা। এখানে কী স্বার্থ আছে তোমার বলোতো?”
প্রতিটা কথা নিচু গলাতেই বলেছে রিখিয়া কারণ ও বড়দের সাথে উচু গলায় কথা বলতে পারেনা। রায়হান এতক্ষণ রাগটা চেপে রাখলেও এবার আর পারলোনা। একটু চেচিয়ে বলল,
” এতো দেমাগ কীসের রে? তোর কপাল ভালো শাফিনের মত ছেলে তোকে বিয়ে করতে চায়। ভালোয় ভালোয় বলছি রাজি হয়ে যা নইলে কিন্তু মার একটাও মাটিতে পরবে না।”
রেজাউল ইসলাম এবার একটু ধমকের সুরে বললেন,
” রায়হান! খবরদার ওর গায়ে হাত তুলবে না। আমার মেয়েকে আমি তখনই বিয়ে দেব যখন ও চাইবে। কারো জবরদস্তি মানবো না। এতো অভাবের সংসারেও ওকে পড়িয়েছি একদিন এভাবে জোর করে ঘর থেকে বিদায় করার জন্যে না।”
” কিন্তু বাবা..”
” দেখ রায়হান আমি তোমার ইনকামে চলি না। আমার পেনশনের টাকা আর আমার মেয়ের টাকাতেই আমার জীবন চলে। আমার মেয়ের কথা শুনতে আমি বাধ্য হতে পারি, কিন্তু তোমার না। ”
বলে একটু কেশে নিলেন রেজাউল। রিখিয়া উত্তেজিত হয়ে বলল,
” বাবা তোমাকে এতো উত্তেজিত হতে হবেনা। আমি বলছিতো কথা। তুমি বিশ্রাম কর। ভাইয়া প্লিজ, এসব বাদ দাও।”
রায়হান রেগে বেড়িয়ে গেল। রিখিয়ার মা এবার রান্নাঘর থেকে এসে বলল,
” তোমরা কী শুরু করেছ বাপ বেটি মিলে? এতো আবেগ দিয়ে জগত চলে না? মেয়ে ও? বিয়ে না করে জীবন চলবে?”
” তুমিও শুরু করলে? ও মেয়ে আমাদের বোঝা না যে এভাবে বিদায় করব। তোমার কাছে বোঝা হয়ে গেল নাকি?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ মেয়েতো শুধু তোমার আমার না। একে সংসারের এই অবস্থা। দিনকাল কেমন তাতো জানোই। তোমার শরীর ভালো নেই। আমার হাফানি ইদানিং বাড়ছে। আমরা যতদিন আছি ততদিন না হয় চলল। এরপর? মেয়েটার কী হবে ভেবেছ?”
রেজাউল এবার সত্যিই ভাবনায় পরলেন। কথাটা একেবারেই যে ফেলনা তাও না। কিন্তু তবুও মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে যাবেনা।
রায়হান হনহনে পায়ে হাটছে। রাগ মাথায় চড়ে আছে ওরআসলে ওর এতো আগ্রহ দেখানোর একটাই কারণ, টাকা! শাফিন ওকে বলেছে যে যদি রিখিয়াকে রাজি করাতে পারে তো দশ লাখ টাকা দেবে। আর এই টাকার লোভেই এতোকিছু করছে রায়হান। কিন্তু ওর বোনতো রাজিই হচ্ছেনা। কিন্তু শাফিনের মনে খারাপ কিছু নেই। ও শুধু রিখিয়াকেই চায়। ও খোঁজ নিয়ে জেনেছে রিখিয়ার কারো সাথে প্রেম নেই। হয়তো কোন কষ্ট আছে মনে তাই বিয়ে করতে চায়না। বিয়ের পর ভালোবেসে সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে কিন্তু বিয়ে ও করবেই।
____________
তুর্বীর মেজাজ একদমি ভালো নেই। এমনিতেই রিখিয়া ছাড়া ওর কিছুই ভালো লাগেনা। তারওপর ওর সৎ মা নামক মহিলা আজও ফোন করে টাকা চেয়ে ঘ্যানঘ্যান করছে। এই মহিলা কী ভাবে? ও এটিএম? উনি বুঝতেই চায়না যে ও একটা চাকরী করে, সেখানে নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট বেতনই দেওয়া হয়। তুর্বীও যে ছেড়ে দেয় তা না। মাঝে মাঝে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। কিন্তু ফেলে দিতে পারেনা। ‘মা’ বলে ডেকেছে তো। যেমনই হোক মা বলে ডাকারতো কেউ আছে। ঐ মহিলা না থাকলেতো ‘মা’ ডাকটাও ওর জীবনে থাকবেনা। মাঝেমাঝে বাবা-মা দুজনের ওপরই রাগ হয় ওর, এভাবে স্বার্থপরের মত একা ফেলে চলে গেল কেন?
সন্ধ্যার পর একটা আর্জেন্ট মিটিং ছিল আজ। মিটিং এর সময় সৌহার্দ্য খেয়াল করেছে তুর্বীর মুড অফ। মায়ের ব্যাপারটা না জানলেও রিখিয়ার ব্যাপারটা তো জানে ও। তাই ও ভেবে রেখেছে অফিস থেকে বেড়িয়ে তুর্বীকে নিয়ে ঘুরে আসবে। মনটা ভালো হবে ওর। যদিও তুর্বীকে নিয়ে সৌহার্দ্য ইদানীং খানিকটা বিরক্ত। এতো ডোন্ট কেয়ার ভাব কার ভালো লাগে? দুদিন আগের কথা,
তুর্বী আর সৌহার্দ্য একটা পার্কের রোড দিয়েই হাটছিল। হঠাৎ করেই একটা মেয়ে এসে সৌহার্দ্যর হাত ধরে বলল,
” সৌ? হোয়াট আ সারপ্রাইজ! এভাবে তোমাকে দেখব ভাবতেই পারিনি।’
সৌহার্দ্যও অবাক হয়ে বলল,
” তুমি? কেমন আছো?”
