জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ৩+৪

0
242

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- 3+4
.
রাত দশটা বাজে। চারপাশটা আবছা অন্ধকার। পূর্ণিমার রাত তাই এই নিরব রাস্তাও আলোকিত হয়ে আছে। কনকনে শীত। ঠান্ডা পরেছে বেশ। শীতে কাঁপতে কাঁপতে হাতের তালু ঘষে ঘষে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছে তুর্বী। কী করবে? আজ অফিসের কাজ সেড়ে বেড়োতে বেশ রাত হয়ে গেছে। একটা সিএনজি নিয়েছিল সেটাও মাঝরাস্তাতেই নষ্ট হয়ে গেল। আর এমন জায়গায় হলো যেই রাস্তাটাও বেশ নিড়িবিলি মাঝে মাঝে যেই দু-একটা গাড়ি যাচ্ছে সেগুলো তুর্বী এত করে হাত নেড়ে চেচানোর পরেও থামছে না। প্রচন্ডরকমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর। একটা গাড়িও থামছেনা? এই ঠান্ডার মধ্যে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? বেশ কয়েকটা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেও পারলোনা তুর্বী। জেদ করে একটা গাড়িতে তো ইটও ছুড়ে মেরেছিলো কিন্তু লাগে নি। সেটা নিয়েও ভীষণরকমের আফসোস তুর্বীর। ও এবার একপ্রকার পণ করে ফেলল যেকরেই হোক পরের গাড়িটা ও থামাবেই থামাবে।

এদিকে স‍ৌহার্দ্য। নিজের ব্যাক্তিগত কাজ সেড়ে এখন বিহানের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। আজ রাতটা বিহানের কাছেই কাটাবে ও। নিজের বাড়িতে বিহানকে ইচ্ছা থাকলেও ডাকতে পারেনা। কারণ স‍ৌহার্দ্যর বাবা। সে বিহানকে দুচোখে দেখতে পারেনা। এ নিয়ে মাঝেমাঝে ঝগড়াও হয় সৌহার্দ্যর সাথে তার বাবার। তাই একসাথে সময় কাটাতে চাইলে নিজেই বিহানের কাছে যায়। এরমধ্যেই বিহান ফোন করল ওকে। ফোন রিসিভ করে বিহানের সাথে কথা বলতে বলতে ড্রাইভ করছে।

তুর্বী হঠাৎ খেয়াল করল একটা সাদা রঙের গাড়ি আসছে এদিকে। এটাকে থামাবেই। তুর্বী মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে হুট করেই গাড়িটার সামনে দুহাত তুলে দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ির ভেতরের সৌহার্দ্য ই ছিল। কোনোরকমে গাড়িটা ব্রেক করে হাফ ছেড়ে বাঁচল ও। আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট হত। স‍ৌহার্দ‍্য এবার বেশ রেগে গেলো। মেয়েটা কী পাগল নাকি? এভাবে গাড়ির সামনে চলে আসে কেউ? ও বিহান কে ‘এসে কথা বলছি’ বলে ফোনটা রেখে রেগে গাড়ি জানালার গ্লাস নামিয়ে মাথা বের করে বলল,

” এই যে মিস! মরার জন্যে কী আমার গাড়িটাই পেয়েছিলেন নাকি? ঠিক সময় ব্রেক না করলে তো ওপর দিয়ে যেত। দেখি সরুন!”

তুর্বী ওপর সাইড দিয়ে এসে গাড়ির জানালার ওপর হাত রেখে বলল,

” আমি মোটেও মরতে যাচ্ছিলাম না।”

সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে বলল,

” তাহলে আমার চলন্ত গাড়ির সামনে চৈতন্য হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?”

সৌহার্দ্যকে অবাক করে দিয়ে তুর্বী এসে গাড়ির দরজা খুলে ফ্রন্ট সিটে বসে পরল। সৌহার্দ্য বোকার মত তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। তুর্বী সিটবেল্ট বেধে হাসি মুখে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” থ্যাংক ইউ। অনেকক্ষণ যাবত একটা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে। হ্যাঁ, চলুন।”

সৌহার্দ্য অবাক দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

“চলুন মানে?”

