জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ১+২

0
535

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব_01+02
.
কুয়াশা আচ্ছন্ন জ্যামহীন রাস্তা দিয়ে সাদা রঙের একটা গাড়ি চলছে মধ্যম গতিতে। S.R. ফোন হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা পড়ছে । হঠাৎ একটা জায়গায় তার চোখ আটকে যায়,

” I want to have a relationship, But I am not ready for any commitment. মানে সিরিয়াস কিছু না। শুধু এক্সপিরিয়েন্সের জন্যে। কিন্তু এসব শুনে কেউ আসতে রাজিই হয়না। প্লিজ হেল্প মি।”

গাড়িতে বসে কিছু করার ছিলোনা, তাই ফোন স্ক্রোলিং করছিল ও। গত অডিও লাইভের শো তে মেসেজে যেসব প্রশ্ন করেছিল লিসেনার্সরা, সেগুলো এমনিই পড়ছিল। কিছু করার না থাকলে এটাই করে ও। কিন্তু এই মেসেজটা আবার চোখে পড়তেই আর মেসেজ দেখার ইচ্ছে রইলনা। আজকাল সম্পর্ক, প্রেম, ভালোবাসা এগুলোকে কতটা সস্তা করে তুলেছে এরা? সবটাই এদের কাছে খেলা? রিডিকিউলাস! তবে মেসেজের ব্যাক্তিটির বলার ধরনটা অনেকটা আলাদা মনে হল S.R. এর কাছে। অতি স্বাভাবিক একটা মেসেজের মধ্যেও অস্বাভাবিক কিছুতো একটা আছে। এসবে আর মনোযোগ না দিয়ে গাড়ির গ্লাসটা খুলে দিলো S.R.। সাথে সাথেই ঠান্ডা হাওয়ায় ভরে উঠল গাড়ির ভেতরটা। এই ঠান্ডা হাওয়া অদ্ভুতরকম ভালো লাগতে শুরু করল ওর কাছে। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে দেখতে লাগল কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ।

ভোরের হালকা কুয়াশার চাদরে চারপাশ ঢেকে আছে। জানুয়ারি মাস। শীত যাব যাব করেও গেলো না, হঠাৎ করে আবার জেঁকে বসল। এই শীতের সকালে কেউ আলসেমির চাদরে জড়িয়ে নিজেকে কম্বলের নিচে রেখে দিয়েছে, কেউ এখনও ঘুমোচ্ছে, কেউ বা একপ্রকার বাদ্ধ হয়েই সমস্ত আলসেমি ছেড়ে দিয়ে উঠে বেড়িয়ে পরেছে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে। এই ব্যস্ততম শহরে এই শীত, কুয়াশা, আলসেমি সবকিছু উপেক্ষা করে তাদের ছুটতে হয় জীবিকার জন্যে। কত বিচিত্র মানুষের জীবন, তার চেয়েও বিচিত্র মানুষের জীবনযাত্রা। বাইরের পরিবেশ দেখতে দেখতে রেডিও স্টেশনের সামনে গাড়ি এসে থামল। S.R. সরাসরি গাড়ি থেকে নামতেই ওকে নিতে দুজন লোক এলো। ওনারা S.R. কে নিয়ে ভেতরে গেলেন। S.R. গলায় আইডি কার্ড ঝুলাতে ঝুলাতে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে নিজের রুমে ঢুকে বসলো। ঢোকার সময় ওর হাতে একজন স্ক্রিপ্টের কাগজ ধরিয়ে দিল। S.R. নিজের চেয়ারে বসে স্ক্রিপ্টটা টেবিলের একপাশে রেখে দিল। আরেকটা লোক দ্রুতপদে এসে একটা ধোঁয়া ওঠা কফির মগ টেবিলে রেখে দিয়ে গেল। হেডফোন কানে নিয়ে, প্রয়োজনীয় সুইচগুলো অন করে কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালো। ওপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি থামস্আপ দেখাতেই S.R. মাইকটা নিজের ঠোঁট বরাবর ধরে বলতে শুরু করল,

