জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ৫-৮

0
218

#জল-ফড়িঙের খোঁজে
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫+6+7+8
.
রিখিয়া ব্যাংকে বসে লোকেদের টাকা দেওয়ার কাজ করছে। আজ ব্যাংকে তেমন ভীর নেই। রিখিয়া মাথায় এখন অন্যচিন্তা ঘুরছে। বাড়িতে তো প্রয়োজন মত টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শুধু তুর্বীর বেতন দিয়ে ফ্লাট ভাড়া , বাজার, যাতায়াত ভাড়া আরও বাড়তি সব খরচ চালাতে হবে। সেটুকু হলেও টেনেটুনে চালিয়ে নেওয়া যেত, কিন্তু তুর্বীর চেইন টাও তো ছাড়াতে হবে। তুর্বীর মায়ের শেষ স্মৃতি ঐ চেইনটা। অথচ মেয়েটা নিঃসংকোচে চেইনটা খুলে দিয়ে দিয়েছে। এসব ভেবে টেনশনে রিখিয়ার মাথাটা ফেটে গেলেও তুর্বী দিব্বি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। চিন্তা ভাবনা বলেও যে কিছু আছে সেটা ঐ মেয়েটা হয়ত জানেই না। কিন্তু ওই বা কী করবে? জীবনটা এত জটিল কেন? মধ্যবিত্তদের জীবন সবচেয়ে কঠিন হয়। জীবন সংগ্রাম ঠিক কী সেটা প্রতিমুহূর্তে টের পায় তারা। ছোট্ট শ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দিল রিখিয়া। এসব ভেবে কাজে গাফিলতি করলে চলবেনা, এই চাকরিটাই তো ওর একমাত্র সম্বল। এটা চাকরিটা চলে গেলে ওর বাবা মার কী হবে? সংসার কীভাবে চলবে?

বিহানও ওর নতুন পেন্টিং প্রেসেন্ট করে পুরষ্কার হিসেবে টাকার চেক পেয়েছে। সেই টাকা টাই ক্যাশ করতে ঐ ব্যাংকেই এসছে। ব্যাংকে এসে রিখিয়াকে দেখেই থমকে দাঁড়াল ও। এটা তো সেই লিফটের মেয়েটা? মেয়েটা এই ব্যাংকেই কাজ করে? মনে মনে কথাগুলো আওরে নিল বিহান। হঠাৎ করেই ঠোঁটে ওর সেই বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল ওর মাথায়। মেয়েটা একটু বেশিই সাদামাটা, নম্র, ভদ্র টাইপ। আর এরকম মেয়েদের একটু বিরক্ত করাতে অদ্ভুত মজা পাওয়া যায়। শান্ত শিষ্ঠ মেয়েটা যখন চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে, বা একটু রাগ নিয়ে তাকাবে সেই মুখটা খুব বেশিই উপভোগ করার মত হবে। তাই কিছু একটা ভেবে ওর কাছে থাকা চেকবুকটা থেকে একটা ব্লাঙ্ক চেক ছিড়ে নিয়ে
এগিয়ে গেল। কাউন্টারে গিয়ে একটু কাশি দিতেই রিখিয়া মাথা তুলে তাকাল। বিহান কে দেখে চিনতে একটুও দেরী হয়নি ওর। সেদিন লিফটের কথা মনে পরতেই মেজাজ ভীষণ খারাপ হল। ও বিরক্তি নিয়ে বলল,

” জি?”

বিহান মুখে সেই হাসি রেখেই বলল,

” তুলতে এসছি।”

রিখিয়া একটু হকচকিয়ে গেল। তুলতে এসছে মানে কী? কী মতলব এই ছেলের? ও ইতস্তত করে বলল,

” সরি?”

” টাকা। টাকা তুলতে এসছিলাম।”

বলে মেকি একটা হাসি দিল বিহান। এতক্ষণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল রিখিয়া। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” জি অপনার একাউন্ট থেকে টাকা তুলবেন?”

বিহান সঙ্গেসঙ্গেই ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

” নাহ!”

” তাহলে?”

” অন্যের একাউন্ট থেকে টাকা নেব।”

রিখিয়া একটু অবাক হয়ে তাকাল বিহানের দিকে। এই লোকটা কী বলছে আর কী করতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। অন্যের একাউন্ট থেকে টাকা তুলবে মানে কী? রিখিয়া এবার একটু বিরক্ত হয়েই বলল,

” মানে?”

” মানে হল অন্যকেউ আমায় একটা চেক দিয়েছে আমি সেই চেক দিয়ে টাকা তুলব। এটুকু জানেন না আর ব্যাংকে চাকরি করেন?”

এবার একটু রেগে গেল রিখিয়া। লোকটা ইচ্ছে করে ওকে কনফিউসড করছে সেটা নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই ওর মনে। যাই হোক এখন এই লোককে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারলেই হয়। তাই রিখিয়া নিজেকে শান্ত করে বলল,

” চেক দিন?”

বিহান এবার সেই ব্লাংক চেকটা রিখিয়ার দিকে এগিয়ে দিল। রিখিয়ি চেকটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে ব্লাংক চেক দেখে এবার সত্যিই প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হলো। এসব ফাজলামির মানে কী? ওকে দেখে কী সার্কাসের জোকার মনে হচ্ছে লোকটার? তখন থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” এটা ব্লাংক চেক।”

বিহান এমন একটা ভাব করল যেন ব্যাপারটায় বেশ অবাক হয়েছে সে। যেন এরকমটা হওয়ার কথাই ছিল না, একদমই না। তাই অবাক হয়ে বলল,

” কী বলছেন কী? ওয়েট! ওয়েট! ও হ্যাঁঅ‍্যাঅ‍্যা। আমি ভুল চেক দিয়ে ফেলেছি আপনাকে। দাঁড়ান আসলটা দিচ্ছি। ”

বলে বিহান চেকটা নিয়ে নিল। রিখিয়া আর কী বলবে? এটুকু সময়েই বিহান ওর মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। ও বোকার মত তাকিয়ে আছে। বিহান এবার ঐ চেকটা বের করে রিখিয়ার হাতে দিল। রিখিয়া চেকটা নিয়ে সব প্রসেসিং কম্প্লিট করে ক্যাশ বের করে বিহানের দিকে দিল। ভীর নেই তাই ওখানে দাঁড়িয়েই টাকা গুনতে শুরু করল বিহান। এবার বিহানের দিকে একটু ভালো করে তাকাল রিখিয়া। একটা নীল ফুলহাতা টিশার্ট পরেছে, টিশার্ট টা বিহানের সুঠাম দেহে লেগে আছে ; কালো জিন্স, স্পাইক করে রাখা চুলগুলো কিউট ইনোসেন্ট টাইপ চেহারাটার সাথে একটু বেশিই মানানসই। এত ইনোসেন্ট, কিউট টাইপ চেহারার একটা ছেলের পেটে পেটে এতো শয়তানি কীকরে থাকে বুঝতে পারছেনা রিখিয়া। এসব ভাবতে ভাবতেই বিহান টাকা গোনা শেষ করে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” থ্যাংক ইউ।”

রিখিয়া কিছু না বলে চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

” যত্তসব, ফাল্তু লোকজন।”

বিড়বিড় করে বললেও বিহান রিখিয়ার কথা স্পষ্টই শুনতে পেল। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকাতেই ও মুচকি হেসে চোখ মেরে দিল। রিখিয়া তো হা করে তাকিয়ে আছে। বিহান শিশ বাজাতে বাজাতে বেড়িয়ে গেল। রিখিয়ার পাশে একটু দূরে বসা ওর কলিগ ঋতু বলল,

” কে রে? তোর পরিচিত কেউ নাকি?”

রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,

” আরে না। কোথা থেকে চলে আসে এসব।”

” আজকে স্যারের বার্থ ডে আমাদের ট্রিট দেবে অফির টাইমের পর। যাবিনা?”