তুর্বী এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,

” চলুন মানে গাড়ি স্টার্ট করুন।”

সৌহার্দ্য তো এবার চরম অবাক হলো। একেতো এভাবে গাড়ির সামনে চলে এল, তারওপর চেনা নেই, জানা নেই পার্মিশন না নিয়েই গাড়িতে উঠে এলো। এখন আবার বলে ‘চলুন’? এতক্ষণ ডাউট ছিল কিন্তু এখন ওর সত্যিই মনে হচ্ছে মেয়েটা পাগল। তাই একটু ভালোকরে মেয়েটার দিকে তাকালো। একটা সাদা টিশার্টের ওপর দিয়ে চকলেট কালার লং জ্যাকেট আর কালো জিন্স পরেছে, কাধে ব্রাউন কালার একটা সাইড ব্যাগ আছে, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, খোলা হালকা অগোছালো লেয়ার কাটিং করা চুলগুলো পিঠের মাঝ বরাবর এসে পরে। একপ্রকার অকারণেই চোখ আটকে গেল সৌহার্দ্যর ।সৌহার্দ্যকে গাড়ি স্টার্ট করতে না দেখে তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,

” কী হলো স্টার্ট করুন? রাত হয়ে গেছে। ওদিকে রিখুটা একা আছে ফ্লাটে।”

তুর্বীর কথায় সৌহার্দ্যর হুস এলেও এবার বেশ রাগ হল ওর। ওর পার্মিশন ছাড়া, ওর গাড়িতে বসে ওর ওপরই চেচামেচি করছে। যাকে হিন্দিতে বলে “মেরে বিল্লি মুঝিছে ম্যাঁও?”। সৌহার্দ্য গাড়ির স্টিয়ারিং এ বারি মেরে বলল,

” মজা করছেন আমার সাথে? কে আপনি? আমার গাড়িতে বসে আমাকেই ধমকাচ্ছেন? আর যাবো মানে কী? কোথায় যাবো?”

তুর্বীর যেন সৌহার্দ্যর ধমকে কিছু যায়-আসল না। ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,

“বেশিদূর না আমাকে জাস্ট সামনের স্টান্ডটা অবধি পৌছে দিন, তাহলেই হবে?”

সৌহার্দ্য এবার আরও অবাক হল। মেয়েটাকে যে খুবই চঞ্চল সেটা বুঝতে পারল। তাই এবার রাগ না করে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” লিফট চাই?”

তুর্বী এমন একটা রিঅ‍্যাকশন দিল যেন আকাশ থেকে পরল। ওভাবে তাকিয়েই বলল,

“সেটা আপনি এখন বুঝলেন?”

কিছু একটা ভেবে সৌহার্দ্য ঠোঁটে একটু হাসি ঝুলিয়ে বলল,

” হ্যাঁ। কিন্তু একটা অপরিচিত ছেলের গাড়িতে হুট করে উঠে পরলেন। তাও এমন একটা নিরবিলি রাস্তায়? যদি এখন কিছু উল্টোপাল্টা করি আপনার সাথে?”

তুর্বী এবার আস্তে আস্তে ব্যাগে জিপটা খুলল। এরপর হুট করেই ওখান থেকে একটা ছুরি বের করে সৌহার্দ্যর দিকে তাক করে বলল,

” খুন করে দেব।”

সৌহার্দ্য প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে প্রচন্ড হাসি পেল ওর। এই হুট করে করা ছোট্ট কাজটাই মেয়েটার ওপর থেকে সৌহার্দ্যর সব বিরক্তি অদ্ভুতভাবেই গায়েব করে দিল। সৌহার্দ্য নিজের হাসি চেপে রেখে বলল,

“আচ্ছা ম্যাডাম আপনাকে খুন-টুন করতে হবেনা। যাচ্ছি আমি।”

তুর্বী মুখ ফুলিয়ে ছুরিটা নামিয়ে বলল,

” হ্যাঁ চলুন।”

সৌহার্দ্য কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিল। এরকম নিরিবিলি রাস্তায় একটা মেয়ে লিফট চাইছে সেটা দেওয়াই যায়। বরং মেয়েটাকে এরকম রাস্তায় ফেলে গেলেই সেটা চরম অমানবিক কাজ হবে। আর সৌহার্দ্য আর যাই হোক অমানবিক নয়। সৌহার্দ্য গাড়ি স্টার্ট করতেই তুর্বী ব্যাগ থেকে একটা বুটভাজার প্যাকেট করে খুলে খেতে শুরু করল। সৌহার্দ্য ড্রাইভ করতে করতে বলল,

” কোথায় যাবেন?”

তুর্বী বুটভাজা চিবুতে চিবুতেই বলল,

” বললাম তো সামনের স্টান্ড এ নামিয়ে দিন তাহলেই হবে।”

” আপনি কোথায় যাবেন সেটা জানতে চেয়েছি। নিশ্চয়ই স্টান্ডে থাকেন না?”

” না তা থাকিনা। কিন্তু কেন বলুন তো?”

” বলতে বলছি বলুন।”

তুর্বী আর কথা না পেঁচিয়ে সহজ ভাবেই ঠিকানা বলে দিলো। এরপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ ছিল। তুর্বী জানালা দিয়ে বাইরেই তাকিয়ে ছিল। নিরবতা ভেঙ্গে সৌহার্দ্য বলল,

” আপনার নামটাই জানা হলনা। কী নাম আপনার?”