” গুড মর্নিং ঢাকা। কেমন আছেন সবাই? আমি বেশ আছি। এই স্নিগ্ধ সকাল ,বাইরের আবছা কুয়াশা, কনকনে হাড় কাঁপা শীত, একটু আলসেমি, এই ধোঁয়া ওঠা কফির মগ আর তার সাথে আছি আমি আর.জে, S.R., হাজির হয়েছি আপনাদের সবার প্রিয় শো ‘প্রভাতের আলো’ নিয়ে। তো এই শীতের সকালে কেউ কম্বলের নিচে গুটিয়ে আছে, কেউ আলসেমি ঝেড়ে সবে উঠেছেন, কেউ কফির মগে চুমুক দিয়ে এই শীতের সকাল উপভোগ করছেন, কেউ কাজে যাচ্ছেন, আবার কেউ ঠিক কাজে চলে এসেছেন আমারই মত। কী আর করার? রোজগার করে তবেই তো খেতে হয়। তবে যাই বলেন, শীতের এই সকালটা শীতে কাঁপিয়ে কষ্ট দিলেও এক অদ্ভুত মিষ্টটা নিয়ে আসে। শীতকালের ভোরবেলা কোন নিরব জায়গায় গিয়ে দুহাত মেলে প্রকৃতিকে অনুভব করে দেখবেন। হৃদয় জুড়িয়ে যাবে।”

সমস্ত শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আরো কিছুক্ষণ কিছু কথা বলে শুরু করল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। শ্রোতারা নিজের জীবন, জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করবে আর S.R. তার উত্তর দেবে। অলমোস্ট সব রেডিও প্রেমিদের প্রিয় শো এটা, যতটা না প্রিয় এই শো তারচেয়েও প্রিয় এই শো যে করছে সেই মানুষটি। অস্বাভাবিকভাবে S.R. এর শো গুলোর শ্রোতা বহুগুণ বেশি হয়। সবার প্রিয় আর.জে. সে। কিন্তু তাকে আজ অবধি তারা কেউ দেখেও নি আর না তো কেউ চেনে। শুধু কন্ঠস্বর আর নামটাই জানা সকলের। অথচ সে অনেক মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে বসে আছে। শুধু কন্ঠ, বাচনভঙ্গি আর কথার মাধ্যমেই জয় করে নিয়েছে হাজার হাজার মন। শ্রোতাদের কাছ থেকে একটা একটা করে কল আসছে আর S.R. তাদের প্রশ্নের বা সমস্যার খুব চমৎকারভাবে সমাধান করছে। হঠাৎ একটা কল রিসিভ করার পর মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে উঠল,

” হাই S.R.?”

S.R. মুচকি হেসে বলল,

” জি, হাই । কাইন্ডলি আগে আমাদের আপনার নামটা বলুন?”

মেয়েটা অধৈর্য্য হয়ে বলল,

” আরে নাম ছাড়ুন। আমার প্রবলেমটা আগে শুনুন। আসলে আমার রিলেশনশীপ এর একটা এক্সপিরিয়েন্স চাই। মানে বাকি সবার মত আমিও রিলেশনশীপে যেতে চাই, কিন্তু কোন কমিটমেন্ট করতে পারবোনা। শুধুই ব্যাপারটার একটা এক্সপিরিয়েন্স নেওয়ার জন্যে, বুঝলেন?”

মেয়েটার কথা শুনে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেলো S.R.। কথাগুলো শুনেই আগের শো এর মেসেজের কথা মনে পড়ল। তারমানে ঐ মেসেজটা এই মেয়েটাই করেছিল। শুধুমাত্র এক্সপিরিয়েন্স এর জন্যে কেউ রিলেশনশীপে যেতে চায়? আর সেটাও যে এভাবে বড় করে এনাউন্স করা যায় সেটা ভাবতে পারেনি ও। নিজেকে সামলে একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” সরি?”

এবার মেয়েটা বিরক্ত হলো। ভীষণভাবে বিরক্ত হলো। এতো গুলো শব্দ খরচ করে, ভোকাল কর্ডের চার্জ নষ্ট করে, এতকিছু বলল এখন কী না বলছে ‘সরি’ ? সবার বাংলা বুঝলো ওরটাই বুঝলো না? চোখ বন্ধ করে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,

” আই মিন আই ওয়ান্ট টু হ্যাভ আ রিলেশনশীপ। বাট আ’ম নট রেডি ফর কমিটমেন্ট। কিন্তু ছেলেরা যাও একটু ইন্টারেস্ট দেখায়,এই কথা শুনে সবগুলো ইউটার্ন মারে। কিন্তু আমি রিলেশন করব, মানে করবই। নাও ইউ সাজেস্ট মি হোয়াট শুড আই ডু?”

S.R. কী বলবে সেটাই ভাবছে। এমন কথার উত্তরে কী বলা যায়? এটা কেমন সমস্যা? আর এই সমস্যার সমাধানই বা কেমন হতে পারে? আগের শো তে মেসেজটা দেখেও ইগনোর করে গেছে। কিন্তু এখন কীকরে এড়াবে? সকলের সামনেই তো বলে ফেলেছে মেয়েটা। কিন্তু কিছু যে বলবে এই কথার পিঠে, বলার মত কোন কথাও পাচ্ছেনা ও। ওপাশ থেকে মেয়েটা বলল,

— ” আরে! সাইলেন্ট হয়ে গেলেন কেন? কিছু কী বলবেন নাকি রাখব?”

