#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ40 (রহস্যের ফাস)
চৌধুরী বাড়িতে আজকে একদম রমরমা পরিবেশ।সবাই বেশ খুশ মেজাজে আছে।এতোদিন পরে সবার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে।আবার সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।কালকে রাতে আহির,মিহির,সাড়িকা,সাঈফা মোটামুটি আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসে।ওদের এমন অবস্থা দেখে বাড়ির লোকেরা কি হয়েছে জানতে চাইলে,,ওদের উপরে কিভাবে এ্যাট্যাক হয়েছে সেই কাহিনী ওরা একে একে সবাইকে খুলে বলে।তার কিছুক্ষন পর ওনারা সবাই জানতে পারেন মেঘকে কিডনাপ করা হয়েছে।দিশা আলিশার মাথা ফেটে গেছে ওরা হসপিটালে ভর্তি।অভি হিয়ানও খুব খারাপ ভাবে আহত হয়েছে।সব শুনে আহাদ খান আর আজম রহমানের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।ওনারা ওনাদের যতো সোর্স ছিলো সব মেঘকে খুজতে কাজে লাগিয়ে দিয়ে ছিলো।আহির মিহিরও ওই রকম আহত অবস্থায় আবার ওতো রাতে বেড়িয়ে পড়েছিলো মেঘকে খুজতে।মেঘের কিডনাপের কথা শুনে মোনা খান,মিড়া রহমানের শরীর আরো খারাপ হতে থাকে।
রাত প্রায় তিনটার দিকে দরজার কলিং বেলের শব্দ শুনে সাঈফা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলতেই মুখে মাক্স পড়া আর হুডি পড়া একটা ছেলের কোলে মেঘকে দেখতে পেয়ে ও ভিষন ভয় পেয়ে যায়।পরে মাক্স সরাতেই আহানকে দেখে কাদতে কাদতে হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়ে।ওর কান্নার শব্দে সবাই দৌড়ে দরজার কাছে আসে।এসেই আহানকে দেখে সবাই প্রথমে অবাক হলেও পরে সবাই ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।এটাও জিঙ্গেস করে এতোদিন কোথায় ছিলো।আহান কোনো রকম সবাইকে সত্যি মিথ্যা গুলিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে মেঘকে নিয়ে উপরে চলে যায়।
আহান যেটা বলেছে ওনারা সবাই সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছেন।উল্টে আর কোনো প্রশ্ন করেনি।কারন এক সাথে আহান আর মেঘকে একসাথে সেইফলি পেয়ে গেছেন এটাই ওনাদের কাছে অনেক।আর বেশি কিছু ওনারা জানতে চাননা।
আহান ফোন করে বাসায় ডাক্তারকে ডাকে মেঘের চেকাপ করার জন্য।ডাক্তার টুকিটাকি ট্রিটমেন্ট দিয়ে চলে যায়।সাথে একটা ঘুমের ঔষধও দিয়ে যায়।দিশা আর রিজাকেও সকালে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়।ওদের ক্ষত টা বেশ গভীরই ছিলো তবে তেমন বেশি কিছু হয়নি ঔষধ খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
____________________________________________
ছাদের এক পাশে পাতানো চেয়ারের উপর বসে আছে আহান।ওর সামনেই কাচুমাচু করে বসে আছে মিহির,আহির, হিয়ান,অভি।আর ওদের পাশের চেয়ার গুলোতে বসে আছে সাড়িকা,সাইফা, দিশা,আলিশা, মেঘ,রিজা।আহান কিছুক্ষন অভি,হিয়ান,আহির,মিহিরের দিকে বিরক্তি ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে বিদ্রুপের স্বরে বললো
“মাএ কয়েকটা দিন ছিলাম না,এর মধ্যেই তোদের একেক জনের কি অবস্থা হয়েছে!একজনও অক্ষত নেই,,সবার শরীরে কাটা ছেড়ার দাগ।যদি আর মাএ কিছু দিন দেরি করতাম তাহলে তো হসপিটাল,বিজনেস,পার্টি অফিস ধুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলতি তোরা।হুহ,, যারা নিজেদের সেইফ করতে পারে না,তারা আবার ব্যাবসা আর ফ্যামিলির লোক সামলাবে কি করে।”
আহাননের কথা শেষ হতেই আহির কপাল কুচকে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বিরক্তির স্বরে বললো
“ব্রো প্লিজ এইবার একটু চুপ করো।যখন থেকে এসেছো তখন থেকে শুধু আমাদের একটার পর একটা কথা শুনিয়েই যাচ্ছো।আর আমরা চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।আরে আমরা কিভাবে বুঝবো আমাদের নিজেদের সিকিউরিটি গার্ডরাই আমাদের উপর হামলা করবে।”
আহান দাতে দাত চেপে বললো
“তোদের নতুন করে সিকিউরিটি গার্ড কে রাখতে বলেছিলো?আর যখন রেখেইছিলি তখন ওদের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো চেক করিসনী কেনো?”