এরপর দুজনেই সৌজন্যমূলক কিছু কথা বলল। কথার মাঝে মেয়েটা বলল,
” বিয়ে করোনি যখন। আমার এখনও একটা চান্স আছে বল? কলেজ লাইফে প্রেম করবেনা বললে ঠিক আছে। কিন্তু এখন বিয়ে তো করতেই পারো আমায়।”
এটা শুনে সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে দেখল ও ফোন স্ক্রোল করছে। ওদের কথায় না ওর কোন ভাবান্তর আছে আর না কোন আগ্রহ। সৌহার্দ্য কোনমতে মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওর নাম হচ্ছে রিয়া। আমার ক্লাসমেট ছিল।”
তুর্বী ফোন দেখতে দেখতে বলল,
” ওহ।”
“পছন্দ করত আমায়। ইভেন এখনও করে।যদি এখন বলি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই সোজা টেনে কাজী অফিসে নিয়ে যাবে।”
তুর্বী ফোনের দিকে তাকিয়েই হালকা হেসে বলল,
“মজার তো।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
” তোমার জেলাস ফিল হয়না? রাগ হয়না?”
তুর্বী একটু অবাক হয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে বলে,
” রাগ হতে যাবে কেন? এন্ড হোয়াই শুড আই বি জেলাস? তোমার আমার মধ্যে কোন কমিটমেন্ট নেই। আর আমি কোথায় আর তোমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি? সো তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে বা ভালোবাসলে আমার জেলাস হওয়ার কোন কারণ আছে কী?”
সৌহার্দ্য হতাশ চোখে কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ছোট শ্বাস ফেলে বলল,
‘” নাহ।”
” সেটাই।”
এসব ভাবতে ভাবতেই তুর্বী চলে এলো। সৌহার্দ্য দিকে তাকিয়ে বলল,
” কোথায় যাবে বলছিলে চলো?”
” হুম চলো।”
মোটামুটি বেশ রাত হয়ে। মাঝরাত বলা যায়। সেই মাঠটাতে ঘাসের ওপর বসে আছে সৌহার্দ্য আর তুর্বী। তুর্বী বিয়ার খাচ্ছে। সৌহার্দ্য বারণ করেছিল। কিন্তু জোর করেই খাচ্ছে তুর্বী। নেশাও হয়ে গেছে। তুর্বী পিটপিট চোখে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বোতল এগিয়ে ইশারা করে জানতে চাইল ‘খাবে?’ সৌহার্দ্য মাথা নেড়ে না বলল। তুর্বী হেসে বলল,
” তুমিনা খুব ভালো! ভদ্র টাইপ একটা ছেলে। ঐ যে আমি বলিনা হাদারাম। একদমই না। পার্ফেক্ট! তবে তোমার একটাই দোষ। জাস্ট একটা! একটুখানি দোষ। এইযে এতুটুকু।”
দুই আঙ্গুল দিয়ে হাফ ইঞ্চি গ্যাপ দেখিয়ে বলল তুর্বী। সৌহার্দ্য বলল,
” সেটা কী?”
তুর্বী মাতাল কন্ঠে বলল,
” তুমি একটু বেশিই সিরিয়াস। এতোটাও দরকার নেই বুঝলে। মাঝেমাঝে লাইফের মজা নিতে হয়। তবে বাকি সব ভালো।”
” এতো ভালো দিয়ে কী লাভ? তুমিতো ভালোবাসোনা আমায়।”
তুর্বী হেসে দিয়ে বলল,
” ভালোবাসা? হুমহ! ইউ নো হোয়াট। নাথিং ইজ ইটার্নাল ইন দা ওয়ার্লড। ইভেন লাভ। আজ আপনি কাউকে ভালোবাসলেও যে কালও বাসবেন তার কোন মানে নেই। গ্যারান্টিও নেই। সবকিছুই বদলে যায়, মানুষ, স্বভাব, ভালোবাসা। নাথিং ইজ ইটার্নাল, নাথিং। আর ভালোবাসার সঙ্গাতেই বলে যে ভালোবাসতাম বলে নাকি কিছু হয়না। তাহলে মানে কী দাঁড়ালো? ভালোবাসা বলে কিচ্ছু নেই। দেয়ার ইজ নো সাচ থিং এজ লাভ। সবটাই সাময়িক মায়া। কারোটা বেশিদিন থাকে কারোটা কমদিন। এটাই পার্থক্য। সবকিছুই একসময় অতীত হয়ে যায়। আপনারা যেটাকে ভালোবাসা বলেন না, সেটাও।”
বলে সৌহার্দ্য বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরল সৌহার্দ্যকে। সৌহার্দ্যও তুর্বীকে জড়িয়ে ধরল। তুর্বীর এসব জটিল কথায় অনেক অবাক হল ও। এই চঞ্চল মেয়েটাও নিজের মধ্যে কত কথা চেপে রেখেছে, কত অনুভূতি, কত না পাওয়া, কত আক্ষেপ, ভালোবাসার প্রতি একরাশ অবিশ্বাস। না ওকে বলে দেওয়া উচিত সৌহার্দ্যর মনের কথা। সৌহার্দ্য তুর্বীকে বলতে নেবে তখন খেয়াল করল তুর্বী ঘুমিয়ে পরেছে। সৌহার্দ্যর আর উঠতে ইচ্ছা হলোনা। ওখানেই তুর্বীকে বুকে নিয়ে খোলা মাঠে শুয়ে পরল।
তুর্বী সকালে চোখ খুলে দেখল সৌহার্দ্যর বুকে আছে। সৌহার্দ্য জেগে গেছে। কিন্তু অবাক হলোনা। এই মেয়ের মধ্যে অবাক হওয়ার ক্ষমতা হয়তো কম। তুর্বী উঠে হাই তুলে বলল,
” সরি হ্যাঁ। আসলে ডোসটা বেশি পরে গেছিল তাই ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছি।”
সৌহার্দ্য উঠে বসে তুর্বীকে আবারও বুকে টেনে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
” আমার জন্যে তো শ্রেষ্ঠ রাত ছিল। কারণ সারারাত তুমি আমার বুকে ছিলে।”
তুর্বী এবার অবাক দৃষ্টিতে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। হ্যাঁ অবাক হয়েছে। কারণ আজ প্রথম ওর মনে হল সৌহার্দ্য শুধুই টাইমপাস করছে না। হয়ত সৌহার্দ্যর মনে কিছু চলছে। পরক্ষণেই এটাকে নিজের মনের ভুল ভেবে সৌহার্দ্যর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,
” আমি গাড়িতে আছি, তুমি এসো।”
বলে উঠে চলে গেল। নিজে নিজেই তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিল সৌহার্দ্য। হয়ত বেশি আশা করে ফেলে ও তুর্বীর কাছে, তাই তুর্বী বারবার ওকে নিরাশ করে। তুর্বীরও দোষ দেওয়া যায়না এতে। ও তো বলেই দিয়েছিল আগে যে এটা শুধুই এক্সপিরিমেন্টের জন্যে। ও তো ভেবেছিল আর যাই হোক এইরকম একটা মেয়ের প্রেমে অন্তত পরবে না। আগে যদি জানতো এই শুধুমাত্র এক্সপিরিমেন্টের জন্যে করা সম্পর্কটার মায়ায় ও এভাবে জড়িয়ে যাবে। ওর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী, চিন্তাধারার মেয়েটাকে এভাবে, এতোটা ভালোবেসে ফেলবে। কখনও রাজি হতোনা। কখনও না।
#চলবে…#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২৯
.