যেই S.R. এর ঠোঁটের ডগায় সব প্রশ্নের উত্তর থাকে, সে কোন প্রশ্নে চুপ হয়ে গেছে। ভাবা যায়? S.R. লাইনটা কেটে দিয়ে ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে বলে কোন রকমে সবটা ম্যানেজ করে নিলো। তারপর শো কন্টিনিউ করল। শো টা শেষ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে হেডফোন নামিয়ে চেয়ারে হেলান দিলো ও। মেয়েটার কথা ভাবতেই অবাক লাগে। কী ভয়ংকর মেয়ে? তবে কন্ঠটা চমৎকার। যে মেয়ের কথাতেই এত তেজ সে মেয়ে বাস্তবে কতটা তেজস্বিনী হবে? নিজের অজান্তেই এসব চিন্তায় বিভোর হয়ে গেল S.R.।

এদিকে মেয়েটা ফোনটা রেখে মুখ ফুলিয়ে ‘অ‍্যাহহ’ টাইপ শব্দ করে ফোনটা বেডে ছুড়ে মারল। কিছুক্ষণ চোখ মুখ ফুলিয়ে বসে থেকে ‘রিখু’ বলে চেঁচিয়ে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ল। মেয়েটার নাম ‘তুর্বী আহমেদ’। পেশায় একজন জুনিয়র আর্কিটেক্ট। পড়াশোনা শেষ করে সদ্যই চাকরি জয়েন করেছে। জীবন নিয়ে সবরকমের এক্সিপিরিমেন্ট করতে চায় ও। ওর মতে যতক্ষণ বাঁচব প্রাণখুলে বাঁচব। কালকে কী হবে কে জানে? তবে ইদানীং কিছুই ওর ভালো লাগছে না। ওর মনে হচ্ছে ওর লাইফটা বোরিং হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য এক্সাইটিং কিছু একটা করতে চাইছে যাতে লাইফের এই বোরিংনেস কেটে যায়। তাইতো রিলেশনশীপের একটা এক্সিপিরিয়েন্স চাই ওর। ওর মতে এক্সাইটিং হবে ব্যাপারটা। তবে সেটা শুধুই এক্সপিরিমেন্টের জন্যে। মোটেও সিরিয়াস কিছু না। প্রেম, ভালোবাসা নিয়ে ভাবার অত সময় নেই ওর। কিন্তু কোন ছেলে যখনই তুর্বীর কাছ থেকে এসব শোনে তখন তারা সবাই উল্টো দৌড় মারে। মারারই কথা এরকম রিলেশনশীপে কে থাকতে চায়? তাইতো ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাজেশন অনুযায়ী S.R. এর কাছে সাজেশন চেয়েছিল কিন্তু সেতো প্রশ্ন শুনেই ইউটার্ন মারলো। লাইফটা এক্সাইটিং করতে না পারার দুঃখে তুর্বী এখন ফলস্ ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে শুয়ে বুটভাজা চিবোতে লাগল, আর কারো আসার অপেক্ষা করতে লাগল।

__________________

অনেকটা বেলা হয়েছে, কুয়াশা কেটে সূর্যের আলো উঁকি দিতে শুরু করেছে চারপাশে। সবাই বেড়িয়ে পরেছে। ব্যস্ততম শহর তার ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মাসিক বাজার সেড়ে নিল রিখিয়া। বাজার সেড়ে শপিং মলে ঢুকলো একটা শাওয়ার জেল আর একটা ঘড়ি কিনতে হবে। শপিং মলে ঢুকে শাওয়ার জেলটা কিনলেও ঘড়ি পছন্দ করতে পারছেনা। যার জন্যে ঘড়ি কিনবে সে একটু ডার্ক আর বয়েস্ টাইপ ঘড়িই পছন্দ করে। কিন্তু সেভাবে মিলিয়ে পাচ্ছে না। এই শীতেও অনেকটা ঘেমে গেছে ও। ওপরে ভালো মানের ঘড়ি পাওয়া যায় তাই রিখিয়া লিফটের সামনে গেল। লিফটের বাটন প্রেস করে দাঁড়িয়ে আছে, আর নাকের নিচটা মুছছে। লিফট এসে খুলতেই ও ভেতরে যেতে নিয়েও সামনে তাকিয়ে থমকে গেল। এমন কিছু দেখবে ভাবেনি ও। ফিল্মে এসব হতে দেখে আর নাক ছিটকায়। কিন্তু বাস্তবেও যে এমন কিছু দেখবে ভাবতে পারেনি। লিফটের ভেতরের ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

” এইযে মিস? হয় ভেতরে আসুন নয় বাইরে যান? মাঝখানে ঝুলে আছেন কেন?”

