মন নিয়ে কাছাকাছি – পর্ব ২৪

0
229

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_২৪
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা

সকালবেলা ঘুম ভাঙার পরেই ঘড়িতে সময় আটটা দেখে একপ্রকার লাফ দিয়ে উঠলো তানজীব। চোখ ঢলে গায়ের কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে সহর্ষে বলল..

প্রাণো কি সমস্যা? তাড়াতাড়ি ডেকে দেবে তো। এত বেলা হয়ে গেল। এই প্রাণো!

বলতে বলতে চোখ ঢলে খালি পায়ে রুমের বাইরে গেল সে। মিনা গরম পানি নিয়ে ছুটে এল। হাঁপিয়ে উঠে বলল..

তোমার ঘুম ভাঙছিল না ভাইয়া। ডেকেছি অনেক। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুঁবেনা আপাতত। ডাক্তার বারণ করেছে। এই নাও পানি। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।

তানজীবের হাতে জগটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতেই তানজীব ছোট করে বলল

ও আসেনি না।

মিনা পেছনে ফিরলো। বলল

কে? রাহা? ভাইয়া প্লিজ নিজের কথা ভাবো এবার। অনেক ভেবেছ ওরজন্য। মূল্য দিল? একটা ফোন করেছে ও তোমাকে?

তানজীব জগটা নিয়ে ঘরের ভেতর পা রাখলো শ্লথ পায়ে হেঁটে। টেবিলের উপর জগটা রাখলো আওয়াজ করে। বালিশের উপর থেকে ফোন নিয়ে দেখলো একটা ফোনও আসেনি। ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেল। মনোয়ারা বেগম আর খানসা বেগম মিলে নাশতা পানি তৈরি করেছে। সাথে সবাই গতরাতেই ভেবে রেখেছে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ির ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদি বউয়ের কথা উঠে তাহলে বউকেও সাথে নিয়ে যাক। কিন্তু এখানে কতদিন?

সবাই তারজন্য অপেক্ষা করছিল টেবিলে বসে। সেলিম সাহেব আর সাজ্জাদ সাহেব খবরের কাগজ নিয়ে বসেছে। বেশ চাঞ্চল্যকর খবর। কাল থেকে দুজনের ভেতর এক পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে ওরা দুই ভাইকে জিম্মায় দেখে। প্রকাশ করে উঠতে পারছেন না ছেলেপেলে গুলোর ভয়ে।

তানজীবকে দেখে খবরের কাগজ সরিয়ে রাখলেন ওনারা। তানজীব রাহানের পেছন পেছন হাতা গুঁটাতে গুঁটাতে চাচা জেঠাকে সুতীক্ষ্ম চোখে চাইলো। এত খুশির কারণ কি?

মিনা আর সানজু এসে নাশতা খেতে দিল সবাইকে। সানজু বলল

আমি গিয়ে ভাবিকে নিয়ে আসি? আমি জোর করে নিয়ে আসব। ওখানে কতদিন থাকবে?

সবাই তার দিকে কেমন রুষ্ট চোখে চাইলো। সে সবার চাহনি দেখে আমতাআমতা করতে করতে তানজীবকে বলল

যাব?

তানজীব খাওয়ায় মনোযোগ দিল। খানসা বেগম সানজুর পেছনে গিয়ে মাথা চেপে দিয়ে বললেন

তোকে এত পাকনামি করতে কে বলেছে? সে কি হাঁটতে জানেনা নাকি বাড়ি চেনেনা? একদম চুপ থাক।

তানজীব চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়লো।
সেলিম সাহেব বলল

তোর সাথে আরও কথা ছিল। উঠে গেলি কেন?

বেরোতে হবে। এসে কথা হবে। সবাই এখানে থাকুক আপাতত। তোমরাও থাকো। সানজু দৌড়ে ঘরে যাহ। ওয়ারড্রবের উপরে গাড়ির চাবি রাখা আছে। নিয়ে আয়।

আচ্ছা।

সানজু দৌড়ে গেল। মিনা ঔষধ এনে তানজীবের হাতে দিল। বলল

ঔষধগুলো খেয়ে নাও।

রোজ রোজ এসব..

সেড়ে উঠতে হবে তো।

তানজীবের ঔষধ খাওয়া শেষ হতেই সানজু চাবি নিয়ে চলে এল। বলল,

ভাইয়া ফেরার সময় ভাবিকে নিয়ে আসিও। ভাবির তো এখন মন খারাপ । আমাদের সাথে থাকলে ভালো লাগবে।

মনোয়ারা বেগম বললেন..