মিহির বললো
“ইয়ার ব্রো আমরা রাখতে চাইনি অভি ব্রোই তো জোড় করে রাখতে বললো।আর তখন আমাদের ওদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার মতো অবস্থা ছিলো না।সব দিক সামলাতে গিয়ে রিতীমতো হিমশিম খাচ্ছিলাম।”
আহান এবার রেগে অভির দিকে তাকিয়ে ওকে ধমক দিয়ে বললো
“ওই তুই আমাকে কেনো বললি না তোরা নতুন করে সিকিউরিটি গার্ড রেখেছিস?তুই তো আমাকে একবার জিঙ্গেস করতে পারতি সিকিউরিটি গার্ড আদৌ রাখবি কিনা।তোকে তো বলে ছিলাম এখানে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনার আপডেট আমার চাই।তাহলে কেনো একবার জিঙ্গেস করে নিলি না।”
মেঘ,আলিশা,দিশা,সাড়িকা, সাঈফা,রিজা ওরা এতোক্ষন একপাশে বসে চুপচাপ মিহিরদের কথা শুনছিলো।আহানের কথা শুনে ওরা সবাই ভীষন অবাক হলো।সবাই অবাক চোখে একবার অভির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে।
অভি আহানের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো
“ইয়ার এতো প্রভলেমের মধ্যে ছিলাম তাই তোকে বলতে ভুলে গেছি।”
অভির কথা শেষ হতেই আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিশা দাতে দাত চেপে অভিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম মানে?তারমানে আপনি জানতেন আহান ভাইয়া বেচে আছে?ভাইয়া বেচে আছে শুনেও এতোদিন ওনাকে খোজার নাটক করে গেছেন।এতো গুলো মানুষ ভাইয়ার জন্য টেনশনে ছিলো আর আপনি সবটা জেনেও চুপচাপ ছিলেন,কাউকে কিচ্ছু বলেন নি।এতো সুন্দর অভিনয়ের জন্য আপনার মুখের উপর তো এ্যাওয়ার্ড ছুড়ে মারা উচিৎ।আমার কাছে এই মুহূর্তে এ্যাওয়ার্ড টা নেই নাহলে আমিই ছুড়ে মারতাম।সার্থপর,মিথ্যাবাদী, বাটপার,মিচকে শয়তান লোক একটা,,আপনাকে তো আমি পুলিশে দিবো।”
দিশার কথা শুনে সবাই হা করে দিশার দিকে আছে।অভি রেগে দিশাকে ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে শাটআপ!একটা থাপ্পর দিয়ে তোমার গাল লাল করে দিবো।বাচাল,ঝগরুটে মেয়ে একটা।আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে আমার বাচানোই ঠিক হইনি।উল্টে তোমার মতো একটা শাকচুন্নিকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া উচিৎ ছিলো তাহলে অন্তত পৃথীবি থেকে একটা বাচাল কমে যেতো।”
অভির কথা শেষ হতেই হিয়ান রাগি গলায় বললো
“এই তোরা দুজন চুপ করবি?এতো বড় হয়ে গেছিস অথচ বাচ্চাদের মতো পাচ মিনিট পরপর ঝগরা শুরু করিস!”
