ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৩২

0
793

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_32

এদের দেখে মেঘের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।ও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো।ও নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।এই মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?মেঘ অস্পষ্ট স্বরে বললো

“সৃষ্টি!”

মেঘ ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে হাটু ভেঙে বসে পড়লো।সেই দিনের সেই সৃষ্টির মধ‍্যে আর আজকের সৃষ্টির মধ‍্যে আকাশ পাতালের ডিফারেন্স।সেই দিনের সেই সুন্দর স্মার্ট মেয়েটা আজকে ক্ষত বিক্ষত হয়ে চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় পড়ে আছে।মেঘের মনে শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে,,এতো নিষ্ঠুরও কি কেউ হতে পারে?কিভাবে একটা মেয়েকে কেউ এইভাবে মারতে পারে?এই মেয়েটা এমন কি দোষ করেছে যার জন‍্য ওকে এতোটা ভয়ংকর শাস্তি পেতে হলো?মেঘের চোখ থেকে অঝোড়ে পানি পড়ছে।ভয়ে ও ওর মুখ হাত দিয়ে জোড়ে চেপে রেখেছে যাতে ওর কান্নার সাউন্ড কেউ শুনতে না পারে।মেঘ নিজেকে একটু শক্ত করে মনে মনে ডিসাইড করে নিলো,, যে করেই হোক ও সৃষ্টিকে এখান থেকে বাচিয়ে নিয়ে যাবে।তাই ও ওখান থেকে একটু সরে আড়ালে গিয়ে লোক গুলোর বের হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।
____
মুখোশ পড়া লোকটা মাথা উঠিয়ে একবার সৃষ্টির দিকে তাকালো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে গান টা কোমরে গুজে গার্ডদের কে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে সৃষ্টিকে দেখিয়ে গম্ভির কন্ঠে বললো

“এই ডাষ্টবিন টাকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে আসো।যদিও ওকে আরো কয়েকদিন টর্চার করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু এখন আমার পড়িটা এখানেই আছে,,ও যদি এসব দেখে তাহলে খুব ভয় পাবে।তাই এইবারের মতো এই মেয়েকে মাফ করে দিলাম।আর শোনো এই মেয়েকে এই রুম থেকে সরানোর পর পুরো রুমটা সুন্দর করে ক্লিন করবে।রুমের কোথাও যেনো রক্তের ছিটে ফোটাও না থাকে।বুঝেছো?”

হুডি পড়া লোকটার কথায়,পিছনের সেই চারজন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ওদের সম্মতি পেয়ে লোকটা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।মেঘ ওইপাশে লুকিয়ে ছিলো তাই লোকটার কথা কিছুই শুনতে পায়নি।আর লোকটাও বের হওয়ার সময় মেঘকে দেখতে পায়নি।হুডি পড়া লোকটা বের হতেই সেই চারজন মাক্স পড়া লোকও সৃষ্টিকে কিভাবে নিয়ে যাবে তার ব‍্যাবস্থা করতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো।ওরা যেতেই মেঘ আড়াল থেকে বের হয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে পা টিপে টিপে ভিতরে প্রবেশ করলো।ভিতরে গিয়ে সৃষ্টির সামনে দাড়াতেই ওর আবার কান্না চলে আসলো।কি অবস্থা করেছে মেয়েটার এরা আদৌ মানুষ নাকি জানোয়ার?মেঘ আস্তে আস্তে করে সৃষ্টির গালে হাত রেখে চাপর মেরে ডাকলো।

“ম‍্যাম!ম‍্যাম! প্লিজ উঠুন।”

(মেঘ সেদিন সৃষ্টিকে ম‍্যাম ডেকেছিলো তাই আজকেও ম‍্যাম ডাকলো।)

মেঘের মৃদু কন্ঠের ডাকে সৃষ্টি অনেক কষ্টে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকালো।তারপর কিছুক্ষন নিভু নিভু চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই ও মেঘকে চিনে ফেললো।মেঘকে দেখেই ওর মনে আশার আলো জেগে উঠলো। মেঘের দিকে তাকিয়ে অসফুট স্বরে বলতে লাগলো

“প-প্লিজ বাচাও আমাকে। এরা আমাকে মেরে ফেলবে।আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো প্লিজ।”

মেঘ দ্রুত মেয়েটার হাত চেয়ার থেকে খুলতে খুলতে বললো

“চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে এখান থেকে বাচিয়ে নিয়ে যাবো।কিন্তু আপনি এখানে কিভাবে আসলেন?আর ওই লোক গুলোই বা কারা?”

