#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -১৮
ডিনার করে সবাই যার যার ঘরে চলে যায়।কিন্তু দীপ্ত ঘরে যায় নি।আহান দীপ্তকে রুমে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে যায়।আহান গিয়ে দেখে ছাদে রাখা দোলনাটায় নির্বিকার দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে দীপ্ত।এতটাই বেখেয়ালি মনে বসে আছে আহান যে ওর পাশে গিয়ে বসেছে সেটাও দীপ্ত খেয়ালই করে নি।আহানও দীপ্তের দৃষ্টি অনুসরণ করে আঁকাশের দিকে তাকালো কিন্তু সে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না।দেখবেই বা কি করে!চাঁদহীন আকাশে যে আজ মেঘ জমেছে।থেকে থেকেই ওই দূরের আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।চারদিকে কনকনে শীতল হাওয়া বইছে।দীপ্তের গতিবিধির কোনো পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে আহান এবার খুব বিরক্ত হয়।একটা মানুষ কিভাবে এতটা বেখেয়ালি হতে পারে?সেই কখন থেকে ও এসে বসে আছে আর এইদিকে দীপ্তের কোনো খবরই নাই।
– দী…..
– বড়দাভাই!
আহান দীপ্তকে ডাকতে যাচ্ছিলো কিন্তু গোধূলির ডাকে চটজলদি ওর দিকে তাকায়।গোধূলির ডাকে দীপ্তেরও হুশ ফিরে।গোধূলিকে দেখে দীপ্তের কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়ে।কিছুটা কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
– দিলি তো আমার মুডটা নষ্ট করে!কে তোর বড়দাভাই?এখানে আহান আসে নি দেখতে পাচ্ছিস না!আর এত রাতে তুই এখানে কি করিস?যা বাসায় যা।
গোধূলি দীপ্তের কথাকে পাত্তা না দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়ে আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– দাভাই!আমার সাথে একটু নিচে চলো তো।
গোধূলিকে অনুসরণ করে ওর পাশে তাকিয়ে আহানকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে দীপ্ত।দীপ্ত আহানের দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে।ও তো এতক্ষণ ছাদেই ছিল তাহলে আহান কখন এসেছে?
– দেখছো দাভাই দীপ্ত ভাইয়া কেমন মিথ্যে কথা বলে?আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি এখানে বসে আছো তাও সে বলছে তুমি নাকি এখানে নেই!আবার আমাকে ধমকও দিয়েছে।
বাজখাঁই গলায় কথাটা বলে গোধূলি।আহান বোনের মুখ দেখে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– দীপ্ত তুই এতটাই অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিলি যে আমি যে সেই কখন থেকে তোর সাথে বসে আছি তুই সেটা টেরই পাস নি।আর তুই সাজিকে তখন ওইভাবে ধমকালি কেন?
– আহা রে!বোন অন্ত প্রান এক্কেবারে!তা বোনের জন্য যেহেতু এতই দরদ তাহলে বোনকে নিয়েই বসে থাকতি আমার সাথে এখানে কি করিস?
দীপ্ত তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলল।দীপ্তের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে গোধূলি।ঝাঁঝালো গলায় বললো,
– তা বোন অন্ত প্রান হবে নাতো তোমার মতো একটা এলিয়েন অন্ত প্রান হবে?আমার ভাই আমার সাথে থাকবে না তো কি তোমার সাথে থাকবে?দাভাই চলো আমার সাথে।এখানে আর এক মুহূর্তও তুমি থাকবে না।
গোধূলি আহানের হাত ধরে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে দীপ্ত খপ করে আহানের হাতটা ধরে ফেলে।আহানকে নিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুলযুদ্ধ বেধে গেছে।গোধূলি আহানের হাত ধরে তার দিকে টানছে আর দীপ্ত ওর দিকে।দীপ্তের টানাটানি দেখে গোধূলি চোখ রাঙিয়ে বললো,
– দীপ্ত ভাইয়া!তুমি দাভাইয়ের হাতটা ভালোয় ভালোয় ছেড়ে দাও বলছি।
– কেন?না ছাড়লে কি করবি শুনি?আর ও কি তোর একার ভাই?