হিয়ানের কথা শেষ হতেই দিশা আর অভি একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজন দূজনকে ভেংচি কেটে চুপ হয়ে গেলো।হিয়ান এবার সোজা হয়ে বসে আহানের দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো
“তুই ওইদিন কিভাবে বেচে গেলি আহান?আর লাশটাই বা কার ছিলো?বেচেই যখন ছিলি এতোদিন কোথায় ছিলি?আমাদের সামনে আসিস নি কেনো?আর তুই যে বেচে আছিস সেটা অভি কবে থেকে জানে?জানেই যখন আমাদের বললো না কেনো?”
হিয়ানের কথার মাঝেই আহান ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“উফফ এতো প্রশ্ন একসাথে কেউ করে?আর কিছু জিঙ্গেস করতে হবে না,,চুপচাপ বস।শুরু থেকে সবটা বলছি।”
আহানের কথা শুনে সবাই সিরিয়াস মুখ করে আহানের দিকে তাকালো।আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“ওইদিন যখন গাড়িটা খাদ থেকে পড়ছিলো,তখন গাড়িটা নিচে পড়ার আগেই আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে ছিলাম।আমার থেকে যাষ্ট কয়েক হাত দূরে গাড়িটা ব্লাষ্ট করেছে।আল্লাহর রহমতে একটুর জন্য বেচে গেছি।”
এটুকু বলতেই অভি আহানকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“বাকিটা আমি বলছি।”
সবাই উৎসুক চোখে অভির দিকে তাকালো।অভি গম্ভীর কন্ঠে বললো
“সেদিন ফাংসনের পরে আমি সাড়িকা সাঈফাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে,,মিস দিশাকে ওনাদের বাড়িতে দিয়ে এসে ছিলাম।তাই অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো।আর দিশাদের বাসা থেকে আমাদের বাসা অনেকটা দূরে,বাড়িতে যেতে গেলে অনেক রাত হয়ে যেতো।এইজন্য আমি আমার ফ্লাটে চলে গিয়েছিলাম।ওখানে গিয়ে ঘুম আসছিলো না তাই ফোন স্ক্রল করছিলাম,তখনই আহানের ভয়েজ মেসেজটা পাই আর আমি সাথে সাথে বেড়িয়ে পড়ি।তারপর আহানের ফোনের লোকেশন ট্রেস করে আমি আমার গার্ডদের জানিয়ে দেই।ওরা আসার আগেই আমি সেই খাদের কাছে পৌছে যাই গিয়ে দেখি ব্লাক স্নেক গ্যাংয়ের লোকেরা গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ওদের পোশাক দেখেই আমি ওদের চিনে ফেলেছিলাম।যেহেতু আমি একা ছিলাম তাই আমি আর ওদের সামনে যাইনি আড়ালে দাড়িয়ে ছিলাম।ওরা কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে যখন দিখলো আহানের গাড়িটা ব্লাষ্ট করেছে, তখন ওরা ভেবে নিয়েছিলো আহান আর মেঘ মারা গেছে।তাই ওরা ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিতেই তোরাও এসে ওদের পিছু নিস।তখন তোদের উপর খুব রাগ হয়েছিলো আমার কোথায় আহান মেঘকে খুজবি তা না করে ওদের ধরতে চলে গিয়েছিলি।তোরা সবাই চলে যেতেই আমার গার্ডরাও এসে হাজির হয় ওখানে,,আমরা সবাই কোমরে দড়ি বেধে খাদে নেমে গিয়ে দেখি গাড়িটা পুড়ছে আর আগুনের আলোতে পুরো জায়গাটা মোটামুটি আলোকিত হয়ে ছিলো তাই আমাদের আহানকে খুজে পেতেও তেমন একটা সমস্যা হয়নি।আমরা যখন ওকে পেয়ে ছিলাম তখনও ওর হুস ছিলো।ও বারবার শুধু অসফুট স্বরে মেঘের নাম বলছিলো।তাই আমরা ভেবে ছিলাম মেঘ হয়তো ওখানেই আশে পাশে কোথাও আছে।মেঘকে খুজতে খুজতে হঠাত আমার মাথায় একটা প্লান চলে আসে।আমি আমার কিছু গার্ডদের আহানকে নিয়ে আমাদের ফার্ম হাউজে পাঠিয়ে দেই।আর বাকিদের হসপিটালের মর্গে পাঠিয়ে ছিলাম একটা লাশ নিয়ে আসতে।ওরা সবাই যাওয়ার পর আমি মেঘকে নিচে না পেয়ে উপরে চলে আসি।তারপর উপরে এসে অনেক খুজে ওকে পেয়েছিলাম।ভেবে ছিলাম ওকেও নিয়ে আমাদের ফার্ম হাউজে চলে যাবো।আর সবার সামনে ওদের দুজনকেই মৃত ঘোষনা করে দিবো।কিন্তু তোরা এসে আমার প্লানে এক বালতী পানি ঢেলে দিলি।আমি মেঘকে নিয়ে গাড়িতেই উঠতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তোরা তিনজন ওখানে এসে পড়লি।”
একসাথে এতো গুলো কথা বলে অভি একটা লম্বা শ্বাস ফেললো।আলিশা অভিকে উদ্দ্যেশ্য করে ব্রু কুচকে বললো
“বাট তোর এই সব ফালতু ড্রামা করার কি দরকার ছিলো?ওদের মেরে ফেলার নাটক করে তোর কি লাভ হলো?আর হিয়ানরা তো লাশটা রাখার আগেই ওখানে এসে পড়েছিলো তো তোরা লাশটা কখন রাখলি?”