বলেই মেঘ সৃষ্টির হাতের দড়িটা খুলে, হাটু গেড়ে সৃষ্টির সামনে বসে পায়ের দড়ি খুলতে লাগলো।সৃষ্টি মেঘকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।মেঘের দিকে তাকিয়ে বারবার ঠোট নাড়াচ্ছে কিন্তু এতো মার খাওয়ার জন‍্য শরির একদম দূর্বল হয়ে গেছে তাই গলা থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।সৃষ্টি একটা সময় কথাটা বলতে না পেরে অস্থির হয়ে উঠলো।সৃষ্টিকে এতোটা অস্থির হতে দেখে মেঘ শান্তনার স্বরে বললো

“ম‍্যাম থাক,,আপনাকে কিছু বলতে হবে না।যা জানার পরে জেনে নিবো।আপাততো আমাদের এক্ষুনি এখান থেকে যেতে হবে।যেকোনো সময় ওরা এখানে চলে আসতে পারে।”

বলেই মেঘ সৃস্টির পা টা খুলে দিয়ে নিজে সোজা হয়ে দাড়ালো।তারপর সৃষ্টিকে বসা থেকে উঠিয়ে দাড় করিয়ে আস্তে আস্তে রুমের বাইরে যাওয়ার জন‍্য রওনা দিলো।সৃষ্টি নিজের গায়ের প্রায় সব ভর মেঘের উপর ছেড়ে দিয়েছে।মেঘ অনেক কষ্টে ওকে ধরে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।মেঘ সিড়ির কাছে এসে দাড়িয়ে গেলো তারপর উকি দিয়ে নিচের দিকে তাকালো নিচে কেউ নেই সব কেমন নিস্তব্ধ।ও আশে পাশে একবার সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে নিলো,,নাহ এখানে কেউ নেই।মেঘ একটা স্বস্তির নিস্বাস ফেলে পা টিপে টিপে সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো।নিচে নেমে একটু সামনে এগোতেই ওদের কানে গুলির বিকট একটা শব্দ ভেষে এলো।হঠাৎ এতো জোড়ে শব্দ হওয়ায় মেঘ আর সৃষ্টি ভয়ে একে অপরের থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।মেঘ ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিতেই দেখলো সেই হুডি পড়া লোকটা গান উপরের দিকে পয়েন্ট করে দাড়িয়ে আছে।মানে ইচ্ছে করেই উপরের দিকে মিস ফায়ার করেছে।মেঘকে আরো একধাপ অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে সাত আটজন গার্ড হাতে গান নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো ,,সাথে কিচেন থেকে কয়েকজন মহিলা সার্ভেন্টরাও ছুটে আসলেন।মেঘ চোখ বড় বড় করে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।ও এতোক্ষন ভাবছিলো বাড়িতে তেমন কেউ নেই কিন্তু এখন দেখছে মানুষের অভাব নেই। মেঘের ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।ও এখন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।

এদিকে সৃষ্টি হুডি পড়া লোকটাকে দেখে খুব ভয় পেলো। কিন্তু ও শুধু একটা কথাই ভাবছে কিভাবে এখান থেকে যাওয়া যায়।কারন ও জানে ওই লোকটার হাতে এইভাবে পালানো অবস্থায় ধরা পড়লে ওকে ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে।হঠাৎ ওর চোখ গেলো মেঘের দিকে।মেঘ ভয়ে একদম কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।সৃষ্টি মনে মনে একটা বাকা হাসি দিলো। হুম মেঘই এখন ওর একমাএ বেচে থাকার রাস্তা।যার জন‍্য ও এতোটা শাস্তি পেয়েছে আজকে তাকে ব‍্যাবহার করেই এখান থেকে বের হবে।সৃষ্টি আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো।হঠাৎ ওর চোখ গেলো টি টেবিলের উপর রাখা একটা বিয়ারের কাচের বোতলের উপর।ও খুব সাবধানে গিয়ে টি টেবিলের উপর থেকে বোতলটা হাতে নিয়ে টি টেবিলের উপর জোড়ে একটা বারি দিলো।সাথে সাথে বোতটার অর্ধেক ভেঙে গেলো।সবাই কাচ ভাঙার শব্দ শুনে সৃষ্টির দিকে তাকালো।হুডি পড়া লোকটা সিড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে গিয়ে ভ্রু কুচকে সৃষ্টির দিতে তাকালো।মেঘ পিছনে ঘুড়ে সৃষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকালো হঠাৎ করে সৃষ্টি কেনো এভাবে বোতটা ভাংঙলো মেঘ বুঝতেই পারলো না।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৃষ্টি মেঘের কাছে এসে কাচের বোতলটা ওর গলার উপর রাখলো।সৃষ্টির এমন কাজে মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেলো।ও ভাবতেও পারেনি সৃষ্টি ওর সাথে এমন কিছু করতে পারে।