উঠোনের ঠান্ডা বাতাসে একটা চেয়ারে বসে চা খেতে খেতে বাইরের পরিবেশটা দেখছিল রিখিয়া। তুর্বী আর বিহান দুজনের কথাই খুব মনে পরছে ওর। তুর্বীর সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে। মেয়েটা পুরো বাচ্চাদের মত অভিযোগের সুরে বলছিল, ‘রিখু ইয়ার খুব বেশি মিস করছি তোকে প্লিজ চলে আয় না। দেখ তোকে ছাড়া আমি ব্রেকআপ হওয়া, ছ্যাকা খাওয়া দেবদাসীর মত হয়ে যাচ্ছি।’ তুর্বীর বলা ওসব কথা ভেবেই ফিক করে হেসে দিল রিখিয়া। মেয়েটা আসলেই খুব বেশি চঞ্চল। এই মেয়েটার সাথে হয়ত সারাজীবন থাকতে পারবেনা। কিন্তু যেদিন ছেড়ে আসতে হবে সেদিন কীকরে আসবে? কীকরে থাকবে পাগলী মেয়েটাকে ছেড়ে?
আবার বিহানের কথাও ভাবছে। ইদানিং বিহানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। বিহানের থেকে দূরে থেকে টানটা আরও বেশি অনুভব করছে। এটাই কী তবে ভালোবাসা? ভালোবাসে বিহানকে। ‘ভালোবাসেনা’ এই কথাটাও তো জোর দিয়ে বলতে পারছেনা। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে নিজের মনেই মুচকি হাসল রিখিয়া। হয়তো বিহানের মনেও ওর জন্যে কিছু আছে। অবশ্যই আছে, না থাকলে এতো সময় দেওয়া, মাঝেমাঝে ওভাবে কথা বলা, এতো কেয়ার করা, এসব নিশ্চয়ই করত না। নিজের মনে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখে বিহানের ফোন এলো। রিখিয়া স্ক্রিনে নামটা দেখেই দ্রুত রিসিভ করে বলল,
” হ্যালো।”
” ভালো আছো?”
” হ্যাঁ।”
” আঙ্কেল কেমন আছে এখন?”
” আগের চেয়ে অনেকটাই বেটার।”
এরপর দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ ছিল। নিরবতা ভেঙ্গে বিহান বলল,
” কবে আসবে?”
” দুদিন পর।”
” মিস করছি তোমাকে।”
রিখিয়ার খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে ‘আমিও আপনাকে মিস করছি’ কিন্তু বলতে পারল না। কিছুক্ষণ দুজনে টুকিটাকি কথা বলার পর ফোন রেখে দিল ওরা।
ফোন বিহান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের অন্ধকারের দিকে। মন ভালো নেই ওর। একদমই ভালো নেই। সবকিছুই অসহ্য লাগছে। সেটা কেনো তার কারণ ওর জানা নেই ওর। রিখিয়া কে মিস করছে? না, সেরকম হওয়ার তো কোন কারণ নেই। রিখিয়ার প্রতি তো ওর মনে কোন অনুভূতিই নেই। সবটাই তো নাটক ছিল। হ্যাঁ বন্ধুত্ব করা, এতো ফ্রেন্ডলি মেলামেশা, এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা সবটাই একটা ড্রামা ছিলো। সেদিন রিখিয়া মিডিয়া, এতো নামিদামী বিজনেস ম্যানের সামনে ওকে চড় মেরেছিল, কিছু না জেনেই মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিল, সারারাত লকাপে ছিল, ওর বাবা-মার ওর প্রতি আরও বেশি খারাপ ধারণা জন্মালো। যেখানে ওর কোন দোষই ছিলোনা। মেয়েদের প্রতি এমনিতেই ওর রাগ ছিল। তারওপর রিখিয়ার এই কাজে ওর রাগ বেড়ে গেছিল। ওর মনে হয়েছিল রিখিয়া সেইরকমই জঘন্য কোয়ালিটির মেয়ে, যারা সিমপ্যাথি, এটেনশন আর টাকার জন্যে একটা মানুষের জীবন নষ্ট করতেও দুবার ভাবে না। তাইতো রিখিয়াকে শিক্ষা দেবে ভেবেছিল। প্রথমে রিখিয়াকে ওর প্রতি প্রচন্ডভাবে দুর্বল করে দেবে। এরপর মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে যাতে, রিখিয়া চরম কষ্ট পায়। যাতে এটা বুঝতে পারে যে মন নিয়ে খেলা করা আসলে কী হয়। প্রচন্ড রেগে ছিল রিখিয়ার ওপর। তাইতো প্লান করে রিখিয়ার মনে নিজের জায়গা তৈরীর চেষ্টায়। কিন্তু যতদিন গেল রাগটা আস্তে আস্তে কমে আসতে শুরু করল। রাগ কখনই চিরস্থায়ী হয়না। এখন আর প্রতিশোধের সেই তীব্র ইচ্ছা জাগছেনা মনে। এটাকী রাগ পরে গেছে সেইজন্য না-কি রিখিয়ার সাথে মিশে বুঝতে পেরেছে ও সেরকম না সেইজন্য সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা। কিন্তু এটাও ঠিক যে রিখিয়ার প্রতি ওর মনে কোন অনুভূতির খোঁজ ওর মতে ও পায়নি। এখন কী করা উচিৎ ওর? সব সত্যিটা বলে দিয়ে রিখিয়ার থেকে সরে আসাটাই ভালো হয়ত। কিন্তু কীকরে বলবে?