অভি একটা ধমক দিয়ে বললো
“কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকাস কেনো?বলছি তো আস্তে আস্তে সবকিছু।”
অভির কথা শুনে আলিশা মুখ গোমরা করে বসে রইলো।অভি বললো
“আমাদের কারোরই শএুর অভাব নেই।বিশেষ করে আহানের।আমরা লাইফে ফ্রেন্ড বানাতে পেরেছি কিনা জানিনা তবে আনলিমিটেড শএু ঠিকই বানিয়েছি।কলেজ লাইফ থেকে ঝগরা মারামারি করেছি,,তারপর লন্ডনের ভার্ষিটিতে ওখানকার ষ্টুডেন্টদের সাথে মারামারি ,,তারপর বিজনেস ম্যানদের সাথে ডিল নিয়ে ঝামেলা,,মাফিয়াদের সাথে ঝামেলা সব মিলিয়ে কতো যে শএু আছে তা আমরা নিজেরাও জানিনা।আর প্রায় সবাই সব সময় আহানকে মারার জন্য এ্যাট্যাক করে।ওরা যদি কোনো ভাবে জানতে পারতো আহান বেচে আছে তবে অসুস্থ তাহলে সবাই মিলে এক সাথে আহানকে এ্যাট্যাক করতো।তাই আমি কোনো রিক্স নিতে চাইনি।আহান আর মেঘকে সেইফ জায়গায় রাখতে চেয়ে ছিলাম যাতে কেউ ওদের আশে পাশেও না যেতে পারে।বাকি রইলো লাশ গাড়িতে কখন রাখা হয়েছিলো সেটা?ওটা রাখা হয়েছিলো হিয়ানরা যখন মেঘকে নিয়ে কান্নাকাটি করছিলো তখন আমার লোকেরা চুপিচুপি নিচে নেমে লাশটা গাড়িতে রেখে চলে আসছিলো।ওরা একটা মেয়ের লাশও নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আমি মেসেজ দিয়ে রাখতে বারন করে দিয়ে ছিলাম।”
অভির কথা শেষ হতেই সবাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।হিয়ান অভিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তারপর কি হয়েছিলো।”
আহান বললো
“আমার হুস আসতেই আমি অভির থেকে সবটা জানতে পারি।তবে আমার জ্ঞান ফিরলেও আমি চলার মতো অবস্থায় একদমই ছিলাম না।বেডে শুয়ে শুয়ে প্রত্যেকদিন মেঘের পাগলামি গুলো আমি দেখেছি।প্রতিটা দিন ও কতোটা যন্ত্রনা ভোগ করেছে সবটা আমি নিজের চোখে দেখেছি,কিন্তু কিছু করতে পারিনি। অভিকে দিয়ে আগেই আমি মেঘের ক্যাবিনে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে ছিলাম ওকে দেখার জন্য।ওর এমন অবস্থা দেখে আমার মাথার ঠিক ছেলো না।তাই আমি আমার কিছু বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে সিয়ামের গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলাম।আর তার কয়েক দিনের মধ্যে আমি মোটামুটি সুস্থও হয়ে গিয়েছিলাম।ভেবে ছিলাম খুব তাড়াতাড়ি সবার সামনে চলে আসবো কিন্তু তার আগেই এইসব ,,,,,,”
এই টুকু বলে আহান থেমে গেলো।দিশা এতোক্ষন আহানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।হঠাৎ ওর কিছু একটা মনে পড়তেই অভিকে উদ্দ্যেশ্য করে সন্দীহান কন্ঠে বললো
“আচ্ছা আপনি কিভাবে জানলেন ওই লোক গুলোকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে?আর যখন জানতেনই তখন আগে বলেননি কেনো?একদম যখন এ্যাট্যাক টা করলো তখনই কেনো বললেন?বাই এনি চান্স আপনিই আবার এই সব কিছুর মাষ্টার মাইন্ড নন তো?হতেও তো পারে আপনিই আমাদের সবাইকে মারতে চেয়েছেন!আর এই সব কিছু আপনার প্লান।”