সৃষ্টি মেঘের গলায় বোতলটা ধরতেই হুডি পড়া লোকটা সৃষ্টির দিকে গান পয়েন্ট করলো।সৃষ্টি লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো

“উহুম,,এই কাজ ভুলেও করবেন না স‍্যার,,আপনার প্রান ভোমরা কিন্তু আমার কাছে বন্ধি।শুধু এই বোতলটা একটু গলায় চেপে ধরবো সাথে সাথে আপনার জান সারাজীবনের জন‍্য উপরে চলে যাবে।”

সৃষ্টির কথা মেঘ কিছুই বুঝতে পারলো না।কি বলছে সৃষ্টি ও এই লোকটার প্রান ভোমরা মানে?কে এই লোকটা?মেঘের ভাবনার মধ‍্যেই লোকটা ওদের দিকে একটু এগিয়ে এসে সৃষ্টিকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে দাতে দাত চেপে বললো

“জিবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা আজকে করে ফেললি।সেই দিনের করা ওতোটুকু ভুলের জন‍্য তোকে এতোদিন শাস্তি দিয়েছি।তাহলে ভাব আজকের এই অন‍্যায়ের জন‍্য তোর কি অবস্থা করবো।আমি তো তোকে ছেড়ে দিতেই চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তুই কি করলি নিজের মৃত্যুকে নিজেই ডেকে আনলি।আই অ‍্যাম সরি টু সে,,আজকেই তোর জিবনের শেষ দিন।”

লোকটার কথায় সৃষ্টি ভয় পেলো কিন্তু সেটা চেহারায় না ফুটিয়ে জোড় গলায় বললো

“যতোক্ষন এই মেয়ে আমার কাছে আছে,, আপনি আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না।আপনার গার্ডদের বলুন আমাকে যেতে দিতে নাহলে এই মেয়েকে আমি মেরে ফেলবো।”

লোকটা বললো

“নিজের ভালো চাস তো ওকে ছেড়ে দে।ওর গায়ে যদি একটা আচোড়ও লাগে তাহলে তোর লাশ আমি শেয়াল কুকুরকে দিয়ে খাওয়াবো।”

বলেই লোকটা মেঘদের দিকে আরেকটু এগিয়ে সৃষ্টির মাথা বরাবর গানটা পয়েন্ট করলো।মেঘ ভয়ার্ত চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর অবস্থা এখন ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের মতো।একজন গলায় কাচ ধরে দাড়িয়ে আছে আরেকজন সামনে বন্ধুক ধরে দাড়িয়ে আছে।এই মুহূর্তে মেঘের দুইজনকেই ভীষন ভয় লাগছে।

সৃষ্টি হুডি পড়া লোকটাকে এতোটা কাছে আসতে দেখে কোনো কিছু না ভেবেই, মেঘের গলায় বোতল টা চেপে ধরলো।মেঘ ব‍্যাথ‍্যায় কুকিয়ে উঠে আহ বলে চিৎকার দিলো।ওর গলা কেটে রক্ত বের হচ্ছে।লোকটা মেঘের গলা কেটে গেছে দেখে “মেঘ পড়ি” বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।কিন্তু লোকটার সেই ডাক মেঘের কান অবদি পৌছালেও মস্তিষ্ক অবদি পৌছালো না।ও হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে রেখেছে,,মাথাটা কেমন বনবন করে ঘুড়ছে,,ব‍্যাথ‍্যায় চোখ থেকে এমনি এমনি পানি গড়িয়ে পড়ছে।লোকটা দ্রুত মেঘের কাছে এগিয়ে আসতে নিলেই সৃষ্টি আরো একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো

“নো,,একদম এগোবেন না।তাহলে কিন্তু একদম ওকে শেষ করে দিবো।”

লোকটা চেচিয়ে বললো

“বাষ্টার্ডের বাচ্চা তোর আজকে কি অবস্থা করবো তুই স্বপ্নেও ভাবতে পারছিস না।তুই আমার পড়িকে আঘাত করেছিস তোকে এতোটা ভয়ংকর মৃত‍্যু দিবো যে পশু পাখিতেও তোর লাশ দেখলে ঘৃণায় মূখ ফিরিয়ে নিবে।”