রিখিয়া একটু হকচকিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। ছেলেটা রিখিয়াকে আগাগোড়া একবার স্ক্যান করল। লম্বা সাদা কুর্তি, নীল জিন্স, আর গায়ে মার্জিতভাবে নীলওড়না জড়িয়ে রাখা। বারবার ইতস্তত করে তাকাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা অনেকটা ভদ্র আর ক্লাসিক টাইপ। এই শীতেও হালকা ঘামে ভেজা মুখটায় অজস্র মায়া খুঁজে পেলো ছেলেটা। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। ছেলটার গলা জড়িয়ে রাখা মেয়েটা ন্যাকাস্বরে বলল,

” বিহান, কী হলো বেবী? ওদিকে কী দেখছ?”

বিহান মেয়েটার কোমর জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,

” তোমাকে ছাড়া আমি আর অন্যকিছু দেখতে পারি বেবী?”

বলে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল বিহান। রিখিয়া হাত ভাঁজ করে ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে তাকাল। কী নির্লজ্জ? ও যে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কিছু যায় আসছেনা দুজনের? এসব ন্যাকামো কোনকালেই ভালো লাগেনা ওর। এইটুকু সময়ের মধ্যেই রিখিয়া বুঝে ফেলল ছেলেটা প্লে-বয় টাইপ। ভালোবাসা খুব পবিত্র জিনিস। কোন একজনকেই সবটা উজাড় করে নিজের ভালোবাসা দেওয়া উচিত। রিখিয়াতো এটাই মানে। অথচ এরা কী করে এসব? ছিহ্। রিখিয়ার মতে এরা খুবই জঘন্যতম মানুষের কাতারে পরে। একদমই জঘন্য। ও শুধু অপেক্ষা করছে কখন লিফট থেকে ও বেরোতে পারবে। এসব যে ওর বড্ড বেশি অসহ্য লাগে। রিখিয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হল নিজের কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে পৌঁছে এদিক ওদিক না তাকিয়েই বেরিয়ে গেল ও। কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে একজন ‘এইযে মিস’ ডেকে উঠল। রিখিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে সে আর কেউ নয় একটু আগের সেই ছেলেটা মানে বিহান। বিহান ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে এসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

” কী নাম তোমার?”

রিখিয়া খুব শান্ত একটা মেয়ে। তর্ক করতে পছন্দ করেনা, করেও না। তাই মনে মনে বিরক্ত হলেও নরম কন্ঠে বলল,

” রিখিয়া। রিখিয়া ইসলাম।”

“ওয়াও, সো কিউট। আচ্ছা..”

বিহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল রিখিয়া। বিহান ডেকেও সাড়া না পেয়ে বিড়বিড় করে বলল,

” যাহ! চলে গেল।”

ওপরে এসে একটা দোকানে শেষমেশ একটা ঘড়ি ওর পছন্দ হল। একদম ও যেমন চাইছিল আরকি। ও সেলস্ বয়কে জিজ্ঞেস করল,

” কত দাম এটার?”

“এক হাজার টাকা।”

ঘড়িটার দাম শুনেই মুখ কালো হয়ে গেল রিখিয়ার। এতটা বাজেট তো ওর নেই। তাই ও ছোট মুখেই জিজ্ঞেস করল,

” একটু কম হবেনা?”

” কত দিতে চান আপনি?”

রিখিয়া ইতস্তত করে বলল,

” চারশ?”

সেলস্ বয় হেসে দিয়ে বলল,

” সরি ম্যাম, হবেনা।”

বেশ মন খারাপ নিয়েই দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটা দিলো রিখিয়া। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর পেছন থেকে সেই সেলস্ বয় ডাকল ওকে। ও অবাক হয়ে আবার গেল ওখানে। সেলস্ বয় রিখিয়াকে সেই ঘড়িটাই চারশ টাকায় দিতে রাজি হয়ে গেল। রিখিয়া প্রথমে অবাক হল, কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষটার জন্যে নেবে তাই খুশি হয়ে কিনে নিল। যদিও খটকা রয়েই গেছে ওর মনে। তবে ঘড়িটা কিনতে পেরে খুব খুশি হয়েছে ও। কারণ যাকে ঘড়িটা দেবে সে ঘড়িটা পেয়ে খুশি হবে। তাই খুব খুশি মনেই রওনা হলো ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে।