দিশার কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো।অভি রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো
“আহান এই টাকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাহ।নাহলে আজকে আমি ওকে সত্যি সত্যি ছাদ থেকে ফেলে মেরে দিবো।”
অভির কথা শুনে আবার সবাই হেসে দিলো।হিয়ান একটু সিরিয়াস হওয়ার ভান করে দিশা উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিস ইজ ভেরি ব্যাড দিশা!তুমি এই ভাবে অভিকে মিথ্যা অপবাদ দিতে পারোনা।তুমি জানো? আমাদের বেচারা অভি হসপিটালে গিয়েই সবার প্রথমে ডাক্তারদের কাছে জিঙ্গেস করেছে,, দিশা এখন কেমন আছে?একটা বারও আলিশার কথা জিঙ্গেস করেনি!একটা বার চিন্তা করো অভি তোমাকে নিয়ে কতোটা ভাবে!আর তুমি শেষ পযর্ন্ত ওকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো?”
হিয়ান কথা শুনে সবাই অভির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। সত্যিটা বলে দেওয়ায় অভি সবার সামনে অনেকটা লজ্জায় পড়ে গেলো।দিশা বিদ্রুপের স্বরে হিয়ান কে উদ্ধ্যেশ্য করে বললো
“আরে ধুর ভাইয়া,,উনি ডাক্তারের কাছে আমার কথা এই জন্য জিঙ্গেস করে ছিলেন কারন আমি মারা গেছি কিনা সেটা উনি কনফার্ম হতে চেয়ে ছিলেন।”
দিশার কথা শুনে কেনো যেনো অভির খুব রাগ উঠে গেলো।ও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো
“তোরা কথা বল আমি আসছি।আমার একটু কাজ আছ।”
অভির কথা শুনে সবাই বুঝতে অভি রেগে গেছে তাই সবাই মিলে অভিকে সরি বলে আবার আবারও টেনে টুনে বসালো।
আহান আবারও বলা শুরু করলো
“ওই লোক গুলোকে যে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিলো সেটা আমি অভিকে বলেছি।ও আগে থেকে কিছুই জানতো না।ইনফ্যাক্ট আমিও কিছু জানতাম না।ব্লাক স্নেক গ্যাংয়ের লিডারের এসিটেন্ট কবির আমাকে বলেছিলো খবরটা।কবির নিজেও আগে থেকে কিছুই জানতো না।হামলা হওয়ার কিছুক্ষন আগেই সবটা জানতে পেরেছে।আর জানার সাথে সাথে আমাকে বলে দিয়েছে।কবির আমরই লোক।ও অনেক আগে থেকেই সিয়ামের সব খবর আমাকে দিতো। তবে ও সিয়ামের গ্যাংয়ের লোক না,, সিয়ামের অন্য একটা অফিসে জব করে। তাই ও সিয়ামের প্লানের তেমন কিছুই আগে থেকে জানতে পারে না।কবির আমাকে ফোন করার সাথে সাথে আমি মিহির আর অভিকে ফোন করে সবটা জানাই তবে ততোক্ষনে অনেকটা দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো, অভি মিহির ওদের উপরে অলরেডি এ্যাটাক করা হয়েছিলো।ওদের প্লান ছিলো একসাথে সবাইকে এ্যাট্যাক করে আটকে দেওয়া যাতে কেউ মেঘকে বাচাতে না পারে।আর ওরা ওদের কাজে সফলও হয়েছিলো।আমি অভি মিহিরকে সবটা জানিয়ে ল্যাপটপ টা অন করে সিসি ক্যামেরার কানেক্ট দিতেই কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চোখের সামনে ওরা দিশা,আলিশার উপরে এ্যাট্যাক করে মেঘকে নিয়ে চলে যায়।”
আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ ভ্রু কুচকে আহান কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনি আমাকে কিভাবে খুজে পেলেন?আর কিভাবে জানলেন আমি ওই রোডেই আছি?”