এই তুই কত বড় হয়েছিস যে জ্ঞান দিচ্ছিস?

সানজু ঝাড়ি মেরে বলল,

জেম্মা এসব বলতে বিজ্ঞ হতে হয় না।

ভাবিকে নিয়ে এসো কেমন?

তানজীব জোরপূর্বক হেসে তার মাথা চাপড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।

তানজীব বেরোনোর সাথে সাথে রাহান তার কোলের বাচ্চাকে দেখিয়ে বলল

ওই নে বাচ্চাকাচ্চা মানুষ কর। বেশি পেকে গেছিস।

সানজু মুখ ভেঙচিয়ে বলল,

তোমার বাচ্চা তুমি পালো। সারাক্ষণ সুসু করতে থাকে। আমি কাল কতগুলো কাপড় পাল্টেছি জানো? নেব না অসভ্যটাকে।

সবাই তার কথায় হেসে উঠলো।

_________________

পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সামনে ভীড় দেখে সেখানেই গাড়ি থামালো তানজীব। মেয়েলোকও দেখা যাচ্ছে সাথে। কেউ বোরকা পড়া কেউ থ্রিপিছ। মনে হয় স্বপরিবারে এসে ভীড় জমিয়েছে। তানজীবের গাড়ি দেখে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ছুটে এল।

আসসালামু আলাইকুম স্যার। শরীর ঠিক আছে এখন?

ওয়ালাইকুমুস সালাম। ঠিক। গেইটের সামনে ভীড় কেন? এতজন মিলেও ভীড় কমাতে পারছেন না?

সরি স্যার। এরা রোস্তমের পরিবারের লোকজন। ওরা পুরো পরিবার এসেছে। অনেক্ক্ষণ ছিল। ওখানে ঝামেলা করছিল। বের করে দিলাম কিন্তু এখন এখানে ভীড় জমিয়েছে। কোনো উকিল নাকি কেস নিচ্ছেনা। এ নিয়ে উনার বাবা মেজাজ দেখাচ্ছেন। বাপ বেটা সব বদমাশ।

লাঠিচার্জ করুন দরকার পড়লে। এখানে আইন কথা বলে। ক্ষমতা নয়। এত সাহস কি করে হয় গলাবাজি করার?গাড়ি ঢুকবে। দ্রুত পথ ক্লিয়ার করুন।

পুলিশ কর্মকর্তা ভীতকন্ঠে জবাব দিল

ইয়েস স্যার। আমি এখনি পথ ফাঁকা করছি।

শুনুন।

জ্বি স্যার।

মহিলাদের সাইডে সরান আগে। তারপর বাকি কাজ করুন।

ওকে স্যার।

পুলিশ কর্মকর্তা দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল

এই এই তোমরা এদিকে এসো। মেজর স্যার এসেছেন। পথ খালি করো। শুনুন আপনারা এরকম করলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। আর্মি জিপ আসছে। সরে দাঁড়ান।

কয়েক সেকেন্ডেই পথ ফাঁকা হলো। তানজীব গাড়ি ঢুকিয়ে গাড়িবারান্দায় পার্ক করলো গাড়িটি। রোস্তমের পরিবার পাশ দিয়ে শাঁ করে চলে যাওয়া জিপের ভেতর তানজীবকে দেখে ফিসফিস করে বলাবলি করলো

আচ্ছা এটাই সেই মিলিটারি।

রোস্তমের মা কেঁদে উঠে বললেন

তোমার ছেলেকে আমি পইপই করে বুঝিয়েছি। ওদের বিয়ে হয়েছে এখন তুই চুপ থাক। মিলিটারি অফিসারের সাথে তুই পেরে উঠবিনা। তুমি ওকে উশকে দিয়েছ। তোমার জন্য ওর এই দশা।

রোস্তমের বাবা রাজ্জাক শিকদার উচ্চরবে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন

চুপ। আমার ছেলে কি ফেলনা? কি নেই তার? ওই মেয়েক পস্তাতে হবে এরজন্য। খুব খারাপ হয়েছে আমার ছেলের সাথে। এই আর্মি অফিসারের সাথে আমার কথা আছে।

রোস্তমের ভাই এবং বড়বোন গুলো দেখলো গাড়ি থেকে সোজা অফিস কোয়ার্টারের দিকে হেঁটে চলে যাওয়া তানজীবকে। যে আশাটা ছিল সেটাও ক্ষীণ হয়ে এল এবার।