” যেতে তো হবেই।”

“হুম।”

বলে ঋতু কাছে মনোযোগ দিল। ধূর! আজকে ব্যাংকে ভীড় থাকলে কত ভালো হতো, এই উদ্ভট লোকটা এতক্ষণ ওকে এত জ্বালাতে পারল। কী আর করবে? তাই এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে আবার কাজে মন দিল রিখিয়া। এসব উদ্ভট, ফালতু, অপ্রয়োজনীয় মানুষের কথা ভেবে নিজের কাজের ক্ষতি করার কোন মানেই হয়না।

বিহান টাকা নিয়ে ঐ বিল্ডিং এর ওপরের ফ্লোরেরই গেল। ওখানেই আপাতত কাজ আছে ওর। আজ ওখানে বসেই নিজের একটা পেন্টিং শেষ করবে ওও। এরপর আবার ওর আরেকজন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে হবে। তারপর রাতে স‍ৌহার্দ্যের সাথে লং ড্রাইভে যাবে। এটাই ওর সারাদিনের প্লান। বিয়ার খেতে খেতে ড্রাইভ করার মজাই আলাদা। যদিও একপর্যায়ে সৌহার্দ্য ওকে আর ড্রাইভ করতে দেয়না। যখন বিহানের ভালোভাবে নেশা ধরে যায় তখন সৌহার্দ্য জোর করেই ওকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করে। ছেলেটা একটু বেশিই গোছানো, ডিসিপ্লিনড। এসব কথা ভেবেই হালকা হাসতে হাসতে কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ও।

সন্ধ্যা ছয়টায় রিখিয়া আর ওর সব কলিগরা অফিস থেকে বেড়োলো ব্যাংক থেকে। সকলেই রেস্টুরেন্টে যাবে। ব্যাংক ম্যানেজারের আজ জন্মদিন তাই সে আজ সবাইকে খাওয়াবে। সবাই মিলে প্রায় আধঘন্টার পথ অতিক্রম করে ওরা রেস্টুরেন্টে পৌছালো। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে বেশ অবাক হল রিখিয়া। অনেক বড় রেস্টুরেন্ট এটা। এরকম রেস্টুরেন্টে সচরাচর আসার মতো ক্ষমতা হয়না রিখিয়ার। সবাইকেই বুক করা টেবিলগুলোতে বসানো হল। রিখিয়াও চুপচাপ বসে আছে আর আশেপাশে সবকিছু দেখছে। হঠাৎ ওর চোখ পরল দূরের কোণের একটা টেবিলে, সেখানে তাকিয়ে রিখিয়ার চোখে মুখে আবার বিরক্তি ফুটে উঠল। কারণ কর্ণারে বিহান বসে আছে। না, সে একা বসে নেই। সাথে একটা মেয়েও বসে আছে। বিহান আর মেয়েটা খুব ক্লোজ হয়ে বসে আছে। কথার তালে তালে বিহান বারবার মেয়েটার সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে, মেয়েটাও কখনও বিহানের গাল টেনে দিচ্ছে, কখনও গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আবার কখনও নাক টেনে দিচ্ছে। তারওপর এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না যাকে ও লিফট এ দেখেছিল। রিখিয়া মনে মনে বলল, ‘ঠিকই ভেবেছিলাম প্রথম দিন। এই ছেলের ক্যারেক্টার একদম ঢিলা। আজকে এই মেয়ে, তো কালকে আরেক মেয়ে। প্লে-বয় কোথাকার।’ এসব ভাবতে ভাবতেই খাবার চলে এল। খাবারগুলো দেখে রিখিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। ও এখানে এত ভালো ভালো খাবার খাবে তুর্বীকে ছাড়া? এখন এই দামী সুস্বাদু খাবারগুলোও ওর কাছে স্বাদহীন মনে হবে। ইশ! যদি তুর্বীকে সাথে এনে একসাথে খেতে পারত। কিন্তু কী আর করবে? চাইলেই তো আর সবকিছু হয়না। তাই একপ্রকার জোর করেই সবার সাথে কোনরকমে খাওয়া শেষ করল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রিখিয়ারা উঠতে যাবে তখনই এনাউস করা হল এখানে পার্টি হবে। বড় এক কম্পানি বুক করে নিয়েছে কয়েক ঘন্টার জন্যে। সবাই যাতে থেকে যায়। কিন্তু এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে তাই রিখিয়া আর থাকবে না। ও যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই ঋতু এসে বলল,

” ইয়ার যাস না প্লিজ। দেখ পার্টিতো বেশিক্ষণ চলবে না। ঘন্টাখানেক থাক। এরপর আমরা দুজনে একসাথেই বেড়োবো।'”

রিখিয়া চিন্তিত মুখে একবার সময় দেখে নিয়ে বলল,

” কিন্তু..”

” প্লিজ না করিস না। শোন আমার কথাটা। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!”

ঋতুর অনেক জোরাজুরিতে আর না করতে পারল না রিখিয়া। ঘন্টাখানেকের জন্যে থেকে গেলে কী বা হবে? কিছুক্ষণ পরেই মিউসিক এর তালে সবাই নাচতে শুরু করল। সবাই নাচলেও রিখিয়া এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ আবারও বিহানের ওপরেই পরল। বিহান ঐ মেয়েটার সাথে নাচ করছে। যেটা ওখানকার সবার কাছে নরমাল হলেও রিখিয়ার কাছে খুবই অস্বস্তিকর। ওর মতে এগুলো দেখাও পাপ। শুধু পাপ না মহাপাপ। তাই ও চোখ মুখ কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর এদিক ওদিক হাটছে।

নাচতে নাচতেই বিহানের চোখ রিখিয়ার দিকে গিয়ে পরল। সবাই নিজের মত নাচ-গান করে মজা করছে তার মধ্যে কীভাবে বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ এদিক ওদিক হেটে যাচ্ছে। এটা হয়ত এরকম ভালো মেয়েদের পক্ষেই সম্ভব। হ্যাঁ মেয়েটা ভালো, একটু বেশিই ভালো। সেটা বিহান জানে আর মানেও। কিন্তু ও তো ভালো না, একদমই ভালো না। লাগামহীন, লক্ষহীন, নিকৃষ্ট, খারাপ, নষ্ট হয়ে যাওয়া একটা ছেলে। এইদুই দিন মেয়েটার সাথে মজা করলেও এখন আর মেয়েটার কাছে যাবেনা বলে ঠিক করে নিয়েছে বিহান। ও চায়না ওর মত খারাপ একটা ছেলের প্রভাব ওরকম ভালো ভদ্র মেয়ের ওপর পরুক। ডান্স করতে করতে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে এটাই ভাবছিল ও কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা চোখে পরতেই ওর ভ্রু কুচকে গেল। কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল রিখিয়ার দিকে।বিহান রিখিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছু বলল কিন্তু মিউসিক এত লাউডে ছিল রিখিয়া বিহানের কন্ঠস্বর শুনতে পেলেও কী বলেছে সেটা শুনতে পায়নি। তবে এরকম ছেলে ভালো কিছু বলতেই পারেনা সেটা নিশ্চিত ও। তাই ও দ্রুত সরে দাঁড়ালো। বিহান আবার ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বলবে তার আগেই রিখিয়া ঘাবড়ে আবারও সরে গেল। বিহান সম্পর্কে রিখিয়ার যা ধারণা হয়েছে তাতে এটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ করে রিখিয়া ওর পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়েও কেঁপে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বিহানের হাত ওর জামার জিপে আর ওর জিপ অর্ধেক খোলা অবস্থায় আছে। রিখিয়ার শান্ত মস্তিষ্কে জেনো মুহূর্তেই আগুন জ্বলে উঠল। চোখ ছলছল করে উঠল ওর। বিহান ওর সেই বাঁকা হাসি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিখিয়া ওর সর্বশক্তি দিয়ে চড় মেরে দিল বিহানকে। বিহান গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকাল রিখিয়ার দিকে। আস্তে আস্তে সবার চোখে পরল ব্যপারটা। ধীরে ধীরে মিউসিক থেমে গেল। রিখিয়া হুট করে এতটাই রেগে গেছে যে ও কী করছে বা বলতে তার জ্ঞান নেই ওর। কথায় আছে শান্ত নদী যদি হঠাৎ অশান্ত হয়ে যায় তখন সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেরকমই কিছু হয়েছে। ও রেগে চেঁচিয়ে বলল,

” ক্যারেক্টার লেস ছেলে একটা। আমাকে আপনার ওসব গার্লফ্রেন্ডদের মত মনে হয়? হ্যাঁ? যেখানে যা খুশি করবেন আমার সাথে? আমার গায়ে হাত দেবেন? আমার জামার চেইন..”