– হে আমার একারই ভাই।
বলেই গোধূলি আবার আহানের হাত ধরে টান দেয়।
– ও আমারও ভাই।
– না আমার ভাই।
– আমি যে বলছি ও আমারও ভাই।
– না দাভাই শুধু আমার ভাই।
দুজনের এই হাত ধরে টানাটানির চক্করে আহানের হাত খুলে যাওয়ার উপক্রম প্রায়!আহান বিরক্ত হয়ে জোরে চিল্লিয়ে বলে,
– আআআ!স্টপ ইট।কি শুরু করেছিস দুজনে মিলে?আমার হাতের তো বারোটা বাজিয়ে দিলি।সাজি এটা কোন ধরনের বিহেভিয়ার?দীপ্ত তুইও?ও না হয় ছোট বুঝলাম কিন্তু তুইও কি ওর মতো ছোট?
আহানের চিৎকারে দীপ্ত আর গোধূলি দুজনেই ভড়কে যায়।দীপ্ত স্বাভাবিক থাকলেও গোধূলি কেঁদে দিয়েছে!তবে শব্দ করে কাঁদছে না।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে গোধূলির চোখ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।গোধূলিকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহান কড়া গলায় বললো,
– সাজি আমি তো তোকে কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছিস না?
…..
– কি হলো কথা বলছিস না কেন?
…..
আহানের কথা যেন গোধূলির কানে পৌঁছাচ্ছেই না।গোধূলি তখনও নির্বিকার দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতেই ব্যস্ত!আহান গোধূলির কোনো সাড়া না পেয়ে গোধূলির কাছে এসে ওর বাহুদ্বয় ধরতেই অশ্রুসিক্ত নয়নে আহানের দিকে তাকায় গোধূলি। বোনের চোখে পানি দেখে আহানের বুকটা ধক করে উঠে।আহান ব্যস্ত হয়ে গোধূলির গালে হাত রেখে বলে,
– সাজি তুই কাঁদছিস!কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন তুই? লক্ষ্মী বোন আমার এইভাবে কাঁদিস না!আমি কি তোকে বকেছি বল?
আহানের কথা শুনে এবার দীপ্তও গোধূলির দিকে তাকায়।সত্যিই তো এই মেয়ে কাঁদছে!কাঁদোক তাতে ওর কি?অনেক জ্বালিয়েছে ওকে!
গোধূলির কাঁন্নাতে দীপ্তের চোখেমুখে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে নি বরং গোধূলির কান্না দেখে দীপ্ত কোনো পৈশাচিক আনন্দই পাচ্ছে!আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো কথা না বলে চোঁখের জল মুছতে মুছতে ছাদ থেকে দৌঁড়ে চলে যায় গোধূলি।আহান বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।ভেবেছিল গোধূলি হয়তো ওকে কিছু বলবে।কিন্তু না ওকে ভুল প্রমান করে দিয়ে গোধূলি এখান থেকে চলে গেছে।গোধূলি চলে যেতেই দীপ্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
– তোর বোন আমার সাথে জিততে পারে নি বলে এখানে নাটক করে এখন পালিয়েছে!
দীপ্তের কথায় আহান রেগে গিয়ে কঠিন গলায় বলে,
– দীপ্ত সব সময় নিজের মনগড়া কথা অন্যকে শুনাতে আসবি না!ও কষ্ট না পেলে সহজেই কাঁদে না!
আহান হনহনিয়ে ছাদ থেকে চলে যায়।দীপ্ত আহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার গিয়ে দোলনায় বসে।ছাদে আরো কিচ্ছুক্ষণ একা একা বসে ছিল দীপ্ত। আকাশে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।বারী বর্ষনের আভাস পেয়ে দীপ্তও বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
★
গোধূলির রুমের দরজায় এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে বিরতিহীনভাবে আহান ডেকে চলেছে।উৎকন্ঠিত সুরে বলছে,
– সাজি বোন আমার দরজা খুল।আমি আর কোনো দিন তোকে বকবো না! এই দেখ কান ধরছি। তুই চাইলে তোর সামনেও কান ধরে উঠবস করবো। প্লিজ বোন আমার দরজাটা খুল।
গোধূলি ভেতর থেকে সব শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কোনো কথাই বলছে না।দীপ্ত দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।একসময় আহান দীপ্তকে দেখতে পেয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে!গোধূলির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে শেষে ভাবে এত রাতে এইভাবে ডাকাডাকি করলে সারা বাড়ির মানুষ চলে আসবে। সকালে না হয় ওর রাগ ভাঙ্গানো যাবে।আহান গোধূলিকে আর ডাকাডাকি না করে ওর রুমে চলে যায়।
চলবে…..