তুর্বী মুখে কয়েকটা বুট নিয়ে বলল,

” তুর্বী আহমেদ। আপনার?”

” সৌহার্দ্য।”

” আগে পরে কিছু নেই?”

তুর্বীর প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গিয়ে সৌহার্দ্য বলল,

” এত রাতে এই নিরব রাস্তায় কী করছিলেন?”

তুর্বী লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আর বলবেন না। একটা সিএনজি নিয়েছিলাম সেটাও ঐ নিরব রাস্তাতেই খারাপ হয়েছে। মানে যা তা। পরে আর কী?”

” হ্যাঁ তো ভালোভাবে লিফট চাইলেই হতো? এভাবে গাড়ির সামনে এসে পরার কী দরকার ছিল? যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেত?”

” আপনার কী মনে হয় আমি শখ করে দাঁড়িয়েছিলাম? কতগুলো গাড়ি থামানোর ট্রায় করেছি ধারণা নেই আপনার। আজকাল মানুষগুলো বড্ড বেয়াদব। মানে চরম লেভেলের বেয়াদব। একটা মেয়ে মাঝরাস্তায় লিফট চাইছে, অথচ কেউ লিফট দেওয়া তো দূরে থাক একবার ফিরেও দেখলোনা যে মেয়েটার কোন বিপদ হয়েছে কী না। অথচ আজ যদি সেই মেয়েটার কোন ক্ষতি হয়ে যায়।কাল এরাই ‘স্টপ রেপ’ ‘জাস্টিস ফর ওমেন’ ‘ ধর্ষকের বিচার চাই’ বলে ফেসবুক ওয়ালে বড়বড় করে পোস্ট করবে, ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পরবে, সিস্টেম কে দায়ী করবে, ‘এ’ ‘ওকে’ দোষারোপ করবে, ‘ সে’ ‘তাকে’ দোষারোপ করবে। ডিসগাস্টিং! ”

সৌহার্দ্য হাসল। কথাগুলো সত্যি। এটাইতো হয়। তবে এমন চঞ্চলতার সাথেও এমন গম্ভীর কথা বলা যায়? এটাই অবাক করল সৌহার্দ্যকে। সৌহার্দ্য বলল,

” তো এতরাতে আপনিই বা একা একা কোথা থেকে ফিরছিলেন?”

তুর্বী আবারও ভ্রু কুচকে ফেলে বলল,

” একা একা মানে? আপনিও তো একা একা এতো রাতে ফিরছেন তো?”

স‍ৌহার্দ্য একবার তুর্বীর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

” আমার কাজ ছিল তাই লেট হয়েছে।”

” এটা কোথায় লেখা আছে যে কাজ শুধু ছেলেদেরই থাকতে পারে?”

সৌহার্দ্য এবার লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” আ’ম ভেরী সরি আপনাকে জিজ্ঞেস করাই আমার ভুল ছিল।”

বলে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল আর তুর্বীও কিছু না বলে বুটভাজা খেতে খেতে বাইরের পরিবেশ দেখতে লাগল। স্টান্ড এ পৌছেও যখন সৌহার্দ্য গাড়ি থামালোনা তখন তুর্বী হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” আরে? কোথায় যাচ্ছেন।”

সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

” লিফট যখন চেয়েছ তখন বাড়ি অবধি প‍ৌছে দেই।”

” আমি একাই যেতে পারতাম।”

” জানি সেটা। কিন্তু গাড়িতে যখন তুলেছি তখন পুরোটাই পার করে দেই।”

তুর্বী আর কথা বাড়ালোনা। তবে এবার একটু ভালো করে তাকালো সৌহার্দ্যর দিকে। এতক্ষণ কথা বললেও ঠিক করে দেখা হয়নি। কালো টি-শার্ট, কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স সবই কালো পরে আছে। সুঠাম দেহ, গুড লুক সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে। আচ্ছা এ কী কোন মডেল? স‍ৌহার্দকে দেখে তুর্বীর মনে সবার আগে এই প্রশ্নটাই জাগল। ব্যাস্ত রাস্তাতে এসে পরাতে ঢাকার সেই বিখ্যাত জ্যামে আটকে আছে ওরা। কিছু একটা ভেবে তুর্বী স‍ৌহার্দ্যর দিকে বুটভাজা এগিয়ে দিল। স‍ৌহার্দ্য সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,

” নো থ্যাংকস।”

তুর্বী কিছু না বলে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। এরমধ্যেই তুর্বীর মোবাইলে রিখিয়ার ফোন এলো, তুর্বী তাড়াতাড়ি রিসিভ করে তুর্বীকে বলল ও চলে আসছে চিন্তা না করতে। তুর্বী ফোন রাখার পর সৌহার্দ্য বলল,

” এভাবে বোর হচ্ছেন নিশ্চয়ই? রেডিও শোনেন আপনি? চালাবো?”