এটুকু বলে থেমে গেল ও। চোখে জমে থাকা জলটা গড়িয়ে পরল গাল বেয়ে। চারপাশে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই বিহানকেই খারাপ বলছে। পার্টিতে থাকা কিছু জার্নালিস্ট এর ক্যামেরা বিহানের দিকেই। বিহান শুধু শক্ত চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। রিখিয়া নিজেও জানেনা আজ ও এক ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছে। কারো পুরোনো ক্ষতকে খুচিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।

#চলবে…

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৬
.
ঋতু তাড়াতাড়ি এসে রিখিয়ার জামার চেইনটা পুরোটা লাগিয়ে দিল। রিখিয়া যখন দেখল সব ক্যামেরা, সবার দৃষ্টি ওদের দিকে তখন ওর রাগটা আরও বেড়ে গেলো। চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,

” আপনাদের মত চরিত্রহীন ছেলেদের কাছে এর থেকে কী আশা করা যায়। আপনাদের কাছে তো সব মেয়েই সমান। মেয়েদের নিজের খেলনা মনে করেন হ্যাঁ? আমিও কাকে কী বলছি? মেয়েদের মন নিয়ে খেলা তো আপনাদের বৈশিষ্ট্য। তাইতো এরকম পাবলিক প্লেসে একটা মেয়েকে অপমান করতেও আপনার বিবেকে বাঁধলো না।”

বিহান এখনও একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। এটুকু বলে একবার দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল রিখিয়া। জার্নালিস্টরা যাওয়ার পথে রিখিয়াকে অনেক প্রশ্ন করলেই ও কিছু না বলে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। ঋতুও রিখিয়ার পেছন পেছন গেল। এরপরেই জার্নালিস্টরা সবাই মিলে বিহানকে চেপে ধরল। বিহান কারো প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না ওখান থেকে নরলোও না। শুধু চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। সিকিউরিটির জন্যে পুলিশ এনেছিল কম্পানির এম.ডি তারা এগিয়ে এল।

________________

বড় সোফায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে টিভি দেখছে আর চকলেট কাচ্ছে তুর্বী। একা একাই বকবক করে যাচ্ছে তখন থেকে কিন্তু রিখিয়া কোন উত্তর দিচ্ছে নাহ সোফার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে হাটু গুটিয়ে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে আর কফি খাচ্ছে, কিন্তু ও অন্যভাবনায় মগ্ন। রিখিয়া অফিস থেকে এসে কোন কথা বলেনি। চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে,চেঞ্জ করে সোজা কিচেনে চলে গেছে। তুর্বী তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল। ল্যাপটপটা তুর্বীকে ওর অফিস থেকেই দিয়েছে। নিজের টাকায় কেনার মত অত টাকা নেই ওর। প্রথমে ভেবেছিল ব্যাংকে কোন ঝামেলা হয়েছে তাই কিছু বলেনি তুর্বী। এমন সময় প্রশ্ন করলে মন আরও খারাপ হয়। তাই পরে জিজ্ঞেস করবে ভেবেই চুপ ছিল ও। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে যে ব্যাপারটা সিরিয়াস, নইলে ও এত বকবক করে যাচ্ছে কিন্তু রিখিয়া ‘হ্যাঁ’, ‘না’ কিছুই বলছে না? তুর্বী এবার ঠিক হয়ে উঠে রিখিয়ার পাশে ফ্রোরে বসল। রিখিয়ার দৃষ্টি এখনও টিভির দিকে। তুর্বী রিখিয়াকে ওর হাতের কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারল। রিখিয়া তাকাতেই তুর্বী ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” কী হয়েছে বলতো?”

রিখিয়া একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে তুর্বীর হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখল। তুর্বী রিখিয়ার গালে হাত রেখে বলল,

” কী হয়েছে বলবি তো? এভাবে চুপ থাকলে কীকরে বুঝবো?”

রিখিয়া এবার আস্তে আস্তে ঐ রেস্টুরেন্টে ঘটা সব কথা খুলে বলল। তুর্বীতো রেগে আগুন হয়ে গেল। ও রাগে গজগজ করে বলল,

” কী? এত বড় সাহস ঐ ছেলের? তোর শরীরে হাত দিয়েছে। একেতো আমি..। এই তুই পুলিশকে জানাস নি? পুলিশে দিস নি ওকে? এটা তো একটা ক্রাইম।”

রিখিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। তুর্বী রিখিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

” দেখ এটা একপ্রকার সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। কোন মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের যেকোন জায়গায় অস্বস্তিকরভাবে ছোঁয়াকেই সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। আর এটা আইনত অপরাধ। তুই এভাবে ছেড়ে কীকরে দিতে পারিস? ইনফ্যাক্ট ছাড়বিই বা কেন? এদের চর জন্যে শুধু চড় থাপ্পড় যথেষ্ট না। সোজা জেলের ঘানি টানাতে হয়। এরপর থেকে যদি কখনও এমন হয় বা হতে দেখিস সাথে সাথেই ‘ ৯৯৯’ তে ফোন করবি। এত যত ছাড়বি এরা ততই পেয়ে বসবে।।”

হঠাৎ করেই রিখিয়ার সেই মিডিয়ার লোকেদের কথা মনে পরল এনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে নিউস করে ফেলেছে। এসব ভেবে রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোনে ফোন এল। ওর ব্যাংকের ম্যানেজার ফোন করেছে। ও তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কথা বলল। ফোন রেখে দেওয়ার পর তুর্বী বলল,

” কী রে কে ফোন করেছে?”

তুর্বী একবার ফোনের দিকে একবার তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” স্যার ফোন করেছিল আমায় যেতে বললেন ঐ রেস্টুরেন্টে। এসছি তো ঘন্টা দুই হয়ে গেছে এখনও ওখানের ঝামেলা মেটে নি নাকি?”

তুর্বী বলল,

” আরে যেতে যখন বলেছে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে। আগেতো চল গিয়ে দেখি কেসটা কী হল।”

এদিকে সৌহার্দ্য হঠাৎ করেই কাজ পরে যাওয়াতে সিলেট এসছিল। ওর আজ বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় চলে আসার কথা ছিল কিন্তু একটা দরকারি কাজ পরে গেছিল যেটা বিহান জানে না। ও ভেবেছিল কাজ সেড়ে হোটেলে ফিরে বিহানকে জানাবে কিন্তু সোসাল মিডিয়াতে ঢুকে এসব দেখে ও অবাক হয়ে গেল। এসব কী হচ্ছে? ও জানে বিহান একটু অন্যরকম। কিন্তু ও কখনও কোন মেয়েকে এভাবে অসম্মান করবেনা এটা ও জানে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে সৌহার্দ্যর। কেন? এই ছেলেটাকেই কেন? কেন এই ছেলেটাকে বারবার এরকম জঘন্য পরিস্থিতির মুখে পরতে হয়। সৌহার্দ্য আর কিছু না ভেবে সব কাজ ফেলে ঐ মুহূর্তেই বেড়িয়ে পরল ঢাকার উদ্দেশ্যে।

দুজনেই গেল সেই রেস্টুরেন্টে ওখানে গিয়ে তো অবাক। মারাত্মক ভীর হয়ে গেছে। মিডিয়ার লোকেরা তো যথারীতি তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। ওরা ভীর ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখে ওখানে কয়েকজন পুলিশ, রিখিয়াদের ব্যাংকের ম্যানেজার, আরো দুজন ভদ্রলোক আছেন। আর বিহান একটা চেয়ারে শক্ত হয়ে বসে আছে। ওই মুহূর্তের পর এখনও অবধি একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি ও। রিখিয়া যেতেই ম্যানেজার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” হ্যাঁ এই সেই মেয়ে।”

পুলিশ অফিসার রিখিয়ার সামনে এসে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। আর রিখিয়া সেটাই বলল অফিসারকে সেটা ওর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সত্যি। এবার অফিসার বিহানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

” উনি যা বলছেন সেটা সত্যি? আপনি সত্যি এসব করেছেন?”

বিহান রিখিয়ার দিকে শুধু শক্ত চোখে একপলক তাকালো তারপর আবারও নিচের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলল না। যেহেতু ভিকটিম আর আশেপাশের সাক্ষী একই কথা বলছে আর অভিযুক্ত নিজেই চুপ হয়ে আছে নিজের পক্ষে কিছুই বলছে না। তাই অফিসার রা বিহানকে নিয়ে চলে গেল। আর রিখিয়ার স্টেটমেন্ট ও নিয়ে নিল। তুর্বী সুক্ষ দৃষ্টিতে দেখছিল এতক্ষণ বিহানকে। ওর ইচ্ছে ছিল যে এসেই বিহানকে আচ্ছামত ঝেড়ে দেবে। কিন্তু বিহানকে দেখে ওর কেন যেন মনে খটকা লেগে গেল। সেই খটকার কারণ হচ্ছে বিহানের অতি শান্ত আর শক্ত রূপটা। রিখিয়া ওকে বলল,

” কী রে? কী ভাবছো?”

” তুই শিওর? এই ছেলেটাই ছিল?”

” মানে?”

