দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৪৩

0
408

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৪৩

– হসপিটালে তোর মামীর ডেলিভারি হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের বাচ্চাটা মারা গিয়েছিল।ডাক্তার যখন বলেছিল শিখা আর কোনো দিনও মা হতে পারবে না তখন আমার পুরো পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিল।আমার বাচ্চাটা আর এই পৃথিবীতে নেই,আমার স্ত্রী আর কোনো দিনও মা হতে পারবে না এই দুইটা সত্য একসাথে মেনে নিতে পারছিলাম না।কিন্তু মানতে আমি বাধ্য ছিলাম।সত্য যতই ভয়ংকর হোক না কেন কেউই তা উপেক্ষা করতে পারে না।তেমন আমিও পাই নি।না কোনো দিন শিখা মা ডাক শুনতে পাবে, না আমি কোনো দিন বাবা ডাক শুনতে পাবো।তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তোর মামীর তখনও জ্ঞান ফিরে নি।জ্ঞান ফেরার পর যখন ও সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু আর মাতৃত্ব খোয়ানোর সংবাদ শুনতে পেত তখন আমি ওকে কি জবাব দিতাম?কি বলে সান্ত্বনা দিতাম ওকে?সন্তানের সাথে সাথে নিজের মাতৃত্বও হারিয়েছে এটা জানার পর নিশ্চয়ই কোনো মা বা স্ত্রী এই সত্যটা খুব সহজেই মেনে নিতে পারতো না।যখন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জর্জরিত হয়ে হসপিটালের করিডরে পাইচারি করছিলাম।তখনই কোনো এক নার্সকে ডাক্তারের কাছে এসে বলতে শুনলাম,

– স্যার ৪০১ নং কেবিনে সন্ধ্যা সময় যে মহিলাটার ডেলিভারি হয়েছিল উনি উনার বাচ্চাকে ফেলে রেখে চলে গেছে।

ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো,

– সিরিয়াসলি?আর ইউ শিওর?
– ইয়েস স্যার!এই যে দেখুন ওই মহিলা চলে যাওয়ার আগে এই চিরকুটটা রেখে গেছে।
– কি লেখা আছে ওতে?

নার্স চিরকুটটা খুলে ডাক্তারকে পড়ে শুনাতে লাগলো,

– যখন জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল।বাচ্চাটা একটু একটু করে আমার পেটের ভিতর বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।যার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি সেই তো এখন অস্বীকার করছে।একটা নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ শেষ করার মতো এই পাপ কাজটা আমি করতে পারি নি।আজ তাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছি।একজন অবিবাহিতা মেয়ে হয়ে সমাজে আমি ওকে কি পরিচয়ে বড় করবো?আমার পাপের বোঝা নিয়ে আমার সন্তান বেড়ে উঠোক এটা আমি চাই না।দশটা মাস খুব কষ্ট করে সমাজের অগোচরে রেখেছি নিজেকে।পরিবার ছেড়ে তো সেই পাঁচ মাসেই চলে এসেছি।বাধ্য হয়ে ছিলাম।আমাদের সমাজব্যবস্থা আবার বড্ড বেশি সুশীল কিনা!বড় হয়ে যদি কখনো জানতে পারিস আমাকে মাফ করে দিস মা।কারণ তোকে এই নিষ্ঠুরতার দুনিয়ায় একা ফেলে রেখেই আমি চললাম এই পাপের জীবনের ইতি টানতে।যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।

ডাক্তার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

– ও মাই গড!এখন এই বাচ্চাটার কি হবে?
– বাচ্চাটা আমার চাই ডক্টর!