___________
দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেল। তুর্বী ড্রয়িং সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে সেন্টি মার্কা চেহারা করে চিপস খাচ্ছিল আর রিখিয়ার কথা ভাবছিল। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ পেয়েই চমীএ উঠল তুর্বী। খুশি হয়ে চিপসের প্যাকেট ফেলে দিয়ে দৌড় দিল। দরজাটা খুলে সামনে রিখিয়াকে দেখেই জাপটে ধরল। রিখিয়া হেসে জড়িয়ে ধরল তুর্বীকে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে বলল,
“ইয়ার এতদিন থাকে কেউ? দম বন্ধ হয়ে আমি মরেই যেতাম। উফফ।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
” হয়েছে এবার একটু শ্বাস নাও। আর আমাকে ভেতরে যেতে দাও।”
তুর্বী সরে দাঁড়ালো। রিখিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে বলল,
” একয়েকদিনেই এই হাল হয়েছে? যদি পার্মানেন্টলি চলে যাই? তখন কী করবে?”
তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,
” দেখ রিখু একদম ফালতু বকবিনা।”
রিখিয়া হেসে দিল। দুজনেই বেশ অনেক্ষণ আড্ডা দিচ্ছে প্রায় এক সপ্তাহ পর দেখা হল তাই।
___________
সময় নিজের গতিতে চলছে। কয়েকটা দিনও কেটে গেছে। এরমধ্যে ওরা চারজন প্রায়ই দেখা করেছে গল্প-অাড্ডা করেছে। ঐদিনের পর থেকে এরমধ্যে তুর্বী কয়েকবারই খেয়াল করেছে যে সৌহার্দ্যর মনে ওর প্রতি কিছু আছে। ও সিরিয়াস না হলেও সৌহার্দ্য ভীষণ সিরিয়াস। প্রথমে মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিলেও এখন আর সেটা ভাবতে পারছেনা ও। যদি সেরকম হয় তাহলেতো মুসকিল। কারণ ও তো সৌহার্দ্যকে ভালো বাসেনা। আর নিজের মনের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেনা ও। আর যত দিন যাচ্ছে সৌহার্দ্য তুর্বীর জন্যে ততই পাগল হচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না। না পারছে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।
ওপরদিকে বিহান ভাবছে কীকরে রিখিয়াকে সত্যিটা বলবে। কোন অঘটন ঘটার আগেই সব বলে দেওয়া উচিত। আর রিখিয়া এতোদিনে মোটামুটি শিওর হয়ে গেছে যে ও বিহানকেই ভালোবাসে। কিন্তু কাউকে বলেনি এখনো।
আজ বিহানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ওরা রিখিয়া, বিহান, সৌহার্দ্য, তুর্বী চারজন মিলে রেস্টুরেন্টে এসছে। বিহান ট্রিট দেবে আজ ওদের। বিহানের তেমন বিশেষ কোন বন্ধু নেই তাই ওদের নিয়েই এসছে। ওখানেই সৌহার্দ্য একটা ছোট কেকের আয়োজন করেছে। খাওয়াদাওয়া করতে করতে চারজনই জমিয়ে আড্ডা দিল। দুজনেই গিফ্ট দিয়েছে কিন্তু রিখিয়া আলাদা করে একটা গোলাপের বুকেও দিয়েছে। খাওয়া শেষে সামনের মাঠেই জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হাটছিল ওরা। বিহান হাটতে হাটতে বলল,
” তোমাদের বাড়ির অবস্থা কী? সুস্থ আছেন তো আঙ্কেল এখন?”
” হ্যাঁ এখন ঠিকই আছে। একটু চিন্তায় থাকে আমাকে নিয়ে এই আরকি।”
” ওনাদের চিন্তা মুক্ত করতে একটা বিয়ে করে নিলেই পারো।”
রিখিয়া একটু হেসে বলল,
” আমি বিয়ে করে নিলে আমার বাবা-মাকে দেখার কেউ থাকবেনা।”
বিহান একটু অবাক হয়ে বলল,
” মানে? তোমার ভাইয়া আছে না?”
” ভাইয়া এখনই ঘুরে তাকায়না। আবার আমার বিয়ের পর। সংসারে আমি টাকা দিলে সংসারটাই চলবে না। কিন্তু আমি চলে গেলে যেটুকু পরে আছে সেটুকুও ভাইয়া শুষে খাবে। আর যাই হোক স্বার্থপরের মত ওনাদের ফেলে যেতে পারবনা।”
বিহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এই মেয়েটাকে কষ্ট দেবে বলে এতো কিছু করছিল ও? নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে এখন ওর। রাগের মাথায় সেদিনের নেওয়া সিদ্ধান্তটা একদমই ঠিক হয়নি। ভূল ভেবেছিল ও। রিখিয়া সেরকম মেয়ে নয় যেরকম ও ভেবেছিল। এরকম একটা মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাবলোই বা কীকরে? তাও এতো নিখুঁত প্লান করে এভাবে আঘাত করতে চেয়েছে? ছিঃ।
এদিকে হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এসছে সৌহার্দ্য তুর্বী। দুজনে টুকটাক কথা বলতে আর হাটছে। হঠাৎ করেই তুর্বী দেখতে পেল হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে একটা বাচ্চা রাস্তা পার হচ্ছে একটা গাড়ি সেদিকেই আসছে। দেখেই তুর্বীর কলিজা শুকিয়ে গেলো। দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে একটানে সরিয়ে দিলেও নিজে সরতে পারলনা ভাগ্যিস গাড়িটা ব্রেক করেছে তাই তুর্বী বেঁচে গেছে। কিন্তু গাড়িটার সাথে হালকা ধাক্কা লেগে পরে গেছে তুর্বী যার ফলে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে গেছিল এই ঘটনায়। হুস আসতেই দৌড়ে গেল তুর্বীর কাছে। গিয়ে ওর গালে হাত গালে হাত রেখে হাপানো বলল,
” তুমি ঠিক আছো।”
তুর্বী ঠিক আছে বলার আগেই সৌহার্দ্য ওকে পাগলের মত পুরোটা চেক করতে লাগল আর বিড়বিড় করে বলছে ‘কোথায় লেগেছে দেখি’। তুর্বী অবাক হয়ে দেখছে সৌহার্দ্যকে। ও একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়াতেই সৌহার্দ্য জড়িয়ে ধরল ওকে। কিছুক্ষণ জড়িয়ে রেখে ওকে ছেড়ে দুই বাহু ঝাকিয়ে বলল,
” সবসময় এমন কর কেন তুমি? নিজেকে সুপার ওমেন ভাবো? যা খুশি করতে পারো তুমি? জানো কত ঘাবড়ে গেছিলাম। আরেকটু হলে মরে যেতাম। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার কী হত হ্যাঁ? বল আমার কী হত?”