” নাহ। কিছুনা চল।”

_________________

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে। এতক্ষণে সোসাল মিডিয়া, নিউজে এটা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেছে। আসলে ব্যাপারটা এতটা বাড়াবাড়ি হতোনা যদি এটা বাসে, অন্য কোন ভীড়-টীড় বা কিছতে হতো। কিন্তু এটা একটা বড় বিজনেসম্যানের পার্টিতে, এতো মিডিয়া আর পুলিশদের উপস্থিতিতে ঘটেছে। আর মানুষ তো একটা ইস্যু পেলে সেটা না চটকে ছাড়েনা সেইজন্যই এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো।

বিহান চুপচাপ বসে আছে। একরাতেই ওর চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য ওর পাশে বসে আছে গম্ভীর হয়ে। দুজনেই থানাতে বসে আছে। সারারাত বিহানকে থানাতেই থাকতে হয়েছে। অথচ ওর পরিবারের কেউ আসেনি ওর কাছে। স্পেশাল রিকোয়েস্টেই লকাপের ভেতরে গিয়ে বিহানের পাশে বসেছে সৌহার্দ্য। ঘন্টাখানেক আগে সৌহার্দ্য এসে পৌছেছে এখানে। এসেই পুলিশ অফিসারকে বলে আবার সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। স‍ৌহার্দ্য বিহানের কাধে হাত রেখে বলল,

” এভাবে চুপ করে থাকলে কিচ্ছু হবেনা। কেন কিছু বলছিস না? বল যে কী হয়েছিল।”

“চলে যা।”

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর এটুকুই বলল বিহান। সৌহার্দ্য এবার রেগে গিয়ে বলল,

” দেখ এবার কিন্তু মার খাবি কী শুরু করেছিস কী তুই? আমাকে তো বলবি?”

কিন্তু বিহান এখনও চুপ করে আছে। সৌহার্দ্য এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“ঠিকাছে কিচ্ছু বলিস না। যা করার আমিই করছি। পাঁচ বছর আগে যেটা করতে পারিনি সেটাযে আজও পারব না সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।”

বলে লকাপ থেকে বেড়িয়ে কাউকে ফোন করে কথা বলল। এরমধ্যে চেচামেচি করতে করতে থানায় এলো তুর্বী আর ওকে শান্ত করতে করতে রিখিয়া আসছো। তুর্বী চেঁচিয়ে বলল,

” কী পেয়েছেন কী আপনারা হ্যাঁ? কখনও রাতে ডাকছেন আবার সকালে। এগুলোর মানে..”

এটুকু বলতে বলতেই সৌহার্দ্যর দিকে চোখ পরতেই অবাক হল তুর্বী সৌহার্দ্যও বেশ অবাক হয়েছে। তুর্বী বলল,

” আপনি এখানে?”

সৌহার্দ্য বলল,

” আমারও একই প্রশ্ন।”

” আমার ফ্রেন্ডের সাথে এসছি। কালকে এমনিতেই একটা ছেলে ওকে হ্যারাজ করল তারওপর কখনও এখানে ডাকে তো কখনও ওখানে।”

” আমিই ডেকেছি আপনাদের। আর যার বিরুদ্ধে আপনাদের অভিযোগ সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং ভাই।”

তুর্বী এবার কোমরে হাত দিয়ে বলল,

” ওওও। তারমানে নিজের ক্যারেক্টারলেস বন্ধু প্লাস ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করতে এসছেন?”

এটুকু বলতেই সৌহার্দ্য থানা কাঁপিয়ে ধমক দিয়ে উঠল তুর্বীকে। তুর্বী হালকা কেঁপে উঠল। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

” একদম চুপ! বিহানের সম্পর্কে একটা শব্দও না গট ইট? ও এমন কিচ্ছু করেনি।”

তুর্বী একটু সাহস জুগিয়ে বলল,

” তো আমার বান্ধবী মিথ্যা বলছে?”

” আমি সেটা বলিনি। কালকে সোসিয়াল মিডিয়াতে আপনার বান্ধবীর ওসব কথার ভিডিওগুলো দেখেই বুঝেছি ও যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। তাই ও মিথ্যা বলেনি। কিন্তু আমার ভাইও কিচ্ছু করেনি।”

তুর্বী হাত ভাজ করে বলল,

” প্রমাণ করুন?”

সৌহার্দ্য হেসে বলল,

” প্রমাণ করতেই সবাইকে ডেকেছি। ওয়েট!”

এরমধ্যেই মিডিয়া লোকেরাও চলে এল। অফিসার অবাক হয়ে বললেন,

” এরা কেন?”

সৌহার্দ্য বলল,

” বিহানের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ যখন ওনারাই পাবলিক করেছেন তখন ওর নির্দোষ হওয়ার খবরটাও ওনারাই সবাইকে দেবে।”

এরমধ্যে বিহানকেও এখানে নিয়ে আসা হলো। বিহান এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অপেক্ষায় আছে যে সৌহার্দ্য কী করতে চাইছে সেটা দেখার জন্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই রেস্টুরেন্টে লোকেরা চলে এলো। সৌহার্দ্য এগিয়ে গিয়ে বলল,

” এনেছেন?”

উত্তরে তারা হ্যাঁ বলল। সৌহার্দ্য এবার সবার উদ্দেশ্যে বলল,

” কালকে রাতের ঐ পার্টির সিসি টিভি ফুটেজ আছে ওনাদের কাছে। তাই এখন এটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে যে কী হয়েছিল আসলে।”

সবাই চমকে উঠল। এটাতো কারো মাথাতেই আসেনি। তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই এবার একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আসল ঘটনাটা ওরাও দেখতে চায়। সৌহার্দ্য পূলিশদের সাহায্যে ফূটেজটা সবাইকে দেখাতে শুরু করল। সবাই কৌতূহলী চোখে দেখছে। ওই জায়গাতে এসেই সবাই দেখল যে রিখিয়ার ড্রেসের চেইনটা প্রায় পুরোটাই খোলা। আর বিহান রিখিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়ার কাছে গিয়ে বিহান রিখিয়াকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু রিখিয়া শুনতে পাচ্ছেনা আবার ভয় পেয়ে সরেও যাচ্ছে। বিহান এবার রিখিয়ার পেছন গিয়ে নিজেই চেইনটা অর্ধেকের মত লাগাতেই রিখিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল আর থাপ্পড় মেরে দিল ওর গালে। এটুকুতেই পজ করল ফুটেজটা। সবাই অবাক। কী ভেবেছিল আর কী হল? রিখিয়াতো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভালো করতে এসে ছেলেটাকে এভাবে চরম হেনস্তা হতে হল ভাবতেই এখন কান্না পাচ্ছে ওর। অসহায় চোখে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান দেয়ালে হেলান দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ফূটেজ চলাকালীন সময়েও একবারও তাকায়নি ফুটেজের দিকে। তুর্বী তো দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল, ‘লে কলা’। সৌহার্দ্য স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও জানত বিহান এত খারাপ কাজ করতেই পারেনা। ও এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,

” এটা কী আপনাদের কালকে দেখার কথা ছিল না? সিসি ক্যামেরা থাকে কেন?”

অফিসার ইতস্তত করে বলল,

” আসলে অনেকে সাক্ষী ছিল আর উনিও নিজের হয়ে কিছু বলছিলেন না। উনি যদি তখন সব বলতেন তাহলে আমরা চেক করতাম।”

সৌহার্দ্য কিছু বলল না আর। কারণ এখন তর্ক করে লাভ নেই। মিডিয়ার লোকেরা প্রশ্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু এটুকু বিনোদন দিয়েই তাদের বিদায় দেওয়া হল। এরপর বিহানকেও ছেড়ে দেওয়া হল। রিখিয়ার চেহারা পুরো কাঁদোকাঁদো হয়ে গেছে। তুর্বী খোঁচা মেরে চোখের ইশারা করতেই ও এগিয়ে গিয়ে বিহানকে বলল,

” দেখুন আ’ম..”