বিহান শপিং মল থেকে বেরিয়ে ওর সেই সো কলড গার্লফ্রেন্ড কে বিদায় দিয়ে রওনা হলো নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করতে। পনেরো দিন পর আজ দেশে এলো। কতদিন দেখা হয়না নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু সৌহার্দ্যর সাথে। এখন সৌহার্দ্যর সাথে দেখা করাই ওর কাছে প্রধান কাজ।

#চলবে…

( নিন আজ থেকেই শুরু করলাম নতুন গল্প। আশা করছি ভালো লাগবে সবার। হ্যাপি রিডিং।)

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২
.
একটা রেস্টুরেন্টের টেবিলে নিজের কাজ করছে সৌহার্দ্য। আসলে কারো জন্যে অপেক্ষা করছে। কিন্তু বসে বসে কী করবে? তাই ল্যাপটপে নিজের কিছু কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ করেই একজন কাশির শব্দ পেল। সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল, সাথে সাথে মুখে ফুটে উঠল এক অসাধারণ হাসি। মুখ দিয়ে আনন্দিত স্বরে ‘বিহান’ উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে গেলেই বিহান হাত দিয়ে আটকে দিয়ে বলল,

” দাঁড়ান স্যার? আগে জেনে নেই কাকে হাগ করছি? আমার বন্ধু সৌহার্দ্য কে? নাকি…?”

সৌহার্দ্য নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিল, বিহানও চোখ টিপ মেরে জড়িয়ে ধরল সৌহার্দ্য কে আর সৌহার্দ্য জড়িয়ে ধরল নিজের প্রাণপ্রিয় ছোটবেলার বন্ধুকে। হ্যাঁ একেবারে তিনবছর বয়স থেকেই একে ওপরের বন্ধু ওরা। ওদের আরেকটা পরিচয় আছে বিহান সৌহার্দ্যের ফুপাতো ভাই। একজন অপরজনের প্রাণ। কতদিন পর দেখা হলো দুজনের। সৌহার্দ্য বিহানকে ছেড়ে ঘাড় বাকিয়ে বলল,

— ” একা যে, গার্লফ্রেন্ডরা একা ছাড়ল?”

বিহান হেসে দিয়ে বলল,

— ” ছাড়তো! চল বসি।”

এরপর দুজনেই টেবিলে বসল। সৌহার্দ্য বলল,

” কী খাবি বল?”

“আপনি ভালোবেসে যা খাওয়াবেন স্যার!”

সৌহার্দ্য আজ সবকিছুই বিহানের পছন্দমত ওর্ডার করল। দুজনে খাওয়া-দাওয়া করে বেড়িয়ে পরল। আজ দুই বন্ধু মিলে রাস্তায় পায়ে হেটে ঘুরবে। এটা ওদের পুরোনো অভ্যেস। যখনই অবসর পায় দুই বন্ধু মিলে হাটতে বেড়োয়। দুজনে হাটতে হাটতে একটা বেশ মাঠের কাছে চলে এলো। হঠাৎ একটা মেয়ে চেঁচিয়ে বলল,

” বিহান? ইউ আর ব্যাক? আর আমায় জানাও নি?”

বিহান মেকি হেসে বলল,

” আজ সকালেই এলাম। এক্ষুনি তোমাকে কল করতাম।”

” ওহ, তাহলে চলোনা বেবী, কতদিন পর এলে? নিজেদের মত একটু সময় কাটাই।”

” আসলে কী বলোতো? আমার বন্ধুর সাথে এসছি আমি। সন্ধ্যায় দেখা করি?”

“তুমি সবসময় এমন বাহানা কর। দূর! ভালোলাগে না।”

বলে মুখ ফুলিয়ে চলে গেল মেয়েটা। বিহান বিড়বিড় করে বলল ‘ বাঁচা গেল’। বলে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে ও চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। বিহান মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে একটু ইতস্তত করল। সৌহার্দ্য মাথা দুলিয়ে বলল,

” এত লজ্জার কিছু নেই? ওটা তোকে সুট করে না। আর আমিতো এগুলো নতুন দেখছি না তাইনা?”

বিহান কিছু না বলে নিজের মাথা চুলকালো। সৌহার্দ্য বলল,

” তা মেয়েটার সাথে গেলেই তো পারতি?”

” তোর চেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট আমার কাছে কিচ্ছু না, কেউ না। এরা তো শুধুই টাইমপাস।”

” কেনো করিস এসব?”