তুর্বী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। এখন ও শিওর হয়েই গেছে যে সৌহার্দ্য ওকে ভালোবাসে। আর সেটা বুঝতে পেরে ওর সব থেমে গেছে। এরকমটা আশা করেনি ও। ও তো সৌহার্দ্যকে ভালোবাসেনা। ও সৌহার্দ্যকে সেটা দিতে পারবেনা যেটা সৌহার্দ্য ওর কাছ থেকে চায়।
_____________
রাতে তুর্বী আর রিখিয়া পাশাপাশি শুয়ে আছে। দুজনের চোখেই ঘুম নেই। তুর্বী ভাবছে যে ও চিন্তাও করেনি সৌহার্দ্য ওকে ভালোবেসে ফেলবে। ও তো এইজন্যই আগে থেকে বলে দিয়েছিল এই সম্পর্কে কোন কমিটমেন্ট থাকবেনা। কিন্তু ও তো ভালোবেসে ফেলল। না, সৌহার্দ্য অনেক ভালো একটা ছেলে। ও অনেক ভালো কাউকে ডিসার্ব করে, আরও ভালোবাসা ডিসার্ব করে। তুর্বীতো ওকে ভালো বাসিনা, ভবিষ্যতেও বাসতে পারবে কি-না জানেনা। তাই সৌহার্দ্যকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবেনা। ওই সম্পর্কে থাকলে, কাছাকাছি থাকলে সৌহার্দ্যর টান আরও বারবে। তাই কালকেই ও গিয়ে এই সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে আসবে। দূরে থাকলে সৌহার্দ্য এমনিই সব ভুলে যাবে। হ্যাঁ ও এটাই করবে। এটাই করা উচিত। একটা ছেলের ইমোশন নিয়ে এভাবে খেলার অধিকার নেই ওর। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তুর্বী। রিখিয়া বলল,
” কী ভাবো?”
” কিছুনা।”
” আমি ঠিক করে নিয়েছি জানো।”
” কী?”
” আমি কালকেই বিহানকে বলে দেব যে আমি ওকে ‘ভালোবাসি’।”
তুর্বী রিখিয়ার দিকে ঘুরে শুয়ে বলল,
” ওয়াও! ফাইনালি। কিন্তু ও রাজি হবে?”
রিখিয়া লাজুক হেসে বলল,
” আমার মন বলছে হবে। এতোগুলো দিন ওর ব্যবহারগুলোতেই বোঝা গেছে ও আমায় চায়।”
” তাহলে আর কী বলে দে।”
” হুম। না বলে পারবনা। এসব বাদর টাইপ ছেলে কোনকালেই ভালো লাগতোনা আমার। কিন্তু দেখ ঐ বাদরটাকে না চাইতেও ভালোবেসে ফেললাম। একটু বেশিই ভালোবেসে ফেললাম।”
তুর্বী হেসে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। কিন্তু মন ঠিক নেই তুর্বীর। ওর সিক্স সেন্স বলছে কাল কিছু একটা হতে চলেছে। বেশ বড়সর কিছু। কিন্তু কী সেটা বুঝতে পারছেনা। যেহেতু নিজেই ক্লিয়ার না কিছু তাই রিখিয়াকেও কিছুই বলল না।
এদিকে সৌহার্দ্য আর বিহান ছাদে খোলা হাওয়ায় বসে আছে। বিহান রং সিলেক্ট করছে। আর সৌহার্দ্য ল্যাপটপ খুলে সামনে রেখে কাজ ভাবছে কিছু। বিহান রং দেখতে দেখতেই বলল,
” কী এতো ভাবছিস? কিছু ডিসকভার করে ফেলবি না-কি?”
সৌহার্দ্য ভাবুক কন্ঠে বলল,
” কাল তুর্বীকে বলে দেব আই ওয়ান্ট টু ম্যারি হার।”
বিহান অবাক হয়ে তাকাল। তারপর বলল,
” তোর মনে হয় ও মানবে? যা বিচ্ছু মেয়ে।”
” কেন মানবেনা? ও প্রেমটাকে সিরিয়াসলি নেয়না মানলাম। বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? চির কুমারী থাকবেনা নিশ্চয়ই? পাত্র হিসেবে আমি কী খুব খারাপ না-কি?”
” সেটা না। দেখ রাজি হয় কি-না। বেস্ট অফ লাক।”
সৌহার্দ্য লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” ওকে ছাড়া আমি একদম অচল রে। কখনও ভাবিনি ওরকম একটা মেয়েকে এতো ভালো বাসব। কিন্তু বেসে ফেললাম। ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি। একদম না।”
বিহান একটু হাসল কিছু বলল না। ও ভাবছে কাল ওকেও এক কাজ করতে হবে। রিখিয়াকে সব সত্যিটা বলে দিয়ে ওর কাছ থেকে সরে আসতে হবে। রাগের বসে ভুল পথ বেছে নিয়েছিল ও। কিন্তু সত্যিতো এটাই ওর মনে রিখিয়ার জন্যে কোন অনুভূতি নেই। থাকলে নিশ্চয়ই ফিল করত, কই ফিলতো করছেনা। তাই মেয়েটাকে শুধু কষ্ট দেওয়া বোকামি হবে এখনও তো দেরী হয়ে যায়নি। রিখিয়া নিশ্চয়ই এখনও এতটাও দুর্বল হয়নি বা ভালোবেসে ফেলেনি। ফেললে তো ওকে বলত বা ও বুঝতে পারত। তাই সেরকম কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই কাল রিখিয়াকে বলে দিয়ে এইসব কিছু এখানেই শেষ করে দিয়ে আসতে হবে। না হলে পরে আরও মায়ার জড়িয়ে গেলে মেয়েটা বেশি কষ্ট পাবে। তাই এখানেই সবকিছুর ইতি টেনে দেওয়া ভালো।
মানুষ অনেক বিচিত্র একটা প্রাণী। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিচিত্র যে দুইটি জিনিস আছে সেটা হলো রাগ আর আবেগ। আর এই দুটোর বশবর্তী হয়ে মানুষ যে সিদ্ধান্ত নেয় বা যা করে বেশিরভাগই ক্ষতিকর এবং ভুল হয়। যেমন ওরা চারজন করেছে। ছোট বাচ্চারা খুঁজে পাবে কি-না সেই অনিশ্চয়তা নিয়েও যেমন জলফড়িং খুঁজতে বেড় হয়। আর খুঁজে পেলেও জলফড়িংকে ধরতে পারবে কি-না সেই অনিশ্চয়তায় থেকে চেষ্টা করতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিফল হয় ভাগ্য সহায় হলে মাঝেমাঝে সফল হয়। ঠিক তেমনই ওদের চারজনের বেছে নেওয়া পথটাই ছিল অনিশ্চয়তার পথ। ঠিক জলফড়িং খোঁজার মত।আর এই একটা ভুল চারজনের জীবনকে কোথায় নিয়ে দ্বার করায় সেটাই এবার দেখার।
#চলবে…
[ আগামী পর্বের জন্যে সবাই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। 😁]#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩০
.