আর কিছু না শুনেই হনহনে পায়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেল বিহান। রিখিয়াতো কেঁদেই দিল। সৌহার্দ্য ওকে কাঁদতে দেখে বলল,

” আরেহ। কাঁদছেন কেন? দেখুন আপনার দোষ নেই এখানে। আপনার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করত।”

রিখিয়াতো কেঁদেই যাচ্ছে। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” এইযে মিস বান্ধবীকে সামলান। আমি যাই আমার পাগলকে সামলাই গিয়ে।”

বলে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেল সৌহার্দ্য। নিজের ফ্লাটে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে সৌহার্দ্য রুমে আসার আগেই দরজা বন্ধ করে দিল বিহান। রাগে কষ্টে ফুসতে শুরু করল ও। টেবিলে রঙের টিউব রাখা ছিল অনেকগুলো, এক ধাক্কায় সব ফেলে দিল। সারারুম জুড়ে রঙ ছড়িয়ে গেছে। আসলে যখন বিহান খেয়াল করল রিখিয়ার ড্রেসের চেইন খোলা তখন এটাও খেয়াল করেছে কতগুলো ছেলে ওকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে আর ওর দিকেই আসছে। তাই ও তাড়াতাড়ি গেছিল রিখিয়ার কাছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে প্রটেক্ট করছিল আর বারবার বলছিল ‘ আপনার ড্রেসের জিপ খোলা আছে।’ কিন্তু মেয়েটা শুনতে পায়নি মিউসিকের জন্যে। আর ও কাউকে ডাকতে গেলেও ওকে সরতে হবে ওর কাছ থেকে আর সেটা করলে আবার ঐ ছেলেগুলো চোখ দিয়ে তো গিলবেই তারওপর উল্টাপাল্টা কিছু করতেও পারে তাই নিজেই লাগাচ্ছিল কিন্তু অসাবধানতাবশত ওর হাত রিখিয়ার পিঠে লেখে যায়। আর রিখিয়া ঘুরে তাকানোর পর ও হেসে বলতে যাচ্ছিল যে, ” মিস আগে নিজেকে তো সামলাতে শিখুন?” কিন্তু তারআগেই এসব হল। বিহান রাগে চিৎকার করে বসে পরল। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল, ” সব মেয়েই একরকম, সবাই এক। তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম অন্যরকম ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত সব মেয়েই ‘মায়া’ হয়না। কিন্তু না, আজ আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়লে মেয়ে জাতটাই এরকম হয়। আই হেইট গার্লস এন্ড আই হেইট ইউ। আমি মেয়েদের মন নিয়ে খেলি এটাই বলেছিলে তাইনা? মন নিয়ে খেলা ঠিক কেমন হয় এবার আমি তোমাকে বোঝাবো মিস রিখিয়া ইসলাম।

#চলবে…

[ প্রচুর ব্যস্ত থাকার পরেও আপনারা বলেছেন তাই আজকে গল্পটা দিলাম। রি-চেইক করতে পারিনি একটু বুঝে নেবেন। ধন্যবাদ।]

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৭
.
সৌহার্দ্য তখন থেকে বিহানের রুমে নক করে যাচ্ছে কিন্তু বিহান খুলছে না। বিহান রেগে গেলে যে কতটা ভয়ঙ্কর কিছু করতে পারে সেটা বোঝা কঠিন। আসার পথে জ্যামে আটকে গেছিল। আর আজকের জ্যামটা আরো বেশিই সময়ের জন্যে ছিল। সৌহার্দ্যর এখন ভীষণ টেনশন হচ্ছে, রাগের বশে যদি ছেলেটা উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে তাহলে? এসব চিন্তা করে আরো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগল। বেশ অনেকটা সময় পর বিহান দরজা খুলল। বিহানকে দেখে সৌহার্দ্য চমকে উঠল। বিহান চোখ কচলে একটা লম্বা হাই তুলে বলল,

” কী শুরু করলি বলত? কাল সারারাত লকাপে ছিলাম তাই ঘুমোতে পারিনি। একটু ঘুমোচ্ছিলাম ভাই। তুইও পাশের রুমে ঘুমিয়ে পরতি। সবে একটু ঘুমিয়েছি।”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ বিহানের চোখমুখ একদম স্বাভাবিক। ওকে দেখে মনেই হচ্ছেনা কিছু হয়েছে। সৌহার্দ্য অবাক হয়ে কিছু বলবে তার আগেই বিহান বলল,

” এভাবে ‘হা’ করে তাকিয়ে আছিস কোন দুঃখে? উঠিয়ে যখন ফেলেছিস আমি খাবার ওর্ডার করে দিচ্ছি। খেয়ে তারপর আবার ঘুমাব। আয় রুমে আয়।”

বলে ভেতরে চলে গেল বিহান। আর সৌহার্দ্যও বেশ অবাক হয়েই ভেতরে ঢুকল। বিহান আয়েশ করে বিছানায় বসে খাবার ওর্ডার করে চুপচাপ বসে গেমস খেলতে শুরু করল। সৌহার্দ্য সুক্ষ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বিহানের দিকে। এতোবড় একটা ঘটনার পরেও বিহানের শান্ত থাকাটা ভালো লাগছেনা সৌহার্দ্যর কাছে। এটা কেমন যেন ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা মনে হচ্ছে। ও বিহানের হাত থেকে ফোনটা একটানে নিয়ে গেল। বিহান ভ্রু কুচকে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য ফোন রেখে দিয়ে বলল,

” কী চলছে তোর মাথায়?”

বিহান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হেসে টি-টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

” সে তো সারাদিন আমার মাথায় কতকিছুই চলে। কেন বলত?”

” দেখ রিখিয়ার কিন্তু এসবে কোন দোষ নেই। ওর জায়গা থেকে ও একদম ঠিক ছিল। ওকে প্লিজ ‘মায়া…”

বিহান পানি খেতে খেতে এতক্ষণ সৌহার্দ্যর কথা শুনছিল। সৌহার্দ্য এটুকু বলতেই বিহান থামিয়ে দিয়ে বলল,

” এসব ছাড়। খাবার আসছে খেয়ে বাড়ি চলে যা। মামু জানলে রেগে যাবে।”

তখনই সৌহার্দ্যর ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনের নাম্বারটা দেখে সৌহার্দ্য ফোনটা কেটে দিতে নিলেই বিহান বলল,

” রিসিভ কর। আর ফোন লাউডে দিস। অনেকদিন নিজের প্রশংসা শোনা হয়না।”

বলে আবারও লম্বা হাই তুলল। সৌহার্দ্য ফোনটা রিসিভ করলেও লাউডে দিলো না। কিন্তু বিহান নিজেই লাউডে দিয়ে দিল। ওপাশ থেকে সৌহার্দ্যর বাবা শফিক রায়হান বললেন,

” কোথায় আছো তুমি? নিশ্চয়ই ঐ লোফার টার ফ্লাটে? এক্ষুনি বেড়িয়ে এসো। মান-সম্মান যেটুকু ছিল সব শেষ করে দিয়েছে।”

সৌহার্দ্য একপলক বিহানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” শুধু কাল রাতের নিউসটাই দেখেছ নাকি সকালের টাও দেখেছ?”

শফিক রায়হান হুংকার দিয়ে বলল,

” সবই দেখেছি। সকালের নিউসটা সত্যি নাকি তুমি তোমার ক্ষমতা দিয়ে সত্যি বানিয়েছ সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার।”

বিহান নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছে। সৌহার্দ্য বেশ অবাক হল নিজের বাবার কথায়। এতটা অবিশ্বাস? একটা ঘটনা, শুধু একটা ঘটনা, সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে সবচেয়ে ঘৃণ্য করে তুলতে পারে? তখন ওপাশ থেকে আরেকটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো,

” বাবান আমি তোমার ফুপা বলছি ওখান থেকে চলে এসো। ওই ছেলের সাথে থাকলে তুমিও নষ্ট হয়ে যাবে।”

বিহান হেসে সৌহার্দ্যকে চোখ মারল। সৌহার্দ্য ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” তোমার ছেলে হয় ও ফুপা।”

বিহানের বাবা আমিনুর খান বললেন,

” দরকার নেই এমন ছেলের যেই ছেলের জন্যে পদে পদে অপমানিত হতে হয় এমন ছেলে না থাকাই ভালো। তাইতো অনেক আগেই ত্যাগ করেছি। ”

এবার বিহানের মা আসমাও বললেন,

” বাবান আমি বলছি চলে এসো ওখান থেকে। তোমাকে কতবার বলি ওই ছেলের কাছে যেওনা। কেন শোননা? ও নিজে তো জাহান্নামে গেছেই তোমাকেও আমাদের অবাধ্য করে দিচ্ছে।”

নিজের মায়ের গলা শুনে বিহানের যেন আরও হাসি পেল। ভীষণ কষ্টে হাসি চেপে রাখছে ও। সৌহার্দ্য জানে বিহান এভাবে কখন হাসে তাই বলল,

” সরি, বাট কাল দুপুরের আগে আমি আসতে পারব না। রাখছি।”

বলে ফোনটা রেখে দিল সৌহার্দ্য। ফোনটা রাখতেই বিহান শব্দ করে হেসে দিল। এভন ভাবে জেনো ওর সামনে মিরাক্কেল এর লেটেস্ট জোকস্ বলা হয়েছে। এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। বিহান হেসে বলল,

” খাবার এসে গেছে, চলো ব্রো, জমিয়ে খাওয়া হবে।”

সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। কালকের এমন ঘটনার পর এরকম রেগে যাওয়ার পরেও হঠাৎই ছেলেটার এতটা শান্ত, স্বাভাবিক হয়ে যাওয়াটা ভাবাচ্ছে সৌহার্দ্যকে। রাগ যে খুব ভয়ংকর জিনিস, এই রাগের বসে নিয়ে নেওয়া কোন সিদ্ধান্তের পরিণাম ভয়ংকর হতে পারে। এখন বিহানের মাথায় কী চলছে সেটাতো বিহানই জানে। এদিকে তুর্বী মেয়েটা সেই কবে থেকে ওকে নিরন্তর মেসেজ করে, ওর আর.জে পরিচয়ের পেজ টাতেই বড় বড় করে ওকে নিন্দা করে, গালিগালাজ করে পোষ্ট করতেই থাকে, কমেন্ট সেক্শনও ভরিয়ে ফেলে কমেন্ট করে করে। এসব নিয়ে ইদানিং একটু বেশি পরিমাণ বিরক্ত ও। কিন্তু সরাসরি কিছু বলতেও পারছেনা। কারণ ওরা কেউ জানেনা ওই আর.জে SR.