” বাচাঁর জন্যে।”

সৌহার্দ্য একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে একটু চুপ থেকে বলল,

— ” হুম। তবে এতদিন ভাবতাম তোর মত জিনিস আর হয়না। কিন্তু আজ বুঝলাম এরকম এলিয়েন আরও একজন আছে দুনিয়াতে।”

বিহান অবাক হয়ে বলল,

” আরিব্বাস! তাই নাকি? আমিও তো এতদিন তাই ভাবতাম। কে সে?”

” ছাড় সেসব। তোর কথা বল এসেছিস সেই কখন। এতক্ষণ কী করলি?”

বিহান হেসে বলল,

” শপিংমলে গেছিলাম। তবে ওখানে গিয়ে ভিন্ন কিছু দেখলাম।”

সৌহার্দ্য কৌতূহল নিয়ে বলল,

” কীরকম?”

এরপর বিহান রিখিয়ার সব কথা খুলে বলল। সৌহার্দ্য হেসে বলল,

” ঠিকই আছে। তোদের মত লাইফটাকে মজা ভাববে নাকি? বাই দা ওয়ে প্রেমে টেমে পরে যাসছি তো?”

বিহান মুচকি হেসে বলল,

” মেয়েটাতো পাত্তাই দিল না।”

সৌহার্দ্য হেসে দিয়ে বলল,

” ওরকম মেয়েরা পাত্তা দেবেও না। তোদের মত জীবনটাকে তো ফানি গেইম মনে করেনা।”

বিহান বিরক্ত হয়ে বলল,

” তুই একটু বেশিই সিরিয়াস সব বিষয়ে।”

সৌহার্দ্য স্বাভাবিক স্বরে বলল,

“হয়ত।”

বিহান সৌহার্দ্যর গায়ে চাপড় মেরে বলল,

” তবে দেখিস তোর ঘাড়ে এমন কেউ এসে চাপবে যে তোকে বোঝাবে যে সব কিছু নিয়ে বেশি সিরিয়াস হয়ে ভাবলে জীবনটা আর জীবন থাকেনা রেলগাড়ি হয়ে যায়। যে শুধু ছুটে চলে আর নির্দিষ্ট স্টেশনেই থামে। নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাচ্ছন্দতা জিনিসটাই ভুলে যায়।”

সৌহার্দ্য একটু হাসলো। তারপর বলল,

— ” আর তোরও এমন কাউকে দরকার যে তোকে জীবনের গুরুত্ব শেখাবে। শেখাবে যে জীবনটা কোন সার্কাস বা ফান গেম নয়। যেখানে শুধুই হাসিঠাট্টা থাকবে, জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থাকে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবা উচিত।”

এরপর এসব গম্ভীর কথাবার্তা ছেড়ে দুই বন্ধু মিলে মাঠের পাশের পুকুরের পাড়ে বসে নিজের আড্ডায় মেতে উঠল। যাকে বলে প্রাণখুলে মনের কথা বলা।

________________

ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে বড় সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে তুর্বী। তাও বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে। বা পা সিঙ্গেল সোফার ওপরে দিয়ে রেখেছে আর ডান পা ফ্লোরে মেলে রেখে দিয়েছে। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে আর চিপস চিবোচ্ছে। এটা ওর অভ্যাস। যখন কিছু ভাবতে থাকে তখন মুখে কিছু না কিছু দিয়ে ওকে চিবোতেই হবে। এরমধ্যেই রিখিয়া কিচেন থেকে দু-হাতে দুটো হাফ-প্লেটে করে পাস্তা নিয়ে বেড়িয়ে এলো। এসে তুর্বীকে এভাবে বসে ভাবতে দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। এরপর তুর্বীর পাশে ফ্লোরে বসে, পাস্তার প্লেটদুটো নিচে রেখে টান দিয়ে সিঙ্গেল সোফা থেকে ওর পা টা নিচে নামিয়ে দিল। তুর্বী হকচকিয়ে গিয়ে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এল। রিখিয়া ওর হাত থেকে চিপসের প্যাকেটটা একটানে নিয়ে বলল,

“এমন উদ্ভটভাবে কে বসে? কিছুই শিখলেনা এখনও তুর।”

তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বলল,

” আরে রিখু ইয়ার, ছাড়না। কে দেখতে আসছে? প্যাকেটটা দে না?”