পার্কের নিরব পরিবেশের একটা বেঞ্চে রিখিয়া আর বিহান দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। সবসময় এই পার্কে বসেই সময় কাটাতো ওরা। দুজনেই চুপ করে আছে, দুজনেই দুজনকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কী দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছেনা। রিখিয়াতো মনে মনে লজ্জায় মরে যাচ্ছে একপ্রকার। কীকরে বলবে বিহানকে ভালোবাসার কথা? বিহান কতটা অবাক হবে? খুশি হবে? কতটা খুশি হবে? আর অন্যদিকে বিহান অপরাধবোধে ভুগছে। ও যা করেছে ভয়ংকর অন্যায় করেছে। এখন সত্যিটা কীকরে বলবে রিখিয়াকে? মেয়েটা এমনিতেই নরম মনের, সাদামাটা। মানতে পারবেতো এই সত্যি? তবে এখনও যে ও বিহানকে ভালোবেসে ফেলেনি এটাই স্বস্তির। বিহান রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কিছু বলবে বলছিলে?”
বিহানের কথায় নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো রিখিয়া। তারপর অনেকটা ইতস্তত করে বলল,
” আপনি আগে বলুন।”
বিহান চুপ আবার হয়ে গেল, রিখিয়াও চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার বিহান বলল,
” রিখিয়া! আমি তোমাকে এখন কিছু কথা বলব। জানিনা এগুলো শোনার পর তোমার কী রিঅ্যাকশন হবে বা তুমি আমার কী মনে করবে। হয়ত আমাকে খুব বাজে ছেলে ভাববে, ঘৃণাও করবে। কিন্তু এখনও যদি তোমাকে সব সত্যিটা না বলে দেই তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।”
রিখিয়া প্রথমে অবাক হলেও পরে ভাবল বিহান হয়ত ওকে প্রপোজ করবে। তাই এসব বলছে। বিহানও ওকে ভালোবেসে ফেলেছে? ভাবতেই কেমন খুশি আর লজ্জা দুটোই লাগছে ওর। তবে ভালোই হবে যদি বিহান আগে বলে দেয়। তাই মাথা নিচু করে কাঁপা কন্ঠে বলল,
” বলুন না।”
বিহান কয়েকসেকেন্ড আবার চুপ থেকে বলল,
” তোমার ঐদিনের কথা মনে আছে যেদিন তুমি আমাকে সবার সামনে চড় মেরেছিলে, অপমান করেছিলে? লকাপে পাঠিয়েছিলে?”
রিখিয়ার সেদিনের কথা মনে পরতেই অনেকটা মন খারাপ হল। লজ্জিত কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ। আসলে আমি না বুঝেই রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছিলাম। শুধু শুধুই সাফার করতে হয়েছে আপনাকে। আ’ম সরি ফর দ্যাট। কিন্তু আজ আপনি এসব কেন বলছেন?”
” কারণ আছে। রিখিয়া সেদিনের আগে তোমার সাথে দুষ্টুমি করলেও সেদিনের পর তোমার ওপর আমার ভীষণ রাগ জন্মায়। এমনিতেই আমি মেয়েদের সহ্য করতে পারতাম না। সব মেয়েকে স্বার্থপর, লোভী, ছলনাময়ী মনে হতো। সেই ঘটনার পর আমার ধারণা দৃঢ় হয়ে গেল। তোমার প্রতি তীব্র রাগ আর ঘৃণা ছিল। তুমি যখন আমায় বলেছিলে ‘আমি মেয়েদের মন নিয়ে খেলি’। সেই কথাটাই কানে বাজছিল। এতোই রাগ হচ্ছিলো যে মনে প্রতিশোধের নেশা জেগে ওঠে। মনে হচ্ছিল তোমাকে শিক্ষা দেওয়াটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”
রিখিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
” হ্যাঁ আর সেদিন থেকেই রাগের বসে আমি এই জঘন্য কাজ করা শুরু করি। বারবার তোমার সাথে দেখা হওয়া, তোমাকে হেল্প করা, তোমার সাথে ফ্রাঙ্ক হওয়া সবটা কাকতলীয় ছিলো না। দেখা হয়েছিল কারণ আমি চেয়েছি। তবে হ্যাঁ ঐ আশ্রমের বাচ্চাগুলোর সাথে যেই দুবার তুমি আমাকে দেখেছ সেটা আমার প্লানে ছিলোনা। ওটা কাকতলীয় ছিল। কিন্তু বাকী সবটাই আমার সাজানো ছিল। তোমার সাথে ইচ্ছে করেই এতো ফ্রেন্ডলী মিশেছি আমি। হ্যাঁ আমি কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ডদের সাথে মেলামেশা অফ করিনি। শুধু তোমাকে জানতে দেইনি। প্রতিনিয়ত তোমার কাছে গেছি তোমাকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্যে। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে।”
রিখিয়া জলভর্তি চোখে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। ওর সব আওয়াজ যেন গলাতেই আটকে আছে। বিহান আবারও কয়েকসেকেন্ড নিরব থেকে বলল,
” আমার উদ্দেশ্য একটাই ছিল তোমাকে আমার প্রতি দুর্বল করে দেওয়া। এতোটাই দুর্বল করে দেওয়া যখন আমি তোমাকে ছেড়ে দেব তখন যাতে তুমি প্রচন্ড কষ্ট পাও। তোমাকে প্রচন্ডরকম কষ্ট দেওয়াটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল ”
রিখিয়া ধরা গলায় বলল,
” তা সফল হয়েছে আপনার উদ্দেশ্য?”