তুর্বীর মুখে আবার সেই বিরক্তি ফুটে উঠল। বিরক্ত নিয়ে বলল,

” রিডিও শুনতে একদমই ভালো লাগেনা আমার। স্পেশিয়ালি কালকের পর তো একদমি না। আই হেট রেডিও এন্ড আই হেট দোস্ আর.জে S.R.”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বলল,

” আর.জে. S.R? কেন? সে আপনার কী করেছে?

তুর্বী রাগে ফুসতে ফুসতে বলল,

” ব্যাটা একটা ধপবাজ। সব স্ক্রিপ্টেড জিনিস বলে সবার সাথে ধপবাজি করে। সে নাকি সব জানতা। অথচ আমার একটা সিম্পল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলনা।”

এরমধ্যে জ্যামও ছেড়ে গেল। সৌহার্দ্য ড্রাইভিং শুরু করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” কী জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি ওনাকে?”

” বেশি কিছুনা। শুধু কোন কমিটমেন্ট না করে, রিলেশীপের একটা এক্সপিরিয়েন্স করতে চাই। সেটাতে কীকরে কোন ছেলেকে রাজি করাবো সেটাই জানতে চাইছিলাম।”

সৌহার্দ্য মুচকি একটু হেসে ড্রাইভ করতে করতে বলল,

” হ্যাঁ তারমানে তো সত্যি সত্যিই S.R. একজন ধপবাজ। এই সিম্পল প্রশ্নের উত্তর জানেনা?”

তুর্বী এক্সাইটেড হয়ে বলল,

” আপনি জানেন?”

” নাহ। আমি তো সাধারণ মানুষ। কিন্তু S.R এর তো জানা উচিত না? এত বড় আর.জে সে।”

তুর্বী হাত ক্লাপ মেরে বলল,

” এক্সাক্টলি। এইজন্যই ঐ লোকটাকে আমার সহ্য হয়না। আবার কারো সামনেও নাকি আসেনা। আমার কী মনে হয় জানেন? একে দেখতে নিশ্চয়ই জঘন্য। বনমানুষের মত। তাই কারো সামনে আসতে চায়না। ঐ জঘন্য চেহারা সবাইকে কীকরে দেখাবে? ওই মালটাকে যদি একবার, জাস্ট একবার পাইনা..”

‘মাল’ শব্দটা শুনে সৌহার্দ্যর কাশি উঠে গেল। তুর্বী অবাক সৌহার্দ্যকে ছুঁতে গিয়েও হাত নামিয়ে নিয়ে বলল,

” আরে কী হলো? খাচ্ছিতো আমি? আপনি বিষম খেলেন কীকরে?”

সৌহার্দ্য কোনরকমে কাশি থামিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বলল,

” সামনে পেলে কী করবেন?”

তুর্বী নিজের দুইহাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলল,

” বেশি কিছুনা। গাছের কাঁচা ডাল দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দিতাম। ধপবাজি সব বেড়িয়ে যেত। সব জানতা সেজে লোক ঠকানো? এমন শিক্ষা দিতাম জীবনেও রেডিও স্টেশনের নামও নিত না। আর হ্যাঁ, সবশেষে ঐ লোকটাকে পুরো ন্যাড়া করে দিতাম। যদিও চুল আছে কী না তাইতো জানিনা, টাকলাও হতে পারে। ”

সৌহার্দ্য শুধু চুপচাপ শুনছিল এতক্ষণ এই অমৃত বাণী। সৌহার্দ্য বলেই এতক্ষণ ঠিক আছে। নইলে তুর্বীর এসব কথা শুনে যেকারো মাথা ঘোরাতো। তবে শেষ কথাটা শুনে স‍ৌহার্দ্যর হাত অটোমেটিক নিজের চুলে চলে গেল।

#চলবে..