বলে আবার সিঙ্গেল সোফায় ওপর পা রাখল। রিখিয়া একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,

” জি না। এটা ব্রেকফাস্ট করার সময়, বসে বসে এইসব চিবিনোর সময় না। কতটা বেলা হয়েছে।”

বলে তুর্বীর হাতে পাস্তার প্লেটটা ধরিয়ে দিলো। তুর্বী মুখ বাকিয়ে প্লেটটা নিয়ে চামচ দিয়ে পাস্তা নাড়তে শুরু করল। রিখিয়া তুর্বীর কপালে হাত দিয়ে ওর জ্বরটা চেক করে নিল। চেক করে দেখল যে না জ্বরটা আর আসেনি। একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে পাস্তা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। কাল রাতে ভীষণ জ্বর এসছিল মেয়েটার যদিও সকালের মধ্যেই সেড়ে গেছে। তাই আজ সকালে বাজারটা করতে রিখিয়াই গিয়েছিল, না হলে এমনিতে তুর্বীই বাজারের কাজটা করে। তুর্বী আর রিখিয়া হলো ফ্লাটমেট। একে ওপরকে ‘তুর’ আর ‘রিখু’ বলে ডাকে। তুর্বী রিখিয়াকে ‘তুই’ করে বললেও রিখিয়া তুর্বীকে ‘তুমি’ ‘তুই’ দুটোই বলে। এই দুজনেও দুইকমের মানুষ। তুর্বী ছটফটে, প্রাণবন্ত, এক্সপেরিমেন্টাল, যখন মনে যা আসে তাই করে। আর রিখিয়া শান্ত, গুটিয়ে থাকে, সেন্টিমেন্টাল, কিছু করার আগে একটু ভেবেচিন্তে করে। কিন্তু তবুও দুজনের বন্ধুত্বের বন্ডিং টা অসাধারণ। বেশিদিনের পরিচয় নয় দুজনের। দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।পরিবারকে সাপোর্ট দিতে দুজনেই এই ব্যস্ত ঢাকা শহরে দুজনেই এসছে চাকরির উদ্দেশ্য। আর এখানে এসেই আকস্মিকভাবে আলাপ দু-জনের আর খুব দ্রুতই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রিখিয়া একটা বেসরকারি ব্যাংকে জয়েন করেছে মাস দুই হলো। আর তুর্বীও মাস দুই আগেই একটা কম্পানিতে জুনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে জয়েন করেছে। যেহুতু দুজনেরই কর্মক্ষেত্র একই শহরে ছিল তাই তাড়া দুজনে মিলেই একটা ফ্লাট ভাড়া করে থাকে। এরকমই অফিস করে, ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে, মাঝে মাঝে ঘোরাফেরা করেই দিন কাটে ওদের দিনকাল। তুর্বী পাস্তা চিবুতে চিবুতে বলল,

” বাই দা ওয়ে। আজকে বাজার করার এক্সপিরিয়েন্স কেমন ছিল?”

রিখিয়া প্লেটটা নামিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” মারাত্নক ছিল। এই শীতেও ঘাম বেড়িয়ে গেছিল আমার। আমি এতদিন ভাবতাম রান্না করে আমিই হয়তো সব উদ্ধার করে দিচ্ছি। কিন্তু না বোন, বাজার করাটাও ভীষণ কঠিন।”

তুর্বী গোল গলার টিশার্ট টা নাড়িয়ে একটা দাম্ভিক হাসি দিল। যেন খুব বিশাল কিছু করে ও। রিখিয়া বলল,

— ” বড় সোফার ওপরে একটা প্যাকেট আছে দেখো?”

তুর্বী ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে বড় সোফায় তাকালো। একটা ছোট্ট শপিং ব্যাপ কোণায় পরে থাকতে দেখে মুখের পাস্তাটা গিলে নিয়ে বলল,

” কী আছে ওটায়?”

” খুলেতো দেখ?”

তুর্বী প্লেটটা রেখে শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একটা বক্স পেলো। বেশ অবাক হয়েই বক্সটা খুলল। বক্সটা খুলে আরও অবাক হলো তুর্বী। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পরেই মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। খুশিতে চিৎকার করে বলল,

” থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

” পরে দেখ।”

” তুই পরিয়ে দে।”

রিখিয়া খুব যত্ন সহকারে ঘড়িটা পড়িয়ে দিল তুর্বীর হাতে। তুর্বীর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কত খুশি। হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই তুর্বী বলল,

— ” ঘড়িটা তো বেশ দামী। এত টাকা কোথায় পেলি?”

— ” জানিনা, প্রথমে হাজার টাকা বলল কিন্তু পরে নিজেরাই ডেকে চারশ টাকায় দিয়ে দিল।”

তুর্বী অবাক হয়ে বলল,

” কীহ?”

” এসব ছাড়ো? আজ ‘প্রভাতের আলো’ শো টা তে কল করেছিলে? কী বলল আর.জে. S.R?”