বিহান রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠল। চোখ লাল হয়ে আছে মেয়েটার। নিচের ঠোঁটটা কাঁপছে। মেয়েটা কী খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে? বিহান কাঁপা গলায় বলল,
” না। যত সময় যেতে লাগল এমনিতেই আমার রাগটা আস্তে আস্তে কমে এলো। আর রাগটা কমে আসতেই প্রতিশোধের ইচ্ছেটাও কমতে লাগল। আর তখন বুঝতে পারলাম তুমি সেরকম মেয়ে নও যেরকমটা আমি ভেবেছিলাম। কাল সেটা আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। যদিও অনেকটাই সময় চলে গেছে তবুও আমার মনে হল খুব বেশি দেরী হওয়ার আগে আমার তোমাকে সব সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত। কারণ আমাকে ভালোবেসে ফেললে তুমি আরও বেশি কষ্ট পেতে। এমনিতেই অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আর দিতে চাইনি। কারণ আমিতো তোমাকে ভালোবাসিনা। ভালোবাসা তো দূর সেরকম কোন অনুভূতিও নেই। তাই তোমার মনে ভালোবাসা জন্মানোর আগেই সবটা বলে দিলাম।”
রিখিয়া লম্বা শ্বাস নিল। চোখের জল আটকে রাখা যে কত কষ্টের সেটা আজ বুঝতে পারছে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে কন্ঠস্বর শক্ত করে বলল,
” আপনার বলা শেষ?”
বিহান করুণ গলায় বলল,
” রিখিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও। আমি জানি আমি যেটা করেছি সেটা অন্যায়, জঘন্য অপরাধ। কিন্তু রাগের মাথায় করে ফেলেছি। তুমি আমাকে যা শাস্তি দিতে চাও দিতে পারো। আমি সবটা মাথা পেতে নেব।”
রিখিয়া কয়েকসেকেন্ড চুপ করে থেকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। তারপর বলল,
” আপনাকে কোন শাস্তি দেওয়ার অধিকার আমার নেই। খোলা মাঠে বিছিয়ে রাখা শস্য যদি কাকে খেয়ে ফেলে দোষটা কাকের না চাষীর। বোকা আমি ছিলাম। আর আপনি আমার বোকামির সুযোগ নিয়েছেন। তাই দোষটা আপনার না আমার ছিল।”
” রিখিয়া আমি..”
” আমি আসছি।”
বলে রিখিয়া উঠে উল্টো ঘুরে হাটা দিল। বিহান আটকালো না। সেই অধিকার নেই ওর। মাথা দুহাতে চেপে ধরে বসে আছে। আজ প্রথম ও ওর কোন কাজে অনুতপ্ত, ভীষণ অনুতপ্ত। কেন যেন ভেতর থেকে কান্না আসতে চাইছে ওর। কিন্তু চোখে জল আসছে না। বুকে চাপ দিচ্ছে এক অসহ্য ব্যাথা।
রিখিয়ার দ্রুতপদে হাটছে। ওর শ্বাস আটকে আসছে। বুকে ব্যাথা হচ্ছে ভীষণ। এতোক্ষণ আটকে রাখা চোখের জল এবার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরল। একপ্রকার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে রিখিয়া। সিএনজি তে উঠে মুখে হাত দিয়ে চেপে একপ্রকার আওয়াজ করেই কাঁদছে। ড্রাইভার বারবার তাকাচ্ছে ওর দিকে। রিখিয়ার খেয়াল নেই সেদিকে। সারারাস্তা কেঁদেই পার করেছে। আজ ওর মন ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। প্রথম কোন ছেলেকে ভালোবেসেছিল ও। আর সেই ওকে ঠকালো। ওর স্বপ্ন ছিল জীবনে একজনকেই ভালোবাসবে আর তাকেই সারাজীবন ভালোবেসে যাবে। কিন্তু ওর সব শেষ হয়ে গেল! সব। এতো কষ্ট এর আগে কোনদিন হয়নি। এরচেয়ে মৃত্যুও ভালো ছিল হয়ত।
____________
সৌহার্দ্যর কেবিনে বসে তুর্বী আর সৌহার্দ্য কাজ করছে কিন্তু দুজনেই অস্হির হয়ে আছে। দুজনেই দুজনকে কিছু বলার জন্যে ছটফট করছে কিন্তু কাজে মন দিতে পারছেনা কেউই। সৌহার্দ্য বারবার আড়চোখে তুর্বীকে দেখছে, তুর্বীও তাই করছে। মাঝেমাঝে চোখাচোখিও হয়ে যাচ্ছে। তখন আবার কাজে মন দিচ্ছে। এভাবে সকাল থেকে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। হাফ টাইম অফিস করে ওরা একটা কফিশপে ঢুকলো। দুজনেই চুপচাপ বসে কফি খাচ্ছে। তুর্বী ভাবল যে না এরকম করলে বলাই হবেনা। তাই নিজেকে শক্ত করে বলল,
” সৌহার্দ্য আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।”
সৌহার্দ্য চোখ তুলে তাকাল। ও জানে তুর্বী সারাদিনই উদ্ভট কিছু না কিছু বলতেই থাকে। তাই হাসি মুখে বলে,
” আজ আবার নিশ্চয়ই উদ্ভট কিছু বলে মাথা খাবে? তার আগে আমার কথা শোন। আমি সিরিয়িসলি তোমাখে বলতে চাই।”
” হ্যাঁ বলো।”
সৌহার্দ্য একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চাই। আমি চাই আমাদের সম্পর্কের একটা নাম হোক। তাও বৈধ। সো উইল ইউ ম্যারি মি?”
তুর্বী চরম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। তারপর আবাক হয়েই বলল,
” হোয়াট?”
” হ্যাঁ তুর। বিয়ে করবে আমায়?”
তুর্বী কিছুক্ষণ অনেকটা শকের মধ্যে থেকে এরপর গম্ভীর মুখে সৌহার্দ্যকে বলল,
” সৌহার্দ্য আমাদের রিলেশনটায় কোন কমিটমেন্ট ছিলোনা, আর না আমরা সিরিয়াস ছিলাম। পুরোটাই একটা এক্সপিরিয়েন্সের জন্যে। আর সেইরকম কথাই আমাদের মধ্যে হয়েছিল। রাইট?”
সৌহার্দ্য একটু টেনস হলেও বলল,
” আই নো। বাট আমিতো রিলেশনের কথা বলছিনা। বিয়ের কথা বলছি। প্রেমটা নাই করলে। কিন্তু বিয়েতো তুমি করবে তাইনা। কাউকে না কাউকে সেটা আমি হতে সমস্যা কোথায়? এমন তো না তোমার বিয়ের বয়স হয়নি বা তুমি চিরকুমারী থাকবে।”
” পাগল হয়ে গেছো তুমি?”