আহান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
“আমরা তোমাকে বাচাতে ওই গোডাউনের কাছাকাছি চলেই এসে ছিলাম।তখনই কবির জানায় তুমি পালিয়েছো ওখান থেকে।তাই আমি ওখানের আশে পাশের সব রাস্তা আমার লোক দিয়ে ব্লক করে দিয়ে ছিলাম।তাই তুমি যে রোড দিয়েই যেতে আমাদের লোকজন তোমাকে চিনে ফেলতো।”
মেঘ ছোট করে বললো
“ওহ আচ্ছা।”
আহান মুচকি হেসে বললো
“জ্বি ম্যাম,,,,”
দিশা বাচ্চাদের মতো হাত উচু করে বললো
“আহান ভাইয়া আমার একটা লাষ্ট প্রশ্ন আছে?জিঙ্গেস করি?”
অভি মুখ বাকিয়ে বললো
“যদি বলি একদম কোনো প্রশ্ন করবে না,,তাহলে তুমি শুনবে?”
দিশা ভেংচি কেটে বললো
“একদমই না।পারমিশন দিলেও করবো আর না দিলেও করবো।”
“তাহলে আর চুপচাপ বষে না থেকে প্রশ্নটা করে আমাদের উদ্ধার করুন।”
কথাটা বলেই অভি মুখ বাকিয়ে বসে রইলো।দিশা সেদিকে পাএা না দিয়ে অনেকটা চিন্তিত ভঙ্গিতে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আচ্ছা ডি.এন.এ. রিপোর্ট টা আপনার সাথে কিভাবে মিলে গেলো ভাইয়া?ডাক্তারই বা কেনো বললো ওটা আপনার ডেডবডি?”
আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভি চেয়ার থেকে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“এই মেয়ে তোমার মাথায় কি গোবর ঢুকানো?কমন সেন্স বলতে কোনো জিনিস নেই?আরে আমরা এতো কিছুই যখন করতে পেরেছি তখন একটা সামান্য রিপোর্ট চেইঞ্জ করা কি এমন ব্যাপ্যার!”
দিশা অভির দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“আমি আপনার কাছে জিঙ্গেস করেছি?আহান ভাইয়ার কাছে জিঙ্গেস করেছি।আপনাকে অ্যান্সার দিতে কে বলেছে?অন্যের কথার মধ্যে বাম হাত না ঢুকালে পেটের ভাত হজম হয় না তাইনা?”
ওদের ঝগরা দেখে আলিশা বিরক্তি নিয়ে বললো
“তোদের এই ক্যাট ফাইট দয়া করে বন্ধ করবি প্লিজ।”
বলেই দিশা আহানের দিকে তাকিয়ে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আচ্ছা ভাইয়া সিয়াম নামের ছেলেটা এখন কোথায় আছে?”
আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“আপাততো জেলে আছে।বাট খুব তাড়াতাড়ি নরকে থাকবে।”
দিশা অবাক হয়ে বললো
“মানে,,,,,,,?”
“তোমাকে এতো মানে বুঝতে হবে না।”
বলেই হিয়ান আলিশার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।
#চলবে,,,,,
বিঃদ্রঃসামনের মাসের এক তারিখ থেকে পরীক্ষা,তাই নেক্সট পার্ট কবে দিবো বলতে পারছি না।পড়া বাদ দিয়ে গল্প লিখলে পিঠের উপর তাল পড়বে।তবে পরীক্ষার মাঝখানে যে গ্যাপ আছে তখন দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।