( অনি-আদ্রিয়ান আপনাদের প্রিয় জুটি আমি জানি সেটা। আমারও ভালো লাগে। আর আমি তো অনিয়ান কে নিয়ে লিখবই। অন্তত যতদিন আমি লেখালেখি করব অনিয়ানকে ছাড়তে পারব না। তবে মাঝে মাঝে একটু নতুনত্ব আনা দরকার। নাহলে একঘেয়েমি চলে আসবে আপনাদের মাঝে। অপেক্ষা করুন অনি-আদ্রিয়ান আবার আসবে, দ্রুতই আসবে। কিন্তু ততদিন নতুন যারা এসেছে তাদেরকে নিয়েও ভাবুন। স্পন্দন-গুঞ্জনের মত ওদেরও আপনাদের ভালো লাগবে।

আর অনেকেই এই গল্পের মূল চরিত্র নিয়ে কনফিউসড। কিন্তু আমার মনে হয়না কনফিউসড হওয়ার মত কিছু আছে। কারণ মূল চরিত্রগুলো আমি হাইলাইট করেই দিয়েছি। আর কে কার জুটি সেটাতো এমনিই জানতে পারবেন, এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তাই আপাতত এসব না ভেবে গল্প নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ধন্যবাদ। )

#জল_ফড়িঙের_খোঁজে
#লেখিকা: #অনিমা_কোতয়াল
#পর্ব- ৪
.
তুর্বীর এরকম ভয়ংকর কথাবার্তা শুনে সৌহার্দ্য কিছু বলার মত ভাষাই আর খুঁজে পেলোনা। এই মেয়েকে বাংলা আর ইংরেজি মিলিয়ে ‘মিস ভয়ংকরি’ ডাকলে সেটা ভুল ডাকা হবেনা বলেই ওর ধারণা। তাই আপাতত চুপ থেকে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেওয়াকেই উত্তম মনে করল। নির্দিষ্ট গন্তব্যে প‍ৌছানোর পর সৌহার্দ্য গাড়ি থামাল। গাড়ি থামার সাথে সাথেই তুর্বী সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল,

” থ্যাংকস হ্যাঁ? তবে আমি কিন্তু মোটেই কারো ধার বাকি রাখিনা। কোনদিন সুযোগ এলে আমিও হেল্প করে ধারে ধারে কাটাকাটি করে দেব। এখন বাই।”

সৌহার্দ্য মনে মনে বলছে আর কখনও দেখা না হওয়াই ভালো। এই অল্প সময়ের ওর মাথা ব্যাথা করে দিয়েছে মেয়েটা। এরপর আবার কখনও দেখা হলে যে এই মেয়ে যে আবার ওর মাথা চিবুবে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবুও সৌজন্যতার খাতিরে মুচকি হেসে বলল,

” বাই।”

তুর্বীও কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল বিল্ডিং এর ভেতরে। সৌহার্দ্য গাড়ি ঘুরিয়ে রওনা দিল বিহানের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_________________

স‍ৌহার্দ্য বিহানের ফ্লাটের কলিংবেল বাজানোর প্রায় সাত মিনিট পর দরজা খুলল বিহান। স‍ৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে বলল,

” দরজা খুলতে এত দেরী করলি কেন?”

এইকথা বলতে বলতেই একটা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা, তথাকথিত আধুনিক একটা মেয়ে চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বেড়িয়ে এলো। সৌহার্দ্য চোখ ছোট ছোট করে মেয়েটাকে একবার স্কান করে বিহানের দিকে ঘাড়টা কিঞ্চিত বাঁকা করে তাকাল। মেয়েটা সৌহার্দ্যর দিকে একপলক তাকিয়ে বিহারের কাধে হাত রেখে বলল,

” গুড নাইট বেবী। কিন্তু আজ রাতটা আমাকে সাথে থাকলে কী হত? কতদিন পর পেলাম তোমাকে।”

বিহান বাঁকা হেসে মেয়েটার গালের পাশে লেপটে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

” আমিতো আছিই সুইটহার্ট। তাড়াতাড়ি দেখা করব আবার। গুড নাইট?”

মেয়েটা হেসে মাথা নেড়ে চলে গেল। সৌহার্দ্য হাত ভাজ করে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,

” কী হল বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়?”

সৌহার্দ্য ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এটা আবার কোন রমনী? আগে তো দেখি নি?”

” হয়তো দেখেছিস এখন মনে নেই। কতজনেরই বা চেহারা মনে থাকে বল?”

কথাটা বলে চোখ মারল বিহান। সৌহার্দ্য একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে ভেতরে আসল। এগুলো দেখে আজকাল ও আর অবাক হয়না। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ও। কিছু বলেও না। কারণ কিছু বলে কোন লাভ হয়নি। ওর পক্ষে সম্ভব হয়নি বিহান কে বদলানো। আবার খুব চেষ্টা করে বদলানোর তাও কিন্তু না। ছেলেটা যদি এভাবে মানসিকভাবে একটু ভালো থাকে থাকুন না। সৌহার্দ্য দিয়ে সোজা বেডে গিয়ে হেলান দিয়ে আধশোয়া হল। বিহান ওর পাশে শুয়ে বলল,

” এত লেট হল যে? সেই কখন ফোন করে বলেছিলি কাছাকাছি চলে এসছিস। মিথ্যে অযুহাত তো আমি দেই। তুই কবে থেকে শুরু করলি।”

সৌহার্দ্য ফোন বেড় করে স্ক্রোল করতে করতে বলল,

” রাস্তায় একটা আজব বস্তুর সাথে দেখা হয়েছিল।”

বিহান কৌতুহলী হয়ে বলল,

” আজব বস্তু? কীরকম?”