বলেই লোকটা সৃষ্টির পায়ে গান পয়েন্ট করে সুট করলো। গুলিটা একদম সোজা গিয়ে সৃষ্টির গোড়ালি বরাবর লাগলো।সৃষ্টি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।সৃষ্টি পড়ে যেতেই সব গার্ড গুলো সৃষ্টির কাছে এসে ওর দিকে গান পয়েন্ট করে দাড়িয়ে রইলো।

মেঘ কান চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো।ও ফ্লোরে বসে চোখ বন্ধ করে হাউমাউ করে কেদে দিলো।ভয়ে ওর সারা শরির এখনো কাপছে।হুডি পড়া ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে মেঘের পাশে হাটু গেরে বসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওর মাথায় আজস্র চুমু দিয়ে ব‍্যাথ‍্যাতুর কন্ঠে বললো

“সরি জান আমার তোমাকে রুমে একা রেখে আসা একদম ঠিক হয়নি।আজকে তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার কি হতো!আই অ‍্যাম সরি কলিজা,,আমার একটা বোকামির জন‍্য তুমি এতোটা হার্ট হলে।আই প্রমিস আর কক্ষনো তোমাকে একা ছেড়ে কোথাও যাবো না।”

লোকটার কথায় মেঘ অবাক হলো।ও তো ভেবেছিলো এই লোকটা ওর কোনো ক্ষতি করার জন‍্য এখানে নিয়ে এসেছে,কিন্তু কথা শুনে তো মনে হচ্ছে এই লোক ওর ক্ষতি করা তো দূরের কথা সামান‍্য আঘাত টুকুও সহ‍্য করতে পারেনা।এরকম তো একজনই করে সবসময়।মেঘের কাছে লোকটায় স্পর্শটাও বড্ড চেনা চেনা লাগছে।তাহলে কি ও যেটা ভাবছে সেটাই ঠিক?এটা কি তাহলে!
মেঘ লোকটাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই হঠাৎ করে লোকটার মাথা থেকে হুডিটা ফেলে দিলো।লোকটার মুখে মাক্স লাগানো কিন্তু তাও চোখ দুটো দেখে মেঘের চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না।লোকটা ভাবতেও পারেনি মেঘ এমন একটা কান্ড করে বসবে।ওনি এসবের জন‍্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই দ্রুত আবার হুডিটা পড়তে নিলেই মেঘ আরেকটা টান দিয়ে মাক্সটাও খুলে ফেললো।তারপর লোকটার দিকে অশ‍্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো

“আর নিজেকে আড়াল করতে হবে না।আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি আহান ভাইয়া।”

কথাটা বলেই মেঘ আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ছিটকে দুরে সরে গেলো।আহান হতবম্ভ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ যে এমন একটা কান্ড করবে ও ভাবতেও পারেনি।ও এতো তাড়াতাড়ি মেঘের সামনে এভাবে আসতে চায়নি।কিন্তু মেঘকে এভাবে কান্না করতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি তাই এসে ওকে ওভাবে জড়িয়ে ধরেছে।আহান মেঘের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ওকে আবার জড়িয়ে ধরতে নিলেই মেঘ আহানের থেকে আরো পিছিয়ে গিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো

“খবরদার আপনি আমার দিকে এক দম এগোবেন না।আপনি একটা খারাপ মানুষ।”

আহান অসহায় কন্ঠে বললো

“মেঘ পড়ি আমার কথাটা তো একটু শোনো!”

“কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,,আপনি একটা বাজে লোক।আপনি মানুষ খুন করেন।”

“মানুষ কোথায় খুন করলাম?আমি তো শুধু ওর পায়ে একটা শুট করেছি।সেটাকে কি খুন করা বলে?”

মেঘ চেচিয়ে বললো

“আপনি ওনার পায়েই বা কেনো শুট করেছেন?যদি গুলি টা অন‍্য কোথাও লাগতো?ওনি যদি মরে যেতেন?”

আহান শান্ত স্বরেই বললো

“আমি যদি ওকে শুট না করতাম তাহলে ও তোমাকে আরো আঘাত করতো।যেটা আমি কোনোদিন হতে দিবো না।আর গুলি অন‍্য কোথাও লাগার কোনো সম্ভাবনাই নেই,কারন আহান খানের টার্গেট কখনো মিস হয়না।”

“আমাকে আঘাত করলে করতো তাতে আপনার কি?আপনি কেনো ওনাকে এভাবে শুট করতে গেলেন?আর ওনাকে এইভাবে জানোয়ারের মতো টর্চার কেনো করেছেন?”