তুর্বীর মুখে আবার বিরক্তি ভর করল। বিরক্তি নিয়ে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” রাখতো তোর S.R.। ওনার এত নাম, প্রশংসা সবই ধপের চপ। তোর মুখে ওনার এত প্রশংসা শুনে মনে করেছিলাম কী না কী সে? কিন্তু আমার একটা সিম্পল প্রবলেম সলভ করতে পারল না।”

” অসম্ভব! তুমি জানো উনি কত ভালো আর.জে.। সব প্রশ্নের উত্তর ওনার ঠোঁটের ডগায় থাকে। জানো আমার কত পছন্দের উনি।”

” ধূর! আমার তো মনে হয় ওই ব্যাটা ধপবাজি করে সবার সাথে। নিশ্চয়ই সব স্ক্রিপ্টেড।”

” আরে কী বলছ এসব? আচ্ছা তোমার প্রশ্নটা কী ছিল বলোতো?”

এরপর তুর্বী রিখিয়াকে সবটা ক্লিয়ার করে বলল। সবটা শুনে রিখিয়া বোকার মত তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। তারপর হতাশ কন্ঠে বলল,

” S.R এর কী দোষ? তোমার এমন প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না।”

তুর্বী অধৈর্য হয়ে বলল,

” কেন পারবেনা? পারতে হবে? আমার উত্তর চাই। আ’ম টু মাচ বোরড ইয়ার। একটু এক্সাইটমেন্ট চাই। যতক্ষণ সেটা না পাবো ততক্ষণ শান্তি পাবোনা।”

রিখিয়া এবার আসাম করে বসে তুর্বীর দিকে ঘুরে বলল,

” রিলেশনশীপ এক্সপিরিমেন্টের জিনিস না তুর। আজকাল তো মানুষ এটাকে খেলনা মনে করে। কিছুক্ষণ আগেও শপিং মলে একটা উদ্ভট ছেলের সাথে দেখা হয়ে।”

তুর্বী বেশ ইন্টারেস্ট নিয়ে নড়েচড়ে বসে বলল,

” ওয়াও! উদ্ভট ছেলে? কী হয়েছে খুলে বল না?”

রিখিয়া শপিং মলের লিফট থেকে শুরু করে ওকে ডেকে নাম জিজ্ঞেস করা অবধি সব বলল। সবটা শুনে তুর্বী উচ্ছসিত হয়ে হাতে একটা ক্লাব মেরে বলল,

” বাহ! কী এটিটিউড ভাই? একদম কুল এন্ড রক টাইপ!”

“তোমার ভালো লেগেছে? আমার তো জঘন্য একটা লোক মনে হল।”

” কী বলছিস? এই নামটা কী রে?”

” কী জানি? কী জেনো বলল মেয়েটা? হ্যাঁ বিহান।”

” ওয়াও নামটাও একদম জোস।”

” যাগ গে বাদ দে এসব কথা। যেটা বলছিলাম। দেখ তুই যেটা চাইছিস সেটা সম্ভব নয়। আচ্ছা একটা কথা বল ফিল্মের টিটেল ”কাভি খুশি কাভি গাম’ হলো কিন্তু ‘হার ওয়াক্ত খুশি’ কেন হলো না?”

তুর্বী স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,

“কারণ এটা একটা ডাম্ব টাইটেল।”

” আরে না। আমি বলতে চাইছি। সুখ, দুঃখ দুটোই কম বেশি সবার জীবনে থাকবেই। কেউই সবসময় পুরোপুরি খুশি থাকতে পারেনা।”

তুর্বী ভ্রু কুচকে বলল,

“কে বলেছে? সেদিন ঐ বাড়িওয়ালার বড় ছেলে তৌহিদ যখন সিঁড়ি দিয়ে পরে গেল তখন আমি পুরোপুরি খুশি হয়েছিলাম।”

রিখিয়ার তুর্বীর দিকে তাকিয়ে একটা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করল। এই মেয়ে শোধরানো ওর কাজ না। এখন মনে মনে এটাই প্রার্থনা করছে যাতে তুর্বীর জীবনে এমন কেউ আসে যে ওকে বোঝাবে যে জীবনে সবকিছু নিয়ে এক্সপিরিমেন্ট করা উচিত নয়, কিছু কিছু জিনিস নিয়ে ভাবতে হয়, বুঝতে হয়। আর এদিকে তুর্বীও মনে মনে চাইছে রিখিয়ার জীবনে এমন কেউ একজন আসুক যে ওকে এই অতিরিক্ত জড়তা, সংকোচ আর গন্ডি থেকে বের করবে,ওকে বাঁচার মত বাঁচতে করে শেখাবে, জীবনটা উপভোগ করাবে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here