আমার কথাটা শুনে বিনিময়ে ডক্টর শুধু তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন।সেদিন আমি নতুন করে বাবা ডাক শুনার ভরসা পেয়েছিলাম আর শিখা তো জানতোই না কাকে হারিয়ে কাকে পেয়েছে।যখন জ্ঞান ফিরে তখন তো মেয়েকেই প্রথম দেখেছিল।এখন অব্দি শিখা এই বিষয়ে অবগত নয়।

দারজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে গিয়েছিল তো সাজ্জাদ সাহেবের ওই প্রথম বাক্যেই।
“সাজি আমার নিজের মেয়ে না”- কথাটা কানেই
যেতেই গোধূলির মনে হয়েছিল এক বিকট শব্দে পুরো আকাশটাই যেন ওর মাথায় ভেঙে পড়েছে।নিথর হয়ে আসা দেহটা নিয়ে কোনো মতে দাঁড়িয়ে ছিল সাজ্জাদ সাহেবের পুরো কথা শুনার জন্য।সাজ্জাদ সাহেবের কথা শেষ হতেই চলে আসতে পা বাড়িয়ে দু’এক কদম এগোতেই দীপ্তের হাসির আওয়াজ শুনে থেকে যায় কিন্তু পিছন ফিরে নি।

দীপ্ত সাজ্জাদ সাহেবের কথা শেষ হতেই তাচ্ছিল্যে হেসে বললো,

– বিয়েটা হবে না…..

ব্যাস!গোধূলির জন্য এতটুকুই যতেষ্ট ছিল।গোধূলি ওখান থেকে দৌঁড়ে চলে যায়।

“বিয়েটা হবে না বলে যারা মনে করছো তারা ভুল ভাবছো”- এ কথাই দীপ্তের বলার ছিল।দীপ্তের কথা শুনে সবাই খুব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।দীপ্ত বলতে শুরু করলো,

– এই চরম সত্যিটার মুখোমুখি আমি বাইশ বছর আগেই হয়েছিলাম।

সাজ্জাদ সাহেব বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললেন,

– মানে?

– হসপিটাল থেকে সেদিন ফিরে এসে নানাজানের রুমে বসে যখন গোধূলিকে তোমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছিলে তখন আমি সবটা শুনে নিয়েছিলাম।তোমাদের মতো আমিও বাইশটা বছর ধরে এই সত্যিটার সাথে পরিচিত।বাড়ির ছোটরা না জানলেও আমি জানতাম।তাও আমি তখনও বিশ্বাস করতাম গোধূলি তোমার মেয়ে এখনো মানি ও তোমারই মেয়ে আর ভবিষ্যতেও জানবো ও তোমারই মেয়ে।

– সাজি যার কাছে যা ছিল এখনো তাই আছে আর তাই থাকবে মেজো বাবা।সাজি তোমার মেয়ে আর আমাদের বোন এটা ছাড়া আর কোনো সত্যি নেই বুঝেছো তুমি!

আহানের কথায় সায় দিয়ে ইহান বললো,

– সাজি তোমার মেয়ে এইটাই একমাত্র সত্যি মেজো বাবা!পুরো পৃথিবীতে এক দিকে আর আমাদের বোন এক দিকে।সাজি আমাদের বোন,আমাদের চোখের মণি।

দীপ্ত আর আহান ইহানের কথায় সাজ্জাদ সাহেবের মুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট।চোখ ভরে উঠেছে উনার।সাজ্জাদ সাহেবের নিজেকে খুব হালকা লাগছে।জীবন সঙ্গী হিসেবে গোধূলির অতীত বর্তমান সবটা জানার অধিকার দীপ্তের আছে।বিয়ের পরে যদি এই রকম কোনো সত্যির মুখোমুখি হয়ে দীপ্ত উনার দিকে আঙুল তুলতো তাহলে দীপ্তকে উনি কি জবাব দিতেন?দীপ্তের চোখে ছোট হয়ে যেতেন উনি।যেটা মোটেও ভালো হতো না।তবে সাজ্জাদ সাহেব একটু সংশয়ে ছিলেন সত্যিটা জানার পর বাকিরা এই সত্যিটা আদৌ গ্রহণ করবে কিনা?তবে মনের কোণে কিছুটা হলেও আশা ছিল দীপ্তের প্রতি।কেননা যে ছেলে গোধূলিকে পাওয়ার জন্য এতটা সময় ত্যাগ স্বীকার করেছে সেই ছেলে আর যাই করুক গোধূলিকে অন্তত অস্বীকার করবে না!মেয়েটাকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে ছেলেটা।তাই তো উনি এতোটা ভরসা পান।সাজ্জাদ সাহেব তৃপ্তির হাসি দিয়ে দীপ্তকে জড়িয়ে ধরেন।উনাকেই সত্যি প্রমাণ করে দিয়েছে দীপ্ত।দীপ্ত সাজ্জাদ সাহেবকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