স‍ৌহার্দ্য ফোনটা রেখে বিহানের দিকে তাকিয়ে রাস্তায় ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলল। সবটা শুনে বিহান কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে ছিল সৌহার্দ্যর দিকে। এরপর দম ফাটা হাসি শুরু করে দিল। সৌহার্দ্য বিরক্তি নিয়ে বলল,

” হাসিস না তো। কী জ্বালায় পরেছিলাম শুধু আমিই জানি।”

বিহান অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল,

” সিরিয়াসলি ভাই? তোর সামনে তোকেই এভাবে ঝেড়ে দিল আর তুই চুপচাপ শুনে গেলি? ইশ! কী মারাত্মক দৃশ্য মিস করলাম। এই শীতে কাঁচা ডালের পিটুনী? আহা! আচ্ছা ভাই ক্যান ইউ ইমাজিন? তোর মাথায় একটাও চুল নেই। মানে ন্যাড়?”

বলে অাবারও অট্টহাসিতে ফেটে পরল বিহান। এবার সৌহার্দ্যও হেসে দিল। হ্যাঁ সৌহার্দ্যই হল আর.জে. S.R.। ওর পুরো নাম সৌহার্দ্য রায়হান। আর এই সিকরেট ও নিজে, বিহান, আর রেডিও স্টেশনের লোকেরাই জানে আর কেউ না। সৌহার্দ্যর হাসতে হাসতেই তুর্বীর সেই অদ্ভুত, দুর্দান্ত কথা আর কথা বলার ভঙ্গিগুলো মনে করছিল। বেশ কিছুক্ষণ মন খুলে হেসে বিহান বলল,

” সত্যি তুই বেশ গম্ভীর টাই ইয়ার। আমি ওরকম কিউট, চটপটে একটা মেয়েকে পেলে জমিয়ে মজা করে আড্ডা দিতাম। এরকম বিন্দাস টাইপ মেয়ে সচারচর চোখে পরেনা, আবার সেদিনের ওই মেয়েটার মত সাদামাটা মেয়েও চোখে পরে না।”

বিহানের হঠাৎ করেই রিখিয়ার কথা মনে পরল। সেই সংকোচ আর অস্বস্তি নিয়ে হালকা ঘামে ভেজা মায়াবী মুখটা চোখে ভেসে উঠল। ঘড়ির দোকানে ওও গেছিল নিজের জন্যে ঘড়ি কিনতে তখন রিখিয়া পছন্দের ঘড়িটা টাকার জন্য কিনতে না পেরে মুখটা অন্ধকার করে ফেলেছিল তখন বড্ড মায়া লেগেছিল ওর। তাই ওই দোকানে বাকি টাকাটা দিয়ে বলেছিল চারশ তেই রিখিয়াকে ঘড়িটা দিয়ে দিতে। সৌহার্দ্য নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

“এসব বাদ দে। তোর নতুন পেন্টিং দেখা?”

” সবেতো এলি দেখাবো পরে।”

” ফুপা আর ফুপি কেমন আছেন?”

বিহানের হাস্যজ্জ্বল মুখটা নিমেষেই মলিন হয়ে গেল। লম্বা এক শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি কীকরে জানব তোর ফুপা-ফুপি কেমন আছেন?”

সৌহার্দ্য স্হির চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” একবার গিয়ে কথা বলে দেখে আয়না? হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে।”

” কিছু ঠিক করতে চাইনা আমি।”

” কিন্তু..”

সৌহার্দ্যকে কথাটা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই বিহান বলে উঠল,

” দেখ এই মুহূর্তে প্রচুর খিদে পেয়েছে আমার। তোর জন্যে তোর পছন্দের সব অর্ডার করে আনিয়েছি আমি। বেশ রাতও হয়েছে। চল আগে খেয়ে নেই তারপর বাকি কথা হবে।”

আয় ডায়নিং এ আয়। বলে বিহান উঠে চলে গেল। আর সৌহার্দ্য ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দিল। ছোট্ট একটা ঘটনা পুরো জীবনের মোড়টাই কীকরে ঘুরিয়ে দিতে পারে।

খাওয়ার টেবিলে খেতে খেতে সৌহার্দ্য বলল,

” কাল সকালে তুই আমার বাড়িতেই ব্রেকফাস্ট করবি।”

বিহান ভ্রু কুচকে বলল,

” আমাকে মামুর কথা শোনানোর খুব শখ তোর?”