___________________________

কয়েদের ভেতর বসে থাকা দুজনের দিকে খাবারের প্লেট ঠেলে দেয়া হয়েছে অনেক্ক্ষণ। না খাওয়ায় পাহারাদার হাবিলদার চেঁচাচ্ছেন সেই তখন থেকে। ডানপাশের কয়েদে রোস্তম শিকদারও না খেয়ে বসে রয়েছেন। তাদের কিছুতেই খাওয়ানো যাচ্ছেনা। তানজীব থানায় কয়েদের দিকে পা বাড়ালো তানভীরুল হকের সাথে আলাপ সারতে সারতে। কয়েদে বন্দী আসামিগুলো গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়েছে মেজরকে দেখার জন্য। সবাইকে একঝলক দেখে ভেতরের কয়েদের রাস্তায় হাঁটা ধরলো তানজীব। তাকে আর আইএসপিকে দেখে সবাই সতর্ক হয়ে দাঁড়ালো। তানভীর বলল

হাবিলদার এত চেঁচামেচি করছেন কেন?

স্যার আর বলবেন না। এরা কিছু খাচ্ছে না। আমার গলাটা শুকিয়ে এল খান বলতে বলতে।

তানজীব বলল

কি দিয়েছেন?

যা দেওয়া হয়।

উনাদের বাড়ি থেকে খাবার আসলে তা দেন। কেস উঠা পর্যন্ত। সমস্যা নেই।

ওকে স্যার। কিন্তু বুড়ো দুটোর জন্য খাবার আসেনি।

এসেছে। গাড়ি থেকে নিয়ে আসুন।

ওকে স্যার।

আরেকটা কথা।

জ্বী স্যার।

আপনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। সম্বোধন মার্জিত হওয়া দরকার।

হাবিলদার মাথা নামিয়ে নিল।

সরি স্যার।

হাউএভার। তানভীর..

ইয়েস স্যার।

আমি উনাদের সাথে কথা বলব।

ওকে স্যার। আমি ওখানে আছি।

হুম।

তানভীরুল হক চলে যেতেই তানজীব কয়েদের দিকে এগিয়ে গেল।

আমজাদ কবির তাকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। তানজীব সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এপাশ থেকে ওপাশে রোস্তমও তা দেখতে পাচ্ছে। সে গ্রিল ধরে দাঁড়ালো।

আমজাদ কবির রোষ পূর্ণ চোখে তাকালেন তানজীবের দিকে। শক্ত করে গ্রিল ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বললেন

আমার মেয়েকে আমি কখনো একফোঁটা চোখের জলও ফেলতে দিইনি। তোমার জন্য যদি ও কষ্টে থাকে আমি তোমাকে ক্ষমা করব না ছেলে।

আপনার মেয়ের ভালো না থাকার কারণ আপনি। আপনারা। আমি নই। আমি যেদিন তার খারাপ থাকার কারণ হবো সেদিন নিজেই সরে আসব। এবার বলুন এখানে থাকতে চান? নাকি বাড়ি ফিরতে চান?

আজমল কবির গর্জে বললেন

এই ছেলে মুখোমুখি প্রশ্ন করছ কোন সাহসে?

সাহসের প্রশ্ন তুলবেন না। আমি যেখানে সেখানে আমার সাহসীকতার প্রমাণ দেওয়াটা অপছন্দ করি।

তুমি যা করার করো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো তোমার কিছুতেই ভালো হবেনা। তোমার বাপের দশা হবে তোমার।

তানজীব ক্রুর হেসে বলল,

আপনাদের মেয়ের দশাও কি আমার মায়ের মতোই হবে?

আমজাদ সাহেব উচ্চনাদে চিল্লিয়ে বলল

মুখ সামলে কথা বলো।

সামলেই বলছি। সত্যিটা স্বীকার করুন। মুক্তি পেতে পারেন। নয়লে এখানে পঁচতে হবে।

কি প্রমাণ আছে আমাদের বিরুদ্ধে? কি প্রমাণ?