– মামু!তুমি মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো।

দীপ্তের কথায় হাতের পিঠে চোখ মুছে নিয়ে বিনিময়ে স্মিত হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালেন সাজ্জাদ সাহেব।কথাটা শেষ করে দীপ্ত এক সেকেন্ডও দেরি না করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

দীপ্ত ওর মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওর রুমে এসে দেখে গোধূলি ঘরে নেই।ঘর থেকে বের হতে যাবে তখন দীপ্তের নজর যায় বিছানায়।বিছানা উপর কলমের নিচে একটা কাগজ চাপা দেওয়া।ভ্রু কুচকে এলো দীপ্তের।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানা থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে ওটার ভাঁজ খুলতেই থমকে যায় ওর পুরো পৃথিবী।মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।পাশে থাকা সোফাটায় ধপ করে বসে পড়ে দীপ্ত।নিজেকে সামলে নিয়ে হাতে থাকা চিঠিটা পড়তে শুরু করে,

(…….)সম্মোধন করার সাহসটা পেলাম না!

~ আমার জীবনে যে এত ঘৃণ্য বর্বরোচিত একটা কালো অধ্যায় আছে এটা আমি স্বপ্নেও কোনোদিন চিন্তা করি নি।তখন যদি আপনাকে ফলো করে ফুপির রুমের দিকে না যেতাম তাহলে হয়তো আজও আমি এই সত্যির অগোচরেই থেকে যেতাম!অস্বীকার করা ঘৃণ্য মানুষটার জায়গায় আব্বু আমাকে বাবার পরিচয় দিয়েছেন।ফেলে রেখে চলে যাওয়া নির্দয় গর্ভধারিনীর জায়গায় আম্মু তার বাহুডোরে ঠাই দিয়েছেন।আমাকে একটা সুস্থ সুন্দর পবিত্র পরিবার দিয়েছেন।কিন্তু সত্যটা তো সত্যই হয় নাহ্?স্বীকৃতিহীন পিতা-মাতার করা পাপের শাস্তি তো আমারই প্রাপ্য তাই না?কারণ তাঁদের করা পাপের ফলই যে আমি!আমার জন্মটাই তো ভুল!আমার জন্মটাই তো অপবিত্র!আমার সাথে বিবাহের মতো একটা পবিত্র বন্ধনে আপনি আবদ্ধ হতে চাইবেন না এটাই তো স্বাভাবিক!আপনি বিয়েতে মত দেন নি বলে বলছি না আমি বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই বললাম!এই তিন বছরে অনেক কথা জমে গিয়েছিল।অপেক্ষায় ছিলাম!ভেবেছিলাম সে যদি আলো নিতে আবার আসে সব কথা উগলে দেবো!তাকে আর যেতে দেবো না।কিন্তু….!সবসময় অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় না কখনো কখনো তেঁঁতোও হয়!কথাটা এত দিন শুনে এসেছি আর আজ প্রমাণও পেয়ে গেলাম!