” বাবার কালকে সকাল সকাল মিটিং আছে। বাড়ি থাকবেনা।”

” ওহ! তাহলেতো মামীর হাতের স্পেশাল ব্রেকফাস্ট করাই যায়।”

এরপর দুজন মিলে খেতে খেতে আড্ডাতো দিয়েছেই প্রায় শেষরাত অবধি জেগে থেকে দুই বন্ধু আড্ডা দিয়েছিল। বিহান বিয়ার খেলেও সৌহার্দ্য খায়নি। বিহান অনেকবার বলেছিল কিন্তু সৌহার্দ্য নেশা করেনা। শেষরাতের দিকে দুজনেই ঘুমিয়ে পরল এলোমেলো ভাবে।

________________

সূর্যের আলো পৃথিবীতে এই প্রান্তে পৌছে গেছে। কিন্তু কুয়াশার আর মেঘের কারণে সূর্যকে দেখা যাচ্ছে না আর না রোদ আসছে। ব্যালকনির রেলিং ধরে বাইরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ধোয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিচ্ছে রিখিয়া। চোখের দৃষ্টি স্হির আর উদাস। এরমধ্যেই তুর্বী নিজের নিজের এলোমেলো চুলগুলো নাড়তে নাড়তে, লম্বা হাই তুলে হেলতে দুলতে এসে রেলিং এ ভর দিয়ে বলল,

” গুড মর্নিং।”

রিখিয়া একপলক তুর্বীর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

” টেবিলে তোমার কফি ঢেকে রাখা আছে নিয়ে নাও।”

তুর্বী এবার ঘুমঘুম চোখ দুটো হাত দিয়ে কচলে নিয়ে বলল,

” কী হয়েছে রিখু?”

” কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তুর।”

তুর্বী ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লম্বা লম্বা পা ফেলে টেবিল থেকে কফির মগটা নিয়ে এসে বলল,

” হ্যাঁ এবার বলে ফেল কী হয়েছে?”

রিখিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” বাবা ফোন করেছিল। মাস শেষ হয়ে গেছে টাকার দরকার। কিন্তু আমি তো এখনও বেতনটাও পাইনি। এমাসে দেরী হবে বেতন দিতে। কীকরে টাকা পাঠাবো? আর ভাইয়াও নাকি সাফ বলে দিয়েছে বাড়িতে এ-মাসে টাকা দিতে পারবেনা। কীকরে চলবে সব?”

তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,

” তোর ভাইটা কী রে? বিয়ে করেছে ভালো কথা, বউকে ভালোবাসে সেটাও ভালো কথা তাই বলে বউয়ের আচলের তলায় লুকিয়ে পরতে হবে? যেই বাবা-মা জন্ম দিল, বড় করল তাদের প্রতি কোন দায়িত্বই নেই?”

এরমধ্যেই তুর্বীর ফোন বেজে উঠল তাকিয়ে স্ক্রিনে ‘Mrs Ahmed’ ছোট্ট শ্বাস ফেলল ও। রিখিয়া বলল,

” আন্টি ফোন করেছে?”

তুর্বী একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” মাস শেষ হয়ে গেছে না? এখনই তো ফোন করবে। নইলে সারামাসে বাঁচলাম কী মরলাম তাতে তার কী?”

বলে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মহিলা কন্ঠে কেউ কর্কশ স্বরে বলে উঠল,

” এইযে নবাবজাদি। মাস তো ফুরিয়ে গেল। টাকা পাঠানোর জন্যে কী এখন আমন্ত্রণ পত্র পাঠাতে হবে নাকি?”

তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,

” আজ সবে এক তারিখ হল। টাকা জমা হলে সেটা ব্যাংক থেকে তুলে পাঠাতে সময় লাগবেতো নাকি?”

ওপাশ থেকে আবার বলল,

” এই খবরদার বলছি মুখে মুখে তর্ক করবি না। কালকের মধ্যে যদি টাকা না পাই তাহলেই বুঝবি। বজ্জাত মেয়েছেলে।”

তুর্বী এবার রেগে গিয়ে বলল,

” কী করবে তুমি? এসব ফালতু ভয় একদম দেখাবেনা আমাকে। টাকা পাঠাই এটাই অনেক। খেতে পেলে শুতে চায়।”

বলে ফোনটা রেখে দিল তুর্বী প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর এই মুহূর্তে। ওপাশে থাকা মহিলাটা তুর্বীর স‍ৎ মা। মা ছোটবেলায় মারা গেছে, তারপরেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন ওর বাবা, আর ওর বাবাও দুবছর হল মারা গেছেন। রিখিয়া বলল,