_______________

তুর্বী রান্নাঘরে একপ্রকার যুদ্ধ করছে। উদ্দেশ্য কফি বানাবে। কিন্তু কফি বানাতে গিয়ে রান্নাঘর লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। প্রথমেই কফি খুজতে গিয়ে সব এলোমেলো করেছে। এরপর চিনি খুজতে গিয়ে রান্নাঘরে একপ্রকার তান্ডব চালিয়েছে। দুধটা যদিও সহজেই পেয়ে গেছে। তুর্বী রান্নাটা কোনকালেই তেমন পারেনা। সৎ মায়ের কাছে বড় হলেও ওর ওপর অত্যাচার করার কোন সুযোগ দেয় নি। ওকে রান্না করতে বললে কখনই করত না কারণ ওর কলেজ, প্রাইভেট ছিল। কথা না শোনায় ওর সৎ মা মারতে এসছিল কয়েকবার কিন্তু প্রথম প্রথম সহ্য করলেও পরে আর চুপ থাকত না তুর্বী। তাই তুর্বীর সাথে টিকতে না পেরে ওর মা এমনিই চুপ হয়ে যেত। কিন্তু এখন ও কফি বানাচ্ছে রিখিয়ার জন্য কারণ রিখিয়া বাড়ি ফেরার পর থেকেই মন খারাপ করে বসে আছে। আপাতত বেলকনির ফ্লোরে বসে একদৃষ্টিতে আকাশ দেখছে। মনটা একটু বেশিই খারাপ ওর। কিছু খায়ও নি। তাই তুর্বী ওর জন্যে কফি আর বিস্কুট নিয়ে যাচ্ছে। অন্যকোন রান্না তুর্বী পারেনা। কোনরকমে কফি বানিয়ে দুটো মগে ঢেলে দিয়ে, একটা হাফ-প্লেটে বিস্কুট নিয়ে ট্রে তে নিয়ে রুমে চলে এল। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে রিখিয়া এখনও মন খারাপ করে বসে আছে। তুর্বী ওর পাশে গিয়ে বসে বলল এরপর কফির মগ নিয়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে খেতে বলল,

” বাবাহ। রান্না মানুষ কেমনে করে? আমার তো এই কফি বানাতেই ঘাম বেড়িয়ে গেছে।”

রিখিয়া অবাক হয়ে তাকাল। ট্রে তে রাখা কফি দেখে বলল,

” তুমি কফি বানিয়েছ?”

” হ্যাঁ? তোর কী মনে হয়? আমি পারিনা? আমি চাইলে সব পারি। খেয়ে নে। দেখ, না ভুল করেও করবি না অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি আমি।”

রিখিয়া কিছু না বলে কফির মগ আর হাত একটা বিস্কুট নিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করল। তুর্বী এবার রিখিয়ার একটু কাছ ঘেসে বসে বলল,

” মন খারাপ কেন করছিস বলত? এতে তো তোর দোষ নেই? একটা মিসআন্ডারস্টান্ডিং হয়েছিল। ব্যাস! এতে কারো কোন দোষ নেই। এমন কেন করছিস তুই?”

রিখিয়া অস্হির হয়ে বলল,

” তুমি বুঝতে পারছো না। ছেলেটাকে আমি সবার সামনে চড় মেরেছি। মিডিয়া, ক্যামেরার সামনে ক্যারেক্টারলেস, অমানুষ আরো কত কী বলেছি। এমনকি পুলিশে দিয়ে দিয়েছি। কত খারাপ খারাপ কথা লিখেছিল ওনাকে নিয়ে চ্যানেলে। সারারাত কোন দোষ ছাড়াই লকাপে কাটিয়েছে। ব্যাক্তিগত জীবনে উনি যেমনই হোক। এসেছিলেন তো আমাকে সাহায্য করতেই তাই না? আর আমি কিছু না বুঝেই কী করে ফেললাম? সরিটাও বলতে পারলাম না।”

তুর্বী মগটা পাশে রেখে রিখিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,

” দেখ। ছেলেটা হার্ট হয়েছে সেটা আমিও বুঝতে পারছি। যেটা হয়েছে সেটা পুরোটাই এক্সিডেন্ট ছিল। তাই এত চাপ না নিয়ে পরেরবার দেখা হলে ভদ্রভাবে সরি বলে দিবি। সিম্পল।”

” কিন্তু..”

” ছাড়তো এসব। এই শোন, কালকে সকালে ঐ SR এর শো আছেনা। কী যেন নাম?”

” প্রভাতের আলো।”

” হ্যাঁ ওটাই। এতদিন তো সব সোসাল সাইটে জ্বালিয়েছি। সেসব নিয়ে অলরেডি গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর হচ্ছে। কালকে কল করে ইচ্ছেমত ধলাই দেব। ধপবাজি করা না?”

রিখিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,

” তুমি হঠাৎ করে ওনার পেছনে কেন পরলে বলবে একটু?”

” কেনো পরবোনা? সবার সাথে ধপবাজি করে বেড়ায়। উনি নাকি সব জানতা। হুহ, অথচ আমার একটা প্রবলেমের সলুশন দিতে পারল না। কাল যদি ওনার পর্দা ফাঁস না করেছি। তো আমার নামও তুর্বী আহমেদ নয়।”

বলে গা দুলিয়ে একটা হাসি দিল তুর্বী। রিখিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” কী উল্টাপাল্টা করতে চাইছ আবার তুমি? দেখ তোমার ওসব উদ্ভবট প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবেনা তাই ওই বেচারাকে প্যারা দিও না।”

তুর্বী কিছু না বলে চুপচাপ কফির মগে চুমুক দিল। ওর মাথায় তো এখন অন্যকিছু ঘুরছে। রিখিয়া যত যাই বলুক। কাল বড়সর একটা কান্ড ঘটিয়ে ছাড়বে ও। সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিল ওরটা কেন দিলনা? এটাই দোষ ঐ S.R এর। এবার এমনভাবে শায়েস্তা করবে যে মানুষের সাথে ধপবাজি করার শখ তো মিটবেই তারসাথে আর.জে গিরি করার শখও মিটে যাবে।

#চলবে…

( দুই-একজন এখনও কনফিউসড যে মূল জুটি কারা সেটা নিয়ে। আমার মনে হয় এটা এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে। তবুও ক্লিয়ার করেই বলে দিচ্ছি সৌহার্দ্য-তুর্বী, বিহান-রিখিয়া চারজনেই মূল এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।)

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৮
.
শীতের প্রভাব আবার কমে এসছে। ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়াতে এখন শীতও বিদায় নেবে বলে পটলা বাঁধছে। হঠাৎ তুলনামূলক কম ঠান্ডা পরাটা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে হয়ত। রিখিয়া রান্নাঘরে রান্না করছে। তুর্বী সোফায় আসাম করে বসে, কানে ইয়ার ফোন গুজে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন, ঠিক কখন ‘প্রভাতের আলো’ শুরু হবে। রিখিয়া বারবার ওকে বলে গেছে উল্টোপাল্টা কিছু না করতে। কিন্তু তুর্বী কী আর ওসব শোনার মত মেয়ে না কী? হঠাৎই S.R. এর গলা পেয়ে চমকে উঠল। তাড়াতাড়ি ঠিকঠাক হয়ে বসল ও। S.R. প্রথমে সৌজন্যমূলক কথাগুলো সব বলে প্রশ্ন-উত্তর শুরু করতেই তুর্বী দ্রুত কল লাগাল। কিন্তু কলটা কানেক্ট হওয়ার আগেই অন্যকারো কল কানেক্ট হয়ে গেল। এভাবে দু-তিনবার কল করার পর কানেক্ট হল। S.R. হ্যালো’ বলতেই তুর্বী চড়া গলায় বলল,

” রাখুন আপনার হ্যালো! আমি এমনিতেই সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছি। এরচেয়ে বেশি হেলতে গেলে সোফা ভেঙ্গে পরে যাবো।”

স্বাভাবিকভাবেই যারা যারা ‘শো’ টা শুনছিল সবাই হাসছে। কিন্তু সৌহার্দ্যর হাসি পেলো না একটুও। উল্টো রেগে গেল ও। ওর বুঝতে একটুও বাকি নেই যে এটা সেই তুর্বী। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” ওকে। বলুন আপনি কী বলতে চান?”