এতখানি পড়ে থেমে যায় দীপ্ত।চোখ ঘোলা হয়ে এসেছে।মাথা নাড়া দিয়ে দৃষ্টি পরিষ্কার করে নিয়ে হাতে থাকা চিঠিটা সামান্য ঝাড়া দিয়ে নাক টেনে নিয়ে আবার পড়তে শুরু করে দীপ্ত,

~ আমার নামে অনেক পুড়েছেন আপনি!হয়তো সত্যিটা অজানা ছিল বলেই!কিন্তু এখন আর পুড়তে হবে না।মনই চাইবে না!ঘৃণা করবে তো!আমার নিজেরই নিজেকে ঘৃণা করছে!মনে যদি সামান্যতম করুণা আসে ছেড়ে দিন!চিন্তা করবেন না, আমি নিজের প্রাণহানি ঘটাবো না।যে তকমাটা আমার গায়ে লেগেছে তার থেকে পালাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই।সত্যটা আমি বরণ করে নিয়েছি!আচ্ছা,পৃথিবীটা নাকি খুব সুন্দর?শুনেছি যা যত সুন্দর তা নাকি তত ভয়ংকরও হয়?তবু আজ বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।বিশাল এই পৃথিবীতে মাথা গুজার ঠাইটুকু মনে হয় অনায়াসেই পেয়ে যাবো কি বলেন?কেউ একজন বলেছিল, “মৃত্যুটা হলো ছোটগল্প আর বেঁচে থাকাটা হলো উপন্যাস”তবে তাই হোক!আমিও না হয় বেঁচে তাকলাম বাস্তবতার এই শহরে।

তুমি এসো না আমার শহরে,
না বলা গল্পের অহেতুক ভীড়ে!
চলে যাচ্ছি বাস্তবতার শহরে।
ভালো থেকে তুমি,
চিরচেনা এই আপন শহরে!
আফসোস রইলো একটাই,
সূর্যাস্তের সময়কার ক্ষণিক লাল আলোকে
সাক্ষী রেখে বলা হয় নি, “ভালোবাসি তোমায়”

ইতি,
নাম?নাইবা লিখলাম!

হাত আলগা হয়ে আসে দীপ্তের।হাত ফসকে চিঠিটা পড়ে যায়।সেই দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই দীপ্তের।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে।চোখ দুটো জলে টলটল করছে।আবার ঘোলাটে হয়ে গেছে নয়ন জোড়া।শুধু একটু পলক ফেলার অপেক্ষায় মুখিয়ে আছে অবাধ্য চোখের জল গড়িয়ে পড়ার জন্য। অনেকক্ষণ গোধূলি বা দীপ্ত কাউকেই দেখতে না পেয়ে দীপ্তি বেগম ওদের খুঁজ করতে দীপ্তের রুমে এসে দেখে দীপ্ত সোফায় বসে আছে।রুমের চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে গোধূলিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন,

– সাজি কোথায় রে দীপ্ত?

মায়ের ছোঁয়া আর কন্ঠ পেতেই এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে দীপ্ত।ছেলের আচমকায় এমন কান্না করার কারণ বুঝতে না পেরে দীপ্তি বেগম উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন,

– কি হয়েছে বাবা?তুই কাঁদছিস কেন?

– গোধূলি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আম্মু!ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে!

কাঁদতে কাঁদতেই কথাটা বললো দীপ্ত।দীপ্তি বেগম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করেন,

– মানে?

– গোধূলি সবটা জেনে গেছে।

দীপ্তি বেগম স্তব্ধ হয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন।বিশ্বাস করতে পারছেন না যে গোধূলি চলে গেছে।দীপ্ত কেঁদেই চলেছে।ছেলের কান্না দেখে নীরবে নিভৃতে কেঁদে চলেছেন তিনিও।দীপ্ত মাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সারা রুম জুড়ে পাইচারি করছে আর ছটফট করছে।দীপ্তি বেগমের সামনে এসে করুন সুরে বললো,

– আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না আম্মু।গোধূলি হীনা দীপ্তের কোনো অস্তিত্বই নেই।গোধূলিকে আমার চাই আম্মু!ওকে চাই আমার।আমি বাঁঁচবো না ওকে ছাড়া।

শেষের কথাটা অনেকটা জোরে চেঁচিয়ে বললো দীপ্ত।রাগে পুরো রুমের জিনিস পত্র ভেঙে ফেলছে।গোধূলির বাড়ির সবাই জামাল সাহেবের সাথে দীপ্ত আর গোধূলি বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিল।দীপ্তের চিৎকার শুনে এসে দেখে দীপ্ত পাগলের মতো করছে। হাতের সামনে যা পাচ্ছে সেটাই ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিচ্ছে।আহান দৌড়ে গিয়ে দীপ্তকে আটকানো জন্য ধরে।কিন্তু দীপ্ত রাগে আহানকে ঝাড়া দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,

– আমার গোধূলিকে চাই!ওকে চাই আমার রাইট নাও।

আহানসহ বাকি সবাই আহাম্মকের মতো দীপ্তের কার্যকলাপ দেখছে।কেউই কিছু বুঝতে পারছে না।আহান বিরক্ত হয়ে বললো,

– কাল বাদে পরশু তোদের বিয়ে দীপ্ত!তাহলে এখন তুই এমন করছিস কেন?এটা কোন ধরনের ছেলেমানুষী? আমরা কি বলেছি বিয়েটা দিবো না?আর একটু আগে তুইয়েই না বলে আসলি?

– যার সাথে বিয়েটা হওয়ার কথা সেই যদি না থাকে?

বিস্ফোরিত চোখে আহানসহ বাকি সবাই দীপ্তি বেগমের দিকে তাকায়।

– সাজি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।ওর অতীত ও জেনে গেছে।

সারা শরীর থরথর করে কাপছে আহানের।মাথা ভার ভার লাগছে।হালকা চক্করও দিয়ে উঠে।ফলে খানিকাটা পিছিয়ে যায়।নিজেকে ব্যালেন্স করার জন্য পাশে থাকা ভাঙা ড্রেসিং টেবিলটায় হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে।জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললো,

– এটা তুমি কি বলছো ফুপি?সাজি কোথায় যাবে?কার কাছে যাবে? এই শহরের কতটুকুই বা ও চিনে!

আহানের কথার দীপ্ত তাচ্ছিল্যে হেসে বললো,

– বাস্তবতার শহর চিনতে গেছে ও!

কথাটা বলেই মুহুর্তেই আবার দীপ্তের চোখ রক্ত জবার মতো লাল হয়ে গেছে।হাত মুঠো করে রাগ সংবরণ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

– চেনাচ্ছি ওকে বাস্তবতার শহর।দেখাচ্ছি ওকে সুন্দর পৃথিবী!

দীপ্ত রাগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে তো ঠিকই কিন্তু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।একে তো ঘড়ির কাঁটা দশটা ছাড়িয়েছে তার উপর গোধূলি একা একটা মেয়ে।পাগলের মতো অবস্থা হয়ে গেছে দীপ্তের।দিশেহারার মতো মাথার চুল উল্টে ধরে রাস্তায় পাইচারি করছে।নিজের অবস্থা বুঝতে পারছে। এখন আমার মাথা গরম করলে চলবে না।ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে।রাস্তা পাশে থাকা ল্যাম্প পোস্টটের খুটিটায় গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায় দীপ্ত।বড় বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।অশান্ত মন খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে।দীপ্ত কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলো।পরমুহূর্তেই ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,

– উড়াল দেওয়ার বড্ড শখ হয়েছিল না চড়াইপাখি! আসছি আমি!তোর ডানা ছাটতে!

চলবে…….

[ বি.দ্র. দুই দিন আগেই পর্বটা টাইপ করা ছিল।শুধু সময় পাই নি বলে আপলোড দিতে পারি নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং 🥰 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here