” আরে ছাড়তো। উনিতো এমনই। তুইতো কালকেই বেতন পেয়ে যাবি। আমি কী করব? তুর্বী গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর হুট করেই ওর গলার পাতলা সোনার চেইনটা খুলে রিখিয়ার হাতে দিয়ে বলল,

” এটা বাধা দিয়ে আপাতত তোর বাড়িতে কিছু পাঠা। কাল আমি বেতন পেয়ে ঐ মহিলাকে কিছু পাঠাবো আর বাকিটা দিয়ে তোর বেতন আসতে আসতে চলে যাবে। পরে এটা ছাড়িয়ে নেব।”

রিখিয়া এবার ইতস্তত করে বলল,

” কিন্তু…”

” দেখ একদম মেলোড্রামা করবি না। চুপচাপ যা বলছি তাই কর।”

রিখিয়া আর কথা বাড়ালো না কারণ ও তুর্বীকে এখন শতবার বারণ করলেও ও শুনবেনা। তবে মাঝে মাঝে ভালো লাগে ওর। মেয়েটা চঞ্চল হলেও মনের দিক দিয়ে যে বড্ড সরল। তাইতো সৎ মায়ের ওমন কুৎসিত কথা, অবজ্ঞা শুনেও প্রতিমাসে টাকা পাঠায় দেখাশোনা করে। যেখানে ও চাইলেই ঐ মহিলাকে ফেলে চলে এসে এই শহরে আরামে থাকতে পারত।

_______________

সৌহার্দ্য আর বিহান মিলে সৌহার্দ্যর বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুমে ঢুকেই থমকে গেল। সৌহার্দ্যর বাবা শফিক রায়হান সোফায় বসে পেপার পড়ছেন। সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা পরা, দু একটা চুল ধুসর বর্ণ ধারণ করেছে, চোখে মুখে একরাশ গাম্ভীর্য। সৌহার্দ্য তো চমকে উঠল। তারমানে তার বাবা মিটিং এ যান নি? বিহানও অবাক হয়ে গেছে। তাই একটু রেগেই তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্যর বাবা কারো আসার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে সৌহার্দ্যকে দেখে কিছু বলবেন তার আগেই সৌহার্দ্যর পাশে বিহানকে দেখে রেগে গিয়ে বললেন,

” এই ছেলে এখানে কী করছে? তোমাকে কতবার বলেছি এই ছেলেকে আমার বাড়ির আশেপাশেও আনবে না। বলো?”

চেচামেচি শুনে সৌহার্দ্যর মাও দৌড়ে চলে এলো। বিহানকে দেখে খুশি হলেও স্বামীর কথা ভেবেই ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল ওনার। বিহান ইতস্তত করে বলল,

” মামু আমি..”

শফিক রায়হান ধমকের সুরে বলল,

” চুপ করো! মামু বলে ডাকবেনা আমায়। যার তার মামু নই আমি।”

সৌহার্দ্য এবার আর চুপ থাকতে পারলনা রেগে গিয়ে বলল,

” বাবা আমি এনেছি ওকে। তুমি অকারণে ওর সাথে এমন ব্যবহার কেন করছ?”

” এটা আমার বাড়ি, যাকে তাকে ধরে নিয়ে আসার অধিকার নেই তোমার।”

সৌহার্দ্য কিছু বলবে তার আগেই বিহান হনহনে পায়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। সৌহার্দ্য ডেকেও থামাতে পারলনা ওকে। সৌহার্দ্য এবার রেগে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ও আমার ভাই, আমার বন্ধু বাবা এরকমই যদি চলতে থাকে, তো বাবা আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে এই বাড়ি ছেড়ে। থাকো তুমি তোমার বাড়ি নিয়ে।”

বলে সৌহার্দ্যও বেড়িয়ে গেল। সৌহার্দ্য মা মিসেস নাহার কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললেন,

” ছেলেটা এলেই এমন কেন কর বলতে পারো? দেখবে একদিন এইজন্য আমার বাবান টাও বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।”

শফিক রায়হান হুংকার দিয়ে বললেন,

” গেলে যাক। কিন্তু তবুও কোন চরিত্রহীনকে আমার বাড়িতে জায়গা দিতে পারবনা।”

মিসে নাহার কিছু না বলে চলে গেলেন নিজের কাজে। আর শফিক রায়হান গম্ভীর শ্বাস ফেললেন। একসময়ে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটাই আজ তার কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিজের কলিজার এক অংশকে সে কেটে বাদ দিয়ে ফেলে রেখেছে। কী আর করার? পঁচে যাওয়া অংশ কেটে ফেলাই শ্রেয়।

#চলবে…

(রি-চেইক করা হয়নি, ভুলগুলো বুঝে নেবেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here