প্রাণে মেরোনা। পঙ্গু করে দাও।
একথা কে কাকে বলেছে?
পুলিশ প্রমাণ ছাড়া আপনাকে অ্যারেস্ট করেনি চেয়ারম্যান সাহেব। বয়স তো অনেক হলো। বোধবুদ্ধিহীন আর কতদিন চলবেন? আপনার বড় মেয়ে খাবার পাঠিয়েছে। খেয়ে নেবেন। আসি। আপনার পরিবারের লোকজন সন্ধ্যায় কিংবা রাতে আসবে।

রোস্তমকে একপলক দেখে চলে গেল তানজীব।

বাকি কাজ সেড়ে থানা থেকে বেরুলো দুপুরের দিকে। দুপুরে বাসায় ফিরতেই সানজু ছুটে এসে বলল

এমা ভাবিকে নিয়ে আসোনি কেন?

আমি যাইনি। সময় হলে যাব।

খানসা বেগম বললেন

ছেলেটার দৌড়াদৌড়ির শেষ নেই। তুই আছিস তোর তালে।

তানজীব বলল

রাতে গিয়ে নিয়ে আসব।

সানজু মাথা দুলিয়ে বলল

তাহলে ঠিক আছে।

__________________

দুপুরে রাহাকে একপ্রকার জোর করে ভাত খাইয়ে দিয়েছিল নোরা। তারপর যেই ঘুমিয়ে পড়লো একেবারে ঘুম ভাঙলো মাগরিবের সময়। বরাবরের মতো ফোন চেক করে দেখলো ফোন আসেনি আর। তারপর ঘড়ির কাঁটায় চোখ রেখে চোখবন্ধ করে তানজীবকে ফোন দিল সে নিজে থেকে। ফোনটা কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেল। পরপর ছ সাতবার ফোন দেওয়ার পর হঠাৎ একবার ফোনটা ধরলো তানজীব।

রাহা ফোনটা কানে লাগিয়ে চুপ করে রইলো। তার নিঃশব্দে কান্না নাক টানার আওয়াজে স্পষ্ট তানজীবের কাছে।

কালকের ঘটনায় খুশি হয়ে সেলিব্রেশন করছি ম্যাডাম। আপনাকে তো মিস করছি। দেখে যান কত সেলিব্রেশন হচ্ছে এখানে।

রাহা ফুঁপিয়ে উঠে মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে।

আই প্রমিজ আপনার বাবা জেঠুকে আমি ছাড়িয়ে আনব। এবং তাদের মেয়েকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। যেদিন তাদের মনে হবে আমি সঠিক সেদিন তাদের মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেবেন। তার আগে আপনার মুখদর্শনও চাই না। ভালো থাকবেন।

ফোন কেটে গেল রাহা কিছু বলার আগেই। ফোনটা রেখে বোরকা খুঁজে নিল রাহা। নোরা এসে বলল

এমা কোথায় যাচ্ছিস? চলে যাবি? আম্মারা যে আসছে। দেখা করবিনা? এই এখন কই যাবি? সন্ধ্যে নেমে গেল তো।

আমি যেতে পারব আপা।

তোর জিজু আসুক। তোকে দিয়ে আসবে।

রাহা বলল

না আপা আমাকে এখনই যেতে হবে। আসি। আম্মাদের সাথে দেখা হবে। নিজের খেয়াল রাখিস।

নোরা তার মুখটা দুহাতে আগলে ধরে বলল

শোন কালকের মতো ওরকম ব্যবহার আর করবি না। সব ঠিক হয়ে যাবে। হ্যা?

রাহা মাথা দুলিয়ে বলল

হুম।
আমি যে বেরোলাম সেটা কাউকে বলিস না এখন।

অধীরের মা আর রোহিনী তাকে এসময় বেরোতে দেখে আপত্তি করলেন। বললেন

এমন সময় একা একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা। অধীর আসুক। সে না হয় পৌঁছে দিয়ে আসবে। মেয়েটাকে একা ছেড়োনা বৌমা।

নোরা বলল

ও আমার কথা শুনছেনা মা।

রাহা বলল

আমি যেতে পারব আন্টি। বেশিদূর তো নয়।

রাহা বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পর তানজীব এল। তার পেছন পেছন অধীরও এল। রাহা চলে গেছে শুনে অধীর নোরার সাথে রাগারাগি করলো। কেন রাহাকে একা ছাড়লো তা নিয়ে। তানজীব কোনো কথা বললো না। চুপচাপ বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে। অধীরও আটকালো না।

তানজীব বাড়িতে ফোন দিতেই মিনা বলল,

ও এখনো বাড়িতে আসেনি ভাইয়া।

আচ্ছা গেলে আমাকে জানাবি।

দু তিন ঘন্টা পর রাহাকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেল। মনোয়ারা বেগম বলল

এমা তানজীব ফোন করলো সেই কখন? তুমি এতক্ষণে ফিরছ? এতক্ষণ কোথায় ছিলে?

বাইরে।

বাইরে তো জানি। কোথায় ছিলে?

মিনা ইশারায় তাদের প্রশ্ন করতে বারণ করলো। রাহা ঘরে চলে গেল। গোসল নিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। সানজু গল্প জমানোর চেষ্টা করলো তার সাথে। কিন্তু তানজীবের কথাগুলো তাকে শান্তি দিচ্ছে না।

সাড়ে দশটার সময় আমেনা বেগম রাহার জন্য খাবার নিয়ে এল। বলল

বউ ভাত খাইয়্যা লও। তোমার চাচী শ্বাশুড়ি রাঁধছেন। উঠো।

আমি খাব না। খিদে নেই।

মিনা এসে বলল

ভাইয়া বলেছে খেয়ে নিতে।

রাহা তানজীবের নাম শুনে উঠে বসলো।

এসেছে?

নাহ। খেয়ে নে। ভাইয়ার আজ বাইরে খাওয়া। বাসায় খাবেনা।

রাহা প্লেট নিল। ভাতগুলো নাড়তে নাড়তে ভাবলো, মিনা আপাকে জিজ্ঞেস করবে উনি আসবেন কিনা। মুখদর্শন চান না যে বললো। এটা সত্যি?

আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে পিঠের নিচে বালিশ রেখে বসেছিল সে। চোখে তন্দ্রা লেগে এসেছিল। তানজীবের আগমনে ঘুম একেবারে লাটে। তানজীব দরজা বন্ধ করে তার দিকে ফিরে চাইলো। রাহা মাথা নামিয়ে বলল

আমি অনেক আগেই এসেছি।

তানজীব এগিয়ে এসে হাতের বাহু ঝাঁকিয়ে বলল,

কেন এসেছ? কে আসতে বলেছে? আমি তো বলিনি। তাহলে কেন এসেছ? কি কারণে?

শেষের কথাটা ধমকে বলতেই রাহা কেঁপে উঠলো। হাত বাড়িয়ে ঝাপটে তানজীবের গলায় মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠে বলল

আমি সরি। আমার মাথা কাজ করছেনা মেজর। আমি আপনাকে কখনো হার্ট করতে চাইনা। কিন্তু কি করে হয়ে যায় সব।

আমি কাল কতগুলো ফোন দিয়েছিলাম?

আপনি কেন আনতে যাননি আমাকে? আমি অনেক্ক্ষণ অপেক্ষায় ছিলাম। তাই রাগ হয়েছিল।

কেন গিয়েছিলে?

আপনার জন্য অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম আমি। আপনি আমাকে দেখা দেননি। তাই ওরা নিয়ে গিয়েছিল জোর করে। আমি আপনাকে ছাড়তে চাইনা। কিন্তু সব আমি না চাইতেও হয়ে যাচ্ছে। আপনি ফোনে যেগুলো বলেছেন সেগুলো সত্যি বলেছেন?

হ্যা।

রাহা তাকে শক্ত করে চেপে ধরে বলল

না না। আপনি আমার মুখ দেখেছেন।

তানজীব তাকে শুয়ে দিল। বলল

তাতে কি যায় আসে? সবকিছু সমাধান হওয়া দরকার।

রাহা তার মাথা টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। বলল

না মেজর। আমাকে এতবড় শাস্তি দেবেন না। শুধু আব্বা আর জেঠুকে ছাড়িয়ে আনলে হবে। আর কিচ্ছু চাই না।

তানজীব তার পিঠের নিচে দুহাত গলিয়ে দু গালে, ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন করে গলদেশে মুখ গুঁজে বলল

আপনার ইচ্ছে আমি পূরণ করব। আমার ইচ্ছে আপনি পূরণ করবেন। ইকুয়াল ইকুয়াল।

রাহার কান্নার চোটে দুলে উঠলো তার সারা তনু। সুখ আর মানসিক যন্ত্রণা মিশ্রিত এক বিনিদ্র রজনী কাটলো দু’জনের। যেন প্রদোষকাল ফুরোলেই একে অপরের মধ্যে আকাশসম দূরত্ব এসে দাঁড়াবে।

চলবে
রিচেক করা হয়নি….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here