” বলব? বলে কী লাভ? আপনি তো শুধু শোনেন, কিন্তু ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেন? বিগত এক মাস যাবত আমি আপনাকে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছি, কিন্তু আপনি? কোন রকম কোন উত্তর দিতে পেরেছেন। সবার সামনে দ্যা গ্রেট আর.জে. SR সেজে বসে আছেন। আপনি জানেন আপনি একটা গাধামানব? এরকম গাধামানবকে কীকরে কোন রেডিও স্টেশন আর.জে. হিসেবে নিল লোকে সেটাই আমি বুঝে উঠতে পারছিনা। তারওপর এত হিট শো করেন? হাউ?”

সব শ্রোতারা অবাক হয়ে গেছে। সবার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে। কে এই মেয়ে? পাগল না কী? আর সৌহার্দ্য এতটাই অবাক হয়েছে যে লাইপ কাটবে সেই কথাও মাথায় আসছেনা ওর। ওকে চুপ থাকতে দেখে তুর্বী বলল,

” কী হল টা কী? এখন চুপ হ্যাঁ? কী এমন জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি? আমি রিলেশনশীপে যেতে চাই কোনরকম কোন কমিটমেন্ট ছাড়া, সেটাতে কোন ছেলেকে রাজি কীকরে করাব। এই সিম্পল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না?”

সৌহার্দ্য ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” দেখুন মিস আপনার এসব আজব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবেনা। আপনার অন্যকোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। ”

তুর্বী অবাক কন্ঠে বলল,

” কেন হ্যাঁ? যদি প্রশ্ন করতেই হয় আমি এটাই করব। আর আপনাকে উত্তর দিলে এটারই দিতে হবে। আর না পারলে সবার সামনে স্বীকার করুন যে আপনি নামেই একজন আর.জে কাজের বেলায় জিরো।”

সৌহার্দ্য চাইলেও লাইনটা কাটতে পারবেনা কারণ তাহলে ব্যাপারটা সবার সামনে অন্যরকম ভাবে আসবে, তাই একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলল,

” দেখুন মিস, লাইফটা এক্সপিরিমেন্টের জিনিস নয়। সব কিছুরই এক্সপিরিয়েন্স থাকা আবশ্যক নয়। কিছু কিছু জিনিসের সাথে আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা মিশে থাকে। আর কোন সম্পর্ক এক্সপিরিমেন্টের জন্যে তৈরী করা উচিতও নয়। সম্পর্ক মন থেকে আসে। সেটাকে নিয়ে পরীক্ষা করার বা অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন দরকার নেই। একদিন এমনিই আপনার জীবণে কেউ না কেউ চলে আসবে যাকে আপনি আপনার সবটা দিয়ে ভালোবাসতে পারবেন। তার জন্য আগের কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবেনা।”

সৌহার্দ্যর এত জটিল কথা মাথায় ঢুকলোনা তুর্বীর । তবে সৌহার্দ্যর বচনভঙ্গি মুগ্ধ করল ওকে। কত সুন্দর করে কথা বলে ছেলেটা। শুনলেই মন ভরে ওঠে একেবারে। কিন্তু না! এত সহজে হার মেনে নিলে তো চলবেনা। ছেলেটাকে জব্দ করবে বলে এতকিছু করল অথচ ছেলেটা উল্টে সবার কাছে আরও ‘হিরো’ হয়ে গেল? তুর্বী চেচিয়ে বলল,

” দেখুন একদম কথা ঘোরাবেন না। ‍যদি আমার প্রশ্নের উত্তর জানা থাকে তো ‘হা’ বলুন আর জবাব দিন। আর যদি জানা না থাকে তাহলে ‘না’ বলুন আর স্বীকার করুন যে আপনি একটা ইউসলেস আর.জে.।”

সৌহার্দ্য কয়েক সেকেন্ড থমকে ছিল। এখানে সংসদ বসেছে নাকি? একটু সামলে নিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,

” দেখুন মিস..”

” আরে মিস-টিস পরে করবেন আগে প্রশ্নের উত্তর দিন।”

” আমার মনে হয় আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। সো..”

” না! না! না! আপনি রাখতে পারেন না। কেমন মানুষ আপনি হ্যাঁ ? নিজের অক্ষমতা স্বীকার করার ক্ষমতা নেই? যতক্ষণ আপনি এটা না বলবেন আমি থামবোনা। আমি আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ”

সৌহার্দ্যর এবার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এরকম পাগল মেয়ে বাইরে খোলা কীকরে ঘুরে বেড়োচ্ছে? এর তো পাগলা গারদে থাকা উচিত ছিল। ও কিছু বলবে তার আগেই লাইনটা কেটে গেল। কিন্তু সৌহার্দ্যর রাগ একটুও কমলোনা। শো ওখানেই অ‍্যাবট করে বেড়িয়ে গেল ওখান থেকে।

এদিকে তুর্বী রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কাটলি কেন? সবে ওই SR কে বাঁশ দেওয়া শুরু করেছিলাম।”

রিখিয়া সোফার মোবাইলটা ছুড়ে রেখে বলল,

” তোমার কী মনে হয় তুর? তোমার এসব মিনিংলেস কথায় ওনার ওপর কোন এফেক্ট ফেলবে? উল্টো সবাই তোমাকেই পাগল বলছে দেখ গিয়ে।”

তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,

” কেন ফেলবে না? ফেলা উচিত। আমার সিম্পল একটা প্রশ্নের..”

রিখিয়া রেগে গিয়ে বলল,

” শাট আপ তুর! রিলেশনশীপ কোন খেলা? তুমি যা করছ ভেবে দেখেছ সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? ভালোবাসা শব্দটার মানে বোঝ? কেউ তোমার এসব উদ্ভট প্রস্তাবে রাজি হবেনা। কত করে বারণ করলাম কিন্তু তুমি তো…। এসব ছেড়ে নিজের ক্যারিয়ারে মনোযোগ দাও। দেশের সেরা আর্কিটেক্ট হওয়ার স্বপ্ন এভাবে বসে বসে পূরণ হবেনা। স্বপ্নপূরণের পথ জলফড়িং এর মত হয় তুর। নিজে এসে তোমার কাছে ধরা দেবে না খুঁজতে হবে। যাই হোক রান্না হয়ে গেছে খেতে এসো।”

বলে উঠে আবার কিচেনে চলে গেল। তুর্বী মুখ ফুলিয়ে পা দুটো সোফার ওপর তুলে বসে রইল।ও তো খুব মন দিয়েই কাজ করে। অবহেলা তো করেনি। কিন্তু ও তো চায় রিলেশনশীপে যেতে। রিলেশনশীপে মানুষ কী কী করে, কী কী বলে, কীভাবে কথা বলে, সব কিছু জানতে চায় ও। পার্সোনালি সবকিছু এক্সপিরিয়েন্স করতে চায়। এতে ভুলটা কী আছে সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। ওর ওই চঞ্চল মস্তিষ্কে সৌহার্দ্য বা রিখিয়ার গম্ভীর সত্যি কথাগুলো কিছুতেই ঢুকলো না।

_______________

রিখিয়া ব্যাংক থেকে চারটা বাজে বেড় হল। তুর্বীর আজ অফিস থেকে ফিরতে রাত হবে তাই কফি কিনতে ওকেই যেতে হবে। মার্কেটে গিয়ে কফি কিনে বেড়িয়ে চমকে গেল ও। কারণ বিহান বেড় হচ্ছে ওখান থেকেই। বিহানকে দেখে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর। বিহানকে সেদিনের জন্যে ‘সরি’ বলটা খুব জরুরি। সেদিন অকারণেই প্রচন্ড রকম অপমানিত হতে হয়েছে ছেলেটাকে। যেটার দ্বায় রিখিয়া চাইলেই এড়াতে পারে না। রিখিয়া পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ‘এই যে শুনছেন?’ বলে ডাকল কিন্তু বিহান শুনল না। উপায় না পেয়ে ‘বিহান’ বলে ডাকতেই বিহান দাঁড়িয়ে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। রিখিয়া দ্রুত পায়ে বিহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিলো। রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই বিহান বলল,

” আ’ম সরি। সেদিন আমার আপনার ড্রেসে ওভাবে হাত লাগানো ঠিক হয়নি। অন্যভাবে ব্যপারটা হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল। তখন আমার মাথায় হুট করে এতকিছু আসেনি। আর আমার আপনাকে টাচ করার কোন ইনটেনশন ছিলোনা। এক্সিডেন্টলি লেগে গেছে। আ’ম সরি।”

রিখিয়া তো চরম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। ও তো নিজে ‘সরি’ বলতে এসছিল। উল্টে ছেলেটাই ওকে ‘সরি’ বলে দিল। বিহান চলে যেতে নিলেই রিখিয়া আবার ডেকে উঠল। বিহান রোদচশমাটা খুলে ভ্রু কুচকে বলল,

” কিছু বলবেন?”