এবার মেঘের কথায় আহানের রাগ উঠে গেলো।ও রাগি কন্ঠে বললো

“ওকে কেনো টর্চার করেছি সেই কৈফিয়ত কি এখন তোমাকে দিতে হবে?ও অন‍্যায় করেছে তাই ওকে শাস্তি দিয়েছি।আর এইটুকু শাস্তি ওর জন‍্য যঠেষ্ট হয়নি।ওকে আরো ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে।”

মেঘ কাপা কাপা কন্ঠে বললো

“আরো ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে মানে?”

“সেটা তোমাকে না জানলেও চলবে।তুমি আমার কাছে এসো কাটা জায়গা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে ব‍্যান্ডেজ করতে হবে হবে।”

মেঘ ফ্লোর থেকে উঠে দাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বললো

“মরে যাবো তবুও আপনার হাত থেকে ব‍্যান্ডেজ করাবো না।”

আহান ধমক দিয়ে বললো

“খবরদার মেঘ উল্টাপাল্টা কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কাছে এসো।”

মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে তাছ‍িল‍্য হেসে বললো

“আপনার কাছে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

বলেই মেঘ বাইরের দরজার দিকে দৌড় দিলো।আহান বসা থেকে দ্রুত দাড়িয়ে বললো

“ষ্টপ মেঘ!খবরদার পালানোর চেষ্টা করো না।যেখানে আছো সেখানেই দাড়িয়ে যাও।”

মেঘ আহানের কথায় কোনো পাএাই দিলো না। দরজা দিয়ে দৌড়ে সোজা বাইরে চলে গেলো।দুইজন গার্ড মেঘের পিছনে দৌড়ে যেতে নিলেই আহান তাদের দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো

“ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার।ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।ওকে ছোয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কারো নেই।গট ইট?”

গার্ড দুজন মাথা নেড়ে হ‍্যা সূচক সম্মতি জানালো।আহান দেখলো সৃষ্টি অঙ্গান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।ও গার্ডদের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম স্বরে বললো

“এই অসভ্য মেয়েটাকে পিছনের গোডাউনে নিয়ে বেধে রাখো।ওর পায়ে কোনো ব‍্যান্ডেজ বা ঔষধ লাগাবে না।আর খাবার তো দূরের কথা এক ফোটা পানিও যেনো ওকে কেউ খেতে না দেয়।”

বলেই আহান দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।মেঘ বাইরে আসতেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।কারন বাইরে প্রায় বিশ পচিশ জনের মতো গার্ড দাড়িয়ে আছে।মেঘকে বাইরে আসতে দেখেই সবাই মাথা নিচু করে ফেললো।এদের দেখে মেঘের পা অটোমেটিক থেমে গেলো।ও ভাবলো হয়তো সবাই দৌড়ে এসে ওকে এক্ষুনি ধরে ফেলবে। কিন্তু ওর ভাবনাকে ভুল প্রমান করে সবাই নিজেদের জায়গায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।ওদের এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ অবাক হলো কিন্তু বিষয়টা তেমন পাএা দিলো না।আপাততো ও এখান থেকে বাইরে বের হওয়ার তাড়ায় আছে তাই এতোকিছু ভাবার ওর সময় নেই।ও আবার গেটের দিকে ছুট লাগালো।

আহান বাসা থেকে বের হয়ে দেখলো মেঘ দৌড়ে গেটের দিকে যাচ্ছে।আহান হাতে থাকা রিভলবার টা কপালে শ্লাইড করতে করতে মেঘকে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে বললো

“মিসঃ মেঘনা রহমান এখনো ভালোয় ভালোয় বলছি যেখানে আছো সেখানে দাড়িয়ে যাও।নাহলে আমার কথার অবাধ‍্য হওয়ার ফল হারে হারে টের পাবে।আজ অবদি এখান থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কোনো গ‍্যাং ষ্টাররা পযর্ন্ত বেরোতে পারেনি সেখানে তুমি তো সামান‍্য পুচকে বাচ্চা একটা মেয়ে।”

আহান কি বলছে তাতে মেঘের কিচ্ছু গেলো আসলো না।ও আহানের কথা কানেই তুললো না।ও আরো জোড়ে ছুটতে লাগলো।আহান মেঘকে আরো জোড়ে ছুটতে দেখে ওর মাথাটা গরম হয়ে গেলো।ও আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ওর হাতে থাকা গানটা মেঘ যেদিকে ছুটে যাচ্ছে সেদিকে পয়েন্ট করে সোজা টির্গারে চাপ দিলো।সাথে সাথে গুলিটা গিয়ে সোজা একদম,,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here