” এখানে পাগল হওয়ার কী আছে? আমি ছেলে হিসেবে খারাপ?”
” সৌহার্দ্য প্রশ্নটা তুমি ভালো নাকি খারাপ সেটা নয়। প্রশ্নটা হল আমি কেমন? আমি বিয়ের জন্যে রেডি কি-না। যেখানে আমি রিলেশনে কমিটমেন্টের জন্যে তৈরী না। সেখানে বিয়ে কীকরে? বিয়ে মানেই তো দুটো মানুষের সারাজীবন একসাথের থাকার কমিটমেন্ট। এন্ড আ’ম নট রেডি ফর দিস।”
তুর্বীর এসব কথা শুনে সৌহার্দ্যর মনে ধাক্কা লাগল। ও এই ভয়টাই পাচ্ছিল। তবে তুর্বী এতোকিছুর পরেও এভাবে না করে দেবে সেটা ভাবতে পারেনি। পাগল পাগল লাগছে ওর নিজেকে। ও ডেসপারেট হয়ে বলল,
” আচ্ছা ঠিকাছে। তোমার যদি বিয়ের পর কোনদিন মনে হয় আমার সাথে থাকতে পারছ না। বা আমার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কন্টিনিউ করা তোমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। দেন আমি কথা দিচ্ছি তুমি চাইলেই আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব। যখন চাইবে। জাস্ট একটা সুযোগ দাও।”
তুর্বী চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” বিয়েতো সারাজীবনের একটা সম্পর্ক সৌহার্দ্য। এটা কোন ছেলেখেলা নয়। এটা জীবন। কোন থার্ডক্লাস টাইপের মুভি, সিরিয়াল বা গল্প না যেখানে যখন ইচ্ছে হুটহাট যার তার সাথে বিয়ে হয়ে যাবে, আবার হুটহাট করেই ডিবোর্স হয়ে যাবে, আবার আরেকটা বিয়ে হবে। বিয়ের কোন ভ্যালুই থাকবেনা? আজ একজনকে ভালোবাসবে তার সাথে থাকা সম্ভব হয় নি বলে কাল হুট করেই আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলবে। এটা হয়? সবকিছু এতোই সহজ? আর আপনার মত একজন মানুষ যে সম্পর্ক, জীবন নিয়ে এতো সিরিয়াস তার মুখে এসব মানায় না।”
সৌহার্দ্য আজ সত্যিই নিজের মধ্যে নেই। ভালোবাসাকে পাওয়ার নেশায় ও ওর ব্যাক্তিত্ব থেকেই বেড়িয়ে গেছিল। সৌহার্দ্য নিজেকে সামলে বলল,
” জানি। কিন্তু কী করব বল? ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। আই ওয়ান্ট ইউ ইয়ার।”
” বাট আমি আপনাকে ভালোবাসিনি। আর পরেও বাসতে পারব কি-না তার কোন গ্যারান্টি নেই সৌহার্দ্য। আর এই ওয়ান সাইডেট লাভ দিয়ে সংসার বা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়না। আর আমি ফিল করেছি যে আপনি দুর্বল হয়ে পরেছেন। যেটা আমি ভাবতেও পারিনি। তাই আমাদের মধ্যে যেই সম্পর্কটাই আছে সেটা এখানেই শেষ করা উচিত। আপনিও ভুলতে পারবেন আমায়। দুজনের জন্যে এটাই ভালো হবে। আমার সাথে এরকম সম্পর্কে থাকলে আপনিই অতিষ্ঠ হয়ে যাবেন। ”
সৌহার্দ্য গলা কাঁপছে। নাক চোখ লাল হয়ে গেছে। ও অনেক কষ্টে বলল,
” তুর আমার জন্যে ভাবতে হবেনা। তুমি তোমার কথা বল।”
” সৌহার্দ্য আমি একেবারে অন্যরকম। সমুদ্রের ঢেউ দেখেছেন? একেকটা ঢেউ একেকরকম সাইজের হয় আর তাদের জার্নিটাও আলাদা আলাদা হয়। কখন কোন ঢেউটার সাইজ কেমন হবে কেউ জানেনা। আমার লাইফটাও এরকম। কখন কী হয়? কী করি? কী ভাবি? কেন ভাবি? কোনটার সাথে কোনটার মিল নেই। সবটাই এলোমেলো বাট আমার কাছে ইন্টারেস্টিং। আমি খুব এক্সপিরিমেন্টাল। এসব ভালোবাসা, ফিলিংস, কমিটমেন্ট করার জন্যে যেই স্হির মেন্টালিটি, লাইফস্টাইল, পয়েন্ট অফ ভিউ লাগে সেট আমার নেই। আর এই তিনটে ছাড়া সম্পর্ক বা সংসার কোনটাই টেকেনা। তাই আপনি সুখি হবেন না আমার সাথে। উল্টো ফেড আপ হয়ে যাবেন আমার ডোন্ট কেয়ার কার্যকলাপে। যেরকমটা এই কমাসের সম্পর্কে বারবার হয়েছেন। সারাজীবন কীকরে?”
সৌহার্দ্য ঠান্ডা গলায় বলল,
” তুর ডোন্ট ডিসাইড ফর মি। তুমি কী চাও সেটাই বল।”
তুর মুখে হাত দিয়ে শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
” আমি চাই আমাদের মধ্যে যাই ছিল এখানেই শেষ করতে।”
” এটাই তোমার শেষ কথা?”
” হুম।”
সৌহার্দ্য উঠে দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে গেল ওখান থেকে আসলে নিজের চোখের জলটা তুর্বীকে দেখাবেনা। আজ কতদিন পর কাঁদছে জানা নেই সৌহার্দ্যর কিন্তু অবাধ্য কান্নাগুলো আজ বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসছে খুব করে। তুর্বী ওখানেই ঠায় বসে আছে। চোখদুটো টেবিলের দিকে। অকারণেই প্রচন্ড খারাপ লাগছে ওর। মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে গেল। অনেক দূরে হারিয়ে গেল। আর পাওয়া যাবেনা। খেয়াল করল ওর চোখের কোণেও কারণ ছাড়াই সামান্য নোনাজল জমা হয়েছে।
#চলবে…