রিখিয়া বেশ অবাক হয়ে গেল। সেদিনের ওরকম ঘটনার পরেও ছেলেটা ওর সাথে এত নরমালভাবে কথা কীকরে বলছে? এত ভদ্র কবে হল? নাকি ওই এতদিন চিনতে ভুল করেছে। রিখিয়া ইতস্তত মাথা নিচু করে বলল,

” আপনি কেন সরি বলছেন। আসলে সেদিনের জন্যে আমি খুবই দুঃখিত। আমার জন্যে আপনার সাথে এরকম কিছু হল। আমার কিছু না জেনেই এরকম করাটা ঠিক হয়নি। সত্যিই আমি খুব দুঃখিত।”

রিখিয়া কথাগুলো শেষ করে কোন সাড়া পেলোনা, তাই মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখল বিহান নেই। ও চরম মাত্রায় অবাক হল। তাকিয়ে দেখল বিহান পার্কিং এড়িয়াতে চলে গেছে। রিখিয়া ওখানে গিয়ে দেখে পনেরো-ষোল জন চার-পাঁচ থেকে নয়-দশ বছরের কিছু বাচ্চাদের হাতে একটা একটা করে প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্যাকেটে কী আছে জানে না রিখিয়া তবে সেগুলো পেয়ে বাচ্চাগুলোর মুখে ভুবনভোলানো হাসি। এই হাসি দেখেই যেন স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়। বাচ্চাগুলো একজন একজন করে গিফট নিচ্ছে আর বিহানের গালে চুমু দিচ্ছে। বাচ্চাগুলোর কাছে থেকে বিহানের চোখে মুখের খুশির আমেজ স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে বিহান ওদের খুব পরিচিত। রিখিয়া অবাক হয়ে দেখছে। রিখিয়া ওখানে যাওয়ার আগেই বিহান বাচ্চাগুলোকে নিয়ে চলে গেল। রিখিয়ার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে যে বাচ্চাগুলো কারা, আর বিহানই বা কী করছে এদের সাথে? কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই আর রিখিয়া ওখানে থাকতে পারল না। ‘ ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভাবতাম, হয়ত অতোটাও খারাপ না’ নিজের মনে কথাটা আওরে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল রিখিয়া।

_______________

বিহান ওর ফ্লাটে গিয়ে দেখে ওর রুমে সৌহার্দ্য বেডে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। বিহান একটু অবাক হলো, কারণ ও জানে সৌহার্দ্য এরকম তখনই করে যখন ও ভীষণ রেগে যায়। বিহান কিছু না বলে আগে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এল। তারপর সৌহার্দ্যর পাশে বসে নিজের ফোন দেখতে দেখতে বলল,

” কী হয়েছে, রেগে আছিস যে? মামু আবার কিছু বলেছে? নাকি তোর ফুপা-ফুপি বলেছে?”

সৌহার্দ্য একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” সেই মেয়েটা আজ আবার শো’তে কল করেছিল। এতদিন যা ইচ্ছা করেছে আজ তো লিমিট ক্রস করে ফেলেছে।”

” আজ আবার কী বলেছে?”

” রেকর্ডিং আছে শুনে নে।”

বিহান তাড়াতাড়ি ইয়ারফোন নিয়ে ওই অংশটুকু শুনলো। শুনতে শুনতে তো হেসেছেই, শোনার পরেও হাসতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। সৌহার্দ্য বিরক্তি নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ তুই তো দাঁত কেলাবিই। ফাঁসতে তো হচ্ছে আমাকে। তুই কীকরে বুঝবি।”

বিহান হাসি থামিয়ে বলল,

” আচ্ছা শোন আমার কথা। তুই এক কাজ কর। তুই নিজেই ওর সাথে রিলেশনশীপে চলে যা।”

সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” ওর সাথে? আমি? যে মেয়েটা ভালোবাসার মানেটাই বোঝে না। তার সাথে রিলেশনশীপ? যদিও তোকে কী বলছি? তুই নিজেও কী বুঝিস ভালোবাসার মানে?”

বিহান হেসে বলল,

” ও রিলেশনশীপের একটা এক্সপিরিয়েন্স চায়, আর তোরও কোন এক্সপিরিয়েন্স নেই। সো করতেই পারিস। আর আমার মনে হয়না তোর ব্যান্ড না বাজিয়ে এই মেয়ে থামবে। আফটার ওল মেয়ে মানুষ তো। ভ্যাম্পায়ারদের মত। ঘাড়ে একবার চাপলে রক্ত চুষে শেষ করে দিয়ে তবেই নামে।”

বিহানের এইকথার উত্তরে কিছু বলতে গিয়েও বলল না সৌহার্দ্য। আগে অনেকবার বলেও লাভ হয়নি। মেয়েদের নিয়ে বিহানের মনের এই ধারণা বদলাতে পারেনি ও। তাই চুপচাপ গম্ভীর স্বরে কিছু একটা ভেবে বলল,

” এক্সপিরিয়েন্স চাই না ওর? তো ঠিক আছে। দেখা যাক এক্সপিরিয়েন্স নেওয়ার পর মিস তুর্বী আহমেদ কী করে।”

বিহান অবাক হয়ে বলল,

” ওয়েট, ওয়েট। দ্যাট মিনস্ তুই…”

সৌহার্দ্য হাসল। বিহান অবাক চোখে তাকিয়েই বলল,

” কী করতে চাইছিস?”

” পরের বার আমায় কোনভাবে ডিসটার্ব করার আগে যাতে হাজারবার ভাবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”

বিহান গেমস খেলায় মনোযোগ দিয়ে বলল,

” ওকে। বাট ভাই মেয়েটা খুব চঞ্চল, সবকিছু অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। তাই বেশি কষ্ট দিস না।”

সৌহার্দ্য এবার বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সেটা আমি বুঝে নেব। এবার বল তুই কী করতে চাইছিস? সেদিনের ঘটনার পরেও এত শান্ত থাকাটা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না। উল্টোপাল্টা কিছু ভাবিস নি তো?”

বিহান গেমস খেলতে খেলতেই বলল,

” কী আর ভাবব? সব তো এখন ঠিক হয়েই গেছে। সো চিল কর।”

কথাটা সৌহার্দ্যকে সন্তুষ্ট করতে পারল না। কিছু একটা ভেবে ও বলল,

” বিকেলে কোথায় গিয়েছিলি?”

” আজ কী বার?”

” রবিবার। ওহ! মনে পরেছে। আমাকেও ডাকতে পারতি?”

” ভেবেছিলাম ব্যস্ত আছিস। আমি কী করে জানব তুই রেগে আমার ফ্লাটে এসে বসে আছিস। বাই দা ওয়ে, আজ দুপুরে তো বাড়িতে যাওয়ার কথা তোর। এখানে বসে আছিস মামু জানলে রেগে যাবে তো।”

” ছাড়! এসব নতুন কী? চল কিচেনে যাই। অনেকদিন রান্না করা হয়না। কিছু বানানো যাক?”

বিহান ফোনটা রেখে উঠে বলল,

” চল। বাইরের খাবার রোজ রোজ ভালো লাগেনা। হোমমেড কিছু খাওয়া যাক।”

এরপর দুই বন্ধু মিলে গেল রান্না করতে। রেগুলার অভ্যাস না থাকায় সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে তছনছ করে, শীতেও ঘেমে একাকার হয়েই রাতের জন্যে খাবার বানালো দুজনে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here