#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-১৭
– বজ্জাত ছেলে!আমার চকলেটটা খেয়ে ফেলেছে।
– বেশ করেছি খেয়েছি।
দীপ্তের গলা শুনে আহান আর গোধূলি দুজনেই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকায়।দীপ্তকে আবার দেখে গোধূলির ভীষণ রাগ হচ্ছে।ঝাঁঝালো গলায় বললো,
– দেখেছো দাভাই?একে তো আমার চকলেট খেয়ে নিয়েছে আবার গলাবাজিও করছে!
– আহ্ সাজি,তুই একটু চুপ কর!
চাপা স্বরে বললো আহান।পরমুহূর্তেই আহান একটু গলা ঝেড়ে ফিচেল হেসে উঁচু স্বরে বললো,
– আরে দীপ্ত তুই এখানে?
– বা রে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে আর আমি থাকবো না?
– তোকে নিয়ে কথা হচ্ছে মানে?
– উমম আহান, দিস ইজ নট ফেয়ার!আমার সাথে চালাকি করা চলবে না হে!আমি কিন্তু সবটা শুনেছি।আর হে গোধূলি,তুই যেন কি বলছিলি আমি তোর চকলেট খেয়ে নিয়েছি?কিন্তু আমি তো তোর চকলেট খাই নি।আমি আমার ভাগেরটা খেয়েছি!
গোধূলি অবাক হয়ে বললো,
– তোমার ভাগেরটা মানে?
– বুঝলি না?দাঁড়া আগে একটু বসি তারপর না হয় তোকে এক্সপ্ল্যাইন করছি।আচ্ছা ওই দোলনাটা কার রে?
– আমার ঘরে যেহেতু তো আমারই হবে।
কর্কশভাবে বললো গোধূলি।দীপ্ত চোখ রাঙিয়ে বললো,
– দেখেছিস আহান? তোর এই বোন কেমন ঘাড়ত্যাড়া।সোজা কথা সোজাসাপ্টাভাবে বলবে না।ও যেমন উত্তরটাও তেমনি দেবে!
– তুইও !ওর ঘর যেহেতু ওরই হবে এটা আবার জিজ্ঞাস করার কি আছে?
বিরক্তির স্বরে বললো আহান।দীপ অবাক হয়ে গম্ভীরমুখে বললো,
– আহান বোনের সাইড নিচ্ছিস?
– বোনের সাইড নিবে না তো কি তোমার মতো একটা এলিয়েনের সাইড নিবে?
– কি বললি তুই?আমি এলিয়েন?
– তা নয় তো কি!নিজের চেহেরাটা কোনো দিন ভালো করে আয়নায় দেখেছো?মনে তো হয় না!দেখে থাকলে তো আর আমাকে জিজ্ঞাস করতে না!
কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয় গোধূলি।দীপ্তের মুখের অবস্থা দেখে আহানও মুখ টিপে হাসছে।দীপ্ত রেগে গিয়ে বাজখাঁই গলায় বললো,
– আহান তোর বোনকে চুপ করতে বল নইলে কিন্তু ও আমার হাতে মার খাবে বলে দিলাম!
আহান ওর হাসি লুকিয়ে মুখে গম্ভীরতার ভাব এনে বললো,
– আহ্ সাজি, তুই একটু চুপ কর না।এইভাবে বলতে নেই। ভাইয়া হয় না তোর!
– ভাইয়া?আমার এতো ভাইয়ের দরকার নাই।তুমি আছো ছোটদাভাই আছে আলিফ-আলবী আছে।
আর কোনো ভাইয়ের দরকার নাই আমার হু।
কথাটা শেষ করেই ভেংচি কাটে গোধূলি।দীপ্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
– তোর মতো বাচাল মেয়ের ভাই হতে আমার বয়েই গেছে।যাইহোক,আসল কথায় আসি!
আহান আর গোধূলি দীপ্তের দিকে তাকিয়ে আছে।দীপ্ত বললো,
– “আমার ভাগ মানে কি?”এইটাই তো তোরা দুই ভাইবোন বুঝতে পারছিলি না?তাহলে শুন,স্পেশালি গোধূলি তোর উদ্দেশ্য বলা,সকালে তুই আমাকে নানাধরনের কথা বলেছিস!আমি নানাজানকে ঠকাচ্ছি,আমি বিশ্বাসঘাতক,নানাজানের প্রতি অন্যায় করছি, মিথ্যাবাদী, ব্লা ব্লা ব্লা আরো কত কি।কিন্তু আমি তো দেখছি ঘরের শত্রু বিভীষণ!
গোধূলি বোকার মতো দীপ্তের দিকে তাকাতেই দীপ্ত ফের বলে,
– মানেটা বুঝলি না তো?মানেটা হলো তুই!
তুই নানাজানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস!আমাকে যখন তুই দেখেই নিয়েছিলি তাহলে নানাজানকে বললি না কেন?কারণ তোকে আইসক্রিম আর চকলেট দেবে বলে!তুই ঘুষ নিয়েছিস!এখন তুই চিন্তা কর আসল বিশ্বাসঘাতক কে? আমি না তুই?
তুই।কারণ তুই সত্যিটা জেনেও নানাজানকে বলিস নি!শুধু মাত্র কয়েকটা চকলেট আর আইসক্রিম এর লোভে?তোর চকলেট খেয়েছি কারণ,তুই যে নানাজানের সাথে অন্যায় করেছিস সেটা নানাজানকে না বলার প্রতিদান হিসেবে আমি তোর থেকে চকলেট নিয়ে খেয়েছি!এখন যদি বেশি বেশি বকবকানি করিস না, নানাজানকে সব বলে দিবো।
– যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর! এই প্রবাদটিকে মনে করিয়ে দিলো না দাভাই?কোথায় আমাকে থ্যাংক্স দিবে তা না উল্টে আমাকেই ব্ল্যাকমেইল করতে আসছে!যাও বলে দাও গিয়ে!দাদাজান তোমার কথা বিশ্বাসই করবে না।নিজে দোষ করে এখন এসেছে শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকতে!
গোধূলি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল।দীপ্ত রুদ্ধ গলায় বলে,
– এই মেয়ে এই,তুই ননস্টপ এত বকবক করিস কিভাবে রে?মুখ ব্যাথা করে না?আমরা তো এত কথা বলি না!
– এলিয়েনরা কি কোনো ভাষা জানে যে কথা বলবে!
– আহান!
দীপ্ত চিল্লিয়ে ডাক দেয় আহানকে।আহান দীপ্তের চিৎকারে ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,
– কি হয়েছে?
দীপ্ত অবাক হয়ে বললো,
– সিরিয়ালের আহান!তুই শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছিস?
– কি করবো?তোদের বকবক শুনতে শুনতে আমার ঘুম পেয়েছে গেছে রে দীপ্ত!
– পাবেই তো দাভাই! এমন বোরিং পারসন থাকলে ঘুম পাওয়াটাই স্বাভাবিক!
– আহান!
এবার বেশ জোরেই চিৎকার করে দীপ্ত।পাহাড় সমান রাগ হচ্ছে দীপ্তের।হবে নাই বা কেন? গোধূলি যে একটা কথাও মাটিতে পড়তে দিচ্ছে না।সব কথার উত্তর দিচ্ছে।আহান বিরক্ত হয়ে বলে,
– কি হয়েছে এমন ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন?
– তোর বোনকে চুপ করতে বলবি।নইলে এবার কিন্তু আমি ওর মুখ সেলাই করে দেবো।এই মেয়ের কি ভয় ডর নেই।
– তুইও তো কম যাস না।এইটুকু একটা মেয়ের সাথে এইভাবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিস।
– বা বা বা এখন আমি ঝগড়া করছি? হে রে তোর বোন কি ধোয়া তুলসীপাতা?ও কি ঝগড়া করছে না?এবার আমি….
– কি হয়েছে দীপ্ত এইভাবে চিৎকার করছো কেন?
দীপ্ত আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে গোধূলির রুমে আনোয়ার সাহেব চলে আসবেন বুঝতে পারে নি।দীপ্ত হকচকিয়ে যায়। আমতা-আমতা করে বলে,
– এমনি নানাজান!মজা করছিলাম আমরা।কি রে আহান বল।
দীপ্ত আহানকে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বলল।আহানও কাচুমাচু মুখ করে বললো,
– আব্ হে দাদাজান মজা মজা!আমরা তো মজাই করছিলাম।
আনোয়ার সাহেব অবাক স্বরে বললো,
– চিৎকার করেও মজা করা যায় আজ শুনলাম!যাইহোক সবাই নিচে চল একসাথে ডিনার করবো!
দীপ্ত নরম গলায় বললো,
– হুম নানাজান তুমি যাও আমরা আসছি।
– দাদাজাআআন….
আনোয়ার সাহেব চলে যাচ্ছিলেন গোধূলির ডাকে পিছনে ফিরে বলেন,
– কিছু বলবি দাদুভাই?
আহান গোধূলির মুখ চেপে ধরলো সেটা আনোয়ার সাহেব দেখার আগেই দীপ্ত ওদেরকে আড়াল করে আনোয়ার সাহেব এর সামনে এসে বলে,
– ও আর কি বলবে?তোমাকে যেতে বলেছে। হে না রে আহান।
দীপ্ত গলার স্বর উঁচু করে টেনে টেনে কথাটা বলল।আহান দীপ্তের কথায় সায় দিয়ে বলে,
– হে দাদাজান।তুমি যাও।
– ঠিক আছে তোরা তাড়াতাড়ি আয় আমি গেলাম।
– আচ্ছা নানাজান।
গোধূলি উম উম শব্দ করছে।আনোয়ার সাহেব চলে যেতেই আহান গোধূলির মুখটা ছেড়ে দেয়।মুখ ছাড়া পেয়ে গোধূলি করুণ স্বরে বলে,
– বড়দাভাই তুমি?তুমি আমার মুখটা এইভাবে চেপে ধরতে পারলে?
আহান কিছু বলার আগেই দীপ্ত কর্কশভাবে বললো,
– ও তো তাও ভালো, তোর মুখ চেপে ধরেছে।আমি হলে তোর গলাটাই টিপে দিতাম!
– শুনলে দাভাই কি বলল?শুনলে তুমি?
হতাশার সুর টেনে আহান বললো,
– আমি তো এতক্ষণ ধরে শুনেই চলেছি!আর কোনো শুনাশুনি না!অনেক হয়েছে এবার নিচে চল আয়।দেরি করে গেলে দাদাজান বকবে।
আহান দীপ্ত আর গোধূলি দুজনকেই নিয়ে নিচে চলে গেল